মুজিবের লিগ্যাসী: দেশধ্বংসী নাশকতা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি

ফিরোজ মাহবুব কামাল                                                                                                                                                        নাশকতা ইসলামের বিরুদ্ধে

মুসলিম হওয়ার অর্থ শুধু মহান আল্লাহতায়ালা, তাঁর রাসূল ও ইসলামের উপর বিশ্বাস নয়। বিশ্বাসের সাথে কিছু দায়বদ্ধতাও অনিবার্য করে। প্রতিটি মুসলিমের উপর সে মূল দায়বদ্ধতাটি হলো, ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থে সর্ব মুহুর্তে আপোষহীন হওয়া। কারণ, যেখানে ইসলাম থাকে, সেখানে অনৈসলামও থাকে। এবং ইসলাম ও অনৈসলামের মাঝে অবিরাম লড়াইও থাকে। সে লড়াইয়ে ইসলামের পক্ষে আপোষহীন চেতনা নিয়ে বাঁচাই হলো প্রকৃত ঈমানদারী। নইলে নাশকতা ও বেঈমানী হয় ইসলাম ও মুসলিমের সাথে। রাজনীতির অঙ্গণে যাদের পদচারণা তাদের উপর সে দায়বদ্ধতা আরো অধিক। তখন সে রাজনীতিতে ইসলাম ও মুসলিমের বিজয়ে বিনিয়োগ ঘটাতে হয় নিজের বুদ্ধিবৃত্তি, অর্থ, শ্রম ও রক্তের। রাজনীতি তখন পবিত্র জিহাদে পরিণত হয়। সে জিহাদে নিহত হলে শহীদ হয়। গৌরব কালে মুসলিমদের রাজনীতি বলতে  তো সেটিই বুঝাতো। মুসলিমগণ বিশ্বে সুপার পাওয়ারে পরিণত হয়েছে এবং জন্ম দিয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার –তা তো সে জিহাদী রাজনীতির কারণেরই।

শেখ মুজিব নিজেকে মুসলিম রূপে দাবী করতেন। কিন্তু তাঁর রাজনীতিতে ইসলামের বিজয় আসেনি। মুসলিমদের গৌরবও বাড়েনি। বরং বিজয় ও গৌরব বেড়েছে ভারতীয় কাফেরদের। বিজয়ী হয়েছে ইসলাম থেকে দূরে সরা বাঙালী সেক্যুলারিস্টগণ। এবং শক্তিহানী ঘটেছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের। তাই মুজিবের রাজনীতির মূল চরিত্রটি ছিল ইসলামের সাথে গাদ্দারীর। তবে শেখ মুজিবের গাদ্দারিটা শুধু পাকিস্তানের সাথে ছিল না। সে গাদ্দারিটা ছিল যেমন ইসলামের বিরুদ্ধে, তেমনি বাঙালী মুসলিমদের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ছিল বাংলাভাষী। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জনের লড়াইকে তিনি পাকিস্তান ভাঙ্গার লড়াইয়ে পরিণত করেন। এবং সেটি স্রেফ ভারতীয় অভিলাষ পুরণে। অথচ পাকিস্তান ভাঙ্গার এ কাজটি ভারত নিজ খরচে ১৯৪৭ সাল থেকেই করে দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। অতএব এ কাজের জন্য মুজিবের নেতা হওয়ার প্রয়োজন ছিল না। ভারতের আজ্ঞাবহ দাস হওয়াই যথেষ্ট ছিল। বাস্তবে তিনি সে দাসসুলভ কাজটিই বেশী বেশী করেছেন।

মুজিবের ভারত সেবার রাজনীতিতে চরম লাভবান হয়েছে যেমন ভারত, তেমনি চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঙালী মুসলিম। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক ছিল তারাই। গণতন্ত্র বাঁচলে শুধু পাকিস্তানের রাজনীতি নয়, সমগ্র মুসলিম উম্মাহর রাজনীতিতে, বাঙালী মুসলিমগণ সুযোগ পেত নেতৃত্বদানের। অখন্ড পাকিস্তান বেঁচে থাকলে আজ লোকসংখ্যা হতো ৪০ কোটি। দেশটি হতো পারমানবিক বোমার অধিকারী পৃথিবীব তৃতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র। সে রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক রূপে বাঙালী মুসলিমগণ পেত বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব ফেলার সুযোগ।  মুজিবের অপরাধ, সে সুযোগ থেকে বাঙালী মুসলিমদের তিনি শুধু বঞ্চিতই করেননি, বরং গোলাম বানিয়েছেন ভারতের। ভারতের ঘরে তিনি বিশাল বিজয় তুলে দিয়েছেন। ১৯৭১’য়ের যুদ্ধের বিজয়ী ভারত তখন লুটে নেয় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অব্যবহৃত হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র। সে লুন্ঠনের বিরুদ্ধে শেখ মুজিব প্রতিবাদ না করে নীরব থেকেছেন। অথচ পাকিস্তানের সে অস্ত্র কেনায় অর্থ জুগিয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকগণও। অতএব এ লুট শুধু পাকিস্তানের উপর ছিল না, ছিল বাংলাদেশের অর্থের উপর। প্রভুর সামনে গোলামদের প্রতিবাদের সাহস থাকে না। সে সাহস সেদিন মুজিবের মধ্যেও দেখা যায়নি। বরং প্রকট ভাবে যা দেখা গেছে সেটি ষড়যন্ত্রের রাজনীতি এবং সেটি ভারতকে সাথে নিয়ে। এবং ষড়যন্ত্র হয়েছে ইসলাম ও মুসলিমের পরাজয় বাড়াতে। শেখ মুজিবের সে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি আজও বেঁচে আছে হাসিনার রাজনীতিতে।

ইসলামের হারাম হালামের বিধানগুলো শুধু খাদ্য-পানীয়ে নয়, সেটি রয়েছে রাজনীতিতেও। নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম রাজনীতিতে আমৃত্যু অংশ নিয়ে দেখিয়ে গেছেন রাজনীতির ফরজ বিষয়গুলো। নবীজী (সা:) সেটি হাতে কলমে শিখিয়ে গেছেন রাষ্ট্রপ্রধানের আসনে নিজে বসে। তিনি শিখিয়ে গেছেন, ইসলাম কখনোই নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত ও তাসবিহ-তাহলিলে সীমিত রাখার বিষয় নয়। ইসলামের বিধানকে পূর্ণ ভাবে প্রতিষ্ঠা দেয়ার কাজে রাষ্ট্রই হলো মূল হাতিয়ার। রাষ্ট্র ও তার প্রতিষ্ঠানগুলিকে ইসলামের বাইরে রাখলে ইসলাম পালনের কাজটি হয় না। তখন রাষ্ট্রের উপর প্রতিষ্ঠা পায় না মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়ত বিধান। রাষ্ট্র তখন শয়তানের দুর্গে পরিণত হয়। শয়তানের সে দুর্গের মাঝে হাজার হাজার মসজিদ-মাদ্রসা গড়েও ইসলামের পরাজয় রোধ করা যায় না। এবং তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো বাংলাদেশ। এতো মসজিদ ও মাদ্রাসা বিশ্বের আর কোন দেশে নাই। অথচ দেশটির উপর অধিকৃতি শয়তানী শক্তির। ফলে কোর’আনের তাফসিরকারকদের এদেশে জেলে থাকতে হয়। গণহত্যার শিকার হতে মুসল্লীদের। এবং মুর্তিগড়া হয় রাষ্ট্রীয় অর্থে এবং মুর্তিপূজারীর গানকে গাওয়া হয় জাতীয় সঙ্গিত  রূপে।

ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ নেক আমল তাই মসজিদ-মাদ্রাসা গড়া নয়, বরং সেটি হলো শয়তানের দুর্গরূপী রাষ্ট্রকে নির্মূল করে সেটিকে ইসলামের দুর্গে পরিণত করা। নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম তো সেটিই করেছেন। মদিনার হিজরতের পর নবীজী (সা:) তাই নিজের ঘর না গড়ে ইসলামী রাষ্ট্র গড়েছেন। কিন্তু ইসলামে অ চেতনাশূণ্য শেখ মুজিব ও তার অনুসারীগণ নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের জীবন থেকে কোন শিক্ষাই নেননি। শিক্ষা নিয়েছেন এবং ষড়যন্ত্র করেছেন ভারতীয় কাফেরদের সাথে একাত্ম হয়ে। বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রে বিধিবদ্ধ করেছেন জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষবাদ, সমাজতন্ত্রের ন্যায় হারাম মতবাদ। সংকুচিত করেছেন কোর’আন শিক্ষা। এবং নিষিদ্ধ করেছেন ইসলাম প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার নিয়ে রাজনৈতিক দল গড়া। ইসলাম থেকে দূরে না সরলে কাফেরগণ কখনোই বন্ধু রূপে গ্রহণ করে না। শেখ মুজিব ও তার দলের লোকেরা এতোটাই ইসলামচ্যুৎ যে, ইসলামপন্থী ও পাকিস্তানপন্থীদের নির্মূলে ভারত তাদেরকে আজ্ঞাবহ পার্টনার রূপে গ্রহণ করে। ভারতের অস্ত্র ও অর্থ নিয়ে সে কাজে তারা ঝাঁপিয়েও পড়ে। ইসলামের সাথে তাদের দুষমনি শুধু ১৯৭১’য়ের বিষয় নয়; সে অভিন্ন রূপটি ধরা পড়েছে যেমন শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে, তেমনি ২০১৩ সালের ৫মে শাপলা চত্ত্বরে হিফাজতে ইসলামের মুসল্লীদের বিরুদ্ধে গণহত্যায়।

বাংলাদেশের মাটিতে ১৯৭১’য়ে বহু ইসলামী রাজনৈতিক দল ছিল। ইসলামী দলের বহু লক্ষ নেতা-কর্মী এবং সমর্থকও ছিল। কিন্তু তারা ভারতের এজেন্ডা পূরণে হাতে অস্ত্র নেয়নি। ভারতেও যায়নি। একই কারণে কোন আলেম এবং কোন পীর সাহেবও একটি মুসলিম দেশ ভাঙ্গার সে কবিরা গুনাহতে অংশ নেয়নি। তাদের অনেকে রাজাকার হয়েছে, বহু হাজার রাজাকার প্রাণও দিয়েছে।একাত্তরের রাজাকারের চেতনা ছিল এই কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচার চেতনা। মুসলিম যুদ্ধ করে মুসলিম দেশের ভূগোল বাড়াতে, সেটিকে ভাঙ্গতে বা খর্ব করতে নয়। মুসলিম দেশে ভাঙ্গার কাজটি তো কাফেরদের কাজ। একাত্তরে সে এজেন্ডা ছিল ভারতের। শেখ মুজিব ও তার দল ভারতের সে এজেন্ডাকে নিজেদের এজেন্ডা বানিয়ে নিয়েছে। মুসলিম দেশ ভাঙ্গতে বা মুসলিম দেশের ভূগোল বিলীন করতে যুগে যুগে বহু যুদ্ধ করেছে কাফেরগণ।  উসমানিয়া খেলাফত ভেঙ্গে বিশের বেশী টুকরোয় বিভক্ত করেছে ব্রিটিশ ও ফরাসী ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। তখন তাদের চর ও দাস হিসাবে খেটেছে আরব জাতিয়তাবাদী সেক্যুলারিস্টগণ। সে সাথে সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, দুবাই, আবুধাবি, ওমানের ট্রাইবাল নেতাগণ। তাদের সে গাদ্দারীতে আরব বিশ্বের উপর দখলদারী বেড়েছে কাফের শক্তির; এবং শক্তিহানী হয়েছে মুসলিমদের। তাদের সে গাদ্দারীর কারণেই আরব ভূখন্ড আজ ২২ টুকরায় বিভক্ত। মুসলিম উম্মাহ শক্তিহানির মূল কারণ তো এই বিভক্তি। আর বাংলাদেশের মাটিতে সে গাদ্দারী এবং বিভক্তির মূল নায়ক ছিলেন শেখ মুজিব। প্রকৃত অর্থে তিনি ছিলেন ভারতবন্ধু; কখনোই বঙ্গবন্ধু বা মুসলিমবন্ধু নন। প্রকৃত মুসলিম শুধু মুসলিমের বন্ধুই হয় না, তাঁর প্রতিরক্ষায় সৈনিকে পরিণত হয়। ভারতে বসবাসকারী মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের যে নীতি, মুজিব ও তার অনুসারীগণ সে নীতিই প্রয়োগ করেছে বাংলাদেশে। ফলে একাত্তরে মুজিবের অনুসারীদের হাতে যত পাকিস্তানপন্থী বাঙালী ও অবাঙালী মুসলিম নিহত হয়েছে তার তূলনা একমাত্র ভারতের মুসলিম গণহত্যার সাথেই মেলে।

 

সর্বমুখী নাশকতা

শেখ হাসিনার ঘোষণা, তিনি কাজ করছেন মদিনা সনদ নিয়ে। প্রকৃত সত্যটি এর বিপরীত। শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিব যে সনদ নিয়ে কাজ করেছেন তার মূল বিধিটি হলো ভারতের প্রতি দাসত্বের। সে সনদ অনুসারেই শেখ মুজিব বাংলাদেশের ভূমি বেরুবাড়ি ভারতের হাতে তুলে দেন। তুলে দিয়েছেন পদ্মার পানিও। ভারতে যাচ্ছে ৫৪টি নদীর পানি। অথচ পাকিস্তানী আমলের ২৩ বছরে একদিনের জন্যও বেরুবাড়ির গায়ে ভারত হাত দিতে পারিনি। পদ্মার পানিও তুলে নিতে পারিনি। ভারত শেখ মুজিবকে তার নিজ স্বার্থের সেবাদাস হিসাবে গ্রহণ করলেও বাংলাদেশীদের কখনোই বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতে পারিনি। তারই প্রমাণ, দিল্লীর শাসকচক্র মুজিবকে শুধু পাকিস্তান ভাঙ্গার কাজেই ব্যবহার করেনি, ব্যবহার করেছে বাংলাদেশের মেরুদন্ড ভাঙ্গার কাজেও। বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংসে মুজিবের নাশকতা ছিল বহুমুখী। মুজিব বিলুপ্ত করেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সীমান্ত। সেটি করেন সীমান্ত বাণিজ্যের নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় পণ্যের বাজার বসিয়ে। তিনি তার প্রভু দেশের কাছে বাংলাদেশের কারেন্সি নোট ছাপানোর দায়িত্ব দেন। আর ভারত সে সুযোগ পেয়ে কয়েক শত কোটির বেশী অতিরিক্ত নোট ছেপে নিজের হাতে রেখে দেয়। সে অর্থ দিয়ে সীমান্ত ঘিরে বসানো মুক্ত বাজার থেকে বাংলাদেশীদের থেকে বিদেশী মুদ্রা, কাঁসা-পিতল, পাকিস্তান আমলে বিদেশ থেকে ক্রীত যন্ত্রপাতি ও সঞ্চয়কৃত ধাতব পদার্থ কিনে ভারতে নিয়ে যায়। জাতীয়করণের নামে মুজিব ধ্বংস করেন পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত কলকারখানা। এভাবেই পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করা হয় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এবং ১৯৭৪ সালে ডেকে আনা হয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ  -যাতে প্রাণহানি হয় বহু লক্ষ মানুষের। দরিদ্র মানুষ তখন কাপড়ের অভাবে মাছধরা জাল পড়তে বাধ্য হয়।

নবীজী (সা:)’র আমলে মদিনা সনদের লক্ষ্য ছিল, মুসলিমদের দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি। লক্ষ্য ছিল, সদ্য প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের সুরক্ষা ও ইসলামী সভ্যতার নির্মাণ। হাসিনা নাম নিচ্ছেন মদিনা সনদের, অথচ যাচ্ছেন উল্টো দিকে। শেখ মুজিবের ন্যায় তারও লক্ষ্য, মুসলিমদের ইসলাম থেকে দূরে সরানো ও তাদের শক্তি হানি। লক্ষ্য, ইসলামের রাষ্ট্র নির্মাণের যে কোন উদ্যোগের প্রতিরোধ। এবং সেটি তিনি বার বার ঘোষণা দিয়েই করছেন। একটি দেশের শক্তির মূল উৎস ৪টি। এক). রাজনৈতিক শক্তি; দু্ই). শিক্ষা ও সংস্কৃতি; তিন). সামরিক শক্তি; চার). অর্থনৈতিক শক্তি। আওয়ামী লীগ এ ৪টি খাতেরই বিনাশে হাত দিয়েছে। ইতিমধ্যে সেগুলিকে তছনছও করা হয়েছে। রাজনীতির মধ্য দিয়েই জনগণ পায় একতা, পায় প্রতিরোধের সাহস। রাজনৈতিক দিক দিয়ে জনগণকে পঙ্গু করার লক্ষ্যেই শেখ মুজিব গণতন্ত্রকে কবরে পাঠায় এবং প্রতিষ্ঠা দেয় একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার। সেনাবাহিনীর শক্তিহানী করতে গড়ে তোলা হয় বিকল্প রক্ষিবাহিনীকে। একই লক্ষ্যে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই সংঘটিত হয় পিলখানা হত্যাকাণ্ড। সেখানে হত্যা করা হয় সেনাবাহিনীর ৫৭ জন অফিসারকে। ১৯৭১’য়ের যুদ্ধেও এতো অফিসারের মৃত্যু হয়নি। সে যুদ্ধে পাকিস্তানও এতো অফিসার হারায়নি। আর্মির পাশাপাশি শক্তি হানি করা হয় বি.ডি.আর’য়ের। শত শত বি.ডি,আর. সদস্যকে কারাবন্দি করা হয়। বন্দী অবস্থায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে জেলখানায়। অপর দিকে দেশের শিক্ষাব্যববস্থা ধ্বংসে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরিণত করা হয়েছে দলীয় ক্যাডার তৈরীর কারখানায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কসাইখানায় পরিণত করা হয়েছে আবরার ফাহাদদের মত দেশপ্রেমিকদের হত্যা করার লক্ষ্যে। বছরের বেশীর ভাগ সময়ই সেগুলো বন্ধ থাকে রাজনৈতিক ক্যাডারদের মাঝে সংঘাতের কারণে। লেগে থাকে দীর্ঘ সেসন জট। এভাবেই বাড়ানো হয়েছে শিক্ষা খাতে নাশকতা। অপর দিকে অর্থনীতিতে নাশকতা বাড়াতে ব্যাংক থেকে বিদেশে পাচার হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার বিদেশী মূদ্রা। এমনকি চোরদের হাত পড়েছে স্টেট ব্যাংকের ভান্ডারেও। 

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার মাঝে ভারতের স্বার্থটি বিশাল। ভারত চায় ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশ টিকে থাকুক স্রেফ ভারতীয় পণ্যের ক্রেতা হিসাবে। অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দি হিসাবে নয়। বাংলাদেশীদের ক্রয়ক্ষমতা ভারতীদের চেয়ে অনেক বেশী। কারণ, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যেমন উৎপাদন বেড়েছে, তেমনি বিদেশী অর্থের উপার্জন বেড়েছে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশীর বিদেশে কর্মসংস্থানের কারণে। ফলে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীর পকেটে এখন অনেক পয়সা। এতবড় বাজার ভারতের পশ্চিম বাংলা, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, আসাম, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের মত ছয়-সাতটি প্রদেশ মিলেও নাই। এ বাজার ভারত দখলে দখলে নিতে চায়। সে লক্ষ্যেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের বিপুল বিনিয়োগ ভারতীয় স্বার্থের সেবাদাস পালনে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ মুজিব ও তার অনুসারীদের দাপটের মূল কারণ, তাদের পিছনে ভারতের এ অর্থ বিনিয়োগ।

এক সময় পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদনে সমগ্র পৃথিবীতে পূর্ব পাকিস্তান প্রথম ছিল। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশী অর্থ উপার্জিত হত এ খাতে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে পূর্ব পাকিস্তানের এবং পরে বাংলাদেশের সে প্রতিদ্বন্দি অবস্থান ভারত মেনে নিতে পারেনি। ভারত চেয়েছিল সে মর্যাদা তা নিজের জন্য। সেজন্যই ভারতের প্রয়োজন দেখা দেয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ আদমজী জুটমিলসহ সকল পাট শিল্পের ধ্বংস। ভারতের স্বার্থে সে কাজটি সমাধা করে দেয় তাদেরই পালিত সেবাদাস শেখ মুজিব। মুজিব আমলে একদিকে যেমন পাটকলগুলোকে অচল করা হয় তেমনি পাটের গুদাম গুলোতে আগুণ দেয়া হয়। আর অপরদিকে ভারত তার পুরোন পাটকলের বদলে বাংলাদেশের সীমান্ত ঘিরে গড়ে তোলে বহু পাটকল। তখন বাংলাদেশের সস্তা কাঁচা পাট দেশে মূল্য না পেয়ে ভারতের বাজারে গিয়ে উঠে। ভারত তখন তাড়াতাড়ি পাট শিল্পে বিশ্বে প্রথম হওয়ার হওয়ার মর্যাদা অর্জন করে। আজ বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দী উঠেছে গার্মেন্টস শিল্পে। ভারত সেটিকেও ধ্বংস করতে চায়। আর গার্মেন্টস শিল্পকে আজ ধ্বংস করা হচ্ছে অতি পরিকল্পিত ভাবে। এ শিল্পে নামানো হয়েছে কিছু দুর্বৃত্ত ও ডাকাতদের। যারা নেমেছে দরিদ্র শ্রমিকের রক্তচোষক রূপে। যে শিল্পে রক্তচোষন হয় দরিদ্র শ্রমিকের সে শিল্প কি বেঁচে থাকে? সে শিল্প বরং মহান আল্লাহতায়ালার আযাব ডেকে আনে। তখন তাতে আগুণ লাগে বা ভবন ধ্বসে পড়ে। সাভারে যা ঘটে গেল তা কি তার ই আলামত নয়।

আওয়ামী লীগের ভোটের রাজনীতিতে দেশের দরিদ্র মানুষ পরিণত হয়েছে রাজনীতির কাঁচা মালে। সেটি যেমন মুজিব আমলে, তেমনি হাসিনার আমলে। শেখ মুজিব সোনার বাংলা প্রতিশ্রুতি দিতে ১৯৭০’য়ের নির্বাচনে ভোট নিয়েছিলেন। ওয়াদা দিয়েছিলেন আট আনা সের চাল খাওয়োনোর। অথচ উপহার দিয়েছিলেন দুর্ভিক্ষ ও লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু। তেমনি ২০০৮ সালে হাসিনা ওয়াদা দিয়েছিলেন ৮ টাকা সের চাল খাওয়ানোর। কিন্তু খাইয়েছেন ৪৫ টাকা সের দরে। ওয়াদা দিয়েছিলে বিনা মূল্যে সারের। ওয়াদা দিয়েছেন ঘরে ঘরে চাকুরির। সবই ছিল প্রকান্ড মিথ্যাচার। ২৪ নভেম্বর ২০১২-তে আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের গার্মেন্টস কারখানায় আগুন লেগে ১১১ কর্মী পুড়ে মারা যায়। হাসিনা সরকার ওয়াদা দিয়েছিল ক্ষতিপুরণের। কথা ছিল কারণ খুঁজে শাস্তি দেয়ার। কিন্তু সে সব কিছুই হয়নি। স্বজন হারা পরিবারগুলিকে কোনরূপ ক্ষতিপুরণ দেয়া হয়নি। কারণ, তাজরীনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেলোয়ার হোসেন একজন সরকার সমর্থক ব্যক্তি।ফলে কারো পক্ষে তার পকেট থেকে স্বজনহারাদের জন্য ক্ষতিপুরণ আদায় করে দেয়াও সম্ভব হয়নি। শ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে কথা বলবে এমন কোন শ্রমিক সংগঠনও গড়ে উঠতে দেয়া হয়নি। কয়েক বছর আমিনুল ইসলাম একজন ব্যক্তি গার্মেন্টস ইন্ডাসট্রিতে ট্রেড ইউনিয়ন গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। সে অপরাধে তাকে লাশ হতে হয়। পুলিশ ৪ দিন পর তার লাশ উদ্ধার করলেই দায়িত্ব সেরেছে। আজ অবধি তার খুনের কোন বিচার হয়নি। কারো কোন শাস্তিও হয়নি। তাজরীোন আগুন লাগার দুই দিন পরে ২৬ নভেম্বর ২০১২-তে চট্টগ্রামে বহদ্দার পুকুর পাড়ে নির্মীয়মান ফ্লাইওভারের গার্ডার ধ্বসে ১৫ জন নিহত হয়। কিন্তু কেন সে নির্মীয়মান ফ্লাইওভারের গার্ডার ধ্বসে পড়লো তার কোন তদন্ত হয়নি। কারো কোন শাস্তিও হয়নি। কারণ এই ফ্লাইওভার নির্মাণের কার্যাদেশ পেয়েছিল প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু-র মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাকটো পারিসা লিমিটেড এবং মীর আক্তার কনসট্রাকশন দুটি ফার্ম যুগ্মভাবে। ফলে কে তাদের গায়ে আঁচড় দিবে? এভাবেই একের পর দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী দুর্বৃত্তগণ।

অর্থনীতিতে আওয়ামী নাশকতার আরো কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা দেশের চলমান বিদ্যুৎ সঙ্কট মেটানোর লক্ষ্যে স্থায়ী কোন সাশ্রয়ী পদক্ষেপ না নিয়ে চালু করেন ব্যায়বহুল কুইক রেন্টাল সিস্টেম। এর ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা পকেটে গেছে আওয়ামী দুর্বৃত্তদের। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশ। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি, বাংলাদেশ বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড)র ক্ষতি ২৫,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আওয়ামী সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রাইভেট কুইক রেন্টাল কম্পানি থেকে বেশি দামে বিদ্যুত কিনে তা কম দামে বিক্রি করে বিপিডিবি। রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট থেকে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুত কেনে ১৪ থেকে ১৭ টাকা। কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে তা বিক্রি হচ্ছে সাত থেকে আট টাকার মধ্যে। এখানে অর্ধেকই ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ভর্তুকির যে ৯,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে তার ৮০ শতাংশই দিতে হচ্ছে কুইক রেন্টাল থেকে বেশি দামে বিদ্যুত কেনায়।ভর্তুকির এ অর্থ যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় কর্ণেল ফারুক খান, আজিজ গ্রুপ, গার্মেন্টস রফতানিকারক মোহাম্মদী গ্রুপ, ফার্নিচার বিক্রেতা অটবি গ্রুপ, সালমান রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপ ইত্যাদি ন্যায় আওয়ামী রাজনীতির অর্থজোগানদারদের পকেটে। এভাবে শেখ হাসিনা তার পিতার ন্যায় রাজনীতিকে পরিণত করেছেন শুধু দেশ ধ্বংসের হাতিয়ারে নয়, বিপুল অর্থ-উপার্জনের হাতিয়ারেও।

 

নাশকতা শেয়ার বাজারে

যে কোন দেশের শিল্পায়নে অর্থের বিশাল জোগান আসে জনগণের পকেট থেকে। জনগণ তাদের অর্থ ফেলে না রেখে শিল্পকারখানার শেয়ার কিনে বিনিয়োগ করে। পাশ্চাত্যে তো এভাবেই অর্থনৈতিক অগ্রগতি এসেছে। শেয়ার মার্কেটের অর্থ নিয়েই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ভারত জয় করেছিল। কিন্তু আওয়ামী নাশকতা  ঘটেছে এ ক্ষেত্রটিতেও। শেখ হাসিনা যখন প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন তখন নভেম্বর ১৯৯৬’য়ে শেয়ার মার্কেট প্রচন্ড ধ্বস আসে। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসায় আবার ধ্বস আসে অক্টোবর ২০১১’য়ে। শেয়ার বাজারের দ্বিতীয়বারের কেলেঙ্কারিতে দেশের প্রায় ৩৩ লক্ষ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এতে নিঃস্ব হয়ে যান। শেয়ার বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাটের জন্য যারা দায়ী সরকার তাদের একজনকেও গ্রেফতার করেনি এবং শাস্তিও দেয়নি। অথচ দিশাহারা বিনিয়োগকারীরা যখন মতিঝিলে বিক্ষোভ মিছিল করে তখন প্রধানমন্ত্রীর অথনৈতিক উপদেষ্টা ড.মসিউর রহমান বলেন, “ওরা দেশের শত্রু। সমাজের শত্রু। ওদের জন্য মাথা ঘামানোর কোনো কারণ নেই। তাদের কষ্টে আমার মন কাঁদে না। শেয়ারবাজার ধ্বসে সরকারের মাথাব্যথার কিছু নেই। কারণ শেয়ারবাজারে পুঁজি প্রকৃত বিনিয়োগে যায় না… শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা দেশের অর্থনীতিতে কোনো অবদান রাখে না।”

অভয়অরণ্য চোর-ডাকাতদের 
প্রতিটি আওয়ামী শাসনামলেই দুর্বৃত্তদের পোয়া বারো হয়। দেশ পরিণত হয় চোর-ডাকাতদের জন্য অভয় অরণ্যে। সেটি যেমন মুজিব আমলে  হয়েছিল, তেমনি হাসিনার আমলেও। ডাকাতদের এখন আর ডাকাত দল গঠনের প্রয়োজন পড়েনা। তারা ডাকাতির জন্য ভূয়া বাণিজ্যিক কোম্পানি গড়ে তোলে। তখন ডাকাতি শুরু করে দেশের অর্থভান্ডারে। সেটি হাজার হাজার কোটি টাকার অংকে। আওয়ামী লীগের আমলে জনগণের অর্থের নির্মম লুটেরা হলো ডেসটিনি নামক একটি কোম্পানি। এ কোম্পানিটি ৩,২৮৫ কোটি টাকা মানি লন্ডারিং ও আত্মসাত করে। ডিসটিনির কর্মকর্তা হলেন জেনারেল হারুন। তদন্তে দুদক জেনারেল হারুনের কাছে জানতে চায় তার ব্যাংক একাউন্টে ২০ কোটি টাকা ঢুকলো কিভাবে? হারুনের জবাব,“মাসিক সম্মানী, ডিভিডেন্ড ফান্ড, এলাউন্স, কমিশন বাবদ এই টাকা আমার একাউন্টে ঢুকেছে। এছাড়া কিছু টাকা বাড়ি ভাড়া থেকেও এসেছে।” -(দৈনিক যুগান্তর, ০৫/১১/২০১২)। জেনারেল হারুন একজন আওয়ামী লীগ নেতা। দুদকের কি সামর্থ্য আছে এ নেতাকে একদিনের জন্যও জেলে নেয়ার? এতবড় দূর্নীতির পরও তাকে জেলে যেতে হয়নি।

ডেসটিনি ছাড়া আরো ত্রিশটির বেশি এম.এল.এম কোম্পানি অবাধে মানুষকে প্রতারণা করার সুযোগ পায় আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনে। এসব কম্পানির মধ্যে রয়েছে ইউনিপে টু ইউ, সাকসেস লিংক, গ্লোবাল নিউওয়ে, প্রভৃতি। দুদকের তদন্ত অনুযায়ী, কয়েকটি এম.এল.এম প্রতিষ্ঠান জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে ৪,৯৬৩ কোটি টাকার কিছু বেশি এবং এর মধ্যে ব্যক্তিগত একাউন্টে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল প্রায় ৪,৬০১ কোটি টাকা। -(দৈনিক প্রথম আলো ০৯/০৯/২০১২)। টাকা বানানোর এরূপ সুযোগ দেখলে কি দুর্বৃত্তরা কি আর বসে থাকে। মরা লাশের গন্ধ পেলে যেমন শকুন ছুটে আসে তেমনি অর্থলুটের সুযোগ দেখলে দেশবিদেশের ডাকাতেরাও ছুটে আসে। বাংলাদেশের সরকার দুর্বৃত্ত চোর-ডাকাতদের জণ্য তো সে সুযোগই সৃষ্টি করেছে। তাই ২০০৫-এ এগিয়ে আসে চায়না থেকে তিয়ানশি (বাংলাদেশ) লিমিটেড। -(দৈনিক আমাদের সময়.কম ০৫/১১/২০১২)। এসব চোর ডাকাতদের হাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কুশ্রী অর্থনৈতিক কেলেংকারির ঘটনা ঘটে সোনালী ব্যাংকের শেরাটন হোটেল ব্রাঞ্চে। সেটিও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের যোগসাজসে। বাংকের ঐ শাখা থেকে ৩,৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ বা প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকা লুট হয়ে যায়। হলমার্ক একাই নিয়েছে প্রায় ২,৬৬৮ কোটি টাকা। একটি ব্যাংকের একটি ব্রাঞ্চে একটি কম্পানির এই পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা আর কোথাও ঘটেনি। এটিই ব্যাংকিং খাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি। (দৈনিক প্রথম আলো, ০৫/০৯/২০১২)। বাংলাদেশে সকল ডাকাত মিলেও গ্রামগঞ্জ থেকে এত অর্থ বাংলাদেশের বিগত ৫০ বছরে লুটতে পারেনি। অথচ সে লুটের সাথে জড়িত প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ।

 

মূক্তি কীরূপে?

কিন্তু এরূপ সীমাহীন লুটপাঠও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে গুরুতর কিছু মনে হয়নি। এক গোলটেবিল অনুষ্ঠানে সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন,“ব্যাংকিং খাতে আমরা ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেই। এর মধ্যে মাত্র তিন বা চার হাজার কোটি টাকা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। এটা কোনো বড় অঙ্কের অর্থ নয়। এ নিয়ে হইচই করারও কিছু নেই। সংবাদ মাধ্যমে এটা নিয়ে অতিরিক্ত প্রচারণা করে দেশের ক্ষতি করছে। এমন ভাব যেন দেশের ব্যাংকিং সেক্টর ধ্বসে গেছে। এতে আমাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।” “সোনালী ব্যাংকের এক রূপসী বাংলা শাখায় জালিয়াতি করা অর্থের পরিমাণই তিন হাজার ৬০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অন্য কোনো বেসরকারি ব্যাংকে এই পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটলে ব্যাংকটি বন্ধ হয়ে যেত। যেমন বন্ধ হয়েছিল ওরিয়েন্টাল ব্যাংক।” -(প্রথম আলো ০৫/০৯/২০১২)।

এই অর্থমন্ত্রীই সম্প্রতি দিল্লি সফরে গিয়ে সাভারে ভবন ধ্বসে হাজারের বেশী মানুষের মৃত্যু সম্পর্কে বলেছেন, এটি কোন গুরুতর বিষয় নয়। বলেছেন, এ ভবন ধ্বসে গার্মেন্টস শিল্পের কোন ক্ষতি হবে না। বিকৃত ও অসুস্থ্য বিচারবোধ আর কাকে বলে। চোর-ডাকাত বা ব্যাভিচারিদের ঘৃনা করার সামর্থ্য চোর-ডাকাত ও ব্যাভিচারিদের থাকে না। কিন্তু দেশের নিরক্ষর সাধারণ মানুষদের তা থাকে। এমনকি শিশুদেরও সে সামর্থ্য্য থাকে। কিন্তু সে সামর্থ্য নাই হাসিনা সরকারের এসব মন্ত্রীদের। নাই খোদ শেখ হাসিনার ও তার দলীয় কর্মীদের। বাংলাদেশের মূল বিপদটি এখানেই। দেশ আজ জিম্মি এসব বিবেকহীন অসুস্থ্য ও দুর্বৃত্ত ব্যক্তিদের হাতে। তারা যতদিন ক্ষমতায় থাকবে তাতে শুধু দেশের নয়, ইসলাম এবং দেশবাসীর ঈমানের বিরুদ্ধেও নাশকতা বাড়বে। কতটা দ্রুততর সাথে এ আওয়ামী দখলদারীর সমাপ্তি ঘটবে, তার উপরই নির্ভর করছে বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা ও শান্তি। এবং নির্ভর করছে ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও ঈমানের হেফাজত। দেশের স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি, দেশবাসীর ঈমানের হেফাজত  এবং তাদের ইহকাল ও আখেরাতের কল্যাণে এ ছাড়া ভিন্ন পথ আছে কী? ১ম সংস্করণ ১২/০৫/১৩; ২য় সংস্করণ, ১৮/০২/২০২১।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *