বিবিধ ভাবনা -৯

 ফিরোজ মাহবুব কামাল

১. ভীরুতার নাশকতা

 ঈমান মানুষকে সাহসী মুজাহিদ বানায়। ভয় মানুষকে মুনাফিক ও কাপুরুষ বানায়। এবং অসম্ভব করে ঈমান নিয়ে বেড়ে উঠাকে। ভীরুদের কারণেই দেশে দেশে ফিরাউনদের দুঃশাসন প্রতিষ্ঠা পায়। কারণ, ভীরুদের উপর শাসন করাটা সহজ। তাই কোন দেশে দুর্বৃত্তদের দুঃশাসন থেকে বলা যায়, দেশটিতে সাহসী লোকদের বড্ড অভাব।

ঈমানদার হতে হলে মহান আল্লাহতায়ালাকে ভয় করতে হয়। পবিত্র কোর’আনের রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ: “লা তাখশাওহুম, আখশাওনী” অর্থ: “তাদেরকে ভয় করোনা, আমাকে ভয় করো।” যারা মহান আল্লাহতায়ালাকে ভয় করে, তারা অন্যদের ভয় করে না। আর যারা অন্যদের ভয় করে তারা ব্যর্থ হয় মহান আল্লাহতায়ালাকে ভয় করতে। ফলে অযোগ্য হয় জান্নাতের জন্য।

বাংলাদেশে হাসিনার অসভ্য শাসনের কারণ তার শক্তি বা সাহস নয়, সেটি জনগণের ভীরুতা। ভয় প্রতিবাদের সাহস কেড়ে নেয়। রাখালের কুকুর যেমন কয়েক শত ভেড়াকে শাসন করে, তেমনি কোটি কোটি ভীতু জনগণের উপর শাসন করে দুর্বৃত্ত সরকারের পুলিশ। বাংলাদেশ তারই ঊদাহরন।

 

২. অধিকার হরন করাই সরকারি নীতি

হাসিনা সরকারের মূল কাজটি হয়েছে জনগণের অধিকার হরন করা। খুন,গুম, নির্যাতন, চুরি-ডাকাতি, ভোটডাকাতিসহ সকল অপরাধ করার অধিকার রয়েছে সরকারের। যাকে ইচ্ছা তাকে জেলেও তুলতে পারে। ফাঁসিতেও ঝুলাতে পারে।  পুলিশ, আদালত, প্রশাসন এখন জনগণের অধিকার হননের হাতিয়ার।  অথচ জনগণের অধিকার নাই ভোটদান, মতপ্রকাশ ও রাস্তায় প্রতিবাদের।

 

৩. অদ্ভুদ প্রত্যাশা ও জনগণের ব্যর্থতা

জনগণের অভিযোগ, দেশে বিচার নেই, আইনের শাসন নাই, সর্বোপরি শান্তি নাই।। অভিযোগ, অপরাধীদের দিয়ে দেশ ভরে উঠছে। প্রশ্ন হলো, কেন অবিচার, কেন অশান্তি এবং কেন এতো অপরাধী –তা নিয়ে ভাবনা ক’জনের? এ জন্য জনগণ কি নিজেরা দায়ী নয়? কথা হলো, শাসন ক্ষমতায় চোর-ডাকাত বসিয়ে কি বিচার পাওয়া যায়? যেদেশের প্রধান মন্ত্রী নিজে ভোটচুরির অপরাধী, সেদেশে বিচার হবে এবং অপরাধে জোয়ার আসবে না  -সেটি কি কখনো আশা করা যায়?

এজন্যই মুসলিম জীবনে মূল মিশনটি স্রেফ নামায-রোযা পালন নয়, বরং দুর্বৃত্তির নির্মূল এবং সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। এ মিশনের জন্যই মুসলিম উম্মাহকে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি বলা হয়েছে। এবং সেটি পালিত না হলে নামায-রোযা পালনে কল্যাণ আসে না। তখন সভ্য সমাজ নির্মাণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। সে ব্যর্থতার নজির হলো বাংলাদেশ।

 

৪. স্রোত বাংলাদেশের দিকে

আনন্দবাজারের খবর, ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর অবধি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষিদের (বিএসএফ) হাতে সীমান্তে যারা ধরা পড়েছে তাদের মধ্যে ৩২৭৪ জন বাংলাদেশ যাচ্ছিল। এবং ১১১৫ জন যাচ্ছিল ভারতে। অতএব জনস্রোত ভারত থেকে বাংলাদেশের দিকে। অথচ ভারত চিৎকার করে, বাংলাদেশ থেক অনুপ্রবেশ ঘটছে ভারতে।

 

৫. নবীর আসনে ভোটচোর

 শাসকের আসনে বসেছেন মহান নবীজী (সাঃ) ও মহান সাহাবীগণ। অথচ বাংলাদেশে সে আসনে বসেছেন ভোটচোর, খুনি ও নানারূপ অপরাধের অপরাধী। হাসিনার ন্যায় ভোটচোর ও মুর্তিপূজারীকে ক্ষমতায় রাখার বিপদটি ভয়ানক। তখন দেশ অপরাধীদের দিয়ে ভরে উঠবে এবং পথ-ঘট মুর্তিতে ভরে উঠবে –সেটিই কি স্বাভাবিক নয়।  

সভ্য মানুষ কি কখনো অপরাধীর শাসন মেনে নেয়? বন্ধুত্ব করে কি অপরাধীর সাথে? মানুষের মান-মর্যাদা তার ঘর-বাড়ীতে ধরা পড়ে না। ধরা পড়ে কাকে সে নেতা রূপে বরণ করে নেয় -সেটি দেখে। ডাকাতের কুচরিত্রটি ধরা পড়ে যখন সে ডাকাত সর্দারকে কুর্নিশ করে। তেমনি ব্যক্তির চরিত্রহীনতা তখন ধরা পড়ে, যখন সে ভোটা-চোর দুর্বৃত্তকে মাননীয় বলে। অথচ বাংলাদেশে সেটিই হচ্ছে।

 

৬. পুরাপুরি সফল হয়েছে ভারত

 একাত্তরে ভারত কেন যুদ্ধ করে বাংলাদেশ বানালো -তা এখন বুঝতে বাঁকি থাকার কথা নয়। সেটি ছিল বাংলাদেশকে গোলাম বানানো এবং জনগণকে ইসলাম থেকে দূরে সরানো। ভারত এক্ষেত্রে পুরাপুরি সফল। গোলামীর আলামত, বাংলাদেশে সেই ক্ষমতায় যায়, যাকে ভারত চায়। ভোট ডাকাতে ক্ষমতায় বসিয়ে তাকে সমর্থণ দেয়। ইসলাম থেকে দূরে সরানোর নমুনা, শুরু হয়েছে মুর্তি গড়া ও মুর্তিপূজা। পাকিস্তান আমলে জনগণের অর্থে কখনো মুর্তি গড়া হয়নি। বরং সেটিকে হারাম গণ্য করা হয়েছে।

অথচ সেটি ভারতের ন্যায় এখন বাংলাদেশেও হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশে মুজিবের মুর্তিগড়া ও মুর্তিপূজা শুরু হয়েছে। এমনকি হিন্দুরাও কোন ব্যক্তির মুর্তিকে এরূপ পূজা করে না -যা বাংলাদেশে হচ্ছে। হিন্দুরাও মন্দিরে গিয়ে মুর্তির পায়ে হাত দেয় ও ফুল দেয়, বাংলাদেশে সেটি দেয়া হচ্ছে মুজিবের পায়ে।এবং হচ্ছে নামাযী জনগণের রাজস্বের অর্থে। কোন ঈমানদার এটি মেনে নিতে পারে? এরূপ মুর্তিপূজা মেনে নিলে কি ঈমান থাকে?

 

৮.পরীক্ষা ঈমানের

 শয়তান কখনোই মসজিদ গড়ে না। সে মুর্তিগড়ায় ও মুর্তিপূজায় আহবান করে। এভাবে জাহান্নামের দিকে টানে। তাই বাঙালী মুসলিমের জীবনে ঈমানের পরীক্ষাটি বিশাল। তারা কি মুর্তিনির্মাণ এবং মুর্তিপূজায় সমর্থণ ও রাজস্ব জুগিয়ে শয়তানের পক্ষ নিবে? না কি সেগুলির বিরোধীতা করবে? হারাম কাজে সমর্থণ ও অর্থ জোগানোর যে গুনাহ -তা কি নামায-রোযায় মোচন হয়? পাপের নির্মূলে মুসলিমকে তো আজীবন জিহাদ নিয়ে বাঁচতে হয়। তাকে শুধু দুর্বৃত্ত শাসকদের নির্মূলে জিহাদ করলে চলে না। জিহাদে নামতে হয় মুর্তিপূজার ন্যায় জাহিলিয়াতের নির্মূলেও। সে সূন্নত হযরত ইব্রাহীম (আঃ)’র। সে সূন্নত মহান নবীজীরও। তাই মুর্তি নির্মাণ করে কি মহান আল্লাহকে খুশি করা যায়?  বরং তাতে যা অনিবার্য হয় তা তো ভয়ানক আযাব।

 

৯. পূজার সংস্কৃতি মুসলিম জীবনে?

 শেখ হাসিনা উক্তি: “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।” একথা একমাত্র শয়তানকেই খুশি করে। শয়তান চায়, কালী পূজা, দুর্গা পূজা ও লক্ষি পূজার নানা দেব-দেবী পূজাকে মুসলিমের উৎসবে পরিণত হোক। এর লক্ষ্য, মুসলিম জীবনে পূজার সংস্কৃতির বিজয়। আর ব্যক্তির জীবনে সংস্কৃতির প্রভাব তো বিশাল। পূজা থেকে যে সংস্কৃতির উদ্ভব -তা ঈমানদারের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় কি করে? নামাযের সংস্কৃতি যেমন নামাযের দিকে টানে, পূজার সংস্কৃতি তেমনি পূজার দিকে টানবে সেটিই কি স্বাভাবিক নয়?

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *