আল্লাহর যিকর ও শয়তানের যিকর

ফিরোজ মাহবুব কামাল

মানব কীরূপে শয়তান হয়?

এ বিশ্বচরাচরে কোন স্থানই খালী থাকে না। তেমনি খালী থাকে না মানব-মনের অন্তরের ভূমিও। প্রতিটি ব্যক্তিকে অন্তরের সে ভূমিকে পূর্ণ করতে হয় যিকর দিয়ে। আরবী অভিধান অনুসারে যিকর শব্দের অর্থ স্মরণ। সে যিকর যেমন মহান আল্লাহতায়ালার হতে পারে তেমনি শয়তানেরও হতে পারে। প্রশ্ন হলো, শয়তানের যিকর আবার কীরূপ? কে সেই শয়তান? শয়তান শব্দটি যেমন আরবী ভাষায় ব্যবহৃত হয়, তেমনি হয়েছে ই্ংরেজী ও অন্যান্য ইউরোপী ভাষাতেও। শয়তানকে ইংরেজীতে devil বলা হয়্। শয়তান হাজির হয় বিশেষ এক চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ নিয়ে; সেটি হলো মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। এটিই হলো শয়তানের সবচেয়ে বড় দুর্বৃত্তি। মানব ইতিহাসে শয়তানের বহুল পরিচিত সে চারিত্রিক মডেলটি হলো ইবলিস। সে হলো একজন জ্বিন। তবে বিদ্রোহের সে শয়তানী ঝান্ডা নিয়ে যে কোন মানব সন্তানও ইবলিসের ন্যায় শয়তান হতে পারে। মানব চরিত্রে শয়তানের সে বিশেষ বিদ্রোহী রূপটি তুলে ধরার জন্য পবিত্র কোর’আনে যে শব্দকে বার বার ব্যবহার করা হয়েছে –সেটি হলো তার নিজ “হাওয়া”র আনুগত্য। আরবী অভিধান অনুযায়ী “হাওয়া’ শব্দটির অর্থ হলোঃ ব্যক্তির প্রবৃত্তি, খায়েশাত, ভালবাসা এবং ভাল লাগার বিষয়গুলি।

ঈমানদারের বৈশিষ্ঠ হলো, সে তার নিজের প্রবৃত্তি বা খায়েশাতকে মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের গোলামে পরিণত করে। কিন্তু বেঈমানের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন ভাবে ঘটে। সে নিজেই পরিণত হয় শয়তানে। মানব সন্তান কীরূপে ইবলিসের ন্যায় শয়তানে পরিণত হয় তার একটি বিশেষ প্রক্রিয়া রয়েছে। সেটি হলো নিজের  প্রবৃত্তি, খায়েশাত ও ভালবাসার বিষয়গুলিকে নিজের ইলাহ বা মাবুদ বানিয়ে নেয়া। তখন ব্যক্তির হাত-পা ও মেধা তাই করে যা তার “হাওয়া’ তথা প্রবৃত্তি, খায়েশাত এবং ভাল লাগার বিষয়গুলি করতে নির্দেশ দেয়্। ব্যক্তির প্রবৃত্তি তখন তার নিজের ইলাহ বা মা’বুদে পরিণত হয়। এবং সে ব্যক্তিটি নিজে পরিণত হয় সে ইলাহ’র অনুগত গোলামে। তখন প্রবৃত্তির গোলাম ব্যক্তিটির জীবনে শুরু হয় জাহান্নামের পথে চলার যাত্রা।

অপর দিকে ঈমানদার বাঁচে হৃদয়ে মহান আল্লাহতায়ালার যিকরকে ধারণ করে। বস্তুত এই যিকরই মহান আল্লাহতায়ালার সাথে তাঁর সংযোগ গড়ে তুলে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণাঃ “ফাজকুরুনি আজকুরুকুম”; অর্থঃ “তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করবো।” সদা সর্বদা মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণে থাকার এ হলো অতি সহজ উপায়। এ কাজে কোন জীবিত ও মৃত পীরের মধ্যস্থতার প্রয়োজন পড়েনা। ফলে যার মধ্যে সে যিকর নাই, তার সাথে মহান আল্লাহতায়ালার কোন সংযোগও নাই। তবে সে শূণ্যস্থানটি কখনো শূণ্য থাকে না, সেটি দখলে নেয় নিজের মধ্যে বেড়ে উঠা নিজস্ব শয়তানী প্রবৃত্তি। তাকে তখন বাঁচে নিজের প্রবৃত্তি তথা খায়েশাতের গোলামী নিয়ে। মানব জীবনে এটি এক ভয়ানক অবস্থা। তখন তার পক্ষে অসম্ভব হয় সিরাতুল মু্স্তাকীমে চলা।

 

যিকরশূণ্য হওয়ার বিপদ

আল্লাহতায়ালার যিকর থেকে গাফেল হওয়ার শাস্তিটি ভয়ানক। যিকরশূণ্য প্রবৃত্তির গোলামদের সাহায্য করা মহান আল্লাহতায়ালার নীতি নয়, বরং তাদের বিপদ বাড়াতে ঘাড়ের উপর বসিয়ে দেন শয়তানকে এবং সে তখন তার চিরসঙ্গিতে পরিণত হয়। পবিত্র কোর’আনে সে ঘোষণাটি এসেছে এভাবেঃ “যে ব্যক্তি রাহমানের যিকর থেকে গাফেল হয় তার উপর আমরা চাপিয়ে দেই শয়তান; সে পরিণত হয় তার সঙ্গিতে।  এবং সে শয়তানেরা বাধা দেয় সিরাতুল মুস্তাকীমের পথে চলায়। অথচ ভাবে, তারা সঠিক পথেই রয়েছে।” –(সুরা যুখরুফ, আয়াত ৩৬-৩৭)। মহান আল্লাহতায়ালার যিকর থেকে গাফেল হওয়ার শাস্তি যে কতটা ভয়াবহ -পবিত্র কোর’আনের উপরুক্ত আয়াতে সেটিই সুস্পষ্ট করা হয়েছে। তখন তার উপর যে আযাবটি অনিবার্য হয় তা হলো, শয়তানের সঙ্গি রূপে তারই নির্দেশিত পথ বেয়ে চলার আযাব। তখন জাহান্নামে পোঁছাটি তার জীবনে অনিবার্য হয়ে পড়ে।

মানুষ তো তখনই সফল হয় যখন তার প্রতি মুহুর্তের বাঁচাটি হয় নিজের কল্যাণ চিন্তা নিয়ে। তবে সে জন্য যা অপরিহার্য তা হলো কিসে কল্যাণ এবং কিসে অকল্যাণ –তা নিয়ে সঠিক কান্ডজ্ঞানটি থাকা। সে কান্ডজ্ঞান লোপ পেলে অকল্যাণের পথে চলা নিয়েও মানুষ উৎসব করে। তখন পাপের পথে চলেও পাপী ব্যক্তিটি ভাবে সে সঠিক পথেই চলছে। তাই ব্যক্তির কল্যাণে অতি জরুরী বিষয়টি শুধু পানাহার নয়, বরং তার চেয়েও জরুরী হলো কল্যাণ-অকল্যাণে সঠিক ধারণাটি অন্তরে সর্বক্ষণ জাগ্রত রাখা। তবে কিসে কল্যাণ এবং কিসে অকল্যাণ –সে বিষয়টি আবিস্কারের বিষয় নয়্। সেটি জানার জন্য কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিরও প্রয়োজন নাই। সে জন্য নবী বা রাসূল হওয়ারও প্রয়োজন নাই। সে মৌলিক জ্ঞানটুকু শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সবাই পায় মহাদয়াময় মহান আল্লাহতায়ালা থেকে। মহান রাব্বুল আলামীন সে গুরুত্পূর্ণ বিষয়টিরই ঘোষণা দিয়েছেন সুরা আশ-শামসে সাত বার কসম খাওয়ার পর। বলেছেনঃ “ফালহামাহা ফুজুরাহা ওয়া তাকওয়াহা।” –(সুরা আশ-শামস, আয়াত ৮)। অর্থঃ অতঃপর তিনি (মহান আল্লাহ) জানিয়ে দেন কোনটি অকল্যাণ তথা পাপের পথ আর কোনটি কল্যাণের পথ। পবিত্র কোর’আনে আর কোথাও এভাবে ৭ বার কসম খেয়ে একটি সত্যকে এভাবে তুলে ধরা হয়নি। ফলে এ আয়াতের গুরুত্বটি সহজেই অনুমেয়।

তবে এরূপ ইলহামী জ্ঞান লাভের জন্য জরুরী হলো সর্বদা মহান আল্লাহতায়ালার যিকর নিয়ে বাঁচা। কারণ সে যিকরের মাধ্যমেই সৃষ্টি হয় মহান আল্লাহর সাথে তার সরাসরি সংয়োগ। যাদের জীবনে সে যিকর নাই তাদের জন্য শাস্তিটি তাই অতি ভয়ানক। তাদেরকে বাঁচতে হয় কল্যাণ-অকল্যাণর ধারণা বাদ দিয়েই। তখন জাহান্নামে পৌঁছা ছাড়া তাদের সামনে ভিন্ন পথ থাকে না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে হুশিয়ারি এবং সে সাথে শাস্তির ঘোষণাটি এসেছে এভাবেঃ “এবং তোমরা তাদের মত  হয়োনা যারা ভূলে গেছে আল্লাহকে, অতঃপর (সে ভূলে যাওয়ার শাস্তি স্বরূপ) আল্লাহ তাদেরকে ভূলিয়ে দেন তাদের নিজেদের কল্যাণের বিষয়গুলি; এরাই হলো পাপাচারি”। -(সুরা হাশর, আয়াত ১৯)। অর্থাৎ যাদের চেতনা থেকে বিলুপ্ত হয় মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ, তাদের জ্ঞানের মনের ভূবন থেকে বিলুপ্ত হয় কিসে মঙ্গল এবং কিসে অমঙ্গল সে বিষয়ের ভেদাভেদ জ্ঞান। মানব জীবনে এর চেয়ে বড় বিকলঙ্গতা আর কি হতে পারে? তখন চুরি-ডাকাতি, মানব হত্যা, গণহত্যা, স্বৈরাচার, সাম্রাজ্যবাদ, এথনিক ক্লিনজিং, পারমানবিক বোমার ব্যবহারও জায়েজ গণ্য হয়।

 

 দখলদারী যেখানে শয়তানের

ইবলিস চোখে দেখা যায় না। কিন্তু যেসব মানব সন্তানগণ ইবলিসের শয়তানী এজেন্ডা নিয়ে বাঁচে তাদেরকে খালি চোখেই দেখা যায়। এবং দেখা যায় তাদের দুর্বৃত্তিগুলিও। পৃথিবী জুড়ে তাদের সংখ্যাটি বিশাল। শয়তানের এজেন্ডা হলো, যেখানেই মহান আল্লাহতায়ালার হুকুম সেখানে্ই বিদ্রোহ। সে বিদ্রোহ বাড়াতেই এজেন্ডা হলো, মানব মন থেকে মহান আল্লাহতায়ালার যিকরকে ভূলিয়ে দেয়া। শয়তান জানে, আল্লাহতায়ালার যিকর নিয়ে কেউ পতিতাপল্লিতে যায় না। অশ্লিল নাচ-গানও করে না। কাউকে খুনও করে না। যিকররত সে ব্যক্তিটি যেমন সূদ খায় না, তেমনি বিচারকের আসনে বসে কাফেরদের দেয়া আইনে বিচারও করে না। এরূপ প্রতিটি গর্হিত কাজই ঈমানদারের কাছে গণ্য হয় মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ রূপে। এতে ব্যর্থ হয় শয়তানী প্রকল্প। ফলে পতিতাপল্লী, সূদী ব্যাংক, সেক্যুলার রাজনীতি, শরিয়তশূণ্য আদালত চালাতে হলে মানুষের মন থেকে মহান আল্লাহতায়ালার যিকরকে বিলুপ্ত করতে হয়। এবং শয়তান সেটিই করে নাচগান, খেলাধুলা, অপসংস্কৃতি, কুসাহিত্য ও কুশিক্ষার মাধ্যম।

প্রশ্ন হলো, রাষ্ট্রের অঙ্গণে এরূপ মানবরূপী শয়তানের সংখ্যা কি কম? এরূপ শয়তানদের দিয়ে পরিপূর্ণ হলো বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলির রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধানমন্ত্রী ভবন, মন্ত্রীপরিষদ, পার্লামেন্ট, আদালত, পতিতাপল্লি, গুন্ডাপল্লী, সূদী ব্যাংক, মদের দোকান, ক্যাসিনো এবং সেক্যুলার রাজনৈতিক দলগুলি। এদের মনে আল্লাহতায়ালার  ভয় যেমন নাই, তেমনি নাই যিকর। এদের কাজ শয়তানের এজেন্ডাকে প্রতিক্ষেত্রে বিজয়ী করা। এদের কারণেই বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলিতে পরাজিত হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া শরিয়তি বিধান। এবং মুসলিম জনগণের জন্য অসম্ভব করে রেখেছে শরিয়তের পথে ফিরে যাওয়া। এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলি একযোগে কাজ করছে জনগণকে জাহান্নামে নিতে।     

আজ যেমন সমাজ জুড়ে দখল জমিয়ে আছে মানবরূপী শয়তানগণ, তেমনটি ছিল মহান নবীজী (সাঃ)’র আমলেও। আজকের ন্যায় তারাও আনুগত্য করতো নিজের প্রবৃত্তি বা নফসের। মহান আল্লাহতায়ালার প্রদর্শিত সিরাতুল মুস্তাকীম তাদের কাছে গুরুত্ব পায়নি। প্রতি যুগে এবং প্রতি দেশে তারা আবিস্কার করে নিজেদের পথ। তারা চায়, অন্যরা তাদের পথের অনুসারি হোক। রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ধর্ম নিয়ে নিজেদের  ধারণাগুলিকে বাজারজাত করতে তারা দোকান বসায় সমাজের সর্বত্র জুড়ে। তাই শুধু বিষাক্ত সাপ ও হিংস্র পশুদের চিনলে চলে না; চিনতে হয় শয়তানের এ কৌশলগুলিকেও। বাঁচতে হয় তাদের গড়া জাহান্নামের পথগুলি থেকেও। এ বিষয়ে মহান আল্লাহতায়ালা নসিহত করেছেন এমন কি নবীজী (সাঃ)কেও। বলা হয়েছেঃ “হে নবী, আপনি  তাকে অনুসরণ করবেন না যাকে গাফেল করেছি আমার যিকর থেকে এবং যে অনুসরণ করে তার নিজ প্রবৃত্তিকে; এবং সে সীমালংঘনকারী।“ –(সুরা কাহফ, আয়াত ২৮)।  একই রূপ হুশিয়ারি শোনানো হয়েছে সুরা ত্বাহাতে। বলা হয়েছেঃ “যে ব্যক্তি ঈমান আনেনি বিচার দিনের উপর এবং মেনে চলে তার নিজের প্রবৃত্তিকে -সে যেন আপনাকে পথহারা না করে। তাহলে আপনি ধ্বংস হয়ে যাবেন।” –(সুরা ত্বাহা, আয়াত ১৬)।  

 

প্রবৃত্তিকে যখন খোদা বানানো হয়

বহু দৈহিক রোগ চিকিৎসার অযোগ্য। কোন ঔষধই সে রোগগুলির বিরুদ্ধে কাজ দেয় না। তেমনি চিকিৎসার অযোগ্য হলো কিছু চেতনার রোগও। চেতনার সেরূপ একটি গুরুতর রোগ হলো নিজের নফস, ইচ্ছা, প্রবৃত্তি ও খায়েশাত’কে খোদা তথা মা’বুদ বানানো। খোদা বা মা’বুদ তো সেই -যাকে খুশি করতে নিজের সামর্থ্যকে কাজে লাগানো হয়। ইবলিস তার নিজের নফস বা ইচ্ছার গোলামী করতে গিয়ে মহান আল্লাহতায়ালা্র হুকুমকে অমান্য করেছিল। অপরদিকে ঈমানদারের মা’বুদ হলেন একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালা্। ফলে ঈমানদার ব্যক্তি তাঁর রাজনীতি, অর্থনীতি, আইন-আদালত, সম্পতির বন্ঠন, পোষাক-পরিচ্ছদ, পানাহার, ইত্যাদি বিষয়ে মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া বিধানকে মেনে চলে। এখানে বিদ্রোহ হলে সে আর মুসলিম থাকে না। সে বিদ্রোহ তাকে চিকিৎসার অযোগ্য করে –যেমন অযোগ্য করেছিল ইবলিসকে। ইবলিস আজও বেঁচে আছে বিদ্রোহের সে ঝান্ডা নিয়ে। আজকের ন্যায় নবীজী (সাঃ)’র যুগেও ইবলিসের অনুসারিদের সংখ্যা নগন্য ছিল না। প্রবৃত্তি পূজা তাদেরকে চিকিৎসা তথা হিদায়েতের অযোগ্য করেছিল। ফলে মহান নবীজী (সাঃ)’র ন্যায় মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষটি তাদের অভিভাবক হবেন ও জান্নাতের পথ দেখাবেন সেটিও সেদিন অসম্ভব হয়েছিল। প্রবৃত্তি পূজার নাশকতা যে কতটা ভয়ংকর –এ হলো তার নমুনা। পবিত্র কোর’আনে তাই বলা হয়েছেঃ “হে নবী, আপনি  কি তাকে দেখেছেন যে মা’বুদ বানিয়েছে তার প্রবৃত্তিকে? আপনি কি এমন ব্যক্তির অভিভাবক হতে পারেন?” –(সুরা ফুরকান, আয়াত ৪৩)।

প্রবৃত্তিপূজী ব্যক্তিকে নানা ভাবে পঙ্গ বা বিকলাঙ্গ করে তোলে। তবে সে পঙ্গত্বটি মূলতঃ বিবেকের। এবং সেটি  আসে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে আযাব রূপে। সে আযাবের আলামত হলো, ব্যক্তি ব্যর্থ হয় নিজের আক্বল বা বোধশক্তিকে কাজে লাগাতে। সে তখন দেখতে ব্যর্থ হয় বিশ্বজুড়ে বিরাজমান মহান আল্লাহতায়ালার বিশাল বিশাল নেয়ামতগুলিকে। এবং শুনতে ব্যর্থ হয় সত্য বাণীকে। ব্যর্থ হয় মিথ্যা থেকে সত্যকে এবং অন্যায় থেকে ন্যায়কে পৃথক করতে। এরাই রাজনীতিতে অতি দুর্বৃত্ত ও স্বৈরাচারি হয়। প্রতিষ্ঠা দেয় চুরি-ডাকাতি, গুম,খুন, ধর্ষণ ও বিরোধীদের নির্মূলের রাজনীতি। প্রতিষ্ঠা দেয় যুদ্ধ, বিশ্বযুদ্ধ ও গণহত্যা। এভাবেই পৃথিবীর বুকে এরা ভয়ানক আযাব নামিয়ে আনে। পবিত্র কোর’আনে তাই বলা হয়েছেঃ  “আপনি কি এমন ব্যক্তিকে দেখেছেন যে খোদা বানিয়ে নিল তার প্রবৃত্তি তথা খায়েশাতকে? এবং সেটি জেনেই আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করলেন। এবং মোহর এঁটে দিলেন তার শ্রবন শক্তির উপর এবং ক্বালবের উপর। এবং পর্দা লাগিয়ে দিলেন তার চোখের উপর। আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে তাকে হিদায়েত দিবে? অতঃপর তোমরা কি এ থেকে শিক্ষা নিবে না।“ -(সুরা জাসিয়া, আয়াত ২৩)।

তাই মুর্তিপূজারী, খৃষ্টপূজারী, বুদ্ধপূজারী এবং নাস্তিকগণই শুধু পথভ্রষ্ট নয়; পথভ্রষ্ট তারাও যারা আত্মপূজারী বা প্রবৃত্তিপূজারী হয়। এরূপ প্রবৃত্তিপূজার কারণে তারা ব্যর্থ হয় মহান আল্লাহতায়ালার পথে ফিরে আসতে। এরাই হলো মানব সমাজে সবচেয়ে পথভ্রষ্ট। এদের সম্বন্ধে  পবিত্র কোর’আনে বলা হয়েছেঃ “অতঃপর আপনার আহবানে তারা যদি সাড়া না দেয় তবে বুঝে নিন তারা গোলামী করছে নিছক নিজ “হাওয়া”র তথা প্রবৃত্তির। এবং তার চেয়ে পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে যে অনুসরণ করে তার প্রবৃত্তিকে”। –(সুরা কাসাস, আয়াত ৫০)। ব্যক্তির জীবনে প্রবৃত্তির এ গোলামী এতোটাই শক্ত ভাবে বাসা বাঁধে যে থেকে বেরিয়ে আসাটি এতো সহজ নয়। তাই বলা হয়েছে,  “আমরা যদি ইচ্ছা করতাম তবে আয়াতগুলির দ্বারা তাকে উপরে উঠাতাম। কিন্তু সে আঁকড়ে ধরলো জমিনকে এবং আনুগত্য করলো তার প্রবৃত্তিকে। তার উপামাটি কুকুরের ন্যায়, তার উপর কিছু চাপালেও সে জিহ্বা বের করে, ছেড়ে দিলেও সে জিহ্বা বের করে। যারা আমার আয়াতসমুহকে মিথ্যা বলে -এ উপমাটি তাদের জন্যই। এ কাহিনী তাদের শুনাতে থাকুন হয়তো তারা এনিয়ে চিন্তা ভাবনা করবে। -(সুরা আল-আরাফ, আয়াত ১৭৬)। তাই মুর্তিপূজা থেকে বাঁচাটিই একমাত্র কল্যাণে পথ নয়, বাঁচতে হয় প্রবৃত্তির পূজা থেকেও। শয়তান প্রতি যুগে ও প্রতি জনপদে ভিন্ন ভিন্ন স্ট্রাটেজী নিয়ে হাজির হয়। তাই মুসলিম জনপদে সে মুর্তিপূজার ছবক শেখায় না। বরং ব্যক্তিকে খাড়া করে মুর্তি  রূপে এবং তাকে সে মুর্তির পূজারীতে পরিণত করে। দেব-দেবীর বদলে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিকে পূজণীয় করে তোলে –যেমন প্রাচীন মিশরে ফিরাউনকে পূজণীয় করেছিল।    

প্রশ্ন হলো, যিকরের অর্থ কি শুধু দয়াময় মহান আল্লাহতায়ালার নামের যিকর? শুধু তাঁর নামের যিকরে সেটি সীমিত হলে ব্যক্তির চরিত্র, চেতনা ও কর্মে আমূল বিপ্লব আনে না। সে যিকর তাকে পূর্ণ ঈমানদারও বানায় না। বরং সেটিকে হতে হবে যেমন মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি দায়বন্ধতার যিকর, তেমনি হতে হবে পরকালে তাঁর কাছে জবাবদেহীতার যিকর। এমন যিকর ও ফিকিরই ব্যক্তির কর্ম, চরিত্র ও ধ্যানধারণায় বিশাল বিপ্লব আনে। তখন তার মনে সৃষ্টি হয় মহান আল্লাহতায়ালার ভিশন ও ইসলামের মিশন নিয়ে সচেতনতা। সে তখন মসজিদের জায়নামাযে বসে নিছক তাসবিহ পাঠকারী হয় না, বরং ময়দানে নামে অন্যায়ের নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার জিহাদে। সে জিহাদে সে বিনিয়োগ ঘটায় নিজের দৈহিক, আর্থিক, বুদ্ধিবৃত্তিক সকল সামর্থ্য। এমন কি প্রাণও বিলিয়ে দেয়। ঈমানদার শহীদে পরিণত হয় তো তেমনি এক যিকরের কারণে। কিন্তু যে যিকর ব্যক্তির চরিত্র, কর্ম ও আচরণে সেরূপ বিপ্লব আনতে ব্যর্থ হয় তাকে কি আদৌ যিকর বলা যায়?

 

ভন্ড যিকর ও শয়তানের এজেন্ডা

তবে আজকের মুসলিম জীবনে বড় ব্যর্থতাটি যিকরের প্রকৃত অর্থ বোঝায়। যিকর পরিণত হয়েছে স্রেফ মহান আল্লাহতায়ালার নামের যিকর; এতে নাই তাঁর প্রতি দায়বদ্ধতার স্মরণ। এমন যিকরকারীর মনে সৃষ্টি হয় না দায়িত্ব পালনে সামান্যতম আগ্রহ। বরং এরাই পরিণত হয় শয়তানের সৈনিকে। এরাই ভোট দেয়, অর্থ দেয় এবং লাঠি ধরে জাতীয়তাবাদী ও সেক্যুলারিস্টদের ন্যায় ইসলামের শত্রু শক্তিকে বিজয়ী করতে। বাংলাদেশের ন্যায় দেশগুলিতে কোটি কোটি এরূপ ভন্ড যিকরকারীর কারণেই বিজয়ী হয়নি মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তি বিধান। বরং বিজয়ী হয়েছে ইসলামের শত্রুপক্ষ। এ যিকরের তূলনা চলে এমন এক অবাধ্য গোলামের  সাথে যে তার মনিবের নামটি উচ্চারণ করতে করতে মুখে ফেনা তুলে, কিন্তু মনিব যখনই কোন কাজের নির্দেশ দেয় সেগুলি সে করে না। বরং সে তাই করে -যা তার মন যা চায়। অথচ মনিবের হুকুমের অবাধ্য হলেও তার নাম জপতে এ অবাধ্য চাকরটির কোন আপত্তি নেই। এরাই পীরের হালকায়, দরবেশী খানকায় বা জায়নামাযে বসে শত শত বার তাসবিহ পাঠ করে। কিন্তু অন্যায়ের নির্মূল এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় মহান আল্লাহতায়ালার যে কোর’আনী হুকুম –সেটি মানতে তাদের সামান্যতম আগ্রহ নাই্। সরকারি দফতরে বসে এরাই যিকর করে জালেম শাসকের এবং সকল সামর্থ্য নিয়োগ করে সে দুর্বৃত্ত শাসকের শাসন বাঁচাতে। রাজনীতিতে নেমে এরাই শরিয়ত প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করে। এরূপ চরিত্রের মানুষেরাই ফিরাউনকে খোদা বানিয়েছিল। এবং মুসলিম দেশে এরূপ যিকরকারীগণই আয়ু বাড়িয়েছে স্বৈরাচারি শাসনকে। বাংলাদেশে এরূপ চরিত্রের মানুষেরাই মুজিবের ন্যায় একজন খুনি, বাকশালী স্বৈরাচারি ও ভারতীয় কাফের শক্তির দাসকে জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধুর আসনে বসিয়েছিল। এবং এখন চাচ্ছে মুজিবের মুর্তি বানিয়ে তার পায়ে ফুল চড়াতে। এরাই শেখ হাসিনার ন্যায় ভোটচোর, খুনি ও স্বৈরাচারি জালেমকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও কওমী জননী বলে। এরাই যখন ব্যবসায় নামে তখন খোদা বানিয়ে নেয় অর্থকে। এবং যখন যুদ্ধে নামে তখন খোদা বানায় জেনারেলকে।

শয়তানের মূল এজেন্ডা হলো, মুসলিম জীবন থেকে যিকরের সংস্কৃতি বিলুপ্ত করা। শয়তানের ডি-ইসলামাইজেশন প্রকল্পের এটিই হলো মূল লক্ষ্য। একাজে শয়তানের ইন্সটিটিউশন বহুবিধ এবং বিপুল সংখ্যায়। ব্যক্তির জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান হলো তার সময়। সে সময় যদি যিকরে কাটে তবে তার সংযোগ ঘটে মহান আল্লাহতায়ালার সাথে; তাতে বিপ্লব আসে তার কর্ম ও চরিত্রে। তখন ঈমানদার ব্যক্তি তাঁর সকল সামর্থ্যের বিনিয়োগ ঘটায় ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণে। শয়তান চায় সে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে। তাই নর-নারীর জীবন থেকে সংযোগের সে মহামূল্যবান সুযোগটি কেড়ে নিতে শয়তানী প্রকল্প হলো খেলার মাঠে, নাচ-গানের আসরে, সিনেমা হলে বা আমোদ-প্রমোদের আড্ডায় তাদেরকে হাজির করা। এ লক্ষ্যে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলার নামে দেশের আনাচে কানাচে গড়ে তোলে অসংখ্য ইন্সটিটিউশন। সে কাজে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হয় রাষ্ট্রের রাজস্ব ভান্ডার থেকে। এভাবে সরকারী উদ্যোগে ব্যক্তির জীবন থেকে কেড়ে নেয়া হয় শত শত ঘন্টার মূল্যবান সময়। কেড়ে নেয় চিন্তা-ভাবনা ও আল্লাহতায়ালার সাথে সংযোগের ফুরসত। রক্তক্ষরণে যেমন দেহ প্রাণহীন হয়, সময়ক্ষরণে তেমনি চিন্তাশুণ্য হয় বিবেক। অথচ মুসলিমগণ যখন সর্বকালের সর্বশ্রষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দেয় এবং প্রতিষ্ঠা পায় এক বিশ্বশক্তি রূপে -তখন মুসলিম ভূমিতে এসব শয়তানী ইন্সটিটিউশন গড়ে উঠার সুযোগ পায়নি। শয়তানী শক্তির হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হওয়ার এটিই হলো সবচেয়ে ভয়ংকর দিক। দুর্বৃত্তগণ তখন জনগণের অর্থ-সম্পদ ও ব্যক্তি-স্বাধীনতাতেই শুধু হাত দেয় না, কেড়ে নেয় মহামূল্যবান সময় এবং তছনছ করে দেয় চেতনার ভূমি। সেরূপ ডাকাতির কাজে সমগ্র রাষ্ট্র পরিণত হয় শয়তানী শক্তির হাতিয়ারে।

 

 

যিকরের ইসলামের কারিকুলাম

ব্যক্তির জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো চিন্তা-ভাবনা করা। হাদীসে বলা হয়েছে, এক ঘন্টার চিন্তা-ভাবনা ৬০ বছর নফল ইবাদতের সময়। (সূত্রঃ ইমাম আল গাজ্জালী, ইসলাহে নাফস)। চিন্তা-ভাবনাই মানুষকে এ পার্থিব ও পরকালীন জীবন নিয়ে সিরিয়াস হতে শেখায় এবং সামর্থ্য দেয় সত্যকে জানা ও মিথ্যা বর্জনের। ঈমানদারের জীবনে এরূপ ধ্যানমগ্নতাই তো হলো যিকর। এরূপ লাগাতর যিকরই ব্যক্তিকে মহামানবে পরিণত করে। অপর দিক যিকরশূণ্য তথা চিন্তাশূণ্য মানুষ পরিণত হয় নিরেট পশুতে। পশু যেমন যেখানে খাদ্য পায় সেখানেই মুখ দেয়, তেমনি যিকরশূণ্য মানুষও যেখানেই অর্থপ্রাপ্তি দেখে সেখানেই হাজির হয়। এরাই অতীতে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ বা ফরাসী সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে মুসলিম দেশগুলিতে মুসলিম হত্যায় নেমেছিল। জীবনের এরূপ ক্ষতিকর বিনিয়োগ এবং যিকরশূণ্যতা যে কীরূপে জাহান্নামে নেয় -সেটি বুঝাতেই সুরা মুদাচ্ছেরে জাহান্নামের বাসিন্দাদের জবানবন্দী তুলে ধরা হয়েছে। জাহান্নামের বাসিন্দাদের যখন জিজ্ঞাসা করে হবে কীভাবে তোমরা এখানে পৌঁছলে, তখন তারা নানা কারণের সাথে এ কথাও বলবে, আমরা সময় কাটিয়েছি বাজে আড্ডায় – যেখানে ছিল না চিন্তাভাবনার পরিবেশ। অর্থাৎ তাদের জীবনে মহামূল্যবান সময়ের অপচয় ঘটিছে কোনরূপ চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই।  

ঈমানদারের মনে যিকরকে সার্বক্ষণিক বাঁচিয়ে রাখার জন্য ইসলামের রয়েছে নিজস্ব কারিকুলাম। প্রতিটি মুসলিমকে সে কারিকুলাম আমৃত্যু মেনে চলতে হয়। তাতে যেমন রয়েছে নিয়মিত কোর’আন পাঠ ও কোর’আন বুঝার বিধান, তেমনি রয়েছে নিয়মিত নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাতের বিধান। মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোর’আনকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন যিকরের কিতাব রূপে। যেমন সুরা ক্বাফে তিনি বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই এর (কোর’আনের) মধ্যে রয়েছে যিকর –সে ব্যক্তির  জন্য, যার রয়েছে ক্বালব, কাজে লাগায় তার শ্রবনশক্তিকে এবং সাক্ষী দেয় সত্যের পক্ষে ।” –(সুরা ক্বাফ, আয়াত ৩৭)। পবিত্র কোর’আনের ছত্রে ছত্রে যেমন বর্ণনা করা হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার অপার রহমত ও কুদরতের কথা, তেমনি রয়েছে ঈমানদারের বহুবিধ দায়িত্বের কথা। শোনানো হয়েছে যেমন জান্নাত ও দোযখের বর্ণনা; তেমনি বলা হয়েছে জান্নাত পাওয়ার পথ এবং জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার পথ। পবিত্র কোর’আনে নামাযকেও বলা হয়েছে যিকর। যেমন সুরা জুম্মাহ’তে বলা হয়েছে “যখন তোমাদের যখন নামাযের জন্য ডাকা হয় ছুটে যাও আল্লাহর যিকর (তথা নামায)’র দিকে। নামাযের ন্যায় রোযাও যিকর। রোযা বস্তুতঃ দীর্ঘকালীন যিকর; রোযাদারের জীবনে সকাল থেকে সন্ধা পর্যান্ত চলে সে লাগাতর যিকর। সে যিকর হৃদয়ে ধারণ করেই রোযাদার ব্যক্তি বিরত থাকে পানাহার ও অন্যান্য নিষিদ্ধ কর্ম থেকে। মুসলিমের জীবনে প্রবল যিকর নিয়ে হাজির হয় হজ্ব; ঈমানদার তখন মহান আল্লাহতায়ালার ঘরে হাজির হয়ে “লাব্বায়েক, আল্লাহহুম্মা লাব্বায়েক” –“হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির” বলে এবং আত্মীক সংযোগ ঘটায় তার প্রভূর সাথে। যিকর থাকে মু’মিনের ওযু, গোছল ও পানাহারের মাঝেও। ইসলামের প্রতিটি বিধান এভাবে মু’মিনের জীবনে যিকরের সংস্কৃতি নির্মাণ করে। এমন এক লাগাতর যিকরের কারণেই মু’মিনের চেতনার ভূমিতে শয়তান পা রাখার সুযোগ পায় না।

ব্যক্তি কতটা উপরে উঠবে এবং সমাজ কতটা সভ্যতর হবে -সেটি ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্যবসা-বানিজ্য ও কলকারখানার নির্ভর করে না। বরং নির্ভর করে জনগণ কতটা মহান আল্লাহতায়ালার যিকর নিয়ে বেড়ে উঠলো -তার উপর। যিকর বাড়ায় ব্যক্তির চেতনা ও সে সাথে মানবতার মান। মানব জাতিকে যারা সাম্রাজ্যাবাদ, উপনিবেশবাদ, গণহত্যা, এথনিক ক্লিনজিং ও বিশ্বযুদ্ধের ন্যায় নিরেট অসভ্যতা উপহার দিয়েছে তাদের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্যবসা-বানিজ্য ও কলকারখানার কোনরূপ কমতি ছিল না। বরং সে ক্ষেত্রগুলিতে তাদের বিশাল অগ্রগতি ভয়ানক অসভ্যতাই বাড়িয়েছে। একমাত্র চিন্তাশুণ্য ও বিবেকশূণ্য মানুষই সাম্রাজ্যাবাদ, উপনিবেশবাদ, গণহত্যা, এথনিক ক্লিনজিং ও বিশ্বযুদ্ধের ন্যায় অসভ্যতায় নামতে পারে। আর সে অসভ্য কর্মটি সম্ভব হয়েছিল তাদের জীবনে যিকর না থাকাতে।

ফলে শুধু দেহের বল, অর্থনৈতিক বল বা সামরিক বল বৃদ্ধিতে মানবের কল্যাণ নেই। কল্যাণ দেয় মানবিক বল বাড়াতে। এবং সেটি দেয় মহান আল্লাহতায়ালা নিয়ে যিকর তথা ধ্যানমগ্নতা। এবং সেটি বনজঙ্গল বা সুফি খানকায় বসে সম্ভব নয়। যিকরের শ্রেষ্ঠ অঙ্গণ হলো জিহাদের ময়দান। শয়তানের বোমা, ড্রোন ও মিজাইল হামলা ও জেল-জুলুমের মাঝে যে যিকর -সে যিকর জঙ্গলে বসে বা সুফি খানকায় বসে সম্ভব নয়। হাজার হাজার সুফি খানকার ব্যর্থতা তো এক্ষেত্রে প্রকট। জিহাদের ময়দানে মু’মিনের যে যিকর –সেটিই আসমান থেকে ফিরেশতা নামিয়ে আনে। নবীজী (সাঃ) ও সাহাবাদের যুগে তো সেটিই হয়েছিল। জিহাদ হলো সর্বোচ্চ ইবাদত।  জিহাদ ও যিকর যখন একত্রে চলে একমাত্র তখনই মানুষ মহামানবে পরিণত হয়। তখন নির্মিত হয় সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা। প্রাথমিক যুগের মুসলিমদের হাতে তো সেটিই হয়েছিল। আজও কি এছাড়া ভিন্ন পথ আছে?  ০১/১২/২০২০।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *