অধ্যায় ত্রিশ: টার্গেট ইসলাম ও মুসলিম

সহ্য হয়নি ইসলাম ও মুসলিম এ শব্দ দুটি

১৯৪৭-এ পাকিস্তান যখন প্রতিষ্ঠা পায়, তখন হিন্দুদের নামে ও হিন্দু ধর্মের ঐতিহ্য নিয়ে দেশে বহু প্রতিষ্ঠান ছিল। যেমন ভারতেশ্বরী হোম, রামকৃষ্ণ মিশন, জগন্নাথ হল, জগন্নাথ কলেজ, আনন্দ মোহন কলেজ (সিলেট), রাজেন্দ্র কলেজ (ফরিদপুর), ভোলানাথ হিন্দু এ্যাকাডেমী (রাজশাহী), ব্রজলাল কলেজ (বরিশাল) এরকম অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। দেশ জুড়ে শত শত রাস্তাঘাটের নাম ছিল হিন্দুদের নামে। বলা যায়, শহর এলাকার অধিকাংশ রাস্তার নামই ছিল হিন্দুদের নামে। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সেসব প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়নি। সে সময় বহু কংগ্রেস নেতা ও বহু হিন্দু জমিদার বাড়িঘর ফেলে হিন্দুস্থানে চলে যায়। তাদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তি রূপে সরকারি নথিভুক্ত হয়। কোন কোন দালানকোঠা সরকারি অফিস বা সরকারি কর্মচারির বাসস্থান রূপে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কারো হাতে ব্যক্তিগত মালিকানার দলিল তুলে দেয়া হয়নি। সেটি করা সরকারি নীতি ছিল না। অথচ বাংলাদেশ হওয়ার সাথে সাথে অবাঙালী ও পাকিস্তানপন্থী বাঙালীদের ঘরবাড়ী ও দলীয় অফিস জবর দখল শুধু আওয়ামী লীগের দলীয় নীতি নয়, সরকারি নীতিতে পরিণত হয়।

মুসলিম লীগের ঢাকার শাহবাগের প্রাদেশিক প্রধান দফতরটি কেড়ে নেয়া হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কায়েদে আযম বা ইকবালের নামই শুধু অপসারিত হয়নি, যেখানে ইসলাম ছিল সেখানেও হাত পড়েছে। নজরুল ইসলামের নাম থেকে ইসলাম কেটে দেয়া হয়েছে। তাই ঢাকার নজরুল ইসলাম কলেজ হয়ে যায় নজরুল কলেজ। অথচ আরবী ভাষায় শুধু নজরুল বলে কোন শব্দই নাই। আছে নজর বা নজরুল ইসলাম। নিছক ইসলাম বাদ দেয়ার স্বার্থে নজরুল ইসলামের নামও বিকৃত করা হয়েছে। ঢাকার ইসলামীয়া কলেজ থেকে ইসলামীয়া শব্দটি বিলোপ করা হয়। আক্রোশ শুধু ইসলামের উপর নয়, সেটি  গিয়ে পড়ে মুসলিম শব্দটির উপরও। তাই সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি কেটে ফেলা হয়। ইকবাল হলের নাম থেকে ইকবালকে অপসারণ করা হয়। অথচ আল্লামা ইকবাল শুধু পাকিস্তানের কবি নন, তিনি প্রকৃত অর্থেই ছিলেন বিশ্বকবি। তিন ছিলেন অতি উদার ও প্রশস্ত মনের কবি। তার স্বপ্ন ও ভাবনার মানচিত্র শুধু জন্মভূমি পাঞ্জাবকে নিয়ে ছিল না, তিনি স্বপ্ন দেখতেন সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের নিয়ে। দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানদের কল্যাণের চিন্তা তার ভাবুক মনকে এতোটাই আচ্ছন্ন করেছিল যে তিনি মুসলমানদের জন্য ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা নিয়ে আলাদা এক স্বতন্ত্র স্বাধীন দেশের ধারণা পেশ করেন। ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান ছিল তাঁরই ভাবনার ফসল। নিজের মাতৃভাষা পাঞ্জাবী হওয়া সত্ত্বেও তিনি কবিতা লিখেছেন উর্দু ও ফার্সী ভাষায়। তার কবিতা বাঙলার বহু লোকের কাছে অতি প্রিয়। তিনি শুধু কবিই ছিলেন না, ছিলেন বিশ্বমানের দার্শনিক। তিনি বুঝতেন, মুসলমানের দারিদ্র্যতা খাদ্যে বা বস্ত্রে নয়, বরং দর্শনে। এবং সেটি ইসলামী দর্শনে। দর্শনই জাতীয় উন্নয়নে পাওয়ার হাউসের কাজ করে। এটির কারণেই ব্যক্তির অন্তর্দৃষ্টিতে আসে দেখবার, ভাবনার এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্নদেখার সামর্থ্য। দর্শনই বিপ্লব আনে মানুষের চরিত্রে ও কর্মে। আনে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপ্লব। সে দর্শনকে বেশী বেশী মানুষের কাছে পৌছানের লক্ষ্যে উর্দু ও ফার্সি -এ দু’টি প্রসিদ্ধ ভাষাকে তিনি কবিতার মাধ্যম হিসাবে বেছে নেন। ফলে তাঁর প্রভাব ছিল সুদূর প্রসারী। দক্ষিণ এশিয়ার বুকে মুসলিম জাগরণে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এজন্যই দর্শন, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে তিনি অধিকতর বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবনে অনেক বিপ্লবাত্মক ও কল্যাণকর ভূমিকা রাখতে পেরেছেন। তিনি ছিলেন প্যান-ইসলামীক কবি। ভাষা, বর্ণ, অঞ্চল ও গোত্রের নামে গড়া দেয়ালগুলোকে তিনি মানতেন না, সেগুলি ভাঙ্গাই ছিল তার জীবনের ব্রত। পাঞ্জাবের সন্তান হয়েও তিনি স্বপ্ন দেখতেন সকল ভাষা, সকল বর্ণ ও সকল অঞ্চলের মুসলিমদের কল্যাণ নিয়ে।

আল্লামা ইকবালের ন্যায় একজন উদার মনের দার্শনিক কবিকে আজও সম্মান দেখায় বহু দেশের মানুষ। কিন্তু সে রূপ নৈতিক ও মানবিক সামর্থ্য ছিল না আওয়ামী বাকশালীদের। ইকবালের নামে বিশ্বের নানা দেশে নানা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তা ঘাট আছে। অথচ আওয়ামী লীগ এতোটাই সংকীর্ণ ও ছোট মনের যে তাঁর মত এহেন মহান ব্যক্তির নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ইকবাল হলো ছিল সেটি থেকে তার নাম মুছে দেয়। অথচ আল্লামা ইকবাল বাংলাদেশের কোন ক্ষতিই করেন নি। আর কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ? তিনি শুধু বর্তমান পাকিস্তানের নেতা ছিলেন না, ছিলেন সমগ্র ভারতের মুসলিমদের নেতা। তিনি হলেন সেই মহান নেতা যিনি নানা ভাষা, নানা প্রদেশ, নানা অঞ্চল ও নানা মজহাবে বিভক্ত ভারতের মুসলিমদের একতাবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। সে সময় এমন একতা অতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নইলে কি সেদিন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা সম্ভব হত?

পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা যে উপমহাদেশের মুসলমানদের কতবড় কল্যাণ করেছে সেটি বুঝা যায় ভারতীয় মুসলমানদের পরাজিত ও বিপন্ন দুরাবস্থা দেখলে। ভারতের বহু প্রদেশে মসজিদগুলিতে মাইকে আযান দেয়া এবং গরু কোরবানি দেয়া বা গরুর গোশতো খাওয়াও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা না পেলে কি বাংলাদেশ নামে কোন রাষ্ট্র জন্ম নিত? পশ্চিম বাংলা কি স্বাধীন হতে পেরেছে? কোনদিনও কি সে সম্ভাবনা আছে? ইখতিয়ার মহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির পর কায়েদে আযম ভিন্ন আর কোন নেতা কি বাঙালী মুসলিমদের এতোবড় উপকার করেছে? শেখ মুজিব ও তার অনুসারিগণ যে কতটা বিবেকশূন্য ও ভদ্রতাশূণ্য -সেটি বুঝতে কি এরপরও কিছু বাঁকি থাকে? জিন্নাহর নামেও বিশ্বের নানা দেশে নানা রাস্তাঘাট ও প্রতিষ্ঠান আছে। কিন্তু মুজিব সরকার এ মহান নেতার নাম কোন প্রতিষ্ঠানেই বরদাস্ত করেননি। জিন্নাহর নাম কেটে কোথাও কোথাও মুজিবের নাম বসানো হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন্নাহ হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে সূর্যসেন হল। প্রশ্নহলো, বাঙালী মুসলিমের জীবনে সূর্যসেনের অবদানটি কি জিন্নাহর চেয়েও অধিক?

 

 

শত্রুতা মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে

মহান আল্লাহতায়ালার পবিত্র কালামেও শেখ মুজিব ও তার আওয়ামী লীগ দলীয় সরকার কাঁচি চালিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামে ছিল পবিত্র কোরআনের আয়াত। পবিত্র কোরআনে ঘোষিত মহান আল্লাহতায়ালার সে অতি গুরুত্বপূণ বাণীটি হলো ‌‌”ইকরা বিসমে রাব্বিকাল্লাযী খালাক”। অর্থঃ পড় সেই মহান প্রতিপালকের নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছে। এটিই হলো পবিত্র কোরআনের প্রথম বাণী। তাতে রয়েছে “পড়া” বা জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে মনের অজ্ঞতা তা অন্ধকার সরনোর তাগিদ।মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার শুরুটি হয়এখান থেকেই। কিন্তু পবিত্র কোরআনের এ মহান বানিটি মুজিবের ভাল লাগেনি। জাহিলিয়াত তথা অন্ধকারে যাদের কারবার তারা তো শুধু অন্ধকারই বাড়াতে চাইবে, আলো নয়।তাই কোন কাফের সরকার নয়, মুজিব সরকার সে পবিত্র আয়াতটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে বিলুপ্ত করে। যার মধ্যে সামান্য ঈমান আছে এমন কোন ব্যক্তি কি পবিত্র কোরআনের আয়াতের উপর হাত দিতে সাহস পায়? শেখ মুজিব ও তাঁর দল আল্লাহ ও আল্লাহর দ্বীনের বিরুদ্ধে এতোটাই বিদ্রোহী যে -সে গর্হিত কাজে সামান্যতম দ্বিধাও করেনি। এমন অশালীন ও বেঈমানী কর্মের বিরুদ্ধে দলের অন্য কোন সদস্যদের পক্ষ থেকেও কোন প্রতিবাদ উঠেনি। যে দেশের ৯০% ভাগ মানুষ মুসলিম, সে দেশের সরকার যদি মহান আল্লাহতায়ালার এ আয়াতটিকে বরদাশত না করতে পারে -তবে কি মহান আল্লাহতায়ালা সে দেশের জনগণের উপর প্রসন্ন হতে পারেন? মুসলিম রূপে এটি তো ন্যূনতম দায়িত্ব,আল্লাহর প্রতিটি আয়াতের প্রতি সম্মান দেখানো। আওয়ামী লীগ সেটি করেনি। সেটি বিলুপ্ত করে শুধু একটি আয়াতের অবমাননা করেনি, প্রচণ্ড অবমাননা করেছে মহামহীমাময় মহান আল্লাহতায়ালার। এই একটি মাত্র অপরাধই কি শেখ মুজিব ও তার দলের উপর আল্লাহর আযাব নাযিলের জন্য যথেষ্ট ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট ডলারের নোটের উপর “We trust in God” (অর্থঃ আমরা আল্লাহর উপর বিশ্বাস করি”) লিখতে লজ্জা বোধ করে না। অথচ তারা ধর্মভীরু জাতি হিসাবে পরিচিত নয়। তাই প্রশ্ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামে কোরআনের আয়াত লিখতে শেখ মুজিব ও দলের কেন এ হীনমন্যতা? মহান আল্লাহতায়ালার বাণীর বিরুদ্ধে এরূপ নাশকতাই কি তাদের ধর্ম-নিরপেক্ষতা? সেক্যুলারিজমকে মাথায় তুলতে গিয়ে এভাবেই তারা আল্লাহ ও তাঁর মহান বাণীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও অবমাননা বাড়িয়েছে। এরই আরেক নজির, আওয়ামী লীগ সরকার রেডিও থেকে পবিত্র কোরআনের তেলাওয়াতও বাদ দিয়েছিল। কিন্তু তাতে বিক্ষোভে ভেঙ্গে পড়ে ঢাকা রেডির কর্মচারীরা। ফলে জনতার রোষে পড়ার ভয়ে আওয়ামী সরকার কোরআন তেলাওয়াত পুনরায় শুরু করতে বাধ্য হয়, কিন্তু সেটি শুরু হয় গীতা, বাইবেল ও ত্রিপাঠক পাঠের সাথে সমতা বিধান করে। অর্থাৎ শর্ত যোগ করা হয়,মহান আল্লাহর বানীর প্রতি সম্মান দেখাতে হলে গীতা, বাইবেল ও ত্রিপাঠকের ন্যায় অন্যসব গায়রুল্লাহর গ্রন্থকেও সম্মান দেখাতে হবে! এটি কি প্রকৃত ঈমানদারীর রূপ?

মুসলিম সংস্কৃতির স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ হলো, একাকী বা সমাবেশে কাউকে দেখা মাত্র আসসালামু আলাইকুম বলা। এটি এক পবিত্র দোওয়া এবং এর অর্থঃ আপনার উপর (মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে) সালাম তথা শান্তি বর্ষিত হোক। প্রতিটি ঈমানদার তাই কারো সাথে দেখা মাত্র তার প্রতি এ দোওয়া পাঠের মধ্য দিয়ে সে অন্য কথা শুরু করে। সারা দুনিয়ার মুসলিমদের এটিই সংস্কৃতি। একজন মুসলিমকে অমুসলিম থেকে আলাদা করার জন্য এই একটি মাত্র সাংস্কৃতিক উপাদানই যথেষ্ট। মহান নবীজী (সাঃ) সেটিই মুসলিমদের শিখিয়ে গেছেন। যখন কোন মুসলিম ব্যক্তি সরকারের প্রধান হয় তখন রাষ্ট্রের বুকে নবীজী (সাঃ)র সে শিক্ষাকেই রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করে। অথচ আওয়ামী লীগ ধর্মহীন একটি সেক্যুলার সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইসলামী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সালাম প্রদানের ন্যায় নবীজীর (সাঃ) মহান শিক্ষা ও মুসলিম সংস্কৃতির অতি মৌলিক উপাদানটিকেই বাদ দেয়া হয়। এ লক্ষ্যে রেডিও এবং টিভিতে নিষিদ্ধ হয় আসসালামু আলাইকুম বলা। প্রচলিত হয় ‘সুপ্রভাত’ ও ‘শুভরাত্রী’ জাতীয় সেক্যুলার শব্দ। নবীজী (সাঃ)’র সূন্নতকে যে ব্যক্তি এভাবে নির্মূল করে বা অসম্মান করে-তাকে কি কোন মুসলিম সামান্যতম সম্মান দেখাতে পারে? সেটি করলে কি ঈমান থাকে? তাতে কি মহান আল্লাহতায়ালা খুশি হন? চিন্তা-চেতনায় আওয়ামী-বাকশালী চক্র যে কতটা ইসলাম বিরোধী ও মহান অআল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী -এ হলো তার নমুনা।

 

যুদ্ধ ইসলামের বিরুদ্ধে

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার সাথে সাথেই দেশের সকল ইসলামী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে। আইন করে নিষিদ্ধ করে ইসলামের নামে সংগঠিত হওয়ার যে কোন প্রচেষ্টা। অথচ কম্যুনিজম, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি নানা ইসলাম বিরোধী মতবাদ নিয়ে দলগড়ার ছিল পূর্ণ স্বাধীনতা। একাত্তরের স্বাধীনতা তাই দেয় ইসলামের বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়া ও যুদ্ধ ঘোষণার স্বাধীনতা। বাঙালী জাতীয়তাবাদীদের কাছে সেটিই হলো একাত্তরের স্বাধীনতার চেতনা। অথচ ইসলামের প্রতি অঙ্গীকার নিয়ে বহু রাজনৈতিক দল বিশ্বের নানা অমুসলিম দেশে -এমনকি ভারতেও কাজ করে। অথচ সেরূপ উদ্যোগ নিষিদ্ধ করা হলো বাংলাদেশে। এটি কি গণতন্ত্র-প্রীতি? শেখ মুজিব যে শুধু স্বৈরাচারী ছিলেন তাই নয়,মনে প্রাণে প্রচণ্ড ইসলাম বিদ্বেষীও ছিলেন। তারই প্রমাণ, ইসলামের শত্রু কম্যুউনিস্ট বা সোসালিস্টদের রাজনীতিতে পূর্ণ আজাদী দিলেও খাঁচায় পুরেছিলেন ইসলামপন্থীদের। মুজিবের সে স্বৈরাচারী চেতনা এতোটাই উগ্র এবং মানবতা বিরোধী ছিল যে তা থেকে জন্ম নেয় একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার। আওয়ামী লীগ কর্মীরা যেভাবে লগি-বৈঠা নিয়ে রাজপথে দাড়ি-টুপিধারীদের পিটিয়ে হত্যা করে -সে শিক্ষাটি কি তারা দেশের আলোবাতাস ও ভাত-মাছ থেকে পেয়েছে? সেটিই তো শেখ মুজিবেরই শিক্ষা। মুজিবের সে শিক্ষা নিয়েই আবির্ভূত হয়েছে তার কণ্যা হাসিনা। তাই মুজিবের মৃত্যুর ৪০ বছর পরও ধূম পড়েছে ইসলামপন্থি নেতাদের ফাঁসী দেয়ার।বাংলাদেশে আজ শত শত মানুষ খুন হচ্ছে, শত শত মহিলা ধর্ষিতা হচ্ছে,হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ও শেয়ার মার্কেট থেকে ডাকাতি হচ্ছে –কিন্তু কোন অপরাধীকে কি শাস্তি দেয়া হচ্ছে? সেটি মুজিবামলে যেমন হয়নি, হাসিনার আমলেও হচ্ছে না। এসবই একাত্তরের ইসলামবিরোধী চেতনার ধারাবাহিকতা।

মুসলমানদের মাঝে একতা গড়া ও তাদেরকে সংগঠিত করা নামায-রোযা, হজ-যাকাতের ন্যায় ফরয। এব্যাপারে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রশিকে আঁকড়ে ধর,পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ো না”-(সুরা আল ইমরান, আয়াত ১০৩)। বলা হয়েছে,“যারা আল্লাহ তথা আল্লাহর রশিকে আঁকড়ে ধরলো তারাই হিদায়েত তথা সিরাতুল মুস্তাকীম পেল।” (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১০১)।এ হুকুম মহান আল্লাহতায়ালার। আর এ হুকুম মোতাবেক একতাবদ্ধ হওয়া ফরয। তাই একতার যে কোন প্রয়াসই হলো ইবাদত। আর বিভেদ বা বিচ্ছিন্নতার যে কোন প্রয়াসই হারাম। মুসলিম উম্মাহর মাঝ বিভেদ বা বিভক্তি সৃষ্টি তাই মহা পাপ। আল্লাহর রশি সমবেত ভাবে আঁকড়ে ধরার অর্থ হলো, পবিত্র কোরআনকে আঁকড়ে ধরা। দুনিয়ার বুকে কোন কিতাব যদি বিশুদ্ধ ভাবে একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার হয়ে থাকে, তবে সেটি আল কোরআন। এটিই মহান আল্লাহর মহান নেয়ামত। মুসলমানের উপর দায়িত্ব হলো, কোরআনের সে শিক্ষা বাস্তবায়নে জামাতবদ্ধ হওয়া। একাকী দেশ গড়া বা সমাজ গড়া দূরে থাক, একখানি ঘর বা দেয়াল গড়াও সম্ভব নয়। ঘর গড়তে বা দেয়াল গড়তেও অন্যের সাহায্য চাই। এজন্যই ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণের কাজে সংগঠিত হওয়া বা দলব্দ্ধ হওয়া ফরজ। কিন্তু শেখ মুজিব আইন রচনা করে আল্লাহর সে কোরআনী হুকুম পালন নিষিদ্ধ করেছেন। ইসলামের নামে সংঘবদ্ধ হওয়াকে দণ্ডনীয় ফোজদারি অপরাধে পরিণত করেছেন। অথচ বহু অমুসলিম দেশেও সেরূপ বর্বর নিষেধাজ্ঞাটি নেই। অথচ মুজিব পূর্ণ আজাদী দিয়েছেন ইসলামের শত্রুপক্ষের সংগঠিত ও একতাবদ্ধ হওয়ার –যারা মহান আল্লাহতায়ালার নিজ ভূমিতে তাঁর শরিয়তি আইন প্রতিষ্ঠার ঘোরতর বিরোধী। ফলে মুজিবের আমলে নাস্তিক, কম্যুনিস্ট, সোসালিস্ট ও চিহ্নিত কাফেররা পেয়েছে নিজ নিজ মত প্রচারের অবাধ সুযোগ। অথচ কম্যুনিজম ও সোসালিজমের ন্যায় মতবাদগুলো নিজ জন্মভূমিতেই আজ   স্থান পেয়েছে আবর্জনার স্তুপে। অথচ সে আবর্জনার উপাসকগণও পেয়েছে মুজিব সরকারের পূর্ণ সহযোগীতা। ইসলামের চিহ্নিত এসব শত্রুদের তিনি তাঁর নিজ দল তথা দেশের একমাত্র দল বাকশালেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এভাবে নিজের একচ্ছত্র মনোপলি প্রতিষ্ঠা করেছেন দেশের রাজনীতিতে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *