আল-কোর’আনে জিহাদ ও মুসলিম জীবনে গাদ্দারী
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on January 28, 2021
- Bangla Articles, ইসলাম
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
প্রসঙ্গ: সর্বশ্রেষ্ঠ নেককর্ম এবং সবচেয়ে বড় অপরাধ
মানব জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ নেক কর্মটি কাউকে কোটি টাকা দান করা নয়, বরং তাকে জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচানো। তেমনি সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি হয় কাউকে জাহান্নামে নেয়াতে। শয়তানের পক্ষের শক্তি সে ক্ষতিটি করে রাষ্ট্রের বুকে পবিত্র কোর’আনের শিক্ষা ও শরিয়ত বিধানকে বিলুপ্ত করে। রাষ্ট্রের সংবিধান, শিক্ষা-সংস্কৃতি, প্রশাসন ও রাজনীতি এ কাজে হাতিয়ার রূপে কাজ করে। ফলে এরাই হলো সমগ্র মানব ইতিহাসে সবচেয়ে অপরাধী চক্র। এরা যেমন আল্লাহর শত্রু, তেমনি মানব জাতির শত্রু। এদের কারণ রাষ্ট্র জনগণকে জাহান্নামে নেয়ার বাহনে পরিণত হয়্। অপর দিকে কোটি কোটি মানুষের জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ সে নেক কর্ম করাটি অতি সহজ হয়ে যায় যদি ইসলামী রাষ্ট্র গড়া যায়। তখন জনগণকে জান্নাতে নেয়া এবং জাহান্নামে আগুণ থেকে বাঁচানো রাষ্ট্রীয় নীতি, নেতাদের রাজনীতি ও দেশের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়। এজন্যই মানব সমাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ইসলামী রাষ্ট্র গড়া এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নেক কর্মটি হলো সে রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে জিহাদে নিয়োজিত হওয়া। শতকরা ৬০ ভাগের বেশী সাহাবী সে নেক কর্মে শহীদ হয়ে গেছেন। নবীজী (সা:)’র মহান সূন্নতটি এ ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূরণ এবং অনুকরণীয়। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে তিনি নিজের ঘর না গড়ে ইসলামী রাষ্ট্র গড়ে্ছেন এবং নিজে সে রাষ্ট্রের শাসকের পদে বসেছেন। এবং তার ইন্তেকালের পর তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহাবাগণ বসেছেন। সে রাষ্ট্রের কারণে কোটি কোটি মানুষ জান্নাতের যোগ্য রূপে গড়ে উঠতে পেরছে এবং মুসলিমগণ জন্ম দিতে পেরেছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা। শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ে কি সেটি সম্ভব হতো?
এ জীবনে সফল হতে হলে জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যটি বুঝা জরুরি। যেমন যাত্রাপথে জরুরি হলো গন্তব্যস্থলটি জানা। জন্ম ও মৃত্যু -নিছক এর মধ্যেই মানব জীবনের শুরু ও সমাপ্তি নয়। শুধু জন্ম ও মৃত্যুর জন্য মানুষকে সৃষ্টি করা হয়নি। মানুষের জন্ম একটি বিশেষ লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে। সে বিশেষ লক্ষ্যটি নির্ধারণ করে দিয়েছেন মহান স্রষ্টা নিজে। জীবনের সফলতা নির্ভর করে সে লক্ষ্য অর্জনে কতটা কামিয়াব হলো তার ভিত্তিতে। পশুর জীবন থেকে মানুষের জীবনের মৌলিক পার্থক্যটি এখানেই্। পশুর ন্যায় মানুষ নিছক পানাহারে জীবন সাঙ্গ করে না। বরং সে মহান স্রষ্টার নির্ধারিত লক্ষ্যটি নিয়ে বাঁচে, এবং সে লক্ষ্য পূরণে লড়াই করে ও প্রাণ দেয়। এরূপ বাঁচার মধ্যেই ঘটে তার জীবনের মূল পরীক্ষা। জীবনের সফলতা ও বিফলতা নির্ধারিত হয় সে পরীক্ষায় কৃতকার্যতার উপর। মহান আল্লাহতায়ালা সে পরীক্ষাটির কথা বলেছেন এভাবে: “যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, (তাঁর লক্ষ্য হলো) তিনি পরীক্ষা করবেন, তোমাদের মধ্যে কে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।–(সুরা মুলক আয়াত ২)।
পবিত্র কোর’আনের উপরুক্ত আয়াতটির মধ্যেই ঘোষিত হয়েছে মানব জীবনের মূল এজেন্ডা। মানব জীবনে সে পরীক্ষাটি হয় মৃত্যু অবধি। তাই ঈমানদার রূপে বাঁচার অর্থই হলো প্রতি মুহুর্তে পরীক্ষার মধ্যে থাকার ভাবনা নিয়ে বাঁচা। এখানে পরীক্ষা হয় ঈমান ও আমলের। জান্নাত পেতে হলে তাই শুধু ঈমান থাকলে চলে না, ঈমান ও আমল – এ উভয় অঙ্গণেই তাকে পরীক্ষায় পাশ করতে হয়।
তবে ব্যক্তির কোন আমলটি মহান আল্লাহতায়ালার বিচারে তাঁকে শ্রেষ্ঠতর করবে এবং পরকালে চুড়ান্ত সফলতা দিবে -সে বিষয়েও তিনি কোনরূপ অস্পষ্টতা রাখেননি। পবিত্র কোর’আনে সে বিষয়টি নানা ভাবে নানা স্থানে অতি স্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেছেন। চলার পথ থেকে কাঁটা সরানো, সালাম দেয়া, ভাল উপদেশ দেয়া এবং ক্ষুদার্ত মানুষকে খাদ্য ও দরিদ্রকে অর্থদান -এসবই ভাল নেক আমল। নেক আমল হলো নামায-রোযা আদায়, যাকাত দান, হজ্ব পালন এবং মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ। মানব জীবনে এরূপ নেক কর্ম নানাবিধ ও অজস্র, এবং তার মূল্যমানও ভিন্ন ভিন্ন। তাই মহান আল্লাহতায়ালা কর্মের সে মূল্যমানের সে ভিন্নতাটি তুলে ধরেছেন এভাবেঃ “হাজীদের পানি পান করানো এবং মসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে কি তোমরা সেসব ব্যক্তির নেক কর্মের সমতূল্য মনে করো যারা আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান আনে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করে? আল্লাহর নিকট তারা উভয়ে সমান নয়। আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না।” –(সুরা তাওবা, আয়াত ১৯)।
উপরুক্ত আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা নেক আমলের প্রায়োরিটি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। হাজীদের পানি পান করানো এবং মসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিঃসন্দেহে নেক আমল। কিন্তু তা কখনই জিহাদের সমকক্ষ হতে পারে না। যে রোগীর প্রচ্ণ্ড রক্তক্ষরণ ঘটেছে, তার তো সত্ত্বর রক্ত দরকার। তাকে ভিটামিন বড়ি সেবনে কালক্ষেপন করাতো ভয়ানক অপরাধ। তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্র যেখানে আল্লাহর দ্বীনের দুষমনদের হাতে অধিকৃত, সেখানে পথের কাটা সরানোয় মধ্যে কালক্ষেপণ প্রশংসনীয় কর্ম হতে পারে না। তাকে তো রাষ্ট্রের বুকে চেপে বসা বৃহৎ কাটাটি সরাতে হবে। এজন্য তাকে জিহাদে নামতে হবে। আজকের মুসলিমদের বড় সমস্যা, তাদের সে প্রায়োরিটি সম্পর্কিত জ্ঞানই লোপ পেয়েছে। ফলে দেশে মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ায় মনযোগ বাড়লেও জিহাদে মনযোগ বাড়েনি।
যেখানে সমগ্র রাষ্ট্র আল্লাহর দ্বীনের শত্রুদের হাতে অধিকৃত, সেদেশের মসজিদ মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ও যে শয়তানে হাতে অধিকৃত হবে -তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? তাই হাজার মসজিদ-মাদ্রাসা গড়েও বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশে ইসলামে বিজয় আনা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের উপর বাড়ছে আল্লাহদ্রোহী শয়তানী শক্তির দখল। জিহাদের গুরুত্ব বুঝাতে মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “যারা ঈমান আনে, হিজরত করে এবং নিজেদের সম্পদ ও নিজেদের জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারাই আল্লাহর নিকট মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ, আর তারাই সফলকাম।” –(সুরা তাওবা, আয়াত ২০। আরো বলেছেন, “(হে মুহম্মদ!) বল, “যদি আল্লাহ,তাঁর রাসূল এবং আল্লাহ পথে জিহাদ অপেক্ষা তোমাদের নিকট অধিক প্রিয় হয় তোমাদের পিতা,তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভ্রাতা, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের স্বগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশংকা করো এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা ভালবাস, তবে অপেক্ষা করো আল্লাহর হুকুম আসা অবধি। আল্লাহ পাপাচারীকে সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না।” –(সুরা তাওবা, আয়াত ২৪)।
জিহাদের গুরুত্ব ও শহীদের মর্যাদা
জিহাদের গুরুত্ব ও মর্যাদা যে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে কত অধিক -সেটি বুঝা যায় জিহাদের ময়দানে নিহত শহিদদের মহান মর্যাদা দেখে। পবিত্র কোর’আনে বলা হয়েছে: “যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত মনে করোনা, বরং তারা জীবিত এবং তারা তাদের প্রতিপালক থেকে জীবিকাপ্রাপ্ত হন।” –(আল-ইমরান, আয়াত ১৬৯)। ওহুদের ময়দানে যে ৭০ জন সাহাবী শহিদ হয়েছিলেন, পবিত্র কোরআনের এ আয়াতটি নাযিল হয়েছিল তাদের সন্মানে। মহান আল্লাহতায়ালা তাদেরকে মৃত বলতে নিষেধ করেছেন। মৃত্যু শব্দটি ব্যবহৃত হবে অন্যদের জন্য, শহিদদের জন্য নয়। তাদের জন্য এ শব্দের ব্যবহার হারাম। মহান আল্লাহতায়ালা দরবারে শহিদদের জন্য হলো এ এক ভিন্নতর পরিচয় এবং এক ভিন্নতর মর্যাদা। তবে মহান আল্লাহতায়ালার রাস্তায় যারা জিহাদে যোগদান করেন -তারা যদি শহিদ না হয় তবু তাদের মর্যাদা কম নয়। তারাও পান মহা পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি। সে বিষয়টি পবিত্র কোর’আনে ঘোষিত হয়েছে এ ভাবে: “যখম হওয়ার পরও যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছে তাদের মধ্যে যারা সৎকাজ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।”-(আল ইমরান, ১৭২)। সেদিন ঈমানদারদেরকে ভয় দেখানো হয়েছিল, শত্রুর বিপুল শক্তির। কিন্তু আল্লাহনির্ভর এ আত্মত্যাগী মোজাহিদগণ ছিলেন ভয়শূন্য। তাঁদের নির্ভরতা ছিল একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার উপর। তাদের সে আল্লাহ-নির্ভরতায় খুশি হয়েছিলেন মহান আল্লাহপাক। পবিত্র কোর’আনে তাঁদের সম্পর্কে বলা হয়েছে: “এদেরকে লোকে বলেছিল, তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জমায়েত হয়েছে, সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় কর। কিন্তু তা তাদের ঈমানকে দৃঢ়তর করেছিল,তারা বলেছিল,“আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কত উত্তম অভিভাবক।”-(আল ইমরান আয়াত ১৭৩)।
জিহাদ-বিরোধীতা: সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ
মানব জীবনে সবচেয়ে বড় অপরাধটি চুরিডাকাতি, ব্যভিচারি, মানুষ খুন নয়, সেটি হলো জিহাদের বিরুদ্ধে নামা বা তার বিরোধীতা করা। কারণ, জিহাদ হলো জমিনের উপর মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার লড়াই। কিছু লোকের চুরিডাকাতি, ব্যভিচারি, মানব খুনে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার সে মিশনটি পরাজিত হয় না। কিন্তু সেটি হয়, যদি রাষ্ট্র থেকে জিহাদ বিলুপ্ত হয়। জিহাদের বিলুপ্তির লক্ষ্যে দাঁড়ানোর অর্থ মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের বিপক্ষে যুদ্ধে নামা। সেটি মূলত শয়তানকে বিজয়ী করার প্রকল্প। এরূপ গুরুতর অপরাধের সাথে যারা জড়িত হয় তারাই জাহান্নামের বাসিন্দা হয়। বস্তুত এরাই হলো শয়তান। মানবকে জাহান্নামে নেয়াই তাদের মিশন। তাই সাহাবাদেরকে যারা কুফর শক্তির ভয় দেখিয়েছিল এবং মুসলিমদের জিহাদ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছিল -তাদের চরিত্রের বর্ণনা দিয়েছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। সেটি হলো: “এরাই হলো শয়তান, তোমাদেরকে তারা তাদের বন্ধুদের ভয় দেখায়, সুতরাং যদি তোমরা মু’মিন হও তবে তাদেরকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর।” –(আল-ইমরান, আয়াত ১৭৫)।
জিহাদ বিরোধীদের সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়াল আরো ঘোষণা: “যারা কুফরীতে ত্বরিতগতি, তাদের আচরণ যেন তোমাকে কষ্ট না দেয়। তারা কখনও আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ চান না আখেরাতে তাদের কোন অংশ দিতে, তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।” –(আল-ইমরান, আয়াত ১৭৬। আরো বলা হয়েছে, “যারা ঈমানের বিনিময়ে কুফরী ক্রয় করে তারা কখনো আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।–(আল-ইমরান, আয়াত ১৭৭। বলা হয়েছ: “কাফিরগণ যেন কিছুতেই মনে না করে যে, আমি অবকাশ দেই তাদের মঙ্গলের জন্য; আমি অবকাশ দিয়ে থাকি যাতে তাদের পাপ বৃদ্ধি পায় এবং তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। -(আল-ইমরান, আয়াত ১৭৮।
জিহাদ কেন অপরিহার্য?
জিহাদ মহান আল্লাহতায়ালার বিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য প্রক্রিয়া। মানব জাতিকে নিয়ে মহান আল্লাহতায়ালা নিজস্ব এজেন্ডা, ভিশন ও মিশন রয়েছে। জিহাদ হলো সে এজেন্ডা, ভিশন ও মিশনকে বিজয়ী করার বিধান। তিনি মানব জাতিকে পৃথিবী পৃষ্টে যেমন সফল দেখতে চান, তেমনি সফল দেখতে চান আখেরাতেও। এবং সে সফলতার জন্য মানব জাতিকে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হয়। জিহাদ বস্তুত সে সফল হওয়ার প্রক্রিয়া। এটি হলো মহান আল্লাহতায়ালা এজেন্ডা, ভিশন ও মিশন নিয়ে বাঁচার লড়াই। তাই যারা ঈমান নিয়ে বাঁচতে ও মরতে চায় তাদের বাঁচতে হয় জিহাদী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই। মহান আল্লাহতায়ালা বস্তুত এ জিহাদী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই সকল প্রকার দুর্বৃত্তদের থেকে ঈমানদের পৃথক করেন। তাই যেখানে ঈমানদার ও বেঈমানের বসবাস, সেখানে অপরিহার্য হয়ে পড়ে মহান আল্লাহতায়ালার জিহাদী প্রক্রিয়াটি। নইলে অসম্ভব হয় ঈমানদার ও বেঈমানের বিভাজন করাটি।
পবিত্র কোর’আনে জিহাদের সে বিশেষ উদ্দেশ্যটির কথা বলা হয়েছে এভাবে: “যদি কোন বিপর্যয় তোমাদের আঘাত করে, তবে অনুরূপ বিপর্যয় তো অন্যদের উপরও আঘাত হেনেছিল। এবং আমরা এ দিনগুলোর আবর্তন ঘটাই এ জন্য যে, আল্লাহ যাতে জানতে পারেন তাদেরকে যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের মধ্য থেকে বেছে নিতে পারে শহীদদের। আল্লাহ জালেমদের পছন্দ করেন না। এবং (জিহাদের মধ্য দিয়ে) এ জন্য আল্লাহ তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন যারা ঈমান আনে এবং ধ্বংস করেন যারা কাফের।” –(সুরা আল-ইমরান, অআয়াত ১৪—১৪১)। উপরুক্ত আয়াতে মহান আল্লাহায়ালার অতি গুরুত্বপূর্ন ঘোষণাটি হলো, তিনি তাঁর অতি প্রিয় বান্দাহদের নামাযের জামায়াত থেকে বেছে নেন না, সে বাছাইয়ের কাজটি করেন জিহাদের ময়দান থেকে। তাই যারা মহান আল্লাহায়ালার তালিকায় নিজের নাম লেখাতে চায় তাদেরকে জিহাদের ময়দানে হাজির হওয়া ছাড়া উপায় নাই। তাছাড়া জান্নাতের প্রবেশ পথটিও হলো এই জিহাদ। সেটি বলা হয়েছে এভাবে: “তোমরা কি মনে করেছো নিয়েছো যে, এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনো জানলেন না, তোমাদের মধ্য থেকে কারা জিহাদ করলো এবং কারা ছবর ধারণ করলো।” –(সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১৪২)।
উপরুক্ত আয়াতে জিহাদের দুটি বিশেষ উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে। এক). ঈমানদারদের জীবনে লাগাতর পরিশুদ্ধি। দুই). কাফেরদের নির্মূল। মানব জাতিকে বিপর্যয় থেকে উদ্ধারের জন্য এ দু্টি প্রক্রিয়াই অপরিহার্য। জীবাণু বাঁচিয়ে রেখে মানব জীবন বাঁচানো যায় না। তেমন দুর্বৃত্তদের বাঁচিয়ে রেখে সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা দেয়া যায় না। মহান আল্লাহতায়ালা তাই এ দুর্বৃত্তদের শিকড় কাটতে চান। তাঁর সে লক্ষ্যের কথা ঘোষিত হয়েছে এভাবে: “আল্লাহ চান হককে প্রতিষ্ঠা দিতে এবং চান কাফেরদের শিকড় কাটতে।” –(সুরা আনফাল, আয়াত ৭)। শিকড় কাটার সে কাজটি তিনি ফিরেশতাদের দিয়ে করেন না, সেটি করেন তাঁর ঈমানদার বান্দাদের মাধ্যমে। জিহাদকেই এজন্য তাদের উপর ফরজ করেছেন। প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার এটিই হলো মহান আল্লাহতায়ালার স্ট্রাটেজি। পবিত্র কোর’আনে এ প্রসঙ্গে আরো বলা হয়েছে: “অসৎ লোকদের সৎ লোকদের থেকে পৃথক না করা পর্যন্ত তোমরা যে অবস্থায় রয়েছো আল্লাহ সে অবস্থায় ছেড়ে দিতে পারেন না। অদৃশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তোমাদেরকে অবহিত করবেন না, তবে আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের উপর ঈমান আনো।। তোমরা ঈমান আনলে এবং তাকওয়া অবলম্বন করলে তোমাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। -(সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১৭৯।
মুসলিম জীবনে গাদ্দারী
আল্লাহতায়ালার কাছে মানব জাতির বিভাজন দুটি দলে। একটি দল বাঁচে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার জিহাদ নিয়ে; আরেকটি দল বাঁচে শয়তানের মিশনকে বিজয়ী করার যুদ্ধ নিয়ে। পবিত্র কোর’আনে সে বিভাজনটি ঘোষিত হয়েছে এভাবে: “যারা ঈমান এনেছে তারা জিহাদ করে আল্লাহর রাস্তায়; আর যারা কাফের তারা যুদ্ধ করে শয়তানের পথে। অতঃপর যুদ্ধ করো শয়তানের আউলিয়াদের তথা বন্ধুদের বিরুদ্ধে। নিশ্চয়ই শয়তানের ষড়যন্ত্র দুর্বল।” –(সুরা নিসা, আয়াত ৭৬)। অতএব ঈমান আনার সাথে সাথে ঈমানদারের উপর কিছু ঈমানী দায়িত্বও আসে যায়। তখন তাঁকে বাঁচতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার পথে জিহাদ নিয়ে। তাই ঈমান গোপন থাকার বিষয় নয়। ঈমান সুস্পষ্ট দেখা যায়। এবং সেটি দেখা যায় ব্যক্তির জীবনের লড়াই এবং সে লড়াইয়ের এজেন্ডার মধ্যে। তাই যে ব্যক্তির জীবনে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার জিহাদ নাই, সে ব্যক্তির ঈমানও নাই। নিষ্ক্রীয় থাকার মধ্যেও ঈমানদারী নাই। কারণ, সে নিষ্ক্রীয়তায় মহান আল্লাহতায়ালার দল ও তাঁর শরিয়তি বিধান বিজয়ী হয় না। বরং তাতে শয়তানের বিজয় বাড়ে। তাই সেটি প্রকৃত ঈমানদারের কাজ হতে পারে না।
আজকের মুসলিমদের জীবনে ব্যর্থতা বহুবিধ। তবে মূল ব্যর্থতাটি জিহাদ নিয়ে বাঁচায়। ব্যর্থতা এখানে মহান আল্লাহতায়ালার সৈনিক হওয়াতে। তাদের সে ব্যর্থতাটি ধরা পড়ে মুসলিম দেশগুলোতে শরিয়তী বিধানের বিলু্প্তিতে। ধরা পড়ে, নবীজী (সা:)’র ইসলাম -যাতে রয়েছে ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়তী আইন, হদুদ, জিহাদ, মুসলিম ঐক্য, সে ইসলাম বেঁচে না থাকাতে। তবে মুসলিম জীবনে যে যুদ্ধ নাই –তা নয়। বরং অসংখ্য রক্তাক্ত যুদ্ধের ইতিহাস রয়েছে। জান ও মালের বিপুল বিনিয়োগের ইতিহাসও আছে। মুসলিম দেশগুলোত আজ যেরূপ কুফরি আইন, জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম ও নৃশংস স্বৈরাচারি বর্বরতা -সেটি কি কোন পৌত্তলিক কাফেরদের কারণে? বরং মুসলিম ভূমিতে ইসলামের বিধান পরাজিত হয়েছে এবং শয়তানের প্রকল্পগুলো বিজয়ী হয়েছে তো তাদের হাতে -যারা নিজেদের মুসলিম রূপে পরিচয় দেয়। অর্থাৎ মুসলিম খাটছে শয়তানের সৈনিক রূপে। এরা অতীতে ব্রিটিশ কাফেরদের সৈনিক রূপে মুসলিম হত্যায় ইরাক, ফিলিস্তিন, সিরিয়াতেও যুদ্ধ করেছে। এবং নিজ দেশ দখলে নিয়েছে শয়তানের এজেণ্ডাকে বিজয়ী করতে। মুসলিমগণ এভাবেই ইতিহাস গড়েছে মহান আল্লাহতায়ালার সাথে গাদ্দারীতে। তাদের রাজনীতি, সমরনীতি, সংস্কৃতি ও আইন-আদালত পরিণত হয়েছে সে গাদ্দারীর হাতিয়ারে। এ গাদ্দারী যে আযাব নামিয়ে আনবে সেটি কি স্বাভাবিক নয়? এবং সেটি শুধু এ দুনিয়ায় নয়, বরং আখেরাতেও। ২৮/০১/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বিবিধ ভাবনা (৩২)
- সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও সাংস্কৃতিক কনভার্শন
- বিবিধ ভাবনা (৩১)
- বাঙালী মুসলিমের বিরুদ্ধে ভারতের কেন এতো আক্রোশ এবং প্রতিরোধই বা কীরূপে?
- অপরাধীদের রাজনীতি এবং বাঙালী মুসলিমের বিপদ
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
MOST READ ARTICLES
- বিবিধ প্রসঙ্গ-৫
- My COVID Experience
- The Hindutva Fascists & the Road towards Disintegration of India
- একাত্তরের প্রসঙ্গ ও কিছু আলেমের কান্ড
- বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস ও ভোটডাকাতদের নাশকতা
RECENT COMMENTS
- compare mobile phone deals unlimited data on বাঙালী মুসলিমের বিরুদ্ধে ভারতের কেন এতো আক্রোশ এবং প্রতিরোধই বা কীরূপে?
- Dr. Md. Kamruzzaman on বিবিধ ভাবনা (২৯)
- Md. Anisul Kabir Jasir on আত্মঘাতের পথে বাংলাদেশ: অভাব যেখানে শিক্ষা ও দর্শনের
- রেজা on শেখ মুজিবের সাথে কিছুক্ষণের স্মৃতি
- Mohammec on শেখ মুজিবের সাথে কিছুক্ষণের স্মৃতি
ARCHIVES
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018