হিন্দু সংস্কৃতির জোয়ার এবং বাঙালি মুসলিমের সাংস্কৃতিক সংকট

ফিরোজ মাহবুব কামাল

পূজার সংস্কৃতি বর্ষবরণে

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গণে বইছে এক নতুন জোয়ার। সেটি প্রতিবছর বর্ষবরণের নামে। এমনটি আগে কখনোই দেখা যায়নি। এটিকে বলা হচ্ছে সার্বজনিন বাঙালি সংস্কৃতি। কোন কিছুকে সার্বজনিন বলার অর্থ, সেটি কোন বিশেষ ধর্মের বা গোষ্ঠির নয়, সেটি সবার। ফলে বর্ষবরণের নামে যা কিছু হচ্ছে -সেটিকে হিন্দু ও মুসলিম উভয়ের সংস্কৃতি রূপে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। আসলে কি সেটি তাই? ঢাক-ঢোল পিটিয়ে উৎসব পালনের যে সাংস্কৃতিক আচার এতো কাল হিন্দুদের পূজা মন্ডপগুলোতে দেখা যেত, এখন সেটি আর মন্দিরে সীমিত নয়, সেটিকে নামিয়ে আনা হয়েছে ঢাকার রাজপথেও। নানা রংয়ের নানা জীব-জন্তুর মূর্তি মাথায় নিয়ে যারা মিছিলে নামে তারাও কোন মন্দিরের হিন্দু পুরোহিত  বা হিন্দু পূজারী নয়। তারা নিজেদের পরিচয় দেয় মুসলিম রূপে। এ চিত্রটি এখন আর শুধু ঢাকা শহরের নয়, সরকারি খরচে সেটিই সারা বাংলাদেশ জুড়ে হচ্ছে। কথা হলো, এতে কি কোন মুসলিম খুশি হতে পারে? যাদের মনে সামান্যতম ঈমান অবশিষ্ট আছে তাদের অন্তরে তো এ নিয়ে বেদনাসিক্ত ক্রন্দন উঠতে বাধ্য। কারণ, এ তো কোন সুস্থ সংস্কৃতি নয়। নির্দোষ কোন উৎসবও নয়। এটি তো মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উৎসব। এটি তো সিরাতাল মুস্তাকীম ছেড়ে জাহান্নামের পথে চলা অসংখ্য মানুষের ঢল। এটি তো পৌত্তলিকদের পূজা মন্ডপ রাজপথে নামানোর মহা-উৎসব। এ উৎসব তো শয়তানের বিজয়ের। এবং সেটি মুসলিমদের রাজস্বের অর্থে। আরো পরিতাপের বিষয়, ইসলামের সংস্কৃতি ও অনুশাসনের বিরুদ্বে এরূপ উদ্ধত শয়তানী বিদ্রোহের পাহারাদারে পরিণত হয়েছে দেশের পুলিশ ও প্রশাসন।

প্রশ্ন হলো, যে দেশের অধিকাংশ জনগণ হলো মুসলিম, সে দেশে কি কখনো এরূপ পূজামন্ডপ মাথায় নিয়ে মিছিল হয়? বিশ্বের অন্য কোন মুসলিম দেশে কি সেটি হয়? এ কাজ তো মুরতাদদের। এতে আনন্দ বাড়ে একমাত্র পৌত্তলিক কাফিরদের। জাহান্নামের পথে ছুটে চলা এরূপ অসংখ্য মিছিলে লক্ষ লক্ষ সতীর্থ দেখে পৌত্তলিকদের মনে আনন্দের প্রচণ্ড হিল্লোল উঠবে -সেটিই তো স্বাভাবিক। সে আনন্দেরই প্রকাশ ঘটেছে ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল কলকাতার আনন্দ বাজার পত্রিকায়। এটি যে হিন্দুর পূজা মন্ডপ নিয়ে মিছিল -তা নিয়ে কোন পৌত্তলিকের সন্দেহ হওয়ার কথা নয়। সন্দেহ হয়নি আনন্দবাজার পত্রিকারও। তাই পত্রিকাটির রিপোর্ট: “কার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে! কখনও মনে হচ্ছিল কলকাতার কলেজ স্কোয়ার বা একডালিয়ার পুজো মণ্ডপ। কখনও বা শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসবের চেহারা। তা সে রমনার বটমূলের বৃন্দগানই হোক কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাজপথে মঙ্গল শোভাযাত্রা। পুজো, বসন্ত উৎসবের মিলমিশে একাকার ঢাকার নববর্ষের সকাল।”

আনন্দ বাজার পত্রিকা রাজপথের একজন অতি উৎসাহীর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছে,‘‘এটাই এখন আমাদের জাতীয় উৎসব। যেখানেই থাকি ঠিক চলে আসি।’’ প্রশ্ন হলো, এমন পূজার মন্ডপ নিয়ে মিছিল বাঙালি মুসলিমের জাতীয় উৎসব হয় কি করে? কোনটি জাতীয় উৎসব এবং কোনটি নয় -সেটি কে নির্ধারণ করবে? সে ফয়সালা দিবে কি ইসলামবিরোধী এ বিদ্রোহীগণ?  এর পিছনে সরকারের বিনিয়োগ কতখানি সে বর্ণনাও দিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা। লিখেছে, “হেলিকপ্টার থেকে ফুল ছড়িয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকেরা দড়ির ব্যারিকেড দিয়েও উৎসাহী জনতাকে ঠেকাতে পারছেন না। অষ্টমীর রাতে কলকাতায় যেমন হয়। শোভাযাত্রায় মন্ত্রী-সান্ত্রি সবাই ছিলেন। শোভাযাত্রা ঘিরে থিকথিক করছিল পুলিশ। শুক্রবার রাতে দেখছিলাম রাস্তায় ছেলেমেয়েরা ভিড় করে আলপনা দিচ্ছেন। গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেমনটা এখন পুজোর সময়ে কোনও কোনও রাস্তায় হয়।” এ বিজয় নিশ্চিত হিন্দু সংস্কৃতির। তাতেই আনন্দের হিল্লোল বইছে আনন্দবাজার পত্রিকার রিপোর্টে।

পুরা আয়োজন যে ছিল পূজার, সেটি অনেক বাঙালি মুসলিমের নজরে না পড়লেও আনন্দবাজারের হিন্দু সাংবাদিকের নজরে ঠিকই ধরা পড়েছে। তাই তিনি লিখেছেন,“শুধু পুজো নয়, কলকাতার সরস্বতী পুজো, ভ্যালেন্টাইন্স ডের মেজাজও যেন ধরা পড়ল বাংলাদেশের এই নববর্ষে! জাতি-ধর্মের বেড়া ডিঙিয়ে এ যেন সর্বজনীন উৎসব।’’ প্রশ্ন হলো, হিন্দুর পূজা কি কখনো ধর্মের বেড়া ডিঙিয়ে ইসলামের চৌহদ্দিতে প্রবেশ করতে পারে? হিন্দুর পূজা কি মুসলিম সন্তানের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়? অথচ সে চেষ্টাই হচ্ছে জনগণের রাজস্বের অর্থে। সরকারের এজেন্ডা, হিন্দুর সে পূজাকেই বাংলাদেশে সার্বজনীন করা। বাংলাদেশের সরকার যে সে এজেন্ডা নিয়ে বহু কিছু করেছে এবং বহু দূর অগ্রসর হয়েছে, তাতেই আনন্দবাজারের মহা-আনন্দ। সে আনন্দটি মূলত ভারত সরকারেরও। সে ভারতের হিন্দুত্ববাদী হিন্দুদেরও। বাংলাদেশে তো ভারত একটি হিন্দুত্বতোষণের সরকারকেই যুগ যুগ ক্ষমতায় রাখতে চায়। সম্প্রতি আনন্দবাজার একটি নিবন্ধ ছেপেছে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের দূরাবস্থা নিয়ে। কিন্তু সে প্রবন্ধে এ কথাও লিখেছে, বর্তমান সরকার যতই স্বৈরাচারী হোক এর বিকল্প নাই। কারণ, বিরোধী শিবিরে রয়েছে সাম্প্রদায়িক শক্তি। এভাবে আনন্দবাজার পত্রিকাটি ভারত সরকারের মতই নির্লজ্জ ভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে নৃশংস এক ফ্যাসিবাদী সরকারকে। এই হলো তাদের গণতন্ত্র প্রেম। তাদের কথা, গণতন্ত্র কবরে যাক, কবরে যাক নাগরিকদের মৌলিক মানবিক অধিকার, কিন্তু বেঁচে থাক এবং বলবান হোক হিন্দুত্বের সংস্কৃতি।

 

স্ট্রাটেজী: ইসলাম প্রতিরোধের

আনন্দবাজার একই দিনে আরেকটি রিপোর্টে ছেপেছে, সেটি মৌলবাদকে পথে নেমে মোকাবিলা বাংলাদেশে শিরোনামে। তাতে শেখ হাসিনার প্রশংসায় পত্রিকাটি অতি গদগদ। মৌলবাদ চিত্রিত হয়েছে ইসলাম নিয়ে বাঁচার সংস্কৃতি ও তা নিয়ে রাজনীতি। যারা ইসলামের প্রতি সে অঙ্গীকার নিয়ে বাঁচতে চায় তারা চিত্রিত হচ্ছে “অন্ধকার অপশক্তি” রূপে।  তাই তাদের কাছে প্রতিটি ইসলামী দলই হলো অপশক্তি –সেটি যেমন জামায়াতে ইসলামী, তেমনি হেফাজতে ইসলাম। একই অপশক্তির শিবিরে শামিল করা হয়েছে বি.এন.পি’কেও। ইসলামী শক্তির মোকাবেলায় নববর্ষের মতো একটি অনুষ্ঠানকেই হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়ায় পত্রিকাটি প্রচণ্ড খুশি। লক্ষ্য এখানে বাঙালি মুসলিমদের হিন্দু বানাতে না পারলেও হিন্দুত্বের সংস্কৃতিতে দীক্ষা দেয়া -যাকে বলা হয় সাংস্কৃতিক কনভার্শন। লক্ষ্য, মুসলিম সন্তানদের ইসলাম থেকে দূরে সরানো। তাই তারা নেমেছে সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামের ব্যানারে। ইসলাম থেকে দূরে সরানোর প্রজেক্টের সফলতা দেখে আনন্দের জোয়ার ছুটেছে আনন্দবাজারের উক্ত রিপোর্ট। ইসলামের বিশ্বব্যাপী জাগরণের প্রতিরোধে এরূপ উৎসব মূলত আন্তর্জাতিক সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অংশ। ইসলাম বিরোধী এই আন্তর্জাতীক কোয়ালিশন শুধু যে স্ট্রাটেজীক পরিকল্পনা দিচ্ছে তা নয়, সে স্ট্রাটেজীর বাস্তবায়নে বিশ্বের তাবদ কাফির শক্তি শত শত কোটি টাকার অর্থও দিচ্ছে। সরকারি অর্থের পাশাপাশি এ বিদেশী অর্থে বিপুল ভাবে বেড়েছে মিছিলের সংখ্যা ও জৌলুস। মিছিলে মিছিলে ছেয়ে গেছে সমগ্র দেশ।

কথা হলো, আল্লাহর স্মরণকে ভূলিয়ে দেয়ার এর চেয়ে সফল হাতিয়ার আর কি হতে পারে? শয়তান একাজটি নর-নারীদের শুধু মন্দিরের মুর্তির সামনে হাজির করে করেনা, রাজপথের মিছিলে নানা প্রকার মুর্তি নামিয়ে এনেও করে। নানা উৎসবের নামে ঢাকার রাস্তায় তো সেটিই হয়। শেখ হাসিনার সরকার সেসব উৎসবকেই প্রবলতর করছে। এজন্য তার স্লোগান “ধর্ম যার যারা, উৎসব সবার।” এ স্লোগানের ব্যানারে হিন্দুত্বের উৎসবকে বাঙালি মুসলিমদের উৎসবে পরিণত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তার এরূপ কাজে একমাত্র শয়তান ও তার অনুসারীগণই খুশি হতে পারে। এতো মহান আল্লাহর স্মরণ ভূলিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র। অথচ আল্লাহর স্মরণ থেকে এরূপ বিস্মৃত  হওয়ার ভয়ানক শাস্তিটি হলো: তখন শয়তানকে সঙ্গি রূপে বসানো হয় সকল অবাধ্য ব্যক্তিদের ঘাড়ে। যার প্রতিশ্রুতি এসেছে সুরা যুখরুফের ৩৬ নম্বর আয়াতে। শয়তান যাতে ঘাড়ে না চেপে বসে এজন্যই মুসলিমদের সর্বদা মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ বা জিকিরে থাকতে হয়।

ইসলাম থেকে দূরে সরানোর শয়তানী মিশনে শুধু হিন্দুত্ববাদীরা নয়, সে অভিন্ন মিশনে নেমেছে যেমন কাফেরদের অধিকৃত জাতিসংঘ, তেমনি ইউনেস্কো। তাই ইউনেস্কো ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’-এর পক্ষ থেকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে নববর্ষের ঢাকার মঙ্গল শোভাযাত্রাকে। ইসলাম-দমন প্রকল্পের অংশ রূপেই সিলেবাস থেকে বাদ দেয়া হয়েছে কুর’আন-হাদীসের পাঠ, বাদ পড়েছ নবী চরিত, নিষিদ্ধ হয়েছে পিস টিভি ও ইসলামী টিভি চ্যানেল এবং জেলে ঢুকানো হয়েছে পবিত্র কুর’আনের বিখ্যাত মোফাচ্ছেরদের। সে সাথে  বন্ধ করা হয়েছে তাফসির মাহফিল এবং ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠিত বিবিধ সংগঠন। অপর দিকে শত শত কোটি টাকা দিয়ে হাজার হাজার এনজিও কর্মীদের হাতে ডুগি, তবলা ও হারমনিয়াম তুলে দিয়ে মাঠে নামা হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের নাচগান শেখাতে। এভাবেই বাঙালি মুসলিমদের মাথার উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে শয়তানের সাংস্কৃতিক যুদ্ধ। কিন্তু এ যুদ্ধে অধিকাংশ বাঙালি মুসলিম বাঁচছে আত্মসমর্পণ নিয়ে। তাই শয়তানের মোকাবেলায় সৈনিক নাই।

ইসলামে শত্রুপক্ষের মতলব গোপন নয় ঘোষণা দিয়েই তারা মাঠে নেমেছে তারা আঘাত হানতে চায় ইসলামের তাওহীদের মূলে তাদের স্পর্ধা এতোটাই বেড়েছে যে, উপাস্য রূপে খাড়া করেছে মহাপ্রভূ আল্লাহতায়ালার বদলে মানুষকে ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিলে অঞ্জন রায় নামক ব্যক্তি দৈনিক আনন্দ বাজারে রিপোর্ট করে: “সেই কবে এই জনপদের কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ার গ্রামের আখড়ায় ফকির লালন সাঁইজি উচ্চারণ করেছিলেন, ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’। সেই উচ্চারণকে ধারণ করেই সত্যিকারের মানুষ হওয়ার বিষয়ে এ বারের শপথ ছিল ঢাকায়, বর্ষবরণের মঙ্গল শোভাযাত্রায়। মানুষের ভিড়ে এ বারের শোভাযাত্রার মিছিল হয়ে উঠেছিল মহামিছিল। সেই পুরনো পোশাকের ঢাকিরা সার বেধে বোল তুলেছেন ঢাকে। তালে তালে নাচছে শিশু থেকে বৃদ্ধ। জানান দিচ্ছে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সব মানুষের উৎসব পয়লা বৈশাখের অমিত শক্তির কথা।”

পত্রিকাটি সোনার মানুষ হওয়ার পথও বাতলিয়ে দিয়েছে। সেটি মহান আল্লাহতায়ালার ইবাদতের পথ নয়, সেটি মানুষের উপাসনা। একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশের জনগণের বিরুদ্ধে এটি কতবড় সাংঘাতিক কথা? নবী-রাসূল নয়, পথ-প্রদর্শক রূপে পেশ করা হয়েছে লালন শাহকে। লালন শাহ মুসলিম ছিল, এক আল্লাহর উপাসক ছিল বা তার জীবনে নামাজ-রোজা ছিল -তার কোন প্রমাণ নাই।  তার গানে বিদ্রোহ ছিল ইসলামের বিরুদ্ধে। তার মত এক পথভ্রষ্টকে পেশ করা হয়েছে বাঙালির পথের সন্ধানদাতা রূপে। এরূপ পথভ্রষ্টতাকে প্রতিষ্ঠা দিতে সরকারের বিনিয়োগও কি কম? অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির নামে নানা ভাবে এই পথভ্রষ্ট লালনকেই  সরকারি ভাবে প্রতিষ্ঠা দেয়া হচ্ছে্।

 

ইসলামের পক্ষের শক্তি কি অপশক্তি?

আনন্দ বাজার বড় আনন্দভরে উল্লেখ করেছে, “অন্ধকার অপশক্তির সঙ্গে লড়াইয়ে সবচেয়ে শক্তিমান বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস আর ঐতিহ্য। সেই ধারণাকে ধারণ করেই আয়োজিত হয়ে চলেছে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। প্রায় প্রত্যেকের হাতে বিশাল আকারের মুখোশ, শোলার সেই প্রাচীন রূপকথার পাখি, টেপা পুতুল, বিভিন্ন মঙ্গল প্রতীক।” কিন্তু কারা সে অপশক্তি সেটি আনন্দ বাজার প্রকাশ না করলেও গোপন থাকেনি। বাংলাদেশে চলছে বর্বর ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার। চলছে লাগামহীন সরকারি ও বেসরকারি সন্ত্রাস। হচ্ছে ভোট ডাকাতি। চলছে ব্যাংক লুট, ট্রেজারি লুট। ঘটছে শত শত ধর্ষণ ও গুম-খুণের রাজনীতি। বিশ্বের অন্য যে কোন দেশের চেয়ে অধিক খরচে রাস্তা নির্মাণ করলে কি হবে, অর্থলুটের কারণে সে রাস্তা বেশী দিন টিকে না। খারাপ রাস্তার জন্য বাংলাদেশ এখন রেকর্ড গড়ছে। দুর্নীতিতে বাংলাদেশ ৫ বার বিশ্বে প্রথম হয়েছে। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, আইন-আদালত ভয়ানক অপশক্তির দখলে। দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করে এক বর্বর ফ্যাসিবাদী শক্তি এখন ক্ষমতায়। তাদের কারণে সম্ভব নয় একটি নিরপক্ষ নির্বাচন। তারা অসম্ভব করে রেখেছে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ ও মিছিল। কিন্তু আনন্দবাজার পত্রিকায় যারা অপশক্তি রূপে চিত্রিত হয়েছে তারা কিন্তু শাসকের আসনের বসা ফ্যাসিবাদী অপশক্তি নয়। বরং সে দখলদার ফ্যাসিবাদী অপশক্তি প্রশংসা কুড়িয়েছে আনন্দ বাজার পত্রিকার। তাদের কাছে অপশক্তি হলো তারা যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশে ইসলামী চেতনার প্রচার ও প্রতিষ্ঠা চায়। তাই এখন এটি সুস্পষ্ট, বাংলাদেশে রাজনীতি ও সংস্কৃতির অঙ্গণে ভারতের পৌত্তলিক কাফির  ও বাংলাদেশের ভারতসেবী বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের এজেন্ডা একাকার হয়ে গেছে।

অথচ অমঙ্গল থেকে বাঁচানো এবং মঙ্গলদের দিকে ডাকাই ইসলামের মূল এজেন্ডা। সে মঙ্গল শুধু এ পার্থিব জীবনের মঙ্গল নয়, সেটি অনন্তকালের আখেরাতের জীবনের মঙ্গলও। ঈমানদার ব্যক্তি মঙ্গলের সে পথটি মঙ্গল প্রদীপ জ্বেলে তালাশ করে না। সে পথে ডাকার এবং সে পথে চলার ইসলামের নিজস্ব বিধান আছে। সে শাশ্বত মঙ্গলের দিকে প্রতিদিন ৫ বার ডাকা হয় বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ মসিজদ থেকে। মসজিদের আজানে সে আহ্বানটি করা হয় এই বলে: “হাই’আলাল ফালাহ।”  অর্থ: ছুটে এসো মঙ্গলের দিকে। রঙ-বেরঙের মুখোশ, শোলার পাখি, বিচিত্র পুতুল, সাপ-প্যাঁচা নিয়ে যে মঙ্গল শোভাযাত্রা সেটি আসলে মঙ্গল-মিছিল নয়, সেটি শাশ্বত অমঙ্গলের পথ। এ পথ পৌত্তলিকদের সনাতন মিথ্যাচারের। এটি জাহান্নামের আগুনে পৌঁছানোর হিন্দুয়ানী পথ। প্রকৃত মঙ্গল তো সে পথেই যে পথ মহান আল্লাহতায়ালা দেখান। সে পথের দিকেই প্রতিটি মসজিদ ৫ বার ডাকে।

আনন্দবাজার পত্রিকার আরো রিপোর্ট, “শোভাযাত্রায় একটাই শপথ, মানুষের মধ্যে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার যে আকাঙ্ক্ষা, প্রতিপাদ্যে সেই বার্তাই ছড়িয়ে দিতে চায় মঙ্গল শোভাযাত্রা,’’-এমনটাই বললেন শোভাযাত্রা আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। ‘‘এই উপস্থিতিই আশাবাদ,’’ এমনই বললেন বাংলাদেশের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুস। তিনি বললেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষ কখনওই কোনও অপশক্তির কাছে মাথা নোয়ায়নি। আর ভয়কে জয় করে চলার যে পথ, সেটিই বাঙালির পথ। এ বারের শোভাযাত্রায় যে মানুষের ঢল, সেটাই প্রমাণ করে বাংলাদেশ পথ হারায়নি, অন্ধকার কখনও শেষ কথা নয়।’’ সেটাই জানান দিল আজকের মানুষের মিলিত ঢল।

কি মিথ্যা অহংকার নিয়ে উচ্চারণ যে ‘‘বাংলাদেশের মানুষ কখনোই কোন অপশক্তির কাছে মাথা নোয়ায়নি”। প্রশ্ন হলো, ঔপনিবেশিক ব্রিটিশের অধীনে ১৯০ বছরের গোলামীর জীবনও কি অপশক্তির বিরুদ্ধে বিজয়ের ইতিহাস? প্রশ্ন হলো, এতোই যখন নিজ শক্তির অহংকার তখন কেন ১৯৭১ সালে ভারতীয় বাহিনীকে নিজ দেশে ডেক আনা হলো? পাকিস্তান সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে সে লড়াইটি তারা নিজ শক্তিতে লড়লো না কেন? কেন তারা ৯ মাসের যুদ্ধে নিজ শক্তিতে পাকিস্তানী সৈন্যদের পরাজিত করে একটি জেলা বা মহকুমাও কেন  স্বাধীন করতো পারলো? তাছাড়া আজ দেশে যে ভোটডাকাত ফ্যাসিবাদী শক্তির অধিকৃতি সেটিও কি গর্বের? বাংলাদেশ পথ হারায়নি বলেই বা আয়োজকগণ কি বুঝাতে চান? সেটি কি পূজার সংস্কৃতি ও পূজামন্ডপ নিয়ে রাজপথে নামার পথ?

 

এটিই কি সেই একাত্তরের চেতনা?

কি সেই একাত্তরের চেতনা? শেখ মুজিব নিজে কখনো সেটি বলেননি। তবে না বললেও কারো চেতনার বিষয়টি কখনোই গোপন থাকে না। ব্যক্তির চেতনা তো তাই -যা প্রকাশ পায় তার ধর্ম-কর্ম, আচার-আচরণ, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও সংস্কৃতিতে। বলা হয়, পবিত্র কুর’আনের তাফসির হলো নবীজী (সা:)’র নবুয়ত-পরবর্তী পুরা জীবন। তাই ইসলামী চেতনা বুঝতে হলে নবীজী (সা:)’র জীবনকে দেখতে হয়। তাই ইসলাম ও কুর’আনকে বুঝতে হলে নবীজী (সা:)’র জীবনীকে অবশ্যই জানতে হয়। তাঁর কর্ম ও চরিত্রকে বাদ দিলে ইসলামী চেতনার পরিচয় মেলে না। বিশুদ্ধ ইসলামী চেতনাটি তো প্রকাশ পেয়েছে নবীজী (সা:)’র ইবাদত-বন্দেগী, আচার-আচারণ, কর্ম, রাজনীতি, বিচার-ব্যবস্থা ও জিহাদের মধ্য দিয়ে। প্রসিদ্ধ হাদীসগ্রন্থ  ও তাঁর জীবন-ইতিহাস সামনে থাকার কারণে কোন কালেই ইসলামের চেতনা বুঝতে মুসলিমদের অসুবিধা হয়নি। চেতনা নিয়ে সে স্বচ্ছতার কারণেই দেশে দেশে যারাই ইসলাম কবুল করেছে তারাই নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতে যেমন আত্মনিয়োগ করেছে, তেমনি আত্মসমর্পণ করেছে শরিয়ত, হুদুদ, কেসাস, খেলাফা, মুসলিম একতা ও জিহাদের বিধানগুলির কাছে। যার মধ্যে এসবে আগ্রহ নাই, বুঝতে হবে তার মধ্যে ঈমান যেমন নাই, তেমনি ইসলামী চেতনাও নাই। অনেকেই জিহাদ বলতে বুঝেন নিফসের বিরুদ্ধে জিহাদ। শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদকে তারা গুরুত্ব দেননা। তাদের ভ্রান্তিটা তখনই সঠিক বুঝা যাবে যখন নবীজী (সা:) জিহাদ বলতে কি বুঝেছিলেন এবং কীরূপ আমল করেছেন সেদিকে নজর দিলে। নবীজী (সা:)’র জীবনে যেমন নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ ছিল, তেমনি ছিল শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদ। সে সশন্ত্র জিহাদ যেমন প্রতিরক্ষামূলক ছিল তেমনি আক্রমণাত্মকও ছিল। মুসলিম হওয়ার শর্ত হলো নবীজী (সা:)’র সে সূন্নতকে পুরাপুরি ধারণ করে বাঁচা। এখানে আপোষ চলেনা। আপোষ হলে অসম্ভব হয় মুসলিম হওয়া। পবিত্র কুর’আনের আয়াত, “যে অনুসরণ করলো রাসূলকে, সেই অনুসরণ করলো আল্লাহকে।” -(সুরা নিসা, আয়াত ৮০)।

তেমনি একাত্তরের চেতনা বুঝতে হলে সে চেতনার যারা ধারক তাদের ধর্ম-কর্ম, আচার- আচরণ, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও চরিত্রকে বুঝতে হয়। নিঃসন্দেহে শেখ মুজিব হলো একাত্তরের চেতনার মূল নায়ক ও মূল প্রতিচ্ছবি। তাকে বাদ দিলে একাত্তরের চেতনা বাঁচে না। লেলিনকে বাদ দিয়ে যেমন লেলিনিজম বুঝা যায় না, তেমনি মুজিবকে বাদ দিয়ে একাত্তরের চেতনারও পরিচয় মেলে না। আজও যারা বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় তাদের কেউই রাজাকার নন। তাদের প্রচণ্ড অহংকার একাত্তরের চেতনা নিয়ে। তাই সে চেতনার সন্ধান মিলে বর্তমানে যারা বাংলাদেশের শাসন-ক্ষমতায় তাদের ধর্ম-কর্ম, চরিত্র ও রাজনীতি থেকে। তারাই মূলত একাত্তরের বিজয়ী রাজনীতির মূলধারার প্রতিনিধি। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের মাটিতে একাত্তরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শত শত জীবন্ত তারাকা থাকার পরও কি সে চেতনা নিয়ে অজ্ঞতা চলে?

বাংলার রাজনীতিতে আজ যে স্বৈরাচার, যে ভোটডাকাতি, যে গুম-খুন-অপহরণের জোয়ার এবং যে বাকশালী ফ্যাসিবাদ শেখ মুজিব নিজে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন -সেটি কি কোন রাজাকারের সংস্কৃতি? পাকিস্তান আমলে কোন সময়ই এক দলীয় বাকশালী স্বৈরাচার ছিল না। এটি নিরেট একাত্তর পরবর্তী ঘটনা। এবং এর প্রবর্তক খোদ শেখ মুজিব। মুজিব গণতন্ত্রের খুনি। বাংলার মাটিতে নৃশংস ফ্যাসিবাদের জনকও মুজিব। বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম বিচার-বহির্ভুত হত্যার শুরুও করেছিল মুজিব। মুজিবের চরিত্র থেকে তার সে পরিচয়কে কি আলাদা করা যায়? ফলে এ স্বৈরাচারকে একাত্তরের চেতনা থেকে আলাদা করার উপায় নাই। একাত্তরের চেতনা জানতে হলে মুজিবের এ পরিচয়কে অবশ্যই জানতে হবে। আজও যে নৃশংস ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চেপে বসেছে সেটিও মুজিবের জন্ম দেয়া বাকশালী স্বৈরাচারের ধারাবাহিকতা মাত্র। একাত্তরের চেতনার আরেকটি অবিচ্ছেদ্য উপাদান হলো ভারত-নির্ভরতা ও ভারত-সেবী রাজনীতি। সে চেতনাটিও আজ বেঁচে আছে শেখ হাসিনার রাজনীতিতে। তাই একাত্তরে যেমন ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশে ডেকে আনা হয়, আজও তেমনি ভারতকে অবাধে করিডোর দেয়া হয়। দেশের রাজপথে পূজার সংস্কৃতির জয়জয়াকার সেটিও কোন রাজাকারের সংস্কৃতি নয়। এটিও একাত্তরের চেতনাধারীদের সংস্কৃতি। এ চেতনার ধারকগণ ভারতকে দিয়েছে বাংলাদেশের উপর রাজনৈতিক আধিপত্যের সাথে সাংস্কৃতিক আধিপত্য। ভারতের সে আধিপত্যটি সুস্পষ্টে দেখা যায় বাংলাদেশ সরকারে রীতি-নীতিতে। নবীজী (সা:)’র বিরুদ্ধে ভারত সরকারের মুখপাত্র নূপুর শর্মা যখন অশ্লীল মন্তব্য করে তখন মুসলিম দেশের রাজধানীগুলিতে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। কিন্তু নীরব থাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নীরব থাকে মসজিদের উপর হামলা ও ভারতীয় মুসলিমদের উপর গণহত্যা হলেও। কারণটি সুস্পষ্ট। মনিব যত অপরাধই করুক, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সাহস চাকর-বাকরের থাকে না। চাকর-বাকরকে সবসময় কুর্ণিশ করেই চলতে হয়। একাত্তরের চেতনা সেটিই শেখায়।

 

মুক্তির একমাত্র পথ

একাত্তরের চেতনাধারীগণ বাংলাদেশকে কোন দিকে নিতে চায় -সেটি আজ আর গোপন বিষয় নয়। বাঙালি মুসলিমদের সামনে এখন পথ মাত্র দুইটি। এক). বিদেশী প্রভূদের সাথে মিলে একাত্তরের চেতনাধারীগণ বাংলাদেশের রাজনীতি ও সংস্কৃতিত যে প্রবল স্রোত সৃষ্টি করেছে তাতে ভেসে যাওয়া। অসংখ্য মানুষ ভেসে যাওয়ার সে পথকেই যে বেছে নিয়েছে -সেটি পহেলা বৈশাখের বিশাল মিছিলই বলে দেয়। দুই). স্রোতে না ভেসে প্রবল বিক্রমে প্রতিরোধে নামা ও নতুন স্রোত সৃষ্টি করা। এটিই ঈমানদারীর পথ। কারণ, নবী-রাসূলদের পথটি হলো, ধর্ম ও সংস্কৃতির নামে চলমান লোকজ মিথ্যাচার ও দুর্বৃত্তির বিরুদ্ধে লাগাতর বিদ্রোহের।

কচুরি পানা বা গাছের মরা পাতার ন্যায় চলমান সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক স্রোতে ভাসাটি কোন কালেই মুসলিমের সংস্কৃতি ছিল না। অথচ আজ বাংলাদেশে স্রোতে ভাসাটিই সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। আর সে স্রোতটি সৃষ্টি করছে হিন্দুত্ববাদী চেতনায় ভেসে যাওয়া ভারতেসবী সাংস্কৃতিক এজেন্টগণ। আর সে স্রোতে ভাসানোর কাজে সকল শক্তি বিনিয়োগ করছে শেখ হাসিনার ভারতসেবী ফ্যাসিবাদী সরকার। মুসলিম তো সেই, যার মধ্যে থাকে স্রোতের বিপরীতে সামনে চলার ঈমানী বল। সে ঈমানী বলে সমাজ ও রাষ্ট্রজুড়ে ঈমানদার মাত্রই সৃষ্টি করে নতুন স্রোত। ঈমানদারগণ তাই অন্যদের সৃষ্ট স্রোতে না ভেসে অন্যদের ভাসিয়ে নেয় নিজেদের গড়া স্রোতে। মুসলিমগণ তাদের গৌরব যুগে তো সেটিই করেছে। মুসলিম জীবনে সেটিই তো মূল মিশন। সে মিশন নিয়ে বাঁচার মধ্যেই তো ঈমানের প্রকাশ। ঈমান তো শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদের জন্ম দেয়। সে জিহাদ না থাকাই তো বেঈমানী। ঈমানের সে বল নিয়ে জিহাদে আত্মবিনিয়োগের কারণেই ঈমানদার ব্যক্তি মহান আল্লাহতায়ালা থেকে জান্নাত পায়। প্রশ্ন হলো, ঈমান, স্বাধীনতা ও জান্নাতের আশা নিয়ে বাঁচতে হলে এ ছাড়া কি বিকল্প পথ আছে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *