সাম্প্রতিক ভাবনা-৭
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on November 16, 2019
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
১. যে মহাবিপদ সেক্যুলারিজমে
ব্যক্তির ঈমানদারি, বেঈমানি ও মুনাফিকি গোপন থাকার বিষয় নয়। সেগুলি সুস্পষ্ট ধরা পড়ে ব্যক্তির বাঁচার লক্ষ্য, কর্ম ও বিনিয়োগের মাঝে। মহান আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক ব্যক্তিকেই কিছু জ্ঞান, কিছু অর্থ-সম্পদ, চিন্তা-ভাবনার কিছু সামর্থ্য, কিছু দৈহিক বল এবং বিবেক দিয়েছেন। এসবই মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ আমানত। এসব সামর্থ্যের তথা এ পবিত্র আমানতের কোথায় ব্যয় হয় তাতেই প্রকাশ পায় ব্যক্তির ঈমানদারি, বেঈমানি ও মুনাফিকি।
ঈমানদারের পক্ষ থেকে আল্লাহতায়ালা-প্রদত্ত এ সামর্থ্যগুলির বিনিয়োগ ঘটে আখেরাতের ভাবনাকে হৃদয়ে রেখে। সে ভাবনার মূল কথা, আল্লাহর জমিনে তাঁর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর আইন তথা শরিয়তকে বিজয়ী করা। এ লক্ষ্যে সকল বিনিয়োগ গণ্য হয় মহান আল্লাহর পথে জিহাদ রূপে। অপরদিক সেক্যুলারিস্টদের অর্থ, বুদ্ধিবৃত্তি ও জীবনের সকল সামর্থ্যের বিনিয়োগটি হয় সেক্যুলারিজমকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে। তাদের রাজনীতিটি হয় চেতনায় পার্থিব জীবনের আনন্দ বাড়ানোর এজেন্ডাকে ধারণ করে। সে রাজনীতিতে গুরুত্ব পায় শরিয়তকে পরাজিত রাখা। সে লক্ষ্যে সেক্যুলারিস্ট যেমন ভোট দেয়, তেমনি রাজনীতি করে ও যুদ্ধ করে। নামায-রোযা পালন এবং তাবলিগের এজতেমাতেও হাজির হলেও তাতে তাদের সামর্থ্যের বিনিয়োগের উপর কোন প্রভাব পড়ে না।
পরিনামে সেক্যুলারিস্টদের সকল বিনিয়োগ যে শুধু ব্যর্থতাই বাড়ায় -সে ঘোষণাটি এসেছে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সুরা কাহাফের সুরা ১০৩ ও ১০৪ নম্বর আয়াতে। এ দুটি আয়াতে বলা হয়েছে, “বল (হে মুহম্মদ), তোমাদের কি বলে দিব, কারা কাজ-কর্মের দিক দিয়ে সবচেয়ে ক্ষতির মধ্যে? এরা হলো তারা যারা তাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যয় করে দুনিয়ার আয়োজন বাড়াতে এবং মনে করে তাদের কর্মগুলি কতই না উত্তম।” উপরুক্ত দুটি আয়াতের মাঝে রয়েছে সেক্যুলারিষ্টদের জন্য জাহান্নামের খবর। তাদের আমলগুলি এতই বিনষ্ট ও মূল্যহীন হবে যে, রোজ হাশরের বিচার দিনে সেগুলি ওজনের জন্য দাড়িপাল্লা খাড়া করারও প্রয়োজন হবে না। সে ঘোষনাটি এসেছে এ সুরার ১০৫ নম্বর আয়াতে। এবং ১০৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, তাদের স্থান হবে জাহান্নামে।
সেক্যুলারিজমের আভিধানিক অর্থ ইহজাগিতকতা। অতএব এতে পারলৌকিক ভাবনার কোন স্থান নেই। পারলৌকিক ভাবনাটি গণ্য সাম্প্রদায়িকতা রূপে। সেক্যুলারিষ্টদের মূল কথা হলো, রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, বিচার-আদালতের মাঝে কোনরূপ ইসলামী চেতনা ও পারলৌকিক ভাবনা আনা যাবে না। ফলে সেক্যুলার রাজনীতিতে নির্মিত হয় স্রেফ জাহান্নামের রাস্তা। অপর দিকে ইসলামের শিক্ষা, দুনিয়ায় চলতে হবে প্রতি মুহুর্তে আখেরাতের ভাবনাকে হৃদয়ে নিয়ে। দুনিয়া একটি পরীক্ষা কেন্দ্র মাত্র; আসল ঠিকানাটি আখেরাতে। সেক্যুলারিস্টদের গুরুতর অপরাধ, আখেরাতের জীবনকে সফল করার মহা কল্যাণকর ইসলামী মিশনকে তারা বিফল করে দেয়। সেক্যুলারিস্টদের যুদ্ধটি তাই যেমন ইসলামের বিরুদ্ধে, তেমনি মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধেও। এ অপরাধটি মানব খুনের চেয়েও গুরুতর। খুনি খুন করলেও তারা সমাজের বুকে জান্নাতের পথে চলাটি রুদ্ধ করে না। কিন্তু সে বিপদটি সেক্যুলারিস্টগণ ঘটায়। এবং সেটি হৃদয়ে আখেরাতের ভাবনা নিয়ে রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, বিচার-আদালত পরিচালনাকে সংবিধান বিরোধী করে।
২.
সন্তানকে পশু-পাখিও নিয়মিত পানাহার দেয়। কিন্ত মানবকে বাড়তি যেটি জোগাতে হয় সেটি হলো শিক্ষা। সেটি না হলে মানব সমাজও পশু সমাজে পরিণত হয়। ইসলামে তাই জ্ঞান অর্জনকে নামায-রোযা ফরজ হওয়ার ১১ বছর আগে ফরজ করা হয়েছে। এবং শ্রেষ্ঠ জ্ঞান হলো পবিত্র কোর’আনের জ্ঞান। এ জ্ঞান জীবনের প্রতি পদে পথ দেখা। এ জ্ঞানে অজ্ঞ থাকা তাই কবিরা গুনাহ।
৩.
ঈমানদারের মিশনটি বিশাল। সেটি স্রেফ নামায়-রোযায় শেষ হয়না। তাকের বাঁচতে হয় শরিয়ত প্রতিষ্ঠা ও দুর্বৃত্ত নির্মূলের আমৃত্যু জিহাদ নিয়ে। আগুনে যেমন উত্তাপ দেয়, ঈমানও তেমনি জিহাদ দেয়। যার জীবনে জিহাদ নাই, তার মাঝে ঈমানও নাই। তাই নবীজী (সাঃ)র এমন কোন সাহাবী ছিলেন না যার জীবনে জিহাদ ছিল না। সাহাবাদের মাঝে ৭০%’য়ের বেশী শহীদ হয়েছেন। বাংলাদেশের ন্যায় ইসলামের এ ইতিহাসকে পড়ানো হয় না।
৪.
গাছের পাশে যেমন আগাছা থাকে, তেমনি মানুষের পাশেও অমানুষ থাকে। আগাছা নির্মূল না করলে ফসল বাঁচে না। তেমনি অমানুষ নির্মূল করলে শান্তি প্রতিষ্ঠা পায় না। দেশ তখন বাসের অযোগ্য হয়। সুরা ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে মুসলিমদের সমগ্র মানব জাতির মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি রূপে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সেটি এজন্য নয় যে তারা বেশী বেশী নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত পালন করে। বরং এজন্য যে তারা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা দেয় এবং দুর্বৃত্তিকে নির্মূল করে। দুর্বৃত্ত নির্মূলের সে লড়াইটি হলো জিহাদ।এটিই ইসলামে শ্রেষ্ঠ ইবাদত। জিহাদ না থাকলে দেশে গুম, খুন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, ভোট-ডাকাতি ও বিরোধী দল নির্মূলের রাজনীতির জোয়ার আসে। বাংলাদেশ তারই উদাহরণ।
৫.
নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার বদলের যারা স্বপ্ন দেখে তারা বিবেক-বুদ্ধিহীন। দেশের পুলিশ, আদালত, সেনাবাহিনী, সরকারি প্রশাসন পরিণতি হয়েছে ভোট ডাকাতির হাতিয়ারে। এ অবস্থায় কি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়? দেশ এখন ভোট-ডাকাতদের হাতে অধিকৃত। ঘর থেকে ডাকাত তাড়াতেও যুদ্ধ লাগে। দেশ থেকে ডাকাত নির্মূলের খরচটি আরো বেশী।সভ্য তো তাঁরাই যারা সে খরচ বহন করে।
৬.
আল্লাহতায়ালার শরিয়তি বিধান না মানা এবং সে অনুযায়ী রাষ্ট্র চালনা না করা কাফেরদের কাজ। ইসলামের বিজয় এবং শরিয়ত প্রতিষ্ঠার ৩টি উপায়। ১. ভোট, ২. গণ-আন্দোলন ও ৩. জিহাদ। নবীজী তৃতীয় পথটি বেছে নিয়েছিলেন।
৭.
খাদ্যের অভাবে দেহের মৃত্যু হয়। আর কোর’আনী জ্ঞানের অভাবে ঈমানের মৃত্যু হয়।তাই যে দেশে কোর’আন বুঝার আয়োজন নাই সে দেশে বেঈমানের সংখ্যা বেশী।যে ব্যক্তি ঈমান বাড়াতে চায়, সে কোর’আনের জ্ঞান বাড়াতে মনযোগী হয়। অর্থ-সম্পদ দুর্বৃত্তরাও পায়, কিন্তু তারা ঈমান ও জ্ঞান পায় না। ঈমান ও জ্ঞান ছাড়া কি জান্নাত পাওয় যায়?
৮.
বেঈমান মানুষের পরিচয়: আল্লাহতায়ালা কোর’আনে কি বললেন সেটি জানায় অনাগ্রহ। ঈমানদারের পরিচয়: কোরআন কি বলে সেটি জানার জন্য পেরেশানী। এ পেরেশানীটিই ঈমানের পরিমাপ দেয়।
৯.
এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই -এটিই আল্লাহতায়ালার দেয়া পরিচয়। এ পরিচয় নিয়ে না বাঁচাতেই মুসলিম উম্মাহর মাঝে বিভক্তি। নানা ভাষা ও নানা বর্ণের কাফেরগণ এক দেশে বাস করে এবং বিশ্বশক্তি হয় –যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। সে গুণ মুসলিমদের নাই। অথচ সে পরিচয়টি প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল প্রাথমিক যুগের মুসলিমদের জীবনে। ফলে তারা বিশ্বশক্তিতে পরিণত হতে পেরেছিল।
১০
ত্রাস সৃষ্টির নীতিই সন্ত্রাস। মহল্লায় সন্ত্রাস করে ডাকাতেরা। দেশ জুড়ে সন্ত্রাস করে ভোট-ডাকাত সরকার। ডাকাতদের ক্ষমতায় বসিয়ে কি তাই সন্তাস বিলুপ্ত হয়? সন্ত্রাস হলো বাংলাদেশে সরকারি নীতি। এ ভোট-ডাকাত সরকার বলে, দেশ থেকে তারা দুর্নীতি নির্মূল করবে। সেটি চাইলে সে কাজের শুরু হওয়া উচিত তাদের নির্মূলের মধ্য দিয়ে।
১১.
কোর’আন না মেনে চলাতেই মুসলিমদের পতন। পথ না চিনলে গন্তব্যস্থলে পৌঁছা যায় না। কোর’আন হলো জান্নাতের রোড ম্যাপ। অতএব কোর’আনের পথে না চললে কীরূপে জান্নাতে পৌঁছা সম্ভব? কোরআন শিক্ষা এজন্যই মুসলিম জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই সেটি নামায-রোযার আগে ফরজ হয়েছে।
১২.
দেশ শয়তানী শক্তির দখলে। আদালতে আল্লাহর আইনের কোন স্থান নেই। বিচার হচ্ছে কুফরি আইনে। এসবের নির্মূলে জিহাদ নাই। অথচ মোল্লা-মৌলভীগণ ব্যস্ত নিজ নিজ ফিরকার মুরিদ বাড়াতে। তারা এমন এক ইসলাম নিয়ে ব্যস্ত যেখানে নবীজী (সাঃ)র ইসলাম নাই। নবীজী (সাঃ)র ইসলামে ইসলামি রাষ্ট্র ছিল, খেলাফত ছিল, শরিয়ত ছিল, জিহাদ ছিল, এবং মুসলিম উম্মাহর একতা ছিল। কিন্তু তাদের ইসলামের এসবের কোন কিছুই নাই।
১৩.
সমগ্র বাংলাদেশ এখন মুজিব-আদর্শের পাঠশালা। এ পাঠশালায় যতই বাড়ছে মুজিব-আদর্শের পাঠ, ততই বাড়ছে দেশ জুড়ে হত্যা, গুম ও চুরি-ডাকাতির রাজনীতি।মুজিব আট আনা সেরের চাউল ১০ টাকায় খাইয়েছে। আর হাসিনা পেঁয়াজ ২৫০ টাকা সের খাওয়াচ্ছে।
১৪.
গরু-ছাগল নিজের পানাহার ছাড়া দেশ নিয়ে ভাবে না। সে অভিন্ন চরিত্র পশু চরিত্রের মানুষেরও। অথচ মানব মহামানব হয় এবং পরকালে জান্নাত পায় দেশকে সভ্যতর করার কাজে নিজের জান-মালের বিনিয়োগের মাধ্যমে। ইসলামে এটিই পবিত্র জিহাদ।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- হিযবুল্লাহ ও হিযবুশ শায়তান
- উপেক্ষিত সাংস্কৃতিক যুদ্ধ এবং বাঙালী মুসলিমের বিপর্যয়
- গণতন্ত্র যেখানে গণহত্যা এবং জবরদখল যেখানে লেবারেশন
- দুর্বল থাকার আযাব ও শক্তিবৃদ্ধির ফরজ দায়ভার
- বিবিধ ভাবনা (১৫)
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
MOST READ ARTICLES
- বিবিধ প্রসঙ্গ-৫
- Political, religious & demographic dynamics in South Asia & threatened co-existence of people with pluralities
- My COVID Experience
- The Hindutva Fascists & the Road towards Disintegration of India
- দিল্লিতে সরকারি উদ্যোগে মুসলিম গণহত্যা