মুসলিম দেশগুলিতে সেক্যুলারিস্টদের দখলদারি ও নাশকতা

ফিরোজ মাহবুব কামাল

বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, সিরিয়া, তুরস্ক -এসব মুসলিম দেশগুলিতে দীর্ঘকাল যাবত সেক্যুলার রাজনীতিবিদগণ ক্ষমতায়। কিন্তু তাদের শাসনে দেশগুলোর কোন গৌরবই বাড়েনি। বরং দুর্বৃত্তি, অপচেতনা ও অপসংস্কুতির প্লাবন দেশবাসীদের পৃথিবীর দরবারে অপদস্ত করে ছেড়েছে। আর সবাইকে হার মানিয়েছে বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টগণ। দেশকে তারা ৫ বার বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি পেশাতেই রয়েছে বিপুল সংখ্যক অপরাধী। কিন্তু সবচেয়ে বেশি অপরাধীর ভিড় হলো দেশটির রাজনীতিতে। রাজনীতিতে চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি ও সন্ত্রাস এতো অধিক যে সমাজের সবচেয়ে ধুর্ত চোরডাকাত ও সন্ত্রাসীরা সরকারি দলের রাজনীতির নেতাকর্মীতে পরিণত হয়েছে। অথচ ইসলামে রাজনীতি হলো সর্বোচ্চ ইবাদত। দেশের জন্য রাজনীতিই হলো ইঞ্জিন। দেশ কোন দিকে যাবে সেটি ক্ষেত-খামার বা কল-কারখানা থেকে নির্ধারিত হয় না, নির্ধারিত হয় রাজনীতি থেকে। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনীতি পরিণত হয়েছে ক্ষমতাদখল, চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, ব্যাংকডাকাতি, রাহা­­জানী, অর্থপাচার, ধর্ষণ ও গুম-খুনের ন্যায় সর্ববিধ অপরাধের হাতিয়ারে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল পরিণত হয়েছে অপরাধীদের ট্রেড ইউনিয়নে। দেশের রাজনৈতিক ক্যাডারদের অনেকে এতটাই বিবেকশূন্য ও মনুষ্যত্ব-বর্জিত যে মানুষ খুন করা, প্রতিপক্ষের কর্মীদের হত্যা করে তাদের লাশের উপর নাচানাচি করা, যাত্রীভর্তি বাসে আগুন দেয়া, রাস্তার মানুষকে বিবস্ত্র করা, ব্যাংক ডাকাতি, ভোটডাকাতি এবং রাজপথে গণহত্যা –এসব ভয়ানক অপরাধও এখন আর তাদের কাছে কোন অপরাধ রূপে গণ্য হচ্ছে না। যেন সেগুলি অতি তুচ্ছ ব্যাপার।

দ্রুত নিচে ধাবমান বাংলাদেশকে বাঁচানোর সামর্থ্য যে বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের নাই -সেটি ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। দেশটির জন্ম থেকেই সেক্যুলার প্রেসক্রিপশনের প্রয়োগ হচ্ছে। কিন্তু তাতে রোগ সারেনি, বরং রোগের প্রকোপ দ্রুত বেড়ে চলেছে। ফলে পাকিস্তান আমলে জনগণের ও সরকারি কর্মচারিদের চরিত্রের যে মান ছিল এখন তা থেকে অনেক নিচে নেমেছে। রাজনীতির মূল রোগটি হলো দুর্বৃত্তি ও মৃত বিবেক। লুন্ঠন, চুরিডাকাতি ও নানারূপ দূর্নীতির নিয়েত নিয়ে যারা রাজনীতি করে তাদের দ্বারা দুর্বৃত্তদের নির্মূল অসম্ভব। নিজেদের দুর্বৃত্তি বাড়াতে তারা বরং দেশী ও বিদেশী দুর্বৃত্তদের সাথে কোয়ালিশন গড়ে।

দুর্বৃত্তি ও দুর্বৃত্তদের নির্মূল তো তাদের দ্বারাই সম্ভব যারা দূর্নীতির নির্মূলকে পবিত্র জিহাদ মনে করে। এবং এ জিহাদে নিজেদের অর্থ, শ্রম, সময়, বুদ্ধিবৃত্তি ও রক্তের বিনিয়োগ করে। তখন বেতনলাভ নয়, বরং এমন কাজে নিজের অর্থদান, মেধাদান ও প্রাণদানকেও তারা নিজের দায়িত্ব ভাবে। যুগে যুগে এরূপ চেতনাধারী মুজাহিদগণই রাষ্ট্রে বিপ্লব এনেছে। এ প্রেরণাতেই মরুর নিস্ব মুসলিমগণ বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিয়েছে। বিশাল রাষ্ট্রের খলিফা হয়েও চাকরকে উটের পিঠে চড়িয়ে নিজে উটের রশি ধরে চলাকে নিজের জন্য লাভজনক ও সম্মানজনক ভেবেছেন। দূর্নীতির নির্মূল এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠার এ জিহাদী মিশন নিয়ে বাঁচার কারণেই মুসলিমগণ মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে সকল জাতির মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির মর্যাদা পেয়েছে –যার ঘোষণা এসেছে পবিত্র কুর’আনের সুরা আল-ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে।

 

পরিত্যক্ত হয়েছে একমাত্র পরীক্ষিত প্রেসক্রিপশন

ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন মোতাবেক রোগীকে ঔষধ না খাওয়ানোটি যে কোন দেশেই গুরুতর অপরাধ। এমন অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হয়। কোন ডাক্তার বা নার্সের পক্ষ থেকে সে অবহেলাটি ইচ্ছাকৃত ভাবে হলে আদালতে তাকে হত্যা-মামলার আসামী হতে হয়। অপরাধ প্রমাণিত হলে গুরুতর শাস্তি পেতে হয়। অথচ সে অপরাধটিই ব্যাপক ভাবে হচ্ছে বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে। সেটি মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া প্রসক্রিপশনটির বিরুদ্ধে। সকল প্রকার আধ্যাত্মিক, নৈতিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সুচিকিৎসার জন্য মহান আল্লাহতায়ালার যে প্রসক্রিপশন -সেটিই হলো পবিত্র কুর’আন। মুসলিম মাত্রই মহান আল্লাহতায়ালার সৈনিক। সে সৈনিকদের নিয়েই মহান আল্লাহতায়ালার বাহিনী “হিজবুল্লাহ” –যার উল্লেখ এসেছে পবিত্র কুর’আনে। কোন সৈনিক বিদ্রোহ বা গাদ্দারী করলে তার কোর্টমার্শাল হয়। বিচারে গুরুতর শাস্তিও হয়। অথচ লাগাতর বিদ্রোহ বা গাদ্দারীটি হচ্ছে কুর’আনী প্রেসক্রিপশনের বিরুদ্ধে। তাদের সে অপরাধের কারণেই প্রতিষ্ঠা পায়নি কুর’আনী প্রসক্রিপশন।

অথচ প্রতিটি মুসলিমের উপর অর্পিত দায়ভারটি ছিল, তারা রোগাক্রান্ত মানব জাতির সামনে এ কুর’আনী প্রেসক্রিপশনের গুণাগুণ তুলে ধরবে এবং তা থেকে চিকিৎসা নিতে আহবান করবে। মহান আল্লাহতায়ালার খলিফা রূপে এটিই তো ছিল মূল দায়ভার। নিজ দেশে এ প্রেসক্রিপশনের প্রয়োগ করে তারা বিশ্ববাসীর সামনে প্রমাণ করবে, এ প্রেসক্রিপশন রোগমুক্তি ঘটায়। এভাবে তারা ইসলামের “শো কেসিং” করবে। মুসলিমগণ তাদের গৌরব কালে তো সেটিই করেছিলেন। অমুসলিমগণ কুর’আন-হাদীস পড়ে না। কিন্তু তারা নিজ চোখে মুসলিমদের কর্ম, চরিত্র ও আচরণ পড়ে। তারা মুসলিমদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র দেখে। অতীতে তারা এ কুর’আনী প্রেসক্রিপশনের প্রয়োগ দেখে দলে দলে মুসলিম হয়েছে। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম রাষ্ট্র হলো ইন্দোনেশিয়া। অথচ এ দেশ জয় করতে কোন মুসলিম সেনাদলকে যুদ্ধ করতে হয়নি। সেখানে যেসব মুসলিম ব্যবসায়ী বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন তাদের চরিত্র ও কর্ম দেখেই তারা দলে দলে মুসলিম হয়েছিলেন।     

কিন্তু মুসলিমদের অপরাধ হলো, অন্যদের চিকিৎসা দূরে থাক, নিজ দেশেও তারা কুর’আনী প্রেসক্রিপশনের  প্রয়োগ করিনি। নিজেদেরকে তারা পবিত্র কুর’আনের অনুসারী রূপে দাবী করে।  কিন্তু চরিত্র, আচরণ, শিক্ষা-সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়ে তারা বরং বিশ্ববাসীকে ভূল পয়গাম দিচ্ছে। মুসলিমদের অশিক্ষা, কুশিক্ষা, দারিদ্র্য ও নানারূপ দুর্বৃত্তি দেখে ইসলামের শত্রুগণ এ কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে, কুর’আনী প্রেসক্রিপশন রোগ সরায় না! তারা আরো বলে, রোগ সারালে তো মুসলিমগণ উন্নত ও শ্রেষ্ঠতর হতো। অথচ মুসলিমদের ব্যর্থতার কারণ কুর’আন নয়, বরং তারা নিজেরা। তারা দূরে সরেছে পবিত্র কুর’আন থেকে।

ঘরে উত্তম একখানি প্রেসক্রিপশন রাখলে এবং বার বার সেটিকে তেলাওয়াত করলে বা চুমু খেলে রোগ সারে না। সেটির পূর্ণ প্রয়োগ করতে হয়। কিন্তু মুসলিমদের দ্বারা সে প্রয়োগের কাজটিই হয়নি। তারা বরং প্রয়োগ করছে পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও সেক্যুলারিজম থেকে নেয়া প্রেসক্রিপশনের। মহান আল্লাহতায়ালার খলিফা হওয়ার বদলে তারা সৈনিক হয়েছে ইসলামবিরোধী শক্তির। মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে এরচেয়ে বড় বিদ্রোহ ও বড় গাদ্দারী আর কি হতে পারে? মহান আল্লাহতায়ালা কি এসব গাদ্দারদের দুনিয়াতে বিজয় এবং আখেরাতে জান্নাত দিয়ে পুরস্কৃত করবেন?  

কুর’আনী প্রেসক্রিপশন ছাড়া মানব জাতির নানাবিধ নৈতিক, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় রোগের চিকিৎসা সম্ভব -সেটি বিশ্বাস করাই শিরক। সে সাথে চরম বেঈমানীও। এরূপ শিরক ব্যক্তিকে কাফের বানায়।  বিশ্বের বহু জাতি অতীতে নিছক এ অপরাধের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাদের অপরাধ, মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত প্রেসক্রিপশনের উপর ঈমান না এনে তারা সেটির প্রতি তাচ্ছিল্য দেখিয়েছিল। তাই উচ্চ মানের ঈমান হলো কুর’আনী প্রসক্রিপশনের উপর অটল বিশ্বাস রাখা। এবং শ্রেষ্ঠ আমল হলো সে প্রসক্রিপশনের প্রয়োগ। রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সে প্রেসক্রিপশনের প্রয়োগে প্রতিটি প্রচেষ্টাই হলো জিহাদ। এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলো, সেটির বাস্তবায়ন না করা। নামাজের কাজা আছে, কিন্তু এ অপরাধের কোন কাজা নাই। এ অপরাধের শাস্তি জাহান্নাম। মুসলিম দেশ সমুহে সেক্যুলারিস্টগণ শরিয়তী বিধানের প্রয়োগ না করে বস্তুত সে মহা অপরাধটিই করছে।

তবে বাংলাদেশে সেক্যুলারিস্টদের অপরাধটি আরো গুরুতর। নিজেরা দায়িত্ব পালন থেকে দূরে থেকেই থেমে নাই। বরং তাদের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির এজেন্ডা হলো, অন্যরা যাতে কুর’আনী বিধানকে বুঝতে না পারে এবং প্রতিষ্ঠা দিতে না পারে –তা নিয়ে। শেখ মুজিব তাই আইন করে কুর’আনী বিধানকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করেছিল। এভাবে মুজিব শুধু নিজের অপরাধই বাড়ায়নি, বাড়িয়েছে জনগণের অপরাধও। এবং নিজে ভাগী হয়েছে জনগণের অপরাধের সাথে। যুগে যুগে এরূপ অপরাধের শাস্তি আসে ভয়ানক আযাব রূপে। একারণেই বাংলাদেশের জনগণের উপর আজ যে দুর্বিষহ যাতনা সেগুলিকে আদৌ রহমত বলা যায়না।

 

বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের বিদ্রোহে ঔদ্ধত্য

শরিয়তের প্রতিষ্ঠা না দেয়ার অর্থ কাফের, জালেম ও ফাসেক হয়ে যাওয়া। সে ঘোষণাটি অতি সোজা ভাষায় এসেছে পবিত্র কুর’আনের সুরা মায়েদার ৪৪, ৪৫ ও ৪৭ আয়াতে।  পবিত্র কুর’আন বুঝার জন্য ভাষাবিদ হওয়া লাগে না। অতীতের মুসলিম রাজা বাদশাহগণ পবিত্র কুর’আনের এ ঘোষণাটি ষোল আনা বুঝতেন। ফলে মহান আল্লাহতায়ালার খাতায় কাফের, জালেম ও ফাসেক রূপে চিহ্নিত হওয়া থেকে বাঁচার প্রবল তাড়না ছিল। তাড়না ছিল জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার। এজন্যই তাদের কাছে গুরুত্ব পেয়েছিল নিজ শাসনাধীন রাজ্যে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা।  ফলে ঔপনিবেশিক কাফির শাসনের পূর্বে প্রতিটি মুসলিম দেশের আদালতে একমাত্র আইন ছিল শরিয়তের আইন। সে আইন যেমন নবাব সিরাজদৌলার শাসনাধীন বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় ছিল, তেমনি ছিল মোগল শাসনাধীন ভারতেও। শরিয়তের আইন ছিল উসমানিয়া খলিফার আদালতেও।

লক্ষণীয় হলো, মুসলিম শাসনামলে ভারতের আদালতগুলিতে শরিয়তী আইনের প্রয়োগ করতে মুসলিমদের সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। বরং সত্য তো এটাই,, ভারতে মুসলিমগণ কখনোই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল না। অথচ তারা আট শত বছরের অধিক কাল শাসন করেছে আদালতে শরিয়তের আইন দিয়েই। পরবর্তীকালে বাদশাহ আওরঙ্গজেবের আমলে সে আইনেরই বিখ্যাত সংকলন রূপে বের হয় ফতোয়ায়ে আলমগিরি। কিন্তু জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার সে তাড়না সেক্যুলারিস্টদের মাঝে নাই। তাড়না নাই, মহান আল্লাহতায়ালার খাতায় কাফির, জালিম ও ফাসিক রূপে চিহ্নত হওয়া থেকে বাঁচায়। এ জন্যই গুরুত্ব হারিয়েছে শরিয়তী আইনকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার বিষয়।

রাজার রাজ্যে আইন তৈরীর অধিকার একমাত্র রাজার।কোন  প্রজার সে অধিকার থাকে না। প্রজাদের কাজ হলো, স্রেফ রাজার আইনকে পুরাপুরি মেনে চলা। সেটি না করলে প্রজাকে বিদ্রোহের শাস্তি পেতে হয়। বিষয়টি একই রূপ মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া শরিয়তী আইনের বেলাতেও। শরিয়তী আইনের প্রতি অবজ্ঞা দেখানোর অর্থ মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। এটি নিরেট বেঈমানী। অথচ বাংলাদেশের ন্যায় শতকরা ৯০ জন মুসলিম জনসংখ্যার দেশে সে বিদ্রোহ ও বেঈমানীই হলো  রাষ্ট্রীয় নীতি। দেশের শাসনতন্ত্র ও আইন হলো সে বিদ্রোহর দলিল। সেখানে শরিয়তী আইনের কোন স্থান নাই। এভাবে সমগ্র দেশ পরিণত হয়েছে বিদ্রোহ ও পাপের কারখানায়।

বাংলাদেশের মুসলিমদের ব্যর্থতা অনেক। আরব, ইরানী, তূর্কী বা আফগানদের ন্যায় পৃথিবীর অন্য দেশে তারা ইসলামের প্রচারে নামেনি। কোন অমুসলিম দেশও তারা জয় করেনি। তবে ১৬ কোটি বাঙালি মুসলিমের তার চেয়েও বড় ব্যর্থতাটি হলো, নিজ দেশেও তারা আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর আইনের বিজয় বা প্রতিষ্ঠা দিতে পারেনি। অথচ সে কাজটি সমাধা করা বাঙালি মুসলিমদের জন্য আদৌ কঠিন ছিল না। সে লক্ষ্য সাধনে নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামকে পৌত্তলিক কাফের শক্তির বিরুদ্ধে যেরূপ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ লড়তে হয়েছিল এবং বহুশত সাহাবীকে যেভাবে শহীদ হতে হয়েছিল, বাংলাদেশের মাটিতে সেরূপ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের প্রয়োজন ছিল না। প্রয়োজন ছিল না অর্থ ব্যয় বা শ্রম ব্যয়েরও। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশটিতে তেমন একটি বিজয় সম্ভব ছিল রাজপথের আন্দোলন করে এবং ভোট দিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের ১৬ কোটি মুসলিম সে কাজে নামেনি। তারা বরং শ্রম, অর্থ ও ভোট দিয়েছে সেক্যুলারিস্ট দুর্বৃত্তদের ও ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী স্বার্থের পাহারাদের বিজয়ী করতে। ফলে মুজিবের ন্যায় গণতন্ত্রের খুনি,  ফ্যাসিবাদের জনক, দুর্নীতির লালনকর্তা ও ইসলামের ঘোরতর শত্রুকে কোন কাফের দেশ থেকে কাফের লোকলস্কর নিয়ে নাযিল হতে হয়নি। বাঙালি মুসলিমগণই তাকে মাথায় তুলে নিয়েছে এবং পিতা, বন্ধু ও নেতার আসনে বসিয়েছে। মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনের দুশমনকে সম্মান করার অর্থ তো তাঁকে অসম্মান করা। মুসলিম জীবনে এর চেয়ে বড় অপরাধ ও বড় বিশ্বাসঘাতকতা আর কি হতে পারে? 

অতীতে মুসলিম শাসকদের দরবারে বহু জুলুম-অনাচার থাকলেও দেশের আদালত থেকে কুর’আনের আইন হটিয়ে আইন তৈরীর কাজটি নিজ হাতে তুলে নেয়নি। মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে কাফির, জালিম ও ফাসিক রুপে চিত্রিত হওয়ার সাহস তারা দেখায়নি। এমনকি সে সাহস কারবালায় ইমাম হোসেন (রা:)’র হত্যার ঘৃণ্য নায়ক ইয়াজিদও দেখায়নি। কিন্ত সে দুঃসাহস দেখায় বাংলাদেশের মুসলিম নামধারি সেক্যুলার রাজনীতিকগণ। তাদের স্পর্ধা অতীতের সকল বিদ্রোহী ও সকল দুর্বৃত্তদের ছাড়িয়ে গেছে। শুধু তাদের ঘর, দল, ব্যবসা-বাণিজ্যই আল্লাহর অবাধ্যতায় পূর্ণ নয়, তারা অবাধ্যতায় পূর্ণ করেছে দেশের আদালত, প্রশাসন, পুলিশ, রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিকে। এরূপ অবাধ্যতা যে শাস্তি আনে তার প্রমাণও তারা নিজেরা। বিশ্বব্যাপী যে অপমান মু্র্তিপূজারী কাফির এবং সাপ-শকুন ভক্ষণকারি প্রকৃতি পূজারী জঙ্গলবাসীদের জুটেনি -সেটিই জুটেছে বাংলাদেশীদের। তারা শুধু দূর্নীনিতে বিশ্বে ৫ বার প্রথমই হয়নি, বরং তলাহীন ভিক্ষার ঝুড়ির খেতাবটিও সংগ্রহ করেছে। দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে কম উন্নত ৪৬টি দেশের মাঝে একটি। গণতন্ত্র, স্বাধীন ভাবে ভোটদানের অধিকার ও মানবিক অধিকারসহ সভ্য ভাবে বসবাসের সকল অপরিহার্য উপাদনগুলি দেশটিতে কবরে শায়ীত। জনগণের ঘাড়ে চেপে বসেছে নৃশংস ও অসভ্য ফ্যাসিবাদ -যা কোন সভ্য মানুষের পরিচয় হতে পারে না।

প্রতিটি অপমান ও যাতনাই তো শাস্তি। শুধু পিঠের উপর আঘাতই শাস্তি নয়, সভ্য ও ভদ্র মানুষের জন্য তার মন ও ইজ্জতের উপর আঘাতও শাস্তি। শুধু তাই নয়, ইসলামের শরিয়তী বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নিয়ে বাঁচার ভয়ংকর প্রতিদানটি তো অপেক্ষা করছে আখেরাতে। মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তী বিধানের বিলুপ্তি এবং ইসলামের শত্রুপক্ষের বিজয় নিয়ে যারা উৎসব করে, পরকালে কি তাদের জান্নাত দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে? এ দুনিয়ায় যাদের সখ্যতা, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও যুদ্ধ-বিগ্রহ কাফেরদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, আখেরাতের বসবাসও যে তাদের সাথে জাহান্নামের আগুনে হবে -সেটিই তো নবীজী (সা)’র হাদীস। বাঙালি মুসলিম সেক্যুলারিস্টগণ তো সে পথই বেছে নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *