ভাষা আন্দোলন ও ভারতীয় ষড়যন্ত্র
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on January 4, 2021
- Bangla Articles, অতিথি লেখক
- No Comments.
ভারত ষড়যন্ত্র ছিল পূর্ব-পাকিস্তান কে পশ্চিম-পাকিস্তান থেকে আলাদা করা। সে ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল ভাষা আন্দোলনে সহায়তা দেয়া। ভাষা আন্দোলনের এই বিষয়টি সর্বপ্রথম জনসম্মুখে আনেন তৎকালে ভারতীয় চর হিসেবে পরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি গণপরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন। কিন্তু গণপরিষদের অন্য কোন সদস্য তার এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেননি। বহুজাতি নিয়ে গঠিত পাকিস্তানে এই বক্তব্য সাম্প্রদায়িক বক্তব্য হিসেবে বিবেচিত হয় এবং তার প্রস্তাব নাকচ হয়।অতঃএব এটা বাংলার গণমানুষের দাবী এটা বলা অযৌক্তিক। বাংলার সব মানুষ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে ছিল এটাও সঠিক নয়। ঢাকায় সেসময় প্রচুর ছাত্র উর্দুর পক্ষেও ভূমিকা রেখেছিলো। বাংলার কোন রাজনৈতিক নেতা বায়ান্নোর আগ পর্যন্ত বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে ছিলেন না। ঢাকা ভার্সিটি ও জগন্নাথ কলেজের (তখন কলেজ ছিল) কিছু ছাত্র ছাড়া এই আন্দোলন কেউ করেনি।
বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনায় নিয়ে আসে তথাকথিত প্রগতিবাদী ইসলামী সংগঠন, সমাজতান্ত্রিক ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষ ইসলামের প্রবক্তা খেলাফতে রব্বানী। তাদেরই কালচারাল উইং তমুদ্দুনে মজলিশ। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার বিরোধী আন্দোলনও তখন জমে উঠে। এই প্রসঙ্গে আবুল কাসেম বলেন, “এদিকে উর্দু সমর্থক আন্দোলন গড়ে উঠে। স্বনামখ্যাত মৌলানা দ্বীন মোহাম্মদ সাহেব প্রমুখকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহল্লায় ও মফস্বলের বহুস্থানে উর্দুকে সমর্থন করে বহু সভা করা হয়। এরা কয়েক লাখ দস্তখত যোগাড় করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এক মেমোরেণ্ডাম পেশ করেন। পথেঘাটে ইস্টিমারে এ স্বাক্ষর সংগ্রহের কাজ চলে। স্বাক্ষর সংগ্রহের পর কয়েকজন নামকরা ব্যক্তি করাচীতে গিয়ে সরকারের কাছে পেশ করে আসেন।” যারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার বিপক্ষে ছিলেন তারা কেউ কিন্তু অবাঙালি ছিলেন না। তাদের যুক্তি হলো পূর্ব পাকিস্তানে যদি বাংলাকে অফিসিয়াল ভাষা করা হয় তবে অন্যান্য অঞ্চল যেমন পাঞ্জাব, সিন্ধ, বেলুচ, কাশ্মীরে তাদের নিজস্ব ভাষা চালু হবে। এক্ষেত্রে বাঙালিদের সেসব অঞ্চলে কাজ করা ও শিক্ষাগ্রহণ করা কঠিন হবে। অন্যদিকে বাংলায় অন্যান্য জাতি গোষ্ঠির পাকিস্তানীরা আসবে না। ফলে দীর্ঘদিনের ইংরেজ ও ব্রাহ্মণ্যবাদীদের শোষণের ফলে পিছিয়ে থাকা বাংলা আরো পিছিয়ে যাবে। সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় সংহতি বিনষ্ট হবে। ১৯৪৭ সালের ২৭ নভেম্বর করাচিতে একটি শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের সাধারণ ভাষা করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। এর প্রতিবাদে ৬ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবুল কাসেম। এ সময় পাকিস্তান সেন্ট্রাল পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক ১৫ ডিসেম্বর এক সার্কুলারে বাংলাকে বাদ দিয়ে ইংরেজি ও উর্দুকে পরীক্ষার বিষয়ভুক্ত করায় তার বিরুদ্ধে অধ্যাপক আবুল কাসেম এক বিবৃতি দেন। আবুল কাসেম এমনভাবে বিবৃতি দেন যেন পাকিস্তানে বাঙালি বাদে আর কোনো জাতি গোষ্ঠী নেই। তার এই অনুচিত বিবৃতি ছাপে নি কোনো পত্রিকা। আবুল কাসেম এই বিবৃতি ৩১ ডিসেম্বর ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেহাদে ছাপার ব্যবস্থা করেন। কলকাতার ঐ পত্রিকা এ বিষয়ে পাকিস্তানের কড়া সমালোচনা করে ও বাঙালি নির্যাতনের অভিযোগ এনে “অবিশ্বাস্য” শিরোনামে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। ওই পত্রিকায় কপি ঢাকায় নিয়ে এসে প্রচারণা চালায় তমুদ্দুনে মজলিসের কর্মীরা। এই ঘটনা ঢাকাবাসীর মনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। তাদের আগের ধারণা সত্য হয়েছে বলে তারা মনে করেন। নতুন একটি ইসলামী ভাবধারার রাষ্ট্রে ফাসাদ সৃষ্টি করার জন্যই মুশরিকরা কিছু ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়েছে। এরকমটাই ভাবতে থাকেন ঢাকাবাসী। তারা তমুদ্দুনের বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থান গ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। প্রেমহরি বর্মন, ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত এবং শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানায়। তারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। একমাত্র চারজন হিন্দু ছাড়া আর কোনো পূর্ব পাকিস্তানের গণপরিষদ সদস্য এই প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নেননি। ফরিদপুরের নেতা তমিজুদ্দিন খানের নেতৃত্বে গণপরিষদের সকল বাঙালি নেতা একযোগে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। ঢাকার নেতা খাজা নাজিমুদ্দিন এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন যে, “পূর্ব বাংলার অধিকাংশ মানুষ চায় রাষ্ট্রভাষা উর্দু হোক, আমরা সবাই পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংহতি চাই।” পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান এ প্রস্তাবটিকে পাকিস্তানে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা বলে উল্লেখ করেন। উর্দুকে লক্ষ কোটি মুসলমানের ভাষা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কেবলমাত্র উর্দুই হতে পারে”। গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথের সংশোধনী প্রস্তাব ভোটে বাতিল হয়ে যায়।
|
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বিবিধ ভাবনা (৩২)
- সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও সাংস্কৃতিক কনভার্শন
- বিবিধ ভাবনা (৩১)
- বাঙালী মুসলিমের বিরুদ্ধে ভারতের কেন এতো আক্রোশ এবং প্রতিরোধই বা কীরূপে?
- অপরাধীদের রাজনীতি এবং বাঙালী মুসলিমের বিপদ
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
MOST READ ARTICLES
- বিবিধ প্রসঙ্গ-৫
- My COVID Experience
- The Hindutva Fascists & the Road towards Disintegration of India
- একাত্তরের প্রসঙ্গ ও কিছু আলেমের কান্ড
- বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস ও ভোটডাকাতদের নাশকতা
RECENT COMMENTS
- compare mobile phone deals unlimited data on বাঙালী মুসলিমের বিরুদ্ধে ভারতের কেন এতো আক্রোশ এবং প্রতিরোধই বা কীরূপে?
- Dr. Md. Kamruzzaman on বিবিধ ভাবনা (২৯)
- Md. Anisul Kabir Jasir on আত্মঘাতের পথে বাংলাদেশ: অভাব যেখানে শিক্ষা ও দর্শনের
- রেজা on শেখ মুজিবের সাথে কিছুক্ষণের স্মৃতি
- Mohammec on শেখ মুজিবের সাথে কিছুক্ষণের স্মৃতি
ARCHIVES
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018