ভারতের আগ্রাসন-স্ট্রাটেজী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গ
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 31, 2019
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
ভোট-ডাকাতদের প্রশংসায় ভারত
ভারতের শাসক মহলে যে বিষয়টি প্রচণ্ড ভাবে কাজ করে তা হলো ইসলাম ও মুসলিম ভীতি। বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ যেহুতু মুসলিম, ফলে ভারতীয়দের মনে সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশ ভীতিও। সে ভয়ের ভিত্তিতেই প্রণীত হয় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র নীতি, সামরিক নীতি, বাণিজ্য নীতি, মিডিয়া নীতি এবং সীমান্ত নীতি। বাংলাদেশে কতটা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেল, জনগণ কতটা ন্যায় বিচার ও নাগরিক অধিকার পেল, মিডিয়া কতটা স্বাধীনতা পেল -সেগুলি ভারতের কাছে আদৌ বিবেচ্য বিষয়ই নয়। বরং তাদের কাছে যা গুরুত্ব পায় তা হলো, বাংলাদেশের মুসলিম জনগণকে কতটা দাবিয়ে রাখা হলো, ইসলামের উত্থানকে কতটা প্রতিহত করা হলো এবং হিন্দুদের কতটা উপরে তোলা হলো -সেগুলি। সে এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভারত চায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিশ্বস্থ্য ও অনুগত কলাবরেটর। ভারতের সে এজেন্ডা পালনে অনুগত কলাবরেটর রূপে কাজ করছে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ। সেটি ১৯৭১ সাল থেকে নয়, বরং তার বহু আগে থেকেই। অন্য কোন দল ভারতের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ভারত তার কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণে সব সময়ই চায়, বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতা আওয়ামী লীগের হাতে থাকুক। আওয়ামী লীগের বিজয় কি ভাবে হলো -সে ভাবনা ভারতের নাই। সে বিজয় যদি ভোট ডাকাতির মাধ্যমে হয় -ভারত তাতেও খুশি এবং সেটি কি স্বচ্ছ নির্বাচন বলে প্রচার ও করে বা শাপলা চত্ত্বরের গণহত্যার ন্যায় বার বার গণহত্যাও করে -ভারত তাতেও সমর্থন দিবে। এমন কি সমর্থনও করবে। এজন্যই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ভোট-ডাকাতি ভারতীয় শাসক মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। সেরূপ পলিসি ভারত একাত্তর থেকেই প্রয়োগ করে আসছে। ফলে তাদের কাছে মুজিবের একদলীয় বাকশালী অসভ্যতাও গ্রহন যোগ্য হয়েছে। গ্রহণ যোগ্য গণ্য হয়েছে লক্ষাধিক বিহারী হত্যা এবং তাদের ঘর-বাড়ি, ব্যবসা-বানিজ্য দখলের অসভ্যতা। গ্রহনযোগ্য হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে অধিকৃত থাকা কালে হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র ও সম্পদের লুটপাট। যেমন আজ গ্রহণযোগ্য হচ্ছে মায়ানমার সরকারের রোহিঙ্গা নির্মূলের অসভ্যতা।
শেখ হাসিনা ও তার পিতা শেখ মুজিব ভারতকে যতটা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে -তা অন্য যে কোন স্বাধীন দেশ থেকে পেতে ভারতকে রীতিমত যুদ্ধ করতে হতো। অথবা সে দেশের অর্থনীতিতে বিশাল অংকের বিনিয়োগ করতে হতো। যেরূপ পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলি ও জাপানকে বন্ধু রূপে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশাল বিনিয়োগ করেছে বিধ্বস্ত সে দেশগুলির পুনঃনির্মাণে। কিন্তু ভারত যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে সেরূপ কিছুই করেনি। অথচ বাংলাদেশ থেকে স্বার্থ উদ্ধার করেছে কোনরূপ অর্থব্যয় না করেই। কারণ তারা জানে, চাকর-বাকরদের থেকে কিছু পেতে বিনিয়োগ করতে হয় না, এজন্য কিছু উচ্ছিষ্ট ব্যয়ই যথেষ্ঠ। ভারতীয় বর্ণ হিন্দুরা শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা বা কোন বাঙালী মুসলিমকে কোনকালেই কি চাকর-বাকরের চেয়ে বেশী কিছু ভেবেছে? ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিকে অবহেলিত বাঙালী মুসলিমগণ যখন অবিভক্ত বাংলার শাসকে পরিণত হলো, তখনই তারা মনের দুঃখে বাংলার বিভক্তি চাইলো এবং অবাঙালী হিন্দু ভারতে যোগ দিল।
ভারত বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরগুলি ব্যবহারের অধিকার নিয়েছে এবং বুকের উপর করিডোর নিয়েছে কোনরূপ রোড ট্যাক্স বা ট্রানজিট ফি না দিয়েই। কারণ, চাকর-বাকরের ভিটার উপর দিয়ে হাটতে জমিদারকে কোন ফি দিতে হয় না। কৃতজ্ঞতাও জাহির করতে হয় না। বরং কথায় কথায় চাকর-বাকরদের গালি বা ধমকি দেয়াটি জমিদারের অধিকার। তাই শেখ মুজিবের শাসনামলে ভারত বাংলাদেশ থেকে বেরুবাড়ি ছিনিয়ে নিয়েছে প্রতিশ্রুত তিন বিঘা করিডোর না দিয়েই। গঙ্গার ও তিস্তার পানি নিয়েছে, কুশিয়ারা ও সুরমার পানিতেও হাত দিচ্ছে। এবং লাগাতর ধমকি দিচ্ছে প্রতিবেশী আসাম ও পশ্চিম বাংলা থেকে বাঙালী মুসলিমদের বাংলাদেশে পাঠানোর। অপর দিকে ভারতকে খুশি করার খাতিরে উত্তর-পূর্ব ভারতের স্বাধীনতাকামী মজলুম জনগণের মুক্তিযুদ্ধের সাথে শেখ হাসিনা ও তার দলের গাদ্দারিটা কি কম? সেটি একমাত্র ভারতকে খুশি করার লক্ষ্যে। অথচ বাংলাদেশের সাথে এ বিশাল এলাকার মুক্তিকামী মানুষের কোন কালেই কোন শত্রুতা ছিল না। বরং তারা বাংলাদেশের মিত্র ও বাংলাদেশী পণ্যের বিশাল বাজার হতে পারতো।
ভারতের একমাত্র বিনিয়োগ বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও মিডিয়াতে। সেটি দেশের প্রচার, প্রশাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সেনাবাহিনীতে ভারতসেবী বিশাল দাসবাহিনী গড়ে তোলার স্বার্থে। এ বিনিয়োগের মূল লক্ষ্য, ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে ভারতের নাশকতাকে তীব্রতর করা। ভারতের এ বিনিয়োগে এক দিকে যেমন সীমাহীন স্বাধীনতা বেড়েছে ভারতসেবী দাসদের, তেমনি পরাধীনতা বেড়েছে বাংলাদেশের জনগণের। এর ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুসলিমদের পিটাতে একাত্তরের ন্যায় ভারতকে তার নিজের সেনাবাহিনী নামাতে হচ্ছে না। সেটি অতি নৃশংস ভাবেই করছে প্রতিপালিত দাসরাই। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ভারতের মূল স্ট্রাটেজী হলো, বাংলাদেশের বুকে ভারতীয় দাসদের শাসনকে প্রতিষ্ঠা দেয়া এবং সেটিকে দীর্ঘায়ীত করা। সেরূপ এক দাস-শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ভারত একাত্তরে যুদ্ধ লড়েছিল। সে যুদ্ধটির মূল লক্ষ্য পূর্ব সীমান্তে পাকিস্তানের ন্যায় আরেক স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা ছিল না। বাঙালী মুসলিমদের গণতান্ত্রিক অধিকার দেয়াও ছিল না। বরং লক্ষ্য ছিল, ভারতসেবী শেখ মুজিব ও তার দলকে মুসলিম ও ইসলাম দলনে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া।এবং সেটি জনগণের স্বাধীনতাকে পদদলিত করে। শেখ মুজিবের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু মৃত্যু হয়নি ভারতের আগ্রাসী নীতির। ফলে মুজিবের ন্যায় শেখ হাসিনাও পাচ্ছে গণতন্ত্র হত্যা ও ফ্যাসিবাদি স্বৈরাচারে ভারতের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা। এজন্যই ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের ভোট-ডাকাতিকে সমর্থণ দিতে ভারত বিলম্ব করেনি।
সাম্রাজ্যবাদি শক্তি মাত্রই জনগণের বলকে নিজের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ মনে করে। ভারতও তেমনি বিপদ মনে করে বাঙালী মুসলিমের বর্ধিষ্ণ শক্তিকে। এজন্যই ভারতের পলিসি হলো, বাংলাদেশের জনগণকে যে কোন মূল্যে দ্রুত শক্তিহীন করা। সেটি স্বৈরাচারি শাসন চাপিয়ে এবং জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে। গণতন্ত্র হত্যায় ভারতের বিনিয়োগটি এজন্যই বিশাল। সেরূপ বিনিয়োগ দেখা গেছে যেমন ২০০৮ সালের নির্বাচনে তেমনি অন্যান্য নির্বাচনেও। আসামের দৈনিক নববার্তা পত্রিকাটি গত ২১/১০/২০১৩ তারিখে প্রথম পৃষ্ঠায় এ মর্মে লিড খবর ছাপে যে,হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারত এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। উক্ত পত্রিকায় ভাস্কর দেব আরো রিপোর্ট করে, ভারত গত ২০০৮ সনের নির্বাচনে ৮ শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল। বলা হয়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি নির্বাচনেই ভারত বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে। তবে ২০১৮ সালে ভারতকে পূজি বিনিয়োগ করতে হয়নি। কারণ, ভোট-ডাকাতিতে পূজি লাগে না, লাগে অস্ত্রধারি ডাকাত। শেখ হাসিনা সে ডাকাতদের সংগ্রহ করেছে দেশের পুলিশ ও সেনাবাহিনী থেকে। ডাকাতিতে সহায়তা দিয়েছে দেশের প্রশাসন ও নির্বাচনি কমিশন।
ভয় মুসলিম বাংলাদেশ নিয়ে
প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগের পিছনে ভারতের এরূপ বিনিয়োগের হেতু কি? হেতু, স্বাধীন মুসলিম-বাংলাদেশ ভীতি। ভারত ভয় পায় বাংলাদেশের ১৬ কোটি মুসলিমের ইসলামের মৌল বিশ্বাস নিয়ে বেড়ে উঠা নিয়ে। ইতিহাসের ছাত্র মাত্রই জানে, ১৯৪৭’য়ে হিন্দুদের অখন্ড ভারত নির্মাণের স্বপ্নকে যারা ধুলিতে মিশিয়ে দিয়েছিল তারা পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার বা অন্যকোন প্রদেশের মুসলিম নয়, তারা ছিল বাঙালী মুসলিম। ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা থেকে ১৯৪০ সালে লাহোরে পাকিস্তান প্রস্তাব-পাশ ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন পর্যন্ত প্রতিটি পর্বে তারাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। সে চুড়ান্ত সময়ে মুসলিম লীগের মূল দুর্গটি ছিল বাংলায়। আজও সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার বুকে যে ভূখন্ডটিতে সবচেয়ে বেশী মুসলিমের বাস সেটিও পাঞ্জাব, সিন্ধু, আফগানিস্তান নয়, বরং সেটি বাংলাদেশ। আর যেখানে এত মুসলমানের বাস সেখানে ইসলামের জাগরণের ভয় থেকেই যায়। কারণ ঘুম যত দীর্ঘই হোক, সেটি ঘুম; মৃত্যু নয়। একসময় সে ঘুম ভেঙ্গে যায়। বাংলার মুসলিমগণ সাতচল্লিশে জেগে উঠেছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর আবার ঘুমিয়ে পড়িছিল। আর সে ঘুমের ঘোরেই ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে ঢুকে তার দাসদের সহায়তায় বিরাট সর্বনাশটি করেছিল। কিন্তু বাংলার মুসলিমগণ যে আবার জেগে উঠতে উদগ্রীব -সে আলামত তো প্রচুর। আর তাতেই প্রচণ্ড ভয় ধরেছে ভারতীয়দের মনে।
বাংলার মুসলিমদের সাতচল্লিশের জিহাদটি ছিল উপমহাদেশের অন্যান্য এলাকার মুসলিমদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার। কারণ, প্রাসাদ গড়তে যেমন বৃহৎ ভূমি লাগে, তেমনি সভ্যতা গড়তে লাগে বিরাট একটি রাষ্ট্র এবং সে রাষ্ট্রে নানা বর্ণ, নানা অঞ্চল ও নানা ভাষার মানুষের বৃহৎ জনগোষ্ঠি। এ সামর্থ্য একক বাংলাভাষীদের থাকার কথা নয়। এজন্যই মুসলিমকে শুধু নানা বর্ণ ও নানা ভাষার মানুষের সাথে একই জায়নামাজে দাঁড়িয়ে নামায পড়ার সামর্থ্য থাকলে চলে না, একত্রে অখণ্ড এক রাষ্ট্র গড়ার সামর্থ্যও থাকতে হয়। একই কারণে প্রাথমিক যুগের মুসলিমদের মক্কা-মদিনা বা হেজাজের ক্ষুদ্র গন্ডি পেরিয়ে বিশাল এক দেশ গড়তে হয়েছে। সাতচল্লিশের সে জিহাদটি ছিল দু’টি বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে। একদিকে ছিল সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ বিশ্বশক্তি, অপর দিকে ছিল আগ্রাসী বর্ণ হিন্দুশক্তি। মূল লক্ষ্যটি ছিল, বিশ্ব-রাজনীতিতে মুসলমানদের হৃত গৌরবকে আবার ফিরিয়ে আনা। বাঙালী মুসলিমদের পক্ষে একাকী ভাবে সে যুদ্ধে বিজয় সম্ভব ছিল না। উপমহাদেশের মুসলিমদের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠার ফলেই সেদিন হিন্দু ও ব্রিটিশ -এ উভয়শক্তির বিরোধীতার সত্ত্বেও জন্ম নিয়েছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান। ভারত শুরু থেকে সে বৃহৎ পাকিস্তানকে মেনে নিতে পারিনি; তেমনি মেনে নিতে পারছে না পাকিস্তান ভেঙ্গে জন্ম নেয়া বাংলাদেশকে। তাদের ভয়, না জানি এটিই আরেক পাকিস্তানে পরিণত হয়। কারণ বাংলার ভূমি ও জনসংখ্যা ইসরাইলের চেয়ে ক্ষুদ্রতর নয়। ভারতের ভয়ের আরো কারণ, একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশে পরিণত হলেও বাঙালী মুসলিমের মন থেকে ইসলাম বিলুপ্ত হয়নি। বরং দিন দিন সে ইসলামী চেতনা আরো বলবান হচ্ছে। সে সাথে প্রবলতর হচ্ছে ভারতের পূর্ব প্রান্তে ইসলামি শক্তি রূপে বেড়ে উঠার সাধ। আর তাতেই ভয় তীব্রতর হচ্ছে আগ্রাসী ভারতীয়দের মনে। সেটি আঁচ করা যায় ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় সেদেশের রাজনৈতীক নেতা, বুদ্ধিজীবী ও কলামিস্টদের লেখা পড়লে। আর এতে ভারতের কাছে কদর বাড়ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বেড়ে উঠা দেশটির ঘরের শত্রুদের।
ভারতীয়দের “আপনজন” ও “পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে হাসিনা”
ভারতের জন্য অপরিহার্য হলো, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিজ স্বার্থের বিশ্বস্থ পাহারাদার। সেটি না হলে পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ভারতের যুদ্ধ ও বিনিয়োগের মুল উদ্দেশ্যই বানচল হয়ে যায়। তাতে বিপদে পড়বে পূর্ব সীমান্তে ভারতের নিরাপত্তা। তবে পাহারাদারীর কাজে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগণ যে ভারতের আপনজন -সে সাক্ষ্যটি এসেছে ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম এক নীতিনির্ধারকের মুখ থেকে। তিনি হলেন ভারতের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী সুশীলকুমার শিন্দে। শেখ হাসিনার ভারতপ্রেমে তিনি এতটাই মোহিত হন যে, এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে তিনি “ভারতের আপনজন’ এবং “যেন পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে” রূপে আখ্যায়ীত করেছেন। সে খবরটি ছেপেছিল কোলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা তার ২০১৩ সালের ৭ই নভেম্বর সংখ্যায়। সুশীলকুমার শিন্দে এ কথাটি বলেছেন পাঞ্জাবের আট্টারি-ওয়াঘা সীমান্তের ধাঁচে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে জয়েন্ট রিট্রিট সেরিমনির সূচনা পর্বের এক সমাবেশে।
প্রতিটি বিনিয়োগের পিছনেই থাকে মুনাফা লাভের আশা। মুনাফা লাভের সম্ভাবনা না থাকলে একটি টাকা ও একটি মুহুর্তও কেউ বিনিয়োগ করে না। আর বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগটি কোনকালেই খয়রাত ছিল না। খয়রাত ছিল না একাত্তরের যুদ্ধে ভারতীয়দের বিপুল অর্থ ও রক্তের বিনিয়োগও। তবে বাংলাদেশ থেকে ভারতের মুনাফা তোলার মাত্রাটি অত্যাধিক বেড়ে যায় যখন শাসনক্ষমতা আওয়ামী লীগের হাতে যায়। ২০০৮ সালে হাসিনার ক্ষমতায় আসাতে ভারত যে প্রচুর মুনাফা তুলেছে সে সাক্ষ্যটি এসেছে খোদ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী শিন্দের মুখ থেকে। বাংলাদেশ থেকে তারা এতই নিয়েছিল যে তাতে সাধ জেগেছিল কিছু প্রতিদান দেয়ার। তবে সেটি বাংলাদেশের জনগণকে নয়, সেটি খোদ হাসিনাকে। সে প্রতিদানটি দিতে চায় তাকে ২০১৪ সালে পুণরায় ক্ষমতায় বসানোর মধ্যদিয়ে। সে লক্ষ্যেই বাংলাদেশের ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারতের বিনিয়োগ ছিল এক হাজার কোটি রুপি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিন্দের ভাষায়ঃ “পাঁচ বছরে হাসিনার আমলে ঢাকা ভারতকে যে ভাবে সহযোগিতা করেছে, তার প্রতিদান দিতে নয়াদিল্লিও বদ্ধপরিকর”। তাছাড়া আগামী নির্বাচন শুধু বাংলাদেশীদের জন্যই নয়, ভারতীয়দের কাছেও অতি গুরুত্বপূর্ণ। সে অভিমতটি সে সময় এসেছে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা RAW’য়ের বাংলাদেশ ইনচার্জ ও সিনিয়র অফিসার শ্রী বিবেকানন্দ থেকে। তিনিও জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ২০১৪ সালের নির্বাচন ভারতের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। আর নির্বাচনের গুরুত্ব বাড়লে তাতে ভারতীয়দের বিনিয়োগও যে বাড়বে সেটিই তো স্বাভাবিক।
আত্মতৃপ্তি ভারতসেবীর
দাসদের জীবনে বড় চাওয়া-পাওয়াটি হলো মনিব থেকে নিষ্ঠাবান দাস রূপে স্বীকৃতি লাভ। সে স্বীকৃতিটুকু পাওয়ার মাঝেই তারা জীবনের সার্থকতা ভাবে। “দারোগা মোরে কইছে চাচি আমি কি আর মানুষ আছি”–এমন এক দাসসুলভ আত্মতৃপ্তি ফুটে উঠেছে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তের জয়েন্ট রিট্রিট উৎসবে উপস্থিত বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরের কথায়। গত ৬/১১/১৩ তারিখে অনুষ্ঠিত সে সেমিনারে ভারতের স্বরাষ্ট্র সুশীলকুমার শিন্দে যখন শেখ হাসিনাকে “ভারতের আপনজন’ এবং “যেন পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে” আখ্যায়ীত করেন তখন করতালি দিয়ে সে কথাকে স্বাগত জানিয়েছেন মহিউদ্দিন খান আলমগীর। তিনি তার নিজের বক্তৃতাতে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের। ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বকে ‘চিরায়ত’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য আমরা গর্বিত। সে সময় সুশীলকুমার শিন্দে বলেন,“দু’দেশের বন্ধুত্বের কথা বলতে গেলে শেখ হাসিনাজির কথা বলতেই হয়। আমার তো মনে হয়, উনি যেন এই বাংলারই মেয়ে। আমাদের অত্যন্ত আপনজন।” শিন্দের নিজের কথায়, “বাংলাদেশের মাটিতে আশ্রয় নেওয়া এদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলিকে উচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে হাসিনা সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয়। ভারত নিশ্চয়ই তার প্রতিদান দেবে।”
শ্রী শিন্দের কথায় বুঝা যায়, শেখ হাসিনার উপর ভারতীয় নেতাদের এত খুশির কারণ, বাংলাদেশের মাটিতে ইসলামপন্থিদের নির্মূলে তার নির্মম নৃশংসতা। ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরের মুসলিমদের সাথে যেরূপ আচরণ করতে ভয় পায়, শেখ হাসিনা তার চেয়েও নৃশংসতর আচরণ করেছে ইসলামপন্থিদের সাথে। ইসলামপন্থিদের নির্মূল-কর্মে আদালতকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে যে আদালত বসানো হয়েছে -সেটি তো সে লক্ষ্যেই। সে অপরাধ কর্মে হাসিনা ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে নিজের মুসলিম নামের পরিচিতি। তিনি বলে থাকেন, আমিও মুসলমান। দাবি করেন, সকালে নাকি কোরআনে পড়ে কাজ শুরু করেন। প্রশ্ন হলো, অন্তরে সামান্য ঈমান থাকলে কেউ কি মুসল্লীদের উপর গুলি চালাতে পারে? সংবিধান থেকে বিলুপ্ত করে কি আল্লাহর উপর আস্থার বানী? নিষিদ্ধ করতে পারে কি তাফসির মহফিল? সে কি বিরোধীতা করে মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তী বিধান প্রতিষ্ঠার? অথচ হাসিনা তো এর সবগুলিই করছেন। এদের সম্পর্কেই পবিত্র কোরআনে মহান রাব্বুল আ’লামীন বলেছেন, “তারা নিজেদের মুসলিম হওয়ার অঙ্গিকারটিকে ঢাল রূপে ব্যবহার করে। অথচ তারা আল্লাহর রাস্তা থেকে (মানুষকে) দূরে হটায়। কতই না নিকৃষ্ট হলো তারা যা করে সে কাজগুলি।”-(সুরা মুনাফিকুন আয়াত ২)।
বাংলাদেশের সীমান্তে আগামীতে যদি কোন বিদেশী সেনাবাহিনীর আগ্রাসন হয় তবে সেটি ১২ শত মাইল দূরের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বারা হবে না। বাংলাদেশের শিশুরাও সেটি বুঝে। বাংলাদেশের উপর আজ যাদের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য সেটিও পাকিস্তানের নয়, সেটি ভারতের। বাংলাদেশের সীমান্তে আজ যারা ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে মারা যাচ্ছে তারা পাকিস্তানী সীমান্ত প্রহরী নয়, তারা ভারতীয়। এবং ভারতীয়দের সে হামলার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের রাজপথে ও মিডিয়াতে যারা প্রতিবাদমুখর তারাও আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের কেউ নয়। তারা হলো বাংলাদেশের ইসলামি জনতা। ভারতীয়দের ভাষায় এরাই হলো বাংলাদেশের ইসলামি মৌলবাদী শক্তি। ভারত নিজের অপরাধগুলি দেখতে চায় না,বরং মৌলবাদী রূপে গালি দেয় তাদের যারা ভারতের সে আগ্রাসী নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। ভারতীয়রা চায়, সিকিমের ন্যায় বাংলাদেশও ভারতের বুকে লীন হয়ে যাক। চায়,বাংলাদেশের মানুষ শেখ মুজিব, হাসিনা ও আওয়ামী ঘরানার রাজনৈতীক নেতাকর্মী ও বুদ্ধিজীবীর ন্যায় দাসসুলভ চরিত্র নিয়ে বেড়ে উঠুক। এ দাসদের বিশ্বাস, দাসসুলভ এ আত্মসমর্পণটি হলো ভারতের একাত্তরের ভূমিকার জন্য তাদের দায়বদ্ধতা। কিন্তু সেটি হচ্ছে না দেখেই ভারত প্রচন্ড বিক্ষুব্ধ। সে সাথে প্রচন্ড ভীত বাংলাদেশের বুকে প্রতিবাদী মানুষের বিপুল উত্থান দেখে।
দাস-শাসনের কবলে বাংলাদেশে
ইসলামের উত্থানের ফলে শুধু বাংলাদেশের রাজনীতিতে নয়, ভারতের রাজনীতিতেও যে ভূমিকম্প শুরু হবে তা ভারতীয় নেতারা বুঝে। কারণ ভারতে রয়েছে ২০ কোটি মুসলমানের বাস -যা সমগ্র বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠি। তাদের হিসাবে প্রতিটি মুসলিমই হলো সুপ্ত টাইম বোমা। সময়মত ও সুযোগমত তা বিস্ফোরিত হতে বিলম্ব করে না। তাছাড়া রাজনৈতীক জাগরণটি প্রচন্ড ছোঁয়াছেও। তাই যে বিপ্লব তিউনিসিয়ায় শুরু হয়েছিল তাই মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেন, জর্দান, বাহরাইন ও সিরিয়ায় কাঁপন ধরিয়েছে। সম্প্রতি কাঁপন ধরিয়েছে আলজিরিয়ায়। ঠোঁট উড়ে গেলে দাঁতেও বাতাস লাগে। তাই বাংলাদেশে ভারত সেবী দাসশক্তির দুর্গ বিলুপ্ত হলে ভারতেও তার আছড় পড়বে। ইসলামের জোয়ার নিয়ে ভারত এজন্যই চিন্তিত। ভারতীয় নেতারা তাই বার বার বলছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থিরা বিজয়ী হলে তা পাল্টে দিবে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি। তখন সে বিপ্লব আঘাত হানবে শুধু ভারতে নয়, রোহিঙ্গার মুসলিম ভূমিতেও। ভারত চীনকে সে কথা বলে সে দেশের নেতাদের ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে উস্কানি দিচ্ছে। এজন্যই ভারত চায়, বাংলাদেশের মুসলিমদেরকে যে কোন মূল্যে ইসলাম থেকে দূরে রাখতে। চায়, ইসলামপন্থিদের নির্মূল। সে লক্ষ্যে চায়, ইসলাম বিরোধীদের অব্যাহত শাসন। ভারতীয় শাসকচক্রের বাংলাদেশ বিষয়ক নীতির সেটিই মূল কথা। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের বিনিয়োগটি এজন্যই এত বিশাল।
তবে আওয়ামী লীগের জন্য ভারত থেকে অর্থ সাহায্যের প্রয়োজন কমেছে। দলটির হাতে এখন বাংলাদেশের রাজস্ব-ভাণ্ডার। তবে এখন জরুরী হলো, বিশ্বের দরবারের দিল্লির কুটনৈতিক সাপোর্ট এবং নিজ দেশে ভারতীয় গোয়েন্দাদের লাগাতর তদারকি। তবে এরূপ সাপোর্ট ভারত দিয়ে আসছে ১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিজয়ের পর থেকেই। প্রতিদানে ভারত পাচ্ছে আনুগত্য। ভারতের প্রতি আনুগত্য নিয়েই শেখ মুজিব ইসলামপন্থিদের রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করেছিলেন; এবং জেলে তুলেছিলেন তাদের নেতা-কর্মীদের। শাসনতন্ত্রে মূলনীতি রূপে স্থান দেয়া হয়েছিল সমাজতন্ত্র, বাঙালী জাতিয়তাবাদ ও সেক্যেুলারিজমের ইসলাম বিরোধী মতবাদকে। অথচ ১৯৭০য়ের নির্বাচনে সেগুলি কোন নির্বাচনি ইস্যু ছিল না। অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে এর চেয়ে বড় গাদ্দারি আর কি হতে পারে?
মুসলিম হওয়ার ঈমানী দায়বদ্ধতা হলো, ইসলামের প্রতিষ্ঠায় আমৃত্যু নিষ্ঠাবান হওয়া। এখানে আপোষ হলে কেউ মুসলিম থাকে না। অথচ মুজিব সেটিকে ফৌজদারি অপরাধে পরিণত করেছিলেন। ইসলামি দলের বহু নেতাকর্মীদের সেদিন নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। বাংলার সমগ্র ইতিহাসে ইসলামের এমন ঘরের শত্রু পূর্বে কোন কালেই দেখা যায়নি। দেখা যায়নি এরূপ গণতন্ত্রের শত্রুও। এমন কি আইয়ুব খানের আমলেও বহু রাজনৈতীক দল ছিল। খোদ আওয়ামী লীগও তখন বেঁচে ছিল। অথচ ইসলামের এবং সে সাথে গণতন্ত্রের এতো বড় দুষমণ হলো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কাছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী। যে শাসনতন্ত্রে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতাকে দাফন করা হয়েছিল এবং প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল একদলীয় বাকশালীয় স্বৈরাচার, সেটিই চিত্রিত হয় সেরা শাসতন্ত্র রূপে। এটি তো মৃত বিবেকের আলামত; জীবিত বিবেক নিয়ে কেউ কি এমনটি বিশ্বাস করতে পারে? অপর দিকে ভারতীয় নেতারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও মুজিবের ন্যায় গণতন্ত্রের এতবড় শত্রুকে সমর্থণ দিতে বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধ করেনি। বরং আজ একই কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে শেখ হাসিনা। হাসিনাকে দিয়ে কোরআনের তাফসির মহফিলগুলো যেমন বন্ধ করা হয়েছে, তেমনি বাজেয়াপ্ত কর হচ্ছে ইসলাম বিষয়ক বইপুস্তক।ইসলামপন্থিদের দলনে ব্যবহৃত হচ্ছে দেশের আদালত। আদালতের নতজানু বিচারকগণ কেড়ে নিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতাকর্মীদের প্রাণ।
তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় শাসক চক্র তার সেবাদাসদের দিয়ে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যুদ্ধাবস্থার জন্ম দিয়েছে -তা কি সহজে শেষ হবার? যুদ্ধ বা রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু করাটি সহজ, কিন্তু শেষ করাটি আর আক্রমনকারির নিজের হাতে থাকে না। আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে যুদ্ধ ২০০১ সালে শুরু করেছিল তা বিগত ১৮ বছরেও শেষ হয়নি। শত চেষ্টা করেও তা শেষ করতে পারছে ন। ইরাকে যে যুদ্ধ ২০০৩ সালে শুরু করেছিল তাও শেষ হয়নি। বরং ছড়িয়ে পড়েছে শুধু সিরিয়া, ইয়েমেন ও মিশরে নয়, আফ্রিকাতেও। ভারতও তার নিজের যুদ্ধ কাশ্মীরে বিগত ৪০ বছরেও যেমন শেষ করতে পারিনি। শেষ করতে পারছে না উত্তর-পূর্ব ভারতেও। বরং দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। ভারতের জন্য বিপদের কারণ হলো, বাংলাদেশ ৮০ লাখ মানুষের কাশ্মীর নয়। সাড়ে তিন কোটি মানুষের আফগানিস্তানও নয়। বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের দেশ। এবং ভারতও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী নয়। যে চোর-ডাকাত, ভোট-ডাকাতদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ভারত এ যুদ্ধ জিতছে চাচ্ছে সেটিও কি সফল হবার? যুদ্ধের বিশাল সুফলটি হলো, তা জনগণের ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়। তাই যেদেশ যুদ্ধাবস্থা থাকে সে দেশের জনগণও সর্বদা জাগ্রত থাকে। হাজার হাজার নতুন লড়াকু যোদ্ধা তখন রণাঙ্গণে নেমে আসে। মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বেশী শক্তি বেড়েছে তো তখন যখন তারা লাগাতর যুদ্ধাবস্থায় ছিল। ভারতের জন্য বিপদের আরো কারণ, অনুগত চোর-ডাকাত ও ভোট-ডাকাতদের দিয়ে ইচ্ছামত চুরি-ডাকাতিতে করিয়ে নেয়া যায়, কিন্তু তাদের দিয়ে কি কোন যুদ্ধজয় সম্ভব? একাত্তরে এজন্যই ভারতকে নিজে যুদ্ধে নামতে হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ভারতের কি একাত্তরের ন্যায় আরেক যুদ্ধ লড়ার সামর্থ্য আছে? কারণ, যুগই শুধু পাল্টে যায়নি, ইতিমধ্যে মানুষও পাল্টে গেছে। ক্ষমতায় থাকতে বাকশালীদের ভোট-ডাকাতিতে নামতে হয় তো সে পাল্টে যাওয়া মানুষের কারণে। প্রথম সংস্করণ ১৭/১১/১৩, দ্বিতীয় সংস্করণ ৩০/০৩/২০১৯
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, গণহত্যা ও আগ্রাসন যেখানে গণতন্ত্র
- আধিপত্য বিস্তারে আগ্রাসী মার্কিন প্রজেক্ট
- বিবিধ ভাবনা (১৪)
- বিভক্ত মুসলিম এবং অর্জিত আযাব
- মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি প্রসঙ্গে
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
MOST READ ARTICLES
- বিবিধ প্রসঙ্গ-৫
- Political, religious & demographic dynamics in South Asia & threatened co-existence of people with pluralities
- My COVID Experience
- The Hindutva Fascists & the Road towards Disintegration of India
- দিল্লিতে সরকারি উদ্যোগে মুসলিম গণহত্যা