বিবিধ ভাবনা (৩৮)
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on March 22, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
১. চাকুরীজীবী রাজনীতিবিদদের পঙ্গুত্ব ও দুর্বৃত্তদের স্বর্গরাজ্য
যেসব সংগঠনে সার্বক্ষনিক নেতাকর্মীর নামে চাকুরীজীবী পালা হয় -সেসব সংগঠনে গড়ে উঠে চাকুরীজীবীদের পাশাপাশী বিপুল সংখ্যক আনুগত্যজীবী। আনুগত্যজীবীদের বলা হয় দলীয় ক্যাডার। আনুগত্যজীবীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় চাকুরীজীবীদের উৎসাহে। কারণ দলে নিজ নিজ পদে নিজেদের চাকুরী স্থায়ী করার জন্য এরূপ আনুগত্যজীবীদের প্রতিপালন দেয়াকে জরুরি মনে করা হয়। এরা দলে নেতাদের অনুগত পাহারাদার রূপে কাজ করে।
এসব সংগঠন দীর্ঘকাল বেঁচে থাকলেও তাদের দ্বারা কোন গণ-আন্দোলন বা বিপ্লব হয়না। কারণ গণ-আন্দোলন বা বিপ্লব ঘটাতে হলে রাজপথে লড়াইয়ে নামতে হয়। তখন দলের দরজা খুলে দিতে হয় নতুনদের জন্য। কিন্তু চাকুরীজীবী সংগঠনে সেটি সম্ভব নয়। চাকুরীজীবীগণ ও তাদের সহচর আনুগত্যজীবীগণ দরজায় পাহারাদার রূপে দাঁড়ায় যাতে অন্যদের বিপুল সংখ্যায় প্রবেশে তাদের চাকুরী বিপদে না পড়ে। এজন্যই এসব চাকুরীজীবীদের সংগঠনে কোন নতুন মুখ বা নেতা দেখা যায় না। পুরোন ক্যাডারদের থেকেই নেতা হয়।
তাছাড়া আন্দোলনে দেশ অস্থির হলে দলের আয়ে ঘাটতি, চাকুরীজীবীদের বেতন হ্রাস ও চাকুরী হারানোর ভয় থাকে। তাই তারা ঝুঁকি নেয় না। এজন্যই দেশে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন যতই তীব্র হোক না কেন এবং নিজেদের নেতাকর্মীগণ যতই ফাঁসিতে ঝুলুক বা নির্যাতিত হোক না কেন -এসব চাকুরীজীবীদের সংগঠন আন্দোলনে যায় না।
নবীজী (সা:)’র সাহাবীগণ কোন সংগঠনের চাকরীজীবী ছিলেন না। তারা নিজেদের জানমাল বেঁচে দিয়েছিলেন মহান আল্লাহতায়ালার কাছে। সমাজ বিপ্লবের কাজে তাঁরা অর্থ দিতেন, নিতেন না। প্রতিদান চাইতেন একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালা থেকে। দুর্বৃত্ত শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াইকে তাঁরা পবিত্র জিহাদ মনে করতেন। এমন আত্মত্যাগী মানুষ সৃস্টি না হলে কোন বিপ্লব হয় না, বিজয়ও আসে না। নবীজী (সা:)’র আমলে এরূপ আত্মত্যাগী মানুষের সংখ্যা সমগ্র মানব ইতিহাসে সর্বাধিক ছিল বলেই সবচেয়ে বড় বিপ্লবটি সেদিন সংঘটিত হয়েছিল। বাংলাদেশে সে রকম মানুষ নাই, ফলে কোন বিপ্লবও নাই। তাই দেশ হাসিনার ন্যায় ভোটডাকাতদের স্বর্গরাজ্য।
২. আন্দোলন হোক অসভ্যতার নির্মূলে
জনপদে নেকড়ে বা ডাকাত ঢুকলে সবাই যুদ্ধে নামে। এটিই সভ্য সমাজের রীতি। স্বৈরচারী দুর্বৃত্ত ও ভোটডাকাত ক্ষমতায় বসলে জনগণ তেমন একটি যুদ্ধ শুরু করবে -সেটিও সভ্য সমাজে অতি কাঙ্খিত। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি হয়নি। এখানেই ধরা পড়ে বাংলাদেশীদের নৈতিক দিক দিয়ে দারুন ভাবে পিছিয়ে পড়াটি।
তবে বাংলাদেশীদের ব্যর্থতাটি আরো গুরুতর। ব্যর্থতাটি স্রেফ দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নয়; বরং তাদের ঘৃণা করার সামর্থ্যে। লড়াইয়ের জন্য চাই দৈহিক বল, ঘৃণার জন্য চাই নৈতিক বল। চোর-ডাকাতদের ঘৃনা করার জন্য শিক্ষিত হওয়া লাগে না। নিরক্ষরেরও সে সামর্থ্য থাকে। কিন্তু সে সামর্থ্য নাই বাংলাদেশের আদালতের বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সেনা অফিসার, প্রশাসনের কর্মচারি ও পুলিশ বিভাগের লোকদের। তারা বরং ভোটচোর হাসিনা ও তার সহচর দুর্বৃত্তদের গুণ গায় এবং প্রটেকশন দেয়। বিষয়টি গুরুতর। বাংলাদেশের সমস্যা শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং ভয়ানক নৈতিক। এটি নিতান্তই বিকট অসভ্যতা। তাই বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় আন্দোলনটি হওয়া উচিত এই অনৈতিকতা ও অসভ্যতার নির্মূলে।
আর অসভ্য মানুষদের সভ্য করার কাজে সবচেয়ে সফল প্রেসক্রিপশনটি হলো কোর’আন। এ হাতিয়ারটি দিয়েছেন মহাজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালা। আরবের অসভ্য মানুষদের এ প্রেসক্রিপশন মহামানবে পরিণত করেছিল। তাই বাংলাদেশে অবশ্যই সবচেয়ে বড় আন্দোলনটি হওয়া উচিত কোর’আন বুঝা ও কোর’আন বুঝানো নিয়ে। এ আন্দোলন সফল না হলে স্রেফ মুসলিমদের মুসলিম হওয়া বিফল হবে না, বিফল হবে সভ্য মানুষ রূপে বেড়ে উঠাও। এ কাজটি এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে সমগ্র মানব ইতিহাসে একমাত্র এ কাজের জন্যই মহান আল্লাহতায়ালা নবী-রাসূল ও জিব্রাইল (আ:)কে এ পৃথিবী পৃষ্ঠে পাঠিয়েছিলেন।
৩. ব্যর্থতা মুসলিম হওয়ায়
ডাক্তারী বই না পড়িয়ে কাউকে ডাক্তার বানানো যায় না। তেমনি কোর’আন না বুঝিয়ে কাউকে মুসলিম করা যায়না। তাই নামায-রোযার আগে কোর’আন বুঝা ফরজ করা হয়েছে। ইকরা (পড়) তাই ওহীর প্রথম শব্দ। নামায ফরজ হয়েছে ইলম ফরজ হ্ওয়ার ১১ বছর পর। অথচ মুসলিমগণ কোর’আন না বুঝে পড়ে। ফলে অসম্ভব হয়েছে্ মুসলিম হওয়া। কেউ মুসলিম না হলে শয়তানে পরিণত হবে -সেটিই তো স্বাভাবিক। এদের কারণেই তো বাংলাদেশে ইসলাম পরাজিত এবং বিজয় ইসলামবিরোধীদের।
মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আন্দোলনটি হলো মানুষকে ঈমানদার বানানোর আন্দোলন। এ আন্দোলন মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর। ফলে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং শ্রেষ্ঠ নেক কর্ম আর কি হতে পারে? এ কাজে অংশ নেয়া সবার উপরে ফরজ। এ কাজ নবী-রাসূলদের। এ কাজে সবচেয়ে শক্তিশালী ও সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে রাষ্ট্র। এবং সেটি কোর’আন শিক্ষাকে ব্যাপকতর করার মধ্য দিয়ে।
৪.শত্রুর ষড়যন্ত্র
জিহাদ এবং শাহাদা – এ দুটি ইসলামের অতি মৌলিক বিষয় যার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে পবিত্র কোর’আনে। মুসলিম ইতিহাসে যা কিছু মহৎ কর্ম সাধিত হয়েছে -তা সম্ভব হয়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষের জিহাদে অংশ নেয়া ও শহীদ হওয়ার কারণে। এ দুটি বাদ দিলে ইসলাম বাঁচে না। জিহাদই ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। শহীদরাই মহান আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানব। তারা জান্নাত পায় বিনা হিসাবে। অথচ জিহাদ এবং শাহাদা’র বিষয়টি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বাদ দিতে চাপ দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল কাফের শক্তি। তারা মুসলিম দেশগুলির স্কুল ও মাদ্রাসার সিলেবাস পাল্টানোয় হাত দিয়েছে।
৫.চাই রাজনৈতিক শক্তি
ভেড়ার সংখ্যা কোটি কোটি হলেও তাদের ভাগ্যে পরিবর্তন আসে না। আগের মতই ভেড়া ঘাস খায়। ভেড়া জন্মায় জবাই হওয়ার জন্য। তাই শুধু জনসংখ্যায় বাড়লেই হয় না, ভাগ্য পরিবর্তনে রাজনৈতিক শক্তি লাগে। পশু থেকে মানুষ উন্নত এই রাজনৈতিক শক্তির কারণে। এরিস্টোটল তাই মানুষকে রাজনৈতিক পশু বলেছিলেন। ১৭ কোটি বাংলাদেশীর সে রাজনৈতিক শক্তি নাই। তারাও ভেড়াতে পরিণত হয়েছে। তাই ঘাড়ের উপর দুর্বৃত্ত ভোটডাকাতগণ বসলেও ভেড়ার মত তারাও প্রতিরোধহীন থাকে।
৬.পকেট ভরছে ডাকাতদের এবং দেনা বাড়ছে জনগণের
শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসার আগে ৩৮ বছরে বিদেশের কাছে বাংলাদেশের মোট লোন হয়েছিল প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার। শেখ হাসিনা তার ১২ বছরের শাসনে লোন নিয়েছে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের এখন মোট লোন ৫৭ বিলিয়ন ডলার। এ লোন হাসিনা নিজে শোধ করবে না, শোধ করবে দেশের জনগণ।
হাসিনা ইতিমধ্যেই দেশের সরকারি ব্যাংক গুলোর ভান্ডার খালি করেছে। কিন্তু তার নিজের এবং দলীয় ডাকাতদের অর্থের লোভ কমেনি। তাই অর্থ সংগ্রহে হাত বাড়িয়েছে বিদেশীদের কাছে। বিদেশীদের লাভ, লোন দিলে তারা মোটা অংকের সূদ পাবে। লোনের টাকায় পকেট ভর্তি হচ্ছে হাসিনার ও তার দলীয় ডাকাতদের এবং দেনা বাড়ছে জনগণের।
৭ যুদ্ধ ইসলামের বিরুদ্ধে
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিবর্গ মুসলিম বিশ্বে গণতন্ত্র নিয়ে ভাবে না। তারা ভাবে ইসলাম দমন নিয়ে। যারা ইসলামপন্থীদের দমনের কাজটি নিষ্ঠুর ভাবে করবে -তাদেরকে তারা সর্বভাবে সমর্থণ দিবে। তাই হাসিনার ন্যায় ভোটডাকাত ফ্যাসিবাদীকে বা মিশরের জেনারেল সিসি’র ন্যায় বর্বর শাসককেও এরা সমর্থন দেয়।
এখন এটি পরিস্কার, ইসলামপন্থীগণ কোন দেশে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসলেও পাশ্চাত্যের কাফের শক্তি তাদের মেনে নিতে রাজী নয়। সেটি দেখা গেছে আলজিরিয়া, ফিলিস্তিন ও মিশরের নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের বিজয়কে পন্ড করার ক্ষেত্রে। অপর দিকে স্বৈরাচারি শাসক যত ফ্যাসিস্টই হোক না কেন, তাদের মেনে নিতে কোন আপত্তি নাই -যদি সে সরকার ইসলামপন্থীদের নির্মূলে উদ্যোগী হয়। ফলে তাদের যুদ্ধটা ইসলামের বিরুদ্ধে। মুসলিমদের দায়িত্ব হলো তাদের মূল শত্রুকে চেনা। ২২/০৩/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- নামাযে নিদারুণ ব্যর্থতার বিষয়গুলি
- বিবিধ ভাবনা (৪৪)
- বিবিধ ভাবনা (৪৩)
- কাঙ্খিত লক্ষ্যে রোযা কতটুকু সফল?
- বিবিধ ভাবনা (৪২)
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
MOST READ ARTICLES
- My COVID Experience
- একাত্তরের প্রসঙ্গ ও কিছু আলেমের কান্ড
- আমার কোভিড অভিজ্ঞতা
- শেখ মুজিবের সাথে কিছুক্ষণের স্মৃতি
- বাঙালী হিন্দুর রেনেসাঁ ও নাশকতা
RECENT COMMENTS
- site on বাঙালী মুসলিমের বিরুদ্ধে ভারতের কেন এতো আক্রোশ এবং প্রতিরোধই বা কীরূপে?
- Nawaz Ahmed on My COVID Experience
- Fitness Workout on Political, religious & demographic dynamics in South Asia & threatened co-existence of people with pluralities
- compare mobile phone deals unlimited data on বাঙালী মুসলিমের বিরুদ্ধে ভারতের কেন এতো আক্রোশ এবং প্রতিরোধই বা কীরূপে?
- Dr. Md. Kamruzzaman on বিবিধ ভাবনা (২৯)
ARCHIVES
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018