বিবিধ ভাবনা (২৯)
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on February 23, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- 1 Comment.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
১. ডাকাত-সর্দার কেন সেনাপ্রধান?
সেনাবাহিনী যে শেখ হাসিনার ভোটডাকাতির সাথে সরাসরি জড়িত –তা নিয়ে সামান্যতম সন্দেহ নাই। সেনাবাহিনীর কাজ দেশকে প্রতিরক্ষা দেয়া; ভোট ডাকাতি নয়। জেনারেল আজিজ বিজিবীর প্রধান থাকা কালে নেতৃত্ব দিয়েছে হাসিনার পক্ষ্যে ভোট ডাকাতিতে। প্রশ্ন হলো, আজিজের মত একজন অপরাধী ব্যক্তি ডাকাত দলের প্রধান হতে পারে, কিন্তু সেনাবাহিনীর প্রধান হয় কি করে? সেনাবাহিনীর সে কাজটি ছিল সংবিধান বিরোধী এবং জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এছাড়া ২০১৩ সালের ৫’মে শাপলা চত্ত্বরে সেনাবাহিনীর বহু হাজার সদস্যকে দেখা গেছে হিফাজতে ইসলামের নিরস্ত্র মুসল্লীদের উপর গুলি চালাতে। সে খবর বাংলাদেশে পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।
জেনারেল আজিজের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এভাবে পরিণত হয়েছে এক অপরাধী বাহিনীতে। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ উঠে এসেছে এক অপরাধী খুনি পরিবার থেকে। জেনারেল আজিজের কাজ হয়েছে তার খুনী ভাইদের সাহায্য করা। সে যেমন ভোটডাকাত হাসিনা ও সরকারকে সর্বপ্রকার সাহায্য দিচ্ছে, তেমনি সে নিজেও প্রয়োজনীয় সাহায্য নিচ্ছে ভোটডাকাত হাসিনা থেকে। সেই দেয়া এবং নেয়ার ভিত্তিতেও তার তিন ভাইকে অব্যাহতি দেয়ে হয়েছে খুনের শাস্তি থেকে।
জনগণের ভোটের উপর সফল ডাকাতির কারণেই দেশের শাসন-ক্ষমতা ও সম্পদ এখন শেখ হাসিনার কাছে ডাকাতীতে অর্জিত মাল। ডাকাত সর্দার যেমন ডাকাতি করা মালের উপর ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যদের ভাগ দেয়, তেমনি ভাগ দিচ্ছে সেনা বাহিনীর সদস্যদেরও। লন্ডনের প্রখ্যাত সাপ্তাহিকী “দি ইকোনমিস্ট” বিবরণ ছেপেছে কীরূপ বিপুল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর আনুগত্য কিনেছে। প্রতিদানে জনগণের রাজস্বে প্রতিপালিত সেনা বাহিনীও জনগণের প্রতিরক্ষা না দিয়ে পাহারা দিচ্ছ ভোটডাকাতীর সর্দারনী শেখ হাসিনাকে।
২. প্রসার পাচ্ছে হিন্দু চেতনা ও স্তম্ভপূজা
যারা মুর্তিপূজারী তাদের মুর্তিপূজার নেশাটি গোপন থাকে না। সেটি দেখা যায় মুর্তির সামনে ভক্তি ভরে খাড়া হওয়া ও মুর্তির পদতলে ফুল দেয়া দেখে। সে মুর্তি যেমন দেবী বা পুরুষ লিংগের হতে পারে, তেমনি কোন একটি স্তম্ভেরও হতে পারে। বাংলাদেশে বহু লক্ষ স্তম্ভ গড়া হয়েছে সেগুলো বেদীতে ২১ ফেব্রেয়ারীতি নগ্ন পা’য়ে দাঁড়িয়ে ফুল দেয়ার জন্য। হিন্দুরা যা মন্দিরে গিয়ে যা করে -সেটিই করা হচ্ছে স্তম্ভগুলির বেদীমূলে। এভাবেই হিন্দু চেতনায় বেড়ে উঠছে বাংলাদেশের মুসলিম সন্তানেরা।
স্তম্ভপূজার পথ ধরেই বাড়ছে মুজিবের মুর্তি নির্মাণ ও মুর্তি পূজার হিড়িক। এসবই হলো বাঙালী মুসলিমের ইসলাম থেকে দূরে সরার আলামত। আর সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে ক্ষমতাসীন বাঙালী সেক্যুলারিস্টগণ। স্তম্ভপূজার এ জোয়ার চোখে আঙ্গুল দিয়ে ধরিয়ে দেয় ইসলামপন্থীদের ব্যর্থতা। দেশে মাদ্রাস ও মসজিদের সংখ্যা বিপুল ভাবে বেড়েছে। বেড়েছে ইসলামী দল ও সে দলগুলোর নেতা-কর্মীদের সংখ্যাও। কিন্তু তাদের দ্বারা জনগণের চেতনায় ইসলামের মৌল শিক্ষাকে তুলে ধরার কাজটি যথার্থ ভাবে হয়নি।
৩. বিচার হবে কবে কী চোর-ডাকাতদের?
সভ্য ও অসভ্য দেশের আলামতগুলো খালি চোখে দেখা যায়। চুরি-ডাকাতি হবে, অথচ বিচার হবে না –সেটি কি কোন সভ্য দেশে ভাবা যায়। সভ্য দেশের জনগণ কি কখনো ডাকাতকে ডাকাতীর মাধ্যমে অর্জিত মালের মালিক হতে দেয়? তাদের বিচার হয়, বিচারে ডাকাতকে জেলে যেতে হয়। এবং ডাকাতীর মাধ্যমে অর্জিত মালকে আসল মালিককে ফেরত দেয়া হয়।
বাংলাদেশে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর যে জনগণের ভোটের উপর যেরূপ ডাকাতি হলো -তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? অথচ সভ্য দেশে ডাকাতদের বিরুদ্বে যা হয়ে থাকে -তা বাংলাদেশে হয়নি। দেশে পুলিশ ও আদালত থাকতেও ডাকাতকে ধরা হয়নি এবং শাস্তিও হয়নি। এবং জনগণ ফেরত পায়নি তাদের ডাকাতী হয়ে যায় ভোট। প্রশ্ন হলো ডাকাত হাসিনা থেকে জনগণ তাদের ডাকাতি হয়ে যাওয়া দেশ ফেরত পাবে কবে? তাকে জেলেই বা দিবে কবে?
৪. ডবল স্টান্ডার্ড
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নসহ বৃহৎ শক্তিবরর্গের দুই মুখো নীতিটি বড়ই নিন্দনীয়। তারা মায়ানমারের সামরিক অভ্যুর্থাণের নিন্দা করছে। কিন্তু মিশরে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসীর বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনী যখন অভ্যুর্থাণ করলো -সেটিকে নিন্দা না করে তারা সমর্থণ করেছিল। আলজিরিয়ার নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার জন্য সামরিক বাহিনী যখন অভ্যুর্থাণ করলো –সেটিকেও তারা নিন্দা না করে বরং সমর্থণ করেছিল। মুসলিম বিশ্বে গণতন্ত্রের বড় শত্রু হলো পাশ্চাত্য এ শক্তিবর্গ।
মায়ানমারে যারা সেনা-স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কথা বলছে তাদের দ্বি-মুখী নীতিটিও কম নিন্দনীয়? এখন রেঙ্গুনের রাস্তায় বিপুল সংখ্যক প্রতিবাদী মানুষ। কিন্তু সে রাস্তাগুলো তখন জনশূণ্য ছিল যখন সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা মুসলিমদের ঘরে ঘরে আগুণ দিচ্ছিল, তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছিল এবং রোহিঙ্গা মহিলাদের উপর ধর্ষণে নেমেছিল। কোন বিবেকমান মানুষকে সে নৃশংস বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। এবং অং সাং সূচিও নিজেও সেনা বাহিনীর বর্বরতার নিন্দা না করে হেগের আদালতে তাদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। এবং অস্বীকার করেছেন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার কথা।
৫. শিক্ষা নিক মায়ানমার থেকে
বাংলাদেশীদের উচিত প্রতিবেশী মায়ানমারের জনগণ থেকে শিক্ষা নেয়া। বাংলাদেশের ন্যায় সেখানেও স্বৈরাচার চেপে বসেছে। দেশটির জনগণ স্বৈরাচারি সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে গত ১৪ দিনের বেশী হলো তারা রাজপথ লাগাতর দখল করে আছে। সরকারি কর্মচারীগণ কাজে যাচ্ছে না। গুলী চলছে –কিন্তু এরপরও জনগণ রাস্তা ছাড়ছে না। ভোটডাকাত স্বৈরাচারীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সে রুচি বাংলাদেশীদের মাঝে কই?
৬. যে গুনাহ না বুঝে কোর’আন তেলাওয়াতের
মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশ: “যাদেরকে কিতাব দিয়েছি এবং সেটি তেলাওয়াত করে তেলাওয়াতের হক আদায়ের সাথে এবং তা বিশ্বাস করে -(তাঁরাই সফল)। এবং যারা অবিশ্বাস করলো তাঁরাই ক্ষতিগ্রস্ত।”-(সুরা বাকারা, আয়াত ১২১)। উপরুক্ত আয়াতে নির্দেশটি হলো তেলাওয়াতের হক আদায়ের। তেলাওয়াতের হক তো তখনই আদায় হয় যখন বিষয়টি বুঝার জন্য চেষ্টা হয়। না বুঝে তেলাওয়াতে সেটি হয়না।
সুরা হাদীদে বলা হয়েছে, “ক্বাদ বাইয়ান্না লাকুমুল আয়াতা লা আল্লাকুম তা’ক্বুলুন।” অর্থ: “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য বয়ান করা হয়েছে আয়াতকে -এজন্য যে যাতে তোমরা সেগুলোর বুঝায় আক্বলকে কাজে লাগাতে পার।” অর্থাৎ কোর’আনের আয়াতগুলো নাযিল হয়েছে সেগুলো বুঝার জন্য, স্রেফ তেলাওয়াতে জন্য নয়। বিষয়টি স্কুলের শিশুরাও বুঝে। ফলে তারা যে বই বুঝে না, সে বই পড়ে না। পড়ার জন্য পড়া নয়, পড়তে হয় জ্ঞানার্জনের জন্য। মহান আল্লাহতায়ালা জ্ঞানার্জনকে ফরজ করেছেন; না বুঝে তেলাওয়াত নয়। অথচ বাংলাদেশে তেলাওয়াতের কাজ হচ্ছে, কিন্তু বুঝার কাজটি হচ্ছে না।
মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিটি হুকুম মেনে চলা ফরজ এবং অমান্য করাটি কবিরা গুনাহ। কোর’আনের আয়াত না বুঝে পড়লে অবাধ্যতা হয় মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের। ফলে এতে সওয়াব নয়, গুনাহ হয়। অথচ না বুঝে কোর’আন পড়ার মধ্য দিয়ে সে গুনাহ হচ্ছে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। আর সওয়াবের নামে এ গুনাহতে উৎসাহ দিচ্ছে বাংলাদেশের আলেম নামধারী ব্যক্তিবর্গ।
৭. বিজয়ী শয়তানের মিশন
গলিত আবর্জনা রোগ-জীবাণুর বৃদ্ধি ঘটায়। তেমনি অপরাধীগণ বৃদ্ধি আনে অপরাধে। তাই সমাজকে বাসের উপযোগী করতে হলো যেমন আবর্জনা সরাতে হয়, তেমনি নির্মূল করতে হয় অপরাধীদের। যারা সে কাজ করতে পারে, একমাত্র তাদের দ্বারাই নির্মিত হয় সভ্য সমাজ। কিন্তু বাংলাদেশে সে কাজটি হয়নি। অথচ প্রতিটি মুসলিমের বাঁচার মিশন হলো, আ’মিরু বিল মা’রুফ (ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা) এবং নেহী আনিল মুনকার (অন্যায়ের নির্মূল)। এ মিশনটি বেঁধে দেয়া হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে। তাই মুসলিমকে শুধু নামায-রোযা পালন করলে চলে না, তাকে অন্যায়ের নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাতেও নামতে হয়। এটি ফরজ। প্রকৃত মুসলিমগণ এ মিশন নিয়ে বাঁচে বলেই মহান আল্লাহতায়ালা তাদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির মর্যাদা দিয়েছেন।
কিন্তু সমাজে শয়তানের মিশনটি এর বিপরীত। সেটি ন্যায়ের নির্মূল এবং অন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। এটিই হলো জাহান্নামে নেয়ার মিশন। শয়তানের মিশন নিয়ে যারা বাঁচে তারা ক্ষমতায় গেলে দেশ দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে প্রথম হয়। বাংলাদেশ সে স্থানে অতীতে ৫ বার পৌঁছেছে। এরা নির্বাচন করলে সেটি নির্বাচন না হয়ে ভোটডাকাতি হয়। এরা জোয়ার আনে গুম, খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের। রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা দেয় নৃশংস স্বৈরাচার। এদের শাসনে অসম্ভব হয় ন্যায় বিচার। এবং অপরাধ গণ্য হয় সত্য কথা বলা। শয়তানের সে মিশন নিয়ে বাংলাদেশ শাসন করছে শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশে মসজিদ ও মাদ্রাসার সংখ্যা বিপুল ভাবে বেড়েছে। বেড়েছে নামাযী ও রোযাদারের সংখ্যাও। বেড়েছে আলেম, পীর, মসজিদের ইমাম ও ইসলামী দলগুলোর নেতা ও ক্যডারদের সংখ্যাও। কিন্তু বাড়েনি ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূলের মিশন নিয়ে বাঁচার মত ঈমানদার ব্যক্তি। ফলে ইসলাম বিজয়ী না হয়ে বিজয়ী হয়েছে শয়তানের মিশন। হাসিনার মত ভোটডাকাতও তাই প্রধানমন্ত্রী হয়। ২৩/০২/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বিবিধ ভাবনা (২৯)
- ভাষা-আন্দোলন: বাঙালী সেক্যুলরিস্টদের ষড়যন্ত্র ও নাশকতা
- শত্রুশক্তির যুদ্ধ ও ইসলাম বিনাশী নাশকতা
- গণতন্ত্রের কবর ও সন্ত্রাসে আওয়ামী মনোপলি
- বাঙালী মুসলিম জীবনে বিচ্যুতি ও বিপর্যয়
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
MOST READ ARTICLES
- বিবিধ প্রসঙ্গ-৫
- My COVID Experience
- The Hindutva Fascists & the Road towards Disintegration of India
- দিল্লিতে সরকারি উদ্যোগে মুসলিম গণহত্যা
- একাত্তরের প্রসঙ্গ ও কিছু আলেমের কান্ড
RECENT COMMENTS
- Dr. Md. Kamruzzaman on বিবিধ ভাবনা (২৯)
- Md. Anisul Kabir Jasir on আত্মঘাতের পথে বাংলাদেশ: অভাব যেখানে শিক্ষা ও দর্শনের
- রেজা on শেখ মুজিবের সাথে কিছুক্ষণের স্মৃতি
- Mohammec on শেখ মুজিবের সাথে কিছুক্ষণের স্মৃতি
- ফিরোজ মাহবুব কামাল on শেখ মুজিবের সাথে কিছুক্ষণের স্মৃতি
Very good article