বিবিধ ভাবনা (১৩)
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on January 12, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
১.
শাসন দুই ধরনের। এক). মহান আল্লাহতায়ালার দলের শাসন। দুই). শয়তানের দলের শাসন। পবিত্র কোর’আনে আল্লাহতায়ালার দলকে বলা হয় হিযবুল্লাহ। মহান আল্লাহতায়ালার দলের শাসন চলে শরিয়তের আইন অনুযায়ী। শাসকগণ এখানে কাজ করে আল্লাহতায়ালার খলিফা রূপে, সার্বভৌম শাসক রূপে নয়। ইতিহাসে সেটিই হলো ইসলামী শাসন -যা প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম। যারা নবীজী (সা:)’র প্রদর্শিত এ ইসলামে নিয়ে বাঁচে একমাত্র তারাই সিরাতুল মুস্তাকিম চলে এবং পরকালে জান্নাত পায়। এ শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্যেই ঈমানদারি।এবং এ শাসন ছাড়া অসম্ভব হয় পূর্ণ ইসলাম পালন। এ শাসন প্রতিষ্ঠার সকল প্রচেষ্টাই হলো জিহাদ। এবং জিহাদই হলো ইসলামে শ্রেষ্ঠ ইবাদত।
পবিত্র কোর’আনে শয়তানের দলকে বলা হয় হিযবুশ শায়তান। শয়তানের দলের শাসনের সবচেয়ে বড় নাশকতা হলো তা অসম্ভব করে শরিয়তের আইন পালন। শাসক এখানে কাজ করে শয়তানের খলিফা রূপে। এ শাসনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য হয় নবীজী (সা:)’র ইসলাম নিয়ে বাঁচা –যে ইসলামে রয়েছে ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়ত, শুরা, জিহাদ ও মুসলিম ঐক্য। বাংলাদেশে এখন চলছে শয়তানের শাসন। শয়তানের শাসনের অর্থ দুর্বৃত্তদের শাসন। এ শাসনের লক্ষণ: চুরি-ডাকাতি, ভোটডাকাতি, গুম, খুন, ধর্ষণের জোয়ার। শয়তানের শাসনের সবচেয়ে বড় বিপদ: পাপাচারের পথে টেনে এ শাসন জনগণকে জাহান্নামে নেয়। এরাই হলো কোর’আনের্ দুশমন। ফলে যারা কোর’আনের তাফসির করে ও শরিয়তের প্রতিষ্ঠা চায় শয়তানের দল তাদেরকে জেলে তোলে। বাংলাদেশে জনগণ এ কাজে নিরপরাধ নয়। তাদের অপরাধ হলো শয়তানের শাসন বাঁচাতে তারা রাজস্ব দেয়, ভোট দেয় এবং প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশে যোগ দিয়ে পাহারাও দেয়।
২.
শেখ হাসিনার বড় চমক হলো, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সে সফল ভাবে বন্ধ করতে পেরেছে। অন্ততঃ এ কাজের জন্য ইতিহাসে সে বেঁচে থাকবে। হাসিনা ভোটডাকাতিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দিয়েছে। ফলে ভোটডাকাতি এখন আর দেশের আদালতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়। বরং হাসিনার ঔদ্ধত্য তো এ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সম্প্রতি বলেছে: জনগণ ভোটের অধিকার পেয়েছে এবং বন্ধ হয়েছে অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতাদখল। অর্থাৎ তাদের দাবী, জনগণের ভোট ডাকাতি হয়ে যাওয়াটাই জনগণের ভোটের অধিকার। এখন, দেশে সরকার বদলের মাত্র ২টি পথ খোলা। হয় হাসিনার চেয়ে বড় ভোটডাকাত হতে হবে। নতুবা অস্ত্রের বল থাকতে হবে।
৩.
মহান আল্লাহতায়ালার আশেক হওয়ার সাধ অনেকেরই। অনেকের দাবি, তারা আশেক নবীজী (সা:)’র। দেশে বহু পীর সে দাবী নিয়ে রম রমা ব্যবসাও করে। কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালার আশেক হওয়ার অর্থ তো তাঁর শরিয়তি আইনকে দেশে বিজয়ী করার কাজে আশেক হওয়া। কোন আশেক কি মহান আল্লাহতায়ালার আইন বাদ দিয়ে শয়তানের আইন মেনে নিতে পারে। এটি তো তাঁর দ্বীনের পরাজয় এবং বিজয় শয়তানের। বাংলাদেশে তো তাই হচ্ছে। মহান আল্লাহতায়ালার আশেক কি ইসলামের এ পরাজয় সইতে পারে?
৪.
পবিত্র কোর’আন মতে এ জীবনটি হলো পরীক্ষার হল। মহান আল্লাহতায়ালা এখানে পরীক্ষা নেন ব্যক্তির ঈমান ও আমলের। পরীক্ষায় বসে কেউ কি ছুটি ও অবসর নেয়? তাই অবসর নেয়াটি সেক্যুলার কনসেপ্ট, ইসলামী নয়। বরং বুদ্ধিমান তো সেই যে পরীক্ষার হলে বসে প্রতিটি মুহুর্ত কাজে লাগায় রোজ হাশরের বিচার দিনে পাশের নাম্বার বাড়াতে –যাতে জা্ন্নাত জুটে। তাই যে প্রকৃত ঈমানদার তাকে চেনা যায় নেক আমলে তাঁর বিরামহীন ব্যস্ততা দেখে।
৫.
পবিত্র কোর’আন মতে মানব জাতি ২ দলে বিভক্ত। একটি মহান আল্লাহতায়ালার, অপরটি শয়তানের। তৃতীয় কোন দল নাই। মহান আল্লাহতায়ালার দলের লড়াইটি হয় মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তি আইনকে প্রতিষ্ঠা দিয়ে বাঁচা। অপর দিকে শয়তানের দলের লড়াইটি হয় শরিয়তকে পরাজিত রেখে নিজেদের রচিত আইন নিয়ে বাঁচা। আল্লাহতায়ালার কাছে হিসাব দেয়ার আগে প্রত্যেকের হিসাব নেয়া জরুরি যে সে কোন দলের?
৬.
অপরাধ শুধু অন্যের সম্পদের উপর ডাকাতি নয়, ডাকাতি হলো অন্যের স্বাধীনতার উপর ডাকাতিও। স্বৈরশাসকেরা বাঁচে সে ডাকাতি নিয়ে। তখন মৃত্যু ঘটে স্বাধীনতার এবং প্রতিষ্ঠা পায় ডাকাতদের সংস্কৃতি। তখন চুরি-ডাকাতি, ভোট ডাকাতি, গুম, খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাস দেশের সংস্কৃতি পরিণত হয়। ভোটডাকাতদের শাসনে এজন্যই অসম্ভব হয় সভ্য সমাজের নির্মাণ। বাংলাদেশ তো তারই শিকার।
৭.
তাকওয়া নিয়ে বাঁচার মধ্যেই প্রকৃত ঈমানদারী। ঈমান আনলেই ব্যক্তির দায়িত্ব শেষ হয় না, বরং বহু দূর এগোতে হয়। পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহতায়ালা ঈমানদারদের বার বার তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। এটিই মু’মিনের গোলপোষ্ট। প্রশ্ন হলো তাকওয়া কী? তাকওয়া হলো পবিত্র কোর’আনে বর্ণীত সিরাতুল মুস্তাকিম হতে বিচ্যুতির ভয়। তাকওয়া হলো মহান আল্লাহর দরবারে জবাবদেহীতার ভয়। সেটি হলো তাঁর প্রতিটি হুকুম মানার ও প্রতিটি হারাম থেকে বাঁচার ভয়।
কিন্তু সে তাকওয়া বাংলাদেশী মুসলিমদের মাঝে কই? তাকওয়া থাকলে তো তারা আদালতে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা দিত। বাঁচতো শরিয়তের অবাধ্যততা থেকে। শরিয়তের অবাধ্যততা যে কাফের কাফের বানায় সে ভয়ে তারা প্রতিষ্ঠিত দিত শরিয়ত, ইসলামী রাষ্ট্র, ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতি। নির্মূল হতো দুর্বৃত্তি এবং প্রতিষ্ঠিত পেত ন্যায় বিচার। বরং যা হচ্ছে তা তো মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের অবাধ্যতা তথা তাকওয়ার বিপরীত। দেশে চুরি-ডাকাতি, ভোটডাকাতি,গুম, খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের যে জোয়ার তা কি তাকওয়ার আলামত?
৮.
যারা দুনিয়াদার লোক তাদের নিত্যকার ভাবনা এ দুনিয়ায় কত সম্পদের মালিক হলো -তা নিয়ে। এবং যারা প্রকৃত ঈমানদার তাদের পেরেশানীটি আখেরাতের তহবিলে কত জমা হলো তা নিয়ে।
৯.
ভোটডাকাত দুর্বৃত্তদের শাসনে দুর্বৃত্তগণ সন্মানীত হয়। ভোটডাকাতির নেত্রীও তখন মাননীয় বলে সম্বোধিত হয়। দুর্বৃত্তি তখন দেশ জুড়ে নীতিতে পরিণত হয়এবং হত্যাযোগ্য অপরাধ গণ্য হয় দুর্বৃত্ত নির্মূলের জিহাদ। বাংলাদেশ এরই ঊদাহরণ।
১০.
চেতনার মডেল পাল্টে গেলে মূল্যবোধ ও বিচার-আচারের মানও পাল্টে যায়। চেতনায় যখন বাঙালী জাতীয়তার জোয়ার আসে তখন বিহারীদের ঘরবাড়ী দখল, তাদের হত্যা করা ও বিহারী নারীদের ধর্ষণ করা নীতিতে পরিণত হয়। সেটি দেখা গেছে ১৯৭১’য়ে। সেক্যুলারিজমের জোয়ার আসলে ব্যভিচার পরণিত হয় প্রেমে এবং মুর্তিপূজা পরিণত হয় সংস্কৃতিতে। এবং রাজনীতি পরিণত হয় ইসলামপন্থিদের নির্মূলে।
তাই মানুষকে পাল্টাতে চলে তার চিন্তাকে পাল্টাতে হয়্। বাংলাদেশে সে কাজে বিশাল সফলতাটি শয়তানের। শয়তানের দল এ জন্যই বিজয়ী এবং পরাজিত ইসলাম। এজন্যই শয়তানের দল ভোটডাকাতিতে বিপুল সংখ্যক ডাকাত পায় দেশের পুলিশ বাহিনী, সেনা বাহিনী, প্রশাসন এবং আদালতে। এবং রাজনীতির অঙ্গণে বিপুল সংখ্যক দুর্বৃত্ত পায় চুরিডকাতি, গুম, খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের প্লাবন আনতে।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- মুসলিম বিশ্বে মার্কিনী সন্ত্রাস: প্রতিরোধ কীরূপে?
- রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, গণহত্যা ও আগ্রাসন যেখানে গণতন্ত্র
- আধিপত্য বিস্তারে আগ্রাসী মার্কিন প্রজেক্ট
- বিবিধ ভাবনা (১৪)
- বিভক্ত মুসলিম এবং অর্জিত আযাব
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
MOST READ ARTICLES
- বিবিধ প্রসঙ্গ-৫
- Political, religious & demographic dynamics in South Asia & threatened co-existence of people with pluralities
- My COVID Experience
- The Hindutva Fascists & the Road towards Disintegration of India
- দিল্লিতে সরকারি উদ্যোগে মুসলিম গণহত্যা