বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের ষড়যন্ত্র ও ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

ফিরোজ মাহবুব কামাল

ভীতি থেকে যুদ্ধ

বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের মাঝে ইসলাম-ভীতি আজকের নয়, বরং পাকিস্তান আমল থেকেই। সে ইসলাম-ভীতির কারণেই তাদের মাঝে ১৯৪৭ সাল থেকেই জন্ম দেয় পাকিস্তানভীতি। বাঙালী সেক্যুলারিস্টগণ পাকিস্তানকে দেখতো বাঙালী রূপে বেড়ে উঠার পথে বাধা রূপে। বাঙালী সোসালিস্টগণ দেশটিকে দেখতো তাদের সমাজবাদ প্রতিষ্ঠার বাধা রূপে। কারণ, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ৈ একটি মুসলিম এজেন্ডা ছিল। তখন মুসলিম লীগের শ্লোগান ছিল “পাকিস্তান কা মতলব কিয়া? লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” এই কালেমার ভিত্তিতে বাঙালী, বিহারী, পাঞ্জাবী, গুজরাতি, সিন্ধি, পাঠান, বেলুচ তথা নানা ভাষাভাষী ভারতীয় মুসলিম একতাবদ্ধ হয়েছিল। গড়ে উঠেছিল প্যান-ইসলামিক ভাতৃত্ব। কিন্তু বাঙালী সেক্যুলারিস্টগণ ও বামপন্থিগণ মুসলিম লীগের এ মুসলিম প্রজেক্ট, প্যান-ইসলামিক ভাতৃত্ব ও “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” শ্লোগান নিয়ে খুশি ছিল না। বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের রাজনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিচিতিটি ছিল বাংলা ভাষা ভিত্তিক বাঙালী পরিচিতি। সে রাজনীতিতে মুসলিম পরিচিতিটি গণ্য হয় বাধা রূপে।

বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের কাছে মুসলিম ইস্যু এবং ইসলামী এজেন্ডা গণ্য হয় সাম্প্রদায়িকতা রূপে। এবং ইসলামের পক্ষ নেয়া গণ্য হয় অপরাধ রূপে। এমন একটি ইসলামশূণ্য চেতনার কারণেই কাশ্মীরে ভারতীয় গণহত্যার ন্যায় ঘটনাও বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের বিবেকে কোন রূপ দংশনই সৃষ্টি করে না। সে দেশে মসজিদ ধ্বংস করা হলেও তাদের কাছে সেটি নিন্দার বিষয় রূপে গণ্য হয় না। অপর দিকে পাকিস্তানের মুসলিম এজেন্ডা এবং প্যান-ইসলামী চেতনা নিয়ে শুরু থেকেই খুশি ছিল না প্রতিবেশী ভারত। তারা সেটিকে ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করতো। এমন পাকিস্তান ভীতির কারণে দেশটিকে দ্রুত ভাঙ্গা ভারতীয় বিদেশ নীতির লক্ষ্য হয়ে দাড়ায়। ফলে বাঙালী সেক্যুলারিস্টগণ ভারতের শাসক মহলের সাথে কৌশলগত মিল খুঁজে পায়। এবং ভারত সহজেই তাদের ইসলাম বিরোধী বাঙালী রাজনীতির লালন কর্তা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ১৯৭১’য়ে পাকিস্তানের ধ্বংসের যুদ্ধে বাঙালী সেক্যুলারিস্টগণ আগ্রাসী ভারতের কোলে আশ্রয় নেয় এবং তাদের সাথে একই রণাঙ্গণে যুদ্ধ করতে দেখা যায়। আজও এরাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতীয় স্বার্থের পাহারাদার। 

রাজনীতিতে শেখ মুজিবের উদয় হয় বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের মূল প্রবক্তা রূপে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তাঁর জন্য রাজনীতির ক্ষেত্র প্রস্তুত করে ইসলাম বিরোধী ও ভারতসেবী বুদ্ধিজীবীগণ। আজও তারাই মুজিব কন্যা শেখ হাসিনার ভারতসেবী স্বৈরাচারের ঘোরতর সমর্থক। শেখ মুজিবের নিজের মগজেও ইসলামভীতি ও পাকিস্তানভীতি ছিল প্রচন্ড। নিজের ইসলামশূণ্য রাজনীতিকে সামনে এগিয়ে নেয়ার পথে পাকিস্তান গণ্য হতো প্রচণ্ড বাঁধা রূপে। তাঁর বাঙালী জাতীয়তাবাদ ছিল পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার পিছনে যে দর্শন ছিল তার সাথে সাংঘর্ষিক। তাছাড়া পাকিস্তানের রাজনীতিতে এগোনোর জন্য জরুরি ছিল রাজনীতিকে প্রাদেশিক সীমানায় সীমিত না রেখে সমগ্র পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু তাতে মুজিবের রুচি ছিল না। শেখ মুজিব নিজেই বুঝতেন পাকিস্তানের প্যান ইসলামী রাজনীতির সাথে তিনি পুরাপুরি মিসফিট। তাই পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার মূল কারণটি এ নয়, পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের কলোনী ছিল। বরং সেটি হলো, পাকিস্তান সৃষ্টির পিছনে যে আদর্শ ছিল তার সাথে বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের আদর্শিক incompatibility তথা অসঙ্গতি। সে অসঙ্গতির কারণেই দেশটির ধ্বংসের কাজ শুরু হয় ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই। মুজিব সে খবরটি জানিয়ে দেন পাকিস্তানের জেল থেকে ফিরে ১০ই জানুয়ারীতে দেয়া সোহরাওয়ার্দী ময়দানে দেয়া ভাষণে। (লেখক সে ভাষণ নিজ কানে শুনেছেন)।

শেখ মুজিব ইসলামপন্থিদের দেখতেন তাঁর রাজনীতির মুল শত্রু রূপে। ফলে ক্ষমতায় আসার পর পরই তিনি ইসলামী শক্তির উত্থানকে আইন করে রহিত করেছিলেন। ভারতও সেটিই চাইতো। ফলে ইসলামপন্থিদের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে মুজিব তার রাজনৈতিক প্রভু ভারতকে সহজেই খুশি করতে পেরেছিলেন। তিনি চিত্তরঞ্জন সুতারদের ন্যায় ভারতীয় এজেন্টদের আওয়ামী লীগের টিকিট দিয়ে এমপি বানিয়েছেন। নাস্তিক, কম্যুনিষ্ট, সমাজতন্ত্রি, এমনকি পতিতাদেরও সংগঠিত অধিকার দিয়েছিলেন। কিন্তু যারা ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও গৌরব বাড়াতে চায় -তাদেরকে সে সুযোগ দেননি। তার যু্ক্তি ছিল, কাউকে তিনি রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করতে দিবেন না। তিনি এরূপ কথা স্রেফ ইসলামের প্রতিষ্ঠাকে প্রতিহত করার স্বার্থে। কারণ, ইসলামকে ব্যক্তি স্বার্থে বা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা কোন ধর্মপ্রাণ মুসলিমের নীতি হতে পারে না। বরং তাকে অর্থ, মেধা, শ্রমসহ সকল সামর্থ্য ব্যবহৃত হয় ইসলামকে বিজয়ী করায়। নবীজী (সা:) নিজে রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। তিনি কি কখনো নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে ইসলামকে ব্যবহার করেছেন? বরং তাঁর নিজের সকল সামর্থ্য ব্যবহৃত হয়েছিল ইসলামকে বিজয়ী করায়। একই নীতি ছিল সাহাবায়ে কেরামের। কিন্তু মুজিব নবীজী (সা:) সে সূন্নত পালের পথকেই নিষিদ্ধ করে। দন্ডনীয় করে ইসলামে বিজয় বাড়াতে সামর্থ্যে বিনিয়োগ। রাষ্ট্র প্রধানের যে আসনে বসেছিলেন খোদ নবীজী (সা:) সে আসনটি হাইজ্যাক হয়ে যায় মুজিবের ন্যায় ইসলামে অঙ্গিকারহীন এক স্বৈরাচারির হাতে।

 

ষড়যন্ত্র শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করায়

বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের মূল লক্ষ্য, ইসলামকে যেমন পরাজিত রাখা, তেমনি শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করা। এ লক্ষ্যে তাদের ষড়যন্ত্র বহুমুখী। শয়তান চায়, প্যান-ইসলামিক চেতনার বিনাশ। চায়, আদালত থেকে শরিয়তী আইনের বিলুপ্তি। চায়, রাজনীতিতে জিহাদশূণ্যতা। চায়, মুসলিম ভূমিতে ভাষা, অঞ্চল ও বর্ণের নামে বিভক্তির দেয়াল। চায়, দেশের জনগণকে ইসলামের পক্ষে খাড়া হওয়া থেকে বিরত রাখা। এভাবে রাজনীতির অঙ্গণে শক্তিহীন করে ইসলামের পক্ষের শক্তিকে। এবং চায়, থাকবে না এমন কোন রাষ্ট্রীয় মাধ্যম যা জনগণকে জান্নাতের পথ দেখায়। লক্ষনীয় হলো, শয়তান যা চায়, অবিকাল সেগুলোই চায় বাঙালী সেক্যুলারিস্টগণ। ফলে বাংলাদেশে বেড়েছে শয়তানী এজেন্ডার বিজয়।

শয়তানী প্রকল্পের সাথে মুসলিমের লড়াইটি মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই। মুসলিম হওয়ার অর্থই হলো সে চলমান লড়াইয়ে ইসলামের পক্ষ নেয়া। ঈমানদারকে তাই শুধু নামায-রোযা নিয়ে বাঁচলে চলে না, আমৃত্যু বাঁচতে  হয় জিহাদ নিয়েও। এরূপ পবিত্র জিহাদে নিরপেক্ষ থাকার অর্থ, ইসলাম ও অনৈসলামের দ্বন্দে নীরব ও নিস্ক্রীয় থাকা। তাতে বিজয়ী হয় শয়তানের পক্ষ। বুঝতে হবে মানব নিজে থেকে এ পৃথিবী পৃষ্ঠে হাজির হয়নি। তার  এখানে আসার পিছনে মহান আল্লাহতায়ালার নিজস্ব একটি ভিশন রয়েছে। সেটি হলো, এ পৃথিবী পৃষ্টে মানব কাজ করবে তাঁর আজ্ঞাবহ খলিফা রূপে। প্রতিষ্ঠা দিবে তাঁর দ্বীনের। সে ঘোষণাটি তিনি দিয়েছিলেন হযরত আদম (সা:)’র সৃষ্টির পূর্বেই। তাই ব্যক্তির মূল দায়িত্বটি হলো মহান আল্লাহতায়ালার সে ভিশনের সাথে পুরাপুরি একাত্ম হওয়া। খলিফার কাজটি প্রতিনিধিত্বের। রাজনীতি বা যুদ্ধবিগ্রহে সার্বভৌম ও স্বৈরাচারি হওয়াটি এজন্যই হারাম। তার কাজ, মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করা। সে কাজে সে মহান আল্লাহতায়ালার সৈনিক। এবং এরূপ সৈনিকদের নিয়ে যে বাহিনী গড়ে উঠে -সেটিই পবিত্র কোর’আনের ভাষায় “হিযবুল্লাহ” তথা আল্লাহর দল। সৈনিকের কাজ যেহেতু যুদ্ধ করা, ফলে হারাম হলো নিরপেক্ষ ও নিস্ক্রীয় হওয়া। তাছড়া মুসলিম নিরপেক্ষ ও নিস্ক্রীয় হলে শয়তানের এজেন্ডাকে পরাজিত করবে কে?

শয়তানের এজেন্ডা আদৌ গোপন বিষয় নয়। শয়তান চায়, মানব সন্তানেরা মহান আল্লাহতায়ালার খলিফার বদলে তার নিজের খলিফায় পরিণত হোক। এবং এ দুনিয়া ভবে উঠুক জাহান্নামের বাসিন্দাদের দিয়ে। সে শয়তানী প্রকল্পের শুরুটি হয় মহান আল্লাহতায়ালার দল থেকে তাদেরকে দূরে সরিয়ে নিরপেক্ষ ও নিষ্ক্রীয় করার মধ্য দিয়ে। শয়তানের সে এজেন্ডা নিয়ে রাজনীতি করছে বাঙালী সেক্যুলারিস্টগণ। শয়তান যা চায় –এরাও তাই চায়। ফলে যতই বাড়ছে বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের শক্তি, ততই বাড়ছে ইসলামপন্থিদের উপর নির্যাতন ও ইসলামের পরাজয়। এবং বাড়ছে গুম, খুন, ধর্ষণ ও নানারূপ দুর্বৃত্তি। জনগণকে জাহান্নামে নেয়ার এটিই তো শয়তানী প্রকল্প। শয়তান চায়, পাপের পথ বেয়ে জনগণ জাহান্নামে পৌঁছুক। বিস্ময়ের বিষয় হলো, শয়তানের এরূপ পক্ষ নেয়াকে বাঙালী সেক্যুলারিস্টগণ বলে ধর্মনিরপেক্ষবাদ। মিথ্যাচার আর কাকে বলে?

পবিত্র কোর’আন মতে সমগ্র মানব জাতির বিভাজন মাত্র দু’টি পক্ষে: এক. ইসলামের পক্ষ (হিযবুল্লাহ); দুই. ইসলামের বিপক্ষ (হিযবুশ শায়তান)। নিরপেক্ষ বলে কোন পক্ষের উল্লেখ পবিত্র কোর’আনে নাই। সংঘাতময় এ পৃথিবীতে নিরপেক্ষ থাকাটি কল্পনারও অতীত। নিস্ক্রীয় ব্যক্তিরও একটি পক্ষ থাকে। নিস্ক্রীয়তার মধ্য দিয়েও সে একটি পক্ষের পরাজয় ডেকে আনে এবং অপর পক্ষকে বিজয়ী করে। নিস্ক্রীয়গণ এজন্যই ইসলামের পক্ষের নয়, তারা শত্রুপক্ষের। যারা ইসলামের পক্ষের -তারা অবশ্যই যুদ্ধে অংশ নেয়। কারণ, তাদের কাছে অসহ্য হলো ইসলামের পরাজয়।  নিজেদের নিস্ক্রীয় থাকার কারণে ইসলামের পক্ষের পরাজয় হবে -সেটি তারা ভাবতেই পারে না। মুসলিম মাত্রই তাই ইসলামের বিজয় আনতে সর্বসামর্থ্যের বিনিয়োগ করে। তাই ধর্মনিরপেক্ষতা আদৌ ইসলামের পরিভাষা নয়। পবিত্র কোর’আনে যেমন তার উল্লেখ নাই, তেমনি আদি আরবীভাষাতেও এমন শব্দ নেই। ধর্মনিরপেক্ষতা মূলত ইসলামে শত্রুপক্ষের আধুনিক আবিষ্কার। এর মধ্যেও লুকিয়ে আছে শত্রুপক্ষের গভীর ষড়যন্ত্র।   

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যারা ধর্মনিরপেক্ষতার ভান কর তাদের অবস্থান যে ইসলামের শত্রুপক্ষে -সে প্রমাণ তো প্রচুর। রাষ্ট্রের রাজনীতি, প্রশাসন, মিডিয়া, আইন-আদালত ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে ইসলামী নীতিমালা ও শরিয়তের প্রতিষ্ঠার তারা ঘোরতর বিরোধী। তাছাড়া ইসলাম-বিরোধীতা তাদের মনের গোপন বিষয়ও নয়। তারা শরিয়তের ন্যায় ইসলামের মৌল বিষয়গুলোর বিরোধীতা করে প্রকাশ্যেই। ফলে তাদের ধর্মনিরপেক্ষতার ভান যে নিছক ধোকাবাজি – সেটি কি বুঝতে বাঁকি থাকে। তারা বরং আপোষহীন শরিয়ত বিরোধী কুফরি আইনের হেফাজতে -যা বৈধতা দেয় বেশ্যাবৃত্তি, সূদ, জুয়া, মদপানের ন্যায় পাপাচারকে। প্রশ্ন হলো, সাহাবায়ে কেরামদের কেউ কি নিরপেক্ষ থেকেছেন? তারা শুধু পক্ষই নেননি, যুদ্ধও করেছেন। তবে মুসলিমদের সংগঠিত হতে দেওয়ার অর্থ যে তাদের নিজেদের পায়ে কুড়াল মারা -সেটি সেক্যুলারিস্টগণ বুঝে। ফলে ইসলামপন্থিদের রাজনীতির ময়দান থেকে দূরে রাখার বিষয়টি তাদের কাছে বাঁচা-মরার বিষয়। এজন্যই ইসলামপন্থিদের সামনে লড়াই ছাড়া সামনে এগোনের রাস্তা নাই।

 

সেক্যুলারিজমের খৃষ্টান মডেল

পাশ্চাত্য দেশের প্রেক্ষাপটই ভিন্ন। সেখানে সেক্যুলারিস্টদের সে বিপদ নেই, সামনে কোন যুদ্ধও নাই। কারণ, ইসলাম সেখানে কোন রাজনৈতিক শক্তি নয়। আর খৃষ্টান ধর্ম তো সেক্যুলারিস্টদের জন্য ময়দান ফাঁকাই ছেড়ে দিয়েছে। হযরত ঈসা (আঃ) রাষ্ট্রনায়ক রূপে কোন আদর্শ রেখে জাননি। এমনকি রেখে যাননি তাঁর ১২ জন খলিফাও। অতিশয় ধর্মভীরু পাদ্রীরাও তাই ধর্ম-বর্জিত শাসকদের বিরুদ্ধে বিকল্প কোন মডেল খাড়া করতে পারেননি। খৃষ্টান ধর্মযাজকগণ এজন্যই সেক্যুলারিস্টদের চেয়েও সেক্যুলার। তারা ধর্মীয় পবিত্রতা ভাবেন নিজেদের কাজকর্মকে গীর্জার চার দেয়ালের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখাকে।

খৃষ্টান জগত বরং রাজনীতি শিখেছে স্বৈরাচারি রোমান সম্রাট কনস্টানটাইনের কাছ থেকে যখন তিনি খৃষ্টীয় চতুর্থ দশকে খৃষ্টান হযে যান। কনস্টানটাইনের সে রাজনীতিতে ধর্মের বালায় ছিল না। একারণেই তিনি লক্ষ লক্ষ মানুষের হত্যার মাধ্যমে সাম্রাজ্যের প্রজাদের জোর করে খৃষ্টান বানানোকে ধর্মীয় কর্ম রূপে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর খৃষ্টান পাদ্রীদের কাজ ছিল তার সে নিকৃষ্ট কাজ গুলোকে জায়েজ বলে প্রচার করা। পরবর্তীকালে সেটিই মডেলে পরিণত হয়েছে সমগ্র পাশ্চাত্য জগতে। রাজনীতিতে ধর্মের প্রবেশ বন্ধ করে অধর্মকে এভাবেই সর্বস্তরে প্রতিষ্টা করা হয়েছে। ফলে পাশ্চাত্যের উপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদীরা যখন আফ্রিকার দুর্বল ও দরিদ্র মানুষদের গলায় রশি বেঁধে গবাদী পশুর ন্যায় বাজারে তুললো বা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের আদিবাসীদের নির্মূল করতে লাগলো -তখন পাদ্রীরা নিশ্চুপ থাকাটাই ধর্ম-কর্ম মনে করেছিল। অনেক বরং এটিকে সভ্যতার বিস্তার বলে সে সময় সে নৃশংস বর্বরতাকে প্রশংসাও করেছিল। পাশ্চাত্য সমাজে বিবাহ যে ভাবে প্রাচীন প্রথারূপে চিত্রিত হচ্ছে এবং যেরূপ প্রসার পাচ্ছে অবাধ যৌণতা, পর্ণগ্রাফি এবং সমকামিতা -সেটি তো ধর্মবর্জিত সেক্যুলার সংস্কৃতি ও রাজনীতির কারণেই।

 

 

রাজনীতির ইসলামী মডেল

কিন্তু ইসলামে রাজনীতির মডেলটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। মুসলিম জীবনে সেক্যুলারিজমের স্থান নেই। রাজনীতি কিছু লোকের ব্যবসা-বানিজ্য বা পারিবারীক উত্তাধিকারও নয়। সকল মুসলিমের উপর এটি বাধ্যতামূলক। এটি উচ্চমার্গীয় ইবাদত। এর রয়েছে পবিত্র জিহাদের মর্যাদা। মুসলিম জীবনে রাজনীতি না থাকলে ময়দান শূণ্য হয় এবং দখলে যায় শয়তানী শত্রুর। এবং তাতে পরাজিত হয় ইসলাম। তাই ইসলামের বিজয় চাইলে রাজনীতির জিহাদেও নামতে হয়।  এজন্যই মুসলিমকে শুধু নামাযী, রোযাদার বা হাজী হলে চলে না, তাকে দায়িত্বশীল রাজনৈতিকও হতে হয়। তাকে শুধু ভোট দিলে চলে না, রাজপথের লাগাতর যোদ্ধাও হতে হয়। রাষ্ট্রের আইন, আদালত, প্রশাসন, প্রতিরক্ষার উপর নজরদারি ও সেগুলোর উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করতে হয়। সাহাবায়ে কেরামদের জীবনে এর সব কিছুই ছিল। আজও ইসলাম পালনের এছাড়া ভিন্ন রাস্তা নাই।

একজনের নামাযে অন্যের নামায হয় না, তেমনি একজনের দায়িত্ব পালনে অন্যের দায়িত্ব পালন হয়না। রাজনীতির জিহাদে সবাইকে তাই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হয়। এটি শুধু নবীজীর (সাঃ) সুন্নতই নয়, ইসলামের ফরজ বিধানও। নবীজী (সাঃ) নিজেই ছিলেন আমুত্যু রাজনীতিক। আমৃত্যু রাজনীতিক ছিলেন খোলাফায়ে রাশেদা, আশারায়ে মোবাশ্শেরা ও নবীজীর প্রতিজন সাহাবা। তারাও নবীজীর (সাঃ) ন্যায় শত্রু বাহিনীর হামলার মুখে যুদ্ধ করেছেন, দেশ-শাসন করেছেন এবং অনেকে শহিদও হয়েছেন। প্রতিটি মুসলিমের মনে অটুট ঈমান যেমন কাম্য, তেমনি কাম্য হলো রাজনীতিতে ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও বিজয়ের অঙ্গিকার। সেটি না থাকলে অসম্ভব মুসলিম হওয়া।

মুসলিম বিশ্বে যারা সেক্যুলার রাজনীতিবিদ, তাদের জীবনে প্রচন্ড প্রভাব পড়েছে খৃষ্টান ধর্মের, ইসলামের নয়। ইসলাম ও নবীজী (সাঃ)’র শিক্ষা থেকে তারা অনেক দূরে। মুসলিমের ন্যায় আরবীতে নাম ধারণ করেও যেমন অনেকে পতিতাবৃত্তিতে নামে, তেমনি অনেকে কম্যুনিস্ট হয় বা ইসলামের প্রতিষ্ঠা বিরোধী সেক্যুলারও হয়। তাদের কাছে জিহাদ গণ্য হয় সন্ত্রাস বা মৌলবাদ রূপে। ইসলাম প্রসঙ্গে তাদের যে বয়ান, তা বস্তত পাশ্চাত্য দেশসমূহের নব্য-ক্রসেডপন্থিদের বয়ান থেকে আদৌ ভিন্নতর নয়। ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এজন্যই তারা আন্তর্জাতিক কাফের কোয়ালিশনের অংশীদার। তবে পাশ্চাত্যের সাথে তাদের মিলটা নিছক ধর্মহীনতায়, পাশ্চাত্যের অপর গুণগুলো তারা পায়নি। বা তাদের শেখানোও হয়নি। ফলে ধর্মহীনতার কারণে এদের বেড়েছে সীমাহীন চরিত্রহীনতা।

 

সেক্যুলারিস্টদের ব্যর্থতা

বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, সিরিয়া, তুরস্ক – এসব দেশগুলোয় দীর্ঘকাল যাবত সেক্যুলার রাজনীতিবিদগণ ক্ষমতায়। কিন্তু তাদের শাসনে দেশগুলোর কোন গৌরবই বাড়েনি। বরং দূর্নীতি, অপচেতনা ও অপসংস্কুতির শাসন দেশবাসীদের বিবস্ত্র করে ছেড়েছে। আর এক্ষেত্রে সবাইকে হার মানিয়েছে বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টগণ। দেশকে ৫ বার তারা বিশ্বের সবচেয়ে দূর্নীতিগ্রস্ত দেশে পরিণত করেছে। রাজনীতি যেখানে ইবাদত, এরা সেটিকে চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, রাহাজানী, গুম-খুনের হাতিয়ারে পরিণত করেছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল পরিণত হয়েছে অপরাধীদের ট্রেড ইউনিয়নে। তারা এতটাই মনুষ্যত্ব বর্জিত যে মানুষ খুন করা, যাত্রীভর্তি বাসে আগুণ দেওয়া, রাস্তার মানুষকে বিবস্ত্র করা, ব্যাংক ডাকাতি করা এবং গণহত্যা চালানো –এসব তাদের কাছে কোন ব্যাপারই নয়।

দ্রুত নীচে ধাবমান বাংলাদেশকে বাঁচানোর সামর্থ্য যে বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের নাই -সেটি ইতিমধ্যেই প্রমানিত হয়েছে। দেশটির জন্ম থেকই সেক্যুলার প্রেসক্রিপশনের প্রয়োগ হয়েছে -কিন্তু রোগ সারেনি। রাজনীতির মূল রোগটি দুর্বৃত্তি। চুরিডাকাতির নিয়েত নিয়ে যারা রাজনীতি করে তাদের দ্বারা দুর্বৃত্তদের নির্মূল অসম্ভব। বরং নিজেদের দুর্বৃত্তি বাড়াতে তারা বরং সমাজের অন্য দুর্বৃত্তদের সাথে কোয়ালিশন গড়ে। দুর্বৃত্তদের নির্মূলের কাজ তো তাদের যারা রাজনীতিকে ইবাদত ভাবে এবং এ পথে অর্থ, শ্রম, মেধা ও প্রাণদানকে জিহাদ মনে করে। তখন বেতনলাভ নয়, বরং এমন কাজে প্রাণদানকেও তারা দায়িত্ব ভাবে। যুগে যুগে এরূপ চেতনাধারী মুজাহিদগণই রাষ্ট্রে বিপ্লব এনেছে। এ প্রেরণাতেই মরুর নিস্ব মুসলিমগণ বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিয়েছে। চাকরকে উটে চড়িয়ে রশিধরে সামনে চলাকে বিশাল রাষ্ট্রের খলিফা নিজের জন্য লাভজনক ও সন্মানজনক ভেবেছেন।

 

সেক্যুলারিস্টদের অপরাধ

প্রেসক্রিপশন মোতাবেক মুমুর্ষরোগীকে ঔষধ না খাওয়ানোই গুরুতর অপরাধ। কারণ, এমন অবহেলায় রোগীর মৃত্যু অনিবার্য। তাই ভয়ংকর অপরাধ হলো মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া নির্ভূল প্রসক্রিপশন কাজে না লাগানো।  ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের সুচিকিৎসায় মহান আল্লাহতায়ালার সে প্রসক্রিপশনটি হলো পবিত্র কোর’আন। এটি ব্যবহার না হলে জাতির পতন অনিবার্য। বিশ্বের বহু জাতি অতীতে নিছক একারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই উচ্চমার্গীয় ইবাদত যেমন রাষ্ট্রে সে কোর’আনী প্রসক্রিপশনের প্রয়োগ, তেমনি গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলো, সেটির বাস্তবায়ন না করা। নামাযের কাজা আছে, কিন্তু এ অপরাধের কাজা নাই। এ অপরাধের শাস্তি জাহান্নাম। মুসলিম দেশ সমুহে সেক্যুলারিস্টগণ কোর’আনী বিধানের প্রয়োগ না করে বস্তুত সে মহা অপরাধটিই করছে। তবে বাংলাদেশে তাদের অপরাধটি আরো গুরুতর। কারণ, তারা শুধু নিজেরা দায়িত্ব পালন না করে থেমে নাই। সে দায়িত্ব পালনে আন্যদেরও বাধা দিচ্ছে। শেখ মুজিব আইন করে সে পবিত্র ইবাদত নিষিদ্ধ করেছিল। ফলে তারা শুধু নিজেদের অপরাধই বাড়ায়নি, অপরাধ বাড়িয়েছে জনগণেরও।

কোর’আনী বিধানের বাস্তবায়ন এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে এর উপর নির্ভর করে ব্যক্তির মুসলিম থাকা ও না থাকার বিষয়টি। মহান আল্লাহতায়ালা সুরা মায়েদার ৪৪ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘‘— মান লাম ইয়াহকুম বিমা আনযালাল্লাহু ফা উলাইয়িকা হুমুল কাফিরুন।’’ অর্থ: ‘‘যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী হুকুম বিচারকার্য পরিচালনা করে না তারা কাফের।’’ সুরা মায়েদার ৪৫ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘‘— মান লাম ইয়াহকুম বিমা আনযালাল্লাহু ফা উলাইয়িকা হুমুল যালিমুন।’’ অর্থ: ‘‘যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী হুকুম বিচারকার্য পরিচালনা করে না তারা যালিম।’’ সুরা মায়েদার ৪৬ নম্বর আয়াতে আবার বলেছেন, ‘‘— মান লাম ইয়াহকুম বিমা আনযালাল্লাহু ফা উলাইয়িকা হুমুল ফাসিকুন।’’ অর্থ: ‘‘যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী হুকুম বিচারকার্য পরিচালনা করে না তারা ফাসিক।’’ মহান আল্লাহপাক একই সুরার পর পর তিনটি আয়াতে যে বিষয়টির উপর বার বার গুরুত্ব দিয়েছেন -সেটি হল তাঁর নাযিলকৃত বিধান বা প্রেসক্রিপশনের প্রয়োগ। খুব কম বিষয়েই পবিত্র কোর’আনের পর পর এরূপ তিনটি আয়াতে একই বিষয়ের উপর তাগিদ এসেছে। অতএব এ নির্দেশ পালনে অবহেলা যে মহান আল্লাহতায়ালার আযাব শুধু আখেরাতে নয় পরকালেও ডেকে আনবে -তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? কারণ, মহান আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে এটি চরম অবাধ্যতা। সে অবাধ্যতার কারণে মহান আল্লাহতায়ালার খাতায় সে অবাধ্য ব্যক্তিটি চিহ্নিত হয় জালেম, ফাসেক ও কাফের রূপে। প্রশ্ন হলো, যতই নামায-রোযা পালন করুক, এমন খেতাব নিয়ে কি সে ব্যক্তি জান্নাতে পেতে পারে? অথচ বাংলাদেশে সে অবাধ্যতাটি হচ্ছে শুধু সেক্যুলারিস্টদের পক্ষ থেকে নয়, বরং যারা নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত পালন করে তাদের দ্বারাও। আরো বিস্ময়ের বিষয় হলো, এ অবাধ্যতা নিয়ে কারো মনে তেমন ভাবনাও নাই।

 

যে শাস্তি অনিবার্য

শরিয়তের প্রতিষ্ঠার বিষয়টি এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে, এমন কি অতীতে অতিশয় জালেম শাসকের কাছেও সেটি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে মুসলিম দেশগুলিতে উপনিবেশিক কাফের শাসন ও তাদের তাঁবেদার সেক্যুলারদের শাসনের পূর্বে প্রতি জনপদে কোর’আনের আইনই ছিল বিচারকার্য পরিচালনার একমাত্র আইন। নবাব সিরাজদৌলার শাসনাধীন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যায় যেমন সে আইন ছিল, তেমনি ছিল মোগল শাসনাধীন ভারতেও। এ আইনের প্রয়োগে ভারতে মুসলিমদের সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। বরং সত্য তো এটাই, ভারতে কখনোই মুসলিমগণ সংখ্যাগরিষ্ট ছিল না। অথচ তারা ছয় শত বছর শাসন করেছে শরিয়তের আইন দিয়েই। সে আইনেরই বিখ্যাত সংকলন হলো ফতোয়ায়ে আলমগিরি।

অথচ বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ৯০ মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও দেশটিতে মহান আল্লাহতায়ালার আইনের প্রয়োগ নেই। বাংলাদেশের মুসলিমদের ব্যর্থতা অনেক। আরব, ইরানী, তূর্কী বা আফগানদের ন্যায় অন্য দেশে তারা ইসলামের প্রচার নামেনি। অন্য কোন দেশ তারা জয়ও করেনি। তার চেয়েও বড় ব্যর্থতাটি হলো নিজ দেশেও তারা আল্লাহতায়ালার আইনের বিজয় বা প্রতিষ্ঠা বাড়াতে পারেনি। অথচ সেটি করতে নবীজী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামকে যেরূপ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ লড়তে হয়েছিল, বাংলাদেশে তার প্রয়োজন ছিল না। প্রয়োজন ছিল না অর্থ ব্যয় বা শ্রম ব্যয়েরও। রাজপথের আন্দোলন ও ভোট দিয়েই সেটি সম্ভব ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মুসলিমগণ সেটিও করতে পারেনি। তারা বরং গায়ে গতরে খেটেছে ও ভোট দিয়েছে সেক্যুলারিস্ট দুর্বৃত্তদের বিজয়ী করতে। বাঙালী মুসলিম জীবনে এর চেয়ে বড় অপরাধ আর কি হতে পারে।  

অতীতের স্বৈরাচারি মুসলিম শাসকদের রাজ দরবারে অনাচার থাকলেও দেশের আদালত থেকে কোর’আনের আইন হটিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে কাফির, জালিম ও ফাসিক রুপে চিত্রিত হওয়ার সাহস দেখায়নি। এমনকি সে সাহস কারবালায় ইমাম হোসেন হত্যার ঘৃণ্য নায়ক ইয়াজিদও দেখায়নি। কিন্ত সে দুঃসাহস দেখিয়েছে বাংলাদেশের মুসলিম নামধারি সেক্যুলার রাজনীতিকগণ। তাদের স্পর্ধা সকল দুর্বৃত্তদের ছাড়িয়ে গেছে। তাদের ঘর, দল, ব্যবসা-বানিজ্যই শুধু আল্লাহর অবাধ্যতায় পরিপূর্ণ নয়, সে অবাধ্যতায় পূর্ণ করেছে দেশের আদালত, প্রশাসন ও রাজনীতিও। ফলে বিশ্বব্যাপী যে অপমান কাফের বা শাপ-শকুন ভক্ষণকারি প্রকৃতি পুজারি জঙ্গলবাসিদের জুটেনি -সেটিই জুটেছে বাংলাদেশীদের। তারা শুধু দূর্নীনিতে বিশ্বে বার বার প্রথমই হয়নি, অতীতে তলাহীন ভিক্ষার ঝুড়ির খেতাবটিও তারা সংগ্রহ করেছে। এটি কি আল্লাহতায়ালার অবাধ্য হওয়ার শাস্তি নয়? শুধু তাই নয়, ভয়ংকর আযাব অপেক্ষা করছে জাহান্নামেও। কারণ, মহান আল্লাহতায়ালার বিধানের পরাজয় নিয়ে যারা দিন কাটায় তারা কি দুনিয়ায় বা পরকালে শান্তি পেতে পারে? ১ম সংস্করণ ২৪/০৬/২০০০৭; ২য় সংস্করণ ০৯/০১/২০২১।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *