বাঙালী মুসলিম আর কত নীচে নামবে?
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 28, 2019
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
২৬শে মার্চের দু’টি বিশেষ খবর হলোঃ এক): মসজিদের মাঝে মাদ্রাসার ছাত্র ও মুসল্লীদের গলায় পৌত্তলিক রবীন্দ্র নাথের “আমারা সোনার বাংলা” গানটি গাওয়ার ভিডিও। এ ভি্ডিও ভাইরাল হয়েছে। আজ অবধি বাংলাদেশের কোন মসজিদে এমন গর্হিত কাজ হয়নি। এমনকি ভারতের ন্যায় সংখ্যাগরিষ্ঠ কাফেরদের দেশেও এ অবধি কোন পৌত্তলিকের লেখা গান মসজিদে গাওয়া হয়নি। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন কলংকজনক সংযোজন। অথচ রবীন্দ্রনাথের এ গানটিতে রয়েছে প্রকট শিরক তথা পৌত্তলিকতা। পতিতা পল্লী, সূদী ব্যাংক এবং মদের দোকান যেমন বহাল তবিয়তে বাংলাদেশে বেঁচে আছে, তেমনি এ পৌত্তলিক গানও বাজার পেয়েছে দেশের জাতীয় সঙ্গিত রূপে। মুসলিমদের মাঝে জায়েজ দেশপ্রেম আছে। কিন্তু দেশকে মা বলা এবং বন্দনা দেয়াটি পৌত্তলিক হিন্দুদের সংস্কৃতি। সে পৌত্তলিকতাও এখন আল্লাহতায়ালার ঘরে ঢুকলো। ইসলাম থেকে দূরে সরানোর ভারতীয় প্রজেক্ট যে কতটা সফল হচ্ছে এ হলো তার নজির। রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা ইসলামবিরোধীদের হাতে গেলে লক্ষ লক্ষ মসজিদ-মাদ্রাসা গড়েও যে ইসলামের মৌল বিশ্বাসকে বাঁচানো যায় না -এ হলো তারই প্রমাণ। তাই ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন সঁপে দেয়াটি হারাম। এবং পবিত্র জিহাদ হলো তাদের হাত থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়া। সেটিই নবীজী (সাঃ)র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যয়বহুল সূন্নত। সে সূন্নত প্রতিষ্ঠা করতে নবীজী বহু যুদ্ধ করেছেন এবং নিজে রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছেন। সে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও প্রতিরক্ষা দিতে শতকরা ৭০ ভাগের বেশী সাহাবীকে শহীদ হতে হয়েছে। পরিতাপের বিষয় হলো, যে আসনে খোদ নবীজী (সাঃ) বসেছেন, বাংলাদেশে সে আসনটি অধিকৃত হয়েছে একজন প্রমাণিত ভোট-ডাকাতের হাতে। ফলে আল্লাহতায়ালার ঘরে পৌত্তলিক রবীন্দ্রনাথে গান গাওয়া হবে তাতেই বা বিস্ময়ের কি?
দুই): ২৬শে মার্চ উপলক্ষে শিবিরের মিছিল। বাংলাদেশে ইসলামপন্থি দলের সংখ্যা অনেক। শিবিরের নেতাকর্মীগণও নিজেদের ইসলামপন্থি রূপে পরিচয় দেয়। কিন্তু শিবির যে ভাবে এদিনে মিছিল বের করে তা অন্য কোন ইসলামী দল বের করে না। তার হেতু কি? মুসলিম বিশ্বে বিশাল ভূগোলের দেশগুলি ভেঙ্গে ছোট ছোট বহু দেশ গড়ার কাজ বহু হয়েছে। দেশগুলির সংখ্যা এখন ৫৭। হযরত উমর (রাঃ) এর খেলাফত কালে সিরিয়া বা শাম নামে যে একটি প্রদেশ ছিল সেটি ভেঙ্গে ৫টি দেশ গড়া হয়েছে। বিশাল উসমানিয়া খেলাফত ভাঙ্গা হয়েছে। আরব ভূ-খণ্ড ভেঙ্গে ২০টিরও বেশী দেশ সৃষ্টি হয়েছে। মনে রাখতে হবে, মুসলিম দেশগুলিতে যা হয় তাই ইসলামী নয়। বহু কিছুই হয় নিরেট কাফের ও তাদের সেবাদাসদের হাতে এবং তাদের স্বার্থপূরণে।
লক্ষণীয় হলো, খেলাফত ভাঙ্গা এবং আরব ভূ-খণ্ড ভাঙ্গার সাথে কোন ইসলামপন্থি দল জড়িত ছিল না। মুসলিম দেশ ভাঙ্গার অর্থই হলো মুসলিম উম্মাহর মেরুদণ্ড ভাঙ্গা। পবিত্র কোরআনে এরূপ বিভক্তির বিরুদ্ধে চরম হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে। বিভক্ত হলে আযাব যে অনিবার্য -সে হুশিয়ারি শোনানো হয়েছে সুরা আল-ইমরানের ১০৫ নম্বর আয়াতে। তাই যাদের মধ্যে কোরআনের জ্ঞান আছে তারা কখনোই এ পাপের পথে নামেনি। ঘর বাঁধলে সে ঘরে ঈঁদুর ঢুকবে, সে ঈদুরের গর্তে গোখরা শাপ ঢুকবে সেটি অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু চরম নির্বুদ্ধিতা হলো শাপ না মেরে ঘরকে জ্বালিয়ে দেয়া। সেটি শত্রুর কাজ। তেমনি দেশের শাসন ক্ষমতা থেকে দুর্বৃত্ত শাসককে না হটিয়ে দেশভাঙ্গাটিও নির্বুদ্ধিতা। মুসলিম বিশ্বে দেশ ভাঙ্গার কাজটি হয়েছে ঔপনিবেশিক কাফের শক্তির নেতৃত্বে এবং তাদেরই সামরিক মদদে। তারা সেটি করেছে মুসলিম উম্মহর দুর্বলতা বাড়াতে এবং নিজেদের শাসন ও শোষনের অবকাঠামো গড়ে তোলার স্বার্থে। ইসরাইল প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সে দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে। বিদেশী কাফেরদের সাথে কাধে কাঁধ কাজ করেছে ইসলামে অঙ্গিকারহীন নানা ভাষা ও নানা গোত্রের জাতীয়তাবাদী ও গোত্রবাদী সেক্যুলারিস্টগণ। কোন ইসলামপন্থি ব্যক্তি বা দল এর সাথে জড়িত ছিল না। বরং তারা নিজ নিজ সামর্থ্য দিয়ে সে ভাঙ্গার কাজের তীব্র বিরোধীতা করেছে। কারণ, ইসলামে মুসলিম দেশ ভাঙ্গা হারাম। এবং ফরজ হলো মুসলিম ভূমির একতাকে টিকিয়ে রাখা।
একই কারণে কিছু বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া ১৯৭১ সালে কোন ইসলামী দল, কোন পীর সাহেব বা কোন আলেম বা মাদ্রাসার কোন শিক্ষক পাকিস্তান ভাঙ্গাকে সমর্থন দেয়নি। একাত্তরে তারা হেরেছে এবং জিতেছে হিন্দুদের সাথে ইসলাম থেকে দূরে সরা ভারতপন্থি, রুশপন্থি, চীনপন্থি সেক্যুলারিস্টগণ। ফলে তাদের এ বিজয় নিয়ে কোন ইসলামপন্থি দল উৎসব করে না। কিন্তু ২৬শে মার্চ ও ১৬ই ডিসেম্বর এলেই জামায়াত-শিবির দেশের সেক্যুলারিস্টদের সাথে প্রতিযোগিতা দিয়ে রাস্তায় মিছিল বের করে। এটিই বলে দেয়, ইসলামের আদর্শ থেকে তারা কতটা দূরে সরেছে। যদি তাদের মধ্য কোরআনের জ্ঞান থাকতো তবে উৎসব নয়, এদিনে তারা মাতম করতো। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের এবং সে সাথে পারমানবিক শক্তির সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠি রূপে বিশ্ব রাজনীতিতে বাঙালী মুসলিমগণ যে প্রভাব ফেলতে পারতো -তা কি পোষাক রপ্তানি, চিংড়ি রপ্তানি ও শ্রমিক রপ্তানি করে সম্ভব? ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে এরূপ পরাজয়ের দিন তো বহু। তাছাড়া্ আজ যে বাকশালী দুর্বৃত্তদের হাতে বাঙালী মুসলিমের ভোট ছিনতাই হয়েছে অবিকল তাদের হাতেই কি একাত্তরের নেতৃত্ব ছিল না? এরূপ দুর্বৃত্ত সেক্যুলারিস্টদের বিজয়ের দিনে উৎসবমুখর মিছিল করা তো সেক্যুলারাইজেশনের লক্ষণ। এখানে লক্ষ্য, আল্লাহতায়ালাকে খুশি করা নয় বরং সেটি ভারত ও ভারতসেবী সেক্যুলারিস্টদের খুশি করা। এবং সেটি তাদের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর তাগিদে। অথচ ঈমানদার তো রাজনীতি করে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে। পরাজয় তো পয়গম্বরদের জীবনেও এসেছে; তবে ইসলামের মৌল শিক্ষা থেকে বিচ্যুতি আসবে কেন?
তেমনি মসজিদের মধ্যে যারা ২৬শে মার্চ উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথের গান গাচ্ছে সেটিও দেশের সেক্যুলার শাসকগোষ্ঠিকে খুশি করার তাগিদে। হাসিনাকে খুশি করার তাগিদে তারা ইতিমধ্যেই তাকে “কওমীর জননী” উপাধি দিয়েছে। লক্ষ্য, দুনিয়াদারির স্বার্থ হাসিল। ইতিমধ্যেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। মূলা ঝুলানো হয়েছে মাদ্রাসায় অনুদানের। কথা হলো, সে খুশিতে কি মসজিদের মধ্যে পৌত্তলিকের লেখা গান গাইতে হবে? এই কি ঈমানের মান? এতো সস্তায় ঈমান বিক্রি? অথচ কারো রেযেকই সরকার দেয় না, রেযেক আসে একমা্ত্র মহান আল্লাহতায়ালা থেকে। এ ঈমানটুকু না থাকলে কি কাউকে মুসলিম বলা যায়? কিন্তু কোথায় সে ঈমান? ঈমানদারের প্রতিটি কথা ও কাজ তো হবে আল্লাহকে খুশি করার লক্ষ্যে। প্রকৃত ঈমানদার এ কারণেই আল্লাহমুখি হয়, সরকারমুখি হয় না।
বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টগণ বহু আগেই বহু নীচে নেমেছে এবং বাংলাদেশের মুখে কালিমা লেপন করেছে। তারা তো ইতিহাস গড়েছে ভোটডাকাতির নির্বাচনে বিশ্বরেকর্ড গড়ে। সেটি যেমন ২০১৪ সালে, তেমনি ২০১৮তে। এ শতাব্দীর শুরুতে তারা রেকর্ড গড়েছিল দুর্নীতিতে বিশ্বে ৫ বার প্রথম হয়ে। সত্তরের দশকে তারা ইতিহাস গড়েছিল দেশকে ভিক্ষার তলাহীন ঝুড়ি বানিয়ে। আর আজ মোল্লা-মৌলভী এবং তথাকথিত ইসলামপন্থিরা ইতিহাস গড়ছে ইসলামের মৌল শিক্ষা থেকে দূরে সরে। তাদের এ বিচ্যুতির কারণেই নবীজী (সাঃ)’র ইসলাম -যাতে ছিল ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়ত, হুদুদ, শুরা, জিহাদ, প্যান-ইসলামিক মুসলিম ঐক্য বাংলাদেশে বেঁচে নাই। সামর্থ্য হারিয়েছে অন্য ভাষা ও অন্য এলাকার মুসলিমদের ভাই বলার সামর্থ্য। তারা বেঁচে আছে নিজেদের নেতা ও হুজুরদের আবিস্কার করা ইসলাম নিয়ে। এবং বেঁচে আছে ভাষা, এলাকা, গোত্র, ফিরকা, মজহাব, তরিকার নামে বিভক্তির দেয়াল গড়া নিয়ে। আর এভাবেই বিজয়ের আনন্দ বাড়াচ্ছে শয়তানের শিবিরে। ২৮/৩/২০১৯
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- হিযবুল্লাহ ও হিযবুশ শায়তান
- উপেক্ষিত সাংস্কৃতিক যুদ্ধ এবং বাঙালী মুসলিমের বিপর্যয়
- গণতন্ত্র যেখানে গণহত্যা এবং জবরদখল যেখানে লেবারেশন
- দুর্বল থাকার আযাব ও শক্তিবৃদ্ধির ফরজ দায়ভার
- বিবিধ ভাবনা (১৫)
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
MOST READ ARTICLES
- বিবিধ প্রসঙ্গ-৫
- Political, religious & demographic dynamics in South Asia & threatened co-existence of people with pluralities
- My COVID Experience
- The Hindutva Fascists & the Road towards Disintegration of India
- দিল্লিতে সরকারি উদ্যোগে মুসলিম গণহত্যা