কোরবানীর চামড়া নিয়ে ষড়যন্ত্র
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on August 26, 2019
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, ইসলাম
- No Comments.
জনগণকে ইসলাম থেকে দূরে সরানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠা সোসাল ইঞ্জিনীয়ারিং প্রকল্পগুলি বহুমুখী। এ প্রকল্পগুলির মূল ভূমি হলো দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি। এবং এ ষড়যন্ত্রের কর্মকৌশলও সুদূর প্রসারি। তারা জানে, পবিত্র কোর’আন থেকে দূরে রাখা সম্ভব হলে সম্ভব হয় মুসলিম সন্তানদের ঈমান নিয়ে বেড়ে উঠাকে অসম্ভব করা। ইসলামের শত্রুপক্ষ কখনোই চায় না, জনগণ এবং তাদের সন্তানেরা ইসলামী জ্ঞানসমৃদ্ধ মুসলিম রূপে বেড়ে উঠুক। বরং চায়, তারা ইসলামে অজ্ঞ এবং অঙ্গিকারশূণ্য হোক। তাদের কাছে সে অঙ্গিকারশূণ্যতাই হলো সেক্যুলারিজম। সেজন্যই তাদের টার্গেট, যেসব প্রতিষ্ঠান জনগণের মাঝে ইসলাম বাঁচিয়ে রাখায় লিপ্ত –সেগুলির নির্মূল। এজন্য তাদের নজরে পড়েছে দেশের মাদ্রাসা ও ইয়াতিম খানাগুলি। এগুলিকে তারা বলে তাদের শত্রু তথা জঙ্গি উৎপাদনের কারখানা। দেশে বহুলক্ষ সেক্যুলার স্কুল-কলেজ চলে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের রাজস্বের অর্থে। কিন্তু সে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে প্রতিবছর বহু লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী বেরিয়ে আসছে পবিত্র কোর’আন পাঠের সামর্থ্য অর্জন না করেই। কোর’আনের একটি আয়াতের অর্থও তাদের শেখানো হয়না। অথচ ইসলামে শিক্ষার নামে যা প্রতিটি নর-নারীর উপর ফরজ -তা হলো পবিত্র কোর’আন থেকে শিক্ষালাভ। বাংলাদেশের স্কুল কলেজে সেটি না হওয়ায় শিক্ষালাভের নামে যা হচ্ছে তা হলো গণহারে হচ্ছে বিবেক হত্যা এবং ঈমান হত্যা। সে ঈমান হত্যা বাড়াতে এখন স্কুলের ছাত্রীদের হাফপ্যান্ট পড়িয়ে ফুট বল খেলায় নামানো হচ্ছে। এবং মাদ্রাসাগুতো পৌত্তলিক রবিন্দ্রনাথের শিরকপূর্ণ গান গাইতে বাধ্য করা হচ্ছে।
পৌত্তলিকতা বাঁচাতে যেমন লক্ষ লক্ষ মন্দির চাই, তেমনি ইসলাম বিনাশী সেক্যুলারিজম বাঁচাতে চাই ইসলাম-মূক্ত লক্ষ লক্ষ সেক্যুলার স্কুল-কলেজ। বাংলাদেশে ইসলামের শত্রুপক্ষ তাই স্কুল-কলেজের সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রচন্ড খুশি। কারণ, তাতে সরকারের প্রশাসনিক ও সেনা বাহিনীতে জুটছে বিপুল সংখ্যায় চোর-ডাকাত, খুনি এবং অতি অপরাধপ্রবন চাকর-বাকর। এর ফলে সহজ হয় যেমন ভোট ডাকাতির নির্বাচন, তেমনি সহজ হয় শাপলা চত্ত্বরের ন্যায় গণহত্যা। এবং তাতে আদালত পাচ্ছে রাজনৈতিক বিরোধীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করার জন্য বিশাল বিচারক বাহিনী। বাংলাদেশে অতীতে ৫ বার দুর্নীতি বিশ্বে প্রথম হয়েছে এবং ২০১৮ সালে ভোটশূণ্য নির্বাচন হয়েছে তো দেশের রাজনীতি, বিচার-ব্যবস্থা, প্রশাসন ও সেনাবাহিনীতে এরূপ বিপুল সংখ্যক দুর্বৃত্ত থাকার কারণেই।
এবতেদায়ী মাদ্রাসার ছাত্র কমাতে সেক্যুলারিষ্টদের এতদিনের স্ট্রাটেজী ছিল মাদ্রাসার পাশে ব্রাক স্কুলের ন্যায় ফ্রি সেক্যুলার স্কুলের প্রতিষ্ঠা দেয়া। লক্ষ্য ছিল, শিক্ষার নাম ভাঙ্গিয়ে গরীব ঘরের কোমলমতি ছাত্রদের নাচগান শিখিয়ে ইসলাম এবং জীবনের মূল মিশন থেকে দূরে রাখা। কিন্তু তাতে মকতব-মাদ্রাসাগুলির ছাত্র বিপুল সংখ্যায় কমলেও সেগুলি নির্মূল হয়নি। সে ফলাফলকে সামনে রেখে এখন তাদের স্ট্রাটেজিটি হলো আরো আত্মঘাতি ও ষড়যন্ত্রমূলক। তার হাত দিয়েছে এগুলির অর্থনীতিতে।
কোন প্রতিষ্ঠানই নিজস্ব উপার্জন বা অর্থনীতি ছাড়া বাঁচে না। এতিমখানা ও মাদ্রাসার ন্যায় প্রতিষ্ঠানগুলি বাঁচানোর জন্য রয়েছে মহান আল্লাহতায়ালা প্রদত্ত নিজস্ব অর্থনৈতিক প্রকল্প। চরম ইসলামবিরোধী ও ভারতসেবী বুদ্ধিজীবী ড. আবুল বারাকাতের মতে সে অর্থনীতিটি বিশাল এবং সেটি বহু হাজার কোটি টাকার। সে অর্থনীতির মূল উৎসটি হলো যাকাত-ফিতরা, সাদাকা এবং কোরবানীর পশুর চামড়া বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত অর্থ। ইসলামের শত্রু পক্ষ ইসলামকে জীবিত রাখার সে অর্থনীতিতে হাত দিতে চায়। সে অর্থনীতিকে বিনাশ করতেই শেখ হাসিনার সরকার ইসলামী ব্যাংককে নিজ হাতে নিয়েছে। ইসলামী ব্যাংক ছিল দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি ব্যাংক; এবং অর্থায়ন করতো বহু সেবামূলক ইসলামী প্রকল্পকে। এখন নিয়ন্ত্রনে নিতে চায়, কোরবানীর পশুর হাট, পশু জবাইয়ের ভুমি এবং চামড়ার বেচা-বিক্রির ব্যবস্থাপণা। এভাবে বন্ধ করতে চায় স্বাচ্ছন্দে কোরবানীর কাজকে। সরকারের সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ময়দানে নেমেছে সরকারপুষ্ট, নীতিশূণ্য ও অর্থলোভী সিন্ডিকেট মাফিয়াদের মাধ্যমে। এমন কি ব্যাংকগুলোও এবারে বাজারে অর্থ ছাড়েনি যাতে আড়তের ক্রেতাগণ ন্যায্য মূল্যে কোরবানীর চামড়া কিনতে পারে।
বিভিন্ন এনজিও এতকাল প্রচার চালিয়েছে পশু কোরবানীতে বিশাল সংখ্যায় পশু নিধন হয়। কোন কোন হিন্দু সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবী উঠেছে, ভারতের ন্যায় বাংলাদেশেও গরু কোরবানী নিষিদ্ধ হোক। লক্ষণীয় হলো, প্রতিদিন ১০ লাখ পশু হত্যা হয় ম্যাকডোনাল্ড, কেএফসি, বার্গার কিং’য়ের ন্যায় ফাস্টফুডের দোকানগুলির ধনি ও সচ্ছল ক্রেতাদের পেট পুরতে। (সূত্রঃ বিল গেটসের সাম্প্রতিক বক্তব্য)। কিন্তু সে পশু হত্যার বিরুদ্ধে এসব এনজিও এবং হিন্দু সংগঠনগুলি কথা বলে না। অথচ তারা সোচ্চার পশু কোরবানীর বিরুদ্ধে। অথচ এটি মহান আল্লাহতায়ালার বিধান। কোন মানুষ বা সরকারের ক্ষমতা নেই এ বিধান উল্টানোর। তাছাড়া কোরবানীর গোশতের বেশীর ভাগ বিতরণ করা হয় গরীবদের মাঝে। এবং চামড়াগুলি যায় এতিম খানা এবং মাদ্রাসাগুলি বাঁচিয়ে রাখতে। ইসলামের শত্রুদের ষড়যন্ত্র বস্তুতঃ এ কারণেই। তাদের উদ্দেশ্য পশু বাঁচানো নয়; বরং দেশের বহু লক্ষ ইসলামী প্রতিষ্ঠানের বিলুপ্তি। সে লক্ষ্যেই তারা বিনাশ করতে চায়, যাকাত-ফিতরা, সাদাকা এবং পশুকোরবানী ভিত্তিক ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের অর্থনীতিকে।
ইসলামের শত্রুদের কথায় বাংলাদেশের মানুষ কোরবানী বন্ধ করেনি। তবে তাদের পশু কোরবানী বন্ধ করার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলেও এবার তারা সফল হয়েছে অন্য ভাবে। তারা বিপুল ভাবে কমাতে পেরেছে, এতিম খানা ও মাদ্রাসার জন্য প্রাপ্য কোরবানীর চামড়ার অর্থ। পত্রিকায় প্রকাশ, ২০১৯ সালের ঈদুল আযহাতে বাংলাদেশে ৮০ লাখ থেকে প্রায় এক কোটি পশু কোরবানী হওয়ার কথা। (সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক, ৫.৮.২০১৯)। কোরবানীর পশুর মধ্যে থাকে ছাগল, ভেড়া ও গরু। তবে কতগুলি গরু এবং কতগুলি ছাগল বা ভেড়া কোরবানী হয় -সে বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন। ছাগল ও ভেড়ার চামড়া প্রতিটি গড়ে ৩০০টি এবং গরুর চামড়া গড়ে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। গড়ে ৫০০ টাকা করে বিক্রি হলে এক কোটি পশু কোরবানীতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা অর্জিত হওয়ার কথা। এ অর্থের বেশীর ভাগ যায় দেশের এতিমখানা এবং সেগুলি সংলগ্ন মাদ্রাসাগুলোতে। কিন্তু এবার সে পরিমাণ অর্থ অর্জিত হয়নি। অন্য বছর যে চামড়া৩০০ বা ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, দেশের বহুস্থানে সে চামড়াটি ৫০ টাকাও পায়নি। খরিদদারের অভাবে মনের দুঃখে মানুষ পশুর চামড়া নালায় বা নদীতে ফেলেছ বা মাটিতে পুঁতেছে। দেশের সরকারি মহল এতবড় নাশকতা নিয়ে কোন উচ্চ বাচ্য নেই। নীরব দেশের সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী মহল ও মিডিয়াও। সম্ভবতঃ তারা মনে মনে প্রচন্ড খুশি একারণে যে, শত শত কোটি টাকার চামড়া পচলেও সেগুলি তাদের কথিত জঙ্গি তৈরীর কারখানা এতিম খানা ও মাদ্রাসায় যায়নি।
ঈদুল আযহার মওসুমে চামড়া যাতে সংরক্ষিত না করা যায় সে ষড়যন্ত্রে নেমেছে দেশের লবন উৎপাদনকারিগণ। তাদের সিন্ডিকেট লবনের দাম দ্বিগুণেরও বেশী হারে বাড়ায়। ঈদের পূর্বে ৭৪ কেজির এক বস্তা লবন বিক্রি হতো ৬০০ টাকায়, সেটির মূল্য হয় ১,৩০০ থেকে ১,৪০০ টাকা। (সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক, ৫.৮.২০১৯)। এরূপ বহুমুখী ষড়যন্ত্রে শুধু এতিম খানাগুলিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের চামড়া শিল্প এবং দেশের অর্থনীতি। যে পরিমান চামড়া মাটিতে পুঁতা হয়েছে -তা থেকে উপার্জিত হতে পারতো বিশাল অংকের বিদেশী মূদ্রা। দেশবিরোধী এবং ধর্মবিরোধী নাশকতায় দেশের ইসলাম বিরোধী দুর্বৃত্তগণ যে কতটা আত্মঘাতি হতে পারে -এ হলো তারই নমুনা। ২৬.০৮.২০১৯
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- হিযবুল্লাহ ও হিযবুশ শায়তান
- উপেক্ষিত সাংস্কৃতিক যুদ্ধ এবং বাঙালী মুসলিমের বিপর্যয়
- গণতন্ত্র যেখানে গণহত্যা এবং জবরদখল যেখানে লেবারেশন
- দুর্বল থাকার আযাব ও শক্তিবৃদ্ধির ফরজ দায়ভার
- বিবিধ ভাবনা (১৫)
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
MOST READ ARTICLES
- বিবিধ প্রসঙ্গ-৫
- Political, religious & demographic dynamics in South Asia & threatened co-existence of people with pluralities
- My COVID Experience
- The Hindutva Fascists & the Road towards Disintegration of India
- দিল্লিতে সরকারি উদ্যোগে মুসলিম গণহত্যা