কারা স্বাধীনতার পক্ষে এবং কারা পরাধীনতার পক্ষে?
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on May 3, 2022
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
বুদ্ধিবৃত্তিক ফ্যাসিবাদ ও ইতিহাসে মিথ্যাচার
বাংলাদেশের বুকে কারা স্বাধীনতার পক্ষে এবং কারা পরাধীনতার পক্ষে -সেটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এ বিষয়টিই হলো বাংলাদেশের ইতিহাসের বইয়ে এবং রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণে সবচেয়ে অধিক মিথ্যাচারের শিকার। কারণ ফ্যাসিবাদের নৃশংস তান্ডবটি শুধু দেশটির রাজনীতির অঙ্গণেই নয়, বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণেও। পেশী শক্তির বলে শুধু গণতন্ত্রকেই কবরে পাঠানো হয়নি, কবর পাঠানো হয়েছে দেশটির জন্মের ইতিহাস নিয়ে সত্য বিবরণ। অথচ কারা স্বাধীনতার পক্ষে এবং কারা পরাধীনতার পক্ষে সে বিষয়টি সঠিক ভাবে বুঝাটি জরুরি। সত্য বিবরণ গুলো তুলে ধরতেই হবে। এবং স্বাধীনতার মূল শত্রুদের চিহ্নিত করতে হবে।
বিশেষ রাজনৈতিক প্রয়োজনে স্কুল-কলেজের ইতিহাস পাঠে সত্য বিষয়গুলি ভারতসেবী আওয়ামী-বাকশালীদের পক্ষ থেকে লুকানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়েছে নিরেট মিথ্যাকে। একাত্তরে যারা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল তাদেরকে ভারতসেবী আওয়ামী বাকশালী ও বামপন্থীদের পক্ষ থেকে স্বাধীনতাবিরোধী বলা হয়। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। তারা কখনোই স্বাধীনতা বিরোধী ছিল না। তারা ছিল পাকিস্তান ভাঙ্গা ও পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিরোধী। তারা ছিল ভারতের গোলামীর বিরুদ্ধে। পাকিস্তান ১৯৪৭ সাল থেকেই একটি স্বাধীন দেশ ছিল, আজও সে দেশটি একটি স্বাধীন দেশ। এবং সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক ছিল বাঙালী। একটি দেশ স্বাধীন হলে তার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ পরাধীন হয়ে কি করে? পাকিস্তান থেকে পৃথক হয়ে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়নি বরং পাকিস্তান নামক একটি স্বাধীন দেশ থেকে বাংলাদেশ নামক এক পরাধীন দেশের উদ্ভব ঘটেছে। তাই স্বাধীন পাকিস্তানে জনগণের ভোটের অধিকার, কথা বলা, লেখালেখী ও মিটিং-মিছিলের অধিকার থাকলেও পরাধীন বাংলাদেশে নাই। কিন্তু সে কথা বাংলাদেশে বলা হয়না।
ভারত কখনোই স্বাধীন বাংলাদেশ চায়না
ইতিহাসের কোন কালেই কোন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠরা সে দেশের সংখ্যালঘিষ্ঠদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না। পাকিস্তানের জন্ম থেকেই দেশটিকে খন্ডিত করা ছিল ভারতীয় প্রজেক্ট। সে লক্ষ্যে শুরু থেকেই তারা নিজ খরচে যুদ্ধ করতে রাজী ছিল। ১৯৭১য়ে ভারত সেটিই করেছে। পাকিস্তান ভাঙ্গার সে যুদ্ধকে জায়েজ করতে কিছু বাঙালী কলাবোরেটরের প্রয়োজন ছিল। মুক্তি বাহিনী সেটি করেছে।
ভারত কখনোই বাঙালি মুসলমানদের জন্য একটি স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি। এখনো চায়না। তারা তো চায় মুসলিমদের হত্যা, ধর্ষণ ও নির্মূল। তারা চায় ভারতের অধীনে এক পরাধীন বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে তারা কাশ্মির বানাতে চায়। ভারতের সে ইচ্ছাটি কোন গোপন বিষয় নয়। সে ইচ্ছা পূরণে ভারত পুরাপুরি সফলও হয়েছে। সে বিষয়টি একাত্তরে যারা পাকিস্তানের অখন্ডতার পক্ষে ছিল তারা সুস্পষ্ট ভাবেই বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইসলাম ও মুসলিমের দুশমনদের সংখ্যাটি বিশাল। তারাই একাত্তরের ন্যায় এখনো ভারতকে সমর্থন করে। উপমহাদেশে ইসলামের উত্থান রুখতে এরা ভারতের সাথে একযোগে কাজ করে। এরাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রু। তারা চায় ভারতের অধীনে বাঙালী মুসলিমের পরাধীনতা।
গণতন্ত্রের খুনি, ইসলামের শত্রু ও ফ্যাসিবাদের জনক মুজিব
শেখ মুজিব যেমন গণতন্ত্রের খুনি, তেমনি একদলীয় বাকশালী ফ্যাসিবাদের জনক। শেখ মুজিব বাংলাদেশীদের স্বাধীনতা দেয়নি, বরং ভারতের গোলামী দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাইলে ভারতের সাথে ২৫ সালা দাস চুক্তি করতো না। সীমান্ত বাণিজ্যের নামে বাংলাদেশের বাজার ভারতের হাতে তুলে দিত না। পদ্মার পানিও ভারতকে ফারাক্কায় তুলে নিতে দিত না। শেখ মুজিব গণতন্ত্রকে কবর পাঠিয়েছে, জনগণকে দিয়েছে পরাধীনতা। শেখ মুজিব মুসলিমদের ক্ষতি করে উপমহাদেশের বুকে ভারতের শক্তি বাড়িয়েছে।
পাকিস্তান আমলে কথা বলা, লেখালেখি, মিটিং-মিছিল ও ভোট দানের যে স্বাধীনতা ছিল শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সেগুলিকে কবরে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাই মুজিব ও হাসিনা -উভয়ই যেমন স্বাধীনতার শত্রু, তেমনি শত্রু গণতন্ত্রেরও। তারা ইসলামেরও শত্রু। চালু করেছে মূর্তিনির্মাণ, মঙ্গল প্রদীপ ও পূজার সংস্কৃতি। পাকিস্তান আমলে স্কুলে দ্বীনিয়াত নামে একটি বই স্কুলে পড়ানো হত। মুজিব সেটি বাতিল করে দেয়। মুজিবের পথ ধরে হাসিনাও কুরআনের তফসির ও মসজিদের খোতবার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং প্রখ্যাত আলেমদের জেলে তুলেছে।
আওয়ামী বাকশালী ও বামপন্থীরা তাদের রাজনীতির শুরু থেকে ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রু। পাকিস্তান ৫৭টি মুসলিম দেশের মাঝে পারমানবিক অস্ত্রধারী সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র। এজন্যই এদেশটিকে এরা মন থেকে ঘৃণা করে এবং দেশটির বিনাশ চায়। এরা হিন্দুত্ববাদী ভারতকে ভাল বাসে এবং ভারতকে তারা শক্তিশালী দেখতে চায়। ভারতের হিন্দুত্ববাদী নেতাদেরকে তারা নিজ আদর্শের অতি কাছাকাছি মনে করে। তাই বাংলাদেশের বুকে ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা রুখতে আওয়ামী বাকশালীরা ভারতের সাথে এক যোগে কাজ করে।
আজ যেরূপ ভারতের গোলামী বাঙালি মুসলিমদের ঘাড়ে চেপে বসেছে, সেটির অনিবার্যতা ইসলামপন্থী দলগুলি একাত্তরেই বুঝতে পেরেছিল। এজন্যই তারা পাকিস্তান ভাঙ্গার বিরোধী ছিল। তাছাড়া কোন মুসলিম দেশ ভাঙা শরীয়ত অনুযায়ী হারাম। তাই সেটি ইসলামচ্যুৎ জাতীয়তাবাদী, সেকুলারিস্ট, হিন্দু ও বামপন্থীদের এজেন্ডা হতে পারে কোন ঈমানদারের নয়। অনেকেই এ কথা বলে, একাত্তরে শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী না করে জুলুম করা হয়েছে। অথচ তারা জানে না যে, ভারতের সাথে শেখ মুজিবের চুক্তিটি নির্বাচন জয়ের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া নিয়ে ছিল না। সেটি ছিল পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্নতাকে সফল করা। তাই আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা কখনোই চাইতো না, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে শেখ মুজিবের মার্চের আলোচনা সফল হোক এবং শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রমানমন্ত্রী হোক। আলোচনা শুরুর অনেক আগেই স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হয়েছিল।
ভাঙ্গার রাজনীতি ও গড়ার রাজনীতি এবং ইসলামের শত্রু-মিত্র
দেশের ভূগোল যত বড় হয়, স্বাধীনতার পরিমাণ ততই বৃদ্ধি পায়। বাড়ে ইজ্জত, শক্তি ও নিরাপত্তা। ভূগোল যতই ছোট হয় ততই কমে স্বাধীনতার পরিমাণ। সে সাথে কমে নিরাপত্তা। ভূগোলের আয়তন বাংলাদেশের মত ক্ষুদ্র হলে ভারতের ন্যায় বিশাল আগ্রাসী প্রতিবেশীর সামনে কোন স্বাধীনতাই থাকে না। এরূপ পরাধীনতা থেকে বাঁচতেই ১৯৪৭ সালে খাজা নাযিমুদ্দীন, সহরোওয়ার্দী, নূরুল আমীন, আকরাম খাঁ, তমিজুদ্দীন খান, ফজলুল কাদের, মহম্মদ আলী বোগরা ও সবুর খানের মত বিজ্ঞ নেতারা নিজ গরজে পাকিস্তানে যোগ দিয়ছিলেন। কিন্তু সেহুশ ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ভারতসেবী শেখ মুজিব ও তার দলের আওয়ামী কাপালিকদের ছিল না।
তাই মুসলিমদের সকল রাজনীতি ও সকল যুদ্ধবিগ্রহ হলো মুসলিম দেশের ভূগোল বাড়ানো নিয়ে। এবং সেটিই নবীজী সা: এবং তাঁর সাহাবীদের সুন্নত। ভূগোল বাড়ানোর প্রয়োজন বুঝেই নবীজী সা: তাঁর সাহাবাদেরকে রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল জয়ের নসিয়ত করেছিলেন। নবীজী সা:’র সে ইচ্ছা পূরণ করেছিলেন তুর্কী বীর সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহ। নবীজী সা:’র সে সূন্নত নিয়ে মুসলিমগণ এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ জুড়ে বিশাল রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। আওয়ামী কুয়োর ব্যাঙদের সে বিশাল পরিচয় নিয়ে রুচি নাই। তারা চায় ক্ষুদ্রতা। চায় পরাধীনতা নিয়ে বাঁচতে। একাত্তরে ভারতের সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশের জন্ম সে প্রেক্ষাপটেই্।
এজন্যই কোন ঈমানদার ব্যক্তি কখনোই ভূগোল ভাঙার হারাম রাজনীতি করেনা। বরং ভূগোল বাড়ানোর রাজনীতি করে। এজন্যই একাত্তরে কোন ইসলামী দল, কোন আলেম ও কোন পীর পাকিস্তান ভাঙ্গার পক্ষ নেয়নি। ইসলামপন্থী মানেই যে পাকিস্তান পন্থী –আওয়ামী-বাকশালীদর এই তত্ত্বটি তাই মিথ্যা নয়। এজন্যই তাদেরকে তারা রাজাকার বলে। একই কারণে পৃথিবীর কোন মুসলিম দেশই পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ সৃষ্টির সমর্থন করেনি। একাত্তরে আওয়ামী বাকশালীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল হিন্দুত্ববাদী ভারত এবং কমিউনিস্টদের শাসিত সোভিয়েত রাশিয়া। এটিই ইতিহাসের সত্য কথা। অথচ এ সত্য কথাগুলো বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা বলেনা, ইতিহাসের বইয়েও পড়ানো হয় না।
নানা ভাষা, নানা অঞ্চল ও নানা গোত্রের মানুষ যেমন মসজিদে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে এক কাতারে নামাজে দাড়ায়, তেমনি একত্রে রাজনীতিও করে। বিভেদ যেমন জায়নামাজে হারাম, তেমনি হারাম হলো রাজনীতির অঙ্গণেও। মুসলিম মাত্রই তাই ভেদাভেদের উর্দ্ধে উঠে কসমোপলিটান। তাই ইসলামের গৌরব কালে আরব, ইরানী, তুর্কী, কুর্দী, মুর, আলবেনীয়ান একত্রে এক খেলাফতের অধীনে বিশাল ভূগোলে বসবাস করেছে। সেই প্যান-ইসলামিক চেতনা নিয়েই দক্ষিণ এশিয়ার নানা প্রদেশের নানা ভাষী মুসলিম ১৯৪৭ সালে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিল।
মহান আল্লাহতায়ালা মুসলিমদের এরূপ ঐক্যকে পছন্দ করেন। তাই একতাকে নামাজ-রোজার ন্যায় ফরজ করেছেন। আর শয়তান চায় ভাষা, অঞ্চল, গোত্র ও বর্ণের ভিত্তিতে মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি। হিন্দুত্ববাদী ভারত ও ইসরাইলসহ সকল শত্রুদেশও সেটিই চায়। শেখ মুজিব ও তার অনুসারীরা একাত্তরের মহান আল্লাহতায়ালাকে বাদ দিয়ে শয়তানকে এবং সে সাথে হিন্দুত্ববাদী ভারতকেই খুশি করেছে। তারা ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভারতের অর্থ, ভারতের অস্ত্র ও ভারতের প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করেছে। বিজয়ী করেছে ভারতকে। হাজার হাজার বাঙালী-অবাঙালী মুসলিমকে হত্যা ও ধর্ষণ করেছে। শেখ হাসিনা তার পিতা শেখ মুজিবের সে নীতিকেই অব্যাহত রেখেছে। তাই গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, জনগণের ভোট, ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থের বিরুদ্ধে হাসিনার এতো আক্রোশ। ০৩/০৫/২০২২
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- সেক্যুলারিস্টদের ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ এবং যুদ্ধ ইসলামের বিরুদ্ধে
- বাংলাদেশে হিফাজতে ইসলাম ও ইসলামের হিফাজতে ভয়ানক ব্যর্থতা
- তাবলীগ জামায়াত কতটা দূরে সরেছে ইসলাম থেকে?
- Bangladesh: A Tale of Success of a Robber and the Failure for the Opposition
- বাংলাদেশে সেক্যুলারিজমের তাণ্ডব এবং সংকটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Mohammad Arifur Rahman on জিন্নাহ’র সাদকায়ে জারিয়া ও মুজিবের গুনাহে জারিয়া
- সিরাজুল ইসলাম on জিন্নাহ’র সাদকায়ে জারিয়া ও মুজিবের গুনাহে জারিয়া
- Abdul Aziz on বিবিধ ভাবনা ৮২
- Fazlul Aziz on বাঙালি ও অবাঙালি মুসলিমের বৈষম্য এবং ফ্যাসিবাদী মিথ্যচার
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের তান্ডব: মুক্তি কীরূপে?
ARCHIVES
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018