একাত্তরের শিক্ষা এবং স্বাধীনতার সুরক্ষা প্রসঙ্গ
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on January 1, 2020
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
যে ভয়ানক নাশকতাটি অনৈক্যের
মুসলিম উম্মাহ আজ যে কারণে শক্তিহীন ও ইজ্জতহীন -সেটি মুসলিম দেশগুলির ভূমি বা জলবায়ুর কারণে নয়। সম্পদের কমতির কারণেও নয়। জনসংখ্যার কমতিতেও নয়। বরং মূল কারণটি হলো, মুসলিমদের অনৈক্য্। সে অনৈক্যের মূল কারণটি হলো, মুসলিম দেশগুলিতে দুর্বৃত্তদের নেতৃত্ব। দেশ চলে নেতাদের নির্দেশে। ফলে নেতাগণ ভ্রষ্ট, অযোগ্য, দুর্বৃত্ত ও বেঈমান হলে দেশও তখন দুর্বৃত্ত কবলিত ও ব্যর্থ হতে বাধ্য। দুর্বৃত্ত নেতাদের সবচেয়ে বড় দুর্বৃত্তিটি হয় ভাষা ও বর্ণের নামে মুসলিমদের মাঝে বিভক্তির দেয়াল গড়ার মধ্য দিয়ে। মুসলিম সমাজে এরাই শয়তানের দাস। তাদের লক্ষ্য, মুসলিমদের কল্যাণ নয়, পরাজয় ক্ষতিসাধন। সেটি করে মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি গড়ে। এজন্য তারা ইসলামের শত্রুশক্তির কাছে এতো প্রিয়। শেখ মুজিব এবং তার কন্যা হাসিনা ভারতের শাসকচক্রের কাছে এজন্যই এতো প্রিয়। একই রূপ গাদ্দারির কারণে ব্রিটিশ সরকার থেকে শুধু রাজনৈতিক প্রশ্রয়ই নয়, অর্থ, অস্ত্র এবং সামরিক বাহিনীর সহায়তা পেয়েছিল মক্বার গর্ভনর শরিফ হোসেনকে। কারণ সে উসমানিয়া খলিফার বিলুপ্তির লক্ষ্যে বিদ্রোহ করেছিল।
দেশ বিভক্ত হলে দুর্বলতা বাড়ে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন যত বিশালই হোক ক্ষুদ্র ভূগোলের কারণে তা দিয়ে শক্তি বাড়ে না। মাথা পিছু আয়ের দিক দিয়ে কাতার সমগ্র পৃথিবীতে প্রথম। কিন্তু সে আয়ের কারণে দেশটির শক্তি বাড়েনি। মাথা পিছু আয় তা থেকে আরো শতগুণ বাড়লেও তাতে কাতার কোন শক্তিশালী দেশে পরিণত হবে না। কারণ দেশটি ক্ষুদ্র। রাশিয়ার অর্থনীতি দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়েও দুর্বল। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশটি একটি বিশ্বশক্তি। কারণ, রাশিয়ার রয়েছে বৃহৎ ভূগোল। তাই ভূগোল ক্ষুদ্রতর করা মানে রাষ্ট্রকে শক্তিহীন করা। ইসলামে তাই এটি হারাম। কারণ মহান আল্লাহতায়ালা মুসলিমদের দুর্বল দেখতে চান না। এতে খুশি হয় শয়তান এবং শয়তানের অনুসারি কাফেরগণ। তাই মুজিবের ন্যায় যারাই মুসলিম দেশের ভূগোল ছোট করেছে তারা ভয়ানক ক্ষতি করেছে মুসলিমদের। এমন ব্যক্তিগণ কখনোই মুসলিমদের বন্ধু হতে পারে না। ইসলামের এরূপ শত্রুদের বিজয়ে কাফেরগণ যেমন পুঁজি বিনিয়োগ করে, তেমনি তাদের বিজয় নিয়ে উৎসবও করে। একাত্তরে ভারত সেটিই করেছে।
অথচ ঈমানদারের চেতনাটি সম্পুর্ণ ভিন্ন। কোন মুসলিম দেশ যদি ভেঁঙ্গে যায় এবং ভেঁঙ্গে যাওয়ার বেদনাটি যদি কেউ হৃদয়ে অনুভব করে তবে বুঝতে হবে তার ঈমানের ভান্ডারটি শূণ্য। এজন্যই একাত্তরে কোন আলেম, কোন ইসলামী দল, ইসলামী চেতনাসমৃদ্ধ কোন বুদ্ধিজীবী এবং কোন পীর পাকিস্তান ভাঙ্গার পক্ষ নেয়নি। পাকিস্তান ভাঙ্গার প্রকল্পটি ছিল ইসলামের শত্রু পক্ষের। বাংলাদেশ আজ ইসলামের এ শত্রুদের হাতেই অধিকৃত। নামায়-রোযা, হজ্ব-উমরাহ মুনাফিকও পালন করতে পারে। নবীজী (সাঃ)র যুগে মুনাফিকগণ তার পিছনেও নামায পড়েছে। কিন্তু তারা হৃদয়ে ঈমান নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে না।
যে কোন বৃহৎ দেশ সেদেশে বসবাসকারি মুসলিমদের জন্য বৃহৎ ভূমিকা পালনের সুযোগ সৃষ্টি করে। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র্র পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠি হওয়ার কারণে বাঙালী মুসলিমগণ বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে যে ভূমিকা পালনের সুযোগ পেয়েছিল সে সুযোগ হারিয়ে তারা এখন ভারতের পদতলে আত্মসমর্পিত। ভারতের বিরুদ্ধে কথা বললে পিটুনি খেয়ে লাশ হতে হয়। এটিই হলো একাত্তরের প্রকৃত অর্জন। বাংলাদেশে অসভ্য নাচগানের আসর করতে অনুমতি লাগে না। কিন্তু অনুমতি লাগে কোরআনের তাফসির করতে। কম্যুনিস্ট, নাস্তিক বা অমুসলিমদের দল করতে বাঁধা নাই। কিন্তু বাঁধা আছে ইসলামের নামে দল করতে। সেটির শুরু মুজিবের হাতে। ক্ষমতা হাতে পাওয়ার সাথে সাথে মুজিব সকল ইসলামী দলকে নিষিদ্ধ করে এবং দলগুলির নেতাকর্মীদের কারাবন্দী করে। অথচ পাকিস্তানে সে বিপদ ছিল না।
হারাম বিষয় কখনোই হালাল হয় না
কোর’আন-হাদীস নিয়ে যাদের সামান্য জ্ঞান আছে তাদের মাঝে মুসলিম দেশ ভাঙ্গার কাজটি যে হারাম -তা নিয়ে সামান্যতম সন্দেহ থাকার কথা নয়। অথচ সে হারামকে হালাল বানানোর চেষ্টাটি বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের মাঝে কম নয়। দেশ ভাঙ্গাকে জায়েজ করতে তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, পাকিস্তান আমলে অনৈক ইসলামী কাজ ও হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাতে কি একটি দেশ ভাঙ্গার ন্যায় একটি হারাম কাজ জায়েজ হয়? হারাম তো সব সময়ই হারাম। জনপদে সভ্য মানুষের বসবাস যেমন গড়ে উঠে, তেমনি বিষাক্ত সাপও সেখানে বাসা বাঁধার চেষ্টা করে। ঘরে সাপ ঢুকলো সে সাপ মারতে হয়, সে জন্য ঘরে আগুণ দেয়াটি শুধু বুদ্ধিহীনতাই নয়, গুরুতর অপরাধ। তাই শাসক যত দুর্বৃত্তই হোক -সে কারণে দেশ ভাঙ্গা জায়েজ হয় না। জায়েজ হয় না জনগণের মাঝে ভাষা বা বর্ণ ভিত্তিক ঘৃণা, ভিন্নতা বা শোষণের কারণেও। দেশ বাঁচিয়ে রেখেও এসব রোগের চিকিৎসা আছে। তাছাড়া প্রশ্ন হলো, একাত্তরের পূর্বে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ -এ ২২ বছরের পাকিস্তানী আমলে ২২ জন পূর্ব পাকিস্তানীও কি পুলিশ বা সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে? অথচ ২০১৩ সালের ৫’মের এক রাতে শাপলা চত্তরে হিফাজতে ইসলামের শত শত মুসল্লীকে হত্যা করা হয়েছে। এবং মিউনিসিপালিটির ময়লা ফেলার গাড়িতে তুলে তাদের লাশ গায়েব করা হয়েছে। পঞ্চাশের বেশী সেনা অফিসারদের হত্যা করা হয়েছে পিলখানাতে। মুজিবের শাসনামলে রক্ষিবাহিনী হত্যা করেছে তিরিশ হাজারের বেশী বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের। যু্দ্ধ আসলে সে সাথে যুদ্ধাপরাধও আসে। একাত্তরের যুদ্ধে তাই বহু হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে ভয়নাক গণহত্যাগুলি হয়েছে কোনরূপ যুদ্ধ ছাড়াই। ৯ মাসের যুদ্ধকালীন সময়টি ছাড়া পাকিস্তান আমলে কখনোই এরূপ গণহত্যা হয়নি।
তাছাড়া অনেক খুনখারাবী ও অনৈসলামিক কাজ উমাইয়া ও আব্বাসী খলিফাদের আমলেও হয়েছে। মক্কায় পবিত্র ক্বা’বাতে আগুন দেয়া হয়েছে। হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। ইমাম হোসেন (রাঃ)’য়ের ন্যায় মহান ব্যক্তিও সে সরকারি নৃশংসতা থেকে রেহাই পাননি। তারপরও জনগণ মুসলিম রাষ্ট্রকে ভাঙ্গেনি। কারণ ক্বা’বাতে আগুন দেয়া বা হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের হত্যার চেয়েও হাজার গুণ বেশী ক্ষতি হয় যদি মুসলিম রাষ্ট্র ভাঙ্গা হয়। এজন্যই মহাজ্ঞানী আল্লাহতায়ালা মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি হারাম করেছেন এবং ভাষা ও বর্ণের নামে গড়ে উঠা ভেদাভেদের দেয়াল ভেঙ্গে একতা গড়াকে ইবাদত বলেছেন। একাত্তরে এ জ্ঞানটুকু থাকার কারণেই কোন ইসলামী দল বা ব্যক্তি পাকিস্তান ভাঙ্গার পক্ষ নেয়নি।
যে ব্যর্থতা জনগণের
তবে ব্যর্থতা শুধু নেতাদেরই নয়, সাধারণ জনগণের। জনগণকে শুধু চাষাবাদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরি-বাকুরি জানলে চলে না। তাকে সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়িত্বপালনেও যোগ্যতার পরিচয় দিতে হয়। মুসলিম মাত্র দায়িত্ববান ব্যক্তি। দায়িত্বহীনগণ মুনাফিক হয়, কাফের হয়; কিন্তু তারা মুসলিম হতে পারে না। মুসলিমকে যোগ্যতার পরিচয় দিতে হয় শত্রু-মিত্র চেনাতেও। চোর-ডাকাতদের বন্ধু, নেতা বা পিতা রূপে জড়িয়ে ধরার মধ্যে যা প্রকাশ পায় সেটি বেঈমানী। তাতে যেমন দুনিয়ায় কল্যাণ নাই, তেমনি আখেরাতেও কল্যাণ নেই। এটি অবিকল বিষাক্ত শাপকে জড়িয়ে ধরার মত।
মুসলিমদের বড় বড় ক্ষতিগুলো যারা করেছে তাদের অপরাধগুলো কোন কালেই লুকানো ছিল না। কিন্তু তাদের সে অপরাধগুলি স্বচোখে দেখেও তারা সে অপরাধীদের নেতার আসনে বসিয়েছে। এরচেয়ে বড় অপরাধ কি হতে পারে? বাঙালী মুসলিমদের ব্যর্থতার মূল কারণ এখানেই। বাসের সকল যাত্রী মাতাল হলেও সে বাস গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে ব্যর্থ হয় না -যদি চালক সুস্থ্য হয়। কিন্তু যাত্রীগণ দরবেশ হলেও গাড়ী দুর্ঘটনা ঘটাবে বা সঠিক গন্তব্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হবে -যদি চালক মাতাল বা মানসিক ভাবে অসুস্থ্য হয়। এজন্যই সবচেয়ে যোগ্যবান ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের ড্রাইভিং সিটে বসানোর মধ্যেই কল্যাণ। এটিই নবীজী (সাঃ)র সূন্নত। তাই ইসলামের গৌরব যুগে রাষ্ট্র নায়কের সে সিটে বসেছেন খোদ নবীজী (সাঃ)। এবং নবীজী (সাঃ)’র ইন্তেকালের পর সে আসনে বসেছেন তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহাবাগণ। অথচ বাংলাদেশ হচ্ছে তার উল্টোটি। রাষ্ট্র হাইজ্যাক হয়েছে ভোট-ডাকাত ফ্যাসিস্টদের হাতে। অথচ বাংলাদেশীদের মাঝে তা নিয়ে কোন প্রতিবাদ নেই। গরুছাগল সামনে কোন অন্যায় হতে দেখেও যেমন নীরবে ঘাস খায়, বাংলাদেশের মুসলিমদে অবস্থা কি তা থেকে ভিন্নতর?
রাষ্ট্রের কল্যাণ কাজের শুরুটি সমাজের নীচের তলা থেকে হয় না। সেটি শুরু করতে উপর থেকে। দেশের জনগণদের সবাইকে ফেরেশতা বানিয়ে তাই রাষ্ট্রে কল্যাণ আনা যায় না। সবাইকে ফেরেশতা বানানোর কাজটি সম্ভবও নয়। কারণ, অধিকাংশ মানুষ যে জাহান্নামে যাবে সেটি তো মহান আল্লাহতায়ালার কথা। সমাজ বিপ্লবের পথে তাই জরুরী হলো শাসন ক্ষমতায় নেক বান্দাদের বসানোর বিপ্লব। নইলে হাজার হাজার মসজিদ-মাদ্রাসা গড়েও দেশে কোন কল্যাণ আসবে না। বাঙালী মুসলিম দুর্গতির মূল কারণ, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ভাল মানুষকে বসানোর ন্যায় অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি জনগণের কাছে গুরুত্বই পায়নি। তারা কল্যাণ খুঁজেছে মসহজিদ-মাদ্রাসা গড়ায়। এবং স্রেফ নিজে ভাল হওয়ায়। নবীজী (সাঃ) ও তাঁর প্রিয় সাহাবাগণ রাষ্ট্রীয় বিপ্লবের যে মহান সূন্নত রেখে গেছেন -তা থেকে তারা কোন শিক্ষাই নেয়নি।
একাত্তরের যুদ্ধের ধারাবাহিকতা
ইসলামের শত্রুপক্ষীয় দুর্বৃত্তদের নীতি হলো, “মানুষকে বিভক্ত করো এবং শাসন করো”। এদের কাজ তাই ভাষা, বর্ণ, ভৌগলিক ভিন্নতা ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে জনগণের মাঝে বিভক্তি গড়া। শেখ মুজিবের রাজনীতির মূল পুঁজিই ছিল ঘৃণাভিত্তিক এ বিভক্তির রাজনীতি। পাকিস্তান আমলে তার বিভক্তির রাজনীতির ব্যাকারণ ছিল বাঙালী ও অবাঙালীর বিভক্তি। তেমন একটি ঘৃণাপূর্ণ মগজ নিয়ে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে নিজ দলকে শক্তিশালী করার কোন চেষ্টাই করেননি। সমগ্র পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী হওয়া নিয়ে আগ্রহ থাকলে সে গরজটি তার মাঝে দেখা যেত। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর বিভেদ গড়লেন বাংলাদেশ সৃষ্টির পক্ষ-বিপক্ষের ভিত্তিতে। এমন ক্ষমতালিপ্সু ক্ষুদ্র মনের মানুষদের কারণেই মুসলিম দেশগুলি খন্ডিত হয়েছে এবং দুর্বল হয়েছে। শয়তান এবং তাবত ইসলাম বিরোধীশক্তিও তো সেটিই চায়। এজন্যই কাফের অধিকৃত দেশগুলিতে তাই এদের বন্ধুর অভাব হয়না। বাংলাদেশের বুকে আত্মবিনাশী সে বিভক্তির রাজনীতিকে বলবান করার কাজে ভারতীয়দের বিনিয়োগ এজন্যই বিশাল। সে রাজনীতিকে বিজয়ী করতে একাত্তরে তারা যুদ্ধও করেছে। এবং তাদের সে নীতি আজও প্রয়োগ করে চলছে। ফলে শেখ হাসিনার পিছনে ভারতীদের রাজনৈতিক ও সামরিক বিনিয়োগটিও একাত্তরের ন্যায় বিশাল। দেহ খন্ডিত হলে যেমন অসম্ভব হয় নিজ পায়ে দাঁড়ানো, তেমনি এক পঙ্গুদশা হয় খন্ডিত দেশেরও। ইসলামে তাই এটি হারাম। অথচ শয়তানী শক্তির স্ট্রাটেজী সম্পূর্ণ বিপরীত।
ফলে ভারতের ন্যায় যারাই ইসলাম ও মুসলিমের ক্ষতিসাধনে উদগ্রীব তাদের স্ট্রাটেজীটি হলো, প্রতিটি মুসলিম দেশে বিচ্ছিন্নতাকামী দুর্বৃত্তদের ময়দানে নামানো। সেটি যেমন বাংলার মাটিতে পাকিস্তান আমলে দেখা গেছে, তেমনটি এখনও দেখা যাচ্ছে্। ভারত শুধু পাকিস্তান ভাঙ্গা নিয়ে খুশি নয়, মেরুদন্ড ভাঙ্গার বাসনা রাখে প্রতিটি মুসলিম দেশ ও জনপদে। মেরুদন্ড ভাঙ্গার সে কাজ ত্বরান্বিত করতেই কাশ্মীরে ভারত ৭ লাখ সৈন্য মোতায়েন করেছে। অথচ কাশ্মীরের জনসংখ্যা এক কোটিরও কম। তেমন একটি মেরুদন্ড ভাঙ্গার লক্ষ্য বাংলাদেশেও। সে লক্ষ্যে ভারতের বিপুল বিনিয়োগ বাংলাদেশে। সেটি যেমন ভারতসেবী গুন্ডা উৎপাদনে, তেমনি গ্রামে গ্রামে গুপ্তচর বাহিনী গড়ে তোলায়। ভারতসেবীদের ক্ষমতায় রাখা এজন্যই ভারতীয়দের কাছে এতো গুরুত্বপূর্ণ। ভোটে জিতবে না সেটি নিশ্চিত হয়েই ভারত মধ্যরাতে ভোট-ডাকাতির মাধ্যমে হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার চক্রান্ত করে। এবং দমন প্রক্রিয়া চালু রেখেছে, এ ভোট-ডাকাত সরকারের বিরুদ্ধে যে কোন বিদ্রোহকে ব্যর্থ করায়।
ভারতীয়দের একাত্তরের যুদ্ধটি একাত্তরে শেষ হয়নি। একাত্তরে তাদের যুদ্ধটি ছিল পাকিস্তানকে খন্ডিত করার। পাকিস্তানকে খন্ডিত করার প্রয়োজনটি দেখা দিয়েছিল উপমহাদেশে মুসলিম শক্তিকে দুর্বল করার প্রয়োজনে। একাজে তারা কলাবোরেটর রূপে বেছে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ ও ন্যাপসহ ইসলামী চেতনাশূণ্য সেক্যুলারিস্টদের। তবে পাকিস্তান খন্ডিত হলেও দুর্বল হয়নি, বরং পরিণত হয়েছে পারমানবিক শক্তিশালী দেশে। ফলে একাত্তরে যেরূপ রাশিয়ার সহায়তা নিয়ে বিজয়ী হয়েছিল, সেরূপ বিজয় এখন অসম্ভব। এর ফলে ভারতের সমস্যা বা ভয় কোনটাই কাটেনি। উপরুন্ত ভারতীয়দের মনে ভয় জেগেছে পূর্ব সীমান্তে আরেক শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্রের উদ্ভব নিয়ে। ভারত-অনুগত দাস শাসনের অবসান হলে তেমন একটি বাংলাদেশের উদ্ভব যে সম্ভব -তা নিয়ে ভারত নিজের বিশ্বাসটিও প্রবল। তখন যুদ্ধ দেখা দিবে ভারতে পূর্বাঞ্চলীয় ৭টি প্রদেশে। এ কারণেই ভারতের গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রাটেজী হলো বাংলাদেশের বুকে যারা ভারতের গোলামী নিয়ে বাঁচতে চায় তাদের সযত্নে বাঁচিয়ে রাখা। এবং যারা মুসলিম পরিচিতির ধারক তাদের নির্মূল করা। তেমন একটি লক্ষ্যে ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে যেতেও রাজি।
বাংলাদেশের মাটিতে চলমান ভারতীয় যুদ্ধের আলামতগুলি প্রচুর। সেটি চলছে গুম-খুনের রাজনীতির নামে। বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথা বললে কেউ ক্ষিপ্ত হয়না। লাঠি হাতে কেউ ধেয়েও আসে না। কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে কথা বললে লাঠি হাতে মারতে তাড়া করে ছাত্রলীগের গুন্ডাগণ। এবং পিটিয়ে হত্যাও করে। ভারতের বিরুদ্ধে ফেস বুকে বক্তব্য দেয়ায় বুয়েটের আবরার ফাহাদ এদের হাতেই নৃশংস ভাবে লাশ হলো। একই কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এরা পিটিয়ে মরণাপন্ন করেছে ভিপি নুরুল হক সহ প্রায় তিরিশজনকে। অনেকে হয়েছে পঙ্গুত্বের শিকার।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ভারতসেবী চেতনা
ভারতীয়দের একাত্তরের যুদ্ধের স্ট্রাটেজীর সাথে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলমান যুদ্ধটির ধারাবাহিকতা যে কতটা গভীর সেটি বুঝা যায়, ভারতবিরোধীদের উপর সরাসরি হামলাগুলি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নামের সংগঠন থেকে। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ক্যাডারদের কাজ হয়েছে যারাই ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলছে তাদের উপর হামলা করা। তাদের কথা, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোন কথা বলা যাবে না। কথা হলো, ভারতের বিরুদ্ধে নানা দেশে এবং জাতিসংঘে কথা বলা হচ্ছে, অতএব বাংলাদেশে যাবে না কেন? ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলা দুষণীয় হলে তারা কেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথা বলে? ভারতীয় স্বার্থের পাহারাদার এ গুন্ডা সংগঠনটি জনবল পাচ্ছে ছাত্রলীগ থেকে। ভারতের ন্যায় ভারতসেবী হাসিনা সরকারের কাজ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের এ দাস-যোদ্ধাদের প্রটেকশন দেয়া। ফলে তাদের হাতে সাধারণ ছাত্রগণ গুরুতর আহত হয়ে ইনটেনসিভ কেয়ারে ঢুকলেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কেস নেয়না।
একাত্তরে ভারত ও ভারতসেবী আওয়ামী বাকশালীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি ছিল –সেটি বুঝার মোক্ষম সময় মূলতঃ এখন। মুজিব স্বাধীনতাও চায়নি, গণতন্ত্রও চায়নি। স্বাধীনতা চাইলে কি ভারতের সাথে ২৫ সালা দাসচুক্তি স্বাক্ষর করতো? গণতন্ত্রও চায়নি। গণতন্ত্র চাইলে কি দেশের সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতো? নিষিদ্ধ করতো কি সকল বিরোধী দলীয় পত্র-পত্রিকা? মুজিবের ছিল একটি মাত্র এজেন্ডা। সেটি হলো যে কোন মূল্যে গদিতে বসা। সে লক্ষ্যে সে যেমন পাকিস্তান ভাঙ্গতে দু’পায়ে খাড়া ছিল, তেমনি প্রস্তুত ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিক্রি করাতেও। সে অভিন্ন এজেন্ডাটি নিয়ে কাজ করছে হাসিনাও। আর এরূপ ক্ষমতালোভী দেশ বিক্রেতাদের দাস রূপে পেলে ভারত তাকে দিয়ে ইচ্ছামত কাজ করিয়ে নিবে সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? তাই মুজিবকে দিয়ে যেমন ২৫ সালা দাসচুক্তি, পদ্মার পানি ও বেরুবাড়ি আদায় করে নিয়েছে, তেমনি হাসিনার মাধ্যেমে নিয়েছে করিডোর, তিস্তা ও ফেনি নদীর পানি, বাংলাদেশের বন্দরে ভারতীয় জাহাজের প্রবেশাধীকার এবং আরো অনেক কিছু। ক্ষমতালিপ্সুদের ক্ষমতায় যাওয়াতে এভাবে দেশের ভয়ানক স্বার্থহানি ঘটে।
ভারত ও ভারতসেবী আওয়ামী বাকশালীদের চেহারাটি একাত্তরেও সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশ পেয়েছিল। কিন্তু সেদিন অনেকের চোখই অন্ধ ছিল পাকিস্তানের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণার কারণে। আকাশে মেঘ জমলে সূর্যও আড়াল হয়ে যায়; তেমনি মনে বিদ্বেষ ও ঘৃণা জমলে সত্যকে দেখার সামর্থ্যও বিলুপ্ত হয়। একাত্তরে ভারত ও ভারতসেবীদের কুৎসিত চেহারাটি এজন্যই অনেকে দেখতে পায়নি। এখন তো বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তান নাই। ফলে সবাই দেখতে পাচ্ছে ভারত ও ভারতসেবী আওয়ামী বাকশালীদের প্রকৃত চেহারাটি। তাই তাদের প্রতি ঘৃণাটি শুধু একাত্তরের রাজাকারদের বিষয় নয়, সেটি পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের প্রায় সকল মানুষের নিজস্ব উপলব্ধি।
ফলে ভারতসেবী বাকশালীদের মিথ্যাচার সরিয়ে একাত্তরের সত্য ঘটনাগুলি জানার এখনই উপযুক্ত সময়। প্রকৃত বীর, আর কারা ভারতসেবী গাদ্দার -একাত্তরের ইতিহাসের মাঝে রয়েছে তার প্রামাণিক দলিল। সে দলিল যে বিষয়টি সুস্পষ্ট তা হলো, আগ্রাসী ভারতের হামলা থেকে স্বাধীনতা বাঁচানোর চেতনাটি কখনোই বাকশালী ভোট-ডাকাত ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের গুন্ডাদের চেতনা নয়। বরং সেটি হলো একাত্তরের রাজাকারদের চেতনা -যারা নিজেদের রক্ত দিয়ে ভারতীয় বাহিনী ও ভারতের অর্থে পালিত সেবাদাসদের বিশাল আগ্রাসন রুখতে জিহাদে নেমেছিল। বহু হাজার রাজাকার সে ভারতীয় আগ্রাসন থেকে বাঁচতে শহীদও হয়েছিল। ০১/০১/২০২০
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- সেক্যুলারিস্টদের ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ এবং যুদ্ধ ইসলামের বিরুদ্ধে
- বাংলাদেশে হিফাজতে ইসলাম ও ইসলামের হিফাজতে ভয়ানক ব্যর্থতা
- তাবলীগ জামায়াত কতটা দূরে সরেছে ইসলাম থেকে?
- Bangladesh: A Tale of Success of a Robber and the Failure for the Opposition
- বাংলাদেশে সেক্যুলারিজমের তাণ্ডব এবং সংকটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Mohammad Arifur Rahman on জিন্নাহ’র সাদকায়ে জারিয়া ও মুজিবের গুনাহে জারিয়া
- সিরাজুল ইসলাম on জিন্নাহ’র সাদকায়ে জারিয়া ও মুজিবের গুনাহে জারিয়া
- Abdul Aziz on বিবিধ ভাবনা ৮২
- Fazlul Aziz on বাঙালি ও অবাঙালি মুসলিমের বৈষম্য এবং ফ্যাসিবাদী মিথ্যচার
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের তান্ডব: মুক্তি কীরূপে?
ARCHIVES
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018