একাত্তরের গণহত্যা (৭)
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on January 7, 2021
- Bangla Articles, অতিথি লেখক
- No Comments.
যে কাহিনী শুনতে নেই (১২)
সংগ্রহে: কাউ কাউস ============= “… ২৪শে জানুয়ারী টাঙ্গাইলে অস্ত্র জমা দেবার অনুষ্ঠানে কাদের সিদ্দিকী ঘোষণা করলো “তারা ঐ এলাকায় স্বাধীনতা পরবর্তী আমলে মাত্র ৪ জন দালালকে হত্যা করেছে। আর অবশিষ্ট সবাইকে বিচারের জন্য কর্তৃপক্ষের হাতে সমর্পণ করেছে”। গণতন্ত্রের পূজারী, আইনের শাসনের জন্য আন্দোলনকারী এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এই ঘোষণার জবাব দান প্রসঙ্গে শেখ সাহেব যে ভাষণ দিলেন, তা শান্ত পরিবেশ সৃষ্টির পক্ষে মোটেই সহায়ক ছিল না। তিনি বললেন “ওরে কাদের তুই যদি চারটা না মেরে হাজার মারতিস আমি তোকে কিছুই বলতাম না”। জনতা তার ঐতিহ্য অনুযায়ী ফাঁকা হাতের বিপুল করতালির মধ্যে এই ভাষণকে গ্রহণ করেছিলো। … জেল অফিসে ছিল অসম্ভব ভিড়। মিরপুর মোহাম্মদপুর থেকে প্রায় আট-নয় শত উর্দূভাষী নাগরিককে বন্দী করে আনা হয়েছে। কাউকে গেটের মধ্যে এবং কাউকে অফিস সংলগ্ন অন্যান্য কামরায় রাখা হয়েছে। প্রায় লোকের শরীরে যখম। তাজা রক্তের প্রলেপ দেহের সর্বাঙ্গে। মনে হলো বন্দী করবার পর প্রচুর মারপিট করা হয়েছে। অফিসে জনৈক সুঠাম দেহী ও সুশ্রী চেহারার ভদ্রলোক প্রবেশ করলে সবাই উঠে দাঁড়ালো। সেই ফ্যান্সীকাট গোঁফওয়ালা দু’জন যুবকও তার কাছে এগিয়ে এসে মুক্তিবাহিনীর সদস্য বলে পরিচয় দিল। কথাবার্তায় জানলাম উনি জেলার। বাস্তব ক্ষেত্রে জেলের হর্তাকর্তা। নাম নির্মল চন্দ্র রায়। মুক্তিবাহিনীর এই সদস্যদের যথেষ্ট ইজ্জত দেখালেন জেলার বাবু। ইতিমধ্যে কয়েকজন সিপাই পাশের কামরা থেকে একজন উর্দূভাষীকে নিয়ে আসলো জেলারের কাছে এবং বললো “এই সেই লোক”। লোকটি বৃদ্ধ, বয়স আশির উর্ধে, সাদা দাড়িতে, ফর্সা চেহারায় ও খুন ঝরা শরীরে তাকে অপূর্ব লাগছিল আমার কাছে। লোকটিকে দেখামাত্র জেলার গোটা কয়েক লাথি মারল। আর সেই সঙ্গে গোঁফওয়ালা যুবক দু’টির মধ্যে একজন বৃদ্ধের শরীরে উপর্যুপরি আঘাত হানতে লাগল। কি অপরাধ ছিলো বৃদ্ধের জানিনা, কেন মারা হলো তাও জানিনা তবে এরূপ মারপিট করবার কোন বিধান ধর্মে বা দেশের আইনে নাই তাই জানি। মনের মধ্যে বিদ্রোহের আগুন জ্বলছিল, কিন্তু আমিও বৃদ্ধের মত বন্দী। মন দূর অতীতের রুদ্ধ দরজায় ঘা দিল। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে হিন্দুদের হাতে মার খেয়ে পঁচিশ বছর আগে আমরা মুক্তির একটি পথ বেছে নিয়েছিলাম। কালের ঘটনা প্রবাহে ‘মুক্তিকে’ অভিশাপ মনে করে ‘দেবতাদের কাছ থেকে বাঙ্গালী হবার ‘বর’ চেয়ে নিয়েছি।’ জাতীয়তাবাদের আগুনে জীবনের পবিত্র মূল্যবোধ, মানবীয় অনুভূতিগুলোকে জ্বালিয়ে ছাই করেছি। আপন পরের পার্থক্য বিস্মৃত হয়েছি, অমৃত ও হলাহলের পার্থক্য ভূলে গেছি। অতীতে নির্মল বাবুরা এই ভাবেই মেরেছেন। কিন্তু অতীতে যা ছিল দোষনীয় বর্তমানে তা নয়। অতীতের মানবিক মূল্যবোধ পরিবর্তন করতে আর সহনশীল মনোভাব গড়তে আমাদের মত সেকেলেদের সময় লাগবে বৈকি! এই দেশে ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ কায়েমের জন্য বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নির্মল বাবুদের পদচারণার মধ্য দিয়েই শুরু হোকনা॥”— সা’দ আহমদ / মুজিবের কারাগারে পৌণে সাতশ দিন। (নিজস্ব – সেপ্টেম্বর, ১৯৯০ । পৃ: ৩৩/৩৮-৩৯)। |
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- মুসলিম বিশ্বে মার্কিনী সন্ত্রাস: প্রতিরোধ কীরূপে?
- রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, গণহত্যা ও আগ্রাসন যেখানে গণতন্ত্র
- আধিপত্য বিস্তারে আগ্রাসী মার্কিন প্রজেক্ট
- বিবিধ ভাবনা (১৪)
- বিভক্ত মুসলিম এবং অর্জিত আযাব
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
MOST READ ARTICLES
- বিবিধ প্রসঙ্গ-৫
- Political, religious & demographic dynamics in South Asia & threatened co-existence of people with pluralities
- My COVID Experience
- The Hindutva Fascists & the Road towards Disintegration of India
- দিল্লিতে সরকারি উদ্যোগে মুসলিম গণহত্যা