ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা কেন শ্রেষ্ঠ ইবাদত

সর্বশ্রেষ্ঠ নেক কর্ম

মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার নির্মাণে হযরত মহম্মদ (সাঃ)’র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানটি শুধু ইসলাম প্রচার ছিল না, বরং সেটি ছিল বিশাল ভূ-ভাগ থেকে দুর্বৃত্ত শাসকদের নির্মূল এবং ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। এ কাজটি না হলে স্রেফ কোর’আন তেলাওয়াত, নামায-রোযা ও হজ্বযাকাত পালন এবং মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা বাড়িয়ে ইসলামের বিজয় ও মুসলিমের গৌরব বৃদ্ধি করা যেত না। এবং সম্ভব হতো না মানব জাতির কল্যাণে শিক্ষণীয় অবদান রাখাও। কারণ, জনকল্যাণে রাষ্ট্রের যে বিশাল ক্ষমতা -সেটি মসজিদ-মাদ্রাসা বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের থাকে না। এদিকে ইসলাম অন্য ধর্ম থেকে পুরাপুরি ভিন্ন। কারণ, অন্যায়ের নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার বিষয়টি ইসলামের কেন্দ্রীয় বিষয়। এটি মুসলিম জীবনের মিশন রূপে নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে। মুসলিমগণ সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি তার কারণ তাদের জীবনে থাকে অন্যায়ের নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার মিশন। আর অন্যায়ের নির্মূলে ময়দানে নামলে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে যুদ্ধটি অনিবার্য ও অবিরাম হয়ে উঠে। ইসলামের শত্রুদের নির্মূলের সে শক্তিটি তো আসে রাষ্ট্রীয় শক্তি থেকে। ইসলামি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এজন্যই মুসলিম জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এটিই হলো সবচেয়ে বড় নেক কর্ম। দুর্বৃত্তগণ ইসলামের শক্তির এ পরিচিত উৎস্যটি জানে। এজন্যই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে এতো বিরোধীতা। এ লক্ষ্যে শয়তানী শক্তিবর্গের কোয়ালিশনটি তাই দুনিয়াব্যাপী।

ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এজেন্ডা না থাকলে কাফের শক্তির সাথে সংঘাতের কোন কারণই সৃষ্টি হতো না। তাবলিগ জামায়াতের কর্মীদের এজন্যই কোন শত্রু নেই; তাদের জীবনে কোন সংঘাতও নাই। অথচ সংঘাত এড়াতে পারেননি নবী-রাসূলগণ। মুসলিম জীবনে এরূপ সংঘাত না থাকার অর্থ বস্তুতঃ প্রকৃত ঈমান না থাকা। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালা ঈমানদারদের সামনে অনুকরণীয় মডেল রূপে খাড়া করেছেন মুসলিম উম্মাহর আদি পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ)কে। তাঁর কোন লোকবল ছিল না; তিনি ছিলেন একা। কিন্তু নমরুদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত কাফের শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন এ হুংকার দিয়েঃ “শুরু হলো তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ”। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে তাঁর সে সাহসী ঘোষণাটি এতোই ভাল লেগেছিল যে, সেটিকে তিনি রেকর্ড করেছেন পবিত্র কোরআনের সুরা মুমতাহেনার ৪ নম্বর আয়াতে। তাঁকে অনুকরণ করার নির্দেশ দিয়ে ঈমানদারদের উদ্দেশ্য বলা হয়েছে, “তোমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে ইব্রাহীম (আঃ)’য়ে জীবনে।” এ থেকে বুঝা যায় মুসলিম জীবনে শত্রুশক্তির সাথে সংঘাতের অনিবার্যতা ও তার নির্মূলে জিহাদটি কতো গুরুত্বপূর্ণ।

নবীজী (সাঃ)র জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটি হলোঃ জিহাদের মাধ্যমেই নির্মূল করেছেন স্বৈর শাসন। এবং প্রতিষ্ঠা করেছেন ইসলামী রাষ্ট্র। লড়াই না থাকলে বিজয়ের প্রশ্নই উঠে না –সেটি বীজ না বুনে ফসল ঘরে তোলার ন্যায় কল্প বিলাস। জিহাদ না থাকলে তাই অসম্ভব হয় ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। আর ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না পেলে লক্ষ লক্ষ মসজিদ-মাদ্রাসা গড়েও মুসলিম উম্মাহর শক্তিতে বৃদ্ধি আনা যায় না। বাংলাদেশে ঢাকা’র ন্যায় একটি জেলাতে যত মাদ্রাসা ও মসজিদ আছে তা খলিফা রাশেদার আমলে সমগ্র মুসলিম রাষ্ট্র জুড়ে ছিল না। কিন্তু তাতে লাভ কি হয়েছে? দেশে কি ইসলামের প্রতিষ্ঠা বেড়েছে? গৌরব বেড়েছে কি বাঙালী মুসলিমের। বরং তারা তো ৫ বার বিশ্বে প্রথম হয়েছে দুর্নীতিতে। নবীজী (সাঃ)র ইসলাম –যার অপরিহার্য উপাদান হলো শরিয়ত, হুদুদ, খেলাফত, শুরা, মুসলিম ঐক্য, সে ইসলাম বাংলাদেশে নাই। যেটি আছে সেটি হলো অপূর্ণাঙ্গ ও বিকৃত ইসলাম। পূর্ণাঙ্গ ইসলাম না থাকাতে সমাজ জুড়ে বেড়ে উঠেছে অধর্ম ও পথভ্রষ্টতা। এজন্যই দেশ বিশ্বরেকর্ড গড়েছে দুর্বৃত্তিতে। রেকর্ড গড়ছে এমন কি পৌত্তলিক সংস্কৃতির পরিচর্যাতেও। বর্ষবরণ ও বসন্তবরণের নামে দেশে যেরূপ পৌত্তলিক সংস্কৃতির জোয়ার সৃষ্টি হয় -তা এমন কি কলকাতার হিন্দু সংস্কৃতিকেও হার মানায়। ঢাকা শহরে বাংলা ১৪২৫’য়ের নববর্ষ পালন নিয়ে তেমন একটি রিপোর্ট ছেপেছে কলকাতার আনন্দ বাজার পত্রিকা।

 

রাষ্ট্রই সবচেয়ে শক্তশালী ও সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান

ইসলামের মৌল বিশ্বাস ও অনুশাসনের নির্মূলে রাষ্ট্রীয় ভাবে যখন রাজনৈতিক ও সামাজিক ইঞ্জিনীয়ারীং চলে, তখন লক্ষ লক্ষ মসজিদ-মাদ্রাসাও যে কতটা ব্যর্থ হয় –বাংলাদেশ মূলতঃ তারই নমুনা। অথচ ইসলামের শত্রুশক্তির নির্মূল হলে এবং ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে সমগ্র দেশ পরিণত হয় মসজিদ-মাদ্রসায়। নবীজী (সাঃ)র হাদীসঃ কেউ মসজিদ নির্মাণ করলে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর জন্য জান্নাতে ঘর তৈরী করে দেন। মসজিদ নির্মাণে অর্থ ব্যয় হয়, কিন্তু তাতে রক্তের বিনিয়োগ হয় না। কিন্তু বিপুল অর্থ ও হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিশাল বিনিয়োগটি অপরিহার্য হয় ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণে। ইসলামী রাষ্ট্র দেয়, মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও শরিয়তের বিজয়। দেয়, শত্রুর হামলার মুখে মুসলিম উম্মাহর প্রতিরক্ষা। দেয়, বিশ্বশক্তি রূপে উত্থানের সামর্থ্য। ফলে ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণের পুরস্কার যে কতো বিশাল -সেটি বুঝে উঠা কি এতই কঠিন? যে সমাজে সে কাজটি বেশী বেশী হয়, সে সমাজ পায় মহান আল্লাহতায়ালার অফুরন্ত নেয়ামত। তাদের সাহায্যে হাজার হাজার ফেরেশতা নেমে আসে। জুটে শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয়। ফলে এ পৃথিবীপৃষ্ঠে এর চেয়ে সেরা নেক কর্ম এবং শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিশীল কাজ আর কি হতে পারে? সেটি না হলে যা আসে তা হলো কঠিন আযাব। সে কাজটি সবচেয়ে বেশী হয়েছিল সাহাবায়ে কেরামদের যুগে। নবীজী (সাঃ)র শতকরা৭০ ভাগের বেশী সাহাবা সে কাজে শহীদ হয়েছেন। তাদের অর্থ ও রক্তের বিনিয়োগের ফলে জুটেছে গায়েবী মদদ ও বিশ্বব্যাপী ইজ্জত। এবং তাতে মুসলিম উম্মাহর উত্থান ঘটেছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তি রূপে। কিন্তু আজ সে কোরবানি নাই, ফলে মুসলিম উম্মাহর সে শক্তি এবং ইজ্জতও নাই।

ফিরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি দেয়ার পর হযরত মুসা (সাঃ) এবং তাঁর অনুসারি বনি ইসরাইলীদের উপর যে হুকুমটি এসেছিল সেটি উপাসনালয় বা মাদ্রাসা গড়ার নয়; বরং সেটি ছিল ফিলিস্তিন থেকে স্বৈরশাসন নির্মূলের। নির্দেশ ছিল, স্বৈরশাসনের নির্মূল করে সেখানে তাওরাতে  ঘোষিত শরিয়ত প্রতিষ্ঠা দেয়ার। কিন্তু ইহুদীগণ সে হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। তাদের আচরণ এতটাই উদ্ধত ছিল যে তারা হযরত মূসা (আঃ)কে বলেছিল, “হে মূসা! তুমি ও তোমার আল্লাহ গিয়ে যুদ্ধ করো, আমরা অপেক্ষায় আছি।” তাদের গাদ্দারির ফলে স্বৈরাচারের নির্মূল ও শরিয়তের প্রতিষ্ঠার কাজ সেদিন সফল হয়নি। ফলে হযরত মূসা (আঃ) উপর অবতীর্ণ শরিয়তি বিধান তাওরাতেই রয়ে গেছে, বাস্তবায়ীত হয়নি। মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে এরূপ গাদ্দারি কি কখনো রহমত ডেকে আনে? বরং ঘিরে ধরেছিল কঠিন আযাব। ফিলিস্তিনে ঢুকা তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়; শত শত বছর তারা নানা দেশের পথে পথে ঘুরেছে উদ্বাস্তুর বেশে। অথচ তাদের যে জনবল ছিল তা মহান নবীজী (সাঃ) পাননি। নবীজী (সাঃ) তাঁর মক্কী জীবনের ১৩ বছরে ২০০ জনের বেশী লোক তৈরী করতে পারেননি। অথচ মিশর থেকে হিজরত কালে হযরত মূসা (আঃ) সাথে ইহুদীদের সংখ্যা ছিল লক্ষাধিক। কিন্তু সে বিশাল জনবল তাদের শক্তি ও ইজ্জত না বাড়িয়ে অপমানই বাড়িয়েছে। একই পথ ধরেছে আজকের মুসলিমগণ। বিপুল সংখ্যায় বাড়ছে তাদের জনবল; কিন্তু বাড়েনি মহান আল্লাহতায়ালার পথে তাদের অঙ্গিকার ও কোরবানী। ইহুদীদের ন্যায় তারাও নিষ্ক্রিয় স্বৈরশাসকদের নির্মূলে। এক্ষেত্রে বাঙালী মুসলিমদের ব্যর্থতাটি কি কম? দীর্ঘকাল যাবত তাদের ঘাড়ে চেপে বসা স্বৈরশাসক এবং ইসলামের পরাজয় বস্তুতঃ সে ব্যর্থতাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। অথচ মহান আল্লাহতায়ালার হুকুম মেনে চলায় সামান্য অঙ্গিকার থাকলে এ জালেম স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে গ্রামে গঞ্জে জিহাদ শুরু হতো।


অপরাধীদের অধিকৃতি ও প্রহসনের নির্বাচন

কোনটি গণতন্ত্র আর কোনটি স্বৈরাচার -সেটি বুঝা উঠে কি এতই কঠিন? গণতন্ত্রের মূল কথা, কারা দেশের শাসক হবে সেটি নির্ধারিত হবে একমাত্র জনগণের ভোটে। প্রশ্ন হলো, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে জনগণ তাদের সে রায়টি জানাবে কেমনে? সে জন্য যে কোন দায়িত্বশীল সরকারের সবচেয়ে বড় দায়িত্বটি হলো, নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুষ্ঠ পরিবেশ সৃষ্টি করা। অথচ স্বৈরাচারি সরকারের বড় অপরাধটি হয় এ ক্ষেত্রে। নির্বাচন পরিণত হয় ভোটডাকাতির মাধ্যমে। ফলে এমন ভোটডাকাতির নির্বাচন বার বার হলেও তাতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায় না। তাতে জনগণের রায়েরও প্রতিফলন হয় না। বস্তুতঃ নির্বাচন কতটা বৈধ হলো সে বিচারটি হয়, নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহন কীরূপ এবং কতটা নিরপেক্ষ -তা দিয়ে। সেটি না হলে নির্বাচন অর্থহীন। এমন গণতন্ত্রহীন নির্বাচন স্বৈরশাসকদের শক্তি বাড়ায়। এবং শক্তিহীন ও নিছক দর্শকে পরিণত করে জনগণকে। এজন্যই স্বৈরশাসকগণ জনগণে শত্রু।

গণতন্ত্র বাঁচাতে হলে গণজীবনে বাঁচাতে হয় জনগণের কথা বলার স্বাধীনতা, মিটিং-মিছিলের স্বাধীনতা, সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের স্বাধীনতা। নইলে গণতন্ত্র বাঁচে না। কিন্তু বাংলাদেশে এর কোনটাই বাঁচেনি। ফলে বেঁচে নাই গণতন্ত্রও। মিটিং-মিছিলের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক দল গড়ে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা শুধু পাকিস্তান আমলেই ছিল না, ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ আমলেও ছিল। কিন্তু এখন নাই। রাস্তায় নিরস্ত্র মানুষের  মিছিল শুরু হলে শুধু সশস্ত্র পুলিশ নয়, সরকার দলের ক্যাডারগণও অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। হাসিনার স্বৈর সরকার রাজপথে স্কুলের নিরীহ কিশোর-কিশোরীদের মিছিলও সহ্য করেনি। তাদের উপরও সশস্ত্র পুলিশ ও গুণ্ডাদের লেলিয়ে দিয়েছে। তাদের হাতে ছাত্র-ছাত্রীগণ শুধু আহতই হয়নি, যৌন ভাবে লাঞ্ছিতও হয়েছে। আল জাজিরা’ টিভি চ্যানেলের সামনে সে সত্য বিবরণ তুলে ধরাতে গৃহে হামলা দিয়ে ডিবি’র পুলিশ ফটোশিল্পী শহীদুল আলমকে উঠিয়ে নিয়ে নির্যাতন করেছে। নির্যাতনের ফলে আদালতে তাঁকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাজির হতে হয়েছে।

স্বৈর-সরকারের হাতে নির্বাচন হাইজ্যাকের কাজটি শুধু নির্বাচন কালে হয় না। সেটি শুরু হয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বহু পূর্ব থেকেই। বস্তুতঃ সেটি চলে সমগ্র স্বৈর-শাসনামল জুড়ে। নির্বাচন হাইজ্যাকের কাজে ব্যবহৃত হয় দেশের আইন ও আদালত। আইন ও আদালতকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভাবে চলতে না দিয়ে ব্যবহার করা হয় সরকারের শত্রু নির্মূলের কাজে। সেটি বুঝা যায় সরকারি দলের নেতাদের মিথ্যা মামলায় জেল ও ফাঁসি দেয়ার আয়োজন দেখে। কেড়ে নেয়া হয় রাজপথে প্রতিবাদের স্বাধীনতা। এরূপ অগণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন হলে সে নির্বাচন কি কোন ভদ্র ও সুবোধ মানুষের স্বীকৃতি পায়? শেখ হাসিনার সরকার যে একটি অবৈধ, অসভ্য এবং অগণতান্ত্রিক সরকার –তা নিয়ে এজন্যই ভদ্র সমাজে কোন বিতর্ক নেই। ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংসদের ৩০০ সিটের মাঝে ১৫৩ সিটে কোন ভোটাভুটি হয়নি। দেশব্যাপী শতকরা ৫ ভাগ ভোটার ভোট দেয়নি। কোন গণতান্ত্রিক দেশে কোন কালেও কি এমন নির্বাচন হয়েছে? এমন ভোটারহীন নির্বাচনকে নির্বাচন বললে ভোট ডাকাতির নির্বাচনকে কি বলা যাবে? প্রতিটি সভ্য সমাজেই সভ্য ও অসভ্য এবং ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য থাকে, সে পার্থক্য বিলুপ্ত করাটিই অসভ্য সমাজের রীতি। বাংলাদেশে সে পার্থক্য বিলুপ্ত হয়েছে শেখ হাসিনার ন্যায় স্বৈর-শাসকদের হাতে। ফলে সরকারের নীতিতে সত্য-মিথ্যা এবং ন্যায়-অন্যায় একাকার হয়েছে। ফলে ভোট ডাকাতির নির্বাচনও ঘোষিত হয় সুষ্ঠ নির্বাচন রূপে। যেসব ভয়নাক চোর-ডাকাতদের স্থান হওয়া উচিত ছিল কারাগারে, তারাই আবির্ভুত হয়েছে দেশের হর্তাকর্তা রূপে।

ডাকাত ও ভোট-ডাকাতঃ পার্থক্যটি কোথায়?

ডাকাত ও ভোট-ডাকাত –উভয়ই অপরাধী। তবে উভয় প্রকার ডাকাতের মাঝে পার্থক্যটি সৃষ্টি হয় বিবেকের বিরুদ্ধে নাশকতা ভেদে। চুরি-ডাকাতিকে অপরাধ গণ্য করার মত বিবেক চোর-ডাকাতদের মাঝে কিছুটা হলেও বেঁচে থাকে। শরমবোধ থাকে চোর-ডাকাত রূপে সমাজে পরিচিতি হওয়াতে। ডাকাতির অর্থকে এজন্যই তারা লুকিয়ে রাখে। এজন্যই দিনে নয়, রাতের আঁধারে তারা চুরি-ডাকাতিতে নামে। কিন্তু সে সামান্য বিবেকবোধ এবং চোর-ডাকাত রূপে পরিচিতি হওয়া নিয়ে সামান্য শরমবোধের মৃত্যু ঘটে ভোট-ডাকাতদের মাঝে। ফলে দর্পের সাথে তারা ভোট-ডাকাতি করে দিনদুপুরে। এমন বিবেকহীনতা ও শরমহীনতার কারণে দেশবাসীর সামনে এবং সে সাথে বিশ্ববাসীর সামনে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী রূপে জাহির করতে শেখ হাসিনার কোন শরম হয়নি। শরম পায়নি ক্ষমতায় থাকা কালে ভোট ডাকাত এরশাদও। এরশাদ তাই খেতাব কুড়িয়েছিল বিশ্ববেহায়া রূপে। এদের হাতে পৃথিবীজুড়া অপমান বাড়ছে বাংলাদেশীদের। যে সব বিদেশীগণ বাংলাদেশে রাজনীতির খবর রাখে, তারা কি জানে না কীরূপে ক্ষমতায় এসেছে শেখ হাসিনা? তাঁর সাথে সাক্ষাত কালে বিদেশীদের স্মৃতিতেও নিশ্চিত জেগে উঠে তাঁর অপরাধের নৃশংসতা। সে স্মৃতিটি এক অপরাধি স্বৈরশাসকের। যার অপরাধ, ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতা ছিনতাইয়ের।


বাংলাদেশে স্বৈরশাসনের ইতিহাসে হুসেন মহম্মদ এরশাদ এক অতি অসভ্য চরিত্র। এখন সে অসভ্য ব্যক্তিটি শেখ হাসিনার শুধু রাজনৈতিক মিত্রই নয়, বরং উভয়েই একত্রে অবস্থান গণতন্ত্রের নির্মূলে। চোর-ডাকাতদের নাশকতায় মানুষের আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতি হলেও তাতে কারো ঈমান বিনষ্ট হয়না। কারণ, অর্থে হাত দিলেও তারা মানুষের ঈমান বা বিবেক হত্যায় হাত দেয় না। অথচ সে কাজটি করছে ভোট- ডাকাত স্বৈরশাসকগণ। ফলে তাদের শাসনে দেশে ব্যাপক ভাবে বাড়ে মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। বাড়ে গুম, খুন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি ও সন্ত্রাস। দেহের মধ্যে জীবাণু রেখে সুস্থ্য দেহ আশা করা যায় না, তেমনি বিবেকধ্বংসী স্বৈরাচারিদের ক্ষমতায় রেখে দেশগড়ার কাজও হয়না। নবীজী (সাঃ)র গুরুত্বপূর্ণ সূন্নত তাই স্রেফ নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত ও মসজিদের প্রতিষ্ঠা ছিল না, ছিল রাষ্ট্রের অঙ্গণ থেকে দুর্বৃত্ত নির্মূলও।


অপরাধীদের মনে সব সময়ই থাকে নিজ অপরাধ গোপন করার নেশা। শেখ হাসিনা তাই ২০১৪ সালের নির্বাচন জনগণ কর্তৃক বর্জনের জন্য দায়ী করেন বিরোধী দলকে। অথচ ইচ্ছা করেই এ সত্য বুঝতে তারা রাজী নয়, তাবলিগ, রিলিফ বিতরণ বা সৃষ্টিহীন হৈচৈ’য়ের জন্য কেউ রাজনৈতিক দল গড়ে না। রাজনৈতিক দল গড়ার মূল উদ্দেশ্যটি হলো, নির্বাচনে অংশ নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া। নির্বাচনে অংশ নেয়াকে প্রতিটি রাজনৈতিক দল এজন্যই অপরিহার্য ভাবে। ব্যবসা করতে হলে দোকান খুলতে হয়, তেমনি রাজনীতি করতে হলে নির্বাচনে অংশ নিতে হয়। শাসন ক্ষমতায় যাওয়ার এটিই একমাত্র বৈধ পথ। কিন্তু সরকারি দলের উদ্যোগে নিরপেক্ষ নির্বাচনকে যখন অসম্ভব করা হয়, তখন লাখ লাখ টাকা খরচ করে নির্বাচনে নামা ও রাতদিন প্রচার চালনাটি অর্থহীন। এমন সাঁজানো নির্বাচনে অংশ নিলে বৈধতা পায় স্বৈরাচারি শাসকের সিলেকশন প্রক্রিয়া। তাতে গাদ্দারি হয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সাথে। ২০১৪ সালের নির্বাচন ছিল তেমনি একটি প্রহসন মূলক নির্বাচন। দেশের নিরক্ষর নাগরিকগণও সেটি বুঝতো। এজন্যই স্বৈরাচার বিরোধী দলগুলির কোনটিই ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এরূপ নির্বাচনে অংশ নিলে এসব দলের নেতা-নেত্রীগণ ইতিহাসে তারা গণতন্ত্রের শত্রুরূপে ধিকৃত হতো। এজন্য শত শত বছর পরও নতুন প্রজন্ম থেকে ধিক্কার কুড়াতো। কিন্তু স্বৈরশাসকদের সে লজ্জাশরমের ভাবনা থাকে না। কে কি বলবে -তা নিয়ে তারা ভাবে না। তাদের ভাবনা, কি ভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করা যায় -তা নিয়ে। তাই সে প্রহসনের নির্বাচনে শেখ হাসিনার সাথে অংশ নিতে দেখা গেছে গণতন্ত্রের আরেক ঘৃণীত দুষমন এরশাদকে।

দায়ভারটি জিহাদের

অতীতের গৌরবময় ইতিহাস জনগণকে দেয় নতুন ইতিহাস গড়ায় আত্মবিশ্বাস। মুসলিমদের সে ইতিহাস তো অতি সমৃদ্ধ। যে কৃষক ফসল ফলাতে জানে, তার ফসল বানের পানিতে বার বার ভেসে গেলেও সে আবার চাষাবাদে নামে। নিষ্ক্রিয় হওয়া, মনের দুঃখে হতোদ্যম হওয়া বা হতাশায় দেশ ছেড়ে যাওয়াটি তাঁর রীতিবিরুদ্ধ। গৃহে বার বার চুরি-ডাকাতি হবে এবং দিনের পর দিন গৃহ চোর-ডাকাতদের হাতে অধিকৃত থাকবে –এটি কি কোন সভ্য মানুষ মেনে নেয়? সেটি মেনে নেয়াটি শুধু অক্ষমতা নয়, বরং অসভ্যতাও। সভ্য মানুষ তাই চোর-ডাকাত তাড়াতে হাতের কাছে যা পায় তাই নিয়ে লড়াইয়ে নামে। ইসলামে সেটিই তো জিহাদ। এরূপ জিহাদের কারণেই রাষ্ট্র থেকে নির্মূল হয় শয়তানী শক্তির দখলদারি। শত্রুর নির্মূলে ও মুসলিম উম্মহর প্রতিরক্ষায় জিহাদই হলো বস্তুতঃ মূল হাতিয়ার। ফলে শত্রু শক্তির লাগাতর হামলাটি নামায-রোযা বা হজ্ব-যাকাতের বিরুদ্ধে নয়; বরং সেটির লক্ষ্য মুসলিম জীবন থেকে জিহাদের বিলুপ্তি।

প্রতিটি মুসলিম সমাজে জিহাদের বিরুদ্ধে শয়তানের কৌশলটিও চোখে পড়ার মত। শয়তান সমাজে নামে মোল্লা-মৌলভী, আলেম-উলামা, পীর-দরবেশ, ইমাম, হুজুরদের ছদ্দবেশে। এরা বলে পবিত্র কোরআনে ইসলামি রাষ্ট্র বলে কিছু নেই। শরিয়তের প্রতিষ্ঠা বলেও কিছু নাই্। যেন নবীজী (সাঃ) ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও সে রাষ্ট্রের প্রধান হয়ে কোরআনের বিরুদ্ধে চলে গেছেন! (নাউযু  বিল্লাহ।) যেন ইসলামে খোলাফায়ে রাশেদা বলে কিছু ছিল না।  তাদের কাছে ইসলাম হলো স্রেফ তাওহীদে বিশ্বাস এবং নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত ও তাসবিহ-তাহলিল পালন। তারা মানুষকে নহিসত দেয় জিহাদে নামার আগে নিজেকে ফেরেশতা বানাতে। অথচ তারা জানে ফেরেশতা হওয়াটি অসম্ভব ব্যাপার। সে কাজ ফেরেশতাদের, মানুষের নয়। এক্ষেত্রে তাদের নিজেদের ব্যর্থতাটিও কি এ ক্ষেত্রে কম? এরূপ লক্ষ লক্ষ আলেম, ইমাম, হুজুর, পীর, সুফি ও দরবেশ প্রতি বছর দুনিয়া থেকে বিদায় নয় ফেরেশতা না হয়েই। তাদের নামায-রোযার ভাণ্ডারে অনেক ইবাদত জমলেও ঈমানের ভাণ্ডারটি থাকে শুণ্য। ফলে একটি দিনের জন্য তারা কোন জিহাদের ময়দানে হাজির হয় না। জিহাদ থেকে অধিকাংশ মুসলিমের দূরে থাকার কারণে মুসলিম দেশে শরিয়তের প্রতিষ্ঠাও ঘটেনি। অথচ দেশ যেখানে ইসলামের শত্রু শক্তির হাতে অধিকৃত এবং শরিয়ত যেখানে নির্বাসিত, জিহাদের ময়দান তো সে দেশে হাজির হয় প্রতিটি ব্যক্তির এবং প্রতিটি ঘরের দরজার সামনে। এবং জিহাদ প্রসঙ্গে নবীজী (সাঃ)র প্রসিদ্ধ সহীহ হাদীস, “যে ব্যক্তি জীবনে কোন দিন জিহাদ করলো না এবং জিহাদের নিয়েতও করলো না সে ব্যক্তি মুনাফিক।”  কারণ জিহাদ তো ঈমানের ফসল। বীজ থেকে যেমন চারা গজায় তেমনি ঈমান থেকে জিহাদ জন্ম নেয়। ঈমান থাকলে মু’মিনের জীবনে জিহাদ অনিবার্য ভাবেই এসে যায়। তাই নবীজী (সাঃ)’র অনুসারি এমন কোন সুস্থ্য সাহাবী ছিলেন না যিনি জিহাদের ময়দানে প্রাণ দানে হাজির হননি। অথচ যারা মুনাফিক, তাদের জীবনে নামায-রোযা থাকলেও জিহাদ থাকে না।

ঈমান কাকে বলে এবং কীভাবে তার প্রকাশ ঘটে পবিত্র কোরআন থেকে তার একটি উদাহরণ দেয়া যাক।  ফিরাউনের প্রাসাদে মূসা (আঃ)এর সাথে প্রতিযোগিতায় হেরে যাদুকরদের যে দলটি ঈমান এনে শহীদ হয়েছিলেন তাদের কেউই ফেরেশতা ছিলেন না। সারা জীবন তারা কাটিয়েছিলেন যাদুর ন্যায় কবিরা গুনাহর রাজ্যে। তাদের নামায-রোযার ভাণ্ডারটি ছিল শূণ্য। হযরত মূসা (আঃ)’র সাথে প্রতিযোগিতা দেখতে সেখানে হাজির ছিল আরো বহু হাজার মানুষ। একই মোজেজা তারাও দেখেছিল; কিন্তু তাদের কেউই ঈমান আনেনি। মহান আল্লাহতায়ালার বিচারে একজন ব্যক্তির এ সামর্থ্যটুকুর মূল্য তো বিশাল। এ দুনিয়ায় পদে পদে তো সে সামর্থ্যেরই পরীক্ষা হয়। যাদুকরদের কালেমায়ে শাহাদত মহান আল্লাহতায়ালার কাছে যে শুধু কবুল হয়েছিল তা নয়, বরং মহান রাব্বুল আ’লামিন তাতে এতোই খুশি হয়েছিলেন যে তাদের সে কাহিনী পবিত্র কোরআনে বার বার বর্ণনা করেছেন। হযরত মূসা (আঃ) মোজেজা দেখার সাথে সাথে তাদের ঈমানের ভাণ্ডারটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে এবং তাঁরা সেজদায় পড়ে যান। ঈমান আনার অপরাধে ফিরাউন তাদেরকে নির্মম ভাবে হাত-পা কেটে হত্যার হুকুম শুনেয়েছিল। কিন্তু সে নৃশংসতায় তাঁরা আদৌ বিচলিত হননি, শহীদ হয়ে গেছেন। তাদের লক্ষ্য ছিল, স্রেফ মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করা। এমন একটি চেতনার কারণে মু’মিনের জীবনে ঈমান কখনো গোপন থাকে না। সেটি যেমন নামাযে নেয়, তেমনি জিহাদে নেয়। কীভাবে ঈমানের প্রকাশ ঘটে -সেটি বুঝাতেই যাদুকরদের সে কাহিনী মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে তাঁর নিজের কালামের পাশে সংকলিত করে ক্বিয়ামত অবধি জিন্দা করে রেখেছেন। প্রশ্ন হলো, সারা জীবন নামায-রোযা পালন করার পরও যদি ঈমানের এরূপ প্রকাশ না ঘটে -তবে মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে সে নামায-রোযার মূল্য কতটুকু?

 

 

নীরবতা ঈমানদারি নয়

মুসলিম ভূমি ইসলামের শত্রুশক্তির হাতে অধিকৃত দেখেও নীরব থাকাটি তাই ঈমানদারি নয়। দেশ থেকে শত্রুশক্তির অধিকৃতি নির্মূলে মুসলিম মাত্রই জিহাদে নামবে তাতেই তো ঈমানের প্রকাশ। যারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও হিন্দু আধিপত্যবাদ -এ দুই শক্তির বিরুদ্ধে রক্তাত্ব লড়াই করে ১৯৪৭-য়ে বিজয় এনেছিল, তারা কি এ নতুন অধিকৃতির মুখে আজ নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকতে পারে? এখানেই ভারতের ন্যায় আগ্রাসী হিন্দু সাম্প্রদায়ীক শক্তির ভয়। তাদের ভয়, পূর্ব সীমান্তে নতুন মুসলিম শক্তির উদ্ভবের। ভয় থেকে বাঁচতেই মানুষ সাথি খোঁঝে। ভারতীয়দের পক্ষ থেকে কলাবোরেটর রূপে শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে বেছে নেয়ার হেতু তো সেটিই। তাই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে লড়াই তাতে ভারতও জড়িয়ে পড়েত  বাধ্য।

শত্রুদের কাজ শুধু দেশ-ধ্বংস, মানব-হত্যা ও নারী-ধর্ষণ নয়, তারা ধ্বংস করতে চায় দেশবাসীর চেতনা ও গৌরবের ইতিহাসকে। কারণ চেতনা ও ইতিহাস বিলুপ্ত হলে বিলুপ্ত হয় আত্মবিশ্বাসও। তখন মানুষ ভূলে যায় নিজ জীবনের মিশন ও ভিশন। শত্রুগণ জানে, ১৯৪৭’য়ের বিজয়ের পিছনে বাংলার ভূমি বা জলবায়ুর কোন ভূমিকা ছিল না; বরং সেটি ছিল বাঙালী মুসলিমদের ইসলামী চেতনা ও ঈমানী দায়িত্ববোধ। তাই শত্রুগণ সে চেতনার বিরুদ্ধে নাশকতায় নেমেছে। তবে সে নাশকতার কাজে বাঙালী মুসলিমদের শত্রু শুধু বিদেশে নয়, ভিতরেও। ভিতরের শত্রু হলো ঘাড়ে চেপে বসা ঘাতক স্বৈরশাসক ও তার সাঙ্গপাঙ্গগণ। ইসলামি চেতনা বিনাশে ময়দানে নামিয়েছে ইসলামচ্যুৎ সেক্যুলার বুদ্ধিজীবীবেশী বাঙালী কাপালিকদের। উঁই পোকার ন্যায় তারা ভিতর থেকে বিনাশ করছে বাঙালী মুসলিমের ঈমান, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আত্মবিশ্বাস। মুসলিম দেশে স্বৈরশাসকের নাশকতাটি তাই ব্যাপক ও সর্বগ্রাসী। ফলে তাদের নাশকতাপূর্ণ সে রাজনীতির নির্মূলের চেয়ে মুসলিম সমাজে গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা আর কি হতে পারে? বাঙালী মুসলিমদের স্বৈরাচার বিরোধী লড়াইটি তাই স্রেফ গণতন্ত্র বাঁচানোর লড়াই নয়, ঈমান বাঁচানোরও। এটি নিছক রাজনৈতিক লড়াই নয়, বরং পরিপূর্ণ এক জিহাদ। আর এ জিহাদ বাঙালী মুসলিমদের সামনে পেশ করেছে অর্থ, শ্রম, মেধা ও রক্ত বিনিয়োগের এক পবিত্র অঙ্গণ। এ অঙ্গণে কার কি বিনিয়োগ সেটিই নির্ধারন করবে অনন্ত অসীম পরকালে কোথায় সে স্থান পাবে এবিষয়টি। ফলে কোন সুস্থ্য ব্যক্তির জীবনে এরচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর কি হতে পারে? ৮/০৯/২০১৮ Tweet:@drfmkamal; facebook.com/firozkamal

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *