অধ্যায় ছয়: ভারতের চাপানো যুদ্ধ

হিন্দু প্রতিহিংসা

ভারতীয় হিন্দুগণ মুসলিমদের দিল্লি-বিজয় এবং ভারতের বুকে প্রায় সাড়ে ছয় শত বছরের মুসলিম শাসনকে কখনোই মেনে নিতে পারিনি। মুসলিম শাসনের সে স্মৃতি এখনো প্রতিদিন ও প্রতিমুহুর্তে তাদেরকে পীড়া দেয়। তাদের কাছে পুরা মুসলিম শাসনামলটাই পরাধীনতার কাল। হিন্দু ছাত্রছাত্রীদের কাছে অতি অসহ্য হলো, স্কুল-কলেজের পাঠ্য বইয়ে তাদের পড়তে হয় মুসলিমদের ভারত বিজয় ও ভারত শাসনের ইতিহাস। সারা ভারত জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মুসলিম শাসনের বিশাল বিশাল স্মৃতিস্তম্ভ। বিশাল গর্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাজমহল, ফতেহপুর সিক্রি, দিল্লির লাল কেল্লা, জামে মসজিদ ও কুতুব মিনারের ন্যায় অসংখ্য কীর্তি। তাদের চক্ষুশূল হলো, প্রতিনিয়ত সেগুলি তাদের দেখতে হয়। তাদের মনের যাতনা আরো বেড়ে যায় ১৯৪৭ সালে, এ বছরটিতেই ভারতের বুক চিড়ে প্রতিষ্ঠা পায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান। শত চেষ্টাতেও পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা রুখতে পারিনি। তারা তো চেয়েছিল অখণ্ড ভারত, কিন্তু সেটি ব্যর্থ হওয়ায় তাদের মনকষ্ট বহুগুণ বেড়ে যায়। ভারতীয় হিন্দুগণ সে মনকষ্ট থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখতো মুসলিমদের বিরুদ্ধে আশু বিজয় এবং বদলা নেয়ার মধ্যে। ব্রিটিশ শাসনের বিদায়ের পর ভারতের বুকে প্রতিষ্ঠা পায় হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ফলে এ রাষ্ট্রের মুসলিমগণ হিন্দু শাসনের বর্বরতা থেকে রক্ষা পেলেও বাঁচেনি ভারতীয় মুসলিমগণ।সহসাই তারা সহিংস হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। শুরু হয়, মুসলিমদের বিরুদ্ধে বদলা নেয়ার পালা। সংঘটিত হয় হাজার হাজার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং সেসব দাঙ্গায় মুসলিম গণহত্য,নারী ধর্ষণ ও লুটতরাজ। শুরু হয় ভারত থেকে মুসলিম বিতাড়ন ও মুসলিম রাজ্যগুলি দখল। যে মুসলিম প্রদেশগুলো ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ভূক্ত হয়েছিল সে যাত্রায় সেগুলি বেঁচে যায়। কিন্তু ভারতীয় আগ্রাসন থেকে বাঁচেনি বিচ্ছিন্ন কাশ্মীর, হায়দারাবাদ ও মানভাদড়।

তবে হিন্দুদের প্রতিশোধের লক্ষ্যবস্তু স্রেফ ভারতীয় মুসলিমগণই ছিল না, মূল টার্গেট ছিল পাকিস্তান। এবং ভারতীয় আগ্রাসনের লক্ষ্য শুধু পশ্চিম পাকিস্তানে আঘাত হানা ছিল না, বরং মূল টার্গেট ছিল পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করাও। এবং সেটির বোধগম্য কারণও ছিল। কারণটি স্রেফ দ্বি-জাতিতত্বকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা নয়, বরং বাঙালী মুসলিমদের বিরুদ্ধে বদলা নেয়া। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় মূল ভূমিকাটি ছিল বাঙালী মুসলমানদের, পাঞ্জাবী বা পাঠানদের নয়। বেলুচ বা সিন্ধিদেরএ নয়। মুসলিম লীগের জন্ম হয়েছিল ১৯০৬ সালে ঢাকাতেই, ভারতের অন্য কোন শহরে নয়। এবং অবিভক্ত বাংলাই ছিল মুসলিম লীগের মূল দুর্গ। বাঙালী মুসলিমদের রাজনীতিই ১৯৪৭ সালে ভারতের ভূগোল ভেঙ্গে দেয়। তাদের কারণেই অবিভক্ত বাংলার রাজধানী কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রীর আসনে কোন হিন্দু বসতে পারি। বসেছে শেরে বাংলা ফজলুল হক, জনাব সোহরাওয়ার্দী ও জনাব খাজা নাজিমুদ্দীন।

 

প্রতিশোধ বাঙালী মুসলিম থেকে

উপমহাদেশের সর্বাধিক মুসলিমের বাস বাংলায়;এবং পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় কোরবানী পেশ করেছে বাঙালী মুসলিম। পাকিস্তানের দাবী নিয়ে ভারতের আর কোথাও এতো মুসলিমের রক্ত ঝরেনি। সেটি কলকাতার রাজপথে ১৯৪৬ সালের ১৬ই আগষ্ট কায়েদে আযম ঘোষিত প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসে। বাংলায় তখন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মুসলিম লীগ  সরকার।মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে ঐদিন কলকাতার গড়ের মাঠে আয়োজিত হয়েছিল বিশাল জনসভা। জনসভা থেকে ফেরার পথে তাদের উপর নৃশংস হামলা হয় হিন্দু গুন্ডাদের পক্ষ থেকে।সে হামলায় পাঁচ থেকে সাত হাজারের বেশী  মুসলিম নিহত হয়-যাদের অধিকাংশই ছিল পূর্ব বাংলার মফস্বল থেকে আসা দরিদ্র্য মুসলিম।অনেকেই কাজ করতো কলকাতা বন্দরে শ্রমিক রূপে।কলকাতার হিন্দুদের মন যে কতটা মুসলিম বিদ্বেষপূর্ণ ও দাঙ্গাপাগল সেটিরই সেদিন বীভৎস প্রকাশ ঘটেছিল।দাঙ্গা চলেছিল ৫ দিন ব্যাপী।নিজ চোখে-দেখা সে দাঙ্গার কিছু ভয়াবহতা বর্ণনা করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বাঙালী প্রফেসর ড.তপন রায় চৌধুরী তার “বাঙাল নামা” বইতে। প্রফেসর ড.তপন রায়চৌধুরী লিখেছেন,“নিজের চোখে দেখা ঘটনার বিবরণে ফিরে যাই। হোস্টেলের বারান্দা থেকে দেখতে পেলাম রাস্তার ওপারে আগুন জ্বলছে।বুঝলাম ব্যাপারটা আমার চেনা মহাপুরুষদেরই মহান কীর্তি। হোস্টেলের ছাদে উঠে দেখলাম –আগুন শুধু আমাদের পাড়ায় না,যতদূর চোখ যায় সর্বত্র আকাশ লালে লাল। তিন দিন তিন রাত কলকাতার পথে ঘাটে পিশাচনৃত্য চলে।… দাঙ্গার প্রথম ধাক্কা থামবার পর বিপজ্জনক এলাকায় যেসব বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন ছিলেন,তাঁদের খোঁজ নিতে বের হই। প্রথমেই গেলাম মুন্নুজন হলে।..নিরঙ্কুশ হিন্দু পাড়ার মধ্যে ওদের হস্টেল। তবে ভদ্র বাঙালি পাড়া।সুতরাং প্রথমটায় কিছু দুশ্চিন্তা করিনি। কিন্তু দাঙ্গা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে শিক্ষিত বাঙালির রুচি-সংস্কৃতির যেসব নমুনা দেখলাম,তাতে সন্দেহ হল যে,মুন্নুজান হলবাসিনী আমার বন্ধুদের গিয়ে আর জীবিত দেখবো না।…হোস্টেলের কাছে পৌঁছে যে দৃশ্য দেখলাম তাতে ভয়ে আমার বাক্যরোধ হল।বাড়ীটার সামনে রাস্তায় কিছু ভাঙা স্যুটকেস আর পোড়া বইপত্র ছড়ানো।বাড়িটা খাঁ খাঁ করছে।ফুটপথে এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়েছিলেন।বললেন –একটু আগে পুলিশের গাড়ি এসে মেয়েদের নিয়ে গেছে।…শুনলাম ১৬ই আগষ্ট বেলা এগারোটা নাগাদ একদল সশস্ত্র লোক হঠাৎ হুড়মুড় করে হোস্টেলে ঢুকে পড়ে।প্রথমে তারা অশ্রাব্য গালিগালাজ করে যার মূল বক্তব্য –মুসলমান স্ত্রীলোক আর রাস্তার গণিকার মধ্যে কোনও তফাৎ নেই। …হামলাকারিরা অধিকাংশই ছিলেন ভদ্র শ্রেণীর মানুষ এবং তাঁদের কেউ কেউ ওঁদের বিশেষ পরিচিত,পাড়ার দাদা।”–(তপন রায়চৌধুরী,২০০৭)।কলকাতায় মুসলিম গণহত্যায় অতি প্রসন্ন হয়েছিলেন কংগ্রেসের সাম্প্রদায়িক নেতৃবৃন্দ।তখন বল্লব ভাই প্যাটেল ছিলেন কংগ্রেসের উচ্চ সারির নেতা।স্বাধীনতার পর তিনি ভারতের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হন।কলকাতার মুসলিম নিধনে তিনি যে কতটা খুশি হয়েছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় রাজমোহন গান্ধী রচিত “Understanding the Muslim Mind” বইয়ে। তিনি লেখেন,“Vallabbhai Patel wrote in a letter to Raja Gopalachari: This Calcutta Killing will be good lesson fo the (Muslim) League; because I hear that the proportion of the Muslims who have suffered death is much larger.”

বাঙালী মুসলিমের সে বিশাল কোরবানীই হিন্দুদের অখণ্ড ভারত মাতার স্বপ্নকে পুরাপুরি দাফন করে দেয়।এরপর পাকিস্তানের দাবী নিয়ে মুসলিম লীগকে ভারতের আর কোথাও কোন দিবস পালন বা জনসভা করতে হয়নি। ব্রিটিশ সরকার ও কংগ্রেসী নেতাদের বুঝাতে কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে আর কোন যুক্তি পেশের প্রয়োজন পড়েনি। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠায় এ ছিল বাঙালী মুসলিমদের কোরবানী। কংগ্রেস নেতা মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধি ও নেহেরু এবং সর্বশেষ ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড মাউন্ট ব্যাটন ভারত বিভাগ ও মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবী ত্বরিৎ মেনে নেন। লর্ড মাউন্ট ব্যাটন বুঝতে পারেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা মেনে না নিলে ব্রিটিশদের পক্ষে নিরাপদে ভারত ত্যাগ অসম্ভব হবে। গান্ধি এবং নেহেরুও তখন বুঝতে পারেন, মুসলিমগণ কখনোই হিন্দুদের শাসন বিনা যু্দ্ধে– মেনে নিবে না। সংঘাতের যে আগুণ ব্রিটিশ প্রশাসন থামাতে ব্যর্থ হচ্ছে, স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর হিন্দু প্রশাসনের পক্ষে সেটি থামানো আরো অসম্ভব হবে।

বাঙালী মুসলিমের সে কোরবানীর ফলেই মুহম্মদ ঘোরীর হাতে দিল্লি বিজয়ের পর উপমহাদেশের মুসলিম ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এরূপ বিশাল কোরবানী পাঞ্জাবী, সিন্ধুী, বেলুচ বা পাঠান মুসলিমগণ পেশ করেনি। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠায় বাঙালী মুসলিমের সে অবদানের কথা বহু বাংলাদেশী না জানলেও ভারতীয় রাজনীতির হিন্দু কর্ণধারগণ কোনকালেই ভূলেনি। তেমন এক জ্বলন্ত স্মৃতি নিয়েভারতীয় হিন্দুগণ বাঙালী মুসলিমদের কল্যাণে যুদ্ধ লড়ে স্বাধীন দেশ গড়ে দিবে -সেটি কি বিশ্বাস করা যায়? বরং পাকিস্তান ভেঙ্গে উপমহাদেশের মুসলিম শক্তির মেরুদণ্ড দুর্বল করবে,সীমাহীন লুণ্ঠনে নিদারুন দুর্ভিক্ষ উপহার দিবে এবং বাংলার মুসলিম ভূমিকে নিজেদের পদতলে রাখবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? আজকের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হিন্দুস্থানের পলিসি কি সেটিই প্রকাশ করে না? সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া, সে বেড়ায় বাংলাদেশীদের লাশ, পদ্মা-তিস্তাসহ বাংলাদেশের নদীগুলি থেকে পানি তুলে নেয়া কি বন্ধুত্বের প্রতীক?

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ভারতীয় বর্ণ হিন্দুগণ লাগাতর সুযোগ খুঁজছিল বদলার নেওয়ার। সে বদলাটি শুধু পশ্চিম পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে নয়, বাঙালী মুসলিমদের বিরুদ্ধেও। ভারতের হাতে সে মোক্ষম সুযোগটি এসে যায় ১৯৭১ সালে। একাত্তরের যুদ্ধের মূল প্রেক্ষাপট মূলত সেটিই। এবং আগ্রাসী হিন্দুস্থানের হাতে সে সুযোগটি তুলে দেন শেখ মুজিব। মুজিব এজন্যই ভারতীয় হিন্দুদের কাছে এতো প্রিয়। একাত্তরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কেন একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চাপানো হলো, কেন ব্যাপক লুন্ঠন হলো, কেন বাংলাদেশ তলাহীন ভিক্ষার ঝুলিতে পরিণত এবং কেনই বা দেশটিতে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ নেমে এলো এবং সে দুর্ভিক্ষে কেন লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হলো -এ বিষয়গুলি বুঝতে হলে হিন্দু মানস, হিন্দুদের মুসলিম বিদ্বেষ ও ভারত সরকারের মুসলিম বিরোধী পলিসিকে অবশ্যই বুঝতে হবে। নইলে একাত্তরের ঘটনাবলির মূল্যায়নের চেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। অথচ বাংলাদেশ সরকার ও আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের মূল কাজ হয়েছে জনগণ ও স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের নজর থেকে হিন্দু মানস, বর্ণ হিন্দুদের মুসলিম বিদ্বেষ ও ভারত সরকারের মুসলিম বিরোধী পলিসিকে লুকানো। তাদের সবগুলো কামানের মুখ এবং মনের সমগ্র বিষ শুধু পাকিস্তান ও ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে। তাদের কথা, বাংলাদেশের ইতিহাসের শুরু যেন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে এবং মুজিবই বাংলার একমাত্র ব্যক্তিত্ব। তাই তাদের লেখনীতে ১৯৫২ পূর্ববর্তী মুসলিমদের দীর্ঘ লড়াই ও কোরবানীর বিবরণ নাই। এবং মুজিব ভিন্ন অন্য কোন নেতাও তাদের মূল্যায়নে গুরুত্ব পায়নি। শুধু তাই নয়, ভারতীয় আধিপত্য, লুন্ঠন ও চক্রান্ত্র নিয়েও তারা নিরব। এদের কারণেই একাত্তরের মুল ইতিহাস জানা অসম্ভব হয়েছে; এবং অসম্ভব হয়েছে একাত্তরের মূল অপরাধীদের চেনা।

 

ভারতের রণপ্রস্তুতি

পাকিস্তান ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টিলেজিসেন্স ডিপার্টমেন্ট একাত্তরের আগষ্ট মাসে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পায়, ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশাল আকারের সামরিক হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। -(G W Choudhury, 1974)। পাকিস্তান ইন্টিলেজিসেন্স একথাও জানতে পারে যে, আগষ্টের মাঝামাঝিতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি ভারতের সেনা বাহিনী প্রধান জেনারেল মানেক শ’কে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সেনা প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন। এর একমাস পর সেপ্টেম্বরে জেনারেল মানেক শ’ ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় অধিনায়ক জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরাকে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে অধিকহারে সামরিক অপারেশনের নির্দেশ দেন। -(Sisson and Rose, 1990)। পাকিস্তানের পক্ষে ইতিমধ্যেই প্রচণ্ড দেরী হয়ে গেছে। ইন্দিরা গান্ধি এরই মধ্য  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ই্উরোপ ও রাশিয়া ঘুরে এসেছেন। তার সফরের মূল উদ্দেশ্যটি ছিল সে সব দেশের সরকারগুলিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা এবং ভারতের পক্ষে আনা। তাতে তিনি সমর্থও হয়েছিলেন। তাকে সে কাজে সহয়তা দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী ইসরাইলী লবি ও ইহুদী প্রভাবিত মিডিয়া। ইসরাইলও চাচ্ছিল অখণ্ড পাকিস্তানের আশু বিলুপ্তি। কারণ, তাদের কাছে শক্তিশালী পাকিস্তানের অর্থই হলো মুসলিম বিশ্ব এবং সে সাথে আরব বিশ্বের শক্তিবৃদ্ধি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের ডিমোক্রাট দলীয় অধিকাংশ সদস্য ছিলেন ভারতের পক্ষে। তারা ছিল পাকিস্তানকে কোনরূপ সামরিক সাহায্যদানের প্রচণ্ড বিরোধী। চীনের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্থাপনে মধ্যস্থতার কাজে পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিক্সন পাকিস্তানের পক্ষে কোন সাহায্যই করেনি। কারণ, চাকর-বাকরের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানো কি কখনো কর্তা ব্যক্তির রীতি? অপর দিকে ব্রিটিশগণ তো পাকিস্তানের সৃষ্টিরই বিরোধীতা করেছিল। ফলে দেশটির অখণ্ড অস্তিত্ব নিয়ে আগ্রহ থাকবে -সেটি কি সম্ভব? অপর দিকে সোভিয়েত রাশিয়া এ হামলার জন্য ভারতকে সর্বাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত করছিল। তৎকালীন স্নায়ু যুদ্ধের যুগে সোভিয়েত রাশিয়া পাকিস্তানকে মার্কিন শিবিরের দেশ রূপে গণ্য করতো। ফলে মার্কিনীদের বিরুদ্ধে লালিত প্রচণ্ড ক্ষোভ গিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানের উপর। ভারতের সাথে ইতিমধ্যে সোভিয়েত রাশিয়া নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করে। অপর দিকে চীন তখন নিজের ঘর গোছাতে ব্যস্ত। তাছাড়া সেসময় আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে প্রভাব ফেলার মত সামরিক ও অর্থনৈতিক বল চীনের ছিল না। ফলে আগ্রহ ছিল না সে মুহুর্তে পাকিস্তানকে সাহায্য করায়।

 

চাপানো হলো যুদ্ধ

একাত্তরে পাকিস্তান ছিল প্রকৃত অর্থেই বন্ধুহীন। ভারতের সাথে আসন্ন যুদ্ধের জন্য দেশটির নিজের প্রস্তুতিও ছিল না। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইয়াহিয়া খানের নিজের ব্যস্ততাটি ছিল একটি সর্বদলীয় নির্বাচন এবং নির্বাচন শেষে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে। দেশের বিমান বাহিনীর জন্য কোন নতুন বিমান ক্রয়,সেনা বাহিনীতে নতুন ট্যাংক সংযোজন এবং নৌ-বাহিনীর জন্য কোন যুদ্ধ নৌ-জাহাজ -তার ক্ষমতায় থাকাকালে ঘটেনি। শুরুতে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনা বাহিনীর মাত্র এক ডিভিশন সৈন্য ছিল। এবং তাতে সৈন্য সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪ হাজার।-(এ.কে.খন্দকার,২০১৪) এবং (Williams, L. Rushbrook, 1972)।পরে সেটিকে বাড়িয়ে ৪৫ হাজার করা হয় –যা জেনারেল নিয়াজী তার বই “The Betrayal of East Pakistan” বইতে উল্লেখ করেছেন। অনেকে ভাবেন, যুদ্ধ শেষে যে ৯০ হাজার পাকিস্তানী বন্দী হয়ে ভারতে যায় -তারা সবাই সৈনিক ছিল। সেটি সঠিক নয়। তাদের মাঝে প্রায় অর্ধেকই ছিল অবাঙালী বেসামরিক ব্যক্তি। তারা ছিল নানা পেশার। মুক্তি বাহিনীর হাতে নিহত হওয়া থেকে বাঁচতে এসব অবাঙালী বেসামরিক ব্যক্তিবর্গ ১৬ই ডিসেম্বরের আগেই সেনানিবাসে আশ্রয় নেয়। এবং যুদ্ধ বন্দী রূপে সৈন্যদের সাথে ভারতে যাওয়াকে বরং শ্রেয় মনে করে।

যুদ্ধ আসন্ন দেখে জেনারেল নিয়াজী ইয়াহিয়া খানের কাছে বার বার আরো সৈন্য ও অস্ত্র চেয়েও পাননি। অবশেষে ইয়াহিয়া খান তাকে আল্লাহর উপর ভরসা করতে বলেন। -(General Niazi, 1998)। এ স্বল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে মুক্তি বাহিনীকে বড় জোর দমনে রাখা যায়, কিন্তু তা দিয়ে কি ভারতের বিশাল বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করা যায়? বিষয়টিকে জেনারেল নিয়াজী তার বইয়ে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা রূপে চিত্রিত করেছেন। ভারত মাত্র এক কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত কাশ্মিরে ৬-৭ লাখের বেশী সৈন্য নিয়ে কাশ্মিরী মুজাহিদদের বিরুদ্ধে ২০ বছরের অধিক কাল লড়ছে। এবং সে লড়াইয়ে এখনো বিজয় মেলেনি। অথচ পূর্ব পাকিস্তানে মাত্র ৪৫ হাজার সৈন্য! প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান চাচ্ছিলেন যে কোন ভাবে ভারতের সাথে যুদ্ধ এড়াতে। পাকিস্তান তখন গভীর শাসনতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক সংকটে জর্জরিত। পূর্ব পাকিস্তানে সে বছরটিতে আসে ভয়াবহ বন্যা। এ অবস্থায় কি কোন দেশের সরকার যুদ্ধ ডেকে আনে? অবস্থা নাজুক দেখে ইয়াহিয়া খান শান্তিপূর্ণ সমাধানের নানারূপ উদ্যোগ নেন। ভেবেছিলেন যুদ্ধ এড়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করবে। কিন্তু মুসলিম দেশের পরাজয় ও ভাঙ্গন ঠ্যাকাতে কি কোন কাফের দেশ এগুয়? বরং তেমন একটি যুদ্ধ শুরু হোক এবং তাতে মুসলিম দেশের পরাজয় হোক –তা তো তাদের জন্য প্রচণ্ড উৎসবের কারণ। একাত্তরে সেটিও প্রমাণিত হয়।

নভেম্বরের মাঝামাঝিতে ভারতের নতুন হাইকমিশনার জয় কুমার অটাল ইসলামবাদে নিজের পরিচয়পত্র পেশ করেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান মি. অটালের কাছে ৫ দফা গোপন প্রস্তাব পেশ করেন। তাতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির কাছে শেখ মুজিবকে বিনাশর্তে মুক্তি এবং পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রশ্নে একটি রেফেরেন্ডামের প্রস্তাব দেন। আরো প্রস্তাব রাখেন অতিশীঘ্র পাকিস্তানে একটি সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের। এবং প্রস্তাব দেন জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ভারত থেকে সকল উদ্বাস্তুদের ত্বরিৎ ফিরিয়ে নেয়ার। -(G W Choudhury, 1974)। এমনকি ইসলামাবাদে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন, যুদ্ধ এড়াতে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের স্বার্থে পূর্ব পাকিস্তান থেকে এক তরফা সৈন্য অপসারণেও পাকিস্তান রাজী। -(Sisson & Rose, 1990)।কিন্তু ইন্দিরা গান্ধি ইয়াহিয়া খানের সকল আপোষ প্রস্তাবগুলি নাকচ করে দেন। তখন ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতির ষোল আনা সম্পন্ন। ইন্দিরা গান্ধি ও ভারতের অন্যান্য নেতাদের মগজে তখন ১৯৪৭’য়ের বদলা নেয়ার নেশা। তখন শান্তিপূর্ণ সমাধান নিয়ে তাদের ভাবনার সময় ছিল না। তাই ইন্দিরা গান্ধি স্বাধীনতা প্রসঙ্গে রেফারেন্ডামের প্রস্তাবও গ্রহণ করেননি। তার যুক্তি, সত্তরের নির্বাচনে সে ফয়সালা হয়ে গেছে এবং আর কোন রেফারেন্ডামের প্রয়োজন নেই। অথচ ইন্দিরা গান্ধির সে যুক্তিটি ছিল পুরাপুরি ভূয়া। কারণ ১৯৭০’য়ের নির্বাচন স্বাধীনতা প্রসঙ্গে হয়নি। বাংলাদেশের মাটিতে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এভাবেই অনিবার্য হয়ে উঠে। তাছাড়া যুদ্ধ না হলে কি একটি দেশের মেরুদ্ণ্ড ভাঙ্গা যায়? যুদ্ধ না হলে সৃষ্টি হতো পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতীয় অধিকৃতির সুযোগ। সেট না হলে কি নির্মিত হতো যুদ্ধ শেষে ভারতীয় লুণ্ঠন এবং ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকৃতির স্থায়ী অবকাঠামো? যুদ্ধ-পরবর্তী সে শোষণের অবাধ সুযোগটি না পেলে বাংলাদেশকে কি তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি বানানো যেত? উপহার দেয়া যেত কি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ? একাত্তরের যুদ্ধটি ভারতের জন্য তাই অনিবার্য ছিল। যুদ্ধ চাপানো হয়েছিল ভারতের সে অনিবার্য প্রয়োজনটি পূরণে।এাএভোএকাত্তরের

 

কালীমা লেপন

যুদ্ধ এড়াতে ইয়াহিয়া খান সর্বশেষ উদ্যোগেটি নেন মার্কিন দূতাবাসের মধ্যস্থায় শেখ মুজিব ও কলকাতাস্থ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে সরাসরি আপোষরফায়।শেখ মুজিবের সাথে যোগাযোগের দায়িত্ব দেয়া হয় আগরতলা মামলায় তার উকিল ও পাকিস্তানের সাবেক আইনমন্ত্রী জনাব এ কে ব্রোহীর উপর। কলকাতায় তখনও এমন কিছু আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন যারা পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রবেশ চাইতো না।খোন্দকার মুশতাক আহমদের ন্যায় অনেকেই বাংলাদেশের বুকে ভারতীয় ভয়ানক আগ্রাসনটি চাইতেন না।কিন্তু ইন্দিরা গান্ধি সে উদ্যোগও সফল হতে দেয়নি।কলকাতায় অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতাদেরও কিছু করার ছিল না।তারা তখন ভারত সরকারের হাতে জিম্মি।ভারত তখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য দু’পায়ে খাড়া।লক্ষ্য,পাকিস্তানের সে দুর্বল মুহুর্তটিতে প্রতিদ্বন্দি পাকিস্তানকে খণ্ডিত করা।লক্ষ্য,বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রকে পরাজিত করা এবং দেশটির ৯০ হাজার মুসলিম নাগরিককে যুদ্ধবন্দী করে ভারতে নিয়ে দিল্লি জয়ের বদলা নেয়া।

সমগ্র মুসলিম ইতিহাসে এ ছিল অতি লজ্জাজনক ও বেদনাদায়ক ঘটনা। এভাবে কালিমা লেপন হলো শুধু পাকিস্তানের ইতিহাসে নয়,বরং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে। কিন্তু সে হুশ সে ইসলামী চেতনাশূণ্য বাঙালী সেক্যলারিস্টদের আছে? মুসলিম উম্মাহর মুখে এরূপ কালিমা লেপনে ভারতীয় হিন্দুদের বিশ্বস্ত কলাবোরেটরের ভূমিকায় নামে আওয়ামী লীগ ও তার সহচর সেক্যুলার এবং বামপন্থী বাঙালী বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। মুর্তিপুজারি মুশরিকদের দোসর হয়ে নিজ দেশে তাদেরকে ডেকে আনা এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশকে পরাজিত ও খণ্ডিত করার কাজে বাঙালী মুসলিমদের এরূপ জড়িত হওয়ার বিষয়টি সমগ্র মুসলিম ইতিহাসে কিয়ামত অবধি অতিশয় নিন্দনীয় ঘটনা রূপে বেঁচে থাকবে -তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? ভারতীয় হিন্দুদের ইতিহাসে এটি ছিল মুসলিমদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজয়। তাই ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের পর ভারতীয় পার্লামেন্টে উল্লাসধ্বনি উঠেছিল,“হাজার সাল কি বদলা লে লিয়া”। তবে এ যুদ্ধের মূল লক্ষ্যটি শুধু পাকিস্তানের মেরুদন্ড ভাঙ্গা ছিল না। লক্ষ্য ছিল,বাংলাদেশের মেরুদণ্ড ভাঙ্গাও।এভাবে চিরকালের জন্য বাংলাদেশকে দুর্বল রাখা।তেমন একটি লক্ষ্য পূরণে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাক-বাহিনীর অব্যবহৃত বহুহাজার কোটি টাকার অস্ত্র ভারতে নিয়ে যায়। শুধু অস্ত্র নয়,লুণ্ঠন করে বিপুল অর্থ ও সম্পদও। লুন্ঠিত হয় শত শত কলকারখানা,অফিসআদালত ও ব্যাংকগুলির রিজার্ভ।এবং বাংলাদেশকে গোলামীর জালে বাঁধা হয় ২৫ সালা দাসচুক্তির বাঁধনে। এভাব নির্মিত হয় তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পঙ্গু রাখার অবকাঠামো।

 

একাত্তর ও অধিকৃত বাংলাদেশ

একাত্তরে যুদ্ধে ভারত তার বহুদিনের কাঙ্খিত লক্ষ্যসাধনে প্রচণ্ড সফল হয়েছে। এযুদ্ধে পাকিস্তান যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার চেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে বাংলাদেশে, পাকিস্তানে নয়। তলাহীন ভিক্ষার ঝুলিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান নয়। একাত্তরের যুদ্ধ পাকিস্তানকে অতি রুঢ় শিক্ষা দিয়েছে। যুদ্ধ শেষে পাকিস্তান দ্রুত মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ানোর শক্তি পেয়েছে। দেশটি এখন আর একাত্তরের দুর্বল পাকিস্তান নয়; বরং তার অস্ত্রভাণ্ডারে রয়েছে শতাধিক আনবিক বোমা। দেশটি নিজেই হেলিকপ্টার, বোমারু বিমান ও ট্যাংক তৈরী করে। আনবিক বোমা বহনকারি দূরপাল্লার মিজাইলও তৈরী করে। পাকিস্তান এখন ভারতের সামনে সদর্পে দাঁড়ানোর সামর্থ রাখে। একাত্তরে যেরূপ যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল, ভারত তা এখন ভাবতেও পারে না। এটি এখন সর্বজন স্বীকৃত, পাকিস্তানই ৫৭টি মুসলিম দেশের মাঝে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। স্মরণীয় যে, সে পাকিস্তানে অতীতে তিনবার প্রধানমন্ত্রী ও দুইবার রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছিল বাংলার মুসলিম। অথচ আজ  জনসংখ্যায় প্রায় সমান হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো মেরুদণ্ড নিয়ে খাড়া হতে পারিনি। বরং বেড়েছে ভারতের সামনে সার্বক্ষণিক আাত্মসমর্পণ। বেড়েছে সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকৃতি। তাই দেশের মাঝখান দিয়ে ভারত ইচ্ছামত করিডোর নেয়। ইচ্ছামত রাজনৈতিক বিপ্লবও ঘটায়। সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে প্রতিষ্ঠা করে ভারতীয় পণ্যের বাজার। আটকিয়ে দেয় বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলির পানিও। তাছাড়া একাত্তরে যুদ্ধ কি একাত্তরেই শেষ হয়েছে? ভারতীয় অধিকৃতি থেকে কি আদৌ মুক্তি মিলেছে?  প্রশ্ন হলো, এমন এক সর্বগ্রাসী অধিকৃতিকে চিরস্থায়ী করার জন্যই কি ভারত একাত্তরে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়নি?

 

গ্রন্থপঞ্জি

  1. W. Chowdhury, 1974:  The Last Days of United Pakistan, C. Hurst & Company, London.
  2. Sisson, Richard and Leo Rose (1990): War and Secession: Pakistan, India and the Creation of Bangladesh, University of California; Berkeley.
  3. Niazi, Lt Gen AA K (2002); The Betrayal of East Pakistan, Oxford University Press, Karachi.
  4. Williams, L. Rushbrook. The East Pakistan Tragedy, London: Tom Stacy Ltd, 1972.
  5. এ.কে.খন্দকার।১৯৭১ ভেতরে বাইরে, ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন, ২০১৪।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *