অধিকৃত দেশ এবং দেশ বাঁচানোর জিহাদ

শত্রুর গ্রাসে দেশ

বাংলাদেশ আজ আর স্বাধীন দেশ নয়। দেশ অধিকৃত ইসলামের শত্রু, গণতন্ত্রের শত্রু, মানবতার শত্রু এবং চিহ্নিত বিদেশী শত্রুর ভয়ংকর জোগালদারদের হাতে। সাম্রাজ্যবাদী শত্রুদের হাত থেকে বাঙালী মুসলমানদের প্রকৃত স্বাধীনতা মেলে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্টে। সে স্বাধীনতা শুধু ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের হাত থেকেই নয়,নব্য হিন্দুসাম্রাজ্য নির্মাণে দু’পায়ে খাড়া আগ্রাসী হিন্দুদের হাত থেকেও। বাঙালী মুসলমানদের সে স্বাধীনতাকে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী মহল শুরু থেকেই মেনে নেয়নি। কাশ্মীর,হায়দারাবাদ, গোয়া, মানভাদরের ন্যায় মুসলিম বাংলাকেও তারা ১৯৪৭ সালেই ভারত-ভূক্ত করতে চেয়েছিল। তারা তো চেয়েছিল অখন্ড ভারত। বাঙালী মুসলমানদের স্বাধীনতার সে মহান দিনটিকে ভারতীয় সাম্যাজ্যবাদী মহল আজও নিজেদের জন্য পরাজয়ের দিন মনে করে। ভারত মাতার দেহ খন্ডিত হওয়ার বেদনায় ভারতীয় হিন্দুগণ তো এখনও কাতর। তাদের স্বপ্ন তো সে খন্ডিত ভারতকে আবার একত্রিত করা। ভারতীয় বিদেশ নীতি, সামরিক নীতি ও স্বদেশ নীতির সেটি যে মোদ্দা কথা সেটি কি আজও কোন গোপন বিষয়? তাই ১৯৭১ য়ে পাকিস্তান ভাঙ্গাটি তাদের সে লক্ষ্য পূরণে প্রথম ধাপ মাত্র, শেষ ধাপ নয়। এজন্যই বাঙালী মুসলিমের স্মৃতি থেকে ভারত ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্টকে ভূলিয়ে দিতে চায়। তবে সে লক্ষ্যটি শুধু ভারতীয়দের নয়, বাংলাদেশের বুকে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের জোগালদার ইসলামের ঘোরতর শত্রু আওয়ামী বাকশালী পক্ষটিরও। সে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে উভয়ের পক্ষ থেকেও প্রচন্ড ষড়যন্ত্র শুরু হয় ১৯৪৭ সাল থেকেই।বাকশালি মুজিবের আগরতলা ষড়যন্ত্রের মূল পেক্ষপট তো সে ভারতসেবী এ ইসলাম বিরোধী চেতনা। তাই ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনের যারা মহান নেতা ছিলেন এবং ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থের প্রতি যাদের প্রবল অঙ্গিকার ছিল তাদের স্মৃতিকে এ ভারতসেবী পক্ষটি নিজেদের রচিত ইতিহাসের বই থেকে বিলুপ্ত করেছে, অথবা ভিলেন রূপে খাড়া করেছে।

ভারতীয় হিন্দুদের প্রতি ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের অনুগ্রহ ও পৃষ্ঠপোষকতা ছিল বিশাল। অপর দিকে শোষণ ও নির্যাতনের যাঁতাকলে পড়ে মুসলমানগণ। হিন্দুদের খুশি করতেই আসাম ও পূর্ববঙ্গ নিয়ে গঠিত ১৯০৫ সালের ঢাকা কেন্দ্রীক নতুন প্রদেশকে ১৯১১ সালে ব্রিটিশ সরকার রদ করে দেয়। এটি ছিল স্রেফ কলকাতা কেন্দ্রীক বাঙালী হিন্দুদের কল্যাণে। প্রবল খুশিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন ব্রিটিশ রাজা পঞ্চম জর্জের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কবিতা লেখেন। সে কবিতায় তিনি রাজা পঞ্চম জর্জকে “জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারত-ভাগ্যবিধাতা! জয় হে,জয় হে,জয় হে,জয় জয় জয় জয় হে” বলে বিধাতার আসনে বসান। এই হলো রবীন্দ্রনাথের চেতনার মান। অথচ ভারতের বুকে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন ছিল ছিল দস্যুবৃত্তির শাসন। বরং বহুলাংশে সে শাসন ছিল দস্যুবৃত্তির চেয়েও খারাপ। দস্যুরা সম্পদ লুন্ঠন করে, কিন্তু গৃহস্বামীর  হাত কেটে উপার্জনের সামর্থ কেটে নেয় না। অথচ সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশগণ সেটি করেছিল। বাঙালী মুসলিম তাঁতশিল্পীদের আঙুলকেটে তারা জগতবিখ্যাত মসলিন শিল্পকে ধ্বংস করেছিল। সেটি ছিল ব্রিটিশ বস্ত্র শিল্পকে বাজারে প্রতিদ্বন্দিহীন করার লক্ষ্যে।এমন জালেম সাম্রাজ্যবাদীদের বিধাতার আসনে বসানোর জন্য চেতনার পচনটি গভীর হওয়াটি জরুরী। কিন্তু গরুবাছুর,শাপশকুন বা পুতুলকে যারা ভগবানের আসনে বসাতে পারে তাদের সে মানসিক পচনটি কম? ব্রিটিশগণ আর যাই হোক গরুবাছুর বা শাপশকুন নয়। চেতনায় সে গভীর পচন নিয়ে রবীন্দ্রনাথ যেমন ব্রিটিশ রাজাকে বিধাতার আসনে বসিয়েছেন,তেমনি ভারতীয় কংগ্রেস নেতা মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ বাহিনীর জন্য সৈন্য সংগ্রহে নেমেছিলেন। সাম্রাজ্য রক্ষার সে যুদ্ধে ব্রিটিশকে বিজয়ী করতে ৭০ হাজারের বেশী ভারতীয় প্রাণও দিয়েছিল।

বঙ্গভঙ্গ রদের পর পূর্ব বাংলার মুসলমানদের মাঝে ব্রিটিশ বিরোধী প্রচন্ড ক্ষোভ। সে ক্ষোভকে প্রশমিত করতে ব্রিটিশ সরকার ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ওয়াদা দেয়। কিন্তু ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পাক -কলকাতাকেন্দ্রীক হিন্দু কায়েমীস্বার্থপরগণ সেটিও চায়নি।পূর্ব বাংলার বুকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে তারা প্রচন্ড আন্দোলন গড়ে তোলে। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা থেমে যায়। উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের বিরুদ্ধে এমন ইতর আন্দোলন মানব ইতিহাসের আর কোথায়ও হয়েছে -সে নজির নেই। অথচ সেটি হয়েছে বাংলার বুকে। আরো বিস্ময়, কলকাতার রাজপথে সে ইতর বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছেন খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।অথচ সে রবীন্দ্রনাথের গানই আজ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গিত! বিবেকহীনতা আর কাকে বলে? বিবেকহীন এরূপ ব্যক্তিদেরকে সম্মান দিলে সে ভূমিতে কি বিবেকমান মানুষ সৃষ্টি হয়? বরং তাতে যা প্রবল ভাবে প্রতিষ্ঠা পায় তা হলো সত্যকে পরাজিত করা ও সত্যসেবী বিবেকমান মানুষদেব হত্যা করার পেক্ষাপট। এমন এক প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশ আজ ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে অধিকৃত।

ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের চেয়েও ভারতের হিন্দুগণ যে অধিক সাম্রাজ্যবাদী ও অধিক মুসলিম-বিরোধী -সে প্রমাণ শুধু ১৯৪৭য়ের পূর্বেই নয়,আজও তারা লাগাতর পেশ করে চলেছে। ফলে ১৯৪৭য়ের পর বিগত ৬০ বছরে ভারতীয় হিন্দুদের হাতে যত মুসলিম নিহত হয়েছে বা যত মুসলিম নারী ধর্ষিতা হয়েছে বা যত মসজিদ ও মাদ্রাসা ধ্বংস হয়েছে তা ব্রিটিশ শাসনের ১৯০ বছরে হয়নি। ভারতে প্রায় ২০ কোটি মুসলমানের বাস। বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে এত মুসলমান নেই। অথচ ঢাকা, করাচী বা লাহোরের ন্যায় একটি মাত্র শহরে যত মুসলিম ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী,ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ,আলেম, কৃষিবিদ বা হিসাববিজ্ঞানী তা সমগ্র ভারতের মুসলমানদের মাঝে নাই। ভারতীয় মুসলমানদের যে কতটা পরিকল্পিত ভাবে দাবিয়ে রাখা হচ্ছে সেটি প্রমাণে কি এরপরও কোন দলীলের প্রয়োজন পড়ে? অথচ বাংলাদেশের আওয়ামী বাকশালীদের কাছে ভারতের এ মুসলিম বিরোধী নেতারাই হলো পুজণীয় ব্যক্তিত্ব। বাকশালী বুদ্ধিজীবীগণ তো ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান সৃষ্টিকে মুসলমানদের জন্য অনাসৃষ্টি বলতে আজও উদগ্রীব। প্রশ্ন হলো,এমন গোলামী চেতনা নিয়ে কেউ  কি স্বাধীনতা, মানবতা,গণতন্ত্র, ইসলাম ও মুসলমানের বন্ধু হতে পারে?

 

রবীন্দ্রনাথের ব্যর্থতা ও বাকশালী নাশকতা

খোদ রবীন্দনাথের মনে বাঙালীর মানব সন্তান রূপে বেড়ে উঠা নিয়ে দারুন সংশয় ছিল। তাই বিধাতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি কবিতা লিখেছেন, “হে বিধাতা! সাত কোটি প্রাণিরে রেখেছো বাঙালী করে, মানুষ করোনি।” প্রশ্ন হলো, কবি রবীন্দ্রনাথ নিজেও কি প্রকৃত মানব রূপে বেড়ে উঠতে পেরেছিলেন? সে ব্যর্থতা কি তার নিজেরও কম? সমাজের অতি নিষ্ঠুর চোর-ডাকাতেরাও শিক্ষাবিস্তারের বিরুদ্ধে কখনো মিছিল করে না। কারণ তারাও বুঝে,কারো বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধটি অর্থশূণ্য করা নয়, বরং শিক্ষাশূণ্য করা বা তাকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা। শিক্ষাশূণ্য করার অর্থ তার তার বিবেক বা আত্মাকে হত্যা করা। তাতে অসম্ভব করা হয় মানুষ রূপে বেড়ে উঠার সামর্থ।চোর-ডাকাতেরা অর্থ কেড়ে নিলেও সে বিবেক হত্যার সে অপরাধে হাত বাড়ায় না। অথচ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো সে অপরাধে অপরাধি। চেতনার মৃত্যু হলে ব্যক্তি যেমন প্রাণহীন পুতুল,ইতর গরুবাছুর ও বিষাক্ত শাপশকুনকে দেবতার আসনে বসায়,তেমনি ধর্ম ও দেশের ভয়ানক শত্রুকেও পুজনীয় ব্যক্তি রূপে মেনে নেয়। ইসলামের শত্রু ও মিথ্যার প্রচারকগণ তো সেটিই চায়। তখন নমরুদ-ফিরাউনের ন্যায় দুর্বৃত্তনগণও ভগবান রূপে স্বীকৃতি পায়। গণতন্ত্রের দাফনকারি,গণহত্যার নায়ক এবং বিদেশের সেবাদাসও তখন জাতির পিতা, জাতির নেতা বা বন্ধুর খেতাব পায়। রবীন্দ্রনাথের ন্যায় ব্যক্তিও তখন গুরুদেব গণ্য হয়। বাংলাদেশের বড় ব্যর্থতা ও কদর্যতা এ এখানেই। দেশের রাজনীতি, আদালত, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ বিভাগ এমন বিবেকশূণ্য মানুষে পরিপূর্ণ! ফলে দেশে প্রবল ভাবে বেড়েছে দুর্বৃত্তি ও মিথ্যাচার। ধর্মকর্ম, নীতিনৈতীকতা ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে বাংলাদেশ দিন দিন দ্রুত পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ তো এটিই। ফলে আজ থেকে শত বছর আগে বাঙালী মুসলমানের যে মান ছিল সেটি আজ কল্পনাও করা যায় না। বরং যেটি সহজ হয়েছে সেটি হলো দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে বার বার প্রথম হওয়া। এবং সহজ হয়েছে ভোটডাকাতি, গণতন্ত্র হত্যা ও শাপলা চত্বরের গণহত্যা।

শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার শাসন স্বচোখে দেখার পরও ইসলাম, গণতন্ত্র ও মানবতার বিরুদ্ধে তাদের শত্রুতা ও প্রচন্ড নাশকতা নিয়ে কি সন্দেহ চলে? সে গভীর শত্রুতা কি বাকশালী এ মহলটি আদৌ কোনদিন গোপন রেখেছে? আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহটি কাফেরগণ কখনোই গোপনে করে না, তারা তো সে বিদ্রোহটি ঢাকঢোল পিটিয়ে করে। এরূপ বিদ্রোহের মধ্যেই তো তাদের আনন্দ। শয়তান তো চায়, তার অনুসারিগণ এমন আনন্দের মাঝেই ডুবে থাক। শেখ মুজিবও তেমনি উৎসব ভরে গণতন্ত্র দাফন করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। আল্লাহর শরিয়তের বিরুদ্ধে এ বাকশালীদের আজকের যুদ্ধটিও গোপন বিষয় নয়। কোরআনে বর্নিত পবিত্র শরিয়তী আইনের বিরুদ্ধে তাদের বিষোদগার:এ আইন নাকি মধ্যযুগীয় বর্বরতা! অতীতে মুসলিম ভূমিতে কোন কাফেরও কি আল্লাহর পবিত্র আইনের বিরুদ্ধে এমন বিষোদগারের সাহস দেখিয়েছে? অথচ বাংলাদেশের বুকে মহান আল্লাহতায়ালার পবিত্র বিধানের বিরুদ্ধে এমন বিষ উদগিরণ হচ্ছে আওয়ামী বাকশালীদের পক্ষ থেকে। মুরতাদ হওয়ার জন্য কি এটুকুই যথেষ্ঠ নয়? শুধু ইসলামের বিরুদ্ধে নয়, মানবতার বিরুদ্ধেও কি তাদের হিংস্র যুদ্ধটি লাগাতর নয়? শুধু মুসলিম রূপে নয়, স্বাধীন মানুষ রূপে বাঁচতে দিতেও তারা রাজি নয়। তাই গণতন্ত্র ও মানবতার বিরুদ্ধে পরিচালিত সে যুদ্ধে শেখ মুজিব ৩০-৪০ হাজার নাগরিককে হত্যা করেছিল। শেখ মুজিবের সে মিশনকে চালু রাখতেই শেখ হাসিনা ময়দানে নামিয়েছে দলীয় ক্যাডারদের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবী, সেনাবাহিনী ও পুলিশ।ফলে সমগ্র বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে শাপলা চত্বরে।

 

শত্রুশক্রির পদতলে দেশ

আওয়ামী বাকশালীগণ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই মহা বিপর্যয় ঘটে। তখন যে শুধু গণতান্ত্রিক অধিকার ছিনতাই হয় তা নয়,হায়েনার হাত পড়ে দেশ ও দেশবাসীর ইজ্জতে। বিশ্ববাসীর সামনে বাংলাদেশের মুখ তখন কালিমালিপ্ত হয়।এবং দুর্ভোগ বাড়ে জনগণের।সেটি যেমন মুজিবের আমলে ঘটেছিল,তেমনি হাসিনার আমলেও।অথচ যে কোন দায়িত্বশীল সরকারের মূল কাজটি তো দেশের মুখ উজ্বল করা ও দেশবাসীর সুখশান্তি বাড়ানো। অথচ আওয়ামী বাকশালীদের সে ভাবনা নাই। আর সেটি থাকার কথাও নয়।কারণ তাদের রাজনীতির মূল এজেন্ডা,ভারতের আগ্রাসী রাজনীতির জোগালদারি। দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষা যেমন নয়,দেশ ও দেশবাসীর ইজ্জত বাঁচানোও নয়।তাই ভারত যখন বাংলাদেশে চুরি-ডাকাতি করে তখন তাদের কাজ হয় সে লুন্ঠনে জোগালের কাজ করা।সেটি সুস্পষ্ট হয়ে যায় একাত্তরেই। ভারতীয় বাহিনীর ডাকাতি শুরু হয় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে পূর্ব পাকিস্তানের উপর তাদের দখলদারি প্রতিষ্ঠার পরই। তখন ডাকাতির লক্ষ্যবস্তু ছিল পাকিস্তান আর্মির অব্যবহৃত হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র ও অবাঙালীদের মালিকাধীন শিল্পকারখানা ও তাদের গৃহের সহায় সম্পদ। সে ডাকাতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে সামরিক বাহিনীর চাকুরি হারিয়েছিলেন এবং বন্দী হয়েছিলেন মেজর আব্দুল জলীল। অথচ বাকশালী জোগালেরা সেদিন টু’শব্দটি পর্যন্ত করেনি।বরং তাদের মুখে তখন প্রচন্ড ভারত-বন্দনা।সে বন্দনাটি এখনও অব্যাহত। আর যে ভাবনা থেকে জন্ম নেয় এমন ভারত-বন্দনা তাকেই তারা বলে একাত্তরের চেতনা।বাংলাদেশের ভূমি,নদ-নদী,সীমান্তু,সম্পদ,নারী-পুরুষ,গরুমহিষের উপর ভারতীয়দের পক্ষ থেকে ডাকাতি হলে এ চেতনাধারিরা প্রতিবাদ করে না।

এ জোগালদারদের ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতার মসনদকে টিকে থাকাটি সুনিশ্চিত করে ভারত।সেটি যেমন ১৯৭০, ১৯৭১ ও ২০০৮ সালে যেমন দেখা গেছে,তেমনি সেটি ২০১৪ সালেও  দেখা গেল।বাংলাদেশের বাইরে একমাত্র ভারতই তাদের নির্ভরযোগ্য মিত্র।জোগালদার পালার এ রাজনীতিতে ভারতের বিনিয়োগটি হাজার হাজার কোটি টাকার।আসামের দৈনিক নববার্তা লিখেছে,একমাত্র ২০০৮ সালের নির্বাচনেই ভারতের বিনিয়োগটি ছিল ৮০০ কোটি ভারতীয় রুপির।২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রস্তাবিত বিনিয়োগটি ছিল ১০০০ কোটি রুপির।নির্বাচনের বাইরেও তাদের রয়েছে শত শত কোটির টাকার বিনিয়োগ। তবে এ হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগটি যে ভারতীয়দের নিজস্ব ভান্ডার থেকে আসছে তা নয়। ডাকাত সর্দার কখনই নিজের জমিজমা বিক্রি করে ডাকাত পালে না। সে অর্থটি আসে লুন্ঠিত মালামাল থেকে। একই রূপ কইয়ের তেলে কই ভাজার নীতি ভারতীয়দের।বাকশালী জোগালদারদের সহযোগিতায় ভারত পেয়েছে ১৬ কোটি মানুষের বিশাল বাজার।এর চেয়ে ক্ষুদ্রতর বাজারের উপর দখল নিতে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেশেরা ৫ হাজার মাইল দূর থেকে বহু সাগর ও মহাসাগর পাড়ি দিয়ে এসেছিল। সে বাজার ধরে রাখতে যুদ্ধ করেছিল এবং সেসব যুদ্ধে জানমালের বিনিয়োগও করেছিল।

ভারতীয়দের কাছে বাংলাদেশের পরিচিতিটি আদৌ স্বাধীন দেশ রূপে নয়।তারা ভাবে,দেশটি তাদের নিজস্ব যুদ্ধের কামাই। ভাবে,তারা যুদ্ধ না করলে একাত্তরে বাংলাদেশের জন্মই হতো না।ফলে তাদের যুক্তি,জন্মসূত্রেই ভারতের কাছে বাংলাদেশ দায়বদ্ধ।এখন উচিত আজীবন ভারতের পদসেবা করে বাঁচা। সন্তান যেমন পিতাকে অস্বীকার করতে পারে না,বাংলাদেশও তেমনি পারে না ভারতকে অস্বীকার করতে।এমন ধারণাটি যে শুধু ভারতীয়দের -তা নয়। আওয়ামী বাকশালীদেরও।এমন কি বহু অ-আওয়ামীলীগারদেরও। তাই ভারতের কাছ থেকে ট্রানজিটের ফি নেয়াকে এরা বেয়াদবি মনে করে। কারণ পিতা থেকে তো আর ভাড়া আদায় করা যায় না।ভারত চায়,বাংলাদেশের রাজনীতির উপর দখলদারিটা এমন পদসেবী জোগালদারদের হাতেই চিরকাল থাকুক।

 

ডাকাতির নতুন অধ্যায়

লাগাতর ডাকাতি করাই ডাকাতদের স্বভাব। একটি বা দুটি ডাকাতি করে তারা ক্ষ্যান্ত দেয় না। নীরবে বসে থাকা তাদের স্বভাবও নয়। আওয়ামী বাকশালীদের হাতে বিগত ৫টি বছর ধরে বহু চুরি-ডাকাতি হয়েছে। দেশীয় ব্যাংক ডিঙ্গিয়ে এ ডাকাতেরা বিশ্বব্যাংকের ভান্ডারে হাত দিয়েছিল। আর তাতে পিছিয়ে গেল পদ্মা সেতুর ন্যায় দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প।ভোট ডাকাতির পর্ব সম্প্রতি শেষ হলো।এবার শুরু হতে যাচ্ছে ডাকাতির নতুন পর্ব। সেটি আরো ৫ বছরের জন্য। তাই শুধু পদ্মা সেতু নয়,বহু কিছুই পিছিয়ে যাবে।থেকে যাবে সামনে চলা।সরকারে পক্ষ থেকে এখন বলা হচ্ছে,বিরোধী দলের সাথে আর কোন আলোচনা নয়। এখন ১৮ দলের বিরোধী দলকে আর বিরোধী দল বলতেও রাজী নয়।এখন বিরোধী দলের আসনে বসিয়েছে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে।শেখ হাসিনা ১৮ দলীয় জোটের নেত্রীকে নসিহত করেছেন,আগামী ৫ বছরের জন্য ধৈয্য ধরতে হবে। অর্থাৎ চুরি-ডাকাতিতে বাকশালীদের নতুন করে আরো ৫টি বছরদিতে হবে। দেশজুড়া এ ডাকাতিতে শেখ হাসিনা যে বিদেশী ডাকাতদেরও ডেকে আনবে সে আলামতটিও প্রকট। ভারত এমন লুন্ঠনে দু’পায়ে খাড়া। যেমনটি বাংলাদেশে ভূমিতে তাদেরকে একাত্তরে দেখা গেছে। তাছাড়া যে দেশ দুর্বৃত্তিতে বিশ্বের ২ শত রাষ্ট্রকে হারিয়ে ৫বার প্রথম হয় সে দেশটি নিজেও যে এমন ডাকাতদের স্বর্গ ভূমি –তাতেও কি সন্দেহ আছে? এমন ডাকাতদের উপস্থিতি যেমন রাজনীতির ময়দানে,তেমনি প্রশাসন, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীতেও।

বাকশালী ডাকাতদের ডাকাতির লক্ষ্যটি স্রেফ গ্রামীন মানুষের অর্থভান্ডার নয়। ডাকাতির টার্গেট শুধু দেশী ব্যাংক,রাজস্ব-ভান্ডার,সরকারি টেন্ডার,সরকারি ভূমি,বিদেশী অনুদানের অর্থও নয়।আধুনিক ডাকাতদের ডাকাতির সবচেয়ে বড় টার্গেটটি হলো জনগণের ভোট।ভোট ডাকাতিতে সফল হলে ডাকাতদের হাতে অধিকৃত হয়ে যায় সমগ্র রাষ্ট্র।তখন রাষ্ট্রীয় সম্পদের উপর ডাকাতি সহজ হয়ে যায়।তখন সরকারি ডাকাত দলের উপর বন্ধ হয়ে যায় পুলিশ বাহিনী ও আদালতের উৎপাত। মঙ্গোলিয়ার ট্রাইবাল ডাকাতগণ চেঙ্গিজ খান ও হালাকু খানের নেতৃত্বে দুর্ধর্ষ ডাকাতদল গড়ে তুলেছিল।দেশের পর দেশ তারা দখল করেছিল।দখল শেষে ব্যাপক লুন্ঠনও করেছিল।সমরখন্দ,বোখারা,বাগদাদ,নেশাপুরের ন্যায় সমৃদ্ধ নগরগুলিকে শুধু তারা লুন্ঠনই করেনি,ধ্বংসও করেছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরাও এদেশে ১৯০ বছর যাবত ডাকাতি করেছে। তাদের ডাকাতি বাংলাদেশে দুইবার দুর্ভিক্ষ ও সে দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ডেকে এনেছে। দুর্ভিক্ষ ডেকে এনেছে মুজিব আমলের ডাকাতিও।বাংলাদেশের এসব ডাকাতগণও এখন আর গ্রাম্য ডাকাতদল গড়ে না। বরং গড়ে রাজনৈতিক ডাকাত দল।ডাকাতিতে তাদের প্রবল আগ্রহটি যেমন মুজিব আমলে প্রমাণিত হয়েছে,তেমনি এরশাদ ও হাসিনার আমলেও।

সন্ত্রাস ও লুন্ঠনের বাইরে ডাকাতদলের কাছে অন্যকোন এজেন্ডা থাকে না। সন্ত্রাস ও দেশলুন্ঠন ছাড়া হাসিনারও কোন বাড়তি এজেন্ডা নাই। নির্বাচনে সকল দল ও সকল জনগণের অংশ্রগহণ বাড়াতে হাসিনা সরকারের এজন্যই কোন আগ্রহ ছিল না। জনগণ যে ভোটদানে অংশ নিল না -তা নিয়ে শেখ হাসিনা ও তার দলীয় নেতাদের এ জন্যই কোন আফসোস নাই। বরং প্রচন্ড উল্লাস জাল বিজয় নিয়ে। বরং শেখ হাসিনা ৬/১/১৪ তারিখে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন,“জনগণ যতটুকু ভোট দিয়েছে এতেই আমরা সন্তুষ্ট।” সফল ডাকাতি শেষে উল্লাস করাই ডাকাতদের স্বভাব।ডাকাতগণ তখন মনযোগ বাড়ায় ডাকাতিলদ্ধ সম্পদ ধরে রাখার কাজে। তেমনি হাসিনা সরকারেরও এজেন্ডা,ভোট ডাকাতির মাধ্যমে অর্জিত বিজয়কে যে কোন রূপে ধরে রাখা। ফলে কদর বেড়েছে যৌথ বাহিনীর। ক্ষমতায় টিকে থাকাকে বৈধ করতে তামাশার এ নির্বাচনকেও তারা বৈধ বলছে।কথা হলো ডাকাতেরাও কি কোন কালেও তাদের ডাকাতিকে অবৈধ বলে? ফেরত দেয় কি ডাকাতির মাল? তাছাড়া এ ভোট ডাকাতিকে মেনে নিলে দেশের উপর হাসিনার লাগাতর ডাকাতিকেও বৈধতা দিতে হবে। আর সেটি হলে দেশ যে শুধু মুজিবামলের ন্যায় তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি হবে তা নয়,পুরা দেশই হয়তো হারিয়ে যাবে।

 

লক্ষ্য ইসলাম নির্মূল

বাংলাদেশ আজ যে ভয়ানক বিপর্যয় -সেটি হঠাৎ আসেনি। বরং সৃষ্ঠি করা হয়েছে একটি গ্রান্ড পরিকল্পনার অংশ রূপে। মূল পরিকল্পনাকারি এখানে বাকশালী জোগালদারেরা নয়, বরং সেটি ভারত। লক্ষ্য,বাংলাদেশের মেরুদন্ড চূর্ণ করা। লক্ষ্য, দক্ষিণ এশিয়ার পূর্ব প্রান্তে মুসলিম শক্তির উত্থাণকে চিরতরে প্রতিহত করা। একাজে একাত্তরের ন্যায় আওয়মী লীগ এবারও একা নয়। একাত্তরে পাকিস্তান ভেঙ্গে গেছে। কিন্তু ১৭টি কোটি বাঙালী মুসলমানের মাঝে জাগরণের সে সুপ্তশক্তি এখনও রয়ে গেছে। এতেই ইসলামের শত্রু শক্তির মাঝে প্রচন্ড দুর্ভাবনা। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার বুকে বাঙালী মুসলমানরাই যে সবচেয়ে বৃহৎ জনশক্তি সেটি ইসলামের শত্রুপক্ষ ভূলে যায় কি করে? এ শক্তিই তো ১৯৪৭সালে পাকিস্তানের সৃষ্টিকে অনিবার্য করেছিল। বীজ থাকলে তো চারাই গজাবেই। পাকিস্তান ভেঙ্গে গেলেও ইসলামের বীজ তো রয়ে গেছে। তাই তারা এবার বাংলার বুক থেকে সে বীজ নির্মূলে হাত দিয়েছে। তাদের প্রচন্ড ভয়, সে বীজ থেকে না জানি ভারতের পূর্ব প্রান্তে আরেক পাকিস্তানের জন্ম হয়।তাই গুরুত্ব পেয়েছে তাফসির মহফিল বন্ধ ও  জিহাদ বিষয়ক বই বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি আলেমদের ফাঁসিতে ঝুলানোর কাজ। তাই সে প্রকল্পের অংশ রূপেই টিভি, পত্র-পত্রিকা, ব্লগ, ফেসবুক যোগে লাগাতর হামলা হচ্ছে আল্লাহতায়ালা, তার রাসূল পাক (সাঃ) ও ইসলামের বিরুদ্ধে। ব্রিটিশ আমলেও ইসলামের বিরুদ্ধে এতবড় ষড়যন্ত্র হয়নি।

নির্বাচনের নামে ভোট ডাকাতি হলে তার পরিণতি যে কি হয় -সেটি কি হাসিনা জানতো না? শুধু হাসিনা নয়, তার প্রভু ভারতও সেটি জানতো। কিন্তু তাদের এজেন্ডা তো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশকে একটি মহাবিপর্যয় উপহার দেয়া। গ্রামবাসীর ঘরে আগুন লাগাতে ডাকাতদের মনে দুঃখ জাগে না। ডাকাতদের হত্যায় যে গ্রামবাসী ধেয়ে আসে তাদের ঘরবাড়ির প্রতি ডাকাতদের দরদ থাকার কথা নয়। তাদের ঘরে আগুণ লাগাতে ডাকাতেরা বরং আনন্দিত হয়। শেখ হাসিনার অজানা নয় যে, সমগ্র বাংলাদেশ আজ  তার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে উত্তাল। সে নিজে দেখেছে তার স্বৈরাচারি পিতা ও তার পরিবারের প্রতি দেশবাসীর আচরণ। দেখেছে স্বৈরাচারি শাসনের নির্মূল নিয়ে সে সময় দেশবাসীর উল্লাস। এমন কি আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মালেক উকিলও মুজিবের মৃত্যুতে বলেছিল “ফিরাউনের পতন হয়েছে।” ফলে দেশ ও দেশবাসীর জানমাল, শিল্প, বানিজ্য,অর্থনীতি ও শিক্ষা নিয়ে শেখ হাসিনার দরদ থাকবে এবং ধ্বংসের হাত থেকে সেগুলি বাঁচাতে তার সরকার এগিয়ে আসবে সেটি কি আশা করা যায়? নিজ দলের ভবিষ্যৎ নিয়েও কি তার ভাবনা আছে?  ফলে দেশের বর্তমান সংকটের চেয়েও জটিল সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান বিশ্বের অন্য কোন দেশে সম্ভব হলেও বাংলাদেশে সেটি যে অসম্ভব তা নিয়ে কি কোন সন্দেহ আছে? শেখ হাসিনা চাইলেও ভারত সেটি হতে দিবে না। সেরূপ একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান ভারত একাত্তরেও হতে দেয়নি। ২০১৩ বা ২০১৪ সালেও নয়। কারণ সেটি হলে বাংলাদেশের মেরুদন্ড ভাঙ্গার কাজটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাতে অপূর্ণ থেকে যাবে ভারতের ইসলাম-বিনাশী এজেন্ডা। বাংলাদেশের চলমান সংকট নিয়ে ভারত তাই আনন্দে ডুগডুগি বাজাচ্ছে।একাত্তরের পর ভারত ছিনিয়ে নিয়েছিল পাট ও  চায়ের বাজার। ছিনিয়ে নিয়েছিল বেরুবাড়ি এবং পদ্মা ও তিস্তার পানি। ছিনিয়ে নিয়েছিল হাজার হাজার কোটি টাকার পাকিস্তানী অস্ত্র। এবার ছিনিয়ে নিবে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারের গার্মেন্টস ও চিংড়ি মাছের বাজার।ছিনিয়ে নিবে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি। পুরাপুরি দখলে নিবে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার। সে সাথে ছিনিয়ে নিবে ইসলামের মৌল চেতনাও। ভারত বাংলাদেশকে বানাতে চায় আরেকটি কাশ্মীর। আরেকটি সিকিম। কুমিরের কাজ তো একের পর এক শিকার ধরা। শিকার ধরার সে রাজনীতিই হলো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতি ভারতের বিদেশ নীতি। ভারত ইতিমধ্যেই কাশ্মীর,জুনাগড়,মানভাদর, হায়দারাবাদ,সিকিম পেটে পুরেছে। এখন চায় নতুন শিকার। সে নতুন শিকারটি  যে বাংলাদেশ -তা নিয়ে কি আদৌ কোন সন্দেহ আছে?

 

লাগাতর হোক জিহাদ

এমুহৃর্তে জনগণের দায়ভার বিশাল। ইসলামের শত্রুপক্ষটি সব সময়ই প্রতিবেশী ভারতে জামাই আদর পাবে। যেমনটি একাত্তরে পেয়েছিল। সে আদর হাসিনা ও তার পরিবার এখনও পায়। কিন্তু বাঙালী মুসলমানদের দেশতো মাত্র এক খানই। তাদের পালাবার স্থান নাই। আর শত্রুর হামলার মুখে পৃষ্ঠ প্রদর্শণ করা বা পালানো তো কবিরা গুনাহ। সে কবিরা গুনাহ তো জাহান্নামে নেয়। বাংলার প্রতিটি মুসলমানের উপর মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে বড় আমানত হলো এই বঙ্গভূমি। এ ভূমিতে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা তো নিয়োগপ্রাপ্ত খলিফা। মুসলমানের ধর্ম তো অর্পিত আমানতের খেয়ানত নয়। সে কাজ তো মুনাফিকের। মুসলমানের দায়িত্ব হলো আল্লাহর ভূমিতে আল্লাহর দ্বীনের পূর্ণ বিজয়। কোন দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলিম অথচ সে দেশে শরিয়ত থাকবে না সেটি কি ভাবা যায়? সাহাবায়ে কেরামদের জীবনে একটি দিনও কি শরিয়তের আইনের প্রতিষ্ঠা ছাড়া অতিবাহিত হয়েছে? একাজে মুসলমান কি কখনোই আপোষ করে? তবে সে লক্ষ্যপূরণে প্রাথমিক দায়িত্ব হলো,অধিকৃত ভূমির উপর থেকে দুর্বৃত্তদের দখলদারি নির্মূল। মুসলিম ভূমিতে ইসলামের শত্রু পক্ষের বিজয় মেনে নিলে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষে থেকে অর্পিত আমানতের খেয়ানত হয়।আর আমানতের খেয়ানত যা অনিবার্য করে তা তো মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিশ্রুত আযাব। সে খেয়ানতের কারণেই বনী ইসরাইলের উপর প্রচন্ড আযাব এসেছিল। তাই মুসলিম ভূমি যেখানেই ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে অধিকৃত,জিহাদ সেখানে অনিবার্য হয়ে উঠে। এ জিহাদে কোন কাজা নাই। তাই যে অধিকৃত মুসলিম দেশে জিহাদ নেই সেদেশের মুসলমানগণ যে ইবাদতে ব্যর্থ হচ্ছে তা নিয়ে কি সন্দেহ থাকে? এমন ব্যর্থতা কি বাংলাদেশের মুসলমানদের কম?

শত্রুশক্তির হাত থেকে দেশরক্ষার দায়িত্বটি প্রতিটি নাগরিকের। এ দায়িত্ব স্রেফ কিছু ইসলামি সংগঠনের নেতাকর্মীর নয়।এ দায়িত্ব সবার। বাংলাদেশ আমাদেরকে কি দিয়েছে সেটি বড় কথা নয়।আমরা এদেশকে শত্রুশক্তির হাত থেকে বাঁচাতে ও আল্লাহর শরিয়ত প্রতিষ্ঠার কাজে কি করেছি সেটিই মূল। মহান আল্লাহর কাছে তা নিয়েই বিচার হবে।ইসলামের শত্রুপক্ষ আজ একতাবদ্ধ। ইসলামের নির্মূলে তাদের এজেন্ডা ও অঙ্গিকার সুস্পষ্ট। তাদের প্রস্তুতিও বিশাল। একতাবদ্ধ হওয়াটি তাদের কাছে রাজনীতির  প্রধান কৌশল। কিন্তু মুসলমানের কাছে সেটি ফরজ ইবাদত। এ ফরজ পালিত না হলে কঠিন গুনাহ হয়। তাদের এ লড়াই স্রেফ ক্ষমতা দখলের রাজনীতি নয়, বরং পবিত্র জিহাদ।

আওয়ামী বাকশালীরা যে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা রুখতে চায় তা নিয়ে কি কারো কোনরূপ সন্দেহ আছে? ফলে তারা যে ইসলামের শত্রুপক্ষ তা নিয়েও কি সামান্যতম সন্দেহ থাকে? আর এমন শত্রুশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো তো শতকরা শতভাগ জিহাদ।শরিয়তের এমন আত্মস্বীকৃত শত্রুদের মুসলিম রাষ্ট্রের শাসক রূপে একদিনের জন্য মেনে নেয়া ও তাদের শাসনকে দৃর্ঘায়ীত করতে রাজস্ব দেয়া তো কবীরা গুনাহ। ইসলামের এ মৌলিক কথা বুঝতে কি বিরাট আলেম হওয়ার প্রয়োজন পড়ে? মুসলিম ভূমি ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে এরূপ অধিকৃত হওয়ার পরও যদি জিহাদ ফরজ না হয় তবে জিহাদ আর কবে ফরজ হবে? জিহাদের হুকুম কি তবে কোরআনের পৃষ্ঠাতে বন্দী থাকবে? আল্লাহর পথে জিহাদ মু’মিনের জীবনে দুটি পরিণতি দেয়। এক, বিজয়। দু্‌ই, শাহাদত। এছাড়া তৃতীয় কোন সম্ভাবনা আছে কি? আর এ দুটি পরিণতির কোনটি মু’মিনের কাছে অপছন্দের হতে পারে? যারা জিহাদ বিমুখ তাদের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহতায়ালার হুশিয়ারিঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হলো যে যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে অভিযানে বের হতে বলা হয় তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে ভূতলে ঝুঁকে পড়? তোমরা কি আখিরাতের বদলে পার্থিব জীবনে পরিতুষ্ট? আখিরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগের উপকরণ তো অকিঞ্চিৎকর।” –(সুরা তাওবা আয়াত ৩৮)।

শাহদত দেয় মু’মিনে জীবনে সবচেয়ে বড় বিজয়। দেয় মৃত্যুহীন জীবন। দেয় কবরের আযাব ও রোয হাশরের বিচার থেকে মুক্তি। দেয় সরাসরি জান্নাতলাভ। মুসলমানগণ যখন একতাবদ্ধ হয়ে জিহাদে নামে তখন সে ময়দানে তারা একাকী থাকে না। তাদের সাথে থাকেন মহাশক্তিমান মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর অপরাজেয় ফেরশতা বাহিনী। বিশ্বের কোন শক্তির কি সামর্থ আছে সে শক্তিকে পরাজিত করার? ফলে বিজয় তখন অনিবার্য হয়ে উঠে। মুসলমানগণ যে আজ দেশে দেশে পরাজিত তার কারণ, সে জিহাদে তারা নিজেদের জানমালের বিনিয়োগ বাড়ায়নি। মসজিদে নামাযীদের ভিড় বাড়লেও জিহাদের ময়দান ফাঁকা। অথচ নবীজী (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের আমলে ঘরবাড়ি ছেড়ে শত শত মাইল দূরের জিহাদের ময়দানে হাজির হতেন। আর আজ জিহাদের ময়দান ঘরের সামনে এসে হাজির হলেও তাতে লোকসমাগম নাই। অথচ মু’মিনের ঈমানের সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটি হয় জিহাদের ময়দানে, জায়নামাজে নয়।পবিত্র কোরআনে মহান  আল্লাহতায়ালা সে চরম ঘোষণাটি দিয়েছেন এভাবে, “তোমরা কি মনে করে নিয়েছো যে তোমরা (এমনিতেই) জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ তোমাদের কে জিহাদ করেছে আর কে ধৈর্য ধরেছে সেটি এখনো প্রকাশ করেননি?” –সুরা আল ইমরান আয়াত ১৪২)।

 

জিহাদঃ এক অনিবার্য পরীক্ষা

চাকুরি জীবনের যে কোন বিশাল প্রমোশনের জন্য অনিবার্য হয় পরীক্ষায় পাশ করা। আর মানবজীবনের সবচেয়ে বড় প্রমোশন তো হলো জান্নাতলাভ। সে বিশাল প্রমোশন কি মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারিত পরীক্ষাটিতে কৃতকার্য হওয়া ছাড়া সম্ভব? আর সে পরীক্ষাটি যে জিহাদের ময়দানে হয় সেটিও কি কোন গোপন? কিন্তু পরীক্ষার সে ময়দানে আজকের মুসলমানদের উপস্থিতি কই? সে পরীক্ষার ময়দানে হাজির হননি এমন কোন সাহাবীকে কি ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যাবে? তাঁরা শুধু হাজিরই হননি, শতকরা ৭০ ভাগের বেশী সাহাবী তো শহীদ হয়ে গেছেন। অথচ আজকের মুসলমানদের শতকরা ৭০ জন দূরে থাক, একজনও কি শাহাদতের মর্যাদা পাচ্ছে? সেটি হলে বাংলাদেশের যে থানায় দুই লাখ মানুষের বববাস সে থানায় ২ হাজার মানুষ শহীদের মর্যাদা পেত। দেশের প্রতি জেলায় এমন জিহাদ শুরু হলে নির্মূল হতো আল্লাহর তাবত শত্রুগণ এবং প্রতিষ্ঠা পেত শরিয়তি বিধান। ১৩০ কোটি মুসলমান তখন বিশ্বশক্তি রূপে প্রতিষ্ঠা পেত।

তাই মুসলমানের দায়িত্ব স্রেফ নামায-রোযা, হজ-যাকাত পালন নয়,বরং জিহাদের কোরআনী হুকুম পালনে আপোষহীন হওয়া। নইলে চলমান লড়াইটি নিছক রাজনীতির সংঘাতই থেকে যাবে, সেটি পবিত্র জিহাদে পরিণত হবে না। রাজনীতির লড়াইয়ে ক্ষমতার রদবদল হয়, কিন্তু তাতে আল্লাহর দ্বীনের বিজয় আসে না।সরকারের পতন হলেও তাতে শরিয়তেরও প্রতিষ্ঠা ঘটে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অতীতে বহু রক্ত ঝরেছে। বহুবার সরকারেরও পতন ঘটেছে। কিন্তু তাতে ইসলামের বিজয় আসেনি। সেটির কারণ, রাজনীতির লড়াই স্রেফ ক্ষমতা দখলের হিংস্র যুদ্ধ রূপেই থেকে গেছে। রাজনীতির সে যুদ্ধগুলো জিহাদে রূপ নেয়নি। ফলে তাতে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সাহায্যও জুটেনি। ২০১৪সালের ৫ই জানুয়ারীতে বাংলাদেশে তো শুধু ভোট ডাকাতি হয়েছে। কিন্তু ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও দেশ বাঁচানোর এ পবিত্র জিহাদে আত্মনিয়োগ না বাড়ালে আগামীতে সমগ্র দেশই ডাকাতি হয়ে যাবে। তাতে ইসলাম ধ্বংসের কাজ আরো ব্যাপকতর হবে। তখন ঈমান নিয়ে বাঁচা ও পূর্ণ ইসলাম পালনই বাংলাদেশে অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাছাড়া মহান আল্লাহতায়ালার কাছে জিহাদবিমুখ ব্যর্থ বান্দা রূপে ভয়াবহ আযাব বাড়বে আখেরাতেও। ১১/০১/২০১৫

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *