বৃহৎ ভূগোলের গুরুত্ব ও সেক্যুলারিস্টদের গাদ্দারী

বৃহৎ ভূগোলের গুরুত্ব ও সেক্যুলারিস্টদের গাদ্দারী

ফিরোজ মাহবুব কামাল

সামান্য একটি প্লেট ভাঙ্গলেও কষ্ট লাগে। একমাত্র পাগল ও শিশুরাই তা নিয়ে উৎফুল্ল হতে পারে। সুতরাং কেমন লাগে কোন একটি মুসলিম দেশের ভূগোল ভাঙ্গলে? যে কোন জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তার ভূ-রাজনৈতিক ভূগোল। দেশের ভূগোল এক গজ বাড়াতে যুদ্ধ করতে হয়। বিপুল অর্থ, শ্রম ও রক্তের বিনিয়োগ করতে হয়। মসজিদ-মাদ্রাসা বিধ্বস্ত হলে এতো ক্ষতি হয় না, যে ভয়ানক ক্ষতি হয় ভূগোল ভেঙ্গে গেলে হয়। গৃহ দেয় পরিবারের নিরাপত্তা; সে গৃহটি যতই মজবুত ও বৃহৎ হয় ততই বাড়ে নিরাপত্তা। আর দেশের ভূগোল দেয় জাতির স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা। তাই ভূগোল যতই বাড়ে, দেশ ততই শক্তিশালী হয়। বাড়ে বিশ্বমাঝে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সামর্থ্য। ভূগোল বিভক্ত ও ছোট হলে দেশ দুর্বল হয়। তখন নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও ইজ্জত  হারায় সে ক্ষুদ্র ভূগোলে বসবাসকারী জনগণ।

মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বেশী অর্থ ব্যয় ও রক্ত ব্যয় হয়েছে দেশের ভূগোলকে ক্ষুদ্রতর হওয়া থেকে বাঁচাতে। ইসলামে হারাম ও কবিরা গুনাহ হলো মুসলিম ভূমির ভূগোলকে ছোট করা। এটি মুসলিমদের দুর্বল করার ষড়যন্ত্র। এমন নাশকতার কাজ কাফেরদের হতে পারে, কখনোই মুসলিমদের নয়। উমাইয়া, আব্বাসীয় ও উসমানিয়া খেলাফত দীর্ঘ কাল অখণ্ড ভূগোল নিয়ে বেঁচেছে জনগণের মাঝে সে হারাম কাজে আগ্রহ না থাকায়। অথচ ১৯৭১ সালে লক্ষাধিক বাঙালি মুসলিম ভারতীয় কাফেরদের সাথে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তান ভাঙ্গার সে হারাম কাজটিই করেছে। এভাবে শয়তান ও তার পৌত্তলিক খলিফাদের মুখে প্রচুর হাঁসি ফুটিয়েছে। এটি ছিল ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থের সাথে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গাদ্দারী। ভারত আজ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক শক্তি; দেশটির এ শক্তিবৃদ্ধির কারণ একাত্তরের বিজয়। আর ভারতের ঘরে সে বিশাল বিজয় তুলে দিয়েছিল বাঙালি ফ্যাসিস্ট, ক্যুলারিস্ট ও বামপন্থীরা। ইসলাম বিরোধী ও ভারতসেবী এই বাঙালিগণ বাংলাদেশের কল্যাণে কিছু করতে না পারলেও ভারতীয় হিন্দুদের কল্যাণে বিশাল কিছু করেছে -যা ভারতীয় হিন্দুরা হাজার বছরেও করেনি। বস্তুত ভারতীয় হিন্দুদের সমগ্র ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিজয়টি তুলে দিয়েছে এই বাঙালিরাই।

যে কোন দেশের ন্যায় পাকিস্তানেও নানাবিধ সমস্যা ছিল; সমস্যা ছিল গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা নিয়ে। সমস্যা ছিল শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে। সমস্যা ছিল সুবিচারের প্রতিষ্ঠা নিয়ে। কিন্তু সে সমস্যাগুলির সমাধানের পথটি কখনোই দেশকে খণ্ডিত করার ন্যায় হারাম কর্মে নিহিত ছিল না। কিন্তু ইসলাম থেকে দূরে সরার কারণে বাঙালি ফ্যাসিস্ট, ক্যুলারিস্ট ও বামপন্থী কাপালিকগণ সে হারাম পথেই চলেছে। বাংলার ভূমিতে ডেকে এনেছে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে। তাতে নির্দয় ভাবে লুণ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তারা গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে এক দলীয় ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। সোনার বাংলা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও ডেকে এনেছে ভয়ানক দুর্ভিক্ষ এবং হ্ত্যা করেছে ২০ হাজার বাংলাদেশীদের।  

মহান নবীজী (সা:) বৃহৎ ভূগোলের গুরুত্ব বুঝতেন। কারণ তিনি যেমন রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন, তেমনি ছিলেন সামরিক ও রাজনৈতিক স্ট্রাটেজিস্ট তথা কৌশলবিদ। বৃহৎ ভূগোলের বিকল্প বৃহৎ ভূগোলই। তাই ভূগোল বাড়াতে তিনি সাহাবীদের রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী দখলের অসিহত করে যান। ভূগোলের গুরুত্ব সাহাবাগণও বুঝতেন; তাই তারা বিপুল রক্তব্যয়ে লাগাতর মূসলিম রাষ্ট্রের ভূগোল বাড়িয়েছেন। পরাজিত করেছেন তৎকালীন বিশ্বের দুই বিশ্বশক্তি রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্যকে। পরিণত হয়েছেন সুপার পাওয়ারে। সে ভূগোল বাড়ানোর গরজে তুর্কি বীর ইখতিয়ার মহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী বহু হাজার মাইল পাড়ী দিয়ে বাংলার বুকে ছুটে এসেছিলেন।

বৃহৎ ভূগোলের গুরুত্ব বুঝতেন শহীদ সোহরোওয়ার্দী, খাজা নাযিমুদ্দীন, নূরুল আমীন, মৌলভী তমিজুদ্দীন খান ও মাওলানা আকরম খাঁর মত মুসলিম লীগ নেতারা। তারা জানতেন শুধু পূর্ব বাংলা নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়লে সে স্বাধীনতা বাঁচানো যাবে না। কারণ স্বাধীনতা বাঁচানোর খরচটি বিশাল। সে খরচ জুগানোর সামর্থ্য ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের জনগণের থাকেনা। থাকেনা বলেই স্বাধীনতা বাঁচেনি নিজামের হায়দারাবাদের। একই কারণে স্বাধীনতা বাঁচেনি গোয়া, মানভাদড় ও কাশ্মীরের। এজন্যই বাংলার প্রজ্ঞাবান মুসলিম নেতারা ১৯৪৭’য়ে পূর্ব বাংলার সাথে পাঞ্জাব, সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধু, বেলুচিস্তান নিয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান গড়েন। মহম্মদ গোরির হাতে দিল্লি বিজয়ের পর এটিই ছিল ভারতীয় মুসলিম ইতিহাসের  সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কীর্তি। কিন্তু ১৯৭১’য়ে সে হুশ শেখ মুজিব ও তার অনুসারীদের ন্যায় ভারতের সেবাদাস বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের ছিল না। স্বার্থান্বেষী এসব সেক্যুলার নেতাগণ মুসলিম উম্মাহর স্বাধীনতা ও কল্যাণ নিয়ে ভাবেনি। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার নেশা তাদের পাগলে পরিণত করেছিল।  এবং সে নেশা পূরণের সুযোগ নিতে তারা ভারতের ক্রীত দাসে পরিণত হয়েছে।

মুসলিম দেশের ভূগোল বাড়ানো ও সেটি ক্ষুদ্র হওয়া থেকে বাঁচানো মুসলিম জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটি জিহাদ। এমন জিহাদের মুনাফিকদের রুচি থাকে না। ১৯৭১’য়ে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের ভূগোল বাঁচানোর সে পবিত্র দায়িত্ব পালন করতেই রাজাকারগণ অস্ত্র তুলে নেয়। এ কাজটি দেশের আলেম ও ইসলামী দলের নেতাদের কাছে জিহাদ গণ্য হয়। নিজেদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে রাজাকারগণ সেদিন এক প্রবল জোয়ারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। বহু হাজার রাজাকার সে জিহাদে শহীদও হয়েছে। ইসলাম যারা বুঝে –একমাত্র তারাই রাজাকারদের সে ভূমিকাকে বুঝে। বাঙালি মুসলিমের সমগ্র ইতিহাসে তারাই হলো শ্রেষ্ঠ সন্তান। ভারতের দালাল, বাকশালী ফ্যাসিস্ট, নাস্তিক কম্যুনিস্ট ও ধর্মহীন সেক্যুলারিস্টগণ রাজাকারদের বিরুদ্ধে যতই গালিগালাজ করুক না কেন -ঈমানদারগণ চিরকাল তাদের কদর করবে। হাজার বছর পরও বাঙালি মুসলিমের নতুন প্রজন্ম তাদের নিয়ে গর্ব করবে। অপর দিকে বাকশালী ফ্যাসিস্ট, নাস্তিক কম্যুনিস্ট ও ধর্মহীন সেক্যুলারিস্টগণ মুজিবের মূর্তির ন্যায় ইতিহাসের আস্তাকুড়ে গিয়ে পড়বে। ইসলামের শত্রুপক্ষের গালিই রাজাকারদের জন্য শ্রেষ্ঠ অলংকার। তাছাড়া শয়তানী শক্তির গালি খাওয়া তো নবীজী (সা:)’র সূন্নত। মুসলিম দেশের ভূগোল ভাঙ্গার কাজটি ইসলামের শত্রুদের কাজ।  ইসলামের শত্রুগণ সে কাজটাই করেছে ১৯৭১’য়ে। ভারতের পৌত্তলিক কাফেরদের সাথে তখন দেখা গেছে এই বাঙালি কাপালিকদের।

 

৪৮.২. ভারতের বিজয় নিয়ে বাংলাদেশীর উৎসব  

একটি মুসলিম দেশের ভূগোল ভেঁঙ্গে গেল অথচ মনে কোন কষ্টই পেল না -এমন ব্যক্তি নামাজী, রোজাদার ও হাজী হতে পারে, কিন্তু সে প্রকৃত ঈমানদার নয়। ঈমান মহব্বত গড়ে শুধু মুসলিম ওদেশের মানচিত্রের সাথেও। এমন একটি ঈমানী গুণ থাকার করণেই ১৯৭১’য়ে যখন পাকিস্তান  ভেঁঙ্গে যায়, তখন বিশ্বের তাবৎ মুসলিমগণ মনে কষ্ট পেয়েছে। বহু ভারতীয় ও কাশ্মীরী মুসলিম সেদিন কেঁদেছে। অথচ পাকিস্তান ভাঙ্গার আনন্দে ভারতের কাফেরদের সাথে নিয়ে বাঙালি সেক্যুলারিস্টরা ১৯৭১’য়ে উৎসব করেছে। এখনো প্রতি বছর ১৬ই ডিসেম্বর এলে তারা সেটি করে। কাফেরদে সাথে মিলে এরূপ উৎসব করা কি ঈমানের লক্ষণ? এটি তো ইসলাম থেকে বিচ্যুতি। হাজার হাজার মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ে কি এ বিচ্যুতি ঢাকা যায়? সমগ্র মুসলিম ইতিহাসে এটি এক নতুন রাজনৈতিক বিদ’আত বা সংযোজন। এর আগে মুসলিমগণ কখনোই কাফেরদের সাথে মিলে একত্রে এরূপ বিজয় উৎসব করেনি। কারণ, কাফেরদের যাতে বিজয়, মুসলিমদের তাতে পরাজয় ও বিপর্যয়। ঠিক তেমনি মুসলিমদের যাতে বিজয় তাতে কাফেরদের পরাজয় ও বিষাদ। ফলে একত্রে উৎসব হয় কি করে? এটি নিতান্তই সেক্যুলারিস্ট বাঙালি কাপালিকদের নতুন আবিস্কার।

 

৩. বাঙালির ভারতসেবা

বাংলাদেশে যারা ভারতের গোলামীকে প্রতিষ্টা দিল, যারা মুজিবের মূর্তি গড়লো, মূর্তিপূজা যাদের কাছে সংস্কৃতি রূপে গৃহিত হলো এবং ইসলামের শরিয়তের প্রতিষ্টার বিরোধিতা যাদের রাজনীতি -তারা কি কখনো মুসলিমের ইজ্জত ও নিরাপত্তা নিয়ে ভাবে? তারা বরং ভাবে ভারতের ন্যায় কাফের শক্তির নিরাপত্তা নিয়ে। এরাই একাত্তরের ভারতের বিজয় বাড়াতে যুদ্ধ করেছে। ভারতের নিরাপত্তা বাড়াতে এরাই বাংলাদেশের ভীতর দিয়ে করিডোর দেয়। নিজেদের বন্দরে ভারতের জাহাজ ভিড়বার অনুমতি দেয়। আবরার ফাহাদের ন্যায় যারাই ভারতের বিরুদ্ধে যারাই অআওয়াজ তুলে তাদেরকে এরা হত্যা করে। এরাই হলো তারা যারা ১৯৭১’য়ে চায়নি, পাকিস্তানের ন্যায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশটি বেঁচে থাকুক। তারা বরং ভারতে অস্ত্র কাঁধে নিয়ে যুদ্ধ করেছে ভারতের ঘরে বিজয় তুলে দিতে।

অতীতের অপরাধগুলি পরবর্তীতে ভয়ানক বিপর্যয় ডেকে আনে। আজ বাংলাদেশ যে অবস্থায় পৌঁছেছে সেটি হঠাৎ করে ঘটেনি। সেখানে আসাটি শুরুটি ১৯৭১ থেকেও শুরু হয়নি। বরং শুরু হয়েছে বহু বছর পূর্বথেকেই। ভারতের এজেন্ট রূপে মুজিব আগরতলা ষড়যন্ত্রের কাজটি শুরু করেছিলেন বহু আগে থেকেই। মুজিবের অপরাধের ঘানি বাংলাদেশীদের বহু বছর বইতে হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *