আগ্রাসী শত্রুশক্তির সামনে পর্যাপ্ত সামরিক প্রস্তুতি না থাকাই কবিরা গুনাহ

ফিরোজ মাহবুব কামাল

হারানো দখলদারী ভারত ফিরে পেতে চায়

যে জনপদে বাঘ-ভালুক-সিংহের ন্যায় হিংস্র জন্তুর বাস, সেখানে যারা বসবাস করে তাদের জন্য অপরিহার্য হলো, থাকতে হয় হিংস্র পশুদের হত্যা বা সেগুলির তাড়ানোর সর্বাত্মক প্রস্তুতি। নইলে পশুর পেটে যেতে হয়। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকাটি তাই বুদ্ধিহীনতা। শুধু দোয়া-দরুদে সেখানে জীবন বাঁচে না। ভারতের পাশে বসবাসের বিপদটি বাঘ-ভালুকের পাশে বসবাসের চেয়েও বিপদজনক। হিংস্র বাঘ-ভালুক আমাদের স্বাধীনতা, ধর্ম, অর্থনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতির শত্রু নয়। কিন্তু সেসবের শত্রু হলো আগ্রাসী ভারত। ভারতের ঘোষিত এজেন্ডাই হলো অখণ্ড ভারত নির্মাণ, ফলে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বই সে লক্ষ্য অর্জনে বড় বাধা। তাই তাদের কাছে দেশটি অসহ্য। একাত্তরে ভারত যুদ্ধ করেছে দুটি কারণে। এক). শত্রু দেশ পাকিস্তানকে খণ্ডিত করতে; দুই). বাংলাদেশ নামক অধিকৃত এক কলোনী নির্মাণে। পাকিস্তানের ন্যায় বাংলাদেশও একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হোক -সেটি ভারত কখনোই চায়নি। একাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশ হলো সে ভারতীয় নীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ।

ভারতে সরকারের পরিবর্তন হয়। কিন্তু বাংলাদেশকে নিয়ে দেশটির নীতির পরিবর্তন হয় না। ফলে পূর্বে কংগ্রস সরকারের যে নীতি ছিল, এখন সে অভিন্ন নীতি বিজিপি সরকারেরও। ভারত চায়, বাংলাদেশ বাঁচবে ভারতের একটি কলোনীর রূপে। চায়, দেশটিতে গণতন্ত্রের স্থান হবে কবরে -যেমন হয়েছিল মুজিব, এরশাদ ও হাসিনার শাসনামলে।  দেশটি চায়, যারা স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচতে চায় তাদের স্থান হবে জেল, আয়না ঘর বা ফাঁসির মঞ্চে। মূর্তি নির্মাণ ও মূর্তিপূজা হবে বাংলাদেশীদের সংস্কৃতি। মূর্তি শুধু মন্দিরে থাকবে না, থাকবে প্রতিটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। শরিয়তের কথা বলাই গণ্য হবে সন্ত্রাসী বা জঙ্গিবাদী কাণ্ড রূপে। পশ্চিম বাংলা, বিহার ও আসামের উপর দিয়ে যেমন ভারতীয় রেল ও বাস চলে, বাংলাদেশেও ভারতীয় রেল ও বাসের থাকতে হবে অনুরূপ সুবিধা। ভারতীয় পণ্য পাবে ভারতের যে কোন রাজ্যের ন্যায় পাবে  একচ্ছত্র বাজার। কলকাতা বন্দরে ভারতের যে অবাধ প্রবেশ, সেরূপ প্রবেশের অধিকার থাকতে হবে বাংলাদেশের বন্দরগুলিতেও। হাসিনা ভারতকে দিয়েছিল সেসব অবাধ সুবিধা, বিনময়ে পেয়েছিল ক্ষমতায় থাকায় অনুমতি। স্বাধীনতার নামে এটিই ছিল একাত্তরের অর্জন।  

২০২৪’য়ের আগস্ট বিপ্লবের পর বাঙালি মুসলিমদের ১৯৪৭’য়ে অর্জিত স্বাধীনতা পুণরায় ফিরে এসেছে। এখন সে স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করার পালা। এখন বাঙালি মুসলিমদের প্রতিক্ষণ বাঁচতে হবে এ নতুন অর্জিত স্বাধীনতা বাঁচানো প্রস্তুতি নিয়ে। বুঝতে হবে, ভারত এক মুহুর্তও বসে নাই। প্রতিক্ষণ চেষ্টায় আছে হারানো দখলদারী আবার ফিরে পেতে। সর্বাত্মক প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিতে হবে স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিয়ে বাঁচার মূল্য দিতে। সে প্রস্তুতি পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকলে দেশ আবার অধিকৃত হবে ভারতের হাতে। মনে রাখতে হবে, শত্রু শুধু সীমান্তের বাইরে নয়, ভিতরেও রয়েছে। হাসিনা পালিয়েছে, কিন্তু তার সৈনিকেরা বিপুল সংখ্যায় দেশে রয়ে গেছে। তারা গর্তে ঢুকেছে; সুযোগের অপেক্ষায় আছে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসার। সর্বাত্মক জিহাদের প্রস্তুতি থাকতে হবে উভয় প্রকার শত্রুর প্রতিরোধে।

 

সর্বাত্মক সামরিক প্রস্তুতি না থাকাটিই কবিরা গুনাহ

শত্রুশক্তি শুধু শক্তিকে ভয় পায়, নীতি কথা বা মানবতা এখানে কাজ দেয়না। শক্তির বিকল্প একমাত্র শক্তি। গাজায় ইসরাইলী গণহত্যা অবিরাম অব্যাহত থাকার কারণ, ফিলিস্তিনীদের শক্তিহীনতা। প্রতিরোধের সামর্থ্য ছিল না বলেই ইরাক অধিকৃত হয়েছে মার্কিনীদের হাতে। প্রতিরোধে সামর্থ্য ছিল না বলেই আমেরিকা থেকে রেড ইন্ডিয়ানদের প্রায় নির্মূল হয়েছে। প্রায় নির্মূল হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাবঅরিজিন এবং নিউজিল্যান্ডের মাওরী জনগণ।

বাংলাদেশের চেয়ে কয়েক গুণ বৃহৎ হলো পূর্ব তুর্কিস্তান। এখন সে দেশটি চীনের অধিকৃত ভূমি। এখন সেটি চীনের সবচেয়ে সমৃদ্ধ জিং জিয়ার প্রদেশ। পূর্ব তুর্কিস্তানের মুসলিমগণ স্বাধীনতা হারিয়েছে স্বাধীনতা রক্ষায় প্রস্তুতি না থাকার কারণে। আয়তনে বাংলাদেশের চেয়ে বৃহৎ হলো কাশ্মীর। দেশটি পরিচিত দুনিয়ার বুকে বেহেশত রূপে। সে অপরূপ দেশটিও এখন নিয়মিত ধর্ষিতা হচ্ছে ভারতীয় কাফিরদের দ্বারা। মুসলিমদের জন্য কাশ্মীর এখন জেলখানা। স্বাধীনতা বাঁচানোর প্রস্তুতি না থাকার এসবই হলো পাওনা শাস্তি। এ বিষয়টি সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালার চেয়ে আর কে ভাল জানেন। তাই শত্রুর গোলাম হওয়া থেকে বাঁচাতে মহান রব মুসলিমদের জন্য শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতই ফরজ করেননি, বরং  ফরজ করেছেন জালেমের বিরুদ্ধে জিহাদ এবং জিহাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়াকে। প্রস্তুতির সে নির্দেশটি এসেছে সুরা আনফালের ৬০ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে,

وَأَعِدُّوا۟ لَهُم مَّا ٱسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍۢ وَمِن رِّبَاطِ ٱلْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِۦ عَدُوَّ ٱللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ

 অর্থ: “তাদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়ে প্রস্তুত হও; শক্ত করে ধরো ঘোড়ার লাগামকে, এবং তা দিয়ে সন্তস্ত্র করো তোমাদের শত্রু ও আল্লাহর শত্রুদের…”।

উপরিউক্ত আয়াতের অর্থ হলো, শত্রুর বিরুদ্ধে সামরিক প্রস্তুতির মাত্রা এতোটাই পর্যাপ্ত হতে হবে -যাতে শত্রু তা দেখে ভয় পায়। যে প্রস্তুতি দেখে শত্রুর মনে ভয় সৃষ্টি হয়না, বুঝতে হবে, প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্র মানা হয়নি মহান আল্লাহ তায়ালার উপরিউক্ত হুকুমটি। তখন বেঈমানী তথা অবাধ্যতা হয় মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে। তাই মুসলিমকে তাই শুধু গৃহ, কৃষিক্ষেত ও কারখানা গড়লে চলে না, সর্বাধুনিক অস্ত্রও জোগার করতে হয়। নবীজী (সা:)’র ঘরে তাই শুধু জায়নামাজ ছিল না, অনেকগুলি অস্ত্রও ছিল। তাই অস্ত্র না রাখা এবং অস্ত্রের প্রশিক্ষণ গ্রহন না রাখাটি কবিরা গুনাহ। কারণ, এতে যেমন অবাধ্যতা হয় মহা আল্লাহ তায়ালার হুকুমের, তেমনি অবাধ্যতা হয় নবীজী (সা:)’র মহান সূন্নতের।  

 

জিহাদে অনাগ্রহই মুনাফিকি

জিহাদই হলো ইসলামের সর্বোচ্চ ইবাদত; স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ইজ্জত নিয়ে বাঁচার জন্য জিহাদের বিকল্প নাই। মানব জীবনের নিরাপত্তার জন্য শুধু বাসস্থান ও পানাহারই যথেষ্ট নয়, অপরিহার্য হলো খুনি জালেমদের হাত থেকে প্রতিরক্ষা। শুধু নিন্দার ভয়ে জালেম তার জুলুম থেকে এবং খুনি তার হত্যার অপরাধ থেকে নিবৃত হয়না। ফিলিস্তিনের গাজাতে দেড় বছরের বেশী কাল ধরে অবিরাম চলছে ইসরাইলী গণহত্যা ও ব্যাপক ধ্বংস যজ্ঞ। ৫৫ হাজারের বেশী ফিলিস্তিনীকে হত্যা করা হয়েছে। শতকরা ৮০ ভাগের বেশী ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে। সারা বিশ্ব নিন্দা জানাচ্ছে। শত শত নগরে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিবাদ মিছিল করছে। কিন্তু তাতে ইসরাইলের বর্বরতা একটুও কমেনি।

নামাজে আযান শুনার পরও যে ব্যক্তি নামাজে খাড়া হয়না সে মুনাফিক। কাজটি যদিও কাফিরের; কিন্তু সে ব্যক্তিটি যেহেতু নিজেকে মুসলিম রূপে দাবী করে, ফলে কাফির বলা যায় না, মুনাফিক বলতে হয়। শত্রুর প্রতিটি আগ্রাসন  ও আগ্রাসনের প্রতিটি হুংকার জিহাদের আযান দেয়। ঈমানদারের উপর ফরজ হলো সে জিহাদের আযানে লাব্বায়েক বলা। নইলে সেও মুনাফিক হয়। আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও তার ৩ শত সহচর নামাজের আযানে লাব্বায়েক বলতো। তারা কুর’আন পাঠ করতো এবং যাকাতও দিত। কিন্তু জিহাদের আযানে তারা সাড়া দেয়নি। ফলে চিহ্নিত হয়েছে মুনাফিক রূপে। তাই মুসলিম উম্মাহকে শুধু নামাজী ও রোাজাদারের জাতিতে পরিণত করলে চলে না, মুজাহিদের জাতিতে পরিণত করতে হয়। সে সচেতনতা সৃষ্টির কাজটি সরকারের এবং আলেমদের।

 

বাংলাদেশ সরকারের যা করণীয়

সরকারকে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিতে হবে দেশের স্বাধীনতার সুরক্ষাকে। দেশের সামরিক বাহিনীকে সর্বাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত করতে হবে। দেশের জন্য এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন খাত নাই। একাত্তরের পরাজয়ের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভূ্‌ট্টো বলেছিলেন, “ঘাস খেয়ে হলেও আমাদের পারমানবিক বোমা বানাতেই হবে।” পাকিস্তান তখন থেকেই প্রায়োরিটি ঠিক করে নিয়েছিল বলেই দেশটি আজ ৫০টির বেশী মুসলিম দেশের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। উপরিউক্ত আয়াতে কাফিরদের সন্ত্রস্ত করার যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, পাকিস্তান সে কুর’আনী হুকুম পালন করেছে। পাকিস্তানের পারমানবকি বোমা, ফাইটার যুদ্ধবিমান, বিমান যোদ্ধাদের রণকৌশল,  দূর পাল্লার মিজাইল, ড্রোন এখন ভারতে মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। অথচ পাকিস্তানের অর্থনীতি বাংলাদেশের চেয়ে দুর্বল। বাংলাদেশ অর্থনীতিকে এখন কাজে লাগাতে হবে স্বাধীনতা বাঁচাতে। স্বাধীনতা না বাঁচলে এ অর্থনীতি কোন কাজ দিবে না। সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে প্রতিটি ছাত্রকে। দেশ রক্ষার জিহাদকে সর্বোচ্চ ইবাদতে পরিণত করতে হবে। গণিত, বিজ্ঞান, ভূগোল ইত্যাদি না জানাতে কেই জাহান্নামে যাবে না। কিন্তু জাহান্নামে যাবে যদি জিহাদের নিয়ত ও প্রস্তুতি না থেকে। তখন দুনিয়াতেও বাঁচতে হবে শত্রু শক্তির গোলামীর আযাব নিয়ে।  

সিরাজুদ্দৌলা, মোগল বাদশাহ ও উসমানিয়া খলিফাদের গুরুতর অপরাধ হলো, তারা বহু প্রাসাদ গড়েছিল, বহু মসজিদও নির্মাণ করেছিল; কিন্তু উন্নত অস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনী গড়েনি। জনগণকেও তারা প্রশিক্ষিত মুজাহিদে পরিণত করতে পারিনি। অথচ সেরূপ প্রস্তুতি না নেয়াটিই হলো কবিরা গুনাহ। এ বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন আলেমগণও সরকারে  নিন্দা করেনি। এবং নিজেরাও  রণাঙ্গণের যুদ্ধে নামেনি। ফলে সিরাজুদ্দৌলার দুর্বল সেনাবাহিনী হেরে গেছে ইস্ট ইন্ডিয়ার কোম্পানির ন্যায় একটি ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের কাছে। এর চেয়ে বড় লজ্জার বিষয় আর কি থাকতে পারে? তাদের অপরাধ, উপরিউক্ত সুরা আনফালে ৬০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা তা পালন করেনি। সে হুকুমের কোন গুরুত্বই দেয়নি। সে অবাধ্যতাটি ছিল কবিরা গুনাহ। সে কবিরা গুনাহর শাস্তি সিরাজুদ্দৌলা পেয়েছে নির্মম ভাবে নিহত হয়ে। আর সে কবিরা গুনাহর শাস্তি বাঙালি মুসলিমগণ পেয়েছে ১৯০ বছর ব্রিটিশের গোলামী করে।

 

একই পুরনো পাপ বাঙালি মুসলিম জীবনে

পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ সেই একই পুরনো পাপে লিপ্ত। যে পাপের কারণে ১৭৫৭ সালে বাংলা তার স্বাধীনতা হারিয়েছিল, সে পাপ নিয়েই বসবাস আজকের বাঙালি মুসলিমদের।  ফলে বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনগণের সেনাবাহিনী আজও অতি দুর্বল। ক্ষুদ্র ইসরাইলের হাতে সে সামরিক বল রয়েছে তার সিকি ভাগও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নাই। সেনাবাহিনীর কাজ হয়েছে জনগণের জমি দখল এবং সেখানে নিজেদের জন্য প্রাসাদ বা বহুতল বিশিষ্ট ফ্লাট নির্মাণ। অথবা সে জমি বা ফ্লাট বহু কোটি টাকায় বিক্রয় করে কানাডায় বা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো। ফলে আর্মি পরিণত হয়েছে ভূমিদস্যু ও প্লটব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে। মার্কিন সেনাবাহিনী, ভারত বা ইসরাইলের সেনাবাহিনী এ কাজ করেনা, তাদের প্রায়োরিটি দেশের প্রতিরক্ষায়। হাসিনার আমলে সেনা বাহিনী কাজ করেছে আয়না ঘরের নির্মাতা ও পরিচালক রূপে। এবং ভাড়ায় খেটেছে জাতিসংঘ বাহিনীতে। অর্থ উপার্জনে যখন এতো মনযোগ, দেশের প্রতিরক্ষায় নজর দেয়ার সময় কোথায়?

সরকারেরও দেশের প্রতিরক্ষার দিকে কোন নজর নাই। সরকার ভাবে পোষক রপ্তানি ও মানব রপ্তানি বাড়ালেই দেশের স্বাধীনতা বাঁচবে। বাংলার জগৎ বিখ্যাত মসলিন ও মখমলের মত বস্ত্র শিল্পও বাংলার স্বাধীনতা বাঁচাতে পারিনি। তখন বাংলা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে অর্থশালী দেশ। বাংলার সে সম্পদ সেদিন সূদুর ইউরোপ থেকে বহু ডাকাতদল ডেকে এনেছিল। দেশ বাঁচাতে হলো শুধু অর্থ সম্পদ নয়, পর্যাপ্ত সামরিক প্রস্তুতি চাই।  সে ভাবনা সেদিনের শাসকদের ছিল না। আজকের শাসক ও রাজনৈতিক নেতাদেরও নাই। রাজনৈতিক নেতাদের একমাত্র ভাবনা কি করে ক্ষমতায় যাওয়া যায়। আর ক্ষমতাসীন শাসকের প্রায়োরিটি কি করে ক্ষমতায় থাকা যায়। দেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি তাদের এজেন্ডা নয়। বরং শক্তিশালী সামরিক বাহিনীকে তারা নিজেদের জন্য শত্রু মনে করে। হাসিনা পলায়ন করেছে। কিন্তু আজ অনেকেই হাসিনার মতই ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ নিয়ে বাঁচতে চায়। কিন্তু সে আত্মসমর্পণে কি স্বাধীনতা বাঁচবে?  

জনগণও জিহাদশূণ্য। তারা ভাবে দেশের প্রতিরক্ষার দায় কেবল সামরিক বাহিনীর। অথচ মুসলিমদের গৌরব কালে প্রতিটি ঈমানদার ছিল যোদ্ধ। প্রতিটি জনপদ ছিল ক্যান্টনমেন্ট। অথচ আজ নামাজ-রোজা, মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ ও সন্তানকে হাফিজ বানানোকে সর্বোচ্চ ইবাদত মনে করা হয়। দেশের সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদগণ জিহাদের ন্যায় ইসলামের সর্বোচ্চ ইবাদতকে সন্ত্রাস বলে -যেমনটি বলে বিধর্মী কাফিরগণ। তাদের অনেকে বলে, ভারতের মত বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে মোকাবেলার সামর্থ্য বাংলাদেশের নাই। ফলে সামরিক ব্যয়কে তারা অপচয় মনে করে। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে ১৮ কোটি মানুষের জনবল কি আফগানিস্তানের সাড়ে তিন কোটির জনবলের  চেয়ে কম? ভারত কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের চেয়ে শক্তিশালী? আফগানগণ যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ন্যায় দুটি বিশ্বশক্তিকে পরাজিত করত পারে, তবে বাংলাদেশীরা কেন ভারতের বিরুদ্ধে পারবো না?

অপর দিকে দেশের আলেমগণ দেশের স্বাধীনতা ও সামরিক শক্তির বৃদ্ধি নিয়ে ভাবেন না। নিজেদের মুজাহিদ রূপে গড়ে তোলাও তাদের এজেন্ডা নয়। বরং তাদের ভাবনা মসজিদের ইমামতি, মোয়াজ্জিনী ও মাদ্রাসার শিক্ষকতা নিয়ে। তারা প্রতিষ্ঠা দিয়েছে নিজেদের ওয়াজের ব্যবসা। ওয়াজ বিক্রয়ই তাদের লাভজনক পেশা। এভাবে তারা ধর্মকে ব্যবসায়ে পরিণত করেছে। অথচ নবীজী (সা:) এবং তাঁর সাহাবাগণ কোথাও ওয়াজ করে অর্থ নিয়েছেন তার নজির নেই।  

প্রশ্ন হলো, আজ যদি ভারত হামলা করে তবে তাদের ক’জন আলেম রণাঙ্গণে যুদ্ধ করার সামর্থ্য রাখে? ক’জনের জানা আছে যুদ্ধকৌশল। তাদের মাঝে সে ভাবনা যেমন নাই, সে প্রস্তুতিও নাই। নবীজী (সা:) যেরূপ ২৭টি যুদ্ধে সশরীরে অংশ নিলেন এবং ৬৯টি যুদ্ধ পরিচালনা করলেন, সে সূন্নত এসব আলেমদের মধ্য বেঁচে নাই। তারা দাড়ি, টুপি, পাগড়ির সূন্নত নিয়ে গর্বিত। তারা কি মনে করে দোয়া-দরুদ, ওয়াজ, দাড়ি, টুপড়ি ও পাগড়ির কারণে মুসলিমগণ বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়েছিল? অর্ধেকের বেশী সাহাবা এ কাজে শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন খোদ নবীজী (সা:)। অথচ ক’জন হুজুরের গায়ে আঁচড় লেগেছে বা তারা পাথর খেয়েছেন ইসলামকে বিজয়ী করার জিহাদে? মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ: “সন্ত্রাস সৃষ্টি করো আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের মনে”। অথচ ঘটছে উল্টোটি। ভারতীয় কাফিরগণ বরং সন্ত্রাস সৃষ্টি করে যাচ্ছে বাংলাদেশী মুসলিমদের মনে। বাংলাদেশের সেক্যুলার রাজনীতিবিদ সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ তায়ালাকে আর কি ভয় করে, তার চেয়ে বেশী ভয় করে ভারতকে!  ৩০/০৫/২০২৫  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *