হিন্দুত্ববাদী ভারত এবং বাঙালি মুসলিমের বিপন্ন মুসলিমত্ব ও স্বাধীনতা (দ্বিতীয় পর্ব)

ফিরোজ মাহবুব কামাল

যুদ্ধ ইসলাম ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে

 ইসলামশূণ্য ভারতমুখী যে সেক্যুলার চেতনা -সেটিই ভারতসেবী বাঙালিদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রূপে পরিচিত। যারা একাত্তরের চেতনা-বিরোধী, তারা যে শুধু মুজিব ও হাসিনা বিরোধী -তা নয়; তারা প্রচণ্ড ভারতবিরোধীও। ভারত ও ভারতসেবীদের কাছে তারা চিত্রিত হচ্ছে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী রূপে। ভারত তাই তাদের নির্মূল করতে চায়। এরাই বুয়েটের দেশপ্রেমিক ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যা করেছিল। ভারতবিরোধীদের নির্মূলের কাজে ভারত শুধু আওয়ামী লীগকেই নয়, বাংলাদেশের আদালত, সেনাবাহিনী, পুলিশি বাহিনী, বিজিবিকেও পার্টনার রূপে পেতে যায়। এদেরকে দিয়ে ভারত ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতসেবী একটি শক্তশালী deep state গড়ে তুলেছে। এ deep state ‘য়ের যুদ্ধ গণতন্ত্র ও ইসলামের বিরুদ্ধে। এরাই দিল্লির ইশারায় ভোটডাকাতি করে হাসিনাকে অতীতে বিজয়ী করছে এবং আবারো বিজয়ী করার পরিকল্পনা করছে। বিচারের নামে এরাই বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মামলা দিয় হয়রানী করছে। এবং তাদের জন্য রাজনীতির অঙ্গণে টিকে থাকা অসম্ভব করেছে।

সেনাবাহিনীকে ইসলাম ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ভারতীয় যুদ্ধের জন্য উপযোগী করতেই ২০০৯ সালে পিলখানায় ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়। এবং পুলিশ, RAB ও বিজিবি’র গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে হিন্দুদের। ভারত বিরোধীদের নির্মূলে ভারতীয় অর্থে প্রতিপালিত সেবাদাসেরা তো ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বানিয়ে সত্তরের দশক থেকেই তৎপর। এরাই গণআদালত বসিয়েছে, জনতার মঞ্চ গড়েছে এবং গণআদালতের মডেলে ঢাকার হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক আদালতের নামে ভারতবিরোধীদের ফাঁসি দানের প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতপন্থী নেতাকর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের মুখে আজও যেরূপ দিবারাত্র নির্মূলের হুংকার –সেটি তো ভারতের অর্থ, প্রশ্রয় ও উস্কানীতে।

১৯৭১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে অধিকৃত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। অধিকৃত এ ভূমিতে স্বাধীনতা পেয়েছে ভারতসেবীরা। সে স্বাধীনতা যেমন চুরিডাকাতি, লুণ্ঠন ও ভোটডাকাতির, তেমনি রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্মূলের। অপর দিকে স্বাধীনতা হারিয়েছে বাংলাদেশের মুসলিম জনগণ। গণতন্ত্রকে পাঠানো হয়েছে কবরে। যেরূপ গণতান্ত্রিক রাজনীতি পাকিস্তান আমলে ছিল এবং যে রাজনীতিতে দল গড়া, লেখালেখী করা, মিটিং-মিছিল করা ও স্বাধীন ভাবে ভোট দেয়ার অধিকার ছিল -বাংলাদেশে তা আজ বিলুপ্ত। প্রতিষ্ঠা পেয়েছে নৃশংস ফ্যাসিবাদ। ফ্যাসিবাদী রাজনীতির মূল কথাই হলো প্রতিপক্ষের নির্মূলের রাজনীতি। এমন নির্মূলের রাজনীতি কি বাংলার বুকে কোন কালেও ছিল? এটি শেখ মুজিব ও তার দল আওয়ামী লীগের লিগ্যাসি। ভারত সে ফ্যাসিবাদকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়। ভারত তাই শেখ হাসিনার ভোটডাকাতিকে সমর্থন দেয়। এবং বিরোধীতা করে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের। কারণ, ভারত জানে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বাংলাদেশে ভারতপন্থী রাজনীতির কবর রচিত হবে। তাতে ভারত শুধু তার বাজারই হারাবে না, নিরাপত্তাও হারাবে। 

 

বাংলাদেশের ভূমিতে ভারতীয় নাশকতা

 বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনগণ একটি বিশাল শক্তি। প্রতিবেশী ভারতের মূল ভয় এখানেই। ভারত কখনোই চায় না, বাংলাদেশের এ বিশাল জনশক্তি তার পূর্ব সীমান্তে বিশাল রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তিতে পরিণত হোক। কারণ, সেটি হলে তাতে পাল্টে যাবে এ এলাকার ভূ-রাজনীতি। ভারত জানে, দুর্বল ও অধিকৃত বাংলাদেশের মাঝেই ভারতের নিরাপত্তা। এবং শক্তিশালী বাংলাদেশ মানেই ভারতের জন্য হুমকি। ইসরাইলের ৬০ লাখ ইহুদী যদি ৪০ কোটি আরবের বিরুদ্ধে খাড়া হতে পারে, তবে ১৮ কোটি বাংলাদেশী কেন পারবে না ভারতের বিরুদ্ধে খাড়া হতে। আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি তেল, গ্যাস বা সোনা-রূপা নয়। তা হলো মানুষ। বাঙালি মুসলিমের এ বিশাল জনশক্তিই ১৯০৬ সালে ঢাকা শহরে মুসলিম লীগের জন্ম দিয়েছিল এবং হিন্দুত্ববাদ ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ –এ দুই আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে অখন্ড ভারত ভূমিকে ভেঙ্গেছিল এবং পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিল।

ভারতের যত জনবল, অস্ত্রবল বা অর্থবলই থাকুক, তারা ১৮ কোটি মানুষকে হত্যা করার সামর্থ্য রাখে না। কিন্তু তারা সামর্থ্য রাখে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোকে ধ্বংসকে করার। ভারত বস্তুত তাতেই মনযোগী। তাই ১৯৭১’য়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অধিকৃত করার পর ভারতের মূল কাজ হয় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবকাঠামোকে ধ্বংস করা। তখন এ কাজে তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পদসেবী দালাল শ্রেণীও পেয়েছিল। তাই ভারতীয় সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত লুন্ঠন শুধু পাকিস্তানের ফেলা যাওয়া অস্ত্র লুন্ঠনে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ব্যাংক, সরকারি ভবন, সরকারি বাসভবন, সামরিক ও বেসামরিক যানবাহন এবং কলকারখানাও সে লুন্ঠন থেকে রেহাই পায়নি। লুন্ঠনে লুন্ঠনে দেশটিকে ভারত ও তার নওকর বাহিনী দ্রুত ভিক্ষার তলাহীন পাত্রে পরিণত করে এবং ডেকে আনে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। একমাত্র ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ আমল ছাড়া সুজলা-সুফলা এ উর্বর দেশে এমন দুর্ভিক্ষ আর কোন কালেই আসেনি।

অর্থনৈতিক নাশকতার সাথে ভারতের পক্ষ থেকে শুরু হয় রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক নাশকতা। মুজিবামলে এরা এক দল, এক দেশ ও এক নেতার শ্লোগান দিয়ে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের নির্মূলে নামে। অন্য দল ও অন্য মতের লোকদের রাজনৈতিক অধিকার দেয়া দূরে থাক, তাদের বাঁচার অধিকার দিতেও তারা রাজী হয়নি। প্রতিপক্ষ নির্মূলের প্রয়োজনে তখন গড়ে তোলা হয় বিশাল রক্ষি বাহিনী। মুজিবের গড়া এ ঘাতক বাহিনীটি ৩০ হাজারের বেশী মানুষকে মৃত্যুর ওপারে পৌঁছে দেয়। আর প্রতিটি হত্যাই তো গভীর ঘৃণার জন্ম দেয়। এবং জন্ম দেয় প্রচন্ড প্রতিশোধ পরায়নতা। তখন কি বাঁচে সৌহার্দ সম্পৃতির রাজনীতি? অর্থনীতির ভাষায় সমাজের সৌহার্দ-সম্পৃতির পরিবেশ হলো অতি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক পুঁজি বা সোসাল ক্যাপিটাল। এ সোসাল ক্যাপিটাল যেমন গণতান্ত্রের চর্চায় জরুরি, তেমনি জরুরি হলো অর্থনৈতিক উন্নয়নে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে নগদ পুঁজির চেয়ে এরূপ সোসাল ক্যাপিটালের গুরুত্ব অধিক। অর্থ থাকলেই সে পুঁজির বিনিয়োগ করা যায়না, সেজন্য সহায়ক রাজনৈতিক পরিবেশ চাই।  হত্যা বা নির্মূলের রাজনীতিতে সে পুঁজি সৃষ্টি হয় না। এমন নিরাপত্তাহীন পরিবেশে নগদ অর্থের পুঁজি হয় অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকে, অথবা দেশ ত্যাগ করে। মুজিবের নির্মূলের রাজনীতি তাই শুধু বহুদলীয় রাজনীতিতেই নয়, অর্থনীতিতেও দ্রুত মড়ক আনে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নাশকতার সাথে শুরু হয় বুদ্ধিবৃত্তিক নাশকতাও। সে নাশকতার হাতিয়ারে পরিণত হয় ভারতসেবী বাঙালি বুদ্ধিজীবী এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া। তাদের কাজকে বাধামুক্ত করতেই বিলুপ্ত করা হয় সকল নিরপেক্ষ ও সরকার-বিরোধী পত্র-পত্রিকাগুলিকে। এবং বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্ণে এভাবেই প্রতিষ্ঠা দেয়া হয় নৃশংস ফ্যাসিবাদকে।  

বাংলাদেশের রাজনীতি বিগত ৫০ বছরে একটুও সামনে এগোয়নি। বরং পিছিয়েছে দীর্ঘ পথ। রাজনীতি পরিণত হয়েছে দেশধ্বংস, সংস্কৃতি ধ্বংস, হত্যা ও গুমের হাতিয়ারে। এ অভিন্ন দেশেই ৭৫ বছর আগে ১৯৫৪ সালে একটি দলীয় সরকারের অধীনে যেরূপ নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হয়েছিল, সেরূপ নির্বাচনের কথা এখন ভাবাই যায় না। দেশ পিছিনে ফিরে গেছে পুরনো বাকশালী স্বৈর শাসনের দিকে। মুজিবের রক্ষি বাহিনীর স্থানটি নিয়েছে সেনা সদস্যদের নিয়ে গড়া RAB। নির্যাতনের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে নির্মিত আয়নাঘর। তবে প্রতিপক্ষ নির্মূলে রক্ষি বাহিনীর ন্যায় RAB একাকী নয়। RAB’এর পাশাপাশি ব্যবহৃত হচ্ছে পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী এবং সরকার দলের ঘাতকগণ। সমগ্র রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো পরিণত হয়েছে সুনীতির নির্মূল ও দুর্বৃ্ত্তি প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার।  দুর্বৃত্তদের হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হওয়ার মূল বিপদটি এখানেই। 

 

বিলুপ্ত মুসলিম সংহতির রাজনীতি

বিশ্বের প্রতিটি সভ্য দেশেই রাজনীতিতে নানা ধর্ম, নানা মতবাদ ও নানা বিশ্বাসের বিচিত্র লোক থাকে। তাদের নিজ নিজ রাজনৈতিক দলও থাকে। সকল ফুলকে ফুটতে দেয়া তথা সবার জন্য স্থান করে দেয়া দেয়াটিই হলো সভ্য রাজনীতির মূল নীতি। শাসক দলের নেতাকর্মীদের ন্যায় সে নাগরিক অধিকারটি থাকে সরকার বিরোধীদেরও। রাজনীতি এভাবেই জনগণের মাঝে সংহতি ও সম্পৃতি আনে। সে অধিকার হনন করলে সংঘাত অনিবার্য হয়। সবাইকে সে অধিকারগুলি সমভাবে দেয়ার কারণেই গোত্র, ভাষা, বর্ণের ভিত্তিতে অতীতে যেরূপ রক্তাক্ত হানাহানি হতো, সেরূপ হানাহানি পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে এখন আর হয় না। বরং নানা গোত্র, নানা ভাষা, নানা বর্ণ ও নানা ভূগোলের মানুষ সেখানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিশাল বিশাল রাষ্ট্র গড়েছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতি তাই সংহতির হাতিয়ার রূপে কাজ করে। অথচ বাংলাদেশে সেক্যুলারিস্টদের রাজনীতি পরিণত হয়েছে বিভক্তি ও সংঘাত গড়ার হাতিয়ারে। তাদের রাজনীতিতে গবেষণা হয় বিভক্তির সুত্রগুলো খুঁজে খুঁজে বের করে রক্তাক্ত সংঘাত গড়া।

রাজনীতিতে ঐক্য ও সম্পৃতি গড়ার সভ্য ও ভদ্র নীতিটি না থাকলে নিদারুন বিপর্যয় আসে। তখন মনের ক্ষুদ্র ও সংকীর্ণ মানচিত্রের সাথে দেশের মানচিত্রও দিন দিন ছোট হতে থাকে। সে ক্ষুদ্র মানচিত্রে অন্যদের বা ভিন্নদেন জন্য কোন স্থান রাখা হয় না। বিশাল মুসলিম উম্মাহ আজ যেরূপ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বিভক্ত ও শক্তিহীন -তা তো অসভ্য ও আত্মঘাতী সংকীর্ণ রাজনীতির কারণে। অথচ যে রাজনীতিতে সংহতি ও ভাতৃত্বের বার্তা থাকে, সে রাজনীতিতে শক্তিও আসে। বিভক্তি থেকেই আসে শক্তিহীনতা ও পরাজয়। তাই যারাই মুসলিমদের একতার শত্রু তারাই মুসলিম ও ইসলামের শত্রু।

মহান আল্লাহতায়ালা মুসলিমদের একতা চান, শয়তান চায় বিভক্তি। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি এতোই অপছন্দের যে, যারা বিভক্ত হয় তাদের জন্য তিনি ভয়ানক আযাবে প্রতিশ্রুতি শুনিয়েছেন -সেটি সুরা আল-ইমরানের ১০৫ নম্বর আয়াতে।  ইসলামের শত্রুরা সব সময়ই মুসলিম ভূমিকে বিভক্ত ও শক্তিহীন দেখতে চায়। সেটি ভাষা, বর্ণ, অঞ্চল ও গোত্রের নামে। পঞ্চাশটির বেশী রাষ্ট্রে বিভক্ত মুসলিম বিশ্বের মানচিত্র দেখে বুঝা যায়, শয়তা্ন মুসলিমদের উপর কতটা বিজয়ী এবং মুসলিমগণ কতটা দূরে সরেছে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা থেকে। ইউরোপের ২৮টি দেশ ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বললেও তারা ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের জন্ম দিয়েছে। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নভূক্ত এই ২৮টি রাষ্ট্রের  রয়েছে অভিন্ন পররাষ্ট্র নীতি, প্রতিরক্ষা নীতি ও আইন এবং বিলুপ্ত করেছে নিজেদের মাঝের ভিসা প্রথা ও অর্থনৈতিক সীমান্ত। কিন্ত এক অখণ্ড ভূগোল, এক ভাষা, এক বর্ণ ও এক ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও আরবগণ দুর্ভেদ্য দেয়াল ঘেরা ২২টি রাষ্ট্রে বিভক্ত। এক আরব দেশের নাগরিক ও পণ্য সামগ্রী সহজে অন্য আরব দেশে প্রবেশ করতে পারে না। এক দেশ বিদেশী শত্রুর হামলার শিকার হলে প্রতিবেশী আরব দেশগুলো এগিয়ে আসে না। এরই প্রমাণ, ইসরাইলীদের হাতে ফিলিস্তিনীগণ নৃশংস গণহত্যার শিকার হলেও অন্য আরব দেশগুলি নীরব ও নিষ্ক্রিয় থাকে।  যারা এরূপ বিভক্তি নিয়ে বাঁচে, তারা কি প্রতিশ্রুত আযাব থেকে বাঁচতে পারে? মুসলিম বিশ্বের বিভক্ত মানচিত্র গড়ার পিছনে শয়তান ও অনুসারীদের লক্ষ্য হলো, মুসলিমদের শক্তিহীন রাখা এবং মুসলিম ভূমিতে অবৈধ ইসরাইলের প্রতিষ্ঠা ও প্রতিরক্ষাকে সুনিশ্চিত করা।

তেমন একটি স্ট্রাটেজিক লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ইসলামের শত্রুপক্ষ কখনোই চায়নি, বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান বেঁচে থাকুক। যেমন চায়নি খেলাফত বেঁচে থাকুক। তাদের ভয় মুসলিমদের ঐক্য নিয়ে। তারা চায়, দক্ষিণ এশিয়ার বুকে একক কর্তৃত্ব পাক ভারত। চায়, ভারতের হাত দিয়ে গণতন্ত্র হত্যা ও মুসলিমদের শক্তিহানী। এবং চায়, দক্ষিণ এশিয়ার বুকে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণকে প্রতিহত করার কাজে নেতৃত্ব দিক ভারত। সে লক্ষ্য পূরণে ১৯৭১’য়ে কোয়ালিশন গড়ে উঠেছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদী, ফ্যাসিস্ট, কম্যুনিস্ট, সেক্যুলারিস্ট, হিন্দুত্ববাদী ভারত, কম্যুনিস্ট সোভিয়েত রাশিয়া, ইসরাইল তথা ইসলামের দেশী ও বিদেশী সকল শত্রুদের মাঝে। সে কোয়ালিশনের লক্ষ্য ছিল, পাকিস্তানকে খণ্ডিত করা। লক্ষণীয় হলো, ইসলামের শ্ত্রুগণ তাদের লক্ষ্য অর্জনে আরব ভূখণ্ডে যেরূপ সফল হয়েছে, তেমনি সফল হয়েছে পাকিস্তানেও। 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *