মুসলিম বাঁচছে ইসলাম ছাড়াই

ফিরোজ মাহবুব কামাল

সবচেয়ে বড় অজ্ঞতা ও সবচেয়ে বড় যুদ্ধ প্রসঙ্গ

ইসলামের অর্থ পূর্ণ ইসলাম। তাই ইসলাম নিয়ে বাঁচার অর্থ শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত নিয়ে বাঁচা নয়। বাঁচতে হয় ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়তী আইনের বিচার, দুর্বৃত্তি নির্মূলের জিহাদ, কুর’আনী জ্ঞান, ইসলামের অর্থনীতি, শুরা ভিত্তিক প্রশাসন নিয়ে। নইলে ইসলাম নিয়ে বাঁচার কাজটি হয় না। নবীজী (সা:) তো সে পূর্ণ ইসলাম নিয়ে বাঁচাই শিখিয়ে গেছেন।  সাহাবাগণ তো সে ইসলাম নিয়েই বেঁচেছেন। কিন্তু আজকের মুসলিমগণ বাঁচছে সে ইসলাম ছাড়াই। মানবের সবচেয়ে বড় জাহিলিয়াত তথা অজ্ঞতাটি রুজি-রোজগার, ঘরবাঁধা ও পানাহার নিয়ে নয়, বরং কিসে এ জীবনের সাফল্য এবং কিসে ব্যর্থতা -তা নিয়ে। সে অজ্ঞতা ব্যক্তির সকল স্বপ্ন, মেহনত, বিনিয়োগ ও কুরবানীকে ব্যর্থ করে দেয়। এটিই হলো মানব জীবনের সবচেয়ে বড় জাহিলিয়াত। সে জাহিলিয়াতের কারণে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটিও বিশাল অর্জন বা বিজয় গণ্য হয় এবং সে ব্যর্থতা নিয়ে প্রচুর উৎসবও হয়। জাহান্নামের পথে ধেয়ে চলাটি তখন বিশাল গর্বের মনে হয়। সেরূপ আচার যেমন নবীজী (সা:)’র যুগে মক্কার কাফিরদের মাঝে দেখা যেত, আজ সেটি দেখা যায় সেক্যুলারিস্ট, পৌত্তলিক ও কাফিরদের জীবনে।  পবিত্র কুর’আনে সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালা পথ দেখিয়েছেন এ ক্ষেত্রটিতেও। পবিত্র কুর’আনে তিনি বার বার সংজ্ঞায়ীত করে দিয়েছেন কিসে মানব জীবনের সফলতা এবং কিসে ব্যর্থতা -তা নিয়ে। পার্থিব জীবনকে তিনি ক্রীড়া-কৌতুক,জাঁকজৌলুস, হিংসা-বিদ্বেষ ও প্রতারণার আয়োজন রূপে চিহ্নিত করেছেন এবং সবচেয়ে বড় বিজয় (ফাওজুন আজীম) বলেছেন আখেরাতে জান্নাত লাভকে। এ বিষয়ে সুরা হাদীদের ২০ নম্বর আয়াতে বয়ান এসেছে: ٱعْلَمُوٓا۟ أَنَّمَا ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَا لَعِبٌۭ وَلَهْوٌۭ وَزِينَةٌۭ وَتَفَاخُرٌۢ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌۭ فِى ٱلْأَمْوَٰلِ وَٱلْأَوْلَـٰدِ ۖ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ ٱلْكُفَّارَ نَبَاتُهُۥ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَىٰهُ مُصْفَرًّۭا ثُمَّ يَكُونُ حُطَـٰمًۭا ۖ وَفِى ٱلْـَٔاخِرَةِ عَذَابٌۭ شَدِيدٌۭ وَمَغْفِرَةٌۭ مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضْوَٰنٌۭ ۚ وَمَا ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَآ إِلَّا مَتَـٰعُ ٱلْغُرُورِ ٢٠

অর্থ: তোমরা জেনে রাখ, দুনিয়ার এ জীবন তো খেল-তামাশা, মন ভোলানোর উপকরণ, সাজ-সজ্জা, একে অপরের উপর গর্ব, সম্পদ ও সন্তানের আধিক্যের অনুভূতি ছাড়া আর কিছু নয়। দুনিয়ার এ জীবনের উপামা এমন যে, বৃষ্টি বর্ষিত হলো এবং তা থেকে জন্ম নেয়া শস্য-সম্ভার চমৎকৃত করলো কৃষকদের, এরপর তা শুকিয়ে গেল, সেটিকে তুমি হলুদ হতে দেখলে এবং অবশেষে সেটি খড়-কুটায় পরিণত হলো। অথচ সে তূলনায় পরকাল হলো এমন এক জায়গা সেখানে এক দিকে রয়েছে যেমন কঠিন আযাব, তেমনি অপর দিকে রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। দুনিয়ার এ জীবন প্রতরণার সামগ্রী ভিন্ন আর কিছুই নয়‍।”    

মানব জীবনে সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি তথা জিহাদটি হতে হয় জাহিলিয়াত তথা অজ্ঞতার নির্মূলে। এযুদ্ধে পরাজিত হলে অন্যান্য বড় বড় যুদ্ধে বিজয়ী হলেও তারা পরাজিতদের দলে  শামিল হয়। এবং পরাজয়ের শাস্তি জাহান্নাম। জাহিলিয়াতের বিরুদ্ধে যু্দ্ধে মূল অস্ত্রটি হলো পবিত্র কুর’আন। পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান ছাড়া এ জিহাদে বিজয় অসম্ভব। এজন্যই নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত ফরজ করার পূর্বে ফরজ করা হয় কুর’আন থেকে জ্ঞানার্জনকে। নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের  ন্যায় ইবাদত তো তাদের জীবনেই পরিশুদ্ধি আনে যারা কুর’আনের জ্ঞানে জ্ঞানবান। সে জ্ঞান অর্জিত না হলে বাঁচতে য় জাহিলিয়াতের কাছে আত্মসমর্পণ নিয়ে। এমন ব্যক্তিগণ নামাজ-রোজা পালন করেও সুদ খায়, ঘুষ খায়, মিথ্যা কথা বলে এবং ইসলামকে পরাজিত রাখার রাজনীতি করে। এদের কারণেই ভিড় বাড়ে ব্যর্থ ব্যক্তিদের মিছিলে। এরাই হলো তারা যারা ছিটকে পড়ে চুড়ান্ত সাফল্যের পথ থেকে। এমন মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে মুসলিম রাষ্ট্রে ইসলাম বিজয়ী হয় না, বরং বিজয়ী হয় শয়তান ও তার অনুসারিগণ। বাংলাদেশ তো তারই উজ্জল দৃষ্টান্ত।

 

সাফল্যের পথ ও ব্যর্থতার পথ

সুরা তাওবার ১১১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর সাথে মু’মিনের জানমাল ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তিনামাটিকে মু’মিনের জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য রূপে অভিহিত করেছেন। তাঁর এ মূল্যায়নের চেয়ে বড় সত্য আর কি হতে পারে? এটিই হলো সাফল্যের একমাত্র সঠিক পথ যার সার্টিফিকেট দিয়েছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। মানবের জন্য কোনটি প্রকৃত সাফল্য আর কোনটি প্রকৃত ব্যর্থতা -সেটি মহান আল্লাহতায়ালার চেয়ে আর কে ভাল জানেন? মহান আল্লাহতায়ালার বিচারে এ চুক্তির চেয়ে উত্তম কেনা-বেচার চুক্তি সমগ্র বিশ্বে দ্বিতীয়টি হতে পারে না। অতএব মানবের জীবনে যদি কোন উৎসব থেকেই থাকে তবে সেটি হলো মহান আল্লাহর সাথে সম্পাদিত এ চুক্তি নিয়ে। এজন্যই এ চুক্তি স্বাক্ষরের পর মহান আল্লাহতায়ালা ঈমানদারদের উৎসব করতে বলেছেন।

সুরা তাওবার উপরুক্ত ১১১ নম্বর আয়াতে মহান রাব্বুল আলামীনের বর্ণনাটি এতটাই সুস্পষ্ট যে, এটি বুঝার জন্য কি কোন মৌলভী, মাওলানা বা কোন মুফতির কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে? এটি আয়াতে মোহকামাত। অনেকেই বলেন, পবিত্র কুর’আন বুঝার সামর্থ সাধারণ কোন মানুষের নাই। বুঝার সে কাজটি নাকি একমাত্র আলেমদের! অথচ নবীর যুগে নিরক্ষর রাখাল, কৃষক, শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও পবিত্র কুর’আন বুঝতেন এবং সে অনুযায়ী আমল করতেন। সে সময় আরব সমাজে মাদ্রাসা বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া লোক ছিল না। কিন্তু তাতে কি বিজ্ঞ ব্যক্তির অভাব হয়েছে? সাধারণ মুসলিমগণই সেদিন বিখ্যাত আলেমে পরিণত হয়েছেন। আলেমের ইলম ধরা পড়ে তারা আমলে। সে যুগের আলেমদের আমল আজকের সার্টিফিকেটধারী আলেমদের চেয়ে বহুগুণ শ্রেষ্ঠ ছিল। তারা সবাই সেদিন ইসলামকে বিজয়ী করার জিহাদে মুজাহিদে পরিণত হয়েছেন এবং অধিকাংশ সাহাবীই শহীদ হয়েছেন। সেরূপ আমল কি আজকের সার্টিফিকেটধারী আলেমদের মাঝে দেখা যায়? আজ সার্টিফিকেট বাড়লেও আমল বাড়েনি। ফলে ইসলামের বিজয়ও আসেনি।

সে আমলে সাধারণ মুসলিমগণ এতটাই জাগ্রত ঈমানের অধিকারি ছিল যে, আল্লাহর দ্বীন ও আল্লাহর অনুসারিগণ আক্রান্ত হলে সে সমাজে লড়াকু সৈনিকের অভাব হতো না। নিরক্ষর রাখাল, কৃষক, শ্রমিকও তখন নিজ খরচে ঢাল-তলোয়ার-বর্ম গড়ে নিজ গৃহের খোড়াক, নিজের অর্থ ও নিজের ঘোড়া নিয়ে জান বিলিয়ে দিতে রণাঙ্গণে ছুটতেন। এ যুদ্ধগুলো তাদের নিজ স্বার্থে ছিল না, ছিল দ্বীনের স্বার্থে। সে যুদ্ধগুলি ছিল, মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে। তাঁর দ্বীনের প্রতি তাদের এ কুরবানী দেখে মহান আল্লাহতায়ালাও তাদের বিজয়ে যু্দ্ধ লড়তে অসংখ্য ফেরেশতা পাঠাতেন। কারণ, তাঁর নিজ সেনাদলের পরাজয় তাঁর কাছে অসহ্য। পবিত্র কুর’আনে সে বিষয়ে বহু উল্লেখও আছে। ফলে তখন অসম্ভব হতো ঈমানদারদের বিরুদ্ধে কাফের শক্তির বিজয়। ফলে বার বার বিজয়ী হয়েছে মুসলিমেরা। অথচ আজ হচ্ছে বিপরীতটি। বাংলাদেশের মত দেশে মানুষ যে যুদ্ধ করেনি বা করছে না তা নয়। অর্থ, শ্রম ও রক্ত দিচ্ছে না, সেটিও নয়। অতীতে বহু বাঙ্গালী সৈনিক বহু রক্ত দিয়েছে ব্রিটিশ শাসনের পাহারাদারীতে। তেমনি ১৯৭১’য়ে রক্ত দিয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রটির বিনাশে এবং হিন্দুত্ববাদী ভারতের বিজয়ে। এতে শুধু পাকিস্তানই দুর্বল হয়নি, পরাধীনতা বেড়েছে বাংলাদেশেরও।

অজ্ঞ শিশু যেমন আগুনে হাত দেয়, তেমনি কুর’আনী-জ্ঞানে অজ্ঞ ব্যক্তিও ইসলামের শত্রুপক্ষে যুদ্ধ করে প্রাণ দেয়। এমন প্রাণদান যে জাহান্নামে নেয় -সে বোধটুকুও জাহেলদের থাকে না। ইসলামের শত্রুপক্ষ এজন্যই মুসলিম দেশের স্কুল-কলেজে কুর’আন-হাদীসের জ্ঞানদানের বিরোধী। অধিকৃত দেশগুলিতে উপনিবেশিক ব্রিটিশগণ যেমন সেটি হতে দেয়নি, স্বদেশী সেক্যুলারিস্টগণ সেটি হতে দেয় না। তারা মুসলিম মনে অজ্ঞতা ও ভ্রষ্টতা বাড়ায়। ইসলামী জ্ঞানে অজ্ঞতার কারণেই জনগণ ইসলাম থেকে দূরে সরে। এমন দূরে সরা লোকদের গোলাম বা দাসসৈনিক বানানো তখন সহজ হয়। একটি দেশে ইসলামী জ্ঞানের শূণ্যতা বুঝা যায় সে দেশে কাফির শক্তির প্রতি অনুগত দাস সৈনিকের সংখ্যা দেখে। সে সংখ্যাটি বিশাল হওয়ায় একাত্তরে বাঙালি মুসলিমদের মাঝে ভারতীয় কাফের বাহিনীর পক্ষে বহু লক্ষ অনুগত যোদ্ধা পেতে অসুবিধা হয়নি। তাদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীগণ তাদের সমগ্র ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিজয়টি পেয়েছে।

একই কারণে অতীতে দাস-সৈনিক পেতে অসুবিধা হয়নি সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদেরও। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইরাক ও ফিলিস্তিন দখলে এবং সেখানে মুসলিম হত্যায় ১০ লাখের বেশী আরব এবং আড়াই লাখ ভারতীয় মুসলিম ব্রিটিশ ও ফরাসী বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। তারা যুদ্ধ করেছে উসমানিয়া খেলাফত ভাঙ্গতে এবং ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিনের ন্যায় বিশাল মুসলিম ভূমিকে ইংরেজ ও ফরাসী উপনিবেশিক কাফির শক্তির হাতে তুলে দিতে। শরিষার দানা পরিমাণ ঈমান থাকলে কেউ কি এমন জঘন্য হারাম কাজ করে? জাহিলিয়াত তথা কুর’আনী জ্ঞানের অজ্ঞতায় এসবই সম্ভব। এমন গর্হিত হারাম কাজ লিপ্ত হওয়া তখন গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এমন জাহেলগণই উৎসব ভরে জাহান্নামের পথে চলে। তাদের কাছে অজানা থেকে যায়, মুসলিম রূপে কী তাদের ঈমানী দায়ভার। অজানা থেকে যায়, কুর’আনে বর্ণিত মহান আল্লাহতায়ার সাথে ঈমানদারের জান-মাল বিক্রয়ের পবিত্র চুক্তির কথাটি। কুর’আনী জ্ঞানের অজ্ঞতা থেকে এভাবেই জন্ম নেয় বহুবিধ জঘন্য পাপ। মুসলিম ভূমিতে এরূপ অজ্ঞতা গভীরতা হওয়ার কারণেই মার্কিনীগণ তাঁবেদার যোদ্ধা পাচ্ছে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে। ভারত পাচ্ছে বাংলাদেশে।  ইসলামের শত্রুপক্ষ এভাবেই কইয়ের তেলে কই ভাজছে। এজন্যই ইসলামে সবচেয়ে বড় নেককর্মটি অর্থদান নয়, বরং সেটি পবিত্র কুর’আন থেকে জ্ঞান দান। অর্থদানে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর কাজটি হয়না, কিন্ত বাঁচায় ওহীর জ্ঞান। অথচ শয়তান ও তার অনুসারিগণ বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশগুলিতে ওহীর জ্ঞানের চর্চাই অসম্ভব করেছে।

বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে কুর’আনী জ্ঞানের অজ্ঞতা গভীরতর করেছে দখলদার সেকুলারিস্ট শক্তিবর্গ। তাদের সেক্যুলার শিক্ষানীতির ফলে প্রচন্ড ভাবে বেড়েছে পার্থিব স্বার্থচেতনা। আর পার্থিব স্বার্থ হাছিলের তাড়নায় জোয়ার এলে বাড়ে দুর্বৃত্তিও। এজন্যই সেক্যুলারিজম ও দুর্বৃত্তি একত্রে চলে। একমাত্র পরকালে জবাবদেহীতার ভয়ই পারে দুষ্কর্ম থেকে মানুষকে দূরে রাখতে। তাই সেকুলারিজম পরিচর্যা পেল অথচ দুর্বৃত্তিতে প্লাবন এলো না -সেটি হয় না। সে পার্থিব স্বার্থচেতনাটিকে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনামলে তীব্রতর করা হলেও মুসলিম ভূমিতে তার শুরুটি ইয়াজিদের ন্যায় স্বৈরাচারি মুসলিম রাজাবাদশাহদের হাতে। নিছক পার্থিব স্বার্থচেতনায় ইয়াজিদ হযরত ইমাম হোসেন (রা:) ও তাঁর সাথীদেরকে অতি নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিল। এ দুর্বৃত্তটি ইমাম হোসেন (রা:)’য়ের কর্তিত মাথাকে দামেস্কের রাজদরবারে প্রদর্শনের বস্তু বানিয়েছিল। প্রতি যুগে ইসলাম ও মুসলিমের নৃশংস শত্রু হলো এসব সেকুলারিস্ট ইয়াজিদেরা। দেশে দেশে তাদের হাতে রচিত হয়েছে অসংখ্য কারবালা। পার্থিব স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে এরা পবিত্র ক্বাবাতেও আগুন দিয়েছে। মদিনার পবিত্র ভূমিতে এরা হত্যা, ধর্ষণ ও লুন্ঠনের নৃশংস তান্ডব চালিয়েছে।

অতীততের ন্যায় আজও সেকুলারিস্টদের একই রূপ গভীর শত্রুতা মুসলিম উম্মাহর সাথে। ইসলামকে পরাজিত রাখাই তাদের এজেন্ডা। তারা চায়, সাধারণ মুসলিমের  কাছে অজানা থেকে যাক তার ঈমানী দায়বদ্ধতা। তারা জানে, একমাত্র ইসলামী জ্ঞানে অজ্ঞ থাকলেই তাদের ন্যায় দুর্বৃত্ত জালেমদের হটাতে জনগণ কখনো রাজপথে নামবে না। জালেম শাসকের বিরুদ্ধেপবিত্র জিহাদও তখন ইবাদত রূপে গণ্য হবে না। অজ্ঞ মানুষ যেমন সাপ, শকুন, গরু -এমনকি লিঙ্গকে পূজা দেয়, তেমনি তারা জালেম শাসকদের পক্ষেও জয়গান গায়।  তাই মুসলিম বিশ্বে যতই বাড়ছে স্বৈরাচার, ততই বাড়ছে সরকারি উদ্যোগে বাড়ছে কুর’আনী জ্ঞান থেকে দূরে সরানোর  আয়োজন। সে অভিন্ন লক্ষ্য ও স্ট্রাটেজী নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশের সেকুলারিস্ট দুর্বৃ্ত্তগণও। মৌলবাদ রুখার নামে তারা স্কুল-কলেজে বন্ধ করেছে কুর’আন চর্চা। নিয়ন্ত্রিত করছে তাফসির মাহফিল ও জুম্মার খুতবা। আলেমদের জেলে তুলেছে এবং ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে ইসলামপন্থী নেতাদের। শেখ মুজিব ক্ষমতা পেয়েই স্কুলের পাঠ্য তালিকা থেকে সরিয়েছিল পাকিস্তান আমলে দ্বীনিয়াত নামক বইটি। এদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য, শয়তানী এজেন্ডাকে বিজয়ী করা। শয়তানের এজেন্ডাই হলো তাদের এজেন্ডা। এজন্যই তাদের অটুট কোয়ালিশনটি ভারতের আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদীদের সাথে -সেটি যেমন ১৯৭১’য়ে দেখা গেছে, তেমনি আজও। এরা দেশে প্লাবন এনেছে গুম, খুন, ধর্ষণ, চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি,বিনা বিচারে হত্যা ও সন্ত্রাসের।

 

শুরুর কাজটি শুরুতে হয়নি

ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণে অতি অপরিহার্য হলো শুরুর কাজটি শুরুতে করা -যেমন গৃহ নির্মাণে ভীত গড়ার কাজটি প্রথমে করতে হয়। শুরুর সে কাজটি হলো পবিত্র কুর’আন বুঝার সামর্থ্য অর্জন এবং শরিয়তের হুকুমগুলিকে আত্মস্থ করা। কুর‌’আন জান্নাতের পথ দেখায়। সে পথটি বুঝার সামর্থ্যটি না থাকলে সে পথে চলা সঠিক হবে কীরূপে? পথভ্রষ্টতা তখন অনিবার্য হয়ে উঠে। আর প্রতিটি ভষ্ট পথই তো জাহান্নামে নেয়। এজন্যই নবীজী (সা:) তাঁর মাত্র ২৩ বছরের নবুয়তী জীবনের প্রথম ১২ বছর এই কুর’আন বুঝা ও আত্মস্থ করার কাজটি নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে করেছেন। তখনও নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত ছিল না। নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ অর্ধেক রাত বা এক-তৃতীয়াংশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে কুর’আন তেলাওয়াত করে কাটিয়ে দিতেন। এরূপ কুর’আনের হুকুম এসেছে সুরা মুজাম্মেলের প্রথম ৪টি আয়াতে। বলা হয়েছে:  يَـٰٓأَيُّهَا ٱلْمُزَّمِّلُ ١  

 قُمِ ٱلَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًۭا ٢

نِّصْفَهُۥٓ أَوِ ٱنقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا ٣

أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ ٱلْقُرْءَانَ تَرْتِيلًا ٤

অর্থ: ১). হে চাদরে আচ্ছাদিত শায়ীত রাসূল; ২). সামান্য কিছু সময় বাদ দিয়ে রাতে খাড়া হয়ে যান; ৩). আধা রাত বা তা থেকে কিছু কম সময়ের জন্য; ৪). অথবা তার চেয়ে কিছু বেশি সময় ধরে থেমে থেমে কুর’আন পাঠ করুন।     

সুরা মুজাম্মেলের উপরুক্ত আয়াতগুলি থেকে বুঝা যায়, মহাজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালার কাছে ঈমানদারদেরকে কুর’আনের জ্ঞানে আলোকিত করার বিষয়টি কতটা গুরুত্ব পেয়েছিল। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের আগে কুর’আন পাঠ ও কুর’আন বুঝাকে ফরজ করেছেন। মানব ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবগুলি সে সময়ই তৈরি হয়েছিল। কুর’আনী জ্ঞানের অজ্ঞতায় আর যাই হোক, সত্যিকার ঈমানদার হওয়া যায়না। তখন অসম্ভব হয় সিরাতাল মুস্তাকীমে চলা। এ জন্যই কুর’আনী জ্ঞানে জাহেল তথা অজ্ঞ থাকার চেয়ে বড় পাপ নাই। সব পাপের জন্ম অজ্ঞতার এ পাপ থেকেই। সে অজ্ঞতা থেকেই পদে পদে বিচ্যুতি আসে। সঠিক পথে চলাই তখন অসম্ভব হয়। তখন বিচ্যুতি আসে ইবাদত, বুদ্ধিবৃত্তি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, বিচার-আচারসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। এরূপ অজ্ঞতা ও বিচ্যুতি নিয়ে আর যাই হোক ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ সম্ভব নয়।

তাই সব পাপ মোচনের আগে অজ্ঞতার পাপমোচন চাই। নইলে মুসলিম হওয়া বা ইসলামের পক্ষে কুরবানী পেশ করা দূরে থাক, ইসলামের মুখলেছ মুজাহিদদের হত্যা করা বা মসজিদ-মাদ্রাসা ধ্বংস করাও তখন উৎসবের বিষয় গণ্য হয়। পাকিস্তানের সেক্যুলার সেনাবাহিনী সেরূপ উৎসব করেছিল ইসলামাবাদের লাল মসজিদ ধ্বংসের পর। একই কাজ হচ্ছে মিশর, আলজেরিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়ার মত মুসলিম দেশে। সে অভিন্ন চেতনার কারণেই বাংলাদেশের সেক্যুলার  রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীগণ রাজপথে দাড়ি-টুপিধারীদের পিটিয়ে হত্যা করাকে উৎসবের কাজ মনে করে। আর এ অজ্ঞতা সরানোর কাজ শুরু করতে গেলেই লড়াই শুরু হয়। কারণ,অজ্ঞতাই তাদের মূল হাতিয়ার। সেটি শয়তানী শক্তির হাত থেকে হাতিয়ার কেড়ে নেওয়ার ন্যায় গুরুতর ব্যাপার।

অজ্ঞতার হাতিয়ারটি ইসলামের শত্রুপক্ষ বিনা যুদ্ধে ছাড়তে রাজী নয়। কারণ, অজ্ঞতার প্রতি জাহেলদের থাকে প্রচণ্ড নেশাগ্রস্ততা। নেশাগ্রস্ত হিরোইনসেবীগণ যেমন হিরোইন ছাড়তে রাজী নয়, তেমনি এসব জাহেল ব্যক্তিগণ রাজী নয় অজ্ঞতা ছাড়তে। এজন্য যখনই স্কুল-কলেজে কুর’আন-হাদীস শিক্ষাদানের প্রস্তাব উঠে তখনই তারা তার বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলনে নামে। নবীজী (সা:)’র আমলেও অজ্ঞ জাহেলদের আচরণ অবিকল একই রূপ ছিল। নবীজী (সা:) যখন মক্কার কাফেরদের ডেকে কুর’আনের আয়াত শোনাতেন তখন তারা নিজ কানে আঙ্গুল ঢুকাতো যেন আল্লাহতায়ালার পবিত্র কালাম তাদের কানে প্রবেশে করতে না পারে। নবীজী (সা:)’র মুখ থেকে কুর’আনের বানীর উচ্চারণ থামাতে তারা তাঁর মাথার উপর পাথর মারতো। শয়তানী শক্তির সে স্ট্রাটেজী নিয়ে রাজনীতি করে বাংলাদেশের ইসলামী বিরোধীগণ।

ইসলামের পথে চলায় সবচেয়ে বড় বাধাটি হলো মুসলিম মানসে জাহিলিয়াতের কালো মেঘ। এ মেঘ মুসলিমদের দৃষ্টি থেকে ইসলামকেই আড়াল করে রাখে। গোপন করে রাখে সিরাতুল মুস্তিকীম। রাতের গভীর অন্ধকারে দৃষ্টিশক্তি আছে এমন ব্যক্তিও পথ চিনতে ভূল করে। মন থেকে অন্ধকার দূর করে কুর’আনের জ্ঞান। অজ্ঞ ব্যক্তি যতই স্বাস্থ্যবান হোক, সে পদে পদে পথভ্রষ্ট হয়। সে প্রকৃত সত্যকে চিনতে ভূল করে। বস্তুত কুর’আনী জ্ঞানের সে গভীর অজ্ঞতার কারণেই বাংলাদেশের মত একটি মুসলিম দেশে নবীজ (সা:)’র আমলের ইসলাম অপরিচিত বা অজানা রয়ে গেছে। নবীজী (সা:)’র ইসলামে ইসলামী রাষ্ট্র ছিল, কুর’আনের শিক্ষা ছিল, শরিয়তী আইনের বিচার ছিল, দুর্বৃ্ত্তির নির্মূল ও  সুবিচার প্রতিষ্ঠার জিহাদ ছিল এবং ভাষা-গোত্র-আঞ্চলিকতার উর্দ্ধে উঠে প্যান-ইসলামিক বিশ্বভাতৃত্ব ছিল। কিন্তু কুর’আনী জ্ঞান না থাকায় নবীজী (সা:)’র প্রতিষ্ঠিত সে ইসলাম তাদের কাছে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাস মনে হয়।

অজ্ঞতার ঈমানবিনাশী শক্তির এ বিশাল সামর্থ্য শয়তান জানে। তাই শয়তানের এজেন্টগণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পেলে অজ্ঞতার প্রসার বাড়ায় এবং কুর’আনী জ্ঞানের চর্চাকে নিষিদ্ধ করে। সোভিয়েত রাশিয়ার কম্যুনিষ্ট কাফেরগণ এজন্যই নিজ দেশে শুধু হাজার হাজার মসজিদ-মাদ্রাসাকে ঘোড়ার আস্তাবল বানায়নি, নিষিদ্ধ করেছিল কুর’আন চর্চা। আজও একই রূপ স্ট্রাটেজী পুঁজিবাদী ও জাতীয়তাবাদী সেকুলারিষ্টদের। ১৯৭২ সালে শেখ মুজিব ক্ষমতায় এসেই তাই ইসলামপন্থীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিল এবং নেতাদের জেলে তুলেছিল। কুর’আনের শিক্ষাদান সংকুচিত করেছিল। পাকিস্তান আমলে রেডিও-টিভিতে কুর’আন পাঠ করে যেরূপ প্রাগামের শুরু করা হত -সেটি বন্ধ করা হয়। সে আমলে স্কুলের ছাত্রদের ইসলামের বুনিয়াদি বিষয়গুলি শেখাতে দ্বীনিয়াত নামে যে বইটি পড়ানো হতো -সেটিও নিষিদ্ধ করা হয়। ইসলামের বিরুদ্ধে একই রূপ যুদ্ধে নেমেছে মুজিবের কন্যা হাসিনা। সে যুদ্ধের অংশ রূপেই ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হিফাজতে ইসলামের শত শত নেতাকর্মীকে হতাহত করা হয়।  ডান্ডাবেড়ি পড়াচ্ছে আলেমদের পায়ে এবং বাজেয়াপ্ত করছে জিহাদ বিষয়ক বই।

 

মুসলিম বাঁচছে ইসলাম ছাড়াই

মুসলিম জীবনের মূল সংকটটি হলো, তারা বাঁচে না ইসলামের এজেন্ডা নিয়ে। এর কারণ, তারা নিজেরাই জানে না ইসলামের মূল এজেন্ডাটি কি? সে বিষয়টি না জানার কারণ, সেটি জানতে হলে তো পবিত্র কুর’আন বুঝতে হয়। সে জন্য তো নবীজী (সা:) জীবনকাহিনী জানতে হয়। সে বিষয়টি তো বিজ্ঞান, ভূগোল, অংকশাস্ত্র, চিকিৎসা বা ইঞ্জিনীয়ারিং বিদ্যার বই পড়ে জানা যায়না। অতি পরিতাপের বিষয় হলো, মুসলিম দেশগুলির শিক্ষাব্যবস্থায় বিশেষ এ বিষয়টির উপর জ্ঞানদানের কাজটি হচ্ছে না বরং তাতে অজ্ঞ রাখা হচ্ছে। ফলে ২০ বছরে শিক্ষাঙ্গণে কাটিয়ে একজন মুসলিম সন্তান জানতেই পারে না এ পৃথিবী পৃষ্ঠে সে কেন বাঁচবে এবং কীভাবে বাঁচবে -সে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিষয়টি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি হাছিল করলেও অধিকাংশ ছাত্র এ মৌলিক বিষয়ে নিরেট জাহেলই থেকে যায়। অথচ সে জাহিলিয়াত থেকে মুক্তি দেয়াই হলো বিদ্যাশিক্ষার মূল কাজ।  এটি ফরজ। এবং সে ফরজ কাজটি না হওয়াই হলো বাংলাদেশসহ অধিকাংশ মুসলিম দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সবচেয় বড় ব্যর্থতা। শিক্ষার এ চরম ব্যর্থতা থেকেই জন্ম নিয়েছে মুসলিম জীবনের অন্য সকল ব্যর্থতা। ফলে মুসলিম  চেতনায় বেঁচে নাই ইসলামের মূল শিক্ষা, দর্শন ও এজেন্ডা। এতে ফল দাঁড়িয়েছে, মুসলিম বাঁচছে ইসলাম ছাড়াই। বরং মুসলিম বাঁচছে শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করার রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও যুদ্ধ নিয়ে। মুসলিমগণ তাদের অর্থ, মেধা, ভোট, শ্রম ও রক্তের বিনিয়োগ করছে জাতীয়তাবাদ, গোত্রবাদ, রাজতন্ত্র, স্বৈরাচার, সেক্যুলারিজম, পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্রের ন্যায় ভ্রষ্ট মতবাদকে প্রতিষ্ঠা দিয়ে।

অধিকাংশ মুসলিম ভাবে, ইসলাম এসেছে স্রেফ নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত, দোয়া-দরুদ ও মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা দিতে। তারা ভাবে নবীজী (সা:)’র এজেন্ডা ছিল মুসলিমদের নামাজী, রোজাদার, হাজী বানাতে। অ’থচ পবিত্র কুর’আনে অতি স্পষ্ট ভাবে বর্ণিত হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা। সে এজেন্ডাটি হলো, সকল ধর্ম, সকল মতবাদ ও সকল জীবন দর্শনের উপর ইসলামকে বিজয়ী করা। এবং সে এজেন্ডাই ছিল নবীজী (সা:) ও সাহাবায়ে কেরামদের এজেন্ডা।  মুসলিম হওয়ার অর্থই হলো সে এজেন্ডার সাথে পূর্ণ ভাবে একাত্ম হওয়া। বস্তুত সেটিই হলো প্রকৃম ঈমানদারী। এবং প্রতিটি মুসলিমকে  সেরূপ ঈমানদার বানানোই ইসলামের মূল লক্ষ্য। নামাজী, রোজাদার ও হাজী হয়েও যে ব্যক্তি  সে এজেন্ডার সাথে একাত্ম হয় না, বুঝতে  সে ব্যর্থ হয়েছে ঈমানদার হতে। তাই বাস্তবতা হলো, প্রকৃত ঈমানদার মাত্রই নামাজী, রোজাদার  এবং সামর্থ্য থাকলে হাজী হয়, কিন্তু সকল নামাজী, রোজাদার ও হাজী ঈমানদার হয়না। ঈমানদার হলে তো তাদের জীবনে লাগাতর জিহাদ দেখা যেত এবং সে জিহাদে জান-মালের বিনিয়োগ দেখা যেত। তখন প্রবল তাড়না দেখা যেত রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিতে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। সুরা হুজরাতের ১৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা তো ঈমানদারকে এভাবেই সংজ্ঞায়ীত করেছেন। ইসলামের গৌরব যুগে তো সেটিই হয়েছে। কিন্তু আজ সেরূপ ঈমানদার কই? বরং বহু মুসলিম দেশে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের ভাবনা নিয়ে বাঁচাটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য হয়। সেটিকে তারা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বা মৌলবাদ বলে। বাংলাদেশের মত দেশের সংবিধান ও আইন এমন কাজের অনুমতি দেয় না। কারণ, ইসলামের প্রতিষ্ঠা দিলে সেক্যুলারিজম বাঁচে না। বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন সেক্যুলারিজমের সুরক্ষা দিতে দায়বদ্ধ, ইসলামের নয়। শুধু তাই নয়, যে ইসলাামে জিহাদ, ইসলামী রাষ্ট্র ও শরিয়তের প্রতিষ্ঠা আছে -সে ইসলামকে বহু নামাজী, রোজাদার ও হাজী সত্যিকার ইসলাম বলতে রাজী নয়। সে ইসলামকে তারা সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ বলে। এই হলো মুসলিমদের অবস্থা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *