ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ কেন এতো জরুরি? (পর্ব-১)

ফিরোজ মাহবুব কামাল

ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ কেন অপরিহার্য?

ইসলামের লক্ষ্য শুধু মানব সন্তানদের মু’মিন ও মুত্তাকী করা নয়, বরং যে রাষ্ট্রে তাদের বসবাস সেটিকেও ইসলামী করা। কারণ যে রাষ্ট্রে বসবাস -সেটি  পূর্ণ ইসলামী না হলে মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার কাজটি সহজ হয় না। বরং অসম্ভব হয়। এবং অসম্ভব হয় পূর্ণ ইসলাম পালন।  প্রাণে বাঁচার জন্য মাছ যেমন পানি চায়, তেমনি ঈমান নিয়ে বাঁচার জন্য ইসলামী রাষ্ট্র চাই। ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ -সেটি বুঝতে হলে প্রথমে বুঝতে হয় মানব জাতিকে নিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে। যারা ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা নিয়ে ভাবে না এবং লিপ্ত হয় না তেমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জিহাদে -বুঝতে হবে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে জানতে। এবং ব্যর্থ হয়েছে নবীজী (সা:)’র ইসলামকে বুঝতে। ইসলাম নিয়ে তার ধারণাটি নিতান্তই অজ্ঞতা-প্রসূত। এরূপ ব্যর্থতা নিয়ে কেউ কি কখনো প্রকৃত ঈমানদার হতে পারে? এমন ব্যক্তি ঈমানদার হওয়ার দাবী করলে, বুঝতে হবে সে একজন মুনাফিক।

প্রশ্ন হলো, মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা কি? এ বিষয়ে মহান আল্লাহতায়ালার সুস্পষ্ট ঘোষণা এসেছে সুরা সাফ, সুরা তাওবা ও সুরা ফাতাহ‌’তে। উপরিউক্ত তিনটি সুরা’তে সে এজেন্ডা নিয়ে বয়ান একই রকমের। সুরা সাফ‌’য়ের ৯ নম্বর আয়াত থেকে উদাহরণ দেয়া যাক:

هُوَ ٱلَّذِىٓ أَرْسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلْهُدَىٰ وَدِينِ ٱلْحَقِّ لِيُظْهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِۦ وَلَوْ كَرِهَ ٱلْمُشْرِكُونَ

অর্থ: “তিনি হলেন সেই মহান আল্লাহ যিনি তাঁর রাসূলকে পাঠিয়েছেন পর্থনির্দেশনা ও সত্য দ্বীনসহ -যাতে তা বিজয়ী হয় সকল ধর্ম, সকল মিথ্যা ধ্যান-ধারণা ও সকল মতবাদের উপর। যদিও তা মুশরিকদের কাছে অপছন্দনীয়।” –(সুরা সাফ, আয়াত ৯)। তাঁর দ্বীনের বিজয়ের অর্থ হলো, দেশের শাসনতন্ত্রে ও শাসন প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠা পাবে একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব। আদালতে প্রতিষ্ঠা পাবে তাঁর শরিয়তী আইন।  সমাজ থেকে বিলুপ্ত করা হবে সর্বপ্রকার দুর্বৃত্তি ও অবিচার এবং প্রতিষ্ঠা পাবে ন্যায়, সত্য এবং সুবিচার। মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষিত এ এজেন্ডার  বাস্তবায়নের দায়িত্বটি অর্পিত হয় মুসলিমদের উপর -ফিরেশতাদের উপর নয়। কিন্তু স্রেফ দোয়া-দরুদের মধ্য দিয়ে সে এজেন্ডা প্রতিষ্ঠা দেয়া যায় না। সে জন্য প্রয়োজন পড়ে শত্রুশক্তির বিরুদ্ধে লাগাতর জিহাদের। সে জিহাদে বিনিয়োগ ঘটাতে হয় অর্থ, শ্রম, মেধা ও রক্তের। জিহাদের এ ময়দানে পরীক্ষিত হয় মু’মিনদের ঈমান ও আমলের। সে জিহাদই হলো এমন এক ব্যবসা -যা ঈমানদারকে জান্নাতে নেয়। সুরা সাফা’র ১০ ও ১১ নম্বর আয়াতে মুসলিম জীবনের সে পবিত্র ব্যবসার কথা বলা হয়েছে। একাজটি সৈনিকদের। তাই মুসলিম হওয়ার অর্থই হলো মহান আল্লাহর পথে সৈনিক হওয়া। যে ব্যক্তি সৈনিক হতে ব্যর্থ হয়, সে ব্যর্থ হয় মুসলিম হতে। এবং ব্যর্থ হয় জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে নিজেকে বাঁচাতে। সে কথাগুলি বলা হয়েছে সুরা সাফ’য়ের নিম্নের দুটি আয়াতে। বলা হয়েছে:

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ تِجَـٰرَةٍۢ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍۢ ١٠

تُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتُجَـٰهِدُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمْوَٰلِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌۭ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ١١

অর্থ: “হে মু’মিনগণ! আমি কি তোমাদের এমন বাণিজ্যের সন্ধান দিব -যা তোমাদের রক্ষা করবে বেদনাদায়ক আযাব থেকে? সে বাণিজ্যটি হলো, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনবে এবং তোমাদের নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর -যদি তোমরা জানতে।” –(সুরা সাফ, আয়াত ১০-১১)।   

মুসলিম জীবনের এই মিশনটি বার বার স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে পবিত্র কুর’আনে। যারা আখেরাতে জাহান্নামে আগুন থেকে বাঁচতে চায়, তাদের জন্য মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা জানা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি হলো মুসলিম জীবনের মিশনটি জানা এবং তা নিয়ে আমৃত্যু জিহাদে লিপ্ত থাকা। সে মিশনের ঘোষণা এসেছে সুরা আল-ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:     

كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ ۗ

অর্থ: “তোমরাই হলে শেষ্ঠ উম্মত; তোমাদের আবির্ভাব ঘটনা হয়েছে সমগ্র মানব জাতির জন্য। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দিবে এবং নির্মূল করবে অসৎ কাজকে। এবং ঈমান আনবে আল্লাহর উপর।” –(সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১১০)। সুরা আল-ইমরানের উপরিউক্ত আয়াতে সুস্পষ্ট করা হয়েছে, কেন আবির্ভাব ঘটনা হয়েছে মুসলিমদের। সেটি হলো, সত্য ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা এবং অসত্য ও দুর্বৃত্তির নির্মূল। মহান আল্লাহতায়ালা এ পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন এবং নানা ভাবে সাঁজিয়েছেন এর প্রতিটি অঙ্গণকে। তবে এ পৃথিবীকে মিথ্যা ধর্ম, অসত্য মতবাদ ও দুর্বৃত্তির নাশকতা দেখে বাঁচানো এবং শান্তি, সুবিচার ও নিরাপত্তার নীড় রূপে গড়ে তোলার দায়িত্বটি মুসলিমদের। একাজে প্রতি মুসলিম হলো মহান আল্লাহতায়ালার খলিফা। সেটিই মুসলিম জীবনের ব্যবসা। যারা সে খলিফার দায়িত্ব পালনে সফল হয় তারাই জান্নাত দিয়ে পুরস্কৃত হয়। যারা ব্যর্থ হয় তারা পায় জাহান্নাম।  আর সে মিশনকে সফল করার জন্য অনিবার্য হাতিয়ার হলো ইসলামী রাষ্ট্র। তাই যারা শুধু নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত এবং মসজিদ-মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা নিয়ে খুশি, কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নাই -বুঝতে হবে তারা ইসলামের মূল মিশন বুঝতে তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। সে অভিন্ন মিশনের ঘোষণাটি এসেছে সুরা মায়েদার ৮ নম্বর আয়াতেও। বলা হয়েছে:

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ كُونُوا۟ قَوَّٰمِينَ لِلَّهِ شُهَدَآءَ بِٱلْقِسْطِ ۖ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَـَٔانُ قَوْمٍ عَلَىٰٓ أَلَّا تَعْدِلُوا۟ ۚ ٱعْدِلُوا۟ هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ ۖ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ خبِيرٌۢ بِمَا تَعْمَلُونَ ٨

অর্থ: “হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর জন্য খাড়া হয়ে যাও, সাক্ষ্যদাতা হও সুবিচারের পক্ষে। কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত থেকে বিরত না করে; সুবিচার করবে -সেটিই তাকওয়ার নিকটবর্তী। এবং আল্লাহকে ভয় করবে -তোমরা যা কিছু করো সে বিষয়ে আল্লাহ খবর রাখেন।” -(সুরা মায়েদা, আয়াত ৮)। একই রকম হুকুম এসেছে সুরা সাবার ৪৬ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:

 ۞ قُلْ إِنَّمَآ أَعِظُكُم بِوَٰحِدَةٍ ۖ أَن تَقُومُوا۟ لِلَّهِ مَثْنَىٰ وَفُرَٰدَىٰ ثُمَّ تَتَفَكَّرُوا۟ ۚ مَا بِصَاحِبِكُم مِّن جِنَّةٍ ۚ إِنْ هُوَ إِلَّا نَذِيرٌۭ لَّكُم بَيْنَ يَدَىْ عَذَابٍۢ شَدِيدٍۢ٤٦

অর্থ: বল হে মহম্মদ! “তোমাদের প্রতি আমার একটিই ওয়াজ, তা হলো তোমরা আল্লাহর জন্য (তথা আল্লাহর এজেন্ডাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে) খাড়া হয়ে যাও -দুই জন -দুই জন করে অথবা একাই।  অতঃপর চিন্তা করে দেখ! তোমাদের সঙ্গী (রাসূল) আদৌ কোন উম্মাদ নন। তিনি তো আসন্ন কঠিন আযাবের ব্যাপারে সতর্ক করছেন মাত্র।” তাই মহান আল্লাহতায়ালার হুকুম হলো, যারা  জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচতে চায় তাদের উপর ফরজ হলো তারা খাড়া হয়ে যাবে তাঁর খলিফারূপে তাঁর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জিহাদে। কিন্তু আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার জিহাদ বাদ দিয়ে যারা রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম, দলীয় ফ্যাসিজম, সমাজতন্ত্র, পুঁজিবাদ বা অন্য কোন মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে -তারা কি জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা পেতে পারে? উপরিউক্ত দুটি আয়াত অনুসারে মুসলিম হওয়ার অর্থই হলো, মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষে খাড়া হওয়া। সেটি শুধু জায়নামাজে নয়, বরং সেটি রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও যুদ্ধের ময়দানেও। এবং মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষে খাড়া হওয়ার অর্থ: তাঁর এজেন্ডার পক্ষে খাড়া হওয়া। অর্থাৎ তাঁর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর আইনের প্রতিষ্ঠা দেয়া। সেটি একমাত্র ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই সম্ভব। এবং যেখানে ইসলামী রাষ্ট্র নাই, বুঝতে হবে সেখানে প্রতিষ্ঠা পায়নি মহান আল্লাহয়ালার এজেন্ডা এবং তাঁর সার্বভৌমত্ব ও আইন। মুসলিমদের ব্যর্থতা নিদারুন ব্যর্থতা এখানে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষে খাড়া হওয়ায়। এরূপ ব্যর্থতা নিয়ে কি জান্নাত আশা করা যায়?    

 

যুদ্ধ আল্লাহতায়ালা ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে

মুসলিম হওয়ার অর্থই হলো মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার জিহাদ নিয়ে বাঁচা। এভাবেই তো বেঁচেছিলেন নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ। ইসলামের সে মৌল কথাটি বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কুর’আনের ছত্রে ছত্রে। তাই এমন একজন সাহাবীও পাওয়া যাবে না যার জীবনে জিহাদ ছিল না। অথচ সেরূপ জিহাদ আজ ক’জন মুসলিমের জীবনে? সে জিহাদ না থাকায় মুসলিম দেশগুলিতেও ইসলাম আজ পরাজিত। বিজয় সেখানে রাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, গোত্রবাদ, সেক্যুলারিজম, পুঁজিবাদ ও দলীয় ফ্যাসিবাদের। নবীজী (সা:)’র জামানায় যাদের জীবনে জিহাদ ছিল না -তাদেরকে মুনাফিক বলা হয়েছে। জিহাদে না থাকলে যে মুসলিম বলা যায় না -তা নিয়ে সুস্পষ্ট বয়ান এসেছে সুরা হুজরাতের ১৫ নম্বর আয়াতে। মু’মিনের জীবনে সে জিহাদ তো মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার জিহাদ। স্রেফ মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকাহ, মারকায নির্মাণ করে কি মহান মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করা সম্ভব? সে জন্য অবশ্যই ইসলামী রাষ্ট্র চাই। রাষ্ট্রের আদালত, প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে ইসলাম বিরোধীদের হাতে ন্যস্ত রেখে তাঁর সার্বভৌমত্ব ও শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা দেয়ার কাজটি অসম্ভব। অথচ অধিকাংশ মুসলিম দেশই অধিকৃত ইসলামের শত্রুশক্তির হাতে। সে অধিকৃত রাষ্ট্রগুলিতে চলছে মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এবং মুসলিম প্রজাগণ বাঁচছে তাদের প্রতি আত্মসমর্পণ নিয়ে। আর শত্রুপক্ষের প্রতি আত্মসমর্পণের অর্থই হলো ইসলামের সাথে গাদ্দারী। এবং মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে যুদ্ধের অর্থ হলো তাঁ এজেন্ডা, তাঁর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। শুধু তাই নয়, যে কোন অনৈসলামিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও সেটিকে বাঁচিয়ে রাখার যে কোন প্রচেষ্টাই হলো মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। অথচ বাংলাদেশের ন্যায় একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে সে যুদ্ধটি অতি প্রবল। দেশটির সেক্যুলার সংবিধান, অপরাধী প্রশাসন, সেক্যুলার আদালত এবং গুম-খুন-দুর্বৃত্তির প্লাবন হলো মহান আল্লাহতায়ার বিরুদ্ধে তেমন একটি চলমান যুদ্ধের দলিল।

রাসূলে পাক (সা:)’য়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অর্থ হলো তাঁর সূন্নত নির্মূলের যুদ্ধ। নবীজী(সা:)’য়ের সবচেয়ে বড় সূন্নতটি হলো ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা -যে রাষ্ট্রের তিনি ১০টি বছর রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। ফলে আজ যারা সেরূপ একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধী তাদের যুদ্ধটি মূলত মহান নবীজী(সা:)’র বিরুদ্ধে। এমন একটি যুদ্ধের সাথে জড়িত বাংলাদেশে প্রতিটি সেক্যুলার, জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থী রাজনৈতিক নেতাকর্মী। তাদের অপরাধটি মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে পরাজিত করার এবং শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করার। এরাই রাষ্ট্রের বুকে এনেছে ফাসাদ তথা দুর্বৃত্তির জোয়ার। বাংলাদেশকে এরা দুর্নীতিতে ৫ বার বিশ্বে প্রথম করেছে।  এটি গুরুতর অপরাধ। এবং সে অপরাধের শাস্তিও গুরুতর। মহান আল্লাহতায়ালা সে শাস্তির কথা ব্যক্ত করেছেন সুরা মায়েদার ৩৩ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:

إِنَّمَا جَزَٰٓؤُا۟ ٱلَّذِينَ يُحَارِبُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَسْعَوْنَ فِى ٱلْأَرْضِ فَسَادًا أَن يُقَتَّلُوٓا۟ أَوْ يُصَلَّبُوٓا۟ أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم مِّنْ خِلَـٰفٍ أَوْ يُنفَوْا۟ مِنَ ٱلْأَرْضِ ۚ ذَٰلِكَ لَهُمْ خِزْىٌۭ فِى ٱلدُّنْيَا ۖ وَلَهُمْ فِى ٱلْـَٔاخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ ٣٣

অর্থ: “যারা যুদ্ধ করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে এবং প্রচেষ্টা চালায় পৃথিবী পৃষ্ঠে ফ্যাসাদ তথা দুর্বৃত্তির প্রতিষ্ঠায়, তাদের জন্য  শাস্তি হলো: তাদেরকে হত্যা করা হবে, অথবা শূলে চড়ানো হবে, অথবা তাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে; অথবা দেশ থেকে তাদেরকে নির্বাসিত করা হবে। এটিই হলো তাদের জন্য এ দুনিয়ার জীবনের লাঞ্ছনা জনক শাস্তি; এবং আখেরাতে তাদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে মহাশাস্তি।” –(সুরা মায়েদা, আয়াত ৩৩)।

পৃথিবী পৃষ্ঠে সবচেয়ে বড় নাশকতাটি হলো মানব হত্যা। এবং সবচেয়ে বড় কল্যাণকর্মটি হলো কোন মানব সন্তানের প্রাণ বাঁচানো। একজন  নিরপরাধ মানুষের হত্যাকে সুরার মায়েদার নিম্নের আয়াতে গোটা মানবের হত্যা রূপে চিত্রিত করা হয়েছে। এবং মানুষের প্রাণ বাঁচানোকে গোটা মানবের প্রাণ বাঁচানো বলা হয়েছে। সুরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াতে সে ঘোষণাটি হলো:

مِنْ أَجْلِ ذَٰلِكَ كَتَبْنَا عَلَىٰ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ أَنَّهُۥ مَن قَتَلَ نَفْسًۢا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍۢ فِى ٱلْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِيعًۭا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَآ أَحْيَا ٱلنَّاسَ جَمِيعًۭا ۚ وَلَقَدْ جَآءَتْهُمْ رُسُلُنَا بِٱلْبَيِّنَـٰتِ ثُمَّ إِنَّ كَثِيرًۭا مِّنْهُم بَعْدَ ذَٰلِكَ فِى ٱلْأَرْضِ لَمُسْرِفُونَ ٣٢

অর্থ: “ঐ ঘটনার কারণে আমি বনি ইসরাইলীদের উপর বিধান জারি করলাম, কোন মানুষকে হত্যা কিংবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করার শাস্তি প্রদানের কারণ ছাড়া কেউ যদি কাউকে হত্যা করে, সে জন্য গোটা মানব জাতিকেই হত্যা করলো; আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন গোটা মানব জাতিকেই বাঁচিয়ে দিল। এদের কাছে আমার রাসূলগণ সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছিল, কিন্তু তারপরও এদের অনেক লোক জমিনের বুকে সীমালংঘনকারী রূপেই থেকে গেল।” –(সুরা মায়েদা, আয়াত ৩২)।  অথচ একজন বা দুইজন নয়, বিশাল বিশাল গণহত্যার কান্ড ঘটে রাষ্ট্র যখন দুর্বৃত্তদের দখলে যায়। হাজার হাজার মানুষকে তখন নানারূপ নির্যাতনের শিকারও হতে হয়। তাই অতি বড় মাপের পাপকর্ম হলো কোন খুনি দুর্বৃত্তকে ক্ষমতায় বসানো এবং রাজস্ব দিয়ে ও ভোট দিয়ে সে জালেমকে সুরক্ষা দেয়া ও তার শাসনের আয়ু বাড়ানো। অপর দিকে সবচেয়ে বড় কল্যাণকর কাজ হলো কোন খুনি শাসকের হাত থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করা। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে তো সে কাজটিই হয়। তাই পৃথিবী পৃষ্ঠে এটিই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ নেক কর্ম।

 

কেন নাই ইসলামী রাষ্ট্র?

পবিত্র কুর’আন যে ইসলাম পেশ করে এবং মহান নবীজী (সা:) যে ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা দিয়ে গেছেন, সে ইসলাম কোথাও বেঁচে নাই। কারণ, কোথাও বেঁচে নাই ইসলামী রাষ্ট্র। কারণ, ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ ছাড়া সে ইসলামকে কখনোই বাঁচিয়ে রাখা যায় না। নবীজী (সা:)’র সে ইসলামকে পূর্ণ ভাবে পালন করাও যায়না। তাই যারা মনে করে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ছাড়াও ইসলাম  পূর্ণ ভাবে পালন করা সম্ভব – বুঝতে হবে নবীজী (সা:)’র ইসলাম নিয়ে তারা গভীর ভাবে অজ্ঞ। বুঝতে হবে, তারা পবিত্র কুর’আন বুঝে পড়েনি এবং নবীজী (সা:)’র জীবনী থেকেও শিক্ষা নেয়নি।  এরাই হলো সে সব অজ্ঞ ও বিভ্রান্ত ব্যক্তি -যারা মনে করে ইসলাম শুধু ব্যক্তিগত জীবনে পালনের বিষয়। নিজ গৃহে বা মসজিদের জায়নামাজের পালন করলেই চলে। তারা ভাবে, ইসলাম বলতে বুঝায় স্রেফ নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও তাসবিহ-তাহলিল। পরিতাপের বিষয় হলো, সে ভ্রান্ত ধারণাটি শুধু সেক্যুলারিস্ট শাসকদের নয়, বেঁচে আছে বহু আলেমের মধ্যেও। এমন একটি ধারণার কারণেই নিজগৃহের বাইরে রাজনীতি, আদালত, প্রশাসন, বুদ্ধিবৃত্তি, শিক্ষাব্যবস্থায় ও সেনাবাহিনীতে ইসলামকে তথা পবিত্র কুর’আনের বিধানকে তারা স্থান দিতে রাজী নয়। তারা জানে, ইসলামকে স্থান দেয়ার অর্থ মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর এজেন্ডাকে স্থান দেয়া। সেটি হলে তাদের নিজেদের সার্বভৌমত্ব, স্বৈরাচার ও অধিকৃতি বাঁচে না। এজন্যই তারা ইসলামবিরোধী।  

পরিতাপের বিষয় হলো, অধিকাংশ মুসলিম দেশ স্বৈরাচারী শাসকদের হাতেই অধিকৃত। তাদের যুদ্ধ তাই ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের বিরুদ্ধে। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের যে কোন জিহাদকে এরা সন্ত্রাস বলে। শেখ হাসিনার ন্যায় বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টগণ সেটিকে জঙ্গিবাদও বলে। অথচ নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাদের জীবনে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের সশস্ত্র জিহাদ ছিল; রণাঙ্গণে তারা হত্যা করেছেন ইসলামের শত্রুদের। তবে কি তাদের সে সশস্ত্র জিহাদ সন্ত্রাস ছিল? নবীজী (সা:) ও তার সাহাবাগণ কি তবে সন্ত্রাসী ছিলেন? ইসলামের এ চিহ্নিত শত্রুগণ জেনে শুনেই ইসলামের পবিত্র জিহাদকে সন্ত্রাস বলে। এবং নিজেদের যুদ্ধকে সন্ত্রাস বলেনা। অথচ সন্ত্রাসের আভিধানিক অর্থ হলো, যে কোন রাজনৈতিক স্বার্থে অস্ত্রের ব্যবহার। সে বিচারে প্রতিটি স্বৈরাচারী শাসকই শতভাগ সন্ত্রাসী। তাদের প্রতিটি যুদ্ধই তাই যুদ্ধাপরাধ।  তাদের প্রতিটি যুদ্ধই আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে। শরিয়তের আইন তাদেরকে প্রাণদন্ড দেয় -যা ঘোষিত হয়েছে উপরিউক্ত সুরা মায়েদা ৩৩ নম্বর আয়াতে। এ চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ইসলামের পবিত্র জিহাদকে যে নামেই অভিহিত করুক না কেন, জিহাদ জিহাদই। এটিই ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। জিহাদে না থাকার অর্থ বিনা যুদ্ধে শয়তান ও তার অনুসারীদের ঘরে বিজয় তুলে দেয়া। সেটি কি কোন ঈমানদারের কাজ হতে পারে? অথচ বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশগুলিতে তো সেটিই রীতিতে পরিণত হয়েছে।

ইসলামের নির্দেশিত সকল ইবাদতের মাঝে একমাত্র জামাতবদ্ধ নামাজ পালনের কাজটি হয় মসজিদের মেঝেতে বা ঘরের জায়নামাজে। মহান আল্লাহতায়ালার বাকি সবগুলি হুকুম যেমন শাসনতন্ত্রে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব, আদালতে শরিয়তী আইনের বিচার,  নানা ভাষা ও নানা অঞ্চলের মুসলিমদের মাঝে প্যান-ইসলামীক ভাতৃত্ব, দুর্বৃত্তি ও অবিচারের নির্মূল, ন্যায় ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কুর’আন শিক্ষা, মুসলিম উম্মাহর প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমাজ কল্যাণ প্রকল্প – ইসলামের এরূপ সবগুলি প্রকল্প পালিত হয় মসজিদের বাইরে। প্রশ্ন হলো, মহান আল্লাহতায়ালার এ হুকুমগুলি পালিত না হলে কি কখনো পূর্ণ ইসলাম-পালন হয়? তখন তো মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কান্ড ঘটে -যা ব্যক্তিকে কাফিরে পরিণত করে। তাই যেখানে ইসলামী রাষ্ট্র নাই, বুঝতে হবে সেদেশে পূর্ণ ইসলাম পালনের কাজটিও হয়না; সেখানে পালিত হয়না নবীজী (সা:)’র ইসলাম। এর অর্থ দাঁড়ায়, যে ভূমিতে ইসলামী রাষ্ট্র নাই সেভূমিতে পূর্ণাঙ্গ মুসলিমও নাই। তাই নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাদের বহু অর্থ, বহু শ্রম ও বহু রক্তের বিনিময়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা দিতে হয়েছে। অথচ আজ সেটিই উপেক্ষিত। মুসলিমদের আজকের সকল ব্যর্থতার মূল কারণ তো এখানেই।

মুসলিম হওয়ার অর্থ শুধু নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত, কুর’আন তেলাওয়াত, দোয়া-দরুদ ও তাসবিহ পাঠ নিয়ে বাঁচা নয়। নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাদের ধর্মকর্ম কি শুধু এগুলি নিয়ে ছিল? শুধু সেটি হলে সে কালে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, কাফির শক্তির নির্মূলের জিহাদ, আদালতে শরিয়ত প্রতিষ্ঠা দেয়ার কাজগুলি কে করলো? এবং কেন করলো? প্রশ্ন হলো, যে ব্যক্তি দেশের আদালতে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশ নিল না, ভাষা-বর্ণ-গোত্র ও আঞ্চলিকতা-ভিত্তিক পরিচয়ের উর্দ্ধে ঊঠে নিজকে প্যান-ইসলামীক চেতনায় সমৃদ্ধ করলো না, দুর্বৃত্তদের নির্মূলের কাজে অংশ নিল না, সুবিচারকে প্রতিষ্ঠা দিল না, মুসলিম উম্মাহর জান-মালের সুরক্ষায় জিহাদ করলো না, এবং দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষের দুর্দশা দূর করায় কোন উদ্যোগই নিল না  -সে ব্যক্তি  মুসলিম হয় কি করে? নবীজী (সা:)’র সূন্নতের অনুসারীই বা হয় কি করে?  ঈমানদারই বা হয় কি করে? প্রকৃত মুসলিম তো একমাত্র সেই যে ইসলামের এ বিধানগুলিকে নিজ জীবনে ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিষ্ঠার জিহাদ নিয়ে বাঁচে। যার জীবনে সে জিহাদ নাই -বুঝতে হবে সে প্রকৃত ঈমানদার নয়। করা প্রকৃত ঈমানদার সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণাটি এসেছে সুরা হুজরাতের ১৫ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:

إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا۟ وَجَـٰهَدُوا۟ بِأَمْوَٰلِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّـٰدِقُونَ

অর্থ: “মু’মিন একমাত্র তারাই যারা ঈমান আনলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর, অতঃপর তার উপর আর কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করলো না। এবং নিজেদের সম্পদ ও জান দিয়ে জিহাদ করলো আল্লাহর রাস্তায়। ঈমানের দাবীতে এই লোকগুলোই হলো সত্যবাদী।” –(সুরা হুজরাত, আয়াত ১৫)। এটিই হলো, মহান আল্লাহতায়ালার নিজের পক্ষ থেকে দেয়া প্রকৃত ঈমানদারের সংজ্ঞা বা পরিচয়। যারা ঈমানদার হতে চায় তাদের উচিত উপরিউক্ত আয়াতের সাথে নিজের জীবনকে মিলিয়ে দেখা। খতিয়ে দেখা উচিত আল্লাহতায়ালার পথে জিহাদে তাঁর অর্থ, মেধা ও রক্তের কুরবানী আছে কিনা। উপরিউক্ত আয়াতের প্রেক্ষিতে এজন্যই নিশ্চিত বলা যায়, যার জীবনে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার জিহাদ নাই সে নামাজী, রোজাদার, হাজী, পীর, মৌলভী, মুফতি ও মোহাদ্দেস হতে পারে, কিন্তু প্রকৃত ঈমানদার নয়। সূদখোর, ঘুষখোর, মিথ্যাবাদী ও দুর্বৃত্ত স্বৈরাচারীগণও নামাজী, রোজাদার ও হাজী হতে পারে। কিন্তু তাদের জীবনে জিহাদ না থাকাতে তারা কখনোই ঈমানদার গণ্য হয় না। এজন্যই নবীজী (সা:)’র এমন কোন সাহাবী ছিলেন না যার জীবনে জিহাদ ছিল না। বরং অর্ধেকের বেশী সাহাবা শহীদ হয়ে গেছেন। নবীজী (সা:)’র যুগে যারা জিহাদ থেকে দূরে থেকেছে তাদেরকে মুনাফিক বলা হয়েছে।

জিহাদ তো তাদের জীবনেই অনিবার্য হয়ে উঠে যাদের জীবনে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব, তাঁর শরিয়তী আইন এবং তাঁর কুর’আনী হুকুমগুলিকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার প্রবল তাড়না থাকে। এবং তাড়না থাকে, এসব কাজের মধ্য দিয়ে মাগফিরাত ও জান্নাত লাভের। এমন তাড়না থেকেই মু’মিন ব্যক্তির জীবনে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জিহাদ অনিবার্য হয়ে উঠে। এ জিহাদে শহীদ হওয়াকে সে জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন মনে করে। কিন্তু যার মধ্য সে তাড়না নাই এবং ধর্মকর্ম বলতে বুঝে স্রেফ নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত, দোয়া-দরুদ ও কুর’অআন পাঠ নিয়ে বাঁচা -তার জীবনে জিহাদ থাকার কথা নয়। এমন ব্যক্তি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব বুঝে না, ফলে তার মধ্যে জিহাদও সৃষ্টি হয় না। মুসলিম বিশ্বে এমন কপট মুসলিমের সংখ্যাই বেশী। ফলে শতকরা ৯৮ ভাগ মুসলিমের দেশেও নির্মিত হচ্ছে না ইসলামী রাষ্ট্র। এবং গড়ে উঠছে না ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জিহাদ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *