সাবাস হামাস! মুক্তি পাক ফিলিস্তিন এবং শিক্ষা নিক মুসলিম উম্মাহ
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on October 9, 2023
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, মুসলিম জাহান
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
বিস্ময়কর ইতিহাস গড়লো হামাস
ফিলিস্তিনী ইসলামী সংগঠন হামাস আবার বিস্ময়কর ইতিহাস গড়লো। সমগ্র মানব ইতিহাসে এটি এক অনন্য ঘটনা। ইসরাইল কোন মামূলী রাষ্ট্র নয়। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলই হলো সর্ববৃহৎ সামরিক শক্তি। ইসরাইলের হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত সামরিক বাহিনী। রয়েছে পারমানবিক বোমা। ইসাইলের সীমান্ত ঘিরে রয়েছে সুরক্ষিত ডিফেন্স ব্যারিকেড। কিন্তু সে ব্যারিকেড ভেঙে হামাসের মুজাহিদগণ ইসরাইলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছে। ইসরাইলের অনেকগুলি শহরে ঢুকে পড়েছে। উল্লেখ্য যে, ২০০৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৪ বছরের সবগুলি খন্ডকালীন যুদ্ধে ইসরাইল ৬, ৪০৭ জন ফিলিস্তিনীকে হত্যা করেছে। হামাস হত্যা করেছে ৩০৮ জন ইসরাইলীকে। এ তথ্যটি আল জিরিয়া ইংরেজী টিভি চ্যানেলের। আল-জাজিরার আরো খবর, হামাস মুজাহিদদের হাতে ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গত দুই দিনে ৭০০র বেশি ইসরাইলী নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্য ২৬ জন সৈনিক। ১০০ জনের বেশী ইসরাইলীকে বন্দী করেছে। হামাসের মুজাহিদগণ ইসরাইলী সেনাবাহিনীর গাজা ব্রিগেডর ঘাটিকেও দখলে নিয়েছে। হামসা অভিনব ভাবে হামলা করেছে স্থল, বিমান ও সমুদ্র পথে। এটি অতি বিস্ময়কর রণকৌশল। হামাসের এটি বিশাল অর্জন। ইতিমধ্যেই গাজা’র উপর ইসরাইল লাগাতর বিমান হামলা শুরু করেছে। এ লেখাটি যখন লেখা হচ্ছিল সে সময় অবধি ৪১৩ গাজাবাসীর মৃত্যু হয়েছে -যার মধ্যে ৪০ জনের বেশী শিশু। ধ্বংস করা হয়েছে মসজিদ, স্কুল ও অসংখ্য আবাসিক স্থাপনা।
হামাসের এ বিস্ময়কর অর্জন মুসলিমদের আগামী দিনের ইতিহাসে অবশ্যই অমর হয়ে থাকবে। কারণ, ইসরাইলের জন্মের পর থেকে এতো ক্ষয়ক্ষতি আর কোনকালেই হয়নি। ১৯৬৭ সালে মিশর, জর্ডান ও সিরিয়া একত্রে মিলে যে যুদ্ধ শুরু করে সে যুদ্ধেও তারা ইসরাইলের ভিতরে ঢুকতে পারিনি। তিনটি আরব দেশের সেনাবাহিনীর সবাই মিলেও ইসরাইলের এতো ক্ষয়ক্ষতি করতে পারেনি। এ ঘটনা অবাক করে দিয়েছে সমগ্র বিশ্ববাসীকে। কঠিন নিন্দার মুখে ফেলেছে ইসরাইলের সরকার ও সেনাবাহিনী। এসবই হলো জিহাদের অর্জন। জিহাদে মুসলিমগণ একাকী থাকে না, তাদের সাথে থাকে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহতায়ালার বাহিনী। তাই যেখানেই জিহাদ শুরু হয়েছে সেখানেই বিজয় এসেছে। মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য ছাড়া হামাসের মুষ্টিমেয় মুজাহিদদের পক্ষে মধ্যপ্রাচ্যের সর্ববৃহৎ সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে এরূপ অর্জন অসম্ভব ছিল। একই কারণে ফ্রান্সের ন্যায় শক্তিশালী ঔপনিবেশিক শক্তি পরাজিত হয়েছে আলজিরিয়াতে। এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরাজিত হয়েছে আফগানিস্তানে। ঔপনিবেশক ব্রিটিশ পরাজিত হয়েছে বিশ্বের কোনে কোনে। প্রশ্ন হলো, ইসরাইল কি ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও শক্তিশালী? ঔপনিবেশিক ইসরাইলও পারবে তার অধিকৃত উপনিবেশকে দখলে রাখতে।
হামাস প্রমাণিত করলো ইসরাইল আদৌ অপরাজেয় নয়। দেশটির অভ্যন্তরে ঢুকা যায়, সেখানে হামলা করা যায় এবং ইসরাইলী সৈন্যদের গ্রেপ্তারও করা যায়। হামাসের এ বিস্ময়কর অর্জন বিপুল ভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়াবে ফিলিস্তিনের মুজাহিদদের মনে। জিহাদ হলো মুসলিমদের হাতে প্রতিরক্ষা ও প্রতিরোধের একমাত্র হাতিয়ার। পৃথিবীর যে কোন আগ্রাসী শক্তির ন্যায় আগ্রাসী ইসরাইলও শান্তিপূর্ণ পথে সমাধান চায়না। সাম্রজ্যবাদী ব্রিটিশগণ যেমন ভারতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন আফগানিস্তানে দখল জমিয়েছিল, ইসরাইলও তেমনি দখল জমিয়েছে ফিলিস্তিনে। এখন চায়, সামরিক শক্তির জোরে নিজের অবৈধ দখলদারিকে বজায় রাখতে।
পাশ্চাত্যশক্তির ইসরাইল-তোষণ
ইসরাইলের জন্মটাই অবৈধ। দেশটি বেঁচেও আছে সম্পূর্ণ অবৈধ পথে। জন্ম থেকেই ইসরাইলের ইতিহাস হলো অধিকৃত ভূমিতে বিরামহীন দখলদারি, জুলুম, নির্যাতন ও হত্যা। একদিকে তারা যেমন মূলভূমিকে দখলে নিয়ে সে ভূমির আদিবাসীদের বিতাড়িত করেছে, তেমনি সে ভূমিতে গড়েছে ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে আগত ইহুদীদের জন্য কলোনী। শ্বেতাঙ্গরা যেরূপ কলোনী গড়েছিল আমেরিকা ও দক্ষিণ আফ্রিকাতে, ইসরাইলও সে অভিন্ন অপরাধ করছে ফিলিস্তিনে। অথচ অবৈধ ভাবে প্রতিষ্ঠিত ইসরাইলকে তার জন্ম থেকেই স্বীকৃতি দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বের মোড়ল শক্তিবর্গ -যারা ছিল সে সময় জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও হর্তা-কর্তা। আজও এরাই ইসরাইলকে বাঁচিয়ে রেখেছে সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে। বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে থেকে ইসরাইলকে দেয়া হচ্ছে যুদ্ধাস্ত্র। বাইডেন সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা, তারা ইসরাইলের উদ্দেশ্যে অত্যাধুনিক বিমানবাহী জাহাজ পাঠাচ্ছে। এটিকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি।
ভারতের হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার ইসরাইলের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। তার কারণও রয়েছে। ইসরাইল যে নৃশংসতা মুসলিমদের সাথেই করছে, সেই একই রূপ অপরাধ, একই রূপ আগ্রাসন, একই রূপ জুলুম নরেন্দ্র মোদি সরকার করছে ভারতীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে। ইসরাইলের পক্ষে দাঁড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন সরকার। কারণ, ইসরাইলের যে এজেন্ডা, সেটি তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও এজেন্ডা। যুক্তরাষ্ট্রমন্ত্রী যে হত্যাকাণ্ড আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়াতে চালিয়েছে ইসরাইল তো সিটিই চালাচ্ছে ফিলিস্তিনে। ইসরাইলের পক্ষে দাড়িয়েছে গ্রেট ব্রিটেন ও ফ্রান্সের তাবৎ ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। এ শক্তিবর্গ রাশিয়ার ইউক্রেনের বিরোধীতা করছে, অথচ সমর্থন দিচ্ছে ইসরাইলের ফিলিস্তিন দখলকে।
ফিলিস্তিনের মূল ভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন গাজা হলো চার দিকে পরিবেষ্ঠিত একটি জেল খানা। গাজার দুই দিকে ইসরাইল, দক্ষিণে ইসরাইলের মিত্র মিশর। এবং পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর। বিদেশের সাথে যোগাযোগের জন্য গাজাতে একটি বিমান বন্দর ও সমুদ্র বন্দর ছিল। ইসরাইল তা শুরুতেই ধ্বংস করে দেয়। দীর্ঘদিন জেলে আটকা জনগণ মুক্তির জন্য বেপরোয়া হবে এবং সর্বাত্মক চেষ্টা করবে -সেটিই তো স্বাভাবিক। আজ হামাসা যা কিছু করছে -তা তাই অতি প্রত্যাশিত। তারা হতাশ হয়েছে জাতিসংঘ ও বিশ্বরাজনীতির প্রধান শক্তিগুলিবর গাদ্দারী থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা শুধু ইসরাইলের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবে, কিন্তু তারা ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলী জবরদখলের বিরুদ্ধে কথা বলে না। ফিলিস্তিনীদের পরাধীনতা, দুর্দশা ও বঞ্চনা তাদের মনে সাড়া জাগায় না। ফিলিস্তিনী নেতা ইয়াছির আরাফাতের সাথে ইসরাইল অসলো চুক্তি করেছিল এ মর্মে যে জর্দান নদীর পশ্চিম তীর গাজা এলাকা নিয়ে ফিলিস্তিনীদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পাবে। কিন্তু ইসরাইল গাদ্দারী করেছে তাদের স্বাক্ষরিত চুক্তির সাথে। তাই নিজেদের মুক্তির লড়াই নিজেরাই শুরু করেছে ফিলিস্তিনীরাি। সে লড়াই ইসরাইল ও তার মিত্রদের কাছে সন্ত্রাস গণ্য হচ্ছে। অথচ যে ইসরাইলের জন্মই সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে এবং লাগাতর সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে অধিকৃত ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে -সে সন্ত্রাসী ইসরাইলীদের বিরুদ্ধে কোন নিন্দা নাই।
ইসরাইলী কতৃপক্ষ গাজাবাসীদের গাজা ছেড়ে অন্যত্র যেতে নির্দেশ দিয়েছে। তাতে তাদের মতলব সুস্পষ্ট হচ্ছে। ইসরাইল চাচ্ছে গাজাকে মুসলিমশূণ্য করতে। গাজাবাসী স্বেচ্ছায় গাজা ত্যাগ না করলে শুরু হবে তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মুসলিমশূণ্য করার প্রক্ল্প। ইসরাইলের প্রতিষ্ঠা ঘটেছিল একই প্রক্রিয়ায় ফিলিস্তিন থেকে মুসলিমশূণ্য করার মধ্য দিয়ে। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার আগে মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে ইহুদী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলি হামলা শুরু করে। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ মুসলিমদের নিজ নিজ ঘরবাড়ী ও দোকানপাট ছাড়তে বাধ্য করা হয়। ফিলিস্তিনের ইতিহাসে এটি “নাকবা” তথা মহা বিপর্যয় রূপে পরিচিত। মুসলিমদের পরিত্যক্ত ঘরবাড়ী ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলিকে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ইহুদীদের মালিকানায় দেয়া হয়। অপর দিকে উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনীরা আশ্রয় নেন প্রতিবেশী লেবানন ও জর্দানে। বিগত ৭৫ বছরের বেশীকাল ধরে তারা বসবাস করছে রিফিউজী ক্যাম্পগুলিতেই। অথচ আন্তর্জাতিক আইনে ফিলিস্তিনী উদ্বাস্তুদের তাদের নিজ গৃহে ফেরার বৈধ অধিকার রয়েছে। কিন্তু ইসরাইল ফিলিস্তিনীদের সে অধিকার দিতে রাজী নয়। এভাবে ইসরাইল আন্তর্জাতিক অমান্য করছে। কিন্তু তাতে ইসরাইলে কোন শাস্তি পেতে হচ্ছে না। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বৃহৎ শক্তিবর্গ ইসরাইলের পক্ষে। জাতিসংঘও ফিলিস্তিনীদের ঘরে ফেরার কোন ব্যবস্থা করছে না। “জোর যার মুল্লুক তার” জঙ্গলের সে আইনের প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে।
ফিলিস্তিনীদের সাথে মুসলিম শাসকদের গাদ্দারী
এ পৃথিবীতে ৫০টির বেশি মুসলিম দেশ। কিন্তু তাদের মাঝে একমাত্র আফগানিস্তানের তালেবান সরকার হামাসের জিহাদের সমর্থনে জোড়ালো বক্তব্য রেখেছে। তারা ঘোষণা দিয়েছে, মুসলিম দেশগুলি ফিলিস্তিনে যাওযার রাস্তা দিলে ফিলিস্তিনীদের সাহায্যে মুজাহিদ পাঠাতেও রাজী। তাই সাবাস তালেবান সরকার! সমর্থন জানিয়েছে ইরানের সরকারও। ইস্তাম্বুলের রাস্তায় হামাসের পক্ষে বহু হাজার মানুষের মিছিল হয়েছে। মিছিল হয়েছে কুয়েতে। মিছিল হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউয়র্ক, ওয়াশিংটন ও সিকাগো শহরে। কিন্তু বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মানুষ এখনো রাস্তায় নামেনি। এ থেকে বুঝা যায়, তারা কতটা জিহাদশূন্য। জিহাদশূন্য হওয়ার কারণে তারা নিজেরাই স্বৈরাচারী শাসকের জেলখানায় বন্দী। প্রশ্ন হলো, কোন ফিলিস্তিনী মুসলিম যদি ইসরাইলীদের বোমায় আহত বা নিহত হয়, সে ব্যথা যদি কোন ব্যক্তি হৃদয়ে অনুভব না করে – সে কি মুসলিম? তার মধ্যে শরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও কি আছে? আল্লাহতায়ালা প্রতিটি মুসলিমকে অপর মুসলিমের ভাই বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তাই আল্লাহতায়ালার দেয়া সে ভাতৃত্বের পরিচয়টি ভূলে গেলে এবং তাতে অবহেলা দেখালে চরম গাদ্দারী হয় মহান আল্লাহতায়ালার সাথে।
পরিতাপের বিষয় হলো, মুসলিমদের মাঝে বেঁচে নাই ভাতৃত্বের সে বন্ধন। তারা আগ্রাসী জালিমদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হতে পারেনি। তারা প্রচণ্ড ভাবে বিভক্ত। অথচ আল্লাহ সুবহানুতায়ালা একতাকে ফরজ করেছেন এবং বিভক্তিকে হারাম করেছেন। অথচ মুসলিমগণ বাঁচছে নিজেদের মাঝে ভাষা, বর্ণ, ফেরকা ও মাজহাবের নামে বিভক্তি নিয়ে। একতা গড়া নিয়ে কোন আগ্রহ নাই। যদি কোন দেশে মুসলিমগণ হামলার শিকার হয় তখন বিশ্বের সকল মুসলিমদের উপর ফরজ হলো, সেই মজলুম ভাইদের পক্ষে খাড়া হওয়া। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। ৭৫ বছরের বেশীকাল ধরে ফিলিস্তিনীরা আজ জুলুমের শিকার। সৌদি আরব, মিশর, আমিরাত -এরা ফিলিস্তিনীদেরপক্ষ ত্যাগ করেছে অনেক আগেই। তারা ব্যস্ত ইসরাইলের সাথে বন্ধুত্ব গড়া নিয়ে। হামাসের সাম্প্রতিক জিহাদকে তারা সে পথে বাধা মনে করে। এদেশগুলী ব্যস্ত ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসক নরেন্দ্র মোদীর সাথে বন্ধুত্ব গড়তেও। অথচ নরেন্দ্র মোদী ভারতে মুসলিম হত্যা ও মসজিদ ধ্বংসে নেতৃত্ব দিচ্ছে। মার্কিন যক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দাবি হলো, মুসলিম দেশগুলো অবৈধ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিক। তুরস্ক, মিশর, জর্দান, বাহরাইন, আরব আমিরাত, সুদান, মরক্কো -এসব মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ইতিমধ্যে ইসরাইলক স্বীকৃতি দিয়েছেও। সৌদি আরবও স্বীকৃতি দেয়ার পথে। একটি অবৈধ দেশ এভাবেই মুসলিম বিশ্বের স্বীকৃতি পাচ্ছে।
মজলুমের অনুপ্রেরণার মডেল হলো হামাস
মুসলিমগণ আজ দেশে দেশে নির্যাতনর শিকার। ইসরাইল, ভারত, চীন ও মায়ানমারের মত অমুসলিম দেশগুলিতেই শুধু নয়, এমন কি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সৌদি আরবের মত মুসলিম দেশগুলিতেও মুসলিমগণ নৃশংস গুম, খুন, জেল ও নির্যাতনের শিকার। বিশ্বের মজলুম জনগণের জন্য হামাস অতি অনুপ্রেরণার উৎস। গাজার মোট জনসংখ্যা ২০ লাখের মতো। কিন্তু তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে পাহাড়ের মত্ দাঁড়িয়ে গেছে। তারা জিহাদ করছে নিজেদের জান, মাল, শ্রম তথা সর্বসামর্থ্য দিয়ে। ভারত, কাশ্মির, মায়ানমার, চীন ও অন্যান্য দেশের মজলুম মুসলিমদের উচিত তাদের জিহাদ থেকে শিক্ষা নেয়া। আল্লাহতায়ালা শুধু নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত ফরজ করেননি,ফরজ করেছেন জিহাদকে। জিহাদকে তিনি সর্বোচ্চ ইবাদতের মর্যাদা দিয়েছেন। স্বাধীনতা, ইজ্জত ও নিরাপত্তা নিয়ে বাঁচার অস্ত্র হলো এই জিহাদ। যাদের জীবনে জিহাদ নাই সেখানে মুসলমানদের বাঁচতে হয় পরাজয়, আত্মসমর্পণ ও গোলামী নিয়ে।
মহান আল্লাহতায়ালা চান, তার মুসলিম বান্দারা স্বাধীনভাবে সম্মান নিয়ে বাঁচুক। তারা বাস্তবায়িত করুক পবিত্র কুর’আনে নির্দেশিত এজেন্ডাকে। এটিই তো বান্দাহর উপর খেলাফতের দায়িত্ব। নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত পালনের সাথে তারা প্রতিষ্ঠা দিক আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনকে। তারা বিজয়ী করুক তাঁর এজেন্ডাকে। অথচ মুসলিমগণ সে পথে নাই। তারা বাঁচছে দেশে দেশে শত্রু শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ ও গোলামী নিয়ে। নবীজী (সা:) যে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা দিয়ে গেছেন তাতে ছিল ইসলামী রাষ্ট্র, ছিল শরীয়তের প্রতিষ্ঠা ছিল, ছিল ইসলামের অর্থনৈতিক কল্যাণের বিধান এবং ছিল সামাজিক ও পারিবারিক নিরাপত্তা। কিন্তু সেগুলি আজ বিলুপ্ত হয়েছে। নবীজী (সা:) যে ইসলামের প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন তাদের মাঝে সে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কোন তাড়নাই নেই। মুসলিমদের ইজ্জত জিহাদ নিয়ে বাঁচার মধ্যে। জিহাদ যে কীরূপ শক্তি, বিজয় ও ইজ্জত দেয় -হামাস সেটি আবার প্রমাণ করলো। শক্তিধর রাষ্ট্র শক্তির সাথে যে সংগঠন মোকাবেলার সামর্থ্য রাখে সেটি কি কম ক্ষমতাধর? তাই সীমান্ত ভেদ করে যে হামাস ইসরাইলের ভিতরে প্রবেশ করলো -সে কি কম শক্তিধর? অতীতেও জিহাদ বার বার বিশাল বিজয় দিয়েছে। সেদিন রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্যের মতো দুটি বিশ্বশক্তিকে মুসলিমগণ পরাজিত করেছিল। অথচ সে সময় মুসলিমদের সংখ্যা বাংলাদেশের একটি জেলা জনসংখ্যার সমান ছিল না। গাজার জনসংখ্যা মাত্র ২৫ লাখ। কিন্তু তারা বিশাল ইতিহাস গড়লো। সেটি শুধু জিহাদ নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্য। অথচ বিস্ময়ের বিষয় হলো ভারতের ২২ কোটির বেশি মুসলিম বাঁচছে গোলামী নিয়ে। কাশ্মীরে প্রায় এক কোটি মুসলিমও বাঁচছে গোলামী নিয়ে।
মুসলিমদের সামনে মাত্র দুটি অপশন। এক. ইজ্জত নিয়ে বাঁচার; দুই. জালেমের গোলামী নিয়ে বাঁচার। ইজ্জত নিয়ে বাঁচতে হলে অবশ্যই জিহাদ নিয়ে বাঁচতে হয়। যেখানে জিহাদ নাই, সেখানে পরাজয়, গোলামী ও আত্মসমর্পণ অনিবার্য হয়ে পড়ে। তাই জিহাদশূণ্য আত্মসমর্পিত জীবন দেখা যায় ফাতাহ’র আবু মিজান-শাসিত জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনে। সেখানে চলছে ইসরাইলের প্রতি আত্মসমর্পণ ও গোলামী। গোলামী ও আত্মসমর্পণ নিয়ে বাঁচছে কাশ্মীর এবং ভারতীয় মুসলিমগণও। গোলামী ও আত্মসমর্পণ নিয়ে বাঁচতে দেখা যায় বাঙালি মুসলিমদের জীবনেও। তারা বাঁচছে হাসিনার ন্যায় এক নৃশংস ভোটডাকাতের প্রতি গোলামী ও আত্মসমর্পণ নিয়ে। কীভাবে মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে হয় সেটি মহান নবীজী (সা:) শিখিয়ে গেছেন এবং পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ সুবহানাতায়ালাও সেটি বার বার বলেছেন। সেটি হলো জান, মাল, শ্রম তথা সমগ্র সামর্থ্য নিয়ে জিহাদ।
জিহাদ ছাড়া বিজয় নাই
ষড়যন্ত্র চলছে জিহাদের ন্যায় সর্ব বিরুদ্ধে। এ ষড়যন্ত্রের মূল লক্ষ্য হলো, মুসলিমদের প্রতিরোধহীন ও প্রতিরক্ষাহীন করা। সেটি করা হয় মুসলিমদের জিহাদশূণ্য করার মধ্য দিয়ে। কারণ মুসলিম মনে জিহাদ গড়ে প্রতিরোধের চেতনা। জিহাদশূণ্য করার ষড়যন্ত্র সফল করতে মুসলিম দেশগুলিতে দরবারী মোল্লা-মৌলভীদের ময়দানে নামানো হয়েছে। তাদের কাজ, জিহাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়া। ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলে একাজে কাদিয়ানীদের নামানো হয়েছিল। তারা বলতো, এ যুগে জিহাদের প্রয়োজন নাই। অনেক মোল্লা-মৌলভী একই কথা বলছে। উপরুন্ত জিহাদকে তারা সন্ত্রাস বলছে। জিহাদ নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা আরো বলে, জিহাদের ঘোষণা দিতে পারে একমাত্র মুসলিম দেশের সরকার। কত বড় মিথ্যাচার! ফিলিস্তিনীদের হাতে রাষ্ট্র নাই, ফলে কোন সরকারও নেই। এ অবস্থায় জিহাদের ঘোষণা কে দিবে? তবে কি তারা জিহাদ করবে না? তারা কি বাঁচবে ইসরাইলের সামনে গোলামী নিয়ে?
যখনই কোন দেশে জালেমের জুলুম শুরু হয়, জিহাদ তখন প্রতিটি ঈমানদারের উপর ফরজ হয়ে যায়। এক্ষেত্র মহান আল্লাহতায়ালার হুকুম হলো: ۞ قُلْ إِنَّمَآ أَعِظُكُم بِوَٰحِدَةٍ ۖ أَن تَقُومُوا۟ لِلَّهِ مَثْنَىٰ وَفُرَٰدَىٰ ثُمَّ تَتَفَكَّرُوا۟ ۚ ٤٦অর্থ: “বলুন (হে রাসূল!), তোমাদের প্রতি আমার একটিই নসিহত (ওয়াজ), সেটি হলো তোমরা খাড়া হয়ে যাও আল্লাহর জন্য (আল্লাহর এজেন্ডার বিজয়ে অর্থাৎ মিথ্যা, অবিচার ও দুর্বৃত্তির নির্মূলে এবং সত্য, সুবিচার ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় ), জোড়ায় জোড়ায়, অথবা একাকী। অতঃপর মননিবেশ করো চিন্তা-ভাবনায়।” –(সুরা সাবা আয়াত ৪৭)। তাছাড়া মুসলিম দেশগুলি তো জালেমদের হাতে আজ অধিকৃত। অধিকৃত সেসব দেশের সরকারগুলি তো জিহাদের দুশমন। তারা তো কখনোই জিহাদ ঘোষণা দিবে না বরং জনগণকে জিহাদ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করবে। বাংলাদেশের শেখ হাসিনা, মিশরের আব্দুল ফাতাহ আল-সিসি, সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ এবং পাকিস্তানের জেনারেল আসিফ মুনিরের ন্যায় শাসকগণ তো জিহাদকে সন্ত্রাস বলে। কোথাও যদি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পেত তবে সে রাষ্ট্রের সরকার অবশ্যই জিহাদের ঘোষণা দিত। জিহাদ করতো হয় তো তেমন এক ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা দেয়ার জন্য।
একমাত্র স্বাধীন মানুষই নির্ভয়ে তাঁর নিজ যোগ্যতার ও সামর্থ্যের বিনিয়োগ ঘটাতে পারে। তখন নেক আমল, দেশ গড়া ও বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রগতির কাজ দ্রুততর হয়। দেশ তখন সমৃদ্ধ ও শান্তিময় হয়। সত্য ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা পায়। কিন্তু যেসব স্বার্থপর শাসকদের যুদ্ধটি মুসলিম ও ইসলামের বিরুদ্ধে -তারা জনগণকে সে আজাদী দিতে রাজী নয়। তাদের ভাবনা নিজেদের শাসন বাঁচানো নিয়ে, জনগণের স্বাধীনতা, নেক আমলের সামর্থ্য, ইজ্জত ও দেশের উন্নয়ন নিয়ে ভাবে না। সেগুলি নিয়ে ইসরাইলের ন্যায় দখলদার ঔপনিবেশিক শক্তিও ভাবেনা। তাই ইজ্জত, স্বাধীনতা ও উন্নয়ন চাইলে দুর্বৃত্ত জালেম শাসকদের নির্মূল করতে হয়। ফিলিস্তিনে হামাস সেটিই করছে। অন্যান্য ভারত, কাশ্মির, মিশর, সিরিয়া ও বাংলাদেশের ন্যায় জালেম-অধিকৃত দেশের মুসলিমদের সামনেও এছাড়া কোন ভিন্ন পথ নাই। ৯/১০/২০২৩
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018