বাঙালির সর্বকালের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অপরাধী হাসিনা ও বাংলাদেশীদের ব্যর্থতা

ফিরোজ মাহবুব কামাল

বাঙালির মুখে আবারো চুনকালি

                                                                                                                                                     এ বঙ্গীয় বদ্বীপে মীর জাফরের ন্যায় ঘৃণ্য অপরাধীকে দেখা গেছে। কিন্তু বাংলার সর্বকালের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অপরাধী যে শেখ হাসিনা -তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ আছে? হাসিনা মীর জাফরের অপরাধকেও অতিক্রম করেছে।  মীর জাফর দেশের স্বাধীনতাকে ইংরেজদের হাতে তুলেছিল। কিন্তু সে দেশের নিরীহ জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেনি। শত শত মানুষকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে তাদের উপর নৃশংস নির্যাতন করা, বধ্যভূমিতে নিয়ে তাদের হত্যা করা ও নিহতের লাশকে গায়েব করার কাজটি মীর জাফর করিনি। এরূপ বর্বর অপরাধ কর্ম ৯ মাস যুদ্ধ কালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতেও হয়নি। কিন্তু হাসিনা শুধু দেশের স্বাধীনতাকে ভারতের ন্যায় শত্রু দেশের হাতে তুলে দেয়নি, মানুষকে গুম করা, তাদের উপর নির্যাতন করা, খুন করা ও লাশ গায়েব করার ন্যায় অপরাধ কর্মকে একটি শিল্প ও রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিনত করেছে। বহু হাজার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের দিয়ে হত্যাযজ্ঞ পরিচালনার জন্য RAB নামক একটি Death Squad গড়ে তুলেছে।

বাংলাদেশের মানুষ  RAB’য়ের নৃশংসতার সাথে বহু আগে থেকেই পরিচিত। RAB’য়ের হাতে নিখোঁজ হওয়া ছেলে হারা, ভাই হারা, পিতৃহারা বহু শত মানুষ “মায়ের ডাক” নামক একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে সে নৃশংসতাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।  কিন্তু জার্মানির প্রচার মাধ্যম ডয়েচো ভেল সম্প্রতি সে নৃশংসতাকে বিশ্বময় প্রচার দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি Inside the Death Squad নামক একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রচার করেছে। দেশ-বিদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ সেটি দেখেছে। এ ডক্যুমেন্টারীর মাধ্যমে  বাংলাদেশ নৃশংস কর্মের জন্য বিশ্বের দরবারে আবারো পরিচিতি পেল। ফলে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি আবার তলায় গিয়ে ঠেকলো।

কথা হলো, যে দেশের জনগণের অর্থে এরূপ খুনি বাহিনী প্রতিপালিত হয়, সে দেশের জনগণের কি কোন ইজ্জত থাকে? যে কোন সভ্য দেশে এমন খুনিদের স্থান তো কারাগারে হয়। অথচ হাসিনা তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে মানব হত্যায় নামিয়েছে। এভাবে বাঙালির মুখে হাসিনা চুনকালি মাখছে। দুর্বৃত্তদের সরকার প্রধান করার বিপদ তো এখানেই। তারা শুধু নিজেদের বেইজ্জতিই বাড়ায় না, দেশ ও দেশবাসীর ললাটেও বেইজ্জতির তমঘা এঁটে দেয়। একই কাজ করেছিল হাসিনার পিতা শেখ মুজিব। বাঙালির মুখে চুনকালি লাগিয়ে সে বিশ্ববাসীর সামনে হাজির করেছিল। এবং সেটি বাংলাদেশকে আন্তর্জতিক ভিক্ষার তলাহীন ঝুলি বানিয়ে। অথচ হাজারো বছরের ইতিহাসে বাংলার মানুষ এভাবে অন্যদের দোয়ারে ভিক্ষায় নেমেছে সে প্রমাণ নাই।

বাংলাদেশীদের মুখে হাসিনা নতুন করে চুনকালি লাগিয়েছে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটডাকাতি করে। সুষ্ঠ নির্বাচন কোন রকেট সায়েন্স নয়। মহাকাশে রকেট পাঠানোর সামর্থ্য অনেক দেশেরই নাই। কিন্তু নেপাল, শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত বহু দেশ একটি সুষ্ঠ ও সভ্য নির্বাচন করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ যে সামর্থ্য রাখেনা -হাসিনা ভোট ডাকাতি করে বিশ্ববাসীর সামনে সেটিই প্রমাণিত করেছে। বিশ্ববাসী এই প্রথম দেখলো, যে পুলিশও ব্যালট ছিনতাই করে ব্যালট বক্স ভরে। সে ভীষণ তাজ্জবের কথাটি জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জনসম্মুখে প্রকাশ করেছে।  এবং বিশ্ববাসী দেখলো এমন একটি ভোটডাকাতিকেও দেশের নির্বাচনি কমিশন ও আদালত সুষ্ঠ নির্বাচন বলে রায় দেয়।

এজন্যই সমাজের সবচেয়ে চরিত্রবান ব্যক্তিকে শুধু নামাজের ইমাম বানালে চলে না, এমন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের ইমামও বানাতে হয়। এজন্যই সরকার প্রধানের আসনে খোদ নবীজী (সা:) ও তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহাবাগণ বসেছেন। অথচ বাংলাদেশে সে আসনে হাসিনার ন্যায় এক ভোটডাকাত দুর্বৃত্তকে বসানো হয়। এমন রীতি তো ডাকাত দলের; সেখানে সবচেয়ে বড় ডাকাতকে দলের সর্দার বানানো হয়। অথচ সে অসভ্য রীতিই বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিণত হয়েছে। ফলে যে ডাকাত সারা দেশজুড়ে ভোটডাকাতির সামর্থ্য রাখে তাকেই দেশের প্রধানমন্ত্রী বানানো হয়। বাংলদেশের মানুষ সভ্য ও ভদ্র ভাবে বেড়ে উঠতে যে কতটা দারুন ভাবে ব্যর্থ হয়েছে -এটি হলো তারই দলিল।

 

অপরাধীকে সম্মানিত করাও গুরুতর অপরাধ

কোন জনপদে বসবাস শুরু করার আগে সে জনপদের হিংস্র পশুগুলিকে অবশ্যই জানতে হয়। চিনতে হয় সে জনপদের সবচেয়ে বিষাক্ত পোকামাকড়কেও। জানতে হয় সে জনপদের সংক্রামক রোগগুলিকেও। নিজ নিরাপত্তার জন্য এ মৌলিক জ্ঞান অতি জরুরী। সে বিপদগুলিকে নির্মূলও করতে হয়। তেমনি জরুরী হলো একটি দেশের নৃশংস অপরাধীদের চেনা। জানতে হয়, সেসব অপরাধীদের চরিত্র ও স্ট্রাটেজীকে। সে সাথে জানতে হয়, দেশ কীরূপে অপরাধীদের দখলে যায় -সেটিও। যে কোন সভ্য দেশে সেটি জানা এবং অন্যদের জানানো অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ কাজটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকদের।

যে দেশে মানবরূপী হিংস্র পশুদের চেনার সে কাজটি হয় না এবং অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার কাজটিও হয় না -সে দেশে কখনোই সভ্য মানুষ, সভ্য রাষ্ট্র ও সভ্য সমাজ নির্মিত হয়না।  এমন দেশে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধীরাই সম্মানিত হয়। এমন দেশের উপর দখলদারি প্রতিষ্ঠা পায় অপরাধীদের। বাংলাদেশ তো তেমনি এক দুর্বৃত্ত-অধিকৃত দেশ। এমন দেশে দ্রুত দুর্বৃত্তায়ন ঘটে। তখন দেশ দুর্বৃত্তিতে বার বার বিশ্ব রেকর্ড গড়ে। বাংলাদেশ দুর্বৃত্তিতে ৫ বার বিশ্বে প্রথম হয়ে সেটি প্রমাণ করেছে।

বাংলাদেশে ভয়ানক অপরাধীদেরও চেনার কাজটি শুরু থেকেই হয়নি। অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার কাজটিও হয়নি। বরং হয়েছে উল্টাটি। দেশটিতে সবচেয়ে বেশী স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে সমাজের সবচেয়ে জঘন্য অপরাধীদের। এ অপরাধীদের হাতে ১৯৭১’য়ে প্রায় ৬ লক্ষ বিহারীর ও বহু লক্ষ পাকিস্তানপন্থীর লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ঘরবাড়ি ও সম্পদ লুণ্ঠিত হয়ে যায়। হাজার হাজার বিহারী মহিলা ধর্ষিতা হয়েছে। ডাকাতি হয়ে যায় বিদেশীদের দেয়া বহু হাজার কোটি টাকার রিলিফের মাল। ডাকাতি হয় যায় রাষ্ট্রায়ত্ত  কল-কারখানগুলির হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। সে ডাকাতির ফলে বন্ধ হয়ে গেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাটকল আদমজী জুটমিলসহ বহু মিল। অপরাধকর্মের এ স্বর্গপুরিতে কোন একজন অপরাধীকেও শাস্তি দেয়া হয়নি। অপরাধীদের শাস্তি না দেয়াই ছিল রাষ্ট্রীয় নীতি। যারা বিহারীদের ঘরবাড়ী ডাকাতি করে নেয় সে ডাকাতদের পুরস্কৃত করা হয় দখলকৃত গৃহ, দোকান ও কারখানার  মালিকানা লিখে দিয়ে। ফলে সরকারি দলের ডাকাতেরা ঢাকার গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, মহম্মদপুর ও মীরপুরে বিশাল বিশাল বাড়ির মালিক হয়। অথচ যে কোন সভ্য দেশে এরূপ অপরাধকে বৈধতা দেয়াই গুরুতর অপরাধ। এভাবে কোন সভ্য রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মিত হয় না। এজন্য ইসলামে এটি হারাম ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অথচ বাংলাদেশে সে হারামকে হালাল করে নেয়া হয়।

দুর্বৃত্তদের বন্দুকের নল শুধু বিহারী ও পাকিস্তানপন্থীদের বিরুদ্ধেই ছিল না। তাদের সম্পদ লুটের পর ডাকাতদের হামলা শুরু হয় সমগ্র রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের উপর। এ স্বদেশী ডাকাতদের হাতে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার হারায় বাঙালিরাও। সমাজের এ সভ্য বিষয়গুলিকে মুজিব কবরে পাঠায়। বাঙালির জন্য মুজিবের উপহার ছিল ভারতের অধীনতা, ভয়ানক দুর্ভিক্ষ, বাকশালী ফ্যাসিবাদ ও বর্বর দুঃশাসন। অথচ বিস্ময়ের বিষয় হলো, এই বাঙালিরাই মাথায় তুলেছে গণতন্ত্রের খুনি, গণহত্যাকারী বাকশালী ফ্যাসিস্ট এবং বিদেশী অধীনতার জনক এই জঘন্য অপরাধীকে।

অথচ ইসলামে অপরাধ করাই শুধু অপরাধ নয়। গুরুতর অপরাধ হলো অপরাধীকে সম্মান করাও। অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামে যাবে খুন, ধর্ষণ ও চুরিডাকাতিতে অংশ নেয়ার জন্য নয়। বরং এ দুর্বৃত্তদের প্রতি সমর্থণ ও সম্মান দেখানোর কারণে। অথচ বাংলাদেশ সে অপরাধই বেশী বেশী হচ্ছে। ফলে মুজিবের ন্যায় অপরাধচক্রের দুর্বৃত্ত নেতাকে তারা নেতা, পিতা ও বন্ধুর আসনে বসিয়েছে। এদেশে হাসিনার ন্যায় ভোটডাকাতকে লক্ষ লক্ষ লোক মাননীয় ও শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী বলে। গুরুতর অপরাধীকে এরূপ সম্মান করার এই মহা অপরাধ ভয়ানক আযাব নামিয়ে আনে। তাই ফিরাউনকে যারা সম্মান দেখিয়েছিল তারা মহান আল্লাহতায়ালার আযাব থেকে বাঁচেনি। ইসলামের মিশন তো ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও দুর্বৃত্তির নির্মূল (আমিরু বিল মারুফ ও নেহি আনিল মুনকার)।  কিন্তু বাংলাদেশে ঘটছে তার উল্টোটি। ভোট দিয়ে, অর্থ দিয়ে ও লাঠি ধরে প্রতিষ্ঠা দেয়া হয় দুর্বৃত্তদের।

জীবাণু রোগ ছড়ায়,  অপরাধীরাও তেমনি অপরাধের বিস্তার ঘটায়।দেশকে তারা অপরাধ কর্মের জন্য অতি উপযোগী করে গড়ে তুলে। এজন্যই বাংলাদেশ পরিনত হয়েছে অপরাধীদের অভয় অরণ্যে। দুর্বৃত্তায়নের সে পথ ধরেই তো বাংলাদেশ দুর্বৃত্তিতে ৫ বার বিশ্বে প্রথম হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর একটি  অতি পরিচিত সভ্য রীতি হল  “naming and shaming”এর প্রথা। পাশ্চাত্যের  দেশগুলোতে অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের কাজ হলো দেশের হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সেবা প্রতিষ্ঠান, ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম  -এরূপ নানা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবছর  মূল্যায়ন করা ।‌ গুণাগুণের বিচার করে সে প্রতিষ্ঠানগুলির তারা রেংকিং পেশ করে। পত্রিকায় সে রেংকিংয়ের রিপোর্ট নিয়মিত প্রকাশিত হয়। ফলে দেশের মানুষ সেদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ হাসপাতাল, সর্বশ্রেষ্ঠ স্কুল- কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে যেমন জানতে পারে, তেমনি জানতে পারে সর্বনিকৃষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলিকেও। এভাবে জনগণ ভাল প্রতিষ্ঠানগুলিকে যেমন চিনতে পারে, তেমনি চিনতে পারে মন্দ প্রতিষ্ঠানগুলিকেও।

বাংলাদেশেও তেমন একটি রেংকিং’ পদ্ধতি চালু করা অতি জরুরী। বিশেষ করে সেটি দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন এবং তাদের নেতাদের নিয়ে।‌‌ দেশের কোন রাজনৈতিক সংগঠনটি সবচেয়ে গণতান্ত্রিক‌ এবং কোনটি সবচেয়ে স্বৈরতান্ত্রিক, কোন সংগঠনটি গুন্ডা, খুনী ও সন্ত্রাসী পালনকে প্রশ্রয় দেয় এবং কোন সংগঠনটি গুরুত্ব দেয় সভ্য ও দায়িত্বশীল মানুষ গড়ায় -সে বিষয়গুলি জনগণে সামনে প্রকাশ পাওয়া উচিত। প্রকাশ পাওয়া উচিত, বাঙালির সমগ্র ইতিহাসে সবচেয়ে অপরাধী ব্যক্তি কে এবং সে অপরাধী ব্যক্তির সংগঠনই বা কোনটি? গুম, খুন, নারী ধর্ষণ, নির্যাতন, চুরি-ডাকাতি, ভোটডাকাতি, সম্পদের উপর জবর দখল -এসবই গুরুতর অপরাধ। সে সাথে অপরাধ হলো কারো সম্মানের উপর আঘাত করা। এবং অপরাধ হলো কারো স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার ছিনিয়ে নেয়া। অপরাধ হলো জনগণের রায়কে ইজ্জত না দেয়া। বাংলাদেশে এ অপরাধগুলি হচ্ছে অতি ব্যাপক ভাবে। এবং সেটি হচ্ছে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা। এ অপরাধ রুখবার কেউ নাই। অথচ একটি দেশ কতটা সভ্য সেটি বুঝা যায় জনগণের মাঝে এরূপ দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের তাড়না দেখে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দায়িত্ব হলো সে অপরাধ জগতের নায়কদের অপরাধকর্মের সঠিক চিত্র পেশ করা। এবং দায়িত্ব হলো, ছাত্র-ছাত্রীদের এ দুর্বৃত্তদের নির্মূলে সৈনিক রূপে গড়ে তোলা। অথচ বাংলাদেশে সেটি হচ্ছে না। বরং প্রশংসা গীত গাইতে শেখানো হয় গণতন্ত্র হত্যাকারী দুর্বৃত্তদের নামে। এবং আড়াল করা হয় তাদের চারিত্রিক কদর্যতাকে।

 

 হাসিনাই বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অপরাধী

যে ব্যক্তি দশ-বিশ জন নিরীহ মানুষকে খুন করে সে সবচেয়ে বড় খুনি বা সবচেয়ে বড় অপরাধী হতে পারে না। সবচেয়ে বড় খুনি হতে হলে তাকে হাজার হাজার মানুষকে খুন করতে হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন একজন খুনিই  অতীতে হাজার হাজার মানুষকে একা খুন করতে পারিনি। তেমনি যে ব্যক্তি দশ-বিশটি ঘরে ডাকাতি করে সেও সবচেয়ে বড় ডাকাত হতে পারে না। তাকে লক্ষ লক্ষ করে ডাকাতি করার সামর্থ্য থাকতে হয়। বাংলাদেশে অতীতে কোন ডাকাতেরই সে সামর্থ্য ছিল না। তেমনি ‌যে ব্যক্তি দশ-বিশ জন মানুষের উপর নির্যাতন করে সেও সবচেয়ে বড় নির্যাতনকারী নয়। তাকে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপর নির্যাতন করার সামর্থ্য থাকতে হয়। সেরূপ নির্যাতনের সামর্থ্য অতীতে কোন বাঙালিরই ছিল না।

ব্যক্তির সম্পদই একমাত্র সম্পদ নয়। অতি মূল্যবান সম্পদ হলো তার ভোট। অর্থ দিয়ে দেশের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যায় না। সেটি করা যায় ভোটের মাধ্যমে। তাই যারা সমগ্র দেশকে ডাকাতি করতে চায়, তারা জনগণের ভোট ডাকাতি করে নেয়। তখন সে দেশের সমগ্র অর্থভান্ডারের উপর মালিকানা প্রতিষ্ঠা করে। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে কোন সে ভয়ানক অপরাধী যে সমগ্র দেশবাসীর ভোট ডাকাতি করে নিল? এভাবে ডাকাতি করে নিল সমগ্র দেশ। কে সে অপরাধী যে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ডাকাতিতে ও সে অর্থের বিদেশে পাচারে নেতৃত্ব দিল? কোন সে অপরাধী যে শত শত মানুষকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে আয়না ঘরের মতো নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে নির্যাতনে এবং তাদের হত্যায় নেতৃত্ব দিল? কে সে অপরাধী যে দেশের পুলিশ বাহিনী, বিজিবি, RAB, সেনাবাহিনীকে একটা সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত করলো? কে শাপলা চত্বরে হাজার হাজার মানুষের উপরে গুলি চালিয়ে দিল শত শত মানুষকে হতাহত করলো এবং নিহতদের লাশগুলোকে গায়েব করলো? কোন সে অপরাধী যে বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার কেড়ে নিল? কোন সে অপরাধী যে ডিজিটাল আইনের মাধ্যমে অপরাধীকে অপরাধী বলাটাই অপরাধে পরিণত করল? এবং নিষিদ্ধ করল স্বাধীনভাবে কথা বলা? সে অপরাধী ব্যক্তিটি যে হাসিনা তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ থাকে?

বাংলাদেশের বহু হাজার বছরের অতীত ইতিহাসে যত অর্থ ডাকাতি হয়ে গেছে শেখ হাসিনা একাই তার চেয়ে বড় ডাকাতিতে নেতৃত্ব দিয়েছে। কোন ডাকাত সর্দারেরই এতো বড় ডাকাতদল ছিল না যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন। ডাকাত দলের ডাকাতগণ বড় কিছু গৃহের অর্থ ডাকাতি করতে পারে। কিন্তু তারা কখনোই সমগ্র দেশ জুড়ে ডাকাতি করতে পারে না।  বাংলাদেশের সকল সন্ত্রাসী মিলে যত সন্ত্রাস করেছে শেখ হাসিনা তার পুলিশ, RAB, ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের নিয়ে তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি সন্ত্রাস করছে। বাংলাদেশের সকল খুনি মিলে যত মানুষ খুন করেছে হাসিনা একাই তার চেয়ে শতগুণ বেশি খুন করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সকল জালেম যত মানুষের মুখের কথা কেড়ে নিয়েছে হাসিনা একাই তার চেয়ে বেশি মানুষের মুখে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। তাহলে হাসিনাই কি বাংলাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অপরাধী নয়? বাঙালির সমগ্র অতীত ইতিহাসে  হাসিনার চেয়ে বড় অপরাধী কি কখনো দেখা গেছে? তাছাড়া সাধারণ চোর-ডাকাত, খুনি,ধর্ষক, সন্ত্রাসীদের অপরাধীদের অপরাধগুলি তাদের নিজ নিজ পরিসরে সীমিত। তাদের অপরাধে রাজনীতি থাকে না। জনগণের মৌলিক মানবিক অধিকার কেড়ে নেয়ার এজেন্ডাও থাকে না। বিদেশী শক্তির প্রতি গোলামীও থাকে না। কিন্তু হাসিনার অপরাধ বহুমুখী। তার অপরাধে থাকে সর্ববিধ রূপ অপরাধের মিশ্রণ।

শেখ হাসিনা সমগ্র রাষ্ট্রকে তার বহুমুখী অপরাধ কর্মের হাতিয়ারে পরিণত করেছে। অথচ রাষ্ট্রই হলো সভ্য মানুষ, ও সভ্য সমাজ নির্মাণের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। এজন্যই রাষ্ট্রকে দুর্বৃত্তদের হাতে মুক্ত করাই হলো মানব সভ্যতার সবচেয়ে উত্তম কল্যাণকর্ম। সে কাজ কখনোই হাসিনার মত একজন ভোটডাকাতকে ক্ষমতায় রেখে সম্ভব নয়। অপরাধীদের সবচেয়ে বড় চারিত্রিক দোষ হলো তাদের কোন লজ্জা-শরম থাকে না। নবীজীর (সা:)’য়ের হাদিস: লজ্জা ঈমানের অর্ধেক। তাই যার লজ্জা-শরম নাই, তার ঈমানও নাই। লজ্জাহীন ব্যক্তিগণ চুরি করে। নিরীহ মানুষের উপর তারা নির্যাতন করে। তারা ডাকাতি ও ভোটডাকাতিও করে। এবং সফল ডাকাতির পর তারা আনন্দ-উৎসবও করে। তাই ২০১৮ সালের ভোট ডাকাতির পর হাসিনাকে দলবল নিয়ে আনন্দ-উৎসবও করতে দেখা গেছে। এটি হাসিনার লজ্জাহীনতার নমুনা। অথচ লজ্জা থাকার কারণেই অধিকাংশ ডাকাতেরা রাতের আঁধারে লুকিয়ে ও মুখ ডেকে ডাকাতি করে এবং সফল ডাকাতি নিয়ে কখনো উৎসব করে না। নিজেদর কুকর্মকে তারা আজীবন গোপন রাখে। অথচ নির্লজ্জ হাসিনার সে লজ্জাটুকুও নাই। ঈমান বাডলে লজ্জাও বাড়ে। লজ্জার কারণে ঈমানদার তাই চুরি-ডাকাতি ও অপরাধে নামে না। অপরাধীরা যে অতি অগ্রসর বেইমান -তার প্রমাণ তো তাদের অপরাধ কর্ম। তাই ভোটডাকাত অপরাধীদের শাসন মানেই বেঈমানের শাসন। কোন ঈমানদার জনগণ কি সে শাসন মেনে নিতে পারে?

 

রাজনীতি যেখানে অপরাধ কর্মের হাতিয়ার

 রাজনীতি হলো ইসলামের সর্বোচ্চ ইবাদত।এটি পবিত্র জিহাদ। এ জিহাদ সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণ, আইনের শাসন, দুর্বৃত্ত শক্তির নির্মূল, সুনীতির প্রতিষ্ঠা ও ইসলামকে বিজয় করার। কিন্তু হাসিনার কাছে রাজনীতি হলো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, চুরি-ডাকাতি, ভোটডাকাতি, গুম, খুন, সন্ত্রাস, নির্যাতন ও অর্থ পাচারের হাতিয়ার। রাজনীতিকে সে পবিত্র ইবাদতের বদলে অপরাধ কর্মের অস্ত্রে পরিণত করেছে। এটি হাসিনার কৃত অতি গুরুতর অপরাধ। তার নেতৃত্বে ডাকাতি হয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ, প্রতিষ্ঠান ও জনগণের উপর। সে  ডাকাতির ফলে হাসিনার জৌলুস বেড়েছে। তার পড়নে লাখ টাকা দামের শাড়ি। নানা পদের টেবিল ভর্তি খাবার নিয়ে তার পানাহার।  তিনি বিদেশে ভ্রমনে যান প্লেন ভর্তি সহচর নিয়ে। অথচ দেশের কোটি কোটি মানুষ দুবেলা খাবারও পায় না। হাসিনা এরূপ রুচিহীন অসভ্যতা পেয়েছে তার পিতা শেখ মুজিব থেকে। মুজিবের দুঃশাসনে দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ এসেছে।  সে দুর্ভিক্ষে ১৫ লাখ মানুষ অনাহারে মারা গেছে। বস্ত্রের অভাবে নারীরা মাছধরা জাল পড়েছে। অথচ মুজিব সোনার মুকুট পড়িয়ে নিজ পুত্রের বিবাহ দিয়েছে। এই হলো মুজিব পরিবারের রুচিশীলতা। কোন সভ্য ও ভদ্র দেশে এমন অপরাধীগণ কখনোই জনগণের নেতা বা রাষ্ট্রনায়ক হয় না। সভ্য রাষ্ট্রনায়কদের কাজ তো জনগণের জান, মাল, ইজ্জতের সুরক্ষা দেয়া।  সুন্দর ও নিরাপদ জীবন যাপনের পরিবেশ সৃষ্টি করা। কিন্তু মুজিব ও হাসিনা করেছে সম্পূর্ণ উল্টোটি। তারা রাজনীতিকে অপরাধের হাতিয়ারে পরিণত করেছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও দলীয়  নেতাকর্মীদের দিয়ে খুনি বাহিনী  (death squad) গড়ে তুলেছে।

 

বাংলাদেশীদের অপরাধ এবং আযাব

 ঘরে আগুন লাগলে বা ডাকাত পড়লে পরীক্ষা শুরু হয় গৃহের বা মহল্লার প্রতিটি মানুষের জীবনে। সে পরীক্ষাটি হয় ব্যক্তির ঈমান, মানবতা ও নৈতিক সামর্থ্যের। সে সময় যে ব্যক্তি নিরব ও নিষ্ক্রিয় থাকে, বুঝতে হবে তার মধ্যে মানবতা, নৈতিকতা ও  ঈমান বলে সরিষার দানা পরিমাণও কিছু বেঁচে নেই। একই ভাবে ব্যক্তির ঈমান, বিবেক,‌‌ মানবতা ও সাহসের পরীক্ষা শুরু হয় যখন কোন দেশ দুর্বৃত্ত জালেম শাসকের হাতে অধিকৃত হয়। একমাত্র ভীরু, কাপুরুষ, বেইমান ও মানবতাশুণ্য লোকেরাই এরকম অবস্থায় নিরব ও নিষ্ক্রিয় থাকে। এরা যেমন অসভ্য ও ইতর, তেমনি বড় মাপের বেঈমানও। গরু-ছাগল চোখের সামনে চুরি-ডাকাতি, খুন বা ধর্ষণ হতে দেখলেও সে জীবগুলি নিরব থাকে এবং ব্যস্ত থাকে ঘাস খাওয়ায় । এজন্যই তারা ইতর। তেমনি ইতর অবস্থা ঈমানশূণ্য ও বিবেকশূণ্য মানুষদেরও।

তবে গরু-ছাগলের চেয়ে অধিক নিকৃষ্ট হলো তারা যারা চোর-ডাকাত, খুনি, ধর্ষক ও জালেম শাসকের পক্ষে অবস্থান নেয়। গরু-ছাগল যত ইতরই হোক তারা কখনোই দুর্বৃত্তদের পক্ষ নেয় না। দুর্বৃত্তদের পক্ষে পশুরা লাঠি ধরে না। পবিত্র কুর’আনে এমন ব্যক্তিদেরকে গবাদি পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলা হয়েছে।  ইসলামে এমন ব্যক্তিদের মুনাফিক বলা হয়। এমন তিন শত মুনাফিক দেখা গেছে নবীজী (সা)’র আমলে ওহুদ যুদ্ধের প্রাক্কালে। তারা সেদিন নবীজী (সা:)’‌য়ের নেতৃত্বে দুর্বৃত্ত কাফিরদের নির্মূলে জিহাদে নামতে রাজী হয়নি।  আজও কি এমন জিহাদ-বিমুখ মুনাফিকদের সংখ্যা কম? এদের সংখ্যা বিশাল হওয়ার কারণেই তো দুর্বৃত্ত জালেম শাসকের হা্তে বাংলাদেশ আজ অধিকৃত।

আজান শুনলে মসজিদের নামাজে ছুটতে হয়। মহল্লায় আগুন লাগলে আগুন থামাতে দৌড়াতে হয়।  এরূপ আচরনের মধ্যেই তো ঈমান ও মানবতা। তেমনি দেশে জালিম শাসক চেপে বসলে তার নির্মূলের জিহাদে নামতে হয়। যারা জালেমের বিরুদ্ধে নামে তারাই ঈমানের পরীক্ষায় পাশ করে। শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের ন্যায় ইবাদত পালন করে ঈমানের এই পরীক্ষায় পাশ করা যায় না। এমন ইবাদত মুনাফিকদের জীবনেও থাকে। এজন্যই নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের বাইরে প্রতিটি সাহাবায় জীবনে জিহাদ ছিল। ‌‌সে জিহাদের কারণেই সেদিন জালেমদের শাসন নির্মূল হয়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। ফলে দুর্বৃত্তি নির্মূল হয়েছিল এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার নির্মিত হয়েছিল। প্রশ্ন হলো বাংলাদেশীদের ক’জন ঈমানের সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে বা হচ্ছে? সে পরীক্ষায় বাঙালি মুসলিমরা ফেল করছে বলেই তো দুর্বৃত্ত নির্মূলের সে কাজটি আদৌ হচ্ছে না। ফলে তাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে নৃশংস জালেমের শাসন। জালেমের এ শাসন তাদের উপর আযাব রূপে অবতীর্ণ হয়েছে। কারণ, যারা ঈমানের পরীক্ষায় ফেল করে তাদেরকে নিয়ামত দিয়ে পুরস্কৃত করা মহান আল্লাহতায়ালার সূন্নত নয়। আযাব শুধু ভূমিকম্প, সুনামী, মহামারি ও ঘুর্ণিঝড় রূপে আসে না। আসে জালেম শাসকের রূপ ধরেও। তাই বাংলাদেশ আজ যে অবস্থায় পৌঁছেছে তার কারণ শুধু হাসিনার ন্যায় অপরাধীর নৃশংস অপরাধ কর্মই নয়, দায়ী জনগণের বেঈমানী, নিরবতা ও নিষ্ক্রিয়তাও। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে উভয়ই অপরাধী। ফলে আযাবের ভাগীদারও উভয়ই। ৫/৪/২০২৩

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *