জিহাদে অনাগ্রহ এবং বিদ্রোহ যেখানে আল্লাহর বিরুদ্ধে
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on December 26, 2018
- ইসলাম
- No Comments.
নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাতের ন্যায় জিহাদের হুকুমটিও এসেছে মহান আল্লাহতায়ালা থেকে। আল-কোরআনে সে হুকুম ঘোষিত হয়েছে একবার নয়, বহু বার। নামায-রোযা গড়ে মহান আল্লাহর সাথে মজবুত বন্ধন। দেয় আত্মীক পরিশুদ্ধি। আর জিহাদ দেয় শত্রুর হামলার মুখে প্রতিরক্ষা। নিশ্চিত করে আল্লাহর ভূমিতে একমাত্র আল্লাহর আইনের প্রতিষ্ঠা। তাই যেখানে জিহাদ নেই, সেখানে মুসলমানদের প্রতিরক্ষা নেই। এবং আল্লাহর আইনের প্রতিষ্ঠাও নেই। বরং এমন একটি জিহাদশূণ্য দেশে যেটি প্রবল ভাবে বাড়ে সেটি হলো মহান আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। মুসলিম ভূমি তখন অধিকৃত হয় দেশী ও বিদেশী দুষমনদের হাতে। মুসলিম দেশগুলিতে শয়তানী শক্তির বিজয় ও উল্লাস বেড়েছে তো এভাবেই। আল্লাহর ভূমি এভাবেই দখলে গেছে আল্লাহর দুষমনের। তাদের এ মহাবিজয়েরে ফলেই অধিকাংশ মুসলিম দেশে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে কাফেরদের আইন এবং আঁস্তাকুড়ে পড়েছে ইসলামের শরিয়তি বিধান। যাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র ঈমান আছে তারা আল্লাহর দ্বীনের এমন অবমাননা কি মেনে নিতে পারে? পারে কি এ অবস্থায় শান্তিতে ঘুমুতে? বরং সে তো যা কিছু সম্বল আছে তা নিয়ে জিহাদে নামবে অথবা জিহাদের প্রস্তুতি নিতে থাকবে। এছাড়া তৃতীয় কোন অবস্থার কথা কোন ঈমানদার কি ভাবতে পারে?
জিহাদের কাজ নিছক বেতনভোগী সেনাবাহিনী দিয়ে হয় না। নামায-রোযার ন্যায় এ ফরয দায়িত্বটিও পালন করতে হয় প্রতিটি মুসলমানকে। শত্রুর বিরুদ্ধে সীমান্তে বা রণাঙ্গনের যুদ্ধই জিহাদের একমাত্র কাজ নয়, সেটি পালন করতে হয় ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি ক্ষেত্রে এবং সম্ভাব্য সর্ব-উপায়ে। মুসলমান নিছক নামায-রোযা নিয়ে মশগুল থাকতে পারে না, তাকে মুসলিম ভূগোলের নিরাপত্তা, এমনকি ভূগোল বাড়ানো নিয়েও অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হয়। তাই ঈমানদারগণ শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ে না, ইসলামি রাষ্ট্রও গড়ে। এবং রাষ্ট্রের পরিধিও বাড়ায়। এ গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটি নবীজী ও তাঁর সাহাবাদের জীবনের সর্বত্র জুড়ে। তাঁরা নিজেদের ধর্মকর্মকে শুধু নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাতের মধ্যে সীমিত রাখেননি, তাঁরা সমগ্র আরবভুমি জুড়ে যেমন ইসলামি রাষ্ট্র নির্মান করেছেন তেমনি সুদৃঢ় নিরাপত্তা দিয়েছে সে রাষ্ট্রের। সে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই শত্রুর হামলার মুখে দখলে নিয়েছেন শত্রুদের রাষ্ট্রও। পারস্য সাম্রাজ্য ও রোমান সাম্রাজ্যের বিশাল ভূ-ভাগ মুসলমানদের দখলে এসেছে তো এভাবেই। ইসলাম তখন আর শুধু একটি ধর্ম রূপে সীমাবদ্ধ থাকেনি, জন্ম দিয়েছে এক প্রকান্ড বিশ্বশক্তি ও বিশ্বসভ্যতার। মহান আল্লাহতায়ালাতো এটিই চান। তিনি চান তাঁর দ্বীন বিশ্বব্যাপী বিজয়ী হোক। বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠা পাক তার সার্বভৌমত্ব, আর নিপাত যাক শয়তান, শয়তানের অনুসারী জনগণ ও জনগণের নির্বাচিত পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব। কোরআনের ভাষায় সেটি হলো “লিইয়ুজহেরাহু আলা দ্বীনি কুল্লিহী” অর্থাৎ যেন তার দ্বীন ছেয়ে যায় বিশ্বের আর সব ধর্মের উপর। আল্লাহর সে লক্ষ্য পূরণে ঈমানদারের প্রতিটি উদ্যোগ তো ইসলামে জিহাদ। আগুন থাকবে অথচ তার উত্তাপ থাকবে না সেটি ভাবা যায়। তেমনি ঈমান থাকবে অথচ জিহাদ থাকবে না সেটিও কি ভাবা যায়। তেমনটি ভাবা নবীজী (সাঃ)র যুগে অসম্ভব ছিল। তাই ঈমান এনেছে অথচ প্রাণ হাতে নিয়ে জিহাদে নামেনি এমন কোন ঈমানদার সে আমলে খুজে পাওয়া যাবে না। তাই যে প্রাণে ঈমান আছে সে প্রাণে জিহাদও জম্ম নিতে বাধ্য। আর যখনই মুসলমানের মাঝে জিহাদে অনাগ্রহ বেড়েছে তখনই মুসলিম ভূমি অধিকৃত হয়েছে স্বদেশী ও বিদেশী শত্রুদের হাতে। ইসলামী পক্ষকে পরাজয় করতে চিহ্নিত কাফেরদের পাশাপাশি প্রাণপণে লড়াই করেছে ইসলামে অঙ্গিকারশূণ্য লক্ষ লক্ষ সেকুলার মুসলমানেরাও। ফলে মুসলমানদের অধিকৃত ভূমি শুধু কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগানিস্তান নয়, প্রত্যক্ষ বা পরক্ষ ভাবে অধিকৃত প্রায় সবগুলি মুসলিম দেশ। অধিকৃত এসব মুসলিম ভূমিতে দথল জমিয়েছে কাফেরদের আইন, এবং তাদেরই অর্থনীতি ও সংস্কৃতি। নিজেদেরকে আলেম ও ইসলামের খাদেম বলে যারা জাহির করেন জিহাদে তাদের অনাগ্রহটাও কি কম?
নবীজী(সাঃ)র আমলে মুসলমানদের জানমাল, মেধা ও সময়ের সর্বাধিক খরচ হয়েছে রাষ্টের আইন-আদালত, রাজনীতি-অর্থনীতি, সামরিক-অসামরিক স্থাপনাসহ সকল প্রতিষ্ঠানের উপর মহান আল্লাহর এ হুকুমটির প্রতিষ্ঠায়, নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাত পালনে নয়। সে দায়িত্ব পালনে শহীদ হয়েছেন শতকরা ৬০ ভাগ সাহাবা। প্রশ্ন হলো, আল্লাহর দ্বীনের এসব শত্রুদের হটাতে সাধারণ মুসলমান দূরে থাক, মুসলিম দেশের লক্ষ লক্ষ আলেমদের মাঝে ক’জন তাদের জীবনের একটি দিন বা একটি দিন রাজপথে বা রণাঙ্গণে ব্যয় করেছে? লক্ষ্যণীয় হলো, সেদিন সাহবায়ে কেরামের বিপুল রক্তদানে মুসলমানদের শক্তিহানী না হয়ে তা প্রচন্ড ভাবে বেড়েছে। শক্তিহানী এবং শোচনীয় পরাজয় তো তখন শুরু হয়েছে যথন বন্ধ হয়েছে জিহাদ ও আল্লাহর পথে রক্তদান। শহীদের রক্তদানে যেটি অনিবার্য, সেটি হলো মহান আল্লাহর সাহায্য লাভ -যার ওয়াদা পবিত্র কোরআনে বার বার করা হয়েছে। আর শক্তির মূল উৎস তিনিই। আর যাদের সাহায্যে মহান আল্লাহতায়ালা এগিয়ে আসেন তারা কি দুর্বল হয়? আল্লাহতায়ালার সে সাহায্যের বলেই তো মুষ্টিমেয় মুসলমানেরা সে আমলে দুই বিশ্বশক্তিকে ধরাশায়ী করেছিল। অথচ আজ মুসলিম জনসংখ্যা শতকোটির অধিক। কিন্তু অথচ তাতে কি তাদের শক্তি বেড়েছে? বরং তা কমতে কমতে সে শক্তি ইসরাইলের কয়েক লাখ ইহুদীদের চেয়েও কমে গেছে।
তবে আল্লাহর পথে রক্তদান বন্ধ হলেও, মুসলমানদের রক্তপাত কমেনি। বরং তা বিপুল ভাবে বেড়েছে অন্যপথে। আল্লাহর পথে না মরে তারা বিপুল সংখ্যায় মরেছে অন্য পথে। রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্যের ন্যায় দু’টি বিশ্বশক্তির পতন ঘটাতে সে আমলের মুসলমানদের যে রক্তব্যায় হয়েছিল তার চেয়ে বহুশত গুণ বেশী রক্ত ব্যয় হয়েছে ভাষা, বর্ণ, গ্রোত্র, জাতি, ভূমি, ফেরকা, শ্রেনী, দল ও মতবাদের নামে। মুসলিম উম্মাহ আজ রক্তহীন, নির্জীব ও শয্যাশায়ী তো এ বিপুল আভ্যন্তরীন রক্তপাতের কারণেই। আল্লাহর আমানতের বড় খেয়ানত হয়েছে মূলতঃ এভাবে। প্রকৃত ঈমানদারের এপারের প্রতিটি ব্যয়ই পরপারে সঞ্চয় বাড়ায়। এ সঞ্চয়ের প্রতিদান স্বরূপ সে পায় আল্লাহর অপার রহমত। এবং নিশ্চিত করে জান্নাত-প্রাপ্তী। কিন্তু খেয়ানতে যেটি নিশ্চিত হয় সেটি তো জাহান্নাম। কাফের-মুনাফিকদের তথা আল্লাহর অবাধ্য বান্দাহর এপারের প্রতিটি প্রচেষ্টা, প্রতিটি উদ্যোগ, অর্থ ও রক্তব্যয় পরকালে যেটি ক্রয় করে সেটি হলো জাহান্নামের আযাব। আল্রাহর আমানতের মহা-খেয়ানত করেছিল ইহুদীরা। ৬ লাখ ইহুদীকে মহান আল্লাহতায়ালা ফিরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন, ৪০ বছর ধরে তাদেরকে আসমান থেকে নাযিলকৃত মান্না ও সালওয়া খাইয়েছিলেন। কিন্তু যখনই তাদেরকে জিহাদের কথা বলা হলো তখন তারা চরম অবাধ্য আচারন করেছিল। হযরত মূসা (আঃ)কে বলেছিলঃ “হে মূসা (আঃ)! তুমি এবং তোমার আল্লাহ গিয়ে যুদ্ধ করো। আমরা অপেক্ষায় থাকলাম।” নিজ ভাই হারুন (আঃ) ছাড়া মাত্র দুই জন তাঁর সাথে সে জিহাদে যেতে রাজি হয়েছিল। এ ছিল আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। আর আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ যেটি অনিবার্য করে তোলে সেটি হলো আল্লাহর আযাব। সে কঠিন তাই অনিবার্য হয়েছিল ইহুদীদের উপরও। তারা নিজভূমিতে বারা বার পরাজিত হয়েছে, নির্বাসিত হয়েছে, ছিন্নমূল হয়ে দেশে দেশে যাযাবরের মত ঘুরেছে। আর সে অবাধ্যতার পথই যেন বেছে নিয়েছে আজকের মুসলমানেরা।
জিহাদের বড় অবদান হলো, এটি মানুষের জীবনে বাঁচবার লক্ষ্যটিই পাল্টে দেয়। নামায জায়নামাযে আল্লাহমুখিতা দেয়। জিহাদ সে আল্লাহমুখিতা দেয় জীবনের প্রতি কর্মে, তথা বাচঁবার প্রতিটি আয়োজনে -হোক সেটি রাজনীতি, অর্থনীতি বা কোন পেশাদারি কাজকর্ম। এভাবে জিহাদ দেয় জীবনের ছোট-বড় প্রতিটি প্রচেষ্ঠায় আল্লাহমুখিতা। জিহাদের অর্থও তো প্রচেষ্ঠা যা করা হয় প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে। মোমেনকে তাই শুধু জায়নামায়ে দাড়িয়ে “ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ” অর্থঃ “আমি মুখ করলাম সেটি মহান সত্ত্বার দিকে যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন” বললে চলে না। অবিকল একই নিয়ত বাঁধতে হয় প্রতিক্ষনে ও প্রতিকর্মে। এটিই তো তাঁর বাঁচবার মূল মিশন। এমন নিয়তের কারণেই সে আমৃত্যু মোজাহিদ। প্রকৃত ঈমানদারের মৃত্যুও ঘটে তাই জিহাদের মধ্যে। এমন একটি আল্লাহমুখি নিয়ত তাকে শুধু অর্থহীন রাজনীতি, ভাতৃঘাতি সংঘাত ও রক্তপাত থেকেই মুক্তি দেয় না, দূর করে তার নিজ ঈমানের দূর্বলতাও। ঈমান ও আমল তো বাড়ে ত্যাগে ও কোরবানীতে। কোরবানী যেখানে যত বড়, ঈমানের বৃ্দ্িধও সেখানে তত অধিক। আর যেখানে কৃপণতা ও সংকীর্ণতা সেখানে বাসা বাধে মুনাফিকি। আজকের মুসলমানদের তুলনায় সাহাবাদের ঈমানের গভীরতা ছিল অনেক বেশী, কারণ তাদের কোরবানীটা ছিল অধিক। ব্যক্তি, পরিবার, গোত্র ও জাতীয় স্বার্থচিন্তার বদলে তাদের বাঁচবার ক্ষেত্রে গুরুত্ব পেয়েছিল আল্লাহকে খুশি করার বিষয়টি। ভাষা, ভূ-খন্ড, গোত্র ও দলভিত্তিক স্বার্থ চিন্তার চেয়ে তাদের কাছে প্রাধান্য পেয়েছিল সমগ্র মুসলিম উম্মাহর সার্থ চিন্তা। এমন একটি একমুখি সমচিন্তার কারণেই তখন জন্ম নিয়েছিল গভীর একতা। একারণেই সীসা-ঢালাসম একতা ও সম্প্রীতি গড়ে উঠেছিল তৎকালীন মুসলমানদের মাঝে। মদিনার আউস ও খাজরাজ গোত্রদ্বয় অতীতে ঘটে যাওয়া কোন এক হত্যার বদলা নিতে লাগাতর যুদ্ধ লড়তো, কোন কোন যুদ্ধ শত বছর ধরেও চলতো। এতে অবিরাম রক্তহানি ও সম্পদহানী হতো উভয় পক্ষের, বিজয়লাভ হতো না কারোই। এটি ছিল তাদের অজ্ঞতার দিনের তথা আইয়ামে জাহিলিয়াতের যুগের রীতি। অথচ ইসলাম তাদেরকে পরস্পরের ভাইতে পরিণত করেছে। এতে বন্ধ হয়েছিল রক্তপাত। তখন ভাতৃঘাতি লড়াই ছেড়ে আত্মনিয়োগ করে শান্তি ও সমৃদ্ধিময় এক সভ্যতার নির্মাণে। ইসলাম এভাবেই মানুষকে মহাক্ষতি থেকে বাঁচায় এবং প্রতিক্ষণে সৃষ্টিশীল করে। জিহাদ তাই হত্যা বা রক্তপাতের পথ নয়, বরং জীবন-বাঁচানোর পথ। সম্মিলিত ভাবে তারা সেদিন পরাজিত করেছিল মানুষের মূল শত্রুকে। আর সে মূল শত্রুটি হলো আল্লাহর অবাধ্যতা। এবং যাদের মধ্যে সে অবাধ্যতা তারাই আল্লাহর প্রকৃত দুষমন। সে অবাধ্যতা যেমন রাজনীতি, সমাজনীতি, বিচার-আচার, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে হতে পারে তেমনি হতে পারে নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাত পালনেও। আর এ অবাধ্যতার বিপরীত হলো আনুগত্য। ঈমানদারের কাজ হলো আল্লাহর আনুগত্যকে জীবনের প্রতিপর্বে প্রতিষ্ঠা করা। এবং এটিই নাযাতের একমাত্র পথ।
আল্লাহর অবাধ্যতা শুধু ইবলিসের চরিত্র নয়। সে অবাধ্যতা অতি প্রকট তাদের মাঝেও যারা নিজেদেরকে মুসলমান রূপে পরিচয় দেয়। মুসলিম সমাজ ও রাষ্ট্রগুলোতে সে অবাধ্যতা যে মুর্তিপুজার মধ্য দিয়ে হচ্ছে তা নয়। বরং সেটি হচ্ছে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্র জুড়ে। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, তাঁর দ্বীন ও তাঁর আইন তথা শরিয়তের প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা বা সেকাজে অনাগ্রহ হলো এমন এক জঘন্য অবাধ্যতা। অবাধ্যতা শুধু সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, মুসলমানেরা আজ ফিরে গেছে ইসলাম-পূর্ব আরবের আইয়ামে জাহিলিয়াতের দিনে। আরবের জাহেল বা অজ্ঞ কাফেরগণ যেরূপ ভাষা, বংশ ও গোত্রের পরিচয়ে বিভক্ত ছিল এবং সে বিভক্ত পরিচয় নিয়ে পরস্পরে লড়াই করতো, আজকের মুসলমানেরাও একই রূপ লড়াই লড়ছে নিজ গোত্র, ভূমি বা অন্য কোন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে। এরূপ স্বার্থ-ভিত্তিক লড়াইয়ের মাঝে গুরুত্ব হারিয়েছে ইসলামকে বিজয়ী করার বিষয়টি। এবং এভাবে আল্লাহর অবাধ্যতার প্রকট প্রকাশ ঘটছে তাদের রাজনীতি, অর্থনীতি ও যুদ্ধবিগ্রহে। এমন অবাধ্য মানুষের সংখ্যা যেদেশে অধিক সেদেশে যেটি অনিবার্য হয় সেটি রহমত নয়, বরং আল্লাহর আযাব। কথা হলো, এমন অবাধ্য ব্যক্তিদের দোয়া কি মহান আল্লাহর কাছে কবুল হয়? দোয়া কবুলের শর্তই হলো, ব্যক্তিকে তার প্রতি কর্মে ও আচরণে আল্লাহর অনুগত হতে হবে। নামাযের বিশাল জামাতে, হজ্জের বিশ্বজমায়েতে, লাখো লাখো মানুষের ওয়াজ ও ইজতেমার মাহফিল চোখের পানি ফেলে যে দোয়া করা হয়, তা কতটুকু কবুল হচ্ছে? কতটুকু লাঘব হচ্ছে মুসলমানদের মুছিবত? কতটা বিজয় আসছে মুসলমানদের?
মানুষ মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তিনি তাঁর এ শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে দুনিয়া এবং আখেরাতের আযাব থেকে মূক্ত দিতে চান। সে লক্ষ্য যাতে অর্জিত হয় সে জন্যই নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। যারা মুক্তি পাবে তাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন অফুরন্ত নেয়ামতভরা বিশাল বিশাল জান্নাত। তবে সে আযাব থেকে মুক্তি পেতে হলে ব্যক্তিকে প্রথমে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে মুক্তি পেতে হয়। আর সে মুক্তির অবিরাম লড়াইটি শুরু হয় নিজের অবাধ্য নফসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। নবীজী (সাঃ)র ভাষায় এটিই হলো মোমেনের বড় জিহাদ তথা জিহাদে আকবর। এ বড় জিহাদে যারা বিজয়ী হয় একমাত্র তারাই সামর্থ পায় পরবর্তী জিহাদের। এবং সে জিহাদটি শুরু হয় সমাজ ও রাষ্টের বুক থেকে আল্লাহর অবাধ্য বিদ্রোহীদের নির্মূলে। যে রাষ্ট্রে আল্লাহর দ্বীন ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জিহাদ নেই, বুঝতে হবে সে রাষ্ট্রে নফসের বিরুদ্ধে বিজয়ী মোজাহিদও নাই। কারণ যারা স্কুলের পাঠই সমাধা করতে পারে না তারা কি করে কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকবে? বিশ্ববিদ্যায়ের শ্রেণীকক্ষতো এমন সমাজে শূন্য থাকারই কথা। মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ দেশে আজও আল্লাহর দ্বীন ও তাঁর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াই যে এখনও যে তীব্রতর হয়নি তার মূল কারণ, এ বড় জিহাদে তথা নফসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয়ী মোজাহিদই তেমন গড়ে উঠেনি।
মোমেনের জীবনে নামায-রোযার মত জিহাদও আমৃত্যু। নামায-রোযার কাজা আদায়ের ফুরসত থাকলেও জিহাদে সে সুযোগ নাই। কারণ জিহাদে অনাগ্রহের অর্থ আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা। আর সেটি এক বিদ্রোহী মানসিকতার বিষয়। তাই সেটি মুহুর্তের জন্য হলেও কুফরি। নামাযের কাজা ঘুমের ঘোরেও হতে পারে। ফলে তাতে বিদ্রোহ বা অবাধ্য মানসিকতার প্রকাশ ঘটে না। তাই নামায কাজা হওয়াতে কেউ কাফের হয় না। অথচ আল্লাহর হুকমের অবাধ্যতা ঘুমের ঘোরে হয়না, হয় সচেতন মানসিকতায়। সেটি হলো এক বিদ্রোহী মানসিকতা। তাই আল্লাহতায়ালা যেখানে তার দ্বীনের বিজয়ে জিহাদের হুকুম দিয়েছেন সেখানে সে হুকুমের অবাধ্যতা চলে না। তাছাড়া জান ও মালের কোরবানী তো কাফেরও দেয়। তারাও লড়াইয়ে কষ্ট স্বীকার করে, মৃত্যু বরণও করে। বরং তাদের কোরবানীটা তো মুসলমানদের চেয়েও অধিক। ৬ কোটিরও বেশী মানুষ নিজেদের প্রাণ দিয়েছে দুটি বিশ্ব যুদ্ধে। মুসলমানেরা বিগত ১৪শত বছরেও এত রক্ত দেয়নি। তাদের সে কোরবানীর বিণিময়েই কুফরি জীবনদর্শন আজ বিশ্বব্যাপী বিজয়ী এবং পরাজিত হয়েছে ইসলাম। বিশ্বের নানা দেশের পথেপ্রান্তরে আজ মার্কিন সৈনিকেরা যেভাবে লড়াই লড়ছে এবং হাজারে হাজার প্রাণ দিচ্ছে সেটি কোন মুসলিম দেশের সৈনিকেরা কি করছে? আজ বিশ্ব জুড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে আধিপত্য সেটি তো তাদের লক্ষ লক্ষ নাগরিকের রক্ত এবং বহু ট্রিলিয়ন ডলারের নগদ দামে কেনা। অতীতে একই ভাবে বিপুল অর্থ ও রক্তের দামে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা। কাফেরদের মৃত্যুটি যে কম বেদনাদায়ক সেটিও নয়। এমনকি যারা জিহাদ না করে বিছানায় মারা যায়, তাদের মৃত্যুযাতনা যে শহীদদের চেয়ে কম সেটিও নয়। শহীদ আল্লাহর কাছে যে মহান মর্যাদা ও পুরস্কারটি পায় সেটি তার নিয়তের কারণে। অন্যদের থেকে এ নিয়তই তাকে কাফেরদের থেকে ভিন্নতর করে। সে ভিন্নতা যেমন তার বাঁচার লক্ষ্যে, তেমনি বাঁচার পদ্ধতি ও প্রাণদানে। জীবনের মহান আল্লাহতায়ালা সে নিয়তের ভিন্নতার কথা এভাবে বলেছেন “যারা ঈমানদার তারা লড়াই করে আল্লাহর রাস্তায়; আর যারা কাফের, তারা লড়াই করে শয়তানের পথে।” আল্লাহতায়ালা তো মোমেনের বাঁচার প্রতিটি মুহুর্তে তার বাঁচবার নিয়েতটিই দেখতে চান। আর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শহীদ ব্যক্তিটি তো এ সাক্ষীটিই দেয়, বাঁচার ন্যায় তার মৃত্যুটিইও একমাত্র মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে। ঈমানদারের সে ভাষ্যটিই পবিত্র কোরআনে ধ্বনিত হয়েছে এভাবেঃ “আমার নামায, আমার কোরবানী, আমার বাঁচা ও আমার মৃত্যূ সবই মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য।” অথবা “ইন্নালিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাইহি রা’জীয়ুন।” অর্থঃ নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাতেই ফিরে যাবো।”-(সুরা বাকারা)।
আল্লাহর দ্বীনকে যারা ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে চায় তাদের সংখ্যা কি বিশ্বে কম? দ্বীনের প্রতিষ্ঠা ও তাদের মোকাবেলা কি নিছক নামায-রোযা ও দোয়ার মজলিসে হয়? নবীজী (সাঃ)কেও সে কাজে রণাঙ্গনে নামতে হয়েছে। কথা হলো, ইসলামের বিরুদ্ধ-পক্ষটি নবী-আমলের চেয়ে আজও কি কম হিংস্র? মুসলিম দেশগুলীতে তারা যে দখলদারি প্রতিষ্ঠা করেছে তা থেকে এক বর্গ মাইল ভূমিও কি আল্লাহর দ্বীনের প্রতিষ্ঠায় ছেড়ে দিবে? আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার কাজ শুরু করলে, লড়াই তো এখানে অনিবার্য। আর সে লড়াইয়ে মুসলমানের মূল হাতিয়ার হলো জিহাদ। ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে যারা শক্তিহীন, প্রতিরক্ষাহীন ও পরাজিত দেখতে চায়, একমাত্র তারাই জিহাদহীন দেখতে চায় মুসলিম উম্মাহকে। জিহাদের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে আজ যে গালিগালাজ, মিথ্যাচার ও অপপ্রচার শুরু হয়েছে তা তো মুসলিম মনে জিহাদে অনাগ্রহ বাড়ানোর তাগিদে। তারা চায়, মুসলিম সমাজে জিহাদের এ গুরুত্বপূর্ণ ইন্সটিউশন বা প্রতিষ্ঠানটিই ধ্বংস হোক। এবং বিলুপ্ত হোক, মুসলমানের মন ও মনন থেকে জিহাদের মৌল ধারণা। তাদের কথা সশস্ত্র লড়াইয়ের হক শুধু সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহ ও তাদের সেকুলার এজেন্টদের। ভাবটা যেন, ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, পাকিস্তানসহ যে কোন দেশের যেকোন স্থানে যুদ্ধশুরুর অধিকার একমাত্র তাদের, তাদের অধিকার যে কোন দেশে যে কোন স্থানে ইচ্ছা তেমন বোমা বর্ষণের। কিন্ত অধিকার দিতে রাজী নয় সেটি প্রতিরোধের। মজলুমের প্রতিরোধকে তারা বলছে সন্ত্রাস। মজলুমের বৈধ হক যেন, বোমার আঘাতে শুধু আহত হওয়া বা মরে যাওয়া। এবং এ ধারণাটিকেই তারা গেলাতে চায় মুসলমানদের। সে লক্ষ্যে চায় মুসলমানদের চেতনা রাজ্যে আমূল পরিবর্তন। সে পরিবর্তনের লক্ষ্যেই তারা চায়, মুসলিম দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল সংস্কার। আর এটি শুধু ইসলামের শত্রুপক্ষের স্ট্রাটেজী নয়, একই লক্ষ্যে কাজ করছে মুসলিম সেকুলারিষ্টরাও। ফলে বিশ্বের কাফের শাসকদের সাথে গলা মিলিয়ে বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলির সেকুলারিষ্ট মুসলিম শাসকেরাও জিহাদকে চিত্রিত করছে আদিম বর্বরতা রূপে। কথা হলো, আল্লাহপাক ইসলামকে বিজয়ী করতে যে জিহাদের হুকুম দিলেন, নবীজী (সাঃ) যে জিহাদ বহুবার লড়লেন এবং শতকরা ৬০ ভাগ সাহাবা যে জিহাদে শহীদ হলেন, সে পবিত্র জিহাদের এমন অপব্যাখ্যা কি কোন মুসলমান মেনে নিতে পারে? মেনে নিলে কি তার ঈমান থাকে?
আল্লাহর দ্বীনের প্রতিষ্ঠায় ঈমানদারের যে লাগাতর লড়াই ও কোরবানী, ইসলামী পরিভাষায় সেটিই হলো জিহাদ। জিহাদ শব্দটি এসেছে আরবী শব্দ জুহদ থেকে, যার অর্থ প্রচেষ্টা। জাহেদ, জাহাদা, মোজাহিদা, মোজাহিদ -এসব শব্দগুলো এসেছে একই মূল শব্দ থেকে। জুহুদ বা প্রচেষ্টা যেমন একাকী হতে পারে, অন্যদের নিয়ে সম্মিলিত ভাবেও হতে পারে। ব্যক্তির এ প্রচেষ্টায় প্রতিপক্ষ থাকাটি জরুরী নয়। আরবী ভাষার রীতি হল, যখন এ মূল শব্দের সাথে অন্য এক বা একাধিক অক্ষর যোগ হয় তখন তার অর্থও পাল্টে যায়। তাই জুহুদ থেকে জাহাদা বা মুজাহাদা হলে তার অর্থও ভিন্ন হয়ে যায়। জাহাদা হলো প্রতিপক্ষের বাধার মুখে লড়াই চালিয়ে যাওয়া, প্রতিপক্ষ থাকাটি তাই এক্ষেত্রে জরুরী। জাহাদা থেকেই এসেছে জিহাদ ও মুজাহিদা। মুজাহিদা হতে হলে প্রতিপক্ষ থাকাটি যেহেতু অপরিহার্য, একাকী ঘরে বা মসজিদের জায়নামাযে বসে মুজাহিদা হয় না। তাকে লড়াইয়ের ময়দানে নামতে হয়। যারা সেটি করে তাদেরকে বলা হয় মোজাহিদ। এখানে ভেসে আসে একটি সংগ্রামী চিত্র। জাহেদ একজন গুহাবাসী দরবেশও হতে পারে –হতে পারে তার অবস্থান সমাজ ও রাষ্ট্রের চলমান সংগ্রাম-সংঘাত থেকে দূরে। কিন্তু মোজাহিদ হতে হলে তাকে লড়াইয়ের ময়দানে নেমে আসতে হবে। সেটি যেমন রাজনীতি বা বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে হতে পারে, তেমনি হতে পারে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে। হতে পারে নিজের নফসের বিরুদ্ধেও। তাই জিহাদে যেমন রক্ত ব্যয় হয়, তেমনি অর্থ-শ্রম-মেধা-সময়সহ সর্বপ্রকারের সামর্থ ব্যয় হয়। তাই কোরআনে যেখানে জিহাদের হুকুম এসেছে, শুধু প্রানদানের মধ্যে সেটিকে সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি। প্রানদানের সাথে শ্রমদান এবং অর্থদানও গুরুত্ব পেয়েছে।
মুসলমানের অপরিহার্য কাজ বা দায়িত্বটি বুঝতে হলে আল্লাহর আবদ বা দাস হওয়ার অর্থ কি, প্রথমে সেটি বুঝতে হবে। এখানে ব্যর্থ হলে ব্যর্থ হয় দায়িত্বপালন, এবং সে সাথে মুসলমান রূপে বাঁচাটিও। অথচ আজকের মুসলমানদের সবচেয়ে বড় অজ্ঞতা –সে সাথে বড় ব্যর্থতা মূলতঃ এ ক্ষেত্রটিতে। আর সে অজ্ঞতা থেকেই জন্ম নিয়েছে তাদের সকল প্রকারের ব্যর্থতা। পূর্বকালের মুসলমানদের সফলতার বড় কারণ, পবিত্র কোরআনের হুকুমগুলো বুঝবার ক্ষেত্রটিতে তারা বিন্দুমাত্র ভূল করেননি। বিজ্ঞানের বহু আধুনিক বিষয় তাদের অজানা থাকলেও মুসলমান হওয়া বা আল্লাহর দাস হওয়ার অর্থ কি সেটি তারা সঠিক ভাবেই বুঝেছিলেন। ফলে তারা যেমন সত্যিকারের মুসলমান রূপে যেমন বেড়ে উঠতে পেরেছিলেন, তেমনি পেরেছিলেন আল্লাহর দ্বীনকে বিশাল সাম্রাজ্য জুড়ে বিজয়ী করতে। এরই ফলে সফলতা পেয়েছিলেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেও। এবং সে সফলতার সাক্ষ্য এসেছে খোদ মহান রাব্বুল আলামীন থেকে। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেছেন, “রাদীআল্লাহু আনহুম ওয়া রাদু আনহু”, অর্থঃ আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও সন্তুষ্ট হয়েছে আল্লাহর উপর। আরবীতে আবদ শব্দের অর্থ দাস বা গোলাম। এমনকি রাসূলকেও বলা হয়েছে আল্লাহর আবদ তথা আল্লাহর দাস। মুসলমান হতে হলে তাই সাক্ষ্য দিতে হয়ঃ “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু।” অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ (সাঃ) হলেন আল্লাহর দাস ও রাসূল। এরূপ দাস হওয়ার মধ্যেই নবী-জীবনের সবচেয়ে বড় পরিচিতি ও শ্রেষ্ঠত্ব। মানুষের এটিই আসল পরিচিতি, এবং নবী-জীবনের এটিই সবচেয়ে বড় সূন্নত। নবীজী (সাঃ)এর আদর্শ অনুসরণে একই রূপ দাস হতে হয় প্রতিটি মুসলমানকে। এখানে ব্যর্থ হলে ব্যর্থ হয় তার মুসলমান রূপে বাঁচাটি। মানব সৃষ্টির মূল লক্ষ্য হলো, একমাত্র এ পরিচিতিটি নিয়েই মানুষ নিয়েই বাঁচবে এবং মৃত্যুবরণ করবে। এর বিপরীত যেটি সেটি হলো আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও অবাধ্যতা, এবং সে কাজ অভিশপ্ত শয়তানের। সমগ্র মানবসৃষ্টি মূলতঃ বিভক্ত এ দুটি বিপরীত ধারায়, তথা দুটি বিপরীতধর্মী জীবনদর্শনে। মাঝামাঝি কোন তৃতীয় দল নেই। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা এ বিভক্ত মানবজাতির একটি বলেছেন “হিজবুল্লাহ”, আর অপর দলকে বলেছেন “হিযবুশশায়তান”। একদল লড়াই করে আল্লাহর রাস্তায়, অপর দলটি লড়ে শয়তানের রাস্তায়।এ দুটি ধারার শুরু হাবিল ও কাবিল থেকে। এবং অব্যাহত থাকবে কেয়ামত অবধি। প্রতিটি ব্যক্তিকে স্বজ্ঞানে চলমান এ দুটি ধারার একটিকে গ্রহণ করতে হয়। ব্যক্তির প্রতিভা ও কান্ডজ্ঞানের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হয় মূলতঃ এ ক্ষেত্রটিতে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কর্মক্ষেত্রে নয়।
আবদ শব্দটির প্রকৃত অর্থ বুঝতে হলে জানতে হবে তৎকালীন আরব সমাজকে। দেখতে হবে, কোরআন নাযীলের সময় আরব সমাজে আবদ্ বা দাস শব্দটির প্রয়োগ কি অর্থে হতো সেটি। আজ সে দাসপ্রথা নেই, ফলে দাস বলতে কি বুঝায় সেটি স্বচোখে দেখার সুযোগ নাই। ফলে গড়ে উঠেনি দাস বলতে কি বুঝায় সে সঠিক ধারণাটি। ফলে মুখে আল্লাহর দাস বলে ঘোষণা দিলেও আজকের অধিকাংশ মুসলমান হয়ে পড়েছে নিজ নিজ নফসের দাস। আজকের মুসলমানদের বড় ব্যর্থতা নিছক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যর্থতা নয়, বরং সবচেয়ে ভয়ানক ব্যর্থতাটি হয়েছে মুসলমান রূপে বেড়ে উঠার ক্ষেত্রটিতে। আর এর কারণ, আল্লাহর আবদ বা দাস হওয়ার অর্থ কি সেটি না বুঝার কারণে। দাস কাকে বলে এবং দাসত্ব বলতে কি বুঝায় সেটি তারা স্বচক্ষে দেখিনি। কোন কিছু না দেখে কি সেটির ছবি আঁকা যায়? তা নিয়ে কি কোন ধারনা করা যায়? ফলে যে ব্যক্তি জীবনে কোন দিন দাস দেখিনি তার জন্য প্রকৃত দাস হওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে? অথচ আল্লাহর দাসত্বই হলো ব্যক্তির জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ফলে ব্যক্তির জীবনে সবচেয়ে গুরুত্ব পাঠ হলো, দাস শব্দটির অর্থ জানা। এ বিষযে মুর্খতা নিয়ে ডাক্তার হওয়া যায়, বিজ্ঞানী বা আইনজ্ঞও হওয়া যায় কিন্তু মুসলমান হওয়া যায় না। চাকুরিতে ঢুকে কেউ যদি তার মূল দায়িত্বটিই না বুঝে তবে কি সে দায়িত্ব পালনে সফলতা দেখানে পারে? মুসলিম দেশগুলির শিক্ষাব্যবস্থার বড় ব্যর্থতা এখানেই। এ শিক্ষাব্যবস্থায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে জ্ঞানদান গুরুত্ব পেলেও গুরুত্ব পায়নি জীবনের এ মূল পাঠটি। ফলে মুসলমান বলতে কি বুঝায় সে সঠিক ধারণাটিই সাধারণ মুসলমানদের মাঝে গড়ে উঠেনি। এর ফলে মনজগতে গড়ে উঠেনি আদর্শ মুসলমানের কাঙ্খিত মডেল। ফলে মুসলিম বিশ্বে হাজার হাজার কলেজ বিশ্ব-বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠলেও, এতে বাড়েনি আল্লাহর নিবেদিত দাস তথা সাচ্চা মুসলমানের সংখ্যা। ফলে বাড়ছে না মুসলমানদের শক্তি ও ইজ্জত। বরং ইতিহাস নির্মিত হচ্ছে পরাজয়, পরাধীনতা ও দূর্নীতিতে। অথচ ইসলামের প্রাথমিক যুগে একখানি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলে কি হবে, প্রতিটি ঘর পরিণত হয়েছিল জীবনের এ মূল পাঠ বিতরণের পাঠশালায়। ফলে ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছিল আল্লাহর একান্ত অনুগত দাস। এবং তাদের কারণেই গড়ে উঠেছিল মানব-ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা। আজও সমগ্র মানব ইতিহাসের তারাই শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এ যাবত কালের সমগ্র মুসলিম ইতিহাসে আজও তারাই সবচেয়ে বড় গর্বের।
কোরআনকে বুঝতে হয় তার শানে নযুল তথা নাযিল কালের সমাজ ও পরিবেশ-পরিস্থিতির আলোকে। আজ অবধি কোরআনের যত ব্যাখা হয়েছে সকল মুফাস্সিরগণ সে মৌল নীতিটিই মেনে চলেছেন। তাই দআবদদ শব্দটির অর্থ বুঝতে হবে সে আমলে দাস বলতে কি বুঝানো হতো সে আলোকে। দেখা যাক কোরআন-নাযিল কালে দাসদের চিত্রটা কেমন ছিল? তখন আরবে দাস রূপে মানুষের ক্রয় বিক্রয় হত। ক্রয়কৃত দাসটির উপর পূর্ণ মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হত মনিবের। তাকে মেনে চলতে হত মালিকের সমস্ত হুকুম। কোন একটি হুকুমকেও অমান্য করার অধিকার থাকতো না দাসের। মালিকের সমস্ত কাজ তাকে করে দিতে হতো। তাকে মালিকের পক্ষে যুদ্ধে যেতে হত, যুদ্ধে প্রাণও দিতে হত। স্মরণীয় যে, ওহুদের যুদ্ধে মুসলিম সেনাবাহিনীর সেনাপতি হযরত হামযা (রাঃ) শহীদ হয়েছিলেন এমনি এক ক্রীতদাসের বর্শার আঘাতে। সে ছিল আবু সুফিয়ান পতিœ হিন্দার দাস। মনিবের কোন একটি হুকুম অমান্য করলে সেটি গণ্য হত বিদ্রোহ রূপে। সে বিদ্রোহের শাস্তি স্বরূপ মনিব দাসকে ইচ্ছামত নির্যাতন করতো, এমনকি হ্ত্যাও করতো। কারো অধিকার ছিল না সে কাজে বাধা দেওয়ার। দাসের কোন ধর্মীয় স্বীধনতাও ছিল না। তাকে বিশ্বাস করতে হত এবং মেনে চলতে হত মনিবের ধর্মীয় বিশ্বাসগুলীও। সে সময় মুসলমান হওয়াটি তাই গণ্য হতো মালিকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ রূপে। ইসলাম গ্রহণ করার কারণে অনেক দাসকে নৃশংস নির্যাতন এবং নির্যাতন শেষে নিহতও হতে হয়েছে, কিন্তু এতে কেউ বাধা দেয়নি। কারণ সে সমাজে দাসদের উপর তার মনিক অত্যাচার করলে বাধা দেওয়ার রেওয়াজ ছিলনা। দাসকে বসবাসের জন্য ঘর দেওয়া হত, বিছানোও দেওয়া হত। কিন্তু কোন কিছুর উপর তাদের মালিকানা ছিল না। তাই সে আমলের দাসকে আজকের চাকুরিজীবী বা কর্মচারির সমতূল্য ভাবলে চরম ভূল হবে, কারণ আজকের কর্মচারিরা তাদের কর্মঘন্টার বাইরে স্বাধীন। এমনকি কর্ম-সময়েও তারা কর্মকর্তার সকল হুকুম মানতে বাধ্য নয়। সে ততটুকু মানে যতটুকু তার সার্ভিস রুল বা কর্মবিধির আওতাভূক্ত। তাই কোন পুলিশ বা কেরানীকে দিয়ে ঝাড়ুদারির কাজ করিয়ে নেওয়া যায়না। অথচ সে আমলে দাসদের জন্য কোন কর্মবিধি ছিল না। সর্ব ধরণের কাজ করতে তারা বাধ্য ছিল।
বীজ থেকে যেমন প্রকান্ড গাছ জন্মায়, তেমনি ব্যক্তির নিজস্ব ধারণা থেকেই জন্ম নেয় তার নিজস্ব কর্ম, চরিত্র ও আচরণ। ব্যক্তির কর্ম, আচরন, চরিত্র ও সংস্কৃতি হলো তার অন্তঃনিহিত ধারণারই প্রতিফলন। তাই প্রকৃত মুসলমান রূপে বেড়ে উঠার কাজটি শুরু করতে হয় আল্লাহর দাস বা গোলাম বলতে কি বুঝায় সে বিষয়ে সঠিক ধারণাটি গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে। ইসলামী পরিভাষায় সে ধারণাটিই হলো আক্বিদা। এ আক্বিদাই নির্ধারণ করে দেয় তার আমল ও আখলাক কেমন হবে। দুর্বৃত্ত ব্যক্তির আচরণ দেখেই বুঝা যায় ব্যক্তির মূল রোগ দেহে নয়, তার আক্বিদায়। নবীজী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাগণ বিপুল সময় ব্যয় সময় করেছেন মানুষের আক্বিদার সংশোধনে। কোরআনের ক’টি আয়াত নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাতের আহকাম শেখাতে? বেশীর ভাগ আয়াত তো এসেছে ব্যক্তির জীবন ও জগত নিয়ে বিশুদ্ধ আক্বিদা বা ধারণা নির্মানে। কিন্তু সেটি কি অর্থ না বুঝে নিছক তেলাওয়াতে হয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে জ্ঞানের বিশাল ভান্ডার গড়ে উঠেছে মুসলমানদের আক্বিদার পরিশুদ্ধিতে। কিন্তু বর্তমানে রাস্তা-ঘাট ও কলকারখানা গড়া গুরুত্ব পেলেও গুরুত্ব পায়নি আক্বিদা গড়ার ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি। বাংলাদেশের মত দেশটি যখন দুর্বৃত্তিতে বিশ্ব শিরোপা লাভ করে তখন কি আর বুঝতে বাকি থাকে যে, দেশটির মূল সমস্যা তার জলাবায়ু বা ভূ-প্রকৃতিতে নয় বরং জনগণের আক্বিদা ও বিশ্বাসে। এবং সেটি দআবদদ, দইবাদতদ, দজিহাদ,দ দমুসলমানদ –এসব মৌলিক শব্দগুলির আক্বিদাগত সুস্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণে। ফলে বাংলাদেশের ন্যায় দেশে বিপুল সংখ্যক মসজিদ মাদ্রাসা থাকলে কি হবে, প্রকট সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে প্রকৃত মুসলমান রূপে বেড়ে উঠায়।
নবীজী (সাঃ)-এর জামানায় দাস বলতে মানুষ যা বুঝতো, মহান আল্লাহাতায়ালা সেরূপ দাস রূপেই দেখতে চান প্রতিটি মুসলমানকে। অনুগত দাস রূপে তাকে মানতে হবে কোরআনের প্রতিটি হুকুম, যে কোন একটি হুকুমের অবাধ্যতা গণ্য হবে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ রূপে। সে অবাধ্যতার কারণে সে গণ্য হবে কাফের রূপে। মুসলমান হওয়ার শর্ত হলো, তাকে ইসলামে প্রবেশ করতে হবে পরিপূর্ণ ভাবে। কোরআনে বলা হয়েছে, “উদখুলু ফিস সিলমে কা’আফ্ফা” অর্থঃ তোমরা ইসলামে প্রবেশ করো পরিপূর্ণ ভাবে। এ আয়াতে সুস্পষ্ট, ইসলাম কবুল করার অর্থ ইসলামের পূর্ণ প্যাকেজকে কবুল করা। দোকানের শপিং লিষ্টের মত খেয়াশ-খুশি মত একটিকে গ্রহন এবং অপরটিকে বর্জনের অনুমতি এখানে নেই। শুধু নামায-রোযাকে গ্রহণ করা হলো, হজ্জ-যাকাতকে নয় –সে সুযোগ ইসলাম দেয়না। এটি আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা। একই ভাবে নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাতসহ ইসলামের সব বিধান গুলোকে কেউ কবুল করলো অথচ ধন-সম্পদ ও প্রাণ বাঁচানোর ভয়ে জিহাদ থেকে দূরে থাকলো –সেটিও আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। এ বিদ্রোহের শাস্তি যেমন দুনিয়ায় পেতে হয়, তেমনি আখেরাতেও। আল্লাহতায়ালা চান তার বান্দাহর পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও আনুগত্য। মুসলমান শব্দটির আভিধানিক অর্থও হলো পূর্ণাঙ্গ আত্মসমর্পণ ও আনুগত্য। এবং এ নামটি দিয়েছিলেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ)।আল্লাহতায়ালার কাছে তাঁর দেওয়া এ নামটি এতটাই পছন্দের হযেছিল যে কেয়ামত অবধি তিনি এ নামটি তার প্রতিটি আনুগত ও আত্মসমর্পিত বান্দাহর জন্য রেখে দিয়েছেন। আর সে আনুগত্য ও আত্মসমর্পণ হলো আল্লাহর প্রতিটি হুকুমের ডাকে “লাব্বায়েক” তথা “আমি হাজির” বলা। এটিই হলো হযরত ইব্রাহীম (আঃ)এর সূন্নত। যখন তাঁকে মাতৃভূমি পরিত্যাগের নির্দেশ দেয়া হলো তখন যেমন লাব্বায়েক বলেছিলেন, তেমনি লাব্বায়েক বলেছিলেন যখন স্ত্রী হাজেরা ও শিশু পুত্র ইসমাইলকে মক্কার মানবশূণ্য প্রান্তরে রেখে আসার হুকুম হলো। তখনও লাব্বায়েক বলেছিলেন। নবীজী ও তাঁর সাহাবাগণ মূলত সে ইব্রাহীমী সূন্নতেরই আজীবন চর্চা করে গেছেন। তাঁরা বেঁচেছেন এবং মারা গেছেন একমাত্র মহান আল্লাহর জন্য। অথচ সেটির চর্চা আজকের মুসলমানদের মাঝে কৈ? এটিই কি আজকের যুগে ইসলামের পরাজয় ও মুসলমানদের ইজ্জতহীন পরাজিত অবস্থার মূল কারণ নয়? নবীজী (সাঃ)র আমলে এমন কোন সাহাবা ছিলেন না যারা শুধু নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাত পালন করেছেন অথচ জিহাদে যাননি। এমনটি সে সময় গৃহীত হত মুনাফিকাত রূপে। অথচ আজকের মুসলমানদের এটিই বড় রোগ। লক্ষ লক্ষ মুসলমান নামায-রোযা কবুল করতে রাজী, কিন্তু যাকাত দিতে রাজি নয়। রাজী নয় পিতামাতার রেখে যাওয়া সম্পদের শরিয়ত মোতাবেক বন্ঠন করতে। রাজী নয় দেশের আইন-আদালতে আল্লাহর আইনের প্রতিষ্ঠায়। রাজী নয় সূদব্যাংকের বিলুপ্তিতে। আবার অনেকে নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাত কবুল করতে রাজী, রাজী তাবলীগের কাজেও, কিন্তু রাজী নয় জিহাদের ময়দানে নামতে। এমনকি আল্লাহর দ্বীন পরাজিত এবং তাঁর আইন আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতে দেখেও। জিহাদে রাজী নয় মুসলিম ভূমি কাফের কর্তৃক অধিকৃত হলেও। আল্লাহর বিরুদ্ধে এত বিদ্রোহের পর কোন মুসলমান -নিজেকে যতই সে মুসলমান রূপে ঘোষণা দিক না কেন, মুসলমান থাকে কী?
আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের যে ঘোষনা কালেমা পাঠের মাধ্যমে দিতে হয়, আল্লাহতায়ালা চান তার বান্দাহ সে আনুগত্যে আমৃত্যূ কায়েম থাকুক। মুখে কালেমার ঘোষণা অথচ কর্মজীবনে সে হুকুমের বিরোধীতা, -আল্লাহর কাছে সেটি অতি অপছন্দের। মহান আল্লাহর পছন্দ ও অপছন্দের সে বিষয়টি পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হয়েছে এভাবে- “হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না তা কেন বল? তোমরা যা করনা তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অপছন্দের। আল্লাহতায়ালা তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর।” -(সুরা সাফ, আয়াত ৩-৫)। লড়াই যে কোন দেশে ও সমাজেই অনিবার্য। একাজ শুধু মুসলমানের নয়, কাফেরদেরও। মার্কিন বাহিনী লড়ছে নিজ ভূমি থেকে হাজার হাজার মাইল দূরের বহু দেশে। নিজ দেশের বাইরে তাদের যত সামরিক ঘাটি রয়েছে মুসলমানদের তত ঘাটি নিজ দেশের অভ্যন্তরেও নেই। ভারত অবিরাম লড়ছে কাশ্মিরে ও পূর্ব ভারতে। একাত্তরে লড়েছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। যুদ্ধ বা লড়াইকে তাই মানুষের জীবন থেকে আলাদা করা যায় না। নিজেরা যুদ্ধ না চাইলেও শত্রু পক্ষ যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। যেমন চাপিয়ে দিয়েছে আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন ও কাশ্মিরে। তাই কর্ম, চিন্তা ও ইবাদতকে নিছক নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাতে সীমাবদ্ধ রাখার সুযোগ নেই। যুদ্ধ এবং যুদ্ধের বিধান থাকা একটি পরিপূর্ণ দ্বীনের ক্ষেত্রে তাই অনিবার্য। কাফেরদের সাথে সে লড়াই মসজিদে হয় না, হয় রণাঙ্গনে। শত্রুর চাপিয়ে দেওয়ার যুদ্ধের মুখে ঈমানদারের নীরব থাকারও সুযোগ নেই। আল্লাহতায়ালা সে বিষয়ে অলংঘনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া লড়াই ছাড়া আল্লাহতায়ালার দ্বীনের বিজয় কীরূপে সম্ভব। নবীজীর চেয়ে বড় শান্তিবাদী প্রচারক আর কে হতে পারে? কিন্তু তার বিরুদ্ধেও নির্মূলের চেষ্ঠা হযেছে। ইসলামের বিপক্ষ শক্তি রাষ্ট্রে আল্লাহর দ্বীনের প্রতিষ্ঠা কখনই মেনে নিতে রাজী না। এ বিষয়ে সর্বকালের শয়তানী শক্তির আচরণ অভিন্ন। ইসলামের পক্ষের শক্তির নির্মূল ছাড়া অন্য কিছুতে তারা রাজী নয়। আল্লাহতায়ালা ইসলামের শত্রু পক্ষের সে আগ্রাসী মনভাব এবং সে সাথে নিজের অভিপ্রায়টি ব্যক্ত করেছেন এভাবেঃ “তারা মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে চায়। আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণভাবে বিকশিত করবেন যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে। -(সুরা সাফ, আয়াত ৮)।
আল্লাহর দ্বীনের প্রতিষ্ঠার কাজটি অতি উচ্চমর্যাদার কাজ। এ কাজের প্রতিদানও তুলনাহীন। এবং সেটি হলো অনন্ত কালের জন্য জান্নাত। মানব সমাজে সবাই কোন না কোন কাজে ব্যস্ত, কিন্তু সর্বোচ্চ মর্যাদার কাজ সবার জুটে না। কত অসংখ্য মানুষ তো আজীবন কাটিয়ে দেয় কোন এক দুর্বৃত্ত শাসক বা নেতার অনুগত সৈনিক রূপে। অতীতের যুদ্ধগুলীতে বহু কোটি মানুষ তো সে কাজে প্রাণও দিয়েছে। এবং এখনও অনেকে দিচ্ছে। দুর্বৃত্তের সেবক হওয়া নিজেই এক দুর্বৃত্তি। আল্লাহতায়ালা তার ঈমানদার বান্দাহকে এমন দুর্বৃত্তি থেকে বাঁচাতে চান। কুফরি বা শিরকী শুধু মুর্তিপুজা নয়, বরং বড় কুফরি ও শিরকী হলো আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য কোন আইনকে রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহর সে ঘোষণা এসেছে এভাবেঃ “ৃযারা আল্লাহর নাযিলকৃত আইন অনুযায়ী বিচারের ফয়সালা করে না তারা কাফের। -(সুরা মায়েদাহ, আয়াত ৪৪)। একই সুরার পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছেঃ “ৃযারা আল্লাহর নাযিলকৃত আইন অনুযায়ী বিচারের ফয়সালা করে না তারা জালেম। -(সুরা মায়েদাহ, আয়াত ৪৫)। বলা হয়েছে “ৃযারা আল্লাহর নাযিলকৃত আইন অনুযায়ী বিচারের ফয়সালা করে না তারা ফাসেক বা পাপী। -(সুরা মায়েদাহ, আয়াত ৪৭)।তাই শুধু নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাত পালন করলেই কাফের, জালেম ও ফাসেক হওয়া থেকে মুক্তি মেলে না। তাকে রাষ্ট্র ও সমাজের বুকে আল্লাহর আইনের পূর্ণ প্রতিষ্ঠায়ও সচেষ্ট হতে হয়। রাষ্ট্রে আল্লাহর আইনের প্রতিষ্ঠার বিষয়টি ইসলামে এতই গুরুত্বপূর্ণ যে সেটি বুঝাতে আল্লাহতায়ালা সুরা মায়েদায় পর পর তিনটি আয়াত নাযিল করেছেন। এমন কি নামায-রোযার নির্দেশও এভাবে একই সুরার পরপর তিনটি আয়াতে আসেনি। এবং আল্লাহর আইনের প্রতিষ্ঠা যারা করে না তাদের পরিচয়টিও বা কি হবে সেটিও উক্ত তিনটি আয়াতে সুস্পষ্ট ভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। তাই একটি রাষ্ট্র মুসলিম কিনা সে বিচার দেশটির মুসলিম জনসংখ্যা, মসজিদ ও মাদ্রাসার সংখ্যা গুণে হয় না। বরং সে দেশে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও আল্লাহর আইনের প্রতিষ্ঠা আছে কিনা সেটিই এখানে মূল। আজকের ভারতে বা বাংলাদেশে যে বিশাল মুসলিম জনসংখ্যা ও মসজিদ-মাদ্রাসা আছে তা কি নবীজী (সাঃ)র আমলে বা খোলাফায়ে রাশেদার সময় ছিল? কিন্তু তখন আল্লাহর দ্বীনের বিজয়, তার আইনের প্রতিষ্ঠা যতটা গুরুত্ব পেয়েছিল তা কি আদৌ গুরুত্ব পেয়েছে এ বিশাল সংখ্যক মুসলমানদের কাছে? পায় নি। আর পায়নি বলেই তাদের হাতে নানা দলের বা নেতার বিজয় বাড়লেও বাড়েনি আল্লাহর আইনের প্রতিষ্ঠা। বাড়েনি ইসলামের বিজয় ও মুসলমানের গৌরব। মুসলিম দেশে নির্মিত হচ্ছে না উচ্চতর সভ্যতা। বরং তারা বিশ্বজোড়া রেকর্ড গড়ছে দুর্বত্তিতে। অথচ “সুনীতির প্রতিষ্ঠা ও দূনীতির নির্মূল” কে মুসলমানের জীবন মিশন রূপে নির্ধারণ করে দিয়েছেন মহান আল্লাহতায়ালা। অথচ সে মিশনে অংশগ্রহণ ক’জন মুসলমানের। অথচ তাদের অংশগ্রহণ বেড়েছে দুর্নীতিতে। বেড়েছে অবাধ্যতা। কথা হল্,ো এত অবাধ্যতা ও দূর্নীতির এমন শিরোপা নিয়ে শেষ বিচার দিনে নবীজী (সাঃ)র সামনে তাঁর উম্মত রূপে তারা মুখই বা দেখাবে কি করে? সাফায়াতই বা পাবে কেমনে? আল্লাহতায়ালার দরবারে জবাবই বা দিবে কি করে?
পরাজয়, পরাধীনতা ও দূর্নীতির মধ্য দিয়ে ইসলামের মুখে কালিমা লেপন ছাড়া আজকের মুসলমানদের দ্বারা কোন কল্যাণটি হয়েছে? অথচ নবীজী (সাঃ)র আমলে মুসলমানদের জানমাল, সময় ও সামর্থের সবচেয়ে বড় খরচটি হয়েছে আল্লাহর দ্বীনের প্রতিষ্ঠায়। অথচ আজ যেটি হচ্ছে তা হল নানা দল, নানা দেশ, নানা ভাষার নামে মুসলিম ভূমির বিভক্তি এবং সে বিভক্তিকে স্থায়ীতর করতে জানমালের বিপুল খরচ। প্রায় প্রতিটি মুসলিম দেশের রাজনৈতিক ময়দানের মধ্যভাগ থেকে ইসলামকে বলপূর্বক হঠিয়ে সে স্থান দখলে নিয়েছে রাজতন্ত্র, জাতিয়তাবাদ ও সেকুলারিজম। হঠিয়ে দিয়েছে আল্লাহর আইন। এভাবে প্রচন্ড এবং অবিরাম বিদ্রোহ চলছে আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে। এবং সেটি হচ্ছে নিজেদের মুসলিম নামের আড়ালে। এসব মুসলিম দেশে রাজনীতি বলতে বুঝায় এসব পার্থিব স্বার্থচিন্তার রাজনীতি। তাদের চেতনার মানচিত্রে আল্লাহর আইনের প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার কোন স্থানই পায়নি। ফলে গড়ে উঠিনি জিহাদ। আজকের মুসলমানদের এটিই সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। ব্যক্তির দেহে যে প্রাণ আছে সেটির বিচারে দেহের নড়াচড়ার সামর্থই মূল। মৃত ব্যক্তির সে সামর্থ থাকে না, তাই সে মৃত। তেমনি ঈমানদারের জীবনে ঈমান যে বেঁচে আছে সেটি প্রকাশ পায় তার জিহাদে অংশগ্রহনে। নামায-রোযা মদিনার মুনাফিকদেরও ছিল, কিন্তু ছিল না জিহাদের সামর্থ। তাই তারা চিত্রিত হয়েছে মুনাফিক রূপে। যে সমাজে ঈমানদারদের উপস্থিতি সে সমাজে জিহাদের শুরুটিও তাই অনিবার্য। আর তাদের সংখ্যা নবীজীর আমলেই ছিল সবচেয়ে বেশী, তাই সে আমলে লাখ খানেক মানুষ মাত্র দশ বছরে যত জিহাদ সংগঠিত করতে পেরেছে তা বাংলাদেশের কোটি কোটি মুসলমান বিগত প্রায় হাজার বছরেও করতে পারিনি। ফলে দেশে দখলে গেছে কখনও রাজতন্ত্রিদের হাতে, কখনও বা উপনিবেশিক কাফেরদের হাতে, আর আজ দখলে গেছে স্বঘোষিত ইসলামের বিপক্ষ শক্তির হাতে। বর্তমান ক্ষমতাসীন পক্ষের কাছে ইসলামের প্রতি অঙ্গিকার চিত্রিত হচ্ছে সাম্প্রদায়িক পশ্চাদপদতা। ইসলামের এসব স্বঘোষিত শত্রুরা আল্লাহর আইনকে নিক্ষিপ্ত করেছে আস্তাকুঁড়ে।
কোন ব্যক্তির জীবনে জিহাদে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়তো নানা কারণে নাও আসতে পারে। চোখের সামনে জিহাদ শুরু হলে তা থেকে দূরে থাকা একমাত্র মুনাফিকদের কাজ। তাছাড়া আল্লাহর দ্বীন যেখানে পরাজিত, কোরআনের আইন যেখানে আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত, ইসলামের বিপক্ষ শক্তির তান্ডব যেখানে সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র জুড়ে -সেখানে জিহাদ থেকে দূরে থাকার অবকাশ কোথায়? আর সেটি হলে কারা দ্বীনের বিজয় আনবে? ফেরেশতাগণ? সেটি তো আল্লাহর রীতি নয়। নবীজীর আমলে একমাত্র অন্ধ, বধির ও দৈহীকভাবে পঙ্গু ব্যক্তিগণ ছাড়া কেউ কি জিহাদ থেকে দূরে থেকেছে? আর দূরে থাকলে তাদেরকে কি মুসলমান বলা হয়েছে? দৈহীক সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যারা জিহাদ থেকে দূরে থেকেছে তাদেরকে সবাই জেনেছে মুনাফিক রূপে। মুসলমানের কাজ হলো, আমৃত্যু নেক আমলে নিয়োজিত থাকা। আর জিহাদ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ নেক আমল। হাদীসে সে কথাটি এক বার নয়, বহুবার এসেছে। তাই কোন ঈমানদার ব্যক্তি কি এমন নেক আমল থেকে দূরে থাকতে পারে? এ বিষয়ে হাদীসের কিছু উদ্ধৃতি দেওয়া যাক। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)থেকে বর্নীত, রসূলে পাক (সাঃ)কে জিজ্ঞাস করা হল, কোন আমলটি শ্রেষ্ঠ। তিনি জবাব দিলেন, আল্লাহর উপর বিশ্বাস করা এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা। -আল বোখারী ও আল মুসলিম। হযরত আবু কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্নীতঃ আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাঁর সাহাবাদের মাঝে উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ এবং আল্লাহর (তাঁর সকল গুণের) উপর বিশ্বাস হল সকল আমলের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতর। সাহাবাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হই তবে কি আমার সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে?” আল্লাহর রাসূল জবাব দিলেন, “হ্যাঁ, যদি তুমি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হও, ধৈর্য্য ধর, প্রতিদানের ব্যাপারে আশাবাদী হও এবং (যুদ্ধের ময়দানে) যদি পিছনে না এসে সামনে এগুতে থাক।” –আল মুসলিম। হযরত জাবির (রাঃ) থেকে বর্নীতঃ এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (সাঃ)কে জিজ্ঞেস করলেন, “বলুন হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ), আমি যদি আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করা অবস্থায় নিহত হই তবে আমার অবস্থান কোথায় হবে?” তিনি জবাব দিলেন, “জান্নাতে।” সে ব্যক্তির মুখের মধ্যে যে কয়েকট্ খেজুর ছিল তা তিনি দূরে ফেলে দিলেন। এবং ঝাঁপিয়ে পড়লেন লড়াইয়ের ময়দানে এবং লড়াই করতে লাগলেন যতক্ষন না নিহত হলেন।” – আল মুসলিম।
নবীজী (সাঃ)র সাহাবাগণ যে আল্লাহর আনুগত্যে কীরূপ নিবেদিত-প্রাণ দাস ছিলেন তার উপরুক্ত হাদীসগুল্ োহলো তার উদাহরণ। আল্লাহর সে দাসত্বে তারা বিণিয়োগ করেছিলেন তাদের সর্বোচ্চ প্রিয় বস্তুটি, এবং সেটি ছিল তাদের নিজ প্রাণ। আল্লাহর রাস্তায় প্রাণদানের সে প্রবল প্রেরণাতেই তাদের মাঝে প্রচন্ড ভাবে বেড়েছিল জিহাদে অংশগ্রহণ। জিহাদকে তারা বিশ্বাস করতেন জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল রূপে। শহীদ হওয়া গণ্য হতো জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন রূপে। অথচ আজকের মুসলমানদের মন ও মননে সে চেতনা স্থান পায়নি। তাদের চেতনার ভূবনটি পূর্বকালের মুসলমানদের থেকে ভিন্নতর। ধর্মপালন বলতে বুঝায় নামায-রোযা-যাকাত-হজ্জ পালন, এর বাইরে বেশী দূর যেতে তারা রাজি নয়। আল্লাহর দ্বীনের প্রতিষ্ঠা তাদের লক্ষ্য বা এজেন্ডা নয়, তাদের লক্ষ্য তো নিজের বা নিজ দলের স্বার্থ রক্ষা। সেটি যদি কাফেরদের সাথে মিত্রতা গড়েও হয়। তারা নিজ দল বা নিজ মতের বিজয়ে জান দিতে রাজী। তারা জান দিতে রাজী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ লড়তে। বাংলাদেশে ইসলামের বিপক্ষ পক্ষটি ১৯৭১যে ভারতের সাথে মিলে সেটিই করেছে, আর আজ আজ ইরাক, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সরকার সেটি করছে মার্কিনীদের সাথে মিলে। অথচ এরাই আল্লাহর রাস্তায় প্রাণদানকে চরমপন্থি মতবাদ বলে। তাদের কাছে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ গণ্য হয় সন্ত্রাস রূপে। অথচ ইসলামের শত্রুদের যুদ্ধকে –এমন কি তাতে যদি লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়, সন্ত্রাস বলতে এরা রাজী নয়। তাদের কাছে সেটি চরমপন্থাও নয়। সন্ত্রাস রূপে গণ্য হয় না নিরীহ ও নিরস্ত্র মানুষের মাথার উপর মার্কিনীদের বোমা বর্ষণ। তাই ইরাক ও আফগানিস্তানে যে মার্কিনীরা লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা করলো, তাদের প্রতি এসব মুসলিম নামধারি নেতা ও বুদ্ধিজীবীদের কোন ক্ষোভ নেই, কোন ঘৃণাও নেই। বরং তাদের সাথে তারা সর্ব-প্রকার সহযোগিতায় রাজী। তাদের ঘোষিত সহযোগিতাটির ক্ষেত্রটি হলো, বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশে যারা আল্লাহর আইনের বিজয় চায় তাদের নির্মূল। তাই প্রমাণ মেলে, যুদ্ধ বা মানবহত্যায় তাদের যে অনাগ্রহ আছে তা নয়, বরং সে অনাগ্রহটি শুধু আল্লাহর পথে জিহাদে। আল্লাহর দ্বীনের বিজয় ও শরিয়তের প্রতিষ্টা তাদের কাছে শুধু ঘৃণার বিষয়ই নয়, সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করার বিষয়ও। তাই ইসলামের বিজয় রুখতে তারা একটি রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধও লড়তে দু’পায়ে খাড়া। এ লক্ষ্যে কাফেরদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ এবং সে যুদ্ধে প্রাণ দিতেও রাজী। ভারতের কাফের নেতৃত্বের সাথে বাংলাদেশের ইসলামের বিপক্ষ শক্তির এজন্যই এত সখ্যতা ও সম্প্রীতি। প্রশ্ন হলো, কাফের আবু লাহাব ও আবু জেহল থেকে মুসলিম নামধারি এসব নেতাদের প্রার্থক্যটি কোথায়? এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে এর চেয়ে বড় বিদ্রোহই বা আর কি হতে পারে?
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- ভারতীয় আগ্রাসনের হুমকি: বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুরক্ষা কীরূপে?
- ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখতে হবে
- সম্প্রতি বাংলাদেশে যা দেখলাম
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018