উপেক্ষিত সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত

ফিরোজ মাহবুব কামাল

বাংলাদেশে এখন নৃশংস দুর্বৃত্ত শাসন। ক্ষমতাসীন এখন ভোটডাকাত ফ্যাসিস্ট সরকার। দেশ এখন একটি বদ্ধ খাঁচা। খাঁচার বাসিন্দা হলো ১৭ কোটি জনগণ। অসম্ভব করা হয়েছে মানবিক অধিকার নিয়ে স্বাধীন ভাবে বাঁচা। পাকিস্তান আমলে মিটিং-মিছিল, স্বাধীন ভাবে কথা বলা ও লেখা-লেখী, ইচ্ছামত ভোটদানের যে অবাধ স্বাধীনতা ছিল -সে স্বাধীনতা এখন কবরে শায়ীত। স্বাধীনতা বলতে এখন যা বুঝায় তা হলো আওয়ামী ফাসিস্টদের নৃশংসতা, গুম, খুন, অপহরণ, চুরিডাকাতির স্বাধীনতা। এবং জনগণের জীবনে নেমে এসেছে পুরাপুরি পরাধীন। এবং এই পরাধীনতারই জনক হলো শেখ মুজিব।

নির্বাচনের মাধ্যমে এ দুর্বৃত্তদের সরানো অসম্ভব। কারণ তারা গড়ে তুলেছে ভোটডাকাতির বিশাল রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো। পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী, নির্বাচনী কমিশন পরিণত হয়েছে ফ্যাসিস্টদের চাকর-বাকরে। ভোটডাকাতদের একমাত্র গণবিপ্লবের মাধ্যমেই সরাতে হয়। তাই প্রস্তুতিটি নিতে হয় গণবিপ্লবের। সভ্য ও স্বাধীন ভাবে বাঁচার এ ছাড়া ভিন্ন পথ। এ দুর্বৃত্তদের ত্বরিৎ সরাতে না পারলে ভবিষ্যতে আরো অধিক রক্তব্যয় হয়। তখন জনজীবনে স্বৈরাচারী নৃশংসতা প্রতিদিন ও প্রতি মুহুর্তের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আজ  সরকার-বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, রিমান্ডে নিয়ে তাদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে, ক্রসফায়ারে দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে এবং তাদের ঘরে আগুন  দেয়া হচ্ছে। এসবই দুর্বৃত্ত শাসনের নাশকতা। কিন্তু সে আগুন যে অচিরেই অন্যদের ঘরেও ছড়িয়ে পড়বে –তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? এতে বাংলাদেশ দ্রুত পরিণত হবে পুরাপুরি ব্যর্থ রাষ্ট্রে।

ইসলামে সর্বশ্রষ্ঠ ইবাদত ও নেক কর্ম মসজিদ গড়া, মাদ্রাসা গড়া বা সাদকা দেয়া নয়। এরূপ কর্মে স্বৈরাচারী দুর্বৃত্ত শাসকদের নৃশংস শাসন নির্মূল হয়না। সভ্য ও শান্তিময় সমাজও নির্মিত হয় না। মহান আল্লাহতায়ালার “অন্যায়ের নির্মূল ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা”র ঘোষিত এজেন্ডাও তাতে বিজয়ী হয়না। মুসলিমদের যে কারণে মহান আল্লাহতায়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির মর্যাদা দিয়েছেন সেটি  বেশী বেশী মসজিদ গড়া, মাদ্রাসা গড়া ও দান-খয়রাত করার কারণে নয়। সেটি “অন্যায়ের নির্মূল ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা”র জন্য। সেটি সম্ভব একমাত্র জিহাদের মাধ্যমে। জিহাদ না থাকলে মহান আল্লাহতায়ালা শরিয়তী বিধান শুধু কুর’আনেই থেকে যায়। তখন ব্যর্থ হয় ইসলামকে বিজয়ী করার এজেন্ডা। সেরূপ ব্যর্থতায় কি মহান আল্লাহতায়ালা খুশি হন? কোন মু’মিন কি এরূপ পরাজয় নিয়ে খুশি থাকতে পারে? একমাত্র জিহাদের মাধ্যমেই বিজয়ী হয় ইসলামের এজেন্ডা। একমাত্র তখনই মানব জাতির জন্য সবচেয়ে বড় কল্যাণটি ঘটে। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কাজটি হলো ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ। এ কাজ বিপুল কুরবানী চায় জান ও মালের। অর্ধেকের বেশী সাহাবা এ কাজে শহীদ হয়েছেন। সিরিয়া, ইরান ও মিশরের সম্পদ দিয়ে অন্যরা প্রাসাদ গড়েছে। কিন্তু মুসলিমগণ তা জিহাদে বিনিয়োগ করেছেন।

মানুষ মাত্রই স্বার্থপর। নিজের ও নিজের পরিবারের সুখশান্তি বাড়ানোই সবার মূল এজেন্ডা। রাষ্ট্রের বা সমাজের কল্যাণে কেউ কি নিজের জান ও মালের বিনিয়োগে নামতে চায়? মহান আল্লাহতায়লার কাজে সেটি অজানা নয়। এ জন্যই তিনি সবচেয়ে বড় পুরস্কারটি রেখেছেন তাদের জন্য যারা জিহাদে নিজেরে অর্থ, রক্ত ও বু্দ্ধির বিনিয়োগ করে। ইসলামে এটিই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। জিহাদে নিহত হলে জুটে বিনা বিচারে জান্নাত। এবং সেটি সাথে সাথে। তার জীবনে কোন কবরের আযাব, পুল সিরাত, রোজ হাশর নাই। ঈমানদারদের বিনিয়োগে দেশ দুর্বৃত্ত শাসন থেকে মুক্তি জুটে। তাছাড়া শরিয়তের আইন প্রতিষ্ঠা পায় এবং জনগণ শান্তি ফিরে পায় তো জিহাদের বরকতেই। ফলে জিহাদ শুধু সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতই নয়, সর্বশ্রেষ্ঠ জনকল্যাণ মূলক কাজও। তাই অন্যদের কাছে সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ দেশপ্রেম ও রাজনীতি, কিন্তু ঈমানদারের কাছে এটিই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। তাই মুসলিমের  কাজ হলো, তার রাজনীতিকে পরিশুদ্ধ ও পরিপূর্ণ জিহাদে পরিণত করা। তখন তাতে জুটে মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য। তখন শয়তানী শক্তির নির্মূলে বিনিয়োগ জুটে মহান আল্লাহতায়ার পক্ষ থেকেও।

দেশের মানুষ কতটা ঈমান নিয়ে বাঁচে সেটির বিচার কি কখনো মসজিদ-মাদ্রাসা গুণে হয়? সে বিচার কি তাবলীগ জামায়াতে এজতেমায় কত লাখ মানুষ জমা হলো বা কতজন নামাজ-রোজা আদায় করলো –তা দিয়ে হয়? নামাজ-রোজা আদায় করার পরও একজন ব্যক্তি যেমন মুনাফিক হতে পারে, তেমনি দুর্বৃ্ত্ত শাসকের সৈনিকও হতে পারে।

অপর দিকে দুর্বৃত্ত শাসকের কাছে আত্মসমর্পণ ও তাকে সমর্থণ করার মধ্য দিয়ে ঘটে উল্টোটি। তাতে বিজয়ী হয় শয়তানের এজেন্ডা। তখন বিজয়ী হয় দুর্বৃত্তি। এতে গাদ্দারী হয় মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের সাথে। তাই পৃথিবী পৃষ্টে সবচেয়ে বড় অপরাধটি চুরিডাকাতি বা কোন ব্যক্তিকে খুন করা নয়, বরং সেটি হলো শয়তানী শক্তিকে বিজয়ী করা। চুরি-ডাকাতি ও খুনের কারণে ইসলাম পরাজিত হয়না। বরং ইসলাম পরাজিত হয় শয়তানী শক্তির বিজয়ী হওয়াতে। সবচেয়ে নিকৃষ্ট অপরাধ তাই ইসলাম বিরোধী শক্তির সৈনিক বা সমর্থক হওয়া। অপরাধ এখানে শয়তানী এজেন্ডাকে বিজয়ী করার। পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের মুসলিমদের অবহেলা যেমন সর্বশ্রেষ্ঠ নেক আমল তথা জিহাদ নিয়ে, তেমনি তারা বাঁচছে ইসলামী শত্রুশক্তির শাসনকে মেনে নিয়ে। চোরডাকাত, ভোটডাকাত ও স্বৈরাচারীদের ক্ষমতায় বসিয়ে বাঁচার মধ্যে কোন সম্মান নাই, কোন কল্যাণও নাই। সেটি না ইহকালে, না পরকালে।

ঈমানদারদের জীবনের মূল মিশনটি হলো “আমিরু বিল মারুফ” তথা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও “নেহী আনিল মুনকার” অর্থাৎ অন্যায় নির্মূলের মিশন নিয়ে বাঁচা। এ মিশনে আত্মনিয়োগের কারণে সে চিহ্নিত হয় মহান আল্লাহর দলের সৈনিক রূপে। এ মিশনের বাইরে যারা, তারা বাঁচে শয়তানের দলের সৈনিক রূপে। তাই যে দেশে ঈমানদার আছে, সে দেশে শয়তানী শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদও থাকে। সে অনিবার্য জিহাদটি দেখা গেছে প্রতিজন সাহাবার জীবনে। রোজ হাশরের বিচার দিনে এ হিসাব অবশ্যই দিতে হবে, জানমালের বিনিয়োগ কতটা ছিল অন্যায়ের নির্মূলে ও ইসলামের প্রতিষ্ঠায়। কিন্তু বাংলাদেশের মুসলিমদের জীবনে সে বিনিয়োগ যে তেমন একটা নাই -সে প্রমান কি কম? বিনিয়োগ থাকলে ঢাকার রাজপথ তো লক্ষ লক্ষ লড়াকু মুজাহিদে ভরে উঠতো। সে লড়াই থাকলে ১৬ কোটি মুসলিমের দেশে ইসলাম পরাজিত হয় কীরূপে? আদালত থেকেই বা কেন বিলুপ্ত হবে শরিয়তী আইন? স্কুল-কলেজে কেন থাকবে না কুর’আন শিক্ষা? শাসন কেন ইসলামের শত্রুপক্ষের? বিপুল বিজয় কেন শয়তানী এজেন্ডার? বাংলাদেশের মুসলিমগণ মুসলিম রূপে বাঁচতে যে কতটা ব্যর্থ হয়েছে –সেটি বুঝতে কি এই ব্যর্থতাগুলোই যথেষ্ট নয়? ইসলাম পালনে এ বিশাল ব্যর্থতা কি পরকালেও কোন সফলতা দিবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *