ইসরাইলের ফিলিস্তিনীনির্মূল প্রকল্প, পাশ্চাত্য বিশ্বের গ্রিন সিগনাল এবং মুসলিম উম্মাহর প্যারালাইসিস
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on November 2, 2023
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, মুসলিম জাহান
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
ইসরাইলের গণহত্যা প্রকল্প ও পাশ্চাত্য বিশ্বের গ্রিন সিগনাল
গাজা ও অধিকৃত জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে চলছে ইসরাইলী সেনাবাহিনীর বিরামহীন গণহত্যা, ধ্বংস-প্রক্রিয়া ও গণনির্মূল প্রকল্প। গাজার হাসপাতাল, উদ্বাস্তু শিবির, আবাসিক ভবন, মসজিদ এবং গীর্জা সে বোমা বর্ষণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না৩। গাজার সর্ববৃহৎ উদ্বাস্তু শিবির জাবালিয়া’র উপর ইসরাইল বিমান বাহিনী ২ বার বোমা বর্ষণ করেছে। প্রথম বার বোমা বর্ষণে ৫০ জন তৎক্ষাৎ নিহত হয় এবং ১৫০ জন আহত হয়। (সূত্র: The Guardian) ইসরাইলী সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে সাড়ে আট হাজার ফিলিস্তিনীদের হত্যা করেছে -যার মধ্যে অর্ধেকই হলো শিশু। গাজার উপর ইসরাইলী সেনাবাহিনী এ অবধি (আল-জাজিরা, ১/১১/২০২৩) ১১ হাজার বার বোমা বর্ষণ করেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলেছে ৪ বছর ধরে। কিন্তু ৪ বছরের বিশ্বযুদ্ধে কোন শহরের উপর ১১ হাজার বার বোমাবর্ষণ হয়নি -অথচ সেটি হয়েছে মাত্র ১৪১ বর্গ মাইলের গাজার উপর। এরূপ ধ্বংসকান্ডও কোন শহরের উপর ঘটেনি। বিধস্ত গাজার সাথে একমাত্র তূলনা চলে পারমানবিক বোমায় বিধ্বস্ত জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকির সাথে। অপর দিকে জর্দান নদীর পশ্চিত তীরে ফিলিস্তিনীদের হ্ত্যায় নেমেছে ইসরাইলী সৈন্যদের সাথে সেখানে বসবাসকারী অবৈধ বসতকারীরা।
ইসরাইলের পাশে দাঁড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানিসহ সকল পশ্চিমা শক্তি। ইসরাইলের এ বন্ধুরাষ্ট্রগুলি চায়, ইসরাইল তার এ গণহত্যা ও গণনির্মূল প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখুক। চায়, হামাস নির্মূলের নামে গাজা থেকে ফিলিস্তিনীদের নির্মূল করুক। এজন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে কোন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাশ হতে দিচ্ছে না। বরং গণহত্যায় ইসরাইলের সামর্থ্য বাড়াতে এসব পাশ্চাত্যের দেশগুলি জুগিয়ে চলেছে বিপুল পরিমাণ অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র। ইসরাইলের এ মিত্র দেশগুলির কাছে বেঁচে থাকার অধিকার একমাত্র ইসরাইলীদেরই। সে অধিকার তারা ফিলিস্তিনীদের দিতে রাজী নয়। তাই তারা গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছে ইসরাইলের লাগাতর বোমা বর্ষণে ও ফিলিস্তিনীদের নির্মূলে। ইসরাইল সে প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে বিগত ২৫ দিন ধরে।
বাঘ-ভালুক-সিংহের ন্যায় হিংস্র পশুদের সাথে কখনোই আপোষ চলে না। তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সামর্থ্য না থাকলে সেসব পশুদের পেটে যেতে হয়। তেমনি আপোষ চলে না ইসরাইলের ন্যায় একটি সন্ত্রাসী দেশের সাথেও। হিংস্র পশুদের চরিত্র দেখা যায় সন্ত্রাসীদের মাঝে। তবে পার্থক্য হলো, পশু তার শক্তির প্রয়োগ করে খাদ্যের আহরণে। সে পশুত্বে কোন রাজনীতি থাকে না। কিন্তু মানবরূপী পশুগণ শক্তির প্রয়োগ করে রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে। প্রতিটি অভিধানে শক্তির সে রাজনৈতিক প্রয়োগকেই বলা হয় সন্ত্রাস। ইতিহাস যা বলে তা হলো, ইসরাইলের জন্মই হয়েছে সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে। অবৈধ এ দেশটি বেঁচেও আছে আদিবাসী ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালিয়ে। এখন সন্ত্রাসের মধ্য দিয়েই ইসরাইল তার বৃহত্তর ইসরাইলের মানচিত্রের প্রতিষ্ঠা চায়। ইয়াসির আরাফাত ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে ও তার সাথে শান্তি চুক্তি করে শান্তি পায়নি, পেয়েছে আরো মৃত্যু এবং আরো অধিকৃতি। এখন গাজাসহ সমগ্র ফিলিস্তিনকে তারা মুসলিম-শূণ্য করতে চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররাও সেটিই চায়। ই সরাইলের আগ্রাসী প্রজেক্টের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কতটা একাত্ম সেটি বুঝা যায় প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বক্তব্য থেকে। তিনি বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে প্রতিবছর যে পরিমাণ অর্থ দেয়, সেটিই হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। ইসরাইল নামে কোন রাষ্ট্র না থাকলে সেরূপ একটি রাষ্ট্রকে নির্মাণ করতে হতো।” বাইডেনের বক্তব্যের সে ভিডিও ইউটিউবে এখনো দেখা যায়। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সে বিনিয়োগকে দিন দিন বাড়িয়েই চলেছে।
পরাধীনতা শুধু ফিলিস্তিনী আরবদের নয়
আরব বিশ্বের সমস্য হলো, নৃশংস পরাধীনতা শুধু ফিলিস্তিনীদের একার নয়। একই রূপ নৃশংস জুলুম ও অধিকৃতির শিকার হলো মিশর, সৌদি আরব, জর্দান, আমিরাত, বাহরাইনসহ সকল আরব দেশগুলির জনগণ। ২২টি আরব দেশের কোন একটিতে গণতন্ত্র নাই। ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনতার লড়াইকে আরব বিশ্বের স্বৈরশাসকগণ স্বাধীনতার লড়াই বলতেও রাজী নয়। স্বাধীনতার দাবী নিয়ে রাস্তায় নামলে অধিকৃত ফিলিস্তিনে যেরূপ গুলির খাদ্য হতে হয়, সেরূপ অবস্থা মিশর, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন, সিরিয়াসহ প্রতিটি আরব দেশে।
প্রতিটি আরব দেশই হলো জেলখানা। এবং সেসব জেলখানায় জেলবন্দীর নিদারুন যাতনা নিয়ে দিন কাটায় আরব দেশগুলির জনগণ। জেলবন্দী মানুষের স্বাধীনতা থাকে না, তাদের রায়ের ইজ্জতও থাকে না, তেমনি ইজ্জত নাই এসব দেশের নাগরিকদেরও। ফলে এসব জেলবন্দীগণ ফিলিস্তিনীদের আর কি সহয়তা দিবে? নিজেরা যতদিন মুক্ত না হচ্ছে ততদিন এ জেলবন্দী জনগণ ফিলিস্তিনীদের জন্য শুধু দোয়াই করতে পারে। লন্ডন, নিউয়র্ক, প্যারিস, রোম ও সিডনির রাস্তায় লাখ লাখ মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে মিছিল করতে পারলেও রিয়াদ, জেদ্দা, দুবাই, আবুধাবীর মানুষের সে স্বাধীনতা নাই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল পাশ্চাত্য দেশগুলি চায়, ৪০ কোটি আরব জনগণ তাদের স্বৈরাচারী শাসকদের হাতে জেলবন্দী থাকুক। আরব বিশ্বে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শত্রু তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ফান্স এসব পাশ্চাত্যের দেশগুলি। তারই প্রমাণ, সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের স্বৈরশাসকদের সাথে এসব পাশ্চাত্য দেশগুলিকে একত্রে কাজ করতে দেখা গেছে মিশরের সর্বপ্রথম নির্বাচিত প্রসিডেন্ট ডক্টর মহম্মদ মুরসীকে সামরিক ক্যু’র মাধ্যমে অপসারিত করতে। তারা জানে, মিশরের শাসন ক্ষমতা যদি প্রসিডেন্ট ডক্টর মহম্মদ মুরসীর হাতে থাকতো তবে গাজার উপর ইসরাইল এরূপ গণহত্যা চালানো সাহস পেত না। তারা তো ডক্টর মহম্মদ মুরসীকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ফিলিস্তিনদের স্বাধীনতার লড়াইকে দুর্বল করতে।
মিশর আরব বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশ। দেশটির গুরুত্ব বেড়েছে ইসরাইলের প্রতিবেশী হওয়ার কারণে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল পাশ্চাত্য দেশগুলির লক্ষ্য হলো মিশরের মাটিতে গণতন্ত্রকে প্রতিহত করা। সেটি তারা সফল ভাবেই করেছে ড. মহম্মদকে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমে। কারণ, তারা জানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলে ইখওয়ানুল মুসলিমুনের ামত ইসলামী সংগঠনই বিজয়ী হবে। তখন লড়াই তীব্রতর হবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে। তাই গণতন্ত্র প্রতিহত করার কাজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগটি বিশাল। The US Department of State’য়ের রিপোর্ট হলো ১৯৭৮ সাল থেকে এ অবধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিশরকে ৮০ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছে। এর মধ্যে ৫০ বিলিয়ন হলো সামরিক সাহায্য এবং ৩০ বিলিয়ন হলো অর্থনৈতিক সাহায্য। ঊল্লেখ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ১.৩ বিলিয়ন সামরিক সাহায্য এবং সে অর্থ সরাসরি সামরিক বাহিনী পেয়ে থাকে।
আরব শাসকদের হামাস ভীতি ও ইসরাইল প্রীতি
একমাত্র ইরান ছাড়া আর কোন মুসলিম রাষ্ট্রই ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনতার যুদ্ধে সহায়তা দেয় না। তারা বড় জোর কিছু ত্রাণ সাহায্য দেয়। তাদের সাহায্য এতোটুকুই। হামাস ও ইসলামী জিহাদ রণাঙ্গণে যা সামর্থ্য দেখাচ্ছে -তার পিছনে রয়েছে ইরান। ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনতার লড়াইটি লড়ছে একমাত্র হামাস ও ইসলামী জিহাদ। পি.এল. ও এবং তার প্রধান অঙ্গ সংগঠন আল-ফাতাহ বহু দশক আগেই স্বাধীনতার লড়াই পরিত্যাগ করেছে। তারা ইসরাইলের সাথে আত্মসমর্পন চুক্তি করেছে এবং এখন স্বাধীনতা ভিক্ষা করে ইসরাইলের কাছে। তারা এতটুকুও বুঝে না যে, স্বাধীনতা ভিক্ষা করে পাওয়ার বিষয় নয়। স্বাধীনতা রক্ত দিয়ে অর্জন করতে হয়। সে পথই বেছে নিয়েছে হামাস ও ইসলামী জিহাদ। ইরানের বিরুদ্ধে শুধু ইসরাইলেরই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের সকল স্বৈরশাসকদেরও অভিযোগ, তারা কেন হামাস ও ইসলামী জিহাদকে সহায়তা দেয়। ইসরাইলের ন্যায় এসব স্বৈরশাসকদের কাছেও বড় অপরাধ হলো ফিলিস্তিনীদের সামরিক সাহায্য দেয়া।
ইসরাইল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আন্যান্য পাশ্চাত্য শক্তির মতে যারাই স্বাধীনতার লড়াই লড়বে তারাই সন্ত্রাসী। ফলে হামাস ও ইসলামী জিহাদ হলো তাদের কাছে সন্ত্রাসী সংগঠন। অথচ ইউক্রেনের ক্ষেত্রে তাদের নীতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা চায়, ইসরাইলী অধিকৃতির প্রতি ফিলিস্তিনীদের আত্মসমর্পণ। সেরূপ আত্মসমর্পণ ইউক্রেনের ক্ষেত্র চায় না। পাশ্চাত্য শক্তিগুলির সাথে সুর মিলিয়ে একই কথা বলে মিশর, আমিরাত, সৌদি আরব ও জর্দান। সে কথা বলছে এমন কি PLO নেতা এবং Palestine Authority (PA)’য়ের প্রেসিডেন্ট জনাব মাহমুদ আব্বাস। ইসরাইলের ন্যায় তারাও হামাস ও ইসলামী জিহাদের নির্মূল চায়। উল্লেখ্য হলো, ২০০৬ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে নাব মাহমুদ আব্বাসের দল আল-ফাতাহ হামাসের কাছে শোচনীয় ভাবে হেরে যায়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ষড়যন্ত্র করে হামাসকে সরকার গঠন করতে দেয়া হয়নি। মাহমুদ আব্বাসের ন্যায় বেশরম ব্যক্তিটি নির্বাচন ছাড়াই ১৭ বছর প্রেসিডেন্টের পদটি দখল করে আছে। প্রতিটি দিয়েছে দুর্বৃত্তদের এক স্বর্গরাজ্য।
স্বৈরশাসিত আরব রাষ্ট্রগুলির বহুঘোষিত নীতি হলো, তারা নিরাপত্তা চায় ইসরাইলের। অনেক গুলি আরব রাষ্ট্র ইসরাইলকে স্বীকৃতিও দিয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনতার লড়াইকে তারা স্বীকৃতি দেয়না। সে লড়াইকে সমর্থণও দেয় না। কারণ এসব স্বৈরশাসকদের রয়েছে প্রচণ্ড হামাসভীতি। কারণ হামাসের উদ্ভব ঘটেছে মিশরের প্রখ্যাত ইসলামী সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমুন থেকে। ইখওয়ানুল মুসলিমুনের লড়াই যেমন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে, তেমনি ইসলামকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে। মিশরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ডক্টর মহম্মদ মুরসী ছিলেন এই ইখওয়ানুল মুসলিমুনের সদস্য। মিশরের বর্তমান স্বৈরশাসক জেনারেল আব্দাল ফাতাহ আল-সিসি ইখওয়ানুল মুসলিমুনকে সন্ত্রাসী সংগঠন অভিহিত করে সেটিকে নিষিদ্ধ করেছে এবং তার বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ২০১৩ সালের ১৪ আগস্টের সন্ধারাতে কায়রোর “রাবা আল আদাবিয়া”র চৌরাস্তায় অবস্থানরত ইখওয়ানুল মুসলিমুনের নেতা-কর্মীদের উপর মেশিন গান ও কামান দাগিয়ে ২৬০০ জনকে হত্যা করে। এটি ছিল মিশরের বুকে শাপলা চত্বরের ন্যায় হত্যাকান্ড। যারা বেঁচে যায় তাদেরকেও কারাবন্দী করা হয়। ৬০ হাজারের বেশী ইখওয়ানুল মুসলিমুনের নেতাকর্মী এখনো জেলে। এই হলো ইখওয়ানুল মুসলিমুনের সাথে মিশর সরকারের নীতি। সে অভিন্ন নীতিটি সৌদি আরব, বাহরাইন ও আরব আমিরাতসহ অধিকাংশ আরব দেশের।
স্বৈরশাসকদের ভয়, ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাস বিজয়ী হলো তাদের ইসলামবিরোধী সেক্যুলার স্বৈর শাসন বিপদে পড়বে। নিজেদের শাসন বাঁচাতে এসব স্বৈরশাসকগণ বরং ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য প্রার্থী। এজন্যই তারা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ফিলিস্তিনী প্রসঙ্গকে পাশ কাটিয়ে ইসরাইলের সাথে Abraham Accord নামে মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। সৌদি আরবও ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া এবং ইসরাইলের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রায় দ্বারপ্রান্তে ছিল। কিন্তু ইসরাইলের উপর হামাসের সাম্প্রতিক হামলা সে সৌদি প্রজেক্টকে আস্তাকুঁড়ে ফেলেছে। এতেই সৌদি আরবে ক্ষোভ।
সাবাস বলিভিয়া
ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধের নিন্দা জানিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়া ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক চ্ছিন্ন করেছে। দক্ষিণ আমেরিকার আরো দুটি দেশ কলম্বিয়া ও চিলি তাদের দূতকে ইসরাইল থেকে সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু বড়ই লজ্জার বিষয় ও সে সাথে অতি ধিক্কার জানানো বিষয় হলো, তুরস্ক, জর্দান, বাহারাইন, সুদান, মরক্কো, ওমান ও আরব আমিরাত ইসরাইলের সাথে তাদের সম্পর্ক চ্ছিন্ন করেনি এবং তাদের দূতদেরও অপসারণ করেনি। এ থেকে বুঝা যায়, ফিলিস্তিনীদের প্রতি যে গণহত্যা হচ্ছে সেটিকে নিন্দা করার জন্য যে বিবেক ও মানবতার প্রয়োজন হয়ে সে বিবেক ও সে মানবতা এসব দেশের শাসকদের মাঝে বেঁচে নাই। এতে বুঝা যায়, স্বৈর শাসন মানুষকে কতটা বর্বর, বিবেকহীন ও নিষ্ঠুর হতে শেখায়। তাই যে মানবতা বলিভিয়ার শাসকের মাঝে দেখা যায় সেটি তুরস্ক, জর্দান, বাহারাইন, সুদান, মরক্কো, ওমান ও আরব আমিরাতের শাসকদের মাঝে বেঁচে নাই। যে কোন সভ্য ও সুশীল মানুষ তাদেরকে ধিক্কার জানাবে সেটিই স্বাভাবিক। তাদের এ কদর্য চরিত্র ইতিহাসে আপন কদর্যতা নিয়ে যুগ যুগ বেঁচে থাকবে।
সিভিলাইজেশনাল স্টেটের বিলুপ্তি এবং মুসলিম উম্মাহর প্যারালাইসিস
মুসলিমদের মূল সমস্যাটি হলো তাদের হাতে ৫০টির বেশি রাষ্ট্র থাকলেও কোন সিভিলাইজেশনাল স্টেট নাই। মুসলিম রাষ্ট্রগুলি হলো ট্রাইবাল, ন্যাশনাল বা সাব- ন্যাশনাল স্টেট। সিভিলাইজেশনাল স্টেট হলে তার রাজনীতি, বিদেশ নীতি ও সামরিক নীতি কখনোই গোত্র, বর্ণ,ভূমি ও ভাষাভিত্তিক সীমা-সরহাদ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়না। বরং সীমানা নির্ধারিত হয় ধর্মীয় বিশ্বাস ও আদর্শের ভিত্তিত। তখন রাষ্ট্রনায়কদের ভাবনাটি হয় সিভিলাইজেশনাল স্বার্থ্যের প্রতিরক্ষা দেয়া নিয়ে। ইহুদিদের সিভিলাইজেশনাল স্টেট হলো ইসরাইল। ইহুদীরা বিশ্বের যে দেশেই বিপদে পড়ে সেখানেই ইসরাইল ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং যা কিছু সম্ভব সেটা করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে। এটিই হলো একটি সিভিলাইজেশনাল স্টেটের দায়ভার। তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলো খ্রিস্টানদের সিভিলাইজেশনাল স্টেট। তাই দক্ষিণ সুদানের খ্রিস্টানরা যখন স্বাধীনতার দাবি তুললো তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসকগণ সেটিকে সমর্থন দেয়। অর্থ ও অস্ত্রসহ সর্বপ্রকার সহায়তাও দেয়। ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমুরের ক্রিশ্চানরা যখন স্বাধীনতার দাবি তুললো তখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সর্বপ্রকার সহায়তা দিয়েছে। হিন্দুদের সিভিলাইজেশন স্টেট হলো হিন্দুস্তান বা ভারত। তাই বিশ্বের যে প্রান্তেই হিন্দুরা থাকুক তাদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতীয় নেতারা মাথা ঘামায়। তাই বাংলাদেশের হিন্দুদের গায়ে কোন আঁচড় লাগলে দিল্লি থেকে হৃংকার উঠে। কিন্তু হিন্দুত্ববাদীদের হাতে ভারতীয় মুসলিমগণ গণহত্যা ও গণধর্ষণের শিকার হলে বা সে দেশে মসজিদ ধ্বংস করা হলেও বাংলাদেশ সরকার তা নিয়ে কোন প্রতিবাদ করে না। কারণ বাংলাদেশ একটি ট্রাইবাল রাষ্ট্র; এ রাষ্ট্রটির কোন সিভিলাইজেশনাল এজেন্ডা নাই।
ভয়ানক বিপদের কারণ হলো, সমগ্র বিশ্বে মুসলিমদের কোন সিভিলাইজেশনাল স্টেট নাই। ফলে তারা আজ প্যারালাইসিসের শিকার। দেড় শত কোটি মুসলিমের বিশাল দেহ থাকলেও তাদের দাঁড়াবার সামর্থ্য নাই। বিভক্ত এ উম্মাহর কোন অভিভাবকও নাই। এজন্যই ইসরাইলের হাতে ফিলিস্তিনী মুসলিমগণ গণহত্যার শিকার হলেও কোন মুসলিম রাষ্ট্র সেখানে সহায়তায় এগিয়ে আসে না। মৌখিক সহানুভুতি জানিয়ে দায়িত্ব শেষ করে মাত্র। তেমনি কাশ্মীরের মুসলিম,ভারতের মুসলিম, চীনের মুসলিম বা রোহিঙ্গা মুসলিমগণ বিপদে পড়লে কোন মুসলিম রাষ্ট্র তা নিয়ে মাথা ঘামায় না। দায়িত্ব জাতিসংঘের ঘাড়ে চাপিয়ে তারা নিজেরা ঘুমায়। অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রই ট্রাইবাল বা ন্যাশনাল এজেন্ডা নিয়ে ব্যস্ত। ট্রাইবাল সীমান্ত বা ন্যাশনাল সীমান্তের ওপারে তাদের কোন এজেন্ডা নেই। কোন দায়িত্বও নাই। তাছাড়া মুসলিম বিশ্বের হাতেগুণা কয়টি দেশ বাদ দিলে সবগুলো রাষ্ট্রই স্বৈরাচারের কবলে। স্বৈরাচারী সরকারের এজেন্ডা হয় স্রেফ নিজ গদির সুরক্ষা। অন্য দেশ দূরে থাক, নিজ দেশের জনগণের কল্যাণ নিয়ে ভাববার সময়ও তাদের নেই। তাই সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মিশর, জর্দান, সিরিয়া -এসব দেশের স্বৈরাচারী শাসকদের দিবারাত্রের ভাবনা হলো স্রেফ নিজেদের গদির নিরাপত্তা নিয়ে। নিজ দেশের সীমান্তের ওপারে কি ঘটছে তা নিয়ে কিছু ভাবা বা কিছু করার সময় তাদের নাই।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা-সামর্থ্য বাড়াতে সমগ্র পাশ্চাত্য বিশ্ব দিবারাত্র তৎপর। ইসরাইলের পাশে বিস্তর অর্থ ও অস্ত্র নিয়ে সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল পাশ্চাত্য শক্তি হাজির। ইসরাইলের পক্ষে তারা প্রচারণাও করছে। অথচ সকল মুসলিম রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একমাত্র ইরান কিছুটা হলেও সিভিলাইজেশনাল স্টেটের পরিচয় রেখেছে। তাই তারা শুধু নিজ দেশের ভিতরের ইস্যু নিয়ে ভাবে না, সীমান্তের বাইরে মুসলিম উম্মাহও তারা ভাবে। তারই প্রমাণ হলো, ইরাক সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন ও ফিলিস্তিনের রাজনীতিতে তারা প্রচণ্ড প্রভাব বিস্তার করেছে। একমাত্র ইরান ছাড়া অন্য কোন মুসলিম রাষ্ট্রের নিজ সীমানার বাইরে অন্য দেশের অভ্যন্তরে কোন প্রভাব নাই। ইরানের নেতাগণ শিয়া হয়েও তারা হামাস ও ইসলামিক জিহাদের ন্যায় সূন্নী সংগঠনকে সাহায্য দেয়। ইরান ভিন্ন বিশ্বের আর কোন মুসলিম রাষ্ট্রই ফিলিস্তিনীদের পাশে এতোটা প্রবল ভাবে দাঁড়ায়নি।
ফিলিস্তিনীদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজনটি ত্রাণ সামগ্রী নয়, সেটি হলেো নিজেদের প্রতিরক্ষার প্রয়োজনীয় সামর্থ্য। শুধু ত্রাণ নিয়ে বাঁচলে কোন দিনই গোলামী থেকে তাদের মুক্তি মিলবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট ও তার মিত্ররা ইসরাইলের ডিফেন্স রাইট তথা প্রতিরক্ষার অধিকারকে গুরুত্ব দেয়। কিন্তু সে রাষ্ট্রগুলি ফিলিস্তিনীদের সে ডিফেন্স রাইটকে স্বীকৃতি দেয় না। ফিলিস্তিনীদের প্রতিরক্ষার সে সামর্থ্য বাড়ুক -সেটিও তারা চায় না। কিন্তু মুসলিম উম্মাহর এজেন্ডা তো এরূপ হওয়া উচিত, যাতে ফিলিস্তিনীরা নিজেদের প্রতিরক্ষা দায়িত্ব নিজেরা নিতে পারে। প্রতিটি মুসলিম দেশের দায়িত্ব হলো ফিলিস্তিনীদের মাঝে সে সামর্থ্য সৃষ্টি করা। ফিলিস্তিনীদের এ প্রয়োজনটি একমাত্র ইরান সরকার বুঝেছে এবং যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে ফিলিস্তিনীদের প্রতিরোধের সামর্থ্য বাড়াতে। অন্য কোন মুসলিম রাষ্ট্র একাজে এগিয়ে আসেনি। মুসলিম উম্মাহর এটি এক বিশাল ব্যর্থতা। বিশেষ করে সূন্নী অধ্যুষিত দেশগুলির। অথচ ফিলিস্তিনীদের পাশে দাঁড়িয়ে ইরান বিশাল ঝুঁকি নিয়েছে। ইসরাইল এবং তার সহায়তা দানকারী মার্কিন শিবিরের দেশগুলির কাছে ইরান এখন এক নম্বর শত্রু। ইরান যদি শিয়া রাষ্ট্র না হয়ে একটি সুন্নী রাষ্ট্র হতো তবে এ দেশটি অবশ্যই মুসলিমদের সিভিলাইজেশনাল স্টেট রূপে প্রতিষ্ঠা পেত। অন্য মুসলিম দেশগুলি এক্ষেত্রে যেমন দায়িত্বহীন, তেমনি অনুভূতিহীন।
নবীজী (সা:)’র সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্নত: সিভিলাইজেশনাল স্টেট
সিভিলাইজেশনাল স্টেট তো সেটিই যার ধর্মভিত্তিক ও আদর্শভিত্তিক এজেন্ডা থাকে। এবং উর্দ্ধে উঠে ভাষা,বর্ণ, গোত্র ও অঞ্চল ভিত্তিক এজেন্ডা থেকে। তেমন একটি রাষ্ট্রেরই প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন নবী (সা:)। তিনি ১০টি বছর সে রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন। এটিই তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্নত। মুসলিমগণ সুরক্ষা পেয়েছে, সর্ববৃহৎ বিশ্বশক্তি রূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এবং সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা ও সংস্কৃতি নির্মিত হয়েছে তো সে রাষ্ট্রের কল্যাণেই। লক্ষ লক্ষ মসজিদ-মাদ্রাসা, সুফি খানকাহ ও পীর-মুরিদী প্রতিষ্ঠা দিয়েও কি এতো বড় অর্জন সম্ভব হতো? নবীজী (সা:)’র ইন্তেকালের পর সিভিলাইজেশনাল স্টেট বেঁচেছিল খেলাফত নামে। যতদিন সে খেলাফত বেঁচে ছিল, ততদিন কোন কাফের শক্তিই মুসলিমদের উপর দখল জমাতে পারিনি। কিন্তু বিপর্যয়ের শুরু তখন থেকেই যখন সে খেলাফত বিলুপ্ত হয়েছে। মুসলিমগণ তখন অভিভাবকহীন এতিমে পরিণত হয়েছে। খেলাফতকে বিলুপ্ত করার কাজটি বিদেশী কাফেরগণ একাকী করেনি। তাদের সাথে ছিল মুসলিম ঘরে জন্ম নেয়া জাতীয়তাবাদী, গোত্রবাদী, সেক্যুলারিস্ট, সোসালিস্ট ও রাজতন্ত্রীরা। এরাই মুসলিম উম্মাহর ঘরের শত্রু। এই ঘরের শত্রুরাই মুসলিম বিশ্বকে ৫০টির বেশী খণ্ডে বিভক্ত করেছে এবং আরব ভূখণ্ডকে ২২ টুকরায় বিভক্ত করেছে। বিদেশী ইহুদীরা যেমন ফিলিস্তিন দখলে নিয়েছে. তেমনি মুসলিম নামধারী ঘরের শত্রুরা দখলে নিয়েছে সমগ্র ৫০টির বেশী মুসলিম রাষ্ট্রের। এভাবে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব অধিকৃত হয়েছে জাতীয়তাবাদী, গোত্রবাদী, রাজতন্ত্রী সেক্যুলারিস্ট শত্রুদের হাতে। ফলে কোথাও বিজয়ী হতে পারিনি মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তার শরিয়তী বিধান। ফলে মুসলিমগণ বাঁচছে ঘরের শত্রুদের হাতে ইসলামের পরাজয় নিয়ে। এসব স্বৈরাচারী শাসকদের লাগাতর যুদ্ধটি জনগণের বিরুদ্ধে। ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, ভারত, মায়ানমার, জিংজিয়াং’য়ের মজলুম মুসলিমদের দিকে তাকাবার সময় তাদের নাই। জনগণের বিরুদ্ধে সে লাগাতর যুদ্ধটি যেমন দেখা যায় পাকিস্তানে, তেমনি বাংলাদেশ, সিরিয়া, সুদানসহ প্রতিটি স্বৈরাচার কবলিত দেশে।
মুসলিমদের গৌরব কালে আরব, কুর্দি, তুর্কি, ইরানী, আফগানী, হাবসী, মুর এরকম নানা ভাষাভাষী মুসলিমরা একত্রে একসাথে বসবাস করেছে। ফলে মুসলিম উম্মাহর কোথাও কেউ বিপদে পড়লে রাষ্ট্রীয় বাহিনী সেখানে ছুটে গেছে। মুহম্মদ বিন কাসিম যেমন ছুটে গেছেন বসরা থেকে সুদূর সিন্ধু দেশে। অমুসলিম দেশেও মুসলিম ব্যবসায়ী, ধর্মপ্রচারক ও পরিব্রাজকের গায়ে কেউ হাত দিতে সাহস পায়নি। মুসলিমদের জন্য একটি সিভিলাইজেশনাল স্টেট প্রতিষ্ঠার সর্বশেষ উদ্যোগ নিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমগণ। সেটি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠির বসবাস এই দক্ষিণ এশিয়ার বুকেই। ভাষা, বর্ণ ও অঞ্চল ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের স্রোতে না ভেসে বাঙালি, বিহারী, পাঞ্জাবী, পাঠান, গুজরাতী, সিন্ধি, বেলুচ ইত্যাদি নানা পরিচয়ের মানুষ প্যান ইসলামিক চেতনার ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে গড়েছিল তৎকালীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র। এবং চীন ও ভারতের পরই পাকিস্তানই ছিল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র। সে রাষ্ট্রটি বেঁচে থাকলে সেটি আজ হতে পারতো পারমানবিক শক্তিধারী ৪০ কোটি মুসলিমের সিভিলাইজেশনাল স্টেট। কিন্তু দেশটি ঘরের শত্রুরা ছিল সংখ্যায় বিশাল। ঈমানদারের কাজ মুসলিম রাষ্ট্রের আয়োতন বাড়ানো। একাজটি পবিত্র জিহাদ। ইসলামের গৌরব কালে মুসলিমগণ শত শত জিহাদ সংগঠিত করেছেন দেশের ভূগোল বাড়ানোর কাজে। কারণ দেশের ভূগোল বাড়লে স্বাধীনতাও বাড়ে। তাতে ইসলামের প্রচার, প্রতিষ্ঠা ও গৌবব বাড়ে। তাই মুসলিমগণ ইসলামী রাষ্ট্রকে মদিনার ক্ষুদ্র ভূমিতে সীমিত না রেখে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত করেছে।
আর মুসলিমদের পতনের শুরু তখন থেকেই যখন দেশের ভূগোল বাড়ানোর পরিবর্তে ভূগোল ভাঙ্গার কাজ শুরু হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের বুকে মুসলিম দেশের ভূগোল ভাঙ্গার কাজে প্রথমে নামে বাঙালি মুসলিমেরা। সমগ্র মুসলিম ইতিহাসের এটি অতি কলঙ্কিত অধ্যায়। মুসলিম দেশের ভূগোল ভাঙ্গলে তাতে দেশ দুর্বল হয় এবং স্বাধীনতাও বিলুপ্ত হয়। তাই দেশভাঙ্গা হারাম। একাজ ইসলামের শত্রুপক্ষের। পাকিস্তানে ইসলামের সে শত্রুপক্ষটি ছিল বিশাল। এরা ছিল ইসলাম থেকে দূরে সরা সেক্যুলারিস্ট, সোসালিস্ট ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং সামরিক অফিসার। তারা দেশটির ধ্বংসে জোট বাঁধে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী শক্তির সাথে। ভারতের পৌত্তলিক কাফিরদের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে নামে পাকিস্তানের ন্যায় একটি মুসলিম দেশের বিনাশে। সমগ্র মুসলিম ইতিহাসে পৌত্তলিকদের সাথে কোয়ালিশন গড়ার এমন কান্ড আর কোন কালেই হয়নি। এ কলঙ্ক নিয়ে বহুশত বছর পরও বাঙালি মুসলিমদের আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। আর দেশটির ইসলামী চেতনাশূণ্য ও দায়িত্বশূণ্য আলেমরাও দেশটির সুরক্ষায় এগিয়ে আসেনি। ভারতীয় কাফির শক্তির হামলার মুখে তারা ছিল দর্শকের কাতার। তারা হয়তো ভেবেছিল ভারতীয় কাফিরগণ তাদের মুখে স্বাধীনতা তুলে দিবে। ফলে ১৯৭১’য়ে ইসলামের শত্রুরাই বিজয়ী হয়। এভাবে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমদের সিভিলাইজেশনাল স্টেট নির্মাণের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা পায় ভারতসেবীদের আধিপত্য। আজও সে আধিপত্য অটুট।
মুসলিম বিশ্বের আজকের সবচেয়ে বড় প্রয়োজনটি বেশী বেশী মসজিদ-মাদ্রাসার নির্মাণ নয়, বরং সেটি হলো একটি সিভিলাইজেশনাল স্টেটের নির্মাণ। এটিই আজ প্রতিটি ঈমানদারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটিই মুসলিমের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। এ কাজ না করে শুধু মসজিদ-মাদ্রাসার সংখ্যা বাড়িয়ে লাভ নাই। মসজিদের সংখ্যা দ্বিগুণ করেও স্বাধীনতা ও ইজ্জত বাড়বে না। তেমনি মুসলিম রাষ্ট্রের সংখ্যা বাড়িয়েও কোন লাভ নাই। লাভ নাই সেনা সংখ্যা বাড়িয়ে এবং বড় বড় ক্যান্টনমেন্ট নির্মাণ করেও। সেগুলি বরং শাপলা চত্বরের ন্যায় গণহত্যায় এবং ইসলামের শত্রুশক্তির দখলদারী বাঁচাতে ব্যবহৃত হবে। তখন মুসলিম জনগণকে বাঁচতে হবে বিদেশী শক্তির দেশী গোলামদের অধীনে দাসত্ব নিয়ে। ১/১১/২০২৩
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- Why not the Muslims Should Suffer from Slavery & Subjugation?
- বাঙালি মুসলিম জীবনে মতবাদী রাজনীতির নাশকতা
- বাংলাদেশের বিপদ ও সম্ভাবনা
- সংগঠিত হতে হবে সংগঠন ছাড়াই
- পতিত হাসিনার দুর্বৃত্তায়ন ও হিন্দুত্বায়ন প্রকল্প এবং বাঙালি মুসলিম জীবনে নাশকতা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018