একাত্তরের বয়ান ও রাজাকার প্রসঙ্গ
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on May 25, 2025
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
বিজয়টি ফ্যাসিবাদী সেক্যুলার বয়ানের
ভারতসেবী বাঙালি ফ্যাসিস্ট, ইসলাম বিদ্বেষী সেক্যুলারিস্ট, বাম কাপালিক এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদীগণ যে তাদের একাত্তরের অসত্য বয়ানকে গভীর ভাবে প্রতিষ্ঠা দিতে পেরেছে -তার প্রমাণ প্রচুর। সবচেয়ে বড় প্রমাণটি হলো, “রাজাকার” শব্দের ন্যয় ঐতিহ্যবাহী একটি ইসলামী পরিভাষাকে গালিতে পরিণত করতে পেরেছে। এখানেই তাদের বিশাল বুদ্ধিবৃত্তিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিজয়। “রাজাকার” শব্দটি একটি ফার্সি শব্দ। যারাই স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে মুসলিম উম্মাহর স্বাধীনতা রক্ষায় আত্মনিয়োগ করে তাদেরকেই রাজাকার বলা হয়। ১৯৪৮ সালে ভারতীয় কাফির বাহিনীর আগ্রাসন রুখতে হায়দারাবাদের যেসব মুসলিম যুবক যুদ্ধে নেমেছিল -তারাই ইতিহাসে রাজাকার নামে পরিচিত। তেমনি ১৯৭১’য়ে যারা পাকিস্তানের উপর ভারতীয় কাফির বাহিনী ও তার দালালদের আগ্রাসন রুখতে যুদ্ধে নেমেছিল তারাই ইতিহাসে রাজাকার নামে পরিচিত। রাজাকারগণ ছিল পাকিস্তানের নাগরিক। নিজ দেশের স্বাধীনতা বাঁচাতে নামাটি কোন অপরাধ নয়। ইসলামে সেটি পবিত্র জিহাদ। সেটিই ছিল রাজাকার চেতনা।
রাজনৈতিক বয়ানই দেশের ইতিহাস পাল্টায়; ঠিক করে দেয় কাকে ঘৃণা করতে হবে এবং কাকে শ্রদ্ধা জানাতে। এরই ফল হলো, এমন কি জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতাকর্মীগণও “রাজাকার” শব্দটিকে একটি গালি হিসাবে ব্যবহার করে। তারা ভারতপন্থীদের ভারতের রাজাকার বলে গালি দেয়। এবং সে গালি থেকে বাঁচতেই জামায়াতে ইসলামীর নেতাগণ দাবী করেন, একাত্তরে তাদের দল থেকে কেউ রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়নি। অপর দিকে কোন মুক্তিযোদ্ধা জামায়াতে যোগ দেয়, তবে তাকে নিয়ে তারা গর্বে বোধ করে। একেই বলে বুদ্ধিবৃত্তিক পরাজয়। এর অর্থ: একাত্তরে যে চেতনা নিয়ে তারা রাজনীতি করতেন, এখন সে চেতনা তারা ধারণ করে না। এখন প্রশ্ন হলো, তারা একাত্তরে সঠিক ছিল না এখন সঠিক -সে বিচার কে করবে? কোন মানদণ্ডে সে বিচার হবে? সেটি সেক্যুলার মানদণ্ডে, না ইসলামী মানদণ্ডে? কোন মুসলিমের কাছে কি সেক্যুলার মানদণ্ড গ্রহণযোগ্যতা পায়? তাতে কি ঈমান থাকে?
প্রশ্ন হলো, মুসলিমের কাছে রাজনীতি বাঁচানো গুরুত্বপূর্ণ না, ঈমান বাঁচানো? সেক্যুলার মানদণ্ডে জ্বিনাও হালাল -যদি দুই পক্ষের সম্মতি থাকে। মুসলিম দেশ ভাঙ্গাও হালাল -যদি ক্ষমতায় বসার সুযোগ থাকে। কিন্তু ইসলামী মানদণ্ডে তো উভয়ই হারাম। মনে হচ্ছে একাত্তরের বিচারে জামায়াতে ইসলামীসহ অধিকাংশ দল সেক্যুলার মডেলকেই গ্রহণ করেছে, তাই ১৬ ডিসেম্বর নিয়ে তারা বিজয় উৎসব করে -যেমনটি দিল্লিতে ভারতীয় পৌত্তলিক কাফিরগণ করে। এবং গালি দেয় রাজাকারদের। তারা রাজনীতি করে শয়তানকে খুশি করতে, আল্লাহকে খুশি করতে নয়। আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডা তো মুসলিম দেশের অখন্ডতার সুরক্ষা। শয়তানের এজেন্ডা তো বিভক্তি। শয়তানের সে এজেন্ডার বাস্তবায়নে নেমেছিল শয়তানের পৌত্তলিক খলিফাগণ। তাদেরকে সহয়তা দিয়েছে বাঙালি ফ্যাসিস্ট, ইসলাম বিদ্বেষী সেক্যুলারিস্ট ও বাম কাপালিকগণ। এখন ১৬ ডিসেম্বর বা ২৬ মার্চ এলে তাদের সাথে উৎসবে নামে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির। বিশাল বিচ্যুতিটু কি এরপরও গোপন থাকে? এমন বিচ্যুতি নিয়ে কি জান্নাতে যাওয়া যাবে?
ইসলামপন্থীদের চেতনায় দূষণ ও বিচ্যুতি
সম্প্রতি এক ভিডিওতে দেখা গেল, জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমানকে এক ব্যক্তি রাজাকার বলেছেন। সে কথার প্রতিক্রিয়ায় ডা: শফিক সাহেব অত্যন্ত রাগান্বিত দেখা গেল। তিনি সে ব্যক্তির জিহবাকে নিজের পায়ের নীচে ফেলে পিষ্ট করার হুমকি দিলেন। রাজাকারদের প্রতি ডা. শফিক সাহেবের ঘৃণা যে এতোটা গভীর সেটি না দেখলে বিশ্বাস করা যেত না। জানা যায়, ডা. শফিক সাহেব ছাত্র জীবনে জাসদ ছাত্র লীগ করতেন। সম্ভবত তখন থেকেই তার চেতনায় বাসা বেঁধেছে একাত্তরের বয়ান। আর একাত্তরের বয়ান মগজে বাসা বাঁধলে তো রাজাকারদের ঘৃণা তো থাকবেই। তার কাছে সম্মানিত তো ভারতে প্রশিক্ষণ নেয়া ও ভারতের নিমক খাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা। ডা. শফিক সাহেবের এক ভাই মুক্তি বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। তা নিয়ে তার গর্ব যে কত প্রচণ্ড সেটিও ঐ ভিডিওতে দেখা গেল। এ থেকে বুঝা যায়, একাত্তরের বাঙালি ফ্যাসিবাদী সেক্যুলার বয়ান তার মাঝে কতটা প্রবল ভাবে বাসা বেঁধে আছে।
তবে বুঝা যায়, শফিক সাহেবের ইতিহাস জ্ঞানে প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। বিস্ময়ের বিষয় হলো, এত কম ইতিহাস জ্ঞান নিয়ে তিনি জামায়াতের আমির হলেন কি করে? জামায়াতের প্রবীন নেতা-কর্মীদের থেকে তার জেনে নেয়া উচিত, একাত্তরে কাদের নিয়ে রাজাকার বাহিনী গড়া হয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র সংঘের হাজার হাজার কর্মী যে রাজকার বাহিনীর সাথে জড়িত ছিল এবং বহু হাজার জামায়াত কর্ম ও ছাত্র সংঘকর্মী যে শহীদ হয়েছেন, সে খবরটুকু যদি তিনি না জানেন -তবে তিনি জামায়াত নেতা হলেন কি করে? তবে কি তিনি জেনে বুঝে মিথ্যাচার করছেন? এবং গাদ্দারী করছেন শহীদদের সাথে? রাজনীতি কি তিনি আল্লাহকে খুশি করার জন্য করছেন, না বাঙালি ফ্যাসিস্ট, সেক্যুলারিস্ট ও হিন্দুত্ববাদীদের খুশি করার জন্য?
জামায়াত-শিবির নেতাদের চেতনায় একাত্তরের সেক্যুলার বয়ান যে কতটা প্রকট ভাবে বিজয়টি, সেটি বুঝা যায়, জামায়াত ও ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীদের ১৬ ডিসেম্বরে সেক্যুলার চেতনাধারীদের ন্যায় বিজয় মিছিল করতে দেখে। এ থেকে বুঝা যায়, জামায়াতে ইসলামীর ন্যায় ইসলামপন্থী দলগুলির পরাজয়টি শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং সে পরাজয়টি অতি গভীর বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণেও। আরো লক্ষণীয় হলো, যাদেরকে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্র শিবির এতো কাল ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় মিছিলে নামিয়েছে তারাই এখন ইউনাইটেড পিপল’স বাংলাদেশ ও এবি পার্টি বানিয়ে জামায়াতের একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে বিচার চাচ্ছে। জামায়াত এ ভাবেই নিজের শত্রু নিজের ঘরে তৈরি করেছে।
একাত্তরের ফ্যাসিবাদী সেক্যুলার বয়ানের বিশাল বিজয়ের আরো নমুনা হলো, বিএনপি’র বহু নেতাও শেখ মুজিবে ন্যায় গণতন্ত্রের খুনি, ফাসিবাদী দুর্বৃত্ত, ইসলামের শত্রু এবং ভারতের এজেন্টকে বঙ্গবন্ধু বলে। অপর দিকে এক ভিডিও’তে দেওবন্দি আলেম মাওলানা মামুনুল হককে বলতে শোনা গেল, জামায়াতে ইসলামী যদি একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে মাফ না চায়, তবে তাদের সাথে একতা গড়ায় বাধা রয়েছে।” এ থেকে বুঝা যায় একাত্তরের চেতনার সেক্যুলার বয়ান তাকে কতটা প্রভাবিত করেছে। প্রশ্ন হলো, মামুনুল হক কি জানেন না, একাত্তরে দেওবন্দী আলেমদের সংগঠন নিজামে ইসলাম পার্টি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পার্টির কি ভূমিকা কি ছিল? যদি না জানা থাকে তবে প্রবীনদের থেকে তাঁর জেনে নেয়া উচিত। এবিষয়ে অজ্ঞতা নিয়ে তো তাঁর রাজনীতিতে আসা উচিত না।
বেঈমান মাত্রই কেন জালেম?
পবিত্র কুর’আনে মহান আল্লাহ তায়ালা কাফির তথা বেঈমানদের জালিম বলেছেন। বলা হয়েছে:
وَٱلْكَـٰفِرُونَ هُمُ ٱلظَّـٰلِمُونَ
অর্থ: “কাফিরগণই হলো জালিম।” -(সুরা বাকারা, আয়াত ২৫৪)।
প্রশ্ন হলো, মহান আল্লাহ তায়ালা কাফির তথা বেঈমানদের কেন জালেম বললেন? জালেম তো সেই যে জুলুম করে। কাফির বা বেঈমানদের জুলুমটি কোথায়? কাফির তথা বেঈমানগণ যে জালেম তার প্রমাণ অনেক। জুলুম যেমন দৈহিক নির্যাতন ও দেহ হত্যার মধ্য দিয়ে হতে পারে, তেমনি হতে পারে বুদ্ধিবৃত্তিক হামলা বা চরিত্র হননের মধ্য দিয়ে। দেহের উপর পাথর চাপিয়ে দেয়া জুলুম। তেমনি জুলুম হলো চেতনার ভূমিতে মিথ্যা চাপিয়ে দেয়া। মিথ্যা চাপিয়ে দেয়ার অর্থ মনের জগতে অন্ধকার চাপিয়ে দেয়া। সে অন্ধকারে অসম্ভব হয় সত্যের পথে চলা ও সত্যকে গ্রহণ করা। মিথ্যার পথটি তো নিশ্চিত জাহান্নামের। কাফিরদের জুলুমটি মূলত এখানেই। অপরাধটি মানুষকে জাহান্নামের। এর চেয়ে বড় জুলুম আর কি হতে পারে? এ বিচারে কাফির বা বেঈমান মাত্রই জালিম। তাই একাত্তরের চেতনার নামে যারা বাঙালি মুসলিমের চেতনার দূষিতকরণ করেছে এবং ইসলামপন্থী ও পাকিস্তানপন্থীদের চরিত্রহনন করেছে তারা সবাই জালেম ।
রাজাকার শব্দটি গালির শব্দ?
প্রশ্ন হলো, একজন মুসলিমের কাছে কি রাজাকার শব্দটি গালির শব্দ? যারা চিন্তাশীল, দেশপ্রেমিক, ইতিহাস সচেতন ও সত্যিকার ইসলামপ্রেমী – এ বিষয়টি নিয়ে তাদের অবশ্যই চিন্তা ভাবনা করা উচিত। একাত্তরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিজয়ের পর থেকেই রাজকারদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো হয় এবং তাদেরকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। একাত্তরের যুদ্ধ শেষ হলেও রাজাকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। রাজাকারদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর কাজটি তারাই বেশী বেশী করে -যারা একাত্তরে ভারতে গিয়েছিল, ভারতের হাতে প্রতিপালিত হয়েছিল এবং ভারতের এজেন্ডা পূরণে তাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতকে বিজয়ী করতে যুদ্ধ করেছিল। অপরদিকে রাজাকারগণ যুদ্ধ নেমেছিল নিজ দেশের স্বাধীনতা বাঁচাতে। তারা অস্ত্র ধরেছিল ভারত ও তার দালালদের বিরুদ্ধে। নিজ দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করা কি দালালী? এমন কাজ কি বিশ্বের কোন সভ্য দেশে নিন্দনীয় গণ্য হয়? কিন্তু সে মহৎ কর্মটি নিন্দনীয় গণ্য হয়েছে ভারতপন্থী ফ্যাসিস্ট ও সেক্যুলারিস্টদের কাছে।
ভারত যে বাঙালি মুসলিমদের স্বাধীনতার চিরশত্রু, তারা যে কখনোই মুসলিমদের বন্ধু হতে পারে না –সে সত্যটি বাংলাদেশী জনগণ ২০২৪’য়ে এসে বুঝলেও কিশোর রাজাকারগণ বুঝতে পেরেছিল ১৯৭০ সালেই। অথচ সে বিশাল সত্যটি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু প্রফেসর,বহু রাজনীতিবিদ ও বহু প্রবীন বাঙালি বুদ্ধিজীবী বিগত ২৫ বছরেও বুঝতে পারিনি। অনেকের বয়স বাড়লেও বিবেক-বুদ্ধি যে বাড়ে না -এরাই হলো সে গোত্রের। এ গোত্রের মানুষগুলিই ভারতে গরুপূজা করে এবং গোমূত্র সেবন করে।
অখণ্ড পাকিস্তানের মধ্যেই রাজাকরগণ বাঙালি মুসলিমের কল্যাণ- দেখেছিল। মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি যে হারাম -সে বয়ানটি তো মহান আল্লাহ তায়ালার। কোন একটি মুসলিম দেশ ভাঙ্গা যে হারাম ও সে কাজে জড়িত হওয়া যে সুস্পষ্ট বেঈমানী -সেটি রাজাকারগণ মনে প্রাণে বিশ্বাস করতো। মুসলিমদের আজকের দুর্গতির মূল কারণ তো বিভক্তির এ হারাম পথের অনুসরণ। মুজিব তো সে হারাম পথেই নিয়েছিল। রাজাকারগণ সেটি বুঝতো বলেই তারা একাত্তরে ভারতে যায়নি। মুসলিম দেশ ভাংগার হারাম রাজনীতিতেও তারা যোগ দেয়নি। তারা পরাজিত হতে পারে কিন্তু তাদের বিশ্বাসকে তো মিথ্যা বলা যায় না। এজন্য কি রাজাকারকে কি গালী দেয়া যায়? সেটি তো ইসলামের মূল বিশ্বাসের সাথে বেঈমানী। ভারতীয় কাফেরদের সেবাদাসগণ রাজাকারকে গালী দিবে -সেটিই তো স্বাভাবিক। কিন্তু সেটি কি কোন ঈমানদারের কাজ হতে পারে? তাছাড়া সে বিশ্বাসটি কি রাজাকারদের একার ছিল?
একাত্তর নিয়ে হাক্কানী আলেমদের রায়
পাকিস্তান আমলে দেওবন্দী তথা কওমী আলেমদের প্রধান রাজনৈতিক সংগঠনটির নাম ছিল নিজামে ইসলামী পার্টি। এ পার্টির নেতা চৌধুরী মহম্মদ আলী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন। এ পার্টির আরেক নেতা কক্সবাজারের এ্যাডভোকেট মৌলভী ফরিদ আহমেদ পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রি হয়েছিলেন। নিজামে ইসলামী পার্টির পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সভাপতি ছিলেন প্রখ্যাত আলেম মাওলানা সিদ্দিক আহমেদ সাহেব। তিনি ছিলেন পটিয়া মাদ্রাসার প্রধান। দলটির অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন কিশোরগঞ্জের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা আতাহার আলী সাহেব। ইনি ছিলেন কিশোরগঞ্জের প্রখ্যাত ঈদের ময়দান শোলকিয়ার ইমাম। মাওলানা সিদ্দিক আহমেদ সাহেব, মাওলানা আতাহার আলী সাহেব ও লালবাগ মাদ্রাসার প্রখ্যাত আলেম মহম্মদ উল্লাহ হাফিজজি হুজুরসহ সে সময়ের সকল প্রখ্যাত আলেমই অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছেন এবং পাকিস্তান ভাঙ্গার বিরোধীতা করছেন।
মুসলিম দেশের বিভক্তি তো শয়তান ও তার অনুসারীরা চায়। কোন মুসলিমও কি বিভক্তি চাইতে পারে? সে সময় পূর্ব পাকিস্তানের প্রখ্যাত পীর ছিলেন শর্ষিনার পীর এবং সিলেটের ফুলতলীর পীর। ইনারা অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষ নেন। রাজাকারদের গালি দেয়ার অর্থ তো তাদেরও গালি দেয়া।
বাঙালি মুসলিমের চেতনার পচন এবং উদ্ধারের পথ
সেক্যুলারিজম, বাঙালি ফ্যাসিবাদ,হিন্দুত্ববাদ ও বাম ধারার রাজনীতি বাঙালি মুসলিমের চেতনার ভূবনে বিশাল পরিবর্তন এনেছে। আজ থেকে ৭০/৮০ বছর আগে বাঙালি মুসলিমগণ ইসলামের যতটা কাছাকাছি ছিল, আজ ততটাই দূরে সরেছে। ফলে পাল্টে গেছে তাদের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়ও। ১৯৪৭ সালে বাঙালি মুসলিমগণ তাদের বাঙালি পরিচয়ের উর্দ্ধে উঠে বিহারী, পাঞ্জাবী, পাঠান, সিন্ধি, বেলুচ, গুজরাতী মুসলিমদের ভাই রূপে আলিঙ্গণের সামর্থ্য দেখিয়েছিল। এবং বিশ্বের সর্ব বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব দিয়েছিল। কিন্তু বাঙালি মুসলিমগণ সে ঈমানী সামর্থ্য আজ হারিয়ে ফেলেছে। সেদিন তারা উৎসব করতো পাকিস্তান গড়া নিয়ে, আর আজ উৎসব করে সে পাকিস্তান ভাঙ্গা নিয়ে। ১৯৭১’য়ে পাকিস্তান বাঁচানোর জন্য যে রাজাকারগণ ভারত ও তাঁর হিংস্র দালালদের সামনে প্রাণ দানে খাড়া হয়েছিল তাদেরকে আজ বাংলাদেশের ইসলামপন্থীরাও ঘৃণা করে।
বাঙালি মুসলিমের চেতনার পচন যে কত গভীর -সেটি বুঝে উঠা কি এতোই কঠিন? সেটি তো বুঝা যায় ইসলাম ও জিহাদ থেকে দূরে থাকার মধ্য দিয়ে। চেতনার এ পচন নিয়ে দুর্নীতিতে ৫ বার প্রথম হওয়া সম্ভব, কিন্তু তা দিয়ে কোন সভ্য রাষ্ট্র গড়া কি সম্ভব? সভ্য রাষ্ট্র গড়তে তো ব্যক্তির পরিশুদ্ধি লাগে। সে পরিশুদ্ধির চেষ্টা কই? পরিশুদ্ধির হাতিয়ার তো পবিত্র কুর’আন। অজ্ঞতার বিরুদ্ধে জিহাদে এটিই তো একমাত্র অস্ত্র। নবীজী (সা:)’র কাজের শুরু তো কুর’আন বুঝা দিয়েই শুরু হয়েছিল। কিন্তু সে কুর’আন বুঝায় আয়োজন কই।
মুসলিমদের সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি লড়তে হয় চেতনার ভূমিতে। মহান আল্লাহ তায়ালা সুরা ফুরকানের ৫২ নম্বর আয়াতে সে যুদ্ধকে জিহাদে কবির বা বড় জিহাদ বলেছেন। বলা হয়েছে:
فَلَا تُطِعِ ٱلْكَـٰفِرِينَ وَجَـٰهِدْهُم بِهِۦ جِهَادًۭا كَبِيرًۭا
অর্থ: “অতএব তোমরা কাফিরদের অনুসরণ করবে না, এই কুর’আন দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বড় জিহাদটি করো।”
এটি বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ। এ জিহাদের মোক্ষম অস্ত্র যে পবিত্র কুর’আন -সেটিও তিনি বলেছেন। বাঙালি মুসলিমদের চেতনার মানচিত্র জুড়ে একাত্তরের সেক্যুলার বয়ানের যে প্রকট দখলদারী, তার কারণ, সে বয়ানের নির্মূলে কুর’আনী জ্ঞান দিয়ে সে বড় জিহাদটি কখনোই করা হয়নি। এমন কি যারা নিজেদের ইসলামপন্থী বলে দাবী করে তারাও করেনি। ফলে তারাও ভেসে গেছে একাত্তরের সেক্যুলার বয়ানের বানে। তাই ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বর এলে তথাকথিত ইসলামপন্থীরাও বাঙালি ফ্যাসিস্ট, সেক্যুলারিস্ট, বাম কাপালিক এবং হিন্দুত্ববাদীদের সাথে একই মোহনায় একত্রিত হয় এবং ভারতের বিজয়কে নিজেদের বিজয় বলে উৎসব করে। তাদের সাথে সুর মিলিয়ে এই ইসলামপন্থীরাও রাজাকাদের গালি দেয়। তারা এতটুকুও বুঝে না, একই সাথে মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ ও অভিশপ্ত শয়তানের পক্ষ -এ উভয় পক্ষকে খুশী করা যায় না। মুসলিমদের লক্ষ্য হতে হয় একমাত্র আল্লাহকে খুশি করা। ২৫/০৫/২০২৫
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- একাত্তরের বয়ান ও রাজাকার প্রসঙ্গ
- মুসলিম দেশে মুনাফিক শাসন ও উম্মাহর বর্তমান বিপর্যয়
- বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে যা করণীয়
- ঈমানদার ও বেঈমানের ভাবনা ও তাড়না
- Shocking Inaction of the World Leaders Against the Israeli War Criminals
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- May 2025
- April 2025
- March 2025
- February 2025
- January 2025
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018