মুসলিম দেশে মুনাফিক শাসন ও উম্মাহর বর্তমান বিপর্যয়
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on May 23, 2025
- সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
ইসলামী শাসন, কাফির শাসন ও মুনাফিক শাসন
মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে মানব জাতির বিভাজন মূলত তিন শ্রেণীতে: কাফির, মুনাফিক ও মুমিন। এবং কারা দেশ শাসন করছে তার ভিত্তিতে শাসন ব্যবস্থাও তিন প্রকার: ইসলামী শাসন, কাফির শাসন ও মুনাফিক শাসন। ইসলামী শাসন বলতে সেটিই বুঝায় -যা মহান নবীজী (সা:) ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করে এবং ১০টি বছর সে রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান রূপে শাসন করে নমুনা পেশ করে গেছেন। এ শাসন ব্যবস্থার মূল কথা মহান আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব এবং আদালতে শরিয়তী আইনের বিচার। নবীজী (সা:)’র পর খোলাফায়ে রাশেদা সে শাসন ব্যবস্থা আরো বহু বছর জীবিত রাখেন; পরে সে ইসলামী রাষ্ট্র সর্ববৃহৎ বিশ্ব শক্তিতে পরিণত হয়। এবং সে রাষ্ট্রের উপর নির্মিত হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা।
ইসলামী শাসন ব্যবস্থার অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো আইনের শাসন; এবং রাষ্ট্রের সে আইন মানবসৃষ্ট নয়, বরং মহান আল্লাহ তায়ালার দেয়া। রাষ্ট্রের শাসক কাজ করে কোন সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী রূপে নয় বরং মহান রবের খলিফা রূপে। তখন রাষ্ট্র পরিণত হয় মানব কল্যান, সত্য, সুশিক্ষা ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার হাতিয়ারে। এবং বিশাল রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো ও তার প্রাতিষ্ঠানিক লোকবল কাজ করে মিথ্যা, দুর্বৃত্তি, জুলুম ও অবিচারের নির্মূলে্। এবং রাষ্ট্র দায়িত্ব নেয় ওহীর জ্ঞানে জনগণকে আলোকিত করায়। এভাবে মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডাকে যে রাষ্ট্র নিজের এজেন্ডা বানিয়ে নেয়ে -সেটিই হলো ইসলামী রাষ্ট্র। এবং মহান আল্লাহর এজেন্ডা হলো, সকল মিথ্যা ধর্ম, মিথ্যা মতবাদ ও মিথ্যা দর্শনের উপর ইসলামের বিজয়। তখন জিহাদ সংঘটিত হয় শুধু জালেম রাষ্ট্রীয় শক্তির বিরুদ্ধেই নয়, বরং বড় জিহাদটি পরিচালিত হয় জাহিলিয়াত তথা অজ্ঞতার বিরুদ্ধে। এবং সে জিহাদের অস্ত্র হলো পবিত্র কুর’আন।
ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ তখন শাসক না হয়ে জনগণের খাদেমে পরিণত হয়। সাধারণ জনগণ তখন পায় নিজ নিজ সামর্থ্য নিয়ে বেড়ে উঠার পূর্ণ স্বাধীনতা। ফলে অতি দ্রুত আসে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সম্পদের প্রাচুর্য। তখন রাষ্ট্র পরিণত হয় এতীম, দুস্থ, নিঃস্ব ও পঙ্গুদের অভিভাবকে। সে রাষ্ট্রের প্রশাসন, শিক্ষাদান, বিচার কার্য, সমাজ কর্ম ও রাজনীতি পরিণত হয় উচ্চ মার্গীয় ইবাদতে। রাষ্ট্র তখন শুধু জনগণের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা দেয় না, বরং সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয় জনগণকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর। এভাবে রাষ্ট্র পরিণত হয় জান্নাতের বাহনে। নবীজী (:)’র প্রতিষ্ঠিত সে রাষ্ট্রই হলো ইসলামী রাষ্ট্রের মডেল। নবীজী (:)’র সে রাষ্ট্র কোটি কোটি মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়েছিল। সমগ্র মানব ইতিহাসে সে রাষ্ট্রই হলো মানব কল্যানের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজেক্ট। রাস্তা-ঘাট, কল-কারখানা, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, কৃষি উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেক রাষ্ট্রই করে, কিন্তু জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে অনন্ত অসীম কালের জন্য নেয়ামত ভরা জান্নাতে নেয়ার কাজটি আর কোন রাষ্ট্রই করেনি। তাই ইসলামী রাষ্ট্র গড়ার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কর্ম এ পৃথিবী পৃষ্ঠে নাই। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের এ লড়াইটি হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত তথা জিহাদ।
কাফির শাসিত রাষ্ট্রের উত্তম উদাহরণ হলো আজকের উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের শাসিত ভারত। এদেশে লাগতর যুদ্ধটি ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে। পৌত্তলিকতার ন্যায় অতি সনাতন মিথ্যাকে ধর্মের লেবাস পড়িয়ে বাঁচিয়ে রাখাই হলো এ রাষ্ট্রের মূল এজেন্ডা। রাষ্ট্রের নীতি হলো, গরু, মূর্তি, লিঙ্গ, সাপ, পাহাড়-পর্বত, নদী -এগুলিকে পূজনীয় করা। দেশটির নীতি হলো হিন্দু ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মের প্রচারকে রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রতিহত করা। কেউ ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নিলে তাকে সামাজিক ভাবে বয়কট করা হয়। সেটিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য হয়। এদেশে স্বাধীনতা একমাত্র হিন্দুদের। এবং একমাত্র তারাই ভারতীয় যাদের জন্মস্থান ও পুণ্যস্থান হলো ভারত। এর অর্থ, যাদের পুণ্যস্থান মক্কা বা জেরুজালেম, হিন্দুত্ববাদীদের দৃষ্টিতে তারা ভারতীয় নয়। মুসলিমদের এরা ভারতীয় না বলে বহিরাগত বলে। দেশটির রাজ পথে স্লোগান তোলা হয়: মুসলিম কো লিয়ে দো স্তান: পাকিস্তান ইয়া কবরস্তান। ভারতে মসজিদ ভাঙ্গা হয় এবং নতুন মসজিদ নির্মাণে অনুমতি দেয়া হয়না। মসজিদের অভাবে মুসলিম নামাজীরা যখন রাস্তায় বা খোলা মাঠে নামাজ পড়তে দাঁড়ায় তখন পুলিশ ও উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা তাদেরকে লাঠি দিয়ে পেটায় ও মাথার উপর পাথর ছুঁড়ে। টুপি মাথায় দিয়ে রাস্তায় নামলে “জয় শ্রীরাম” বলতে বাধ্য করা হয়।
কাফির রাষ্ট্রের মূল কাজ হলো, রাষ্ট্রকে জাহান্নামের বাহনে পরিণত করা। সে লক্ষ্যে রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্মচারিগণ কাজ করে শয়তানের এজেন্ট রূপে। শয়তানের এ এজেন্টদের কাজ হয় মুসলিম মহল্লায় ঢুকে বুল ডোজার চালিয়ে মুসলিমদের ঘরবাড়ী ধ্বংস করা ও গণহত্যা চালানো। এদেশে মুসলিমদের গণহ্ত্যা ও মুসলিম নারীদের গণধর্ষণ করলে শাস্তি হয়না। মুসলিমদের নতুন কোন আবাসিক এলাকায় বাড়ী ক্রয়ের অনুমতি দেয়া হয়না। ভারতে মুসলিমদের সংখ্যা ২০ কোটির অধিক, কিন্তু মন্ত্রী সভায় একজন মুসলিমও নেই। জনসংখ্যা শতকরা ১৮ ভাগ মুসলিম, কিন্তু সরকারি চাকুরিতে শতকরা ৩ ভাগও মুসলিম নয়। এভাবে মুসলিমদের বঞ্চিত রাখাই হলো সরকারি নীতি।
মুনাফিক শাসিত রাষ্ট্রের উদাহরণ হলো মুজিব ও হাসিনার শাসিত বাংলাদেশ। কাফির রাষ্ট্রের ন্যায় মুনাফিক শাসিত রাষ্ট্রেও যুদ্ধটি ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে। ইসলামকে পরাজিত রাখাই এমন রাষ্ট্রের নীতি। শুধু পার্থক্য হলো, এসব মুনাফিক শাসকগণ নিজেদেরকে কাফির না বলে মুসলিম রূপে দাবী করে। শেখ মুজিব ক্ষমতায় এসেই সকল ইসলামী রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করেছিল। সকল ইসলামী দলের নেতাদের কারাবন্দী করেছিল। নিষিদ্ধ করেছিল ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের লক্ষ্যে সংগঠিত হওয়াকে। এবং পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিল কম্যুনিস্টদের ন্যায় সকল ইসলামবিরোধী শক্তিকে। শেখ হাসিনাও আলেম ও ইসলামপন্থীদের জঙ্গি আখ্যা দিয়ে কারাবন্দী করেছিল। শাপলা চত্বরে হিফাজতে ইসলামের জনসমাবেশে গণহত্যা চালিয়েছিল। এবং নিয়ন্ত্রিত করেছিল কুর’আনের তাফসিরকে। ভারতের সাথে নীতিগত কোন পার্থক্য না থাকাতে ভারতে মসজিদে ধ্বংস করলে বা মুসলিমদের বিরুদ্ধে বার বার গণহত্যা চালালে হাসিনা কখনোই তার নিন্দা করেনি।
জীবনের সবচেয়ে বড় বাঁচাটি হলো মুনাফিকি থেকে বাঁচা
একমাত্র মুমিন তথা ঈমানদারগণ যাবে জান্নাতে। কাফির ও মুনাফিকগণ যাবে জাহান্নামে। তাই মুসলিম জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ শিক্ষনীয় বিষয় হলো, কারা কাফির, কারা মুনাফিক ও কারা মু’মিন -সে বিষয়গুলি সঠিক ভাবে জানা। এবং জীবনের প্রধান এজেন্ডা হতে হয় সত্যিকার মুমিন হওয়ায়। এখানে ভূল হলে পুরা বাঁচাটাই ভূল হয়; এবং সে ভূল জাহান্নামে হাজির করে। এক্ষেত্রে পবিত্র কুর’আন ও হাদীসের বয়ান অতি সুস্পষ্ট।
মুমিন তো তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে শুধু বিশ্বাসই করে না, ইসলামের পূর্ণ বিজয়ও চায়। অপর দিকে কাফির তো তারাই যারা এ পৃথিবী পৃষ্ঠে ইসলামের বিজয় বা প্রতিষ্ঠা চায় না। ইসলামের প্রতিষ্ঠা চাওয়ার অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনে প্রতিষ্ঠা। সে সাথে অসত্য ও অবিচারের নির্মূল এবং কুর’আনী সত্য ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। কাফিরদের ন্যায় মুনাফিকগণও ইসলামের এরূপ বিজয় ও প্রতিষ্ঠা চায় না। শুধু তাই নয়, ইসলামের প্রতিষ্ঠা রুখতে এবং মুসলিম রাষ্ট্রের ক্ষতি সাধনে তারা কাফিরদের সাথে একত্রে যুদ্ধও করে – যেমনটি ১৯৭১ সালে করেছে ভারতীয় কাফিরদের সাথে মিলে এবং ১৯১৭ সালে করেছে ইংরেজদের সাথে মিলে। অতীতে মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসনে ব্রিটিশ, মার্কিন, ফরাসী ও ভারতীয়রা বিপুল সংখ্যক সহায়ক সৈনিক পেয়েছে এই মুনাফিকদের মধ্য থেকেই। অধিকাংশ মুসলিম দেশ আজ অধিকৃত বস্তুত এমন মুনাফিকদের হাতেই। মুসলিম উম্মাহর আজকের বিভক্তি ও বিপর্যয়ের মূল কারণ এই মুনাফিক অধিকৃতি।
মুসলিম জীবনের সবচেয়ে বড় বাঁচাটি হলো মুনাফিক হওয়া থেকে বাঁচা। কাফির হওয়া থেকে বাঁচাটি অতি সহজ। মুখে একবার জনসম্মুখে কালেমায়ে শাহাদত পাঠ করলে তাকে আর কাফির বলা যায় না। অথচ আজকের মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি হচ্ছে মুনাফিক হওয়া থেকে বাঁচায়। কালেমা পাঠের ন্যায় নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন করাও তেমন কঠিন নয়। বহু ঘুষখোর, সূদখোর এবং প্রতারক দুর্বৃত্তরাও নামাজ পড়ে, রোজা রাখে এবং হজ্জ করে। নবীজী (সা:)’র যুগে অতি কপট মুনাফিকগণও নামাজ পড়তো। তারা নামাজ পড়তো এমন কি নবীজী (সা:)’র পিছনে প্রথম সারীতে দাঁড়িয়ে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে ঈমানদার হতে। কারণ, নামাজ পড়লেও তারা ইসলামের বিজয় চায়নি। আরবের ভূ-রাজনীতিতে তারা ছিল কাফিরদের মিত্র। মুসলিমদের পরাজিত করার লক্ষ্যে তারা কাফের ও ইহুদীদের সাথে মিলে ষড়যন্ত্র করতো। তাদের মুনাফিকি প্রকাশ পায় ওহুদের যুদ্ধের সময়; সে সময় মুসলিম বাহিনীতে যোগ দিতে তারা রাজী হয়নি। এরা মুখে নিজেদের মুসলিম রূপে দাবী করলেও পবিত্র কুর’আনে তাদেরকে কাফেরদের চেয়েও নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। এরাই মুসলিম উম্মাহর ঘরের শত্রু। পবিত্র কুর’আন মতে জাহান্নামে মুনাফিকদের স্থান হবে কাফেরদের চেয়েও নীচে তথা অধিকতর আযাবপূর্ণ স্থানে।
মুনাফিকি নিয়ে বাঁচাই যখন আচার
প্রশ্ন হলো, মুনাফিকদের সংখ্যা কি বাংলাদেশে কম? দেশটির রাজনীতিতে যারা ইসলামকে পরাজিত রেখেছে, সংবিধানে যারা বিলুপ্ত করেছে মহান আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব, আদালতে বিলুপ্ত করেছে শরিয়তের আইন -তাদের সবাই কি মূর্তিপূজারী কাফের? অথচ এ কাজ তো তাদের যাদের অনেকেই নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, যাকাত দেয় এবং হজ্জ করে। এদের অনেকের হাতে তাসবিহ এবং মাথায় টুপিও দেখা যায়। পবিত্র কুর’আনের সুরা মায়েদার ৪৪, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর আয়াতে পৃথক ভাবে বলা হয়েছে: যারা তার কুর’আনে নাযিলকৃত আইন অনুযায়ী বিচার কাজ পরিচালনা করে না তারা কাফির, তারা জালিম ও তারা ফাসিক। এ আয়াতে কোন অস্পষ্টতা নাই; যে কোন পাঠকই এর অর্থ বুঝতে পারে। প্রশ্ন হলো বাংলাদেশে যে শাসকগণ ও বিচারকগণ আদালতে শরিয়ত আইন বিলুপ্ত করে রেখেছে এবং বিচারের বিধান রেখেছে কুফিরী আইনে তাদেরকে কি মুসলিম বলা যায়? কুর’আন তাদের কাফির বলছে। কিন্তু তারা যেহেতু নিজেদের মুসলিম রূপে দাবী করে, সেহেতু তাদের কাফির বলা যাবে না। ফলে তাদেরকে অবশ্যই মুনাফিক বলতে হবে। কারণ, তাদের কাজটি কাফিরদের মত, কিন্তু অভিনয়টি মুসলিমের মত। এ মুনাফিকদের মুসলিম বললে তো বিদ্রোহ ও মিথ্যাচার হয় মহান আল্লাহ তায়ালার ঘোষণার সাথে। অথচ সে বিদ্রোহ ও মিথ্যাচারের সাথে জড়িত তো সে সব মুসলিম -যারা এ মুনাফিকদের মুসলিম বলে।
একজন রাজার সবচেয়ে বড় শত্রু হলো সেই সব প্রজা যারা তার সার্বভৌমত্ব ও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায় এবং তার আইনকে অমান্য করে। রাজা এমন বিদ্রোহী প্রজাদের ফাঁসিতে চড়াবে -সেটিই তো স্বাভাবিক। নইলে তার রাজত্ব বাঁচবে না। প্রশ্ন হলো, যাদের বিদ্রোহ মহান আল্লাহ তায়ালার শরিয়তী আইনের বিরুদ্ধে, সেসব কাফিরদের কি জান্নাত দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে? সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব ও আইনের প্রতি যাদের বিশ্বাস তাদের তো উচিত ছিল দেশের মুনাফিক শাসকদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরিত হওয়া এবং শরিয়তী আইনকে প্রতিষ্ঠা দেয়া। কিন্তু তা নিয়ে কোন ভাবনা নাই, কোন তাড়নাও নাই। মুনাফিকি তাই শুধু শাসক শক্তির নয়, জনগণেরও আচারে পরিণত হয়েছে।
মুসলিম হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, তাকে বাঁচতে হয় কাফিরদের থেকে বিপরীত রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক এজেন্ডা নিয়ে। কিন্তু কালেমা পাঠ করার পরও যাদের রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণের যুদ্ধটি ইসলামের বিরুদ্ধে, আদালতে শরিয়তী আইন বিলুপ্ত রাখাই যাদের বৈচারিক নীতি, হিন্দুত্ববাদী ভারতের বন্ধুত্ব যাদের পররাষ্ট্র নীতি, সূদ দেয়া ও সূদ নেয়াই যাদের অর্থনীতি, নগরে-বন্দরে পতিতাপল্লীগুলিকে প্রহরা দেয়া যাদের সংস্কৃতি, অফিসের বসে ঘুষ খাওয়াই যাদের প্রশাসনিক রীতি -তারা তো সুস্পষ্ট মুনাফিক। নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও দোয়াদরুদ যতই পালন করা হোক না কেন -সেগুলি মুনাফিকদের ঈমানদার বানাতে পারে? মুনাফিক রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুনাফিকি স্পষ্ট দেখা যায় ১৯৭১’য়ে। তখন তাদের দেখা গেছে ভারতীয় কাফেরদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করতে। কাফেরদের এজেন্ডা ও তাদের এজেন্ডা সেদিন একাকার হয়েছিল। ঈমানদারের এজেন্ডা কি কখনো এক মুহুর্তের জন্যও কাফিরদের এজেন্ডার সাথে একাত্ম হয়? তেল ও পানি যেমন কখনোই একত্রে মেশে না, তেমনি মুসলিমের এজেন্ডা ও কাফেরদের এজেন্ডা কখনোই একীভূত হয়না। পবিত্র কুর’আন তো সেটিই শেখায়। কাফিরদের সাথে এরূপ একাত্মতা ঘটে একমাত্র মুনাফিকদের ক্ষেত্রে। মুসলিম ভূমিতে যুদ্ধ শুরু হলে এভাবেই প্রকাশ পায় মুনাফিকদের আসল চরিত্র। তারা তখন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ শত্রু এবং কাফিরদের বন্ধু রূপে আবির্ভুত হয়।
ঈমানের লক্ষণ: মুনাফিক হওয়া থেকে বাঁচার তাড়না
মুসলিম জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটি মুনাফিক হওয়া থেকে বাঁচায়। এ পরীক্ষায় যারা ফেল করে তারাই নিশ্চিত জাহান্নামী। এজন্যই মুসলিম জীবনে সবচেয়ে বড় তাড়নাটি হলো মুনাফিক হওয়া থেকে বাঁচায়। এমন তাড়না একমাত্র তাদেরই থাকে যাদের রয়েছে গভীর কুর’আনী জ্ঞান। কারণ, মুনাফিক হওয়ার বিপদটি একমাত্র তারাই বুঝেন। কারণ পবিত্র কুর’আনে মহান আল্লাহ তায়ালা মুনাফিকদের চরিত্রটি অতি নিখুঁত ভাবে বার বার তুলে ধরেছেন। সুরা মুনাফিকুন নামে একটি সুরাও নাযিল করেছেন। কিন্তু কুর’আনের জ্ঞানে যারা অজ্ঞ সেসব জাহেলদের মাঝে মুনাফিক হওয়া থেকে বাঁচার সেরূপ তাড়না থাকে না। বরং তারা নিজেরাই মুনাফিকে পরিণত হয়।
নবীজী (সা:)’র সাহাবাদের জীবনে মুনাফিক হওয়া থেকে বাঁচার তাড়নাটি ছিল অতি প্রবল। কারণ সেটি ছিল মূলত জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার তাড়না। এর কারণ, তাদের ছিল গভীর কুর’আনী জ্ঞান। তারা প্রতিক্ষণ জাহান্নামের চিত্রটি চিত্তে ধারণ করে চলাফেরা করতেন। সামনে থাকতো রোজ হাশরের বিচার দিনের ভয়ানক চিত্র। তারা বস্তুত দুনিয়ায় বসেই আখেরাতকে দেখতেন। ফলে মুনাফিক হওয়ার ভয়ে তারা সব সময় অস্থির থাকতেন। অস্থির থাকতেন এমন কি তারাও যারা জীবিত অবস্থায় নবীজী (সা:)’র পক্ষ থেকে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। ভয়ের আরো কারণ, তারা স্বচোখে দেখেছিলেন নবীজী (সা:)’র পিছনে নামাজ পড়ে, নবীজী (সা:)’ মুখে কুর’আনের বাণী শুনে ও তাঁর সাহচর্যে দিনের পর দিন কাটিয়েও বহু মানুষ কিভবে মুনাফিক হয়েছে।
নবীজী (সা:)’র ১ হাজার সাহাবীর মাঝে ৩০০ জন মুনাফিক হতে পারে -সেটিই মুসলিম মনে ভয়ানক ভয় ধরিয়ে দেয়ার মত বিষয়। মুনাফিক হওয়ার সে ভয় নিয়ে বাঁচতেন এমন কি প্রথম সারীর সাহাবাগণও। উদাহরণ দেয়া যাক। হযরত হুজাইফা (রা:) নামে নবীজী (সা:)’র একজন প্রখ্যাত সাহাবা ছিলেন। তাকে বলা হতো “সাহেবুস সির” অর্থাৎ গোপনা খবরের মালিক। তাঁর কাছে নবীজী (সা:) মুনাফিকদের একটি তালিকা গচ্ছিত রেখেছিলেন। ফলে মদিনার বুকে কারা মুনাফিক সেটি তিনি জানতেন। তাঁর কাছে হযরত উমর (রা:)’য়ের মত ব্যক্তি গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “ভাই হুজাইফা, তুমি আমাকে বলবে, মুনাফিকদের তালিকায় আমার নাম আছে কি?” মগজে ধাক্কা দেয়ার মত বিষয়! হযরত উমর (রা:)’য়ের মত ব্যক্তির মনে মুনাফিক হওয়ার ভয়! কিন্তু সে তাড়না আজকের মুসলিমদের মাঝে ক’জনের। সেরূপ তাড়না না থাকার কারণ, কুর’আনী জ্ঞানশূণ্যতা ও তাকওয়াশূণ্যতা। যারা জেনে বুঝে মুনাফিকিতে লিপ্ত তাদের থাকেনা মুনাফিকি থেকে বাঁচার তাড়না। বরং তারা তো তাদের মুনাফিকি নিয়েই তৃপ্ত। এবং থাকে না পূর্ণ মুমিন বা মুত্তাকী হওয়ার তাড়না।
কেন উম্মাহর এ স্বাস্থ্যপতন?
সুস্থ দেহ মাত্রই শরীরের বর্জ্য মলমূত্র রূপে বের করে দেয়, সেটিই হলো সুস্থ দেহের লক্ষণ। সে প্রক্রিয়া বন্ধ হলে মৃত্যু অনিবার্য। একই ভাবে জিহাদ বের করে দেয় উম্মাহর দেহের বর্জ্য। সে বর্জ্য জীবগুলি হলো মুনাফিকগণ। উম্মাহর দেহের সে বর্জ্যগুলি দৃশ্যমান হয় শত্রুর হামলা হলে। জিহাদ হলো সে বর্জ্য নিষ্কাশনের অপরিহার্য প্রক্রিয়া। সে প্রক্রিয়া বন্ধ হলে উম্মাহর দেহ অসুস্থ হয়। তাই যে জনপদে জিহাদ নেই, সে জনপদে মুনাফিকগণ উম্মাহর দেহে বর্জ্য রূপে জমতে থাকে এবং পচন ধরায়। তখন উম্মাহর স্বাস্থ্যপতন ঘটে। তখন বিলুপ্ত হয় নবীজী (সা:)’র ইসলাম -যাতে থাকে মহান আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব, শরিয়তী আইন, কুর’আন শিক্ষা,প্যান-ইসলামী ঐক্য এবং দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার জিহাদ। দেশ তখন বিশ্বরেকর্ড গড়ে দুর্বৃত্তিতে। বাংলাদেশ হলো তারই উদাহরণ। এমন দেশের নেতা রূপে আবির্ভুত হয় মুনাফিকগণ। মুসলিম উম্মাহর বর্তমান বিপর্যয়ের জন্য দায়ী হলো এই মুনাফিকদের দখলদারি। নিজেদের মুসলিম রূপে দাবী করলেও নবীজী (সা:)’র ইসলামকে পরাজিত রাখাই তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা। মুসলিম দেশে মুনাফিক শাসনের কারণেই মুসলিম বিশ্বের কোথও নবীজী (সা:)’র ইসলাম বেঁচে নাই। বরং প্রতিষ্ঠা পেয়েছে জাতীয়তাবাদ, গোত্রবাদ, সেক্যুলারিজম, রাজতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন।
দেখা যায় ঈমানদারী ও মুনাফিকি
কাউকে কুর’আন তেলাওয়াত, নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন করতে দেখেই তাকে ঈমানদার ভাবার কোন কারণ নেই। নবীজী (সা:)কে স্বচোখে দেখেছে, নবীজী (সা:) থেকে কুর’আন শিক্ষা নিয়েছে, তাঁর ওয়াজ শুনেছে এবং তাঁর পিছনে নামাজ পড়েছে -এমন ব্যক্তিরাও বিপুল সংখ্যায় মুনাফিক হয়েছে। তাই কারো ঈমান দেখতে হলে দেখতে হয় তার জিহাদকে। যেমন আগুনকে চিনতে হলে দেখতে হয় তার উত্তাপকে। যে ব্যক্তি শত্রু শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজের প্রাণ খানি পেশ করতে রণাঙ্গণে হাজির হয়, সে ব্যক্তি ঈমানের দাবীতে মিথ্যাবাদী তথা মুনাফিক হতে পারেনা। আগুনের উত্তাপ ও জ্বলন্ত শিখা দেখার পর কি আগুনের অস্তিত্ব নিয়ে কোন সন্দেহ থাকে? তেমনি কারো জীবনে জিহাদ দেখার পরও কি তার ঈমান নিয়ে সন্দেহ থাকে? জিহাদে লিপ্ত মুজাহিদগণ যে ঈমানের দাবীতে সাচ্চা সে সাক্ষী এসেছে মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে। সুরা হুজরাতের ১৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا۟ وَجَـٰهَدُوا۟ بِأَمْوَٰلِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّـٰدِقُونَ
অর্থ: “মু’মিন একমাত্র তারাই যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে উপর এবং তারপর আর কোন রূপ সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করে নিজেদের জান ও মাল দিয়ে, ঈমানের দাবীতে এই লোকগুলি হলো সত্যবাদী।”
উপরিউক্ত আয়াতে জিহাদকে ঈমান যাচাইয়ের শর্ত রূপে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আল্লাহতায়লার দ্বীন তথা এজেন্ডাকে বিজয়ী করার জিহাদে কে নিজের অর্থসম্পদ, দৈহিক বল, মেধা ও প্রানের বিনিয়োগ করে -সেটি খালি চোখেই দেখা যায়। কার জীবনে সেরূপ বিনিয়োগ নাই -সেটিও খালি চোখে দেখা যায়। ফলে মুনাফিকের মুনাফিকি আবিষ্কার করতে ওহী নাযিলের প্রয়োজন পড়ে না। যে কোন বিবেকবান মানুষই মুনাফিকের মুনাফিকি টের পায়। এবং চেনা যায় কাফিরদেরও কুফুরিও।
অপর দিকে যারা পৌত্তলিক কাফির শক্তির কোলে গিয়ে বসে এবং তাদেরকে বিজয়ী করতে তাদের সেনাদলের পাশে থেকে যুদ্ধ করে -তাদের ঈমানশূণ্যতা ও মুনাফিকি নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ থাকে? ওহুদ যুদ্ধ কালে যারা মুনাফিক রূপে চিহ্নিত হয়েছিল তাদের অপরাধ হলো, তারা নবীজী (সা:)’র সাথে জিহাদে হাজির হয়নি। কিন্তু তারা এ অপরাধ কখনোই করেনি যে, অস্ত্র হাতে কাফিরদের দলে ভীরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। অথচ ১৯৭১’য়ে সে অপরাধটি মুক্তিবাহিনী করেছে। তারা পৌত্তলিক কাফিরদের অস্ত্র, অর্থ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতীয় পৌত্তলিক বাহিনীকে বিজয়ী করেছে। সমগ্র মুসলিম ইতিহাসে এভাবে পৌত্তলিকদের বিজয়ী করার কাজ কখনোই মুসলিমদের পক্ষ থেকে হয়নি। এটি ঠিক, পাকিস্তান পূর্ণ ইসলাম দেশ ছিলনা। কিন্তু দেশটি কোন কাফির শাসিত দেশ ছিল। ভারতে প্রতিনিয়ত মুসলিমদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। কাশ্মীর এখন বধ্যভূমি। কিন্তু একাত্তরের যুদ্ধ শুরুর আগে পাকিস্তানের ২২ বছরে একজন বাঙালিও কি সেনাবাহিনীর হাতে মারা গেছে? যায়নি। তবে কি বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ মুসলিম দেশটি ভাঙ্গতে ভারতের ন্যায় একটি হিন্দুরাষ্ট্রের সাথে কোয়ালিশন গড়ে যুদ্ধে যেতে হবে? সেটি কি ঈমানদারী না মুনাফিকি?
নবীজী (সা:)’র যুগে ১ হাজার সাহাবীর মাঝে ৩০০ জন মুনাফিক ধরা পড়েছিল। বর্তমান যুগে মুনাফিকদের আনুপাতিক সংখ্যাটি যে তার চেয়ে বহুগুণ বেশী হবে -তা নিয়ে কি কোন সন্দেহ আছে? এসব মুনাফিকদের কারণেই বাংলাদেশে ইসলাম আজ পরাজিত। এবং বিজয় পেয়েছে ইসলামের শত্রুপক্ষ। শরিয়ত প্রতিষ্ঠার দাবী নিয়ে রাস্তায় নামলে এরাই অস্ত্র হাতে প্রতিরোধে নামে এবং গুলী চালায়। তারা ইসলামকে বিজয়ী করার আন্দোলনকে জঙ্গিবাদ বলে।
মুনাফিকি কখনো গোপন থাকেনা
ঈমান থাকলে জিহাদ থাকবেই। কারণ, ঈমানের প্রকাশ পায় জিহাদের মাঝে; যেমন আগুনের প্রকাশ তার উত্তাপে। তাই জিহাদহীনতার অর্থ ঈমানহীনতা। সে বিষয়টিকে মহান আল্লাহ তায়ালা সুরা হুজরাতের ১৫ নম্বর আয়াতে অতি সুস্পষ্ট ভাবে ব্যক্ত করেছেন। যার জীবনে জিহাদ নাই, সে ব্যক্তি যতই নামাজ-রোজা ও হ্জ্জ-যাকাত পালন করুক -সে ব্যক্তি মুনাফিক। ঈমানের দাবীতে সে ভণ্ড। কাফির ব্যক্তি যে কাফির তথা ইসলামে অবিশ্বাসী -সেটি সে প্রকাশ্যে বলে বেড়ায়। তারা মুনাফিকদের ন্যায় নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও দোয়া-দরুদের ন্যায় ইবাদত পালনের অভিনয় করে না। কাফিরগণ বেঈমান; কিন্তু মুনাফিকগণ শুধু বেঈমানই নয়, প্রতারকও। তাদের প্রতারণা মহান রব ও মুসলিম উম্মাহর সাথে। এজন্যই জাহান্নামে তারা কাফিরদের চেয়ে অধিক শাস্তি পাবে।
মুসলিম উম্মাহর বড় বড় ক্ষতিগুলি শুধু কাফিরদের হাতে হয়নি; বরং বেশী হয়েছে মুনাফিকদের হাতে। ঈমানদারের পরিচয় সে কখনোই কোন কাফির বাহিনীতে যোগ দেয়না, এবং কাফিরদের সাথে কখনো কোয়ালিশন করেনা। অথচ মুনাফিকগণ নিজেদের মুসলিম রূপে দাবী করলেও এরাই মুসলিম ভূমিতে অতীতে কাফিরদের ডেকে এনেছে এবং বিজয়ী করেছে। ১৭৫৭ সালে এই মুনাফিকগণই মুসলিম বাংলাকে ইংরেজদের হাতে তুলে দিয়েছে। ১৯৭১’য়ে এরাই ভারতীয় পৌত্তলিক কাফিরদের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে পাকিস্তানকে খণ্ডিত করার যুদ্ধ করেছে। এবং ভারতের হাতে বিজয় তুলে দিয়েছে। ১৯১৭ সালে আরব ভূখণ্ডে মুনাফিকদের দেখা গেছে ইংরেজ ও ফরাসী বাহিনীতে যোগ দিয়ে খলিফার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। এবং ইরাক, ফিলিস্তিন, সিরিয়াসহ বিশাল মুসলিম ভূমিকে তারা কাফিরদের হাতে তুলে দিয়েছে। মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে আজও নাশকতার মূল শক্তি হলো এই মুনাফিকগণ।
ব্যর্থতা মুনাফিককে মুনাফিক বলায়
পরিতাপের বিষয় হলো, মুসলিম উম্মাহ ব্যর্থ হয়েছে ঘরের শত্রুদের বিরুদ্ধে সফল প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। তবে সে ব্যর্থতার মূল কারণ, তারা কাফিরকে কাফির এবং মুনাফিককে মুনাফিক বলতে ব্যর্থ বয়েছে। নেকড়েকে ভেড়া ভাবলে তাতে বিপদ কমে না; বরং বৃদ্ধি পায়। তেমনি বিপদ বাড়ে মুনাফিকদের মুসলিম মনে করলে। কারণ, তখন এ শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আগ্রহ থাকেনা। নবীজী (সা:)’র যুগে মুনাফিকদের মুনাফিক বলা হয়েছে। তাদেরকে বয়কট করা হয়েছে। অথচ আজ শত্রুদের চেনার সে কাজটি হচ্ছে না। গৌরব যুগের মুসলিমদের থেকে আজকের মুসলিমদের এখানেই বড় পার্থক্য। বরং অবস্থার এতোটাই অবনতি হয়েছে যে, মুসলিম দেশগুলির উপর দখলদারীটি মুনাফিকদের। ইসলামের বিরুদ্ধে যেসব মুনাফিকদের অবস্থানটি সুস্পষ্ট, যারা হিন্দুত্ববাদী পৌত্তলিক কাফিরদের অতি ঘনিষ্ট বন্ধু এবং একাত্তরে যারা যুদ্ধ করেছে কাফিরদের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে কাফিরদেরকে বিজয়ী করতে, তাদেরকেও সম্মানিত করা হয়। যাদের অবস্থান শরিয়তের বিরুদ্ধে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে না নেমে তাদেরকে ভোট দিয়ে বিজয়ীও করা হয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি যে কতবড় অপরাধ -সে হুশ ক’জনের?
বরং ভাবটা এমন, ১৭ কোটি জনগণের সবাই যেন মুসলিম। বরং যে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদর যুদ্ধটি মহান আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনের বিরুদ্ধে তাদেরকেও মুসলিম বলা হয়। এবং তাদেরকে বিজয়ী করতে ভোট দেয়া হয়। নিজেকে মুসলিম নামটাই যেন মুসলিম হওয়ার জন্য যথেষ্ট, কোন আমলের প্রয়োজন নাই! মূল সমস্যা হলো: শত্রু ও মিত্রের সনাক্তকরণের কাজটিই আদৌ হয়নি। আর সেটি না হলে শত্রু নির্মূলের কাজটি কিরূপে হবে? ফলে দেশ শত্রুদের দখলে চলে গেছে। নেকড়ের পালের সাথে একত্রে একই জনপদে শান্তিতে বসবাস করা যায়না। অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতা তখন অনিবার্য হয়ে উঠে। তা নিয়েই তো আজকের বাংলাদেশ।
নবীজী (সা:)’র যুগেও মুসলিম সমাজ শত্রু মুক্ত ছিল না। কিন্তু সে আমলে শত্রুদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের নির্মূলও করা হয়েছে। অথচ আজ ঘরের শত্রুদের চেনায় ব্যর্থতার কারণে তাদের নির্মূলের কোন আয়োজন নাই। মুসলিমগণ বাঁচছে জিহাদকে বাদ দিয়েই। অথচ নবীজী সা:) তাঁর ২৩ বছরের নবুয়তী জীবনে ২৭ বার সশরীরে জিহাদে অংশ নিয়েছিলেন। এবং ৮৩টি ছোট-বড় যুদ্ধ সংগঠিত করেছেন। এবং তাঁর অর্ধেক সাহাবা জিহাদে শহীদ হয়ে গেছেন। এই হলো ইসলাম ও মুসলিমের পরিচয়। অথচ সে পরিচয় নিয়ে আজ ক’জন মুসলিম বাঁচে? ফলে বিশাল জনগোষ্ঠির মুসলিম দেশে ইসলামের পক্ষে দাঁড়ানোর লোকের অভাব। এতে বিজয় বা গৌরব আসবে কিরূপে? নবীজী (সা:)’র প্রসিদ্ধ হাদীস: যে কখনো জিহাদে যোগ দেয়নি এবং জিহাদের নিয়েতও করেনি -সে মুনাফিক। প্রশ্ন হলো, সে সংজ্ঞায় ক’জন বাঙালি মুসলিম মুনাফিক নয়? মুনাফিকদের দখলদারী মেনে নেয়া কি ঈমানদারী? মুনাফিকদের দখলদারীর অর্থ তো শয়তানের দখলদারী। সে দখলদারীতে মহান আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনের কোন স্থান থাকে না। গাদ্দারী এখানে মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে। এ গাদ্দারী নিয়ে কি জান্নাত মিলবে? ২৩/০৫/২০২৫
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- মুসলিম দেশে মুনাফিক শাসন ও উম্মাহর বর্তমান বিপর্যয়
- বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে যা করণীয়
- ঈমানদার ও বেঈমানের ভাবনা ও তাড়না
- Shocking Inaction of the World Leaders Against the Israeli War Criminals
- পাকিস্তান কেন ভেঙ্গে গেল?
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- May 2025
- April 2025
- March 2025
- February 2025
- January 2025
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018