বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে যা করণীয়

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 

একটি দেশের জনগণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তার স্বাধীনতা। এটিই হলো যে কোন সভ্য ও স্বাধীন দেশের জন্য খরচের সবচেয়ে বড় খাত। স্বাধীনতার বিপরীত হলো শত্রু দেশের পদতলে গোলামী। তখন বাঁচতে হয় গলায় গোলামীর শিকল ঝুলিয়ে। গোলামদের জন্য অসম্ভব হয় নিজ ধর্ম, নিজ আশা-আকাঙ্ক্ষা, ইজ্জত ও স্বাধীনতা নিয়ে বেড়ে উঠা। তাই যারা স্বাধীনতা ও ইজ্জত নিয়ে বেড়ে উঠতে চায় তাদের জন্য  সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজ দেশের স্বাধীনতা বাঁচানোর সর্বাত্মক প্রস্তুতি এবং প্রয়োজনে সর্বশক্তি দিয়ে যুদ্ধ। এর বিকল্প নেই।

মুসলিম দেশের স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে জনগণের মনে গড়তে হবে সুস্থ ও শক্তিশালী ইসলামী চেতনা। এবং সে চেতনাকে অবশ্যই শত্রুর বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে হবে।  কারণ ইসলামী চেতনার ভূগোলকে বাঁচাতে না পারলে মুসলিম দেশের ভূগোলকে বাঁচানো যায় না। উপমহাদেশের মুসলিমদের পাকিস্তান প্রজেক্ট ব্যর্থ হওয়ার মূল কারণ, দেশটি ১৯৪৭’য়ের প্যান-ইসলামী চেতনার ভূগোলকে  জাতীয়তাবাদী, বর্ণবাদী, ফ্যাসিবাদী ও বামধারার শত্রুদের আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে পারেনি। তখন জনগণের -বিশেষ করে ছাত্রদের চেতনার ভূমি প্লাবিত হয়েছিল জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম ও সমাজতন্ত্রের ন্যায় হারাম মতবাদে। ১৯৭১’য়ে সে হারাম মতবাদ গুলির মিশ্রণ নিয়ে জন্ম নেয় পাকিস্তান ভাঙ্গার চেতনা। ইসলামের শত্রুগণ সেটিকে বলে একাত্তরের চেতনা। একাত্তরের চেতনা হলো ইসলামশূন্য ভারতসেবী সেকুলার ফ্যাসিবাদী চেতনা। এ চেতনায় মুসলিম দেশের স্বাধীনতা বাঁচে না, গণতন্ত্রও বাঁচে না। অতীতে এ চেতনাটি ভারতের গোলামী উপহার দিয়েছিল। উপহার দিয়েছিল মুজিব-হাসিনার ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন, গণহত্যা, সেনাহত্যা, গুম-খুন, ফাঁসি ও আয়নাঘর। তাই এ চেতনা বাঁচলে ভারতের গোলামিও বাঁচবে। তাই স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে একাত্তরের এই হারাম চেতনাকে অবশ্যই দাফন করতে হবে। দাফন করতে হবে স্বাধীনতা যুদ্ধের নামে গড়া ভারতসেবীদের একাত্তরের বয়ান। বাঙালি মুসলিমের স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে বস্তুত বিশুদ্ধ ইসলামী চেতনা নির্মাণে বিকল্প নাই। যারা বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক অঙ্গণের যোদ্ধা -এ পবিত্র জিহাদটি মূলত তাদের।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে ১৯৪৭’য়ের চেতনাটি গ্রহণ করতে হবে -যা বাঙালি মুসলিমদের প্রকৃত স্বাধীনতা দিয়েছিল। বুঝতে হবে বাংলাদেশের বর্তমান ভু রাজনৈতিক মানচিত্রটি একাত্তরের নয়, বরং  ১৯৪৭’য়ের চেতনার অর্জন। আজও ১৯৪৭’য়ের এ চেতনাই বাংলাদেশের স্বাধীন ভূগোলকে বাঁচাতে পারে। তাছাড়া ১৯৪৭’য়ের সে চেতনাটি পবিত্রতা ছিল; সেটি সমৃদ্ধ ছিল প্যান-ইসলামী চেতনায। মুসলিম লীগের ভারত ব্যাপী স্লোগান ছিল: “পাকিস্তান কা মতলব কিয়? লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। অর্থ: পাকিস্তানের জন্ম কেন? লক্ষ্য হলো কালেমার বিজয়। এটি এক বিশাল ঈমানী ঘোষণা। ইসলামে আসাবিয়াত হারাম। ইসলামী পরিভাষায় আসাবিয়াত বলতে বুঝায় ভাষা, গোত্র, বর্ণ ও অঞ্চলের নামে মুসলিম উম্মাহর মাঝে বিভক্তি গড়া। এরূপ আসাবিয়াতী চেতনাকে ব্যবহার করা হয় উম্মাহর মধ্য ফিতনা সৃষ্টির কাজে। তাদের যুদ্ধটি মূলত মহান আল্লাহ তায়ালার এজেন্ডার বিরুদ্ধে। তারা চায় শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করতে। মহান আল্লাহ তায়ালা চান, মুসলিমদের মাঝে একতা গড়তে; আর শয়তান ও তার এজেন্টগণ চায় বিভক্তি গড়তে।  

মহান আল্লাহ তায়ালা ফিতনাকে মানব হত্যার চেয়েও জঘন্য বলেছেন। খুনিদেরর লক্ষ্য মানব খুন করা, আর ফিতনা সৃষ্টিকারীদের নাশকতাটি উম্মাহর বিরুদ্ধে। তারা আঘাত হানে উম্মাহর দেহে। তাই শরিয়তী আইনে এটি শাস্তিযোগ্য গুরুতর অপরাধ। একাত্তরে বাংলাদেশ সৃষ্টির যুদ্ধ হয়েছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে। শরিয়তের দৃষ্টিতে সেটি ছিল আসাবিয়াতের যুদ্ধ। তাই এটি ছিল হারাম যুদ্ধ। তাই কোন ইসলামী দল, কোন আলেম, কোন ইমাম বা কোন পীর সাহেব পাকিস্তান ভাঙ্গাকে সমর্থন করেনি। এটি ছিল বাঙালি ফ্যাসিবাদী, সেক্যুলারিস্ট ও বামধারা নেতাকর্মীদের যুদ্ধ।

সেক্যুলারিস্টদের কাছে বিবাহবহির্ভুত যৌন জীবন তথা ব্যভিচার প্রেম রূপে নন্দিত হয়। ইসলামে সেটি জ্বিনা; জ্বিনাকারী বিবাহিত হলে শাস্তি হলো পাথর মেরে হ্ত্যা। তেমনি তাদের কাছে ভাষা, বর্ণ ও অঞ্চলের ভিত্তিকে মুসলিম দেশকে খণ্ডিত করাটি স্বাধীনতার যুদ্ধ রূপে গণ্য হয়। এবং এ হারাম যুদ্ধের নায়কগণ তাদের কাছে বীরের মর্যাদা পায়। কিন্তু দেশে আল্লাহর শরিয়তী আইন থাকলে তাদের পিঠে চাবুকের আঘাত পড়তো। নবীজী (সা:)’র আমলে সে তো শাস্তিই দেয়া হয়েছে। তাই একাত্তরের আসাবিয়াতের হারাম চেতনা বাঙালি মুসলিমদের জন্য কখনোই কোন রহমত বয়ে আনবে না। বরং আনবে প্রতিশ্রুত আযাব। তাই ফিরে যেতে হবে ১৯৪৭’য়ের কালেমা সমৃদ্ধ ইসালমী চেতনার দিকে।          

বুঝতে হবে বাঙালি মুসলিমদের মূল শত্রু হলো আগ্রাসী ভারত। ভারতীয় পৌত্তলিক হিন্দুত্ববাদীরা অতীত কখনোই বাঙালি মুসলিমের বন্ধু ছিল না। আজও বন্ধু নয়। এবং ভবিষ্যতেও বন্ধু হবে না। কারণ, মুসলিমে বন্ধু হওয়াই তাদের জন্য অসম্ভব। এবং সে সত্যটি সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহর চেয়ে আর কে ভাল জানেন। তাই তিনি তাদের সাথে বন্ধুত্বকে হারাম করেছেন।  ১৯৪৭ এরাই বাঙালি হিন্দুরাই মুসলিমদের সঙ্গ ছেড়ে এবং বাংলাকে বিভক্ত করে ভারত ভূমিতে অবাঙালি হিন্দুদের সাথে একাত্ম হয়েছিল। এমন ঘৃণার চেতনা নিয়ে হিন্দুত্ববাদীরা কি কখনো বাঙালি মুসলিমদের বন্ধু হতে পারে? সেটি অসম্ভব। এ ঐতিহাসিক সত্যটি যতদিন বাঙালি মুসলিমরা না বুঝবে, ততদিন তাদের বিপদ থেকেই যাবে। বুঝতে হবে, ভারতপ্রেম নিয়ে কখনোই বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঁচানো যাবে না।  ১৯৭১ থেকেই সে ভারতপ্রেম গোলামী, লুণ্ঠন ও ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই দেয়নি।

স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে যেমন শক্তিশালী  ইসলামী চেতনার পরিচর্যা দিতে হবে, তেমনি গড়ে তুলতে হবে শক্তিশালী সেনাবাহিনী। স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে এর বিকল্প নাই। বুঝতে হবে বাংলাদেশ ইসরাইলের চেয়ে ক্ষুদ্রতর নয়। বাংলাদেশে অর্থনীতিও পাকিস্তানের চেয়ে দুর্বল নয়। তাই বাংলাদেশের সেনাবাহিনী পাকিস্তানের চেয়ে শক্তিশালী রূপে গড়তেই হবে।

বুঝতে হবে, নানা ভাষা, নানা বর্ণ ও নানা রাজ্যের হিন্দুরা হিন্দুত্ববাদী বিশাল ভারত ভূমিতে একতাবদ্ধ। সংখ্যায় তারা ১৪০ কোটির অধিক। তারা যুদ্ধাংদেহী। বার বার দেশটির নেতারা বাংলাদেশ দখলের হুমকি দিচ্ছে। তাদের আগ্রাসনের মুখে বাংলাদেশের একার পক্ষে স্বাধীনতা বাঁচানো অসম্ভব। বুঝতে হবে, বাংলাদেশ জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন ও ইতালির চেয়ে শক্তিশালী নয়। কিন্তু এরপরও স্বাধীনতা বাঁচানোর তাগিদে ইউরোপের শক্তিশালী এই দেশগুলি একতাবদ্ধ হয়েছে ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন‌ গঠন করেছে। এটিই হলো তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা। সে প্রজ্ঞার পথ ধরতে বাংলাদেশকেও। তাই বন্ধু খুঁজতে হবে এবং তাদের সাথে বলিষ্ঠ একতা গড়তে হবে। এমন একতা ফরজ। এ ফরজ পালন না করলে স্বাধীনতা হারাতে হবে। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকেও প্রতিশ্রুত আযাব আসবে। সে আযাব আসতে পারে এমন কি পরাধীনতা রূপে। বিভক্তি গড়ার শাস্তি তাই ভয়ানক -যা বলা হয়েছে সুরা আল ইমরানের ১০৫ নম্বর আয়াতে। বাঙালি জীবনে সে শাস্তি ১৯৭১’য়ে পাকিস্তান থেকে বিভক্তির পর দেখা গেছে।

সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা মূলক বন্ধুত্ব গড়তে হবে পাকিস্তান ও তুরস্কের ন্যায় সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী মুসলিম দেশগুলির সাথে। বন্ধুত্ব গড়তে হবে চীনের সাথেও। প্রয়োজনে পাকিস্তান ও তুরস্কের সাথে সামরিক চুক্তিও করতে হবে। এটি শুধু  রাজনৈতিক প্রয়োজন নয়, শরীয়তের দিক দিয়ে মুসলিম দেশগুলির সাথে এরূপ একতা ও সহযোগিতা ফরজ। এমন একতা গড়লে মহান আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। কারণ তিনি মুসলিমদের মাঝে একতা পছন্দ করেন। মুসলিমদের জন্য কিসে বিপদ সেটি তাঁর চেয়ে আর কে ভাল জানেন? এজন্যই তিনি মুসলিমদের মাঝে একতা ও সহযোগিতাকে  ফরজ করেছেন এবং বিভক্তিকে হারাম করেছেন। 

অপরদিকে শয়তান চায় বাঙালি মুসলিমগণ যেন অন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। সেটি শত্রু দেশ  ভারতও চায়। কারণ তাতে বাংলাদেশকে দখলে রাখার কাজটি সহজ হয়। তাই বাঙালি মুসলিমদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি সর্বশক্তিমান আল্লাহকে খুশি করবে, না পৌত্তলিক কাফেরদের ও তাদের বন্ধু সেকুলার বাঙালি কাপিলিকদের খুশি করবে।  বুঝতে হবে ভারতকে খুশি করার পথটি হলো গোলামীর পথ। সেটি হলো শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্ত ফ্যাসিস্ট শত্রুদের পথ। এ পথটি কখনোই স্বাধীনতার পথ হতে পারে না। বরং সেটি পরীক্ষিত গোলামীর পথও।  ১৮/০৫/২০২৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *