শোধিতেই হবে মরণের আগে

ফিরোজ মাহবুব কামাল

সুনামীতে আবার ভেসে গেল ফসল,

যা ছিল ঘরে তাও লুট হয়ে গেল।

অসভ্য ও দস্যু জংলীরা আবার দখলে নিল দেশ।

কবরে গেল গণতন্ত্র এবং ডাকাতি হলো জনতার ভোট।

 

কেঁদে কি লাভ? হতাশা হারাম।

আবার নামতে হবে মাঠে, ফলাতে হবে নতুন ফসল।

এভাবে লড়াইয়ে বাঁচাই তো মু’মিনের জীবন।

এ লড়াই যুদ্ধ নয়, এটিই তো মহান আল্লাহকে খুশি করার পবিত্র জিহাদ।

 

এরূপ সুনামী বার বার আসে মুসলিম ঘরে।

বাংলাতেও বার বার এসেছে আগে।

প্রতিবারই নতুন ঘর বাঁধতে হয় নতুন প্রত্যয়ে।

সাত শত বছরের সকল ফসল ভেসে গেছে স্পেনে,

ভারতেও ভেসে গেছে আট শ’ সালের সকল অর্জন,

সেখানে বিশ কোটি মুসলিম আজ বাঁচে হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন ও গোলামী নিয়ে।

 

শয়তানের যুদ্ধ প্রতি দিন প্রতি মুহুর্ত, প্রতি জনপদে,

তাই চাইলেও কি মু’মিন জিহাদ এড়াতে পারে?

আগুন থাকলে সেথায় উত্তাপও থাকে,

ঈমান থাকলে তাই জিহাদও থাকে।

 

পাপিষ্ট শয়তানের কাছে ঈমান ও একতা নিয়ে বেড়ে উঠার স্বপ্নটাই বড় অপরাধ,

একাত্তরে তাই রক্তাত্ব সুনামী নিয়ে শত্রুরা হাজির হলো বাংলার মুসলিম ঘরে

ভাষা ও বর্ণের প্রচণ্ড অহংকারে প্লাবিত হলো বাংলার মুসলিম জনপদ,

বাঙালীর চেতনার ভূমি দখলে নিল কুফরির আদিম জাহিলিয়াত।

সে দখল নিতে শয়তানের দালালেরা ওত পেতে বসে ছিল সাতচল্লিশ থেকেই।

 

গোলামীর শিকল ভেঙ্গে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিল বাঙালী মুসলিম,

তারা বীরদর্পে ভেঙ্গেছিল ভাষা ও বর্ণের জাহেলী শিকল,

গড়েছিল ভিন ভাষী মুসলিমদের সাথে ঈমানী বন্ধন।

এটিই ছিল মহা-অপরাধ শয়তানের গোলামদের কাছে।

 

সেদিন জেগেছিল বাঙালী মুসলিম মাঝে বিশ্বমাঝে শক্তি ভরে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাধ

সে সাধ মেটাতেই রক্ত দিয়ে গড়েছিল বিশাল পাকিস্তান,

সর্ববৃহৎ সে মুসলিম দেশ কি কভু সহ্য হয় নরকের কীট কাফের মুশরিকের?

একাত্তরের যুদ্ধ তো একারণেই অনিবার্য হয়।

 

সে নতুন দেশ এবং সে নতুন স্বপ্ন গুড়িয়ে দেয় হিন্দুত্বের ঝান্ডাবাহী ভারত।

তাদেরও সেদিন জুটেছিল ভারতসেবী অসংখ্য বাঙালী নওকর।

ফ্যাসিস্ট, সোসালিস্ট, সেক্যুলারিস্ট ও হিন্দু -এসবই জোট বেঁধেছিল সেদিন।

আজও এ দেশ তাদেরই দখলে।

সে বিজয় নিয়ে আজও উৎসব হয় সকল ভারতময়।

অধিকৃত এ দেশে ইসলামের বিজয়ে স্বপ্ন দেখাই আজ মহা অপরাধ।

 

বার বার এভাবেই আসবে প্লাবন, ভেসে যাবে বার বার ক্ষেতের ফসল,

শয়তানের সৈন্যরা বার বার এভাবেই হানবে হানা,

ঝরাবে খুণ, কেড়ে নিবে অসংখ্য প্রাণ।

শত্রুর পদতলে এভাবেই বার বার দলিত হবে ইসলামের ঝান্ডা।

তাই বলে কি বসে থাকা সাজে?

 

জাহান্নামের যাত্রী হয়েও শয়তানের শিবিরে কত যুদ্ধ?

তাদেরও কত ত্যাগ, কত যাতনা ও কত মৃত্যু?

মাত্র দুটি বিশ্ব যুদ্ধে হারিয়েছে এরা সাড়ে সাত কোটি প্রাণ।

ইসলামের এ শত্রুরা আজও মরছে নানা দেশের নানা জনপদে।

মুসলিম দলনে ও নিধনে ভারতীয় কাফেরদেরও কত বিনিয়োগ!

বাংলার বুকেও তাদের কত আয়োজন!

 

ভেবেছে কি মুসলিমগণ, জান্নাতে পৌঁছবেই তারা

স্রেফ দোয়া-দরুদ, নামায-রোযা, হজ্জ-যাকাতে?

মু’মিনের জানমাল তো কেনা মাল মহান আল্লাহর

-সে ঘোষণা তো পবিত্র কুর’আনে।

সে কেনা মাল ফেরাতেই হবে,

শোধিতেই হবে জান্নাতের দাম মরণের আগে।

এবং সেটি জিহাদের পথে।

 

প্রতি শ’য়ে সত্তরের অধিক সাহাবা হয়েছেন শহীদ

জান্নাতের মূল্য পরিশোধে।

বিজয় কিনেছেন তারা রক্তের দামে,

আজও কি ভিন্ন পথ আছে?

দুটি বিশ্বশক্তি ইরানী ও রোমান পরাস্ত হয়েছে তো তাদেরই হাতে।

 

প্রতি দিন প্রতি মুহুর্ত লড়াই নিয়ে বাঁচাই তো মু’মিনের জীবন,

এটিই তো পবিত্র জিহাদ,

জান্নাতের মূল্য শোধে এটিই তো কুর’আনী পথ।

প্রচণ্ড অপচয় তো বসে বসে কালক্ষেপন ও অলস ভাবনায়।

 

দুর্বৃত্তের নির্মূল, ন্যায়ের বিজয় -এইতো মু’মিনের মিশন।

এ মিশন জিহাদ দেয়, রাস্তা দেখায় জান্নাতের মূল্য পরিশোধে।

যে প্রাণে জিহাদ নাই, ত্যাগ নাই,

বুঝতে হবে তাড়না নাই জান্নাতের মূল্য পরিশোধে।

এরাই তো যুগে যুগে শয়তানকে বিজয়ী করে মুসলিমের দেশে।

 

আবার দেখতে হবে নতুন স্বপ্ন

আবার ভাসাতে হবে জিহাদী কিস্তি,

ভায়ে ভায়ে গড়তে হবে আবার ঈমানী বন্ধন।

আসুক সুনামী, আসুক তুফান, লঙ্ঘিতে হবে সকল বাধা, সকল দুর্যোগ,

এ ভাবেই তো নিরন্তর শোধিতে হইবে ঈমানের দায়।

২৩/১২/২০২১

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *