মুসলিম উম্মাহর অনৈক্য ও অর্জিত পরাজয়

ফিরোজ মাহবুব কামাল

অনৈক্য ও পরিনাম

মুসলিম উম্মাহর আজ অতি বেহাল অবস্থা। ফিলিস্তিন, কাশ্মির, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, জিংজিয়াং’য়ের ন্যায় মুসলিম দেশগুলি একের পর এক শত্রুশক্তির হাতে হয়েছে। অধিকৃত অধিকৃত দেশগুলির নগরীগুলি একের পর ধ্বংস হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ নারী, পুরুষ ও শিশু নিহত হচ্ছে। হাজার হাজার মহিলা ধর্ষিতা হচ্ছে। বহু মিলিয়ন মুসলিম উদ্বাস্তুর বেশে দেশে দেশে দুস্থ্য ও অপমানিত জীবন যাপন করছে। এ দুরাবস্থার কারণ মুসলিমদের সংখ্যার কমতি নয়। সম্পদের অভাবও নয়। সেটি হলো অনৈক্য। অনৈক্যের ভয়াবহতা বিপুল সম্পদ ও বিশাল জনসংখ্যা দিয়ে রুখা যায় না। সকল সম্পদ ও জনশক্তিকে অনৈক্য টুকরো টুকরো করে ফলে। অন্যরা যেখানে ঐক্যবদ্ধ, মুসলিমগণ সেখানে শুধু বিভক্তই নয়, বরং একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। মুসলিমদের আজ যে পরাজয় অপমান –সেটি তাদের নিজ হাতের  অর্জন। এবং সেটি অর্জিত হয়েছে অনৈক্যের মাধ্যমে।

অনৈক্য শয়তানকে খুশির করার পথ। আর ঐক্য মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করার পথ। পরিতাপের বিষয় হলো, মুসলিমগণ শয়তানকে খুশির করার পথই বেছে নিয়েছে। বিভক্তির এ পথ যে ভয়ানক আযাব নামিয়ে আনে –সে হুশিয়ারীটি মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোর’আনে সুরা আল-ইমরানের ১০৫ নম্বর আয়াতে শুনিয়েছেন। এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠাকে ফরজ করেছেন আল-ইমরানের ১০৩ নম্বর আয়াতে। তাই মুসলিমকে শুধু নামায-রোযা পালন করলে চলে না, একতাও প্রতিষ্ঠা করতে হয়। নানা ভাষাভাষী ও নানা বর্ণের মুসলিমের এক কাতারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামায আদায়ের কে বাদ্ধবাধকতা সেটিকে রাজনীতির ময়দানেও প্রতিষ্ঠা দিতে হয়। অনৈক্যের পথ ধরার অর্থ ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাওয়া এবং আযাব নামিয়ে আনা। কিন্তু মুসলিমগণ মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশের ভ্রুক্ষেপ না করে শয়তানের পথ তথা বিভক্তির পথ বেছে নিয়েছে। শয়তানের অনুসরণে তারা যে কতটা বেপরোয়া, ৫৭টি দেশে মুসলিম উম্মাহর বিভক্ত মানচিত্র বস্তুত সে সাক্ষ্যই দেয়। খন্ডিত ভূগোল নিয়ে দেহ দাঁড়াতে পারে না, তেমনি খন্ডিত ভূগোল নিয়ে দাঁড়াতে পারে না উম্মাহ। তখন শত্রুর হামলা ছাড়াই ধরাশায়ী হয়।

 

সম্মিলিত ক্রসেড ও বিভক্ত উম্মাহ

মুসলিমদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ঘোষিত ক্রসেড এখন আর কোন একক মুসলিম দেশে সীমাবদ্ধ নয়। এখন এটি সমগ্র মুসলিম বিশ্ব জুড়ে। কোথাও হচ্ছে সেটি সামরিক আগ্রাসন রূপে; কোথাও বা হচ্ছে সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্যের বেশে। ক্রসেডের একটি ঐতিহাসিক কুখ্যাতি আছে। মধ্যযুগে সমগ্র ইউরোপীয় খৃষ্টানগণ জেরুজালেম ও তার আশেপাশের মুসলিম ভূমি দখলের জন্য হামলা করেছিল। সে হামলায় তারা সফলও হয়েছিল। সে অভিন্ন ক্রুসেডেরই ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ তার ইরাকের উপর যুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপটে। চলমান সামরিক ক্রসেডে লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষ মারা পড়ছে ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন ও চেননিয়ায়। অপর দিকে অসামরিক ক্রসেডে সামান্য পর্দা নিয়ে রাস্তাঘাটে বিপদে পড়ছে ইউরোপ-আমেরিকায় বসবাসকারি মুসলিম মহিলারা। এবং জানমাল ও ইজ্জত আবরু নিয়ে বেঁচে থাকায় দায় হচ্ছে ভারত, কাশ্মির, থাইলান্ড, বার্মা, চীন, শ্রীলংকাসহ বহু অমুসলিম দেশে বসবাসকারি বহু কোটি মুসলিমের। তাদের চাপে ইসলামি শিক্ষা ও মহান আল্লাহতায়ালার আইন প্রতিষ্ঠার ইসলামের অতিশয় ফরয বিষয়গুলোও অসম্ভব হচ্ছে এমনকি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশে। অথচ যারা মহান আল্লাহতায়ালার খাতায় নিজেদের নাম মুসলমি রূপে লেখাতে চায় তাদের উপর তাঁর শরিয়ত প্রতিষ্ঠা কাজটি হল ন্যূনতম ঈমানী দায়বদ্ধতা। এমন কি মোঘল ও সুলতানী আমলের শাসকগণও সে দায়বদ্ধতা পালন করেছিল নিষ্ঠার সাথেই। আইনআদালত থেকে শরিয়তী আইন সরানোর ন্যায় কুফরি কাজটি সেসব স্বৈরাচারি শাসকগণও করেনি। অথচ আজ শুধু স্বৈরাচারই নয়, বরং তার চেয়েও জঘন্য ও ভয়ংকর শত্রুগণ মুসলিম দেশগুলিতে শাসক রূপ জেঁকে বসেছে। তাদের বড় অপরাধ, তারা আল্লাহতায়ালা ও তাঁর আইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী। তারা অসম্ভব করছে শুধু শরিয়তের বাস্তবায়নই শুধু নয়, বরং অভাবনীয় করে তুলেছে বিশ্ব মুসলিমের মাঝে ঐক্যের ন্যায় ফরজ বিধানের বাস্তবায়নও।

পাশ্চত্যেও পরিচালিত ক্রুসেডে প্রায় ১০ লাখ বেশী মানুষকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে একমাত্র ইরাকে। ১০ লাখের বেশী হত্যা করা হয়েছে আফগানিস্তানে। দিন দিন সেটি আরো তীব্রতর হচ্ছে। নানা দেশে নতুন ফ্রন্ট খোলা হচ্ছে। এসব মুসলিম দেশের জনগণ যেন মশামাছি। মশামাছি কতগুলি মরলো তার হিসাব কেউ রাখে না। তেমনি মার্কিনীরাও তাদের হাতে নিহত আফগান, ইরাকী, সিরিয়ান, সোমালী, ইয়েমেনী বা পাকিস্তানীদের দেহ গণনা করে না। বুশের ঘোষিত এ ক্রুসেডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাকী নয়। তার সহচর শুধু ইসরাইল এবং ইংল্যান্ডই নয়। বরং পাশে ফ্রান্স, জার্মানী, ইটালী, ডেনমার্ক, হলান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজল্যান্ড, পোলান্ড, বুলগেরিয়া, চেক রিপাবলিকসহ নানা দেশ এখন আসল রূপ নিয়ে হাজির। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চল্লিশটির বেশী দেশ হাজির হয়েছিল আফগানিস্তান ও ইরাকে।  মুসলমান বিরোধী এ কোয়ালিশনে মার্কিনীদেরকে সাথে তারা একাকার।

পাশ্চাত্যের পূঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদ এখন এক বহুজাতিক প্রজেক্ট। অথচ মুসলমানেরা আজ বিভক্ত ও বিভ্রান্ত। একটি বিভক্ত জাতিকে ধ্বংসের জন্য বড় রকমের শক্তি লাগে না।  ফলে মায়ানমারের ন্যায় দেশও তখন মুসলিমদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলার সাহস পায়। ১০ লাখ রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে তাই মায়ানমারের সরকার তাদের পথে বসাতে পেরেছে। মুসলিমনগণ যখনই বিভক্ত হয়েছে তখনই মহাবিপদ তাদের উপর হাজির হয়েছে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে হালাকু খাঁ তার সামান্য সংখ্যক সৈন্য নিয়ে মুসলিমদের রক্তে দজলা-ফুরাতের পানিকে লাল করেছে। অথচ মঙ্গলদের সমুদয় জনসংখ্যা বাগদাদ বা দামেস্কের ন্যায় একটি শহরের সমান ছিল না। কিন্তু সে দস্যুশক্তির মাঝে ঐক্য ছিল। এবং মুসলমানেরা ছিল বিভক্ত।

 

অনিবার্য আযাব

কোন জাতিকে শক্তিহীন করার জন্য অনৈক্যই যথেষ্ঠ। অনৈক্য পরাজয়ককে অনিবার্য করে। দেয়ালের মাঝে সিমেন্ট সরে গেলে সে দেওয়ালের ইট শিশুও খুলে নিতে পারে। দেওয়াল তখন সামান্য ধাক্কাতেই বিধ্বস্ত হয়। মার্কিন কোয়ালিশন এখন সে সামান্য ধাক্কা দেওয়ার কাজটিই করছে।  ফলে মুসলিম নিধনে বা মুসলিম-ভূমি দখলে কোথাও শত্রুর শক্তিহানি হয়নি। রক্তক্ষয়ও হয়নি। সামান্য সংখ্যক ইংরেজের কাছে এ মুসলিমগণ স্বাধীনতা হারিয়েছিল। একই কারণে অতীতে পাঞ্জাব, সীমান্ত প্রদেশ ও কাশ্মিরের কারণেই ভারতের মুসলিমগণ পরাজিত, ধর্ষিত ও নিহত হয়েছিল মুষ্টিমেয় শিখদের কাছে। মুসলিমগণ আজও একই রূপ পরাধীনতা ও গণহত্যার শিকার হচ্ছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। ফলে ফিলিস্তিনে নিরস্ত্র মুসলিম হত্যা ইসরাইলীদের কাছে প্রাত্যাহিক রুটিনে পরিণত হয়েছে। তেমনি ভারতীয় সা¤প্রদায়িকদের কাছে প্রিয় স্পোর্টসে পরিণত হয়েছে সেদেশের মুসলিম হত্যা ও তাদের সম্পদ লুন্ঠন। যতদিন মুসলিম অনৈক্যের পথে থাকবে ততদিন মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিশ্রুত এ আযাব থেকে কি মুক্তি আছে?

অনৈক্য মুসলমানদের জন্য যে কতটা ভয়ানক সেটি মহান আল্লাহতায়ালার চেয়ে আর কে বেশী জানে? এবং তিনিই তো মুসলমানদের প্রকৃত বন্ধু। কারণ, তারাই তাঁর সেরা সৃষ্টি। তারাই তো তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করার সেপাহী। তাদের জন্য পরকালে যেমন তিনি জান্নাত তৈরী করে রেখেছেন, তেমনি দুনিয়াতেও তাদেরকে বিজয়ী দেখতে চান। এ বিজয়ের লক্ষ্যে বিজয়ের পথও তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে বলেছেনঃ ’ওয়া’তাছিমু বি হাবলিল্লাহে জামিয়াও ওয়া লা তাফার্রাকু..’ এবং তোমরা আল্লাহর রশি (কোরআন)কে শক্ত ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আল্লাহপাক মুসলিম জাতির জীবনে বিচ্ছিন্নতকে এভাবে হারাম করেছেন। যেমনটি হারাম করেছেন মদ্যপান, জ্বিনা বা মানব হত্যাকে। বিছিন্নতা বা বিভক্তি যে জাতির জীবনে আযাব ডেকে আনে সেটিও মহান আল্লাহপাক সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, “ওয়া লা তাকুনু কাল্লাযীনা তাফাররাকু ওয়াখতালাফু মিম বা’দে মা যা’আ হুমুল বা’ইয়েনা, ওয়া উলায়েকা লাহুমু আযাবুন আজিম।” -(সুরা আল ইমরান – ১০৫) অর্থঃ “তোমরা তাদের মত হয়োনা যারা নিজেদের কাছে সুস্পষ্ট ঘোষনা আসার পরও নিজেরা বিভক্তি হলো এবং পরস্পরে মতবিরোধ গড়লো। এরাই হলো তারা যাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে কঠিন আযাব।”  তাই বিভক্তি ও বিচ্ছিন্নতা হলো মহাপাপ। আর এ পাপ আল্লাহপাকের আযাবকে যে অনিবার্য করে তোলে তা নিয়ে মহান আল্লাহপাকের এ সুস্পষ্ট ঘোষণার পরও কি কোন অস্পষ্টতা থাকে?

 

 

ট্রাইবালিজমের জীবাণু

মহান আল্লাহপাকের সূন্নত হলো কল্যাণের ও অকল্যাণের পথকে বাতলিয়ে দেয়া। তবে দু’টির একটি বেছে নেয়ার দায়ভারটি বান্দার। বিষ পানে মৃত্যু অনিবার্য। বিষ পানের পর দোয়াদরুদে লাভ হয় না। জেনে শুনে যে ব্যক্তি বিষপান করে তাকে বাঁচানো মহান আল্লাহপাকের সূন্নত নয়। এমন ব্যক্তির মৃত্যু না হওয়াটাই বরং অস্বাভাবিক ও অচিন্তনীয়। অনৈক্যও তেমনি জাতির জীবনে পরাজয় ও পতন ডেকে আনে। সেটি পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়ার পরও যারা অনৈক্যের পথ বেছে নেয় তাদের উদ্ধার করাও মহান আল্লাহতায়ালার নীতি হয়। বরং সে অবাধ্যতার শাস্তি রূপে মহান আল্লাহতায়ালার আযাবকেই তখন অনিবার্য হয়ে উঠে। সে আযাব না আসাটিই বরং অস্বাভাবিক। তাই মুসলিম দেশে শুত্রুর হামলা এবং সে হামলায় গণনিধন, ধর্ষণ, শোষন ও নানাবিধ অত্যাচার – এগুলো মুসলমানদেরই নিজস্ব অর্জন। তারা আজ এমন এক জাতি যারা ভাষা, বর্ণ, ভূগোল, মজহাব, এমনকি জেলাওয়ারী পরিচয় নিয়ে মুসলিম উম্মাহর মাঝে বিভক্তি গড়াকে নিজেদের কালচারে পরিণত করেছে। ভিন্নভাষী মুসলিমদের অর্থলুট ও ঘরবাড়ী দখলই শুধু নয় তাদের হত্যা করাও রাজনৈতিক আচারে পরিণত হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশেও লক্ষ লক্ষ অবাঙ্গালী মুসলিম নিঃস্ব হয়েছে এবং বহু হাজার নিহতও হয়েছে বাঙ্গালী মুসলিমদের হাতে। এ ট্রাইবাল চেতনা থেকে বাঁচেনি এমনকি পবিত্র মক্কা মদিনার পূর্ণ ভূমিও। ইসলামপূর্ব যুগে বর্বর জাহেলরাও নিজেদের গোত্রের নামে হেজাজের পবিত্র ভূমির নাম রাখেনি। এমন কাজ তাদের কাছেও রুচীহীন লেগেছে। কিন্তু আজ সেটি করেছে সৌদি ট্রাইবালরা। ইসলামের পবিত্র ভূমির নাম সৌদি আরব রেখে তারা এটিই প্রমানিত করেছে, তাদের প্রধানতম অঙ্গিকার নিজ ট্রাইব বা গোত্রের প্রতি। নিজেদের গোত্রীয় শাসনকে বাঁচাতে অমুসলিম মার্কিন বাহিনীকে পবিত্র ভূমিতে ডেকে আনতেও তাদের বিবেকে বাধেনি। এমন কাজ তাদের কাছে অপরাধযোগ্যও গণ্য হয়নি।

মুসলিম দেশে দুর্বৃত্তদের রাজতন্ত্র এই প্রথম নয়। উমাইয়রা এসেছে, আব্বাসীয়রা এসেছে, উসমানিয়ারাও এসেছে। তবে রাজতন্ত্র বাঁচাতে ইসলামের পবিত্র ভূমিতে হাজার হাজার কাফের সৈন্যের ঘাঁটি নির্মানের কাজ এই প্রথম। অথচ মুসলিম বিশ্বে তা নিয়ে প্রতিবাদ উঠেনি।  নিন্দাবাদও হয়নি। বরং এ স্বৈরাচারি শাসকদের কাছে বিশ্বাসভাজন হওয়ার নেশাই বরং প্রচন্ড। এমনকি সেটি সংক্রামিত হয়েছে মুসলিম বিশ্বের আলেম, নেতা ও বুদ্ধিজীবীদের মাঝে। মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তোষ অর্জনের চেয়ে এ স্বৈরাচারি রাজাদের উপঢৌকন লাভকেই তারা জীবনের বড় উপার্জন মনে করছে। শুধু আরবদের জন্য নয়, সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্যও এটি অপমানকর যে, মক্কামদীনার ন্যায় ইসলামের পূণ্যভূমি আজ মার্কিন যুক্তরাষ্টের কাছে আত্মসমর্পিত একটি স্বৈরাচারি শক্তির কাছে জিম্মি। নিজেদের হেফাজতে যারা অসমর্থ্য এবং নিজেরা যেখানে আত্মসমর্পিত অমুসলিমদের কাছে, পবিত্র ভূমির প্রতিরক্ষা দেয়া কি তাদের দ্বারা সম্ভব? উপজাতীয় এ চেতনার আধিপত্য শুধু হেজাজেই নয়, জেঁকে বসেছে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব জুড়ে। এরূপ উপজাতীয় চেতনার প্রভাবেই মুসলিম বিশ্ব আজ ৫৭ টুকরায় বিভক্ত। হৃদপিন্ডে জীবাণূ ঢুকলে তা রক্তের সাথে মিশে সমগ্র অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। ইসলামের পবিত্র ভূমি ট্রাইবালিজমে আক্রান্ত হওয়াও সে রোগও তাই ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব জুড়ে।

 

 

হিন্দুনীতি ও মুসলিম নীতি

হিন্দুদের জন্য রাজনৈতিক ও ভৌগলিক অঙ্গণে ঐক্য গড়া কোন ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার বিষয় নয়। কিন্তু তারপরও তারা ঐক্য গড়েছে। ভারতের আশি কোটি হিন্দু নানা ভাষা ও নানা বর্ণে বিভক্ত হওয়া সত্বেও একশত বিশ কোটি মানুষের বিশাল দেশ গড়ছে। ফলে ভারত আজ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক শক্তি। বিশ্বের সকল রাষ্ট্রই তাদের সমীহ করে চলে। কারণ, শক্তির কাছে কে না নরম? এবং এ শক্তির কারণ ভারতের সম্পদ নয়। বরং ভারতে বাস করে বিশ্বেও সবচেয়ে বৃহৎ দরিদ্র জনগোষ্ঠি। ভারতীয়দের মাথাপিছু বাংলাদেশীদের চেয়েও কম। তাদের এ শক্তির কারণ তাদের একতা। হাজার খানেক বাঁশের কঞ্চি একত্রিত করলে হাতিও ভাংগতে পারে না। ভারতের ক্ষেত্রে সেটিই হয়েছে। অথচ মুসলিমগণ সংখ্যায় ১৫০ কোটি হয়েও ভারতের সিকি ভাগ জনসংখ্যা তথা ৩০ কোটির একটি দেশও গড়তে পারেনি। মুসলিমদের ব্যর্থতা যাচায়ে এর চেয়ে বড় মানদন্ড আর কি থাকতে পারে?

মনের ভূগোলই একটি জাতির রাজনৈতিক ভূগোল নির্ধারণ করে। যে জাতির মনের ভূগোল জুড়ে ভাষা, বর্ণ ও গোত্রভিত্তিক উপজাতীয় চেতনার তান্ডব, তারা কি কখনো বৃহৎ ভূগোল নির্মাণ করতে পারে? পায় কি একটি বৃহৎ শক্তির মর্যাদা? পায় যে না -সেটিরই বড় সাক্ষর আজকের মুসলিমগণ। মুসলিম হওয়ার অর্থ শুধু এ নয় যে, মসজিদে যাবে বা হজ্ব করবে। বরং তাদের মাঝে অন্য ভাষা, অন্য গোত্র ও অন্য বর্ণের মুসলিমদের সাথে একত্রে বসবাস, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় গুণও থাকতে হবে। সে গুণ না থাকলে বুঝতে হবে ঈমান নিয়ে বেড়ে উঠায় দারুন সমস্যা রয়ে গেছে। অথচ সে গুণটি নানাভাষা, নানা গোত্র ও নানা বর্ণে বিভক্ত ভারতীয় হিন্দুদের আছে। মার্কিনীদেরও আছে। মুসলিমদের মাঝে সেটি নাই বলেই তারা আজ পদে পদে পরাজিত ও অপমানিত। এ ব্যর্থতা নিছক মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ে দূর হবার নয়। সম্পদ, বিদ্যা-বুদ্ধি বা জনসংখ্যা বাড়িয়েও দূর হবার নয়। সম্ভব নয় কোটি কোটি কপি কোরআন শরিফ ছেপে বা লক্ষ লক্ষ হাফিজে কোর’আন পয়দা করে। সারা রাত নফল নামাজে কাটিয়ে লাভ কি -যদি না প্রতিদিনের ফরয কাজ গুলো সঠিক ভাবে পালিত হয়? আর সে গুরুত্বপূর্ণ ফরয কর্ম হলো মুসলিমদের মাঝে একতা গড়া।

 

উৎসব গড়াতে নয়, ভাঙ্গাতে

একতার বিকল্প একমাত্র একতাই। যারা সারা রাত নফল নামায পড়ে দিনের বিরাট অংশ যারা ঘুমিয়ে কাটায় তাদের দ্বারা কি দিনে ফরয দায়িত্ব পালিত হয়? হয়নি বলেই মুসলমানদের আজ এ বিপন্ন দশা। একতার বিষয়টি আল্লাহপাকের নির্দেশিত ফরজ। সারা বছর রোযা রাখলেও নামাযের ফরজ আদায় হয় না। তেমনি সারা রাত ইবাদত করলেও একতা প্রতিষ্ঠার ফরয আদায় হয় না। তাই নানা দলে বিভক্ত হয়ে সারা জীবন তসবিহ-তাহলিল করেও বিভক্তি গড়ার ন্যায় হারাম কাজের পাপ মোচন হয় না। বিজয়ও আসে না। বরং ভুগতে হয় পরাজয়ের কুফল। এবং সে সাথে পরকালে জুটবে মহান আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার কঠিন আযাব। মুসলমান বিশ্বে নামাযীর সংখ্যা কি কম? তাসবিহ-তাহলিল করা লোকের সংখাই কি কম? কিন্তু তাতে মুসলিম বিশ্বের কোথাও কি গৌরব বেড়েছে? এসেছে কি বিজয়? অন্য ধর্মের মানুষ নানা ভিন্নতা সত্বেও একত্রে বসবাস, রাজনীতি, ব্যবসাবাণিজ্য ও যুদ্ধবিগ্রহ চালানোর মত উন্নত রুচীর পরিচয় দিচ্ছে। কিন্তু মুসলিমগণ কি সেটি পারছে? তারা বরং ইতিহাস গড়ছে কলহ-বিবাদে। অন্যরা যেখানে একতাবদ্ধ হচ্ছে মুসলিমগণ সেখানে ভূগোল ভাঙ্গার কাজকে উৎসবে পরিণত করছে। এটি কি কম পাপ? ফলে তাদের যে অর্জন -সেটি বিজয় নয়। গৌরবও নয়। বরং স্বৈরাচার-কবলিত ও মানবিক-অধিকার বর্জিত দেশ হওয়ার কলংক। সেটি বাংলাদেশের ন্যায় দুর্বৃত্তিতে বিশ্বমাঝে প্রথম হওয়ার গ্লানি। ৫৭টি মুসলিম রাষ্টের প্রায় প্রতিটিতে গণতন্ত্র ও মানবিক অধিকারের যে বিপন্ন দশা -সেটি কি সেই অর্জিত বর্বরতারাই প্রমাণ নয়?

মুসলিমগণ আজ দেশে দেশে যে বিপন্নদশার মুখোমুখি সেটি থেকে বাঁচাতে অন্য কেউই এগিয়ে আসবে না। সাম্প্রতিক ইতিহাস তো তারই বড় প্রমাণ। বসনিয়ার মুসলিমগণ যখন লাখে লাখে নিহত হলো তখন কেউ এগিয়ে যায়নি। জাতিসংঘের বাহিনী বরং এগিয়ে গিয়ে সার্বীয় ঘাতকদের হাতে ৮ হাজার বসনিয়ান মুসলিমকে লাশ হওয়ার জন্য তুলে দিয়েছে। কাশ্মিরের ভাগ্য নির্ধারণে গণভোট অনুষ্ঠানের প্রস্তাব পাশ করেও জাতিসংঘ সেখানে কিছুই করেনি। বরং ভারতের গণহত্যাকে নিরবে মেনে নিচ্ছে। যে গণহত্যা ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, ইরাক, বসনিয়া, চেচনিয়া, আরাকান, ভারত ও কাশ্মিরে হচেছ বা হয়েছে, সেরূপ গণহত্যা আগামীতে বাংলাদেশসহ অন্য কোন মুসলিম দেশেও যে হতে পারে -তা নিয়ে কি সন্দেহ চলে? আযাব কোন দেশেই নোটিশ দিয়ে হাজির হয় না। একটি বিভক্ত, বিভ্রান্ত ও ইসলামে অঙ্গিকারহীন জাতির জন্য মহান আল্লাহতায়ালা আযাবই পাঠান, সাহায্য নয়। সে ঘোষণাটি বার বার এসেছে পবিত্র কোর’আনে। তবে এ আযাবের এখানেই শেষ নয়। শেষটি হবে আখেরাতে। শেষটি দুনিয়ার আযাবের চেয়েও ভয়ানক হতে পারে।

 

 

ঐক্যঃ যা প্রিয়তর করে আল্লাহতায়ালার কাছে

মুসলিমদের একমাত্র সহায় মহান আল্লাহতায়ালা। অতএব এ বিপন্নদশা থেকে বাঁচতে হলে একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্যলাভে মনযোগী হতে হয়। এবং সে সাহায্যলাভের পথ কোনটি সেটিও পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালার অতি সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। মহান আল্লাহপাক তাঁর প্রিয় বান্দাদের সাহায্যদানে অতিশীয় উদগ্রীব। তাঁর বিশাল ফেরেশতা বাহিনী এজন্য সদাপ্রস্তুত। হযরত মুসা (আঃ) এবং তার সাথীদেরকে তিনিই ফিরাউনের বিশাল বাহিনীর কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। হযরত ইউনুসকে (আঃ) তিনিই তিমি মাছের পেট থেকে উদ্ধার করেছিলেন। তিনিই বাদশাহ আবরাহার বিশাল বাহিনীকে ধ্বংস করে অরক্ষিত ক্বাবাকে সুরক্ষা দিয়েছিলেন। গাছের একটি শুকনো পাতাকে মাটিতে ফেলা যতটা তুচ্ছ, মহান আল্লাহর কাছে ততটাই তুচ্ছ হলো কোন ফেরাউন, নমরুদকে ধ্বংস করা। এ যুগের নব্য ফেরাউনরাও এর ব্যতিক্রম নয়। আল্লাহপাক সে সাহায্যদানে অতীতের ন্যায় আজও সদা প্রস্তত। কিন্তু কথা  হলো, মহান আল্লাহতায়ালার সে সাহায্যলাভে আগ্রহী বান্দাহ কই? নিশ্চয়ই তিনি এমন বাহিনীকে সাহায্য করেন না যারা কাফেরদের ইসলামের পবিত্র ভূমিতে ঘাঁটি নির্মানের অধিকার দেয় বা আল্লাহপাক-প্রদত্ত আইনকে নিজ দেশে নিষিদ্ধ করে। অথচ সকল মুসলিম দেশের জনগণই এ পাপে পাপী। ফলে তারা কি আল্লাহপাকের সাহায্য প্রত্যাশা করতে পারে? তিনি তো তাদেরও সাহায্য করেন না যারা তাঁর অন্য বান্দাহকে শুধু এ জন্য ঘৃনা করে যে তাদের ভাষা বা জন্মস্থান ভিন্ন। মহান আল্লাহতায়ালার বিচারে কাউকে এরূপ ঘৃণা করাটি জঘন্য অপরাধ। অতএব এরূপ অপরাধীরা কি তাঁর সাহায্য পেতে পারে?

মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণাঃ “ইন্নাল্লাহা ইউহিব্বুল্লাযীনা ইউকাতেলুনা ফি সাবিলিহি সাফ্ফান কা আন্নাহুম বুন’ইয়ানুন মারসুস” অর্থঃ “আল্লাহ নিশ্চয়্ই তাদেরকে ভালবাসেন যারা তার রাস্তায় এমন ভাবে যুদ্ধ করে যেন তারা সিসা ঢালা প্রাচীর।” নিছক নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত ও তাসবিহ-তাহলিলের মধ্য দিয়ে যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন এ আয়াতে রয়েছে তাদের জন্য বড়ই দুঃসংবাদ। আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ হতে হলে এজন্য নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত ও তাসবিহ-তাহলিল একমাত্র বিষয় নয়, বরং এ জন্য অতি অপরিহার্য হলো মহান আল্লাহর পথে জ্বিহাদ এবং এ জ্বিহাদের জন্য সিসা ঢালা প্রাচীরসম ঐক্য। বস্তুত নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত ঈমানদারের মনে জ্বিহাদ এবং জিহাদের লক্ষ্যে ঐক্যের সে ফাইন্ডেশনই তৈরী করে। ব্যক্তির জীবনে ইবাদত কতটুকু সফল সেটি পরিমাপের মানদন্ডও বস্তুতঃ এই জ্বিহাদ এবং ঐক্যের প্রতিষ্ঠা। তাই যে সমাজে জ্বিহাদ এবং জিহাদের লক্ষ্যে ঐক্য নেই –বুঝতে হবে সে সমাজে ইবাদতের প্রক্রিয়া সঠিক ভাবে কাজ করছে না। সাহাবায়ে কেরাম জিহাদ ও ঐক্যের পথেই মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রিয় হতে পেরেছিলেন। তাই কোর’আনে ঘোষণা এসেছে, “রাদিআল্লাহু আনহুম, ওয়া রাদু আনহু।” অর্থঃ আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর (মহান আল্লাহতায়ালার) উপর সন্তুষ্ট।

 

পাপমোচনের পথ

সাহাবায়ে কেরাম মাত্র ৩০ বছরে যতবার জিহাদের ময়দানে পা রেখেছেন, বাংলাদেশের ন্যায় বহু মুসলিম দেশের জনগণ বিগত হাজার বছরেও তা করেনি। আর সিসাঢালা প্রাচীরসম ঐকের কথা? সিসাঢালা ঐকের বদলে ইতিহাস গড়েছে অনৈক্যে। গড়েছে বিভক্তির দেয়াল। এ সীমান্তের দেয়ালগুলো হিমালয়ের চেয়েও দুর্গম। হিমালয় অতিক্রম করা যায়, কিন্তু বিভক্তির এ প্রাচীর অতিক্রম করতে গেলে প্রতিবেশী মুসলিম দেশের সীমান্ত-প্রহরির হাতে গুলির খাদ্য হতে হয়। বিভক্তির দেয়াল গড়ে উঠেছে ভাষা, গোত্র, বর্ণ ও পৃথক পৃথক ভূগোলের নামে। মুসলিম বিশ্বের এ ভৌগলিক বিভক্তি গড়ে উঠেছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের দাসদের হাতে। আরব বিশ্বে উপনিবেশিক ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের প্রবেশের আগে আরবগণ কি ২২ টুকরায় বিভক্ত ছিল? চিহ্নিত এ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ মুসলিম বিশ্বের এ বিভক্ত মানচিত্রের সবচেয়ে বড় পাহাড়াদারই শুধু নয় বরং ভয়ানক ভাবে ব্যস্ত কিভাবে আরো বিভক্ত করা যায়। ইরাকের মানচিত্রে হাত দেওয়ার কারণ তো এটি।

মুসলিমদের অপরাধ, আল্লাহর রাস্তায় জ্বিহাদে প্রচন্ড অনাগ্রহ থাকলেও ভৌগলিক, রাজনৈতিক ও আদর্শিক বিভক্তিকে অক্ষয় রাখতে তারা শুধু শ্রম, মেধা ও অর্থদানেই রাজী নয়, রাজী প্রাণদানেও। এ বিভক্তিকে স্থায়ী করতে প্রতি মুসলিম দেশে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল সেনা বাহিনী। কিন্তু তাতে কি মুসলিম উম্মাহর কোথায়ও কোন গৌরব বেড়েছে? রক্ষা পাচ্ছে কি মুসলিমদের জানমাল ও ইজ্জত-আবরু? তিরিশ কোটি মানুষের দেশ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের কোন নিভৃত জংগলে মার্কিন নাগরিকের গায়ে পাথর ছুড়লেও তার বিচার হয়। কারণ তারা ঐক্যবদ্ধ। কিন্ত লাখে লাখে মুসলিম নিধন করা হলেও তার বিচার নেই। এর কারণ, মুসলিমদের অনৈক্য এবং জিহাদে অনাগ্রহ। মার্কিনীরা যেখানে বিশ্বের সর্বপ্রান্তে যুদ্ধে লিপ্ত মুসলিমগণ সেখানে অনাগ্রহী নিজভূমির প্রতিরক্ষাতেও । গরু-ছাগলের জন্মই হয় জবাই হওয়ার জন্য। তাদের মৃত্যুতে তাই বিচার নেই, মাতমও নেই। বিচার তো তারাই পায় যারা সেটি আদায় করতে পারে। দেশে দেশে মুসলিম গণহত্যার বিচার না হওয়ার কারণ তো এটিই। ভারতের গুজরাটে বহু হাজার মুসলিমকে পুড়িয়ে মারা হলো। শত শত নারী ধর্ষিতা হল। অথচ এ অপরাধে আজও কারো শাস্তি হলো না। একই রূপ অপরাধ হচ্ছে ইরাক, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর,  চেচনিয়া ও আফগানিস্তানে। কিন্তু কোথাও কি এ অপরাধে কেউ কাঠগড়ায় উঠেছে? মুসলিম বিশ্বে আজ এক নিদারুন বিপন্নদশা। অনৈক্য নিয়ে বাঁচা নিজেই মহাপাপ, আর এ পাপই আজ মুসলিম জীবনে আযাব ডেকে এনেছে। তাই আযাবমুক্তির জন্য জরুরি হলো, পাপমোচন ঘটানো। পাপমোচনের সে পথটি হলো, সবাই মিলে মহান আল্লাহতায়ালার রশিকে (কোর’আনকে) মজবুত ভাবে আঁকড়ে ধরা। এবং সে সাথে জরুরি হলো এক্যবদ্ধ ভাবে জ্বিহাদে সংশ্লিষ্ঠ হওয়া। আর এটিই হলো পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা। এ ঘোষণাকে অবজ্ঞা করলে কি ঈমান থাকে? এবং ঐক্যের প্রতি অবজ্ঞা নিয়ে কি জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি মিলবে? ১৫/১২/২০২০।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *