বিবিধ ভাবনা (২৬)

ফিরোজ মাহবুব কামাল

১. ভূগোলের গুরুত্ব ও সেক্যুলারিস্ট বাঙালীর গাদ্দারী

সামান্য একটি প্লেট ভাঙ্গলেও মনে কষ্ট লাগে। সুতরাং কেমন লাগে একটি মুসলিম দেশের ভূগোল ভাঙ্গলে? যে কোন জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তার রাজনৈতিক ভূগোল। ভূগোল গড়তে যুদ্ধ করতে হয়। অর্থ, শ্রম ও রক্তের বিনিয়োগ করতে হয়। মসজিদ-মাদ্রাসা বিধ্বস্ত হলে এতো ক্ষতি হয় না, যে ভয়ানক ক্ষতি হয় ভূগোল ভেঙ্গে গেলে হয়। গৃহ দেয় পরিবারের নিরাপত্তা। সে গৃহ যত মজবুত ও বড় হয় ততই বাড়ে নিরাপত্তা। আর ভূগোল দেয় জাতির নিরাপত্তা। তাই ভূগোল যতই বড় হয়, ততই দেশ শক্তিশালী হয়। বাড়ে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সামর্থ্য। ভূগোল বিভক্ত ও ছোট হলে দেশ দুর্বল হয়। তখন নিরাপত্তা ও ইজ্জত  হারায় সে ভূগোলে বসবাসকারী জনগণ। তাই ইসলামে হারাম ও কবিরা গুনাহ হলো মুসলিম ভূমির ভূগোলকে ছোট করা। সে কাজটি কাফেরদের হতে পারে, কখনোই কোন মুসলিমের হতে পারে না। আব্বাসী ও উসমানিয়া খেলাফত শত শত বছর বেঁচেছে জনগণের পক্ষ থেকে সে হারাম কাজ না হওয়ায়। অথচ ১৯৭১ সালে বাঙালী মুসলিম ভারতের কাফেরদের সাথে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তান ভেঙ্গে সে হারাম কাজই করেছে। এভাবে শয়তানের মুখে প্রচুর হাঁসি ফুটিয়েছে। এটি ছিল ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থের সাথে গাদ্দারী যার বিপুল বিজয় ও আনন্দ বাড়িয়েছে ভারতীয় কাফেরদের। পাকিস্তানে সমস্যা ছিল; কিন্তু সমাধানের পথটি তো কখনোই হারাম পতে হতে পারে না।   

মহান নবীজী (সা:) বৃহৎ ভূগোলের গুরুত্ব বুঝতেন। কারণ তিনি যেমন রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন, তেমনি সামরিক ও রাজনৈতিক স্ট্রাটেজিস্টও ছিলেন। ভূগোলের বিকল্প ভূগোলই। তাই ভূগোল বাড়াতে তিনি সাহাবীদের রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী দখলের অসিহত করে যান। ভূগোলের গুরুত্ব সাহাবাগণও বুঝতেন; তাই তারা বিপুল রক্তব্যয়ে লাগাতর মূসলিম রাষ্ট্রের ভূগোল বাড়িয়েছেন। পরাজিত করেছেন তৎকালীন বিশ্বের দুই বিশ্বশক্তি রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্যকে। পরিণত হয়েছেন সুপার পাওয়ারে। তুর্কী বীর ইখতিয়ার মহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী সে ভূগোল বাড়ানোর কাজ করতেই বহু হাজার মাইল পাড়ী দিয়ে বাংলার বুকে ছুটে এসেছিলেন। বৃহৎ ভূগোলের গুরুত্ব শহীদ সোহরোওয়ার্দী, খাজা নাযিমুদ্দীন, নূরুল আমীনদের মত নেতারা বুঝতেন। এজন্যই তারা ১৯৪৭’য়ে পাকিস্তান গড়েন। কিন্তু ১৯৭১’য়ে সে হুশ মুজিব ও তার অনুসারিদের ন্যায় ভারতের সেবাদাস বাঙালী কাপালিকদের ছিল না।

মুসলিম দেশের ভূগোল বাড়ানো ও সেটি ক্ষুদ্র হওয়া থেকে বাঁচানো প্রকৃত ঈমানদারের কাজ। মুনাফিকদের এ কাজে রুচি থাকে না। ১৯৭১’য়ে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের ভূগোল বাঁচানোর সে কাজ করতেই রাজাকারগণ অস্ত্র তুলে নেয়। এ কাজটি দেশের আলেম ও ইসলামী দলের নেতাদের কাছে জিহাদ গণ্য হয়। বহু হাজার রাজাকার সে জিহাদে প্রাণও দেয়। ইসলাম যারা বুঝে –একমাত্র তারাই রাজাকারদের সে ভূমিকাকেও বুঝে। ভারতের দালাল, বাকশালী স্বৈরাচারী, নাস্তিক কম্যুনিস্ট ও ধর্মহীন সেক্যুলারিস্টগণ রাজাকারদের বিরুদ্ধে যতই গালিগালাজ করুক না কেন -ঈমানদারগণ চিরকাল তাদের কদর করবে। মুসলিম দেশের ভাংঙ্গার কাজটি ইসলামের শত্রু কাফেরদের কাজ।  ইসলামের শত্রুগণ সে কাজটাই করেছে ১৯৭১’য়ে। তখন ভারতের পৌত্তলিক কাফেরদের সাথে তখন দেখা গেছে বাঙালী কাপালিকদেরও।

 

২. ভারতের বিজয় নিয়ে বাংলাদেশীদের উৎসব         

একটি মুসলিম দেশের ভূগোল ভেঁঙ্গে গেল অথচ মনে কোন কষ্টই পেল না -এমন ব্যক্তি নামাযী, রোযাদার ও হাজী হতে পারে, কিন্তু সে প্রকৃত ঈমানদার নয়। ঈমান মহব্বত গড়ে মুসলিম দেশের মানচিত্রের সাথেও। এমন একটি ঈমানী গুণ থাকার করণেই ১৯৭১’য়ে যখন পাকিস্তান  ভেঁঙ্গে যায়, তখন বিশ্বের তাবৎ মুসলিমগণ মনে কষ্ট পেয়েছে। বহু ভারতীয় ও কাশ্মীরী মুসলিম সেদিন কেঁদেছে। অথচ পাকিস্তান ভাঙ্গার আনন্দে ভারতের কাফেরদের সাথে নিয়ে বাঙালী সেক্যুলারিস্টরা ১৯৭১’য়ে উৎসব করেছে। এখনো প্রতি বছর ১৬ই ডিসেম্বর এলে তারা সেটি করে। কাফেরদে সাথে মিলে এরূপ উৎসব করা কি ঈমানের লক্ষণ? এটি তো ইসলাম থেকে বিচ্যুতি। হাজার হাজার মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ে কি এ বিচ্যুতি ঢাকা যায়? সমগ্র মুসলিম ইতিহাসে এটি এক নতুন রাজনৈতিক বিদ’আত বা সংযোজন। এর আগে মুসলিমগণ কখনোই কাফেরদের সাথে মিলে একত্রে এরূপ বিজয় উৎসব করেনি। কারণ, কাফেরদের যাতে বিজয়, মুসলিমদের তাতে পরাজয় ও বিপর্যয়। ঠিক তেমনি মুসলিমদের যাতে বিজয় তাতে কাফেরদের পরাজয় ও বিষাদ। ফলে একত্রে উৎসব হয় কি করে? এটি নিতান্তই সেক্যুলারিস্ট বাঙালী কাপালিকদের নতুন আবিস্কার।

৩. বাঙালীর ভারতসেবা

বাংলাদেশে যারা ভারতের গোলামীকে প্রতিষ্টা দিল, যারা মুজিবের মুর্তি গড়লো, মুর্তিপূজা যাদের কাছে সংস্কৃতি রূপে গৃহিত হলো এবং ইসলামের শরিয়তের প্রতিষ্টার বিরোধিতা যাদের রাজনীতি -তারা কি কখনো মুসলিমের ইজ্জত ও নিরাপত্তা নিয়ে ভাবে? তারা বরং ভাবে ভারতের ন্যায় কাফের শক্তির নিরাপত্তা নিয়ে। এরাই একাত্তরের ভারতের বিজয় বাড়াতে যুদ্ধ করেছে। ভারতের নিরাপত্তা বাড়াতে এরাই বাংলাদেশের ভীতর দিয়ে করিডোর দেয়। নিজেদের বন্দরে ভারতের জাহাজ ভিড়বার অনুমতি দেয়। আবরার ফাহাদের ন্যায় যারাই ভারতের বিরুদ্ধে যারাই অআওয়াজ তুলে তাদেরকে এরা হত্যা করে। এরাই হলো তারা যারা ১৯৭১’য়ে চায়নি, পাকিস্তানের ন্যায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশটি বেঁচে থাকুক। তারা বরং ভারতে অস্ত্র কাঁধে নিয়ে যুদ্ধ করেছে ভারতের ঘরে বিজয় তুলে দিতে।

অতীতের অপরাধগুলি পরবর্তীতে ভয়ানক বিপর্যয় ডেকে আনে। আজ বাংলাদেশ যে অবস্থায় পৌঁছেছে সেটি হঠাৎ করে ঘটেনি। সেখানে আসাটি শুরুটি ১৯৭১ থেকেও শুরু হয়নি। বরং শুরু হয়েছে বহু বছর পূর্বথেকেই। ভারতের এজেন্ট রূপে মুজিব আগরতলা ষড়যন্ত্রের কাজটি শুরু করেছিলেন বহু আগে থেকেই। মুজিবের অপরাধের ঘানি বাংলাদেশীদের বহু বছর বইতে হবে।

৪. বেসিক স্কিলের গুরুত্ব

কিছু মৌলিক সামর্থ্য তথা বেসিক স্কিল বলে কিছু কথা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীর চেয়ে বেসিক স্কিলের গুরুত্ব অনেক বেশী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী ছাড়াও জীবনে বাঁচা যায়, কিন্তু বেসিক স্কিল না থাকলে বাঁচাটাই কঠিন হয়। কোনটি মধু, কোনটি মল -এ বোধটুকু হলো সে বেসিক স্কুল। এ বোধটুকু না থাকলে পেটে মল ঢুকে ও মৃত্যু ঘটে। তেমনি বেসিক স্কিল জরুরি হলো শত্রুমিত্র চেনার ক্ষেত্রে। প্রতিটি দেশ যেমন মিত্র থাকে তেমনি থাকে ভয়ানক শত্রুও থাকে। ১৯৪৬ সালে বাংলার জনগণের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীদের সংখ্যা বেশী ছিল না। কিন্তু জনগণের বেসিক স্কিল ছিল বলেই তারা তাদের শত্রুদের চিনতে পেরেছিল। তাই তারা পাকিস্তানে পক্ষ নেয়। কিন্তু ১৯৭১য়ে সে বেসিক বিলুপ্ত হয় –বিশেষ করে ডিগ্রিধারী বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের মাঝে । ফলে তারা ভারতের পক্ষ নেয়।

 

৫. কারা রাজাকার ও কারা ভারতসেবী?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজকের বিরোধটি হিন্দু মুসলিমের নয়। বাঙালী ও অবাঙালীরও নয়। বরং বিরোধটি এখন রাজাকার ও ভারতসেবীদের মাঝে। এ দুটি পক্ষের মাঝে দুটি চেতনা কথা বলে। তাই জরুরি হলো এ দুটি পক্ষ ও তাদের চেতনাকে সঠিক ভাবে চেনা। কিন্তু বাংলাদেশে পাঠ্য বইয়ে তাদের সঠিক পরিচয়টি তুলে ধরার কাজটি হয়নি; বরং হয়েছে মিথ্যা ইমেজ গড়ার কাজ। কারা ভারতসেবী পক্ষ? এ পক্ষটিই পরিচিত মুক্তিযোদ্ধা রূপে। এরাই ১৯৭১’য়ে ভারতে গিয়েছিল এবং ভারতের অস্ত্র নিয়ে ভারতীয় সেনাদের সাথে মিলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। এবং এরাই ভারতের ঘরে বিজয় তুলেছিল। ইসলামের বিরুদ্ধে এবং ভারতের বিরুদ্ধে এদের যুদ্ধ ১৯৭১’য়ে শেষ হয়নি। এরাই। আবরার ফাহাদের মত দেশপ্রেমিকদের হত্যায় এরা এখনো দেশের প্রতি কোনে যুদ্ধ লড়ছে। এরাই দেশের সেক্যুলারিস্ট ইসলামবিরোধী পক্ষ। এদের ৪টি বিশেষ খাসলত: ১). মুজিবের ন্যায় গণহত্যাকারী ও মানবহত্যাকারী অপরাধীকে তারা বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা বলে, ২). মুজিবের মুর্তি গড়ে এবং সে মুর্তিতে পূজা দেয়, ৩).ভারতের গুণ গায় এবং ৪). ক্ষমতায় গেলে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে নৃশংস স্বৈরাচারকে প্রতিষ্ঠা দেয়।

কারা রাজাকার? রাজাকার তারাই যারা ১৯৭১’য়ে ভারত ও ভারতসেবীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল। তারা ছিল ভাষা ও অঞ্চলের নামে মুসলিমদের মাঝে বিভেদের দেয়াল গড়ার বিরোধী। তারা পাকিস্তানের দালাল ছিল না; বরং ছিল পাকিস্তানের নিষ্ঠাবান নাগরিক। তারা স্বপ্ন দেখতো বিশ্ব শক্তি রূপে মুসলিমদের বেড়ে উঠায়। তারা বিজয়ী হলে বাঙালী মুসলিমগণ পাকিস্তানের ন্যায় পারমানবিক অস্ত্রধারী ৪০ কোটি জনসংখ্যার তৃতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক রূপে ড্রাইভিং সিটে বসতো।

রাজাকারদের বুঝতে হলে ইসলাম ও প্যান-ইসলামী মুসলিম একতার গুরুত্বকে অবশ্যই বুঝতে হয়। তেমনি হৃদয়ে মুসলিমদের বিশ্বশক্তি রূপে বেড়ে উঠার স্বপ্নও থাকতে হয়। সেটি না থাকলে রাজাকারদের গালি দিবে –সেটি অতি স্বাভাবিক। বাংলাদেশের মানুষ ইসলাম থেকে যত দূরে সরবে ততই রাজাকারগণ ঘৃনিত হবে এবং সন্মান পাবে ভারতের দালাল পক্ষ।

৬. ছাগল হয়ে বাঁচার পরিণাম

ছাগল হয়ে বাঁচলে বাঘের পেটে যেতে হয়। তেমনি ভীরু-কাপুরুষ হওয়ার অনিবার্য পাওনা হলো  স্বৈরচারী দুর্বৃত্তদের নৃশংস শাসন। বাংলাদেশ তারই উদাহরণ। বাংলাদেশে যে দুর্বৃত্ত শাসন -তা কি কখনো কোন সভ্য দেশে ভাবা যায়? পালে নেকড়ে ঢুকলে ভেড়ার পাল পালাবার চেষ্টা করে। আর সভ্য মানুষেরা হাতের কাছে যা পায় তা দিয়ে নেকড়কে বধ করে। সভ্য মানুষের তেমনি আচরণ হয় দুর্বৃত্ত শাসকের বিরুদ্ধে। দেশে দুর্বৃত্তদের শাসন দেখে তাই নিশ্চিত বলা যায় -দেশের মানুষ কতটা ভীরু, কাপুরুষ এবং অযোগ্য। ডাকাত সব গ্রামে হানা দেয় না। বার বার হামলা করে তাদের ঘরে যারা ভীরু, নিরস্ত্র ও প্রতিরক্ষাহীন। সভ্য মানুষেরা তাই শুধু পানাহার নিয়ে বাঁচে না, ঘরে ঘরে শক্তি সঞ্চয় করে। সভ্য ভাবে বাঁচাটি নিশ্চিত করতে দুর্বল থাকাটি ইসলাম হারাম। তাই সুরা আনফালের ৬০ নম্বর আয়াতে সর্ব সামর্থ্য দিয়ে শক্তি সঞ্চয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

৭.উপেক্ষিত হচ্ছে কোর’আন

সত্যকে তুলে ধরতে ও সত্যের দিকে মানুষকে ডাকাতে পবিত্র কোর’আনের চেয়ে শক্তিশালী কোন কিতাব নাই। এক্ষেত্র পবিত্র কোর’আন নিজেই বিরাট মোজেজা। পবিত্র কোর’আনের কয়েকটি আয়াত শুনে নবীজী (সা:)কে হত্যায় উদ্যত হযরত ওমর (রা:) ইসলাম কবুল করেছিলেন। আজও যারা দেশে দেশে মুসলিম হচ্ছে তারা মুসলিমদের দেখে মুসলিম হচ্ছে না। তারা মুসলিম হচ্ছে পবিত্র কোর’আন পাঠ করে। মহান আল্লাহতায়ালা জানেন তাঁর নিজ গ্রন্থের শক্তি। এজন্য তারাই মহান আল্লাহতায়ালার হুকুম: “ফাযাককির বিল কোর’আন” অর্থ: “কোর’আন দিয়ে মানুষকে সাবধান করো।” কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, মানুষকে সাবধান করার সে কাজে মহান আল্লাহতায়ালার সে নির্দশকে মানা হচ্ছে না। সে কাজ উপেক্ষিত হচ্ছে পবিত্র কোর’আন।  কোর’আনের শক্তি তো কোর’আন বুঝায়। না বুঝিয়ে স্রেফ তেলাওয়াত শিখিয়ে কি কাউকে সাবধান করা যায়? অথচ বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে সেটিই হ্চ্ছে। ওয়াজে আলেমগণ কোর’আনের বানী না শুনিয়ে নিজেদের কিচ্ছা-কাহিনী শোনান। যেন পবিত্র কোর’আনের চেয়ে তারা বেশী বুঝাতে পারেন! নাউযু বিল্লাহ মিন যালিক।

৮. দায়িত্বহীন বাংলাদেশ

প্রতিবেশী দেশে বসবাসকারী মুসলিমদের জন্য বাংলাদেশ খুবই খারাপ প্রতিবেশী। ইসলাম ও মুসলিম প্রসঙ্গ যেন তাদের কাছে কোন ইস্যুই নয়। ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা হচ্ছে, মুসলিম নারীদের ধর্ষণের শিকার হতে হচ্ছে, আসামের বহু লক্ষ মুসলিমের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে তাদের ক্যাম্পে তোলা হয়েছে, গণহত্যা হচ্ছে কাশ্মীরে -কিন্তু ১৭ কোটি মুসলিমের বাংলাদেশ তা নিয়ে নিশ্চুপ।

বাংলাদেশ সরকার চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রেও। রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রটি নতুন নয়। তবে লক্ষণীয় হলো, মায়ানমারের পশ্চিম সীমান্তে যতদিন পূর্ব পাকিস্তান ছিল, ততদিন রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদে মায়ানমার সাহস পায়নি। পূর্ব পাকিস্তানের বিলুপ্তি ঘটে ১৯৭১ সালে। বাংলাদেশ সরকারের দুর্বলতা বুঝতে মায়ানমারের বুঝতে দেরী হয়নি; ফলে উচ্ছেদের কাজ শুরু হয় ১৯৭৮ সালে। ১৯৯১’য়ে আড়াই লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। ২০০২’য়ে ২ লাখকে রোহিঙ্গাকে রাখাইন প্রদেশ থেকে উচ্ছেদ করে ক্যাম্পে তোলা হয়। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে পাঠানো হয় প্রায় ৮ লাখকে। ফলে বাংলাদেশে এখন ১০ লাখের মত রোহিঙ্গা।

৯. অসভ্যতা নিয়ে বাঁচাটিই রীতি!
বাংলাদেশ নির্বাচন হয়না, ভোটডাকাতি হয়। সত্য কথা বললে গুম ও খুন হতে হয়। মিটিং ও মিছিল করলে জেল হয়। ধর্ষণ ও সন্ত্রাস এখন রাজনীতির হাতিয়ার। আদালত কাজ করে স্রেফ সরকার বিরোধীদের শাস্তি দেয়ার জন্য। পুলিশ আছে সরকারী দলের নেতাকর্মীদের পাহারা দেয়ার জন্য। সাধারণের মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের কোন মাথা ব্যাথা নেই। এটিই তো নিরেট অসভ্যততা। এরূপ অসভ্যতার বিরুদ্ধে সভ্য দেশে লড়াই  হবে -সেটিই তো স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশে সে লড়াই নাই। এ নিদারুন অসভ্যতা নিয়ে বাচাটাই যেন বাংলাদশীদের সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

১০. শত্রুর নীতি ও শত্রুর বন্ধু
ত্রুর বন্ধু হওয়ার জন্য জরুরি হলো, ইসলাম থেকে দূরে সরা ও তাদের এজেন্ডাকে বিজয়ী করার কাজে সাহায্যকারী হওয়া। যারা এ কাজে তাদের সহযোগী -একমাত্র তাদেরকে তারা বন্ধু রূপে গ্রহণ করে। অতীতে সে কাজ করেছে শেখ মুজিব; এবং সেটি যেমন ১৯৭১’য়ের আগে তেমনি পরে। আজ সে অভিন্ন কাজটি করছে শেখ হাসিনা। মুজিব ভারতীয় এজেন্ডাকে বিজয়ী করতে আগরতলা ষড়যন্ত্র করে। ১৯৭১ সালে ভারতীয় সৈন্যকে বাংলাদেশের মাটিতে ডেকে আনে। ভারতের ঘরে মুজিব যে মুজিব তুলে দেয়, সে বিজয় নিয়ে ভারত আজও উৎসব করে এবং মুজিবকে সে জন্য বন্ধু মনে করে।

শেখ মুজিব ভারতকে যা কিছু দিয়ে যেতে পারিনি, সেগুলো দিচ্ছে শেখ হাসিনা। হাসিনা করিডোর দিয়েছে, সমুদ্র বন্দর দিয়েছে, বাজার দিয়েছে, ৫৪টি নদীর পানি দিয়েছে এবং সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যার লাইসেন্সও দিয়েছে। সর্বোপরি দেশের সার্বভৌমত্বও ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। হাসিনার গর্ব ভারতকে দেয়া নিয়ে। তাই বলে, “ভারতকে যা দিয়েছে তা ভারত কোনদিন ভূলতে পারবে না।” কিন্তু বাংলাদেশের জন্য কি এনেছে -সে কথা বলে না। প্রশ্ন হলো, কাফেরের সেবাদাস কি মুসলিমের বন্ধু হতে পারে? ১৬/০২/২০২১।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *