বিবিধ ভাবনা (১০)

ফিরোজ মাহবুব কামাল

১.

ঈমান দেখা যায়। দেখা যায় ব্যক্তির চরিত্র ও বন্ধুবান্ধবদের দেখে। শরিষার দানা পরিমান যার মধ্যে ঈমান আছে সে কখনোই চোরডাকাত, ভোটডাকাত ও খুনিদের মত দুর্বৃত্তকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করে না। মন থেকে তাকে ঘৃনা করে। গায়ে জোর থাকলে তার ঘাড় মটকায়। কারণ দুর্বৃত্তদের নির্মূল করাটি ইবাদত। ঘৃনার বদলে যে দুর্বৃত্তকে সমর্থন করে ও তাকে মাননীয় বলে -বুঝতে হবে সে পুরাপুরি বেঈমান। সামান্যতম ঈমানও তার মধ্যে নাই।সে যদি নামায-রোযা করে এবং ঈমানের দাবী করে -তবে বুঝতে হবে সে মুনাফিক।

২.
মহান আল্লাহতায়ালার কোটি কোটি নেয়ামত আমরা ভোগ করি। অথচ তাঁর সাথে গাদ্দারীটা কত সীমাহীন? তাঁর জমিনে তাঁর আইনের বদলে নিজেরা আইন বানাই অথবা ইংরেজ কাফেরদের আইন পালন করি। তাঁর রাজত্বে তার সার্বভৌমত্বের বদলে নিজেদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করি! যারা শরিয়তের বিরুদ্ধ পক্ষ -তাদেরকে ভোট দেই। মহান আল্লাহতায়ালার সাথে এরূপ গাদ্দারীর শাস্তি যে জাহান্নাম –সে হুশ ক’জনের?


পানাহার অর্জনে পশুরাও মেহনত করে। অতএব স্রেফ উপার্জন বাড়াতে জীবনের সকল সামর্থ্য ব্যয় করা পশুর স্বভাব। মানব পশুর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর তো সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে নিজ সামর্থ্যের বিনিয়োগে। পশু জঙ্গল থেকে আবর্জনা সরায় না, কিন্তু মানুষকে তো দুর্বৃত্তদের নির্মূল করতে হয় এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা দিতে হয়। ইসলামে এ কাজ জিহাদ -যার পুরস্কার জান্নাত। যার মধ্যে জিহাদ আছে -সেই প্রকৃত ঈমানদার। নইলে সে বেঈমান। (সূত্র: সুরা হুজরাত)।

৪.
বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি মানুষকে পানাহার দেয়া নয়, অর্থদানও নয়। বরং মানুষের মরা বিবেক বাঁচানো। না খেয়ে কুকুরও মরছে না। অথচ বিবেকের মৃত্যুতে মানুষ পশুরও চেয়েও অধম হচ্ছে। ফলে দেশে ভয়ানক অপরাধীদের শাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ছেয়ে গেছে গুম, খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের রাজত্ব।

৫.
যে দেশে খুনি, চোরডাকাত ও ভোটডাকাতদের ন্যায় ভয়ানক অপরাধীদেরকে মাননীয়
বলতে হয় ও তাদের কাছে বিচার চাইতে হয় -সে দেশকে কি সভ্য দেশ বলা যায়?

৬.
সমাজ ও রাষ্ট্র পাল্টানোর স্বপ্ন অধিকাংশ মানুষই দেখে না।  সম্ভবত নিজেদের সে সামর্থ্য আছে বলে তারা মনেও করে না। প্রশ্ন হলো নিজেদের পাল্টানোর সামর্থ্যও কি তাদের নাই। নিজেদের পাল্টাতে তারা কতটুকু চেষ্টা করে? সে হিসাব কি পরকালে কি দিতে হবে না?

৭.
ঈমান শুধু নামায-রোযার কথা বলে না। কোরআনের জ্ঞানে জ্ঞানবান হতে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিহাদের কথাও বলে। সে জ্ঞান ও জিহাদ না থাকাটি বেঈমানীর লক্ষণ। তাতে বিজয়ী হয় দুর্বৃত্তগণ ও পরাজিত হয় ইসলাম। বাংলাদেশে তো সেটিই হয়েছে।

ঈমান দেয় দুর্বৃত্তকে ঘৃনা করার বল। দেয় ন্যায়ের পক্ষে দাড়ানোর বল। সে বল না থাকাটিই হলো ঈমানশূণ্যতা। এমন ঈমানশূণ্যরাই দুর্বৃত্তদের পক্ষ নেয়।এরূপ বেঈমানদের কারণেই দেশে ভোটচোর দুর্বৃত্তদের শাসন প্রতিষ্ঠা পায়।

৯.
মানব জীবনে সবচেয়ে বড় বিপ্লব আসে আখেরাতের ভয়ে। যার মধ্যে এ ভয় সবচেয়ে বেশী সে সব সময় নেক আমলের রাস্তা খুঁজে। সে সব সময় বাঁচে পাপের পথ থেকে। যার মধ্যে আখেরাতের ভয় নাই -সে যে কোন জঘন্য পাপ অতি সহজে করতে পারে। চুরি-ডাকাতি, ভোটডাকাতি, গুম, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস এসব তার কাছে অতি সহজ হয়ে যায়। বাংলাদেশে এমন পাপীদের শাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

১০.
ইসলামে কোর’আনের জ্ঞান-অর্জন করা প্রতিটি নর-নারীর উপর
ফরজ। সে ফরজ পালন না করা কবিরা গুনাহ। কিন্তু সে গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা ক’জনের? প্রশ্ন হলো এতো বড় গুনাহর বোঝা নিয়ে  কি নেক আমল করা যায়?

১১.
ডাকাতগণ সফল ডাকাতি নিয়ে উৎসব করে। ভোটডাকাতগণও ২০২৮ সালের ভোটডাকাতি নিয়ে উৎসব করবে -সে ঘোষণা দিয়েছে ওবায়দুল কাদের। এবং সে উৎসব হবে যাদের ভোটডাকাতি হলো তাদের সামনে! এ কি অসভ্যতা? কোন ডাকাতও কি এমনটি করে থাকে?

১২.
আমাদের কি পরকালের ভয় আছে? ভয় থাকলে তো জাহাননামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য নেক আমলের জোয়ার শুরু হয়ে যেত। বিলুপ্ত হতো গুনাহর রাস্তা। চেষ্টা হতো পবিত্র কোর’আন বুঝা ও সে অনুযায়ী আমল করা।

১৩.
ইসলামে শ্রেষ্ঠ কর্ম হলো কোর’আন শিক্ষা করা ও কোর’আন শিক্ষাদান। যারা এ কাজ করে তাদেরকে নবীজী (সা:) শ্রেষ্ঠ মানব বলেছেন। অথচ বাংলাদেশে হচ্ছে এর উল্টোটি। সবচেয়ে উপেক্ষিত হলো কোর’আন শেখা ও শেখানো। একাজ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় না।  নবীজী (সা:)র শিক্ষার এরূপ অবমাননা নিয়ে কি মুসলিম থাকা যায়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *