বাংলাদেশে শয়তানের দূত ও ঈমানধ্বংসী নাশকতা

শয়তানের ধর্ম ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান

শয়তানেরও ধর্ম আছে। দেশে দেশে সে ধর্মের অসংখ্য প্রচারক, দূত এবং অনুসারিও আছে। শয়তানের তাঁবেদার বিপুল সংখ্যক রাষ্ট্র যেমন আছে, তেমনি আছে আইন-আদালত, প্রশাসন, ও সেনাবাহিনী। আছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান বা ইন্সটিটিউশন। দেশে দেশে এগুলিই তো মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীন, ইসলামি রাষ্ট্রের প্রকল্প এবং তাঁর শরিয়তি আইন-আদালতকে পরাজিত করে রেখেছে। এবং অসম্ভব করে রেখেছে পবিত্র কোর’আন থেকে শিক্ষালাভ এবং সে শিক্ষার প্রয়োগ। প্রশ্ন হলো, শয়তানের সে ধর্মটি কি? কি তার বার্তা? কারা তার দূত? তাদের কাজই বা কি? শয়তানের ধর্মের মূল মিশনটি হলো, মহান আল্লাহতায়ালার অবাধ্যতা। যেখানেই মহান আল্লাহতায়ালার বিধান বা হুকুম, সেখানেই ঘটায় তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। ইসলামের মূল ইন্সটিটিউশন যেমন মসজিদ ও,মাদ্রাসা,শয়তানের ধর্মের সে ইন্সটিটিউশনগুলো হলো স্বৈর-সরকার, সেক্যুলার রাজনৈতিক দল, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, পুলিশ ও আদালত, পতিতাপল্লি, নাচের ঘর, গানের আসর, সিনেমা হল, সূদী ব্যাংক ইত্যাদী। শয়তানের ধর্মের নিজস্ব সংস্কৃতি যেমন আছে, তেমনি আছে রাজনীতি এবং বহুমুখী স্ট্রাটেজীও। মহান আল্লাহতায়ালা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে টানেন। সে কাজে তিনি নবী-রাসূল ও ফেরেশতা পাঠান,এবং ধর্মগ্রন্থও নাযিল করেন। হেদায়েত দিয়ে মানুষকে তিনি জান্নাতে নেন। আর শয়তানের কাজ হলো মানুষকে আলো থেকে আঁধারে নেয়া,এবং আঁধারেরর সে পথ দিয়ে জাহান্নামে নেয়া।                                                                                                           

২০১০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের রাজধানীতে শয়তানের এক বিশাল দূতের আগমন ঘটেছিল। সে দূতটি হলো শাহরুখ খান। অনেকের কাছে তিনি মোম্বাইয়ের ফিল্মী জগতের বিশাল নক্ষত্র। তবে বহু ভারতীয়র কাছেও তিনি অশ্লিলতার নায়ক। শাহরুখ খানের সাথে ঢাকায় এসেছিল এক দল রাশিয়ান নর্তকী যাদের কাজ ছিল অশ্লিল নাচ পরিবেশন করা।এ খবরও বেরিয়েছে, এ সব রাশিয়ানদের অনেকে নাচের পাশাপাশি দেহব্যবসার সাথেও জড়িত। পতিতাবৃত্তিতে রাশিয়ান মেয়েরা ইউরোপে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট পরিচিতি পেয়েছে, এখন তারা বাজার পেয়েছে ভারতেও। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, এতকাল যে নগ্ন নাচ-গান পতিতার পল্লিতে হতো, এখন সেটিই প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অনুষ্ঠিত হচ্ছে জনগণের অর্থে গড়া ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে। নর্দমায় গলিত আবর্জনার পরিমান বেশী হলে তা যেমনন রাস্তায় গড়িয়ে পড়ে, তেমন অবস্থা এ অসভ্যতার। নগ্নতা ও অশ্লিলতার প্রদর্শনী হারাম। নৈতিক এ ব্যাধি নৈতিক মূল্যবোধের মহামারি ঘটায়। যে সমাজে এ রোগ বিস্তার পায় সে সমাজে কি শ্লিলতা বাঁচে? পাপাচার তখন উৎসবে পরিণত হয়। বুলেটে বিদ্ধ হয় যেমন দেহ, তেমনি পাপাচারে বিদ্ধ হয় ব্যক্তির ঈমান। প্রশ্ন হলো, যার মনে সামান্যতম ঈমান আছে সে কি অশ্লিল নাচ-গানে সুখ পায়, পায় কি বিনোদনের আনন্দ? ইসলামে এটি তো জঘন্য পাপ। পাপে আনন্দ লাভ তো বেঈমানীর লক্ষণ।

সরকারের দায়িত্ব শুধু পাপাচারের প্রতিরোধই নয়,পাপের নায়ক-নায়ীকাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা। কিন্তু বাংলাদেশের সরকার এখানে বিপরীত ভূমিকা রাখছে। দেশে ওয়াজ-মহফিল ও কোরআন-হাদীসের তাফসির মহফিলগুলোকে তারা বন্ধ করেছে। বিখ্যাত তাফসিরকারকদের সরকার জেলে তুলেছে,এমন কি জিহাদের ন্যায় ইসলামের মৌল বিধানের উপর বই-পুস্তকও বাজেয়াপ্ত করছে। দেশের মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের উপর কড়া নজর রেখেছে যেন কোরআনের জিহাদ বিষয়ক আয়াতগুলো চর্চা না পায়। অপরদিকে নামাযী জনগণের অর্থে গড়া আর্মি স্টেডিয়ামকে তুলে দিয়েছে পাপের নায়কদের হাতে। এভাবে পাপের ভাগী করছে জনগণকে। অথচ এ স্টেডিয়ামে একদিনের জন্যও কি কোন ওয়াজ মহফিল হতে দেয়া হয়েছে? সৈনিকদের মাঝে ইসলামি চেতনার প্রসার বা পরিচর্যা বাড়াতে একদিনের জন্যও এ স্টেডিয়ামকে ওয়াজ-নসিহতের কাজে ব্যবহৃত হতে দেয়া হয়েছে?

 

লক্ষ্যঃ ডিইসলামাইজেশন

বাংলাদেশের সরকার ও দেশী-বিদেশী শয়তানের দূতেরা সম্মিলিত ভাবে যে অভিন্ন স্ট্রাটেজী নিয়ে কাজ করছে সেটি হলো দেশকে সর্বস্তরে ডি-ইসলামাইজেশন করা। অর্থাৎ ইসলামের বিধানগুলিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে যেমন বিলুপ্ত করা, তেমনি জনগণকে ইসলাম থেকে দূরে সরানো।এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে শুধু শত শত কোটি টাকার বিণিয়োগ হচ্ছে তাই নয়,সে কাজে ঝাঁকে ঝাঁকে শয়তানের দূতরাও আসছে। শাহরুখ খানের আগমনের কয়েক দিন আগে ভারত থেকে এক ঝাঁক নর্তকী এসে নেচে গেয়ে গেল বাংলাদেশে। ভারত আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া,ইসরাইল থেকে শত শত বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনছে,অথচ বাংলাদেশ শত শত কোটি টাকার বিণিময়ে বিদেশ থেকে নগ্নতা ও অশ্লিলতা আমদানী করছে। রবীন্দ্রনাথের জন্ম ও মৃত্য বার্ষিকী,ইংরেজী বর্ষবরণ,বাংলা বর্ষবরণ,বসন্ত বরণ,ভালাবাস দিবস, থার্টিফা্স্ট নাইট –এরূপ নানা দিনক্ষণকে ঘিরে নাচ-গান ও অশ্লিলতার নানা রূপ প্রচারে যোগ হচ্ছে দীর্ঘকালীন উৎসবের মাত্রা।

বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টদের মূল লক্ষ্য, ইসলামের মৌল বিশ্বাস ও বিপ্লবী চেতনা থেকে জনগণকে দূরে সরানো। এভাবে দ্বীনের প্রতিষ্ঠাকে অসম্ভব করা। এগুলিকে বেগবান ও সুদুর প্রসারি করতে একাত্তরের চেতনার বাহানা তুলা হচ্ছে। জনগণের মাঝে ইসলামের চেতনা বেঁচে থাকে ইবাদতের বিধান ও ইসলামের উৎসব গুলোর মধ্য দিয়ে। শয়তানের ধর্মে ঈদ নাই, ঈদের খুশিও নাই। কিন্তু এগুলোর বিকল্প রূপে প্রতিষ্ঠা দিচ্ছে নানা দিবসের নানা সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকর্মকে। কবি সুফিয়া কামাল তো রবীন্দ্রনাথের গান শোনাকেই ইবাদত বলতেন। সেক্যুলার উৎসবগুলোকে জমজমাট করতে বিদেশী এনজিওগুলি বিপুল পুঁজি বিনিয়োগ করছে। অনেক এনজিওর কাজ হয়েছে নিছক নাচগান শেখানো। যে ইসলামে সমাজ ও রাজনীতির নিয়ন্ত্রন নিয়ে কথা আছে এবং হুকুম দেয় শরিয়তী বিধান প্রতিষ্ঠার, সে ইসলাম নিয়ে বাংলাদেশের সেক্যুলার পক্ষের প্রচণ্ড ভয়। সে ইসলামের অনুসারিদের তারা রাজনৈতিক শত্রু মনে করে। নিজেদের ক্ষমতা লাভের স্বার্থে তাদের নির্মূলকে তারা অপরিহার্য মনে করে। তাই এ ফ্যাসিস্টগণ যখন ক্ষমতার বাইরে ছিল তখন রাজপথে লগি-বৈঠা নিয়ে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এখন ক্ষমতায় গিয়ে তাদেরকে জেলে তুলছে। ইসলামের বিরুদ্ধে একই রূপ ভয় ভারতের এবং সে সাথে ইসলামের আন্তর্জাতিক শত্রুপক্ষের। তাদের সম্মিলিত স্ট্রাটেজী, সমাজের বুকে পাপের স্রোতকে প্রবলতর করে জনগণকে ভাসিয়ে নেয়া। এবং এভাবে আল্লাহর প্রদর্শিত সিরাতাল মুস্তাকীমকে আড়াল করা। তাই শাহরুখ খানের মত যারা পাপের প্রাকটিশনার ও প্রচারক তারা বাংলাদেশের সেক্যুলার পক্ষের কাছে অতি আপনজন । সে যে তাদের কতটা আপনজন  তার প্রমাণ মেলেছে ঢাকায় তার আগমনের মুহুর্তে। শাহরুখ খানকে ঢাকা বিমানবন্দরে যে অভ্যার্থনাটি দেয়া হয় সেটি ছিল অসাধারণ। তাকে শুধু ভিআইপি (ভেরি ইম্পরটেন্ট পারসন)নয়, ভিভিআইপি (ভেরি ভেরি ইম্পরটেন্ট পারসন)এর সম্মান দেয়া হয়। একজন মানুষের রুচীর পরিচয় মেলে তার পছন্দ-অপছন্দের মানুষটিকে দেখে। নামে মুসলমান হলেও শাহরুখ খান বিয়ে করেছে এক হিন্দু মহিলাকে। খোদ ভারতে তার বড় পরিচয়টি হলো “সেক্স ও অশ্লিলতার ফেরিওয়ালা” রূপে। বাংলাদেশের মত একটি মুসলিম দেশে এমন একজন ফেরিওয়ালাকে এমন অভূতপূর্ব অভ্যর্থনা দেয়া দেখে অবাক হয়েছে এমনকি বহু ভারতীয়ও। এতে বিদেশে, বিশেষ করে ভারতে বাংলাদেশী মুসলমানদের ঈমান-আমল ,মূল্যবোধ ও রুচীর কি পরিচয়টি প্রচার পেল?        

পাপকর্ম প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত হতে দেয়ার বিপদ ভয়ানক। সে পাপ তখন দেশ জুড়ে ব্যাপ্তি পায়। পাপের শিকড় তখন জনগণের চেতনার গভীরে ঢুকে। সাধারণ মানুষদের অনেকেই কোনটি ন্যায় বা শ্লিল, কোনটা অন্যায় বা অশ্লিল -তা নিয়ে কোন প্রবল ধারণা থাকে না। তারা ভেসে যায় বহমান সাংস্কৃতিক স্রোতে। তারা দেখে সমাজে কোনটি উৎসব রূপে বিপুল ভাবে উৎযাপিত হলো। দেখে কোনটি রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা পেল। এবং সেটি দেখে তারাও সেদিকে দৌড়াতে থাকে। পুতুল পুঁজা,গরু পুঁজা, সর্পপুঁজা, নানা দেবদেবী পুঁজা, ঝাড়ফুঁকের ন্যায় নানা প্রাচীন অজ্ঞতা সমাজে প্রতিষ্ঠা পায় তো অজ্ঞ মানুষের এমন স্রোতে-ভাসা প্রবনতার কারণেই। মানুষের এমন স্বভাবের কারণেই নবীগণ ইসলামের প্রচারে প্রচণ্ড বাধা পেয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষও একই কারণে ইসলাম থেকে দূরে সরছে। ফলে মুসলিম রমনীরা গৃহ ছেড়ে রাস্তায় গাছ পাহাড়া দিচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ সূদ খাচ্ছে এবং সূদ দিচ্ছে। বহু গুনে বেড়েছে দেহব্যবসা।শয়তান তো এমনটিই চায়। অথচ মাত্র ৫০ বছর আগেও বাংলাদেশের অবস্থা এমন ছিল না। গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ নারী-পুরুষ ও যুবক-যুবতিরা যখ্ন রাজধানীর আর্মির স্টেডিয়ামে মহা ধুমধামে অশ্লিল নাচগাণের অনুষ্ঠান হতে দেখে তখন সে অসভ্যতাকেই যে অনেকেই সমাজের ও সময়ের রীতি ভাববে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? সমাজে সামাজিক স্রোত বা রেওয়াজ নির্মিত হয় তো এভাবেই। পাশ্চাত্যের নরনারীরা এ পথেই আজকের অবস্থায় পৌঁছেছে। ফলে এ সমাজে ব্যাভিচার আজ আর কোন অপরাধ নয়, নিন্দনীয়ও নয়।

 

 

লক্ষ্যঃ হিদায়েতপ্রাপ্তির অযোগ্য করা

বিষ যেমন দেহকে ধ্বংস করে,পাপও তেমনি চরিত্রকে ধ্বংস করে। তাই জাতীয় চরিত্র রক্ষার স্বার্থে সরকার এবং সে সাথে দায়িত্ববান ব্যক্তি ও সংগঠনের কাজ শুধু বিষপান বন্ধ করা নয়,পাপাচার রোধ করাও। বিশেষ করে সেটি যখন জনসম্মুখে হয়। যে কোন পাপীষ্টই পাপ কর্মকে জনগণের সামনে করতে ভয় পায়, লজ্জাও পায়। এজন্যই পতিতারাও অন্যদের ন্যায় ভদ্রবেশে রাস্তায় বের হয়। মদ্যপায়ীরাও তেমনি প্রকাশ্যে মদ্যপানে লজ্জা পায়। ভয়ও পায় সম্মান হারানোর। অশ্লিল ছবিও তাই কেউ অন্যের সামনে দেখে না, ছেলেমেয়ে ও পরিবারের অন্যদের সামনে তো নয়ই। এটুকুই হলো হায়া। হায়া বা লজ্জাকে বলা হয় ঈমানের অর্ধেক। লজ্জার বুনিয়াদ ধ্বসে গেলে ঈমানও ধ্বসে যায়। তাই কারো ঈমান ধ্বংসের সহজ উপায় হলো তার লজ্জা নাশ করা। শয়তানের দূত ও সৈনিকদের প্রধান স্ট্রাটেজী তাই জনগণকে সরাসরি মুর্তি-পুজায় আহবান করা নয়, নাস্তিক হতেও বলা নয়। বরং সেটি হলো জনগণের মন থেকে লজ্জাকেই বিলুপ্ত করা। তাদেরকে বেশরম ও বেহায়া করা। যারা উলঙ্গ নর্তকী বা পতিতা -তারা যে উম্মাদ বা জ্ঞান শূণ্য তা নয়। তাদের মূল রোগটি হলো লজ্জাশূণ্যতা। পানিশূণ্য ভূমিতে যেমন বীজ গজায় না, তেমনি বেহায়া-বেশরমদের মনে ধর্মের কথা বা নীতির কথা স্থান পায় না। আরবের বুকে যারা শয়তানের সৈনিক রূপে কাজ করতো অনুরূপ স্ট্রাটেজী ছিল তাদেরও। তাদের সে স্ট্রাটেজী এতটাই সফলতা পেয়েছিল যে তাদের সে প্রচারের ফলে আরবের কাফেরগণ উলঙ্গ হয়ে কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ করতো। এবং সেটিকে তারা ধর্ম মনে করতো। এমন অশ্লিলতা কেড়ে নেয় ইসালামের বিধান মেনে নেয়ার সামর্থ্য। ইসলাম তো পথ দেখায় মুত্তাকীদের, পাপাচারীদের নয়। কোরআনকে মহান আল্লাহতায়ালা সংজ্ঞায়ীত করেছেন “হুদাল লিল মুত্তাকীন” তথা মুত্তাকীনদের পথপ্রদর্শক রূপে। তিনি এ হুশিয়ারিও দিয়েছেন,“ওয়াল্লাহু লা ইয়াহদিল কাওমাল ফাসিকীন।” –(সুরা সাফ আয়াত ৫)। অর্থঃ “এবং আল্লাহতায়ালা ফাসিক তথা পাপীষ্টদের হেদায়েত দেন না।” অর্থাৎ পাপ পাপীকে বঞ্চিত করে মহান আল্লাহর হেদায়েত থেকে। অতি গুরুতর কোন শাস্তিও কি এর চেয়ে কঠিনতর হতে পারে? হেদায়াত হলো মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত; ধন-সম্পদ,ঘরবাড়ী বা সন্তান-সন্ততি সে তুলনায় কিছুই না। অথচ পাপকর্ম সে হেদায়াত থেকেই বঞ্চিত করে। এবং অনিবার্য করে পথভ্রষ্টতা। পথভ্রষ্টতার যে শাস্তি সেটি তো অনন্ত অসীম কালের জন্য জাহান্নামে বাস,হাজারো বছরের জেলের শাস্তিও সে তুলনায় অতি তুচ্ছ। লক্ষ্যনীয় হলো, নবীজীর আমলে তারাই সর্বপ্রথম মুসলমান হওয়ার সৌভাগ্য পেয়েছিলেন যারা ছিলেন হযরত আবু বকর(রাঃ), হযরত আলী(রাঃ),হযরত ওসমান(রাঃ)র ন্যায় লজ্জাশীল এবং পাপের সাথে সংশ্রবহীন।  

 

এজেন্ডাঃ জাহান্নামে নেয়া

তাই কাউকে পথভ্রষ্ট করার সহজ মাধ্যম হলো তাকে পাপে অভ্যস্থ করা। বাংলাদেশেও একই স্ট্রাটেজী নিয়ে শয়তানের সৈনিকেরা ময়দানে নেমেছে। তাই পাপকে তারা গৃহে,নাট্যশালায় বা সিনেমা হলে আবদ্ধ না রেখে সেটিকে গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাই গত ১০ ডিসেম্বরে সে উলঙ্গ নাচকে বৈশাখী টিভি চ্যালেনের মাধ্যমে সারা দেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে। পিতামাতারা নিজ সন্তানদের সামনে সে নাচ দেখে বিব্রত বোধ করলেও সে বিব্রতকর লাজুক অবস্থাটি আর কতকাল বেঁচে থাকবে? পাপ তো এভাবেই আস্তে পরিবারে ঢুকে। আজ  যারা নগ্ননাচ বা পতিতাবৃত্তিতে লিপ্ত তাদের সবাই পতিতা পল্লি থেকে উঠে আসেনি। জন্ম নিয়েছিল সম্ভবত এমন সব পরিবারে যেখানে কিছু লজ্জা ছিল, শ্লিলতাও ছিল। হয়তো ধর্মচর্চাও ছিল। কিন্তু পরিবেশের গুণে তারা সে ধর্ম, লজ্জা ও শ্লিলতাকে হারিয়েছে। এখন তারা নিজেরাই সে লজ্জাহীন অশ্লিতার ফেরিওয়ালাতে পরিণত হয়েছে।

ইসলাম কাউকে অন্যের ঘরের অভ্যন্তরে ঢুকে বা উঁকি মেরে সে ঘরের অধিবাসীরা কি লেবাস পড়ছে বা কি পানাহার করছে -সেটি জানার অনুমতি দেয়না। সেটি গৃহবাসীর নিজস্ব বিষয়। সেখানে সে অশ্লিল বা উলঙ্গও থাকতে পারে। কিন্তু সেটি শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ রূপে গণ্য হয় যখন উলঙ্গতা ও অশ্লিলতা নিয়ে কেউ রাস্তায় নেমে আসে। তখন সেটি ভয়ানক এক সামাজিক সমস্যার জন্ম দেয়। তখন সে নৈতিক রোগে অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। পাপাচার লাগাতর চলতে দিলে সমাজে লজ্জা-শরম ও নীতি-নৈতিকতারই মৃত্যু ঘটে। কারো জাহান্নামের যাওয়ার নাগরিক অধিকার ইসলাম রহিত করে না, কিন্তু অধিকার দেয় না সে পথে অন্যকে প্ররোচিত করার। এটি কারো হাতে নিহত হওয়ার চেয়েও ক্ষতিকর। কারণ অন্যের হাতে নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে কারো জাহান্নাম প্রাপ্তি হয়না। অথচ পাপের পথে জাহান্নামের নেয়ার আয়োজনটি হলে সে মহাক্ষতিটি হয়। পাপাচারের প্রচারকদের আদালতের কাঠগড়ায় খাড়া করোনো ও তাদের বিচার করা তাই প্রতিটি দায়িত্বশীল সরকারে দায়িত্ব। 

 

 

জিহাদ যে কারণে অনিবার্য

ইসলামের জিহাদ এজন্যই শুধু আগ্রাসী শত্রুদের বিরুদ্ধেই নয়,নিজ দেশের দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধেও। পবিত্র কোরআনে সত্যের প্রতিষ্ঠা ও দুর্বৃত্তদের প্রতিরোধের নির্দেশটি তাই একবার নয়,বহু বার এসেছে। বলা হয়েছে,“তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল অবশ্যই থাকতে হবে যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে, উত্তম কাজের নির্দেশ দিবে এবং দুর্বৃ্ত্তিমূলক কাজ থেকে রুখবে।এবং তারাই হলো সফলকাম।” –(সুরা আল ইমরান, আয়াত ১০৪)।তাই শুধু কল্যাণের দিকে ডাকলেই মুসলমানের দায়িত্ব শেষ হয় না। তাকে আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজে আত্মনিয়োগ করতে হয়। সেটি ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়ের প্রতিরোধে। এবং প্রতিরোধের কাজে শক্তি প্রয়োগও অনিবার্য হয়ে উঠে। কারণ, ভাল কাজের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ যেমন নামায-রোযা পালনে হয় না, তেমনি ওয়াজ-নসিহতেও হয় না। একাজটি আইন-প্রয়োগকারি সংস্থার। একাজ তাই রাষ্ট্রের। কারণ, কোন ব্যক্তি আইন নিজ হাতে তুলে নিতে পারে না। আইন প্রয়োগের স্বার্থে তখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকেই নিজ হাতে তুলে নিতে হয়। ন্যায়নীতির প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রকেও তখন ইসলামী করতে হয়। এটাই নবীজী (সাঃ)র সূন্নত। প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তির যেমন বিশেষ চরিত্র থাকে, তেমনি বিশেষ ও বৈশিষ্ঠ্যপূর্ণ চরিত্র থাকে মুসলিম রাষ্ট্রেরও। সে চরিত্রটাই অমুসলিম রাষ্ট্র থেকে তাকে আলাদা করে। মুসলিম রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সে প্রবল চরিত্রটি হলো ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং পাপের প্রতিরোধ। মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা, যারা এমন কাজ করে তারাই সফলকাম। মুসলিম রাষ্ট্রের রাজনীতি ও সংস্কৃতি এজন্যই কাফের দেশের রাজনীতি ও সংস্কৃতি থেকে পৃথক। কারণ কাফের দেশে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও পাপের প্রতিরোধের সে প্রবল প্রেরণাটি থাকে না। তাই ভারতে বা অন্য কোন অমুসলিম দেশে যেভাবে পতিতাবৃত্তি, সূদী ব্যাংক, মদ্যপান, জুয়ার ন্যায় পাপকর্ম আইনগত ন্যায্যতা পায় সেটি বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশে অনাকাঙ্খিত।  

শয়তানের চেতনা বিশ্বজনীন। শয়তান চায় তার বাহিনী একক উম্মাহ হিসাবে বিশ্বজুড়ে কাজ করুক। তাই ভারত,রাশিয়া বা অন্য যে কোন দেশের নগ্নতার নায়কদের সাথে বাংলাদেশের নায়কদের একাকার হতে বাধা থাকে না। এক দেশের মার্কসবাদীগণ তাই হাজারো মাইল দূরের মার্কসবাদীদের সাথে একাত্ব হয়ে যায়। মার্কিন বা ইউরোপীয়রাও তাই বাংলাদেশী এনজিও নেতাদের সাথে গলায় গলায় একাত্ম হয়ে একই লক্ষ্য ও একই মিশন নিয়ে কাজ করে। এসব এদেশীয় পার্টনারদের গায়ে আঁচড় লাগলে লন্ডন,ওয়াশিংটন বা প্যারিসে তাই প্রতিবাদের ঝড় উঠে। সতীর্থদের শুধু প্রশংসাই নয়,, তাদেরকে তারা নবেল প্রাইজও জুটিয়ে দেয়। একই কারনে ভারতীয় শাহরুখ খান ও তার রাশিয়ান নর্তকীরা বাংলাদেশে প্রচুর সমাদার পায়। বিপুল অর্থও পায়। তাদের সাথে নেচে গেয়ে একাকার হয় বহু হাজার বাংলাদেশী সতীর্থরাও। বাংলাদেশের মত একটি মুসলিম দেশে অশ্লিলতার এসব নায়কেরা যেরূপ বাজার পেয়েছে সেটি কোন ঈমানদারকে শংকিত না করে পারে না। বাংলাদেশ বিশ্বের একটি দরিদ্র দেশ। বহু কোটি মানুষ পেট ভরে দুই বেলা খাবারও পায় না। অথচ এমন একটি দেশে কয়েক ঘন্টার অনুষ্ঠানের একটি টিকেট বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজার টাকায়। সামনের সারিতে মূল্য ছিল আরো অধিক। প্রায় ২৫ হাজার মানুষ সেটি দেখেছে। বহু হাজার মানুষ টিকিট না পেয়ে আফসোস করেছে। মলমূত্রের উপর কতটা মাছি বসলো সেটি দেখে বোঝা যায় সে নোংরা পরিবেশে মাছির সংখ্যাটি কত বিশাল। তেমনি অশ্লিল নাচ বা পতিতাপল্লির খরিদদারদের বিপুল সংখ্যা দেখেই বোঝা যায় দেশ কতটা নৈতিকতাহীন ও দুর্বৃত্ত কবলিত।এজন্য কি জটিল হিসাব নিকাশের প্রয়োজন হয়?      

শয়তানের কোন ধর্মগ্রন্থ নাই, ইবাদতের কোন বিধানও নাই। তবুও শয়তানের পথে পথভ্রষ্টতার চর্চা কমেনি। বরং দিন দিন তা প্রবলতর হচ্ছে। এ পথভ্রষ্টতা বাঁচিয়ে রাখায় সমাজ ও রাষ্ট্রে যে গুলি ভূমিকা রাখে তা হলো অশ্লিল নাচ,গান,কবিতা,নাটক,পুজা-পার্বন ইত্যাদি। নবীজী (সাঃ)র সময় আরবের কাফেরদের কোন ধর্মগ্রন্থ ছিল না। তাদের কোন পয়গম্বরও ছিল না। কিন্তু তাদের সে অধর্ম চর্চায় হাজার হাজার বছরেও কোন বাধা পড়েনি। আল্লাহর অবাধ্য করা ও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করার কাজে হাতিয়ার হিসাবে কাজ দিয়েছে মদ্যপান,অশ্লিলতা এবং ব্যাভিচারের ন্যায় নানা পাপ। এগুলো পরিণত হয়েছিল তাদের সংস্কৃতিতে। এরূপ আদিম অসভ্যতার চর্চায় জ্ঞানের প্রয়োজন পড়ে না। প্রাচীন প্রস্তর যুগের অজ্ঞতা নিয়েও সেটি সম্ভব। আরবের কাফেরদের তাই কোন ধর্মগ্রন্থ বা বিদ্যাবু্দ্ধির প্রয়োজন পড়েনি।

 

টার্গেট কেন বাংলাদেশ?

বাংলাদেশ ১৬ কোটি মানুষের দেশ। দেশের শতকরা ৯০ ভাগ জনসংখ্যা মুসলমান। এ বিপুল সংখ্যক মানুষের মুসলমান রূপে বেড়ে উঠার মধ্যে তাবত বিপক্ষ শক্তি বিপদ দেখতে পায়। ফলে বাংলাদেশে ইসলামকে পরাজিত করা এবং অধর্মের চর্চাকে প্রসার দেয়া শুধু ভারতের স্ট্রাটেজী নয়,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলসহ সকল পাশ্চাত্য শক্তিরও। ফলে পরিকল্পিত ভাবে শুরু হয়েছে নানা দেশ থেকে শয়তানের শত শত দ্রুত আগমনের। এরা আসছে নানা বেশে। আসছে এনজিও-উপদেষ্টা রূপে,আসছে সাংস্কৃতিক কর্মী রূপে। ইসলামের বিজয় রুখতে তারা দেশের বহু হাজার এনজিওর সাথে নিবিড় পার্টনারশিপ গড়ে তুলেছে। ফলে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এদেশে এতটা প্রকট। মুসলিম দেশ হলে কি হবে,আইন-আদলতে শরিয়তী বিধানের কোন স্থান নেই।এবং বিলুপ্ত হচ্ছে ইসলামী মূল্যবোধ।

দেশ কোন দিকে যাবে সেটি শুধু রাজনীতির ময়দান থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় না, নিয়ন্ত্রিত হয় সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দান থেকেও। বাংলাদেশের ইসলামের পক্ষের শক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়েছে তো এমন এক প্রবল সাংস্কৃতিক জোয়ারের কারণেই। বাংলায় ইসলামের জোয়ার যখন প্রবলতর হচ্ছিল এবং মানুষ যখন লাখে ইসলাম কবুল করছিল তখন সে জোয়ার রোধের সামর্থ্য হিন্দু ধর্মের ছিল না। কিন্তু সে সময় চৈতন্যদেব ও তার বৈষ্টম-বৈষ্টমীগণ শুরু করে ভাববাদী নাচ-গানের জোয়ার যা অচিরেই ইসলামের জোয়ার থামিয়ে দেয়। ফলে সেদিন ইসলাম বাংলায় সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্ম হতে পারিনি। আজও  ইসলামের জাগরন রুখার সামর্থ হিন্দু ধর্মের নাই, সমাজবাদ বা মার্কসবাদেরও নেই। কিন্তু সে সামর্থ আছে অশ্লিল নাচ-গান-সম্বলিত অপসংস্কৃতির। শয়তানের এটি শক্তিশালী অস্ত্র। তাই ইসলামের বিপক্ষ শক্তির এটিই মোক্ষম অস্ত্র। তাই শাহরুখ খান ও তার সতীর্থদের বাংলাদেশের আগমন শুধু যেমন এই প্রথম নয়,শেষও নয়। এ প্রবাহ লাগাতর চলতেই থাকবে। বাংলাদেশে সে জোয়ারকে তীব্রতর করতে অগণিত টিভি চ্যানেল গড়ে উঠেছে, বাংলাদেশকে ঘিরে ভারতও বহু টিভি স্টেশন খুলেছে। ফলে লাগাতর বর্ষন শুরু হয়েছে ইসলামের বিরুদ্ধে। তাই বাংলাদেশের মুসলমানদের সামনে দুর্দিন। এটা শুধু রাষ্ট্র বাঁচানোর নয়,ধর্মকে বাঁচানোরও। আর ধর্ম চেতনা দুর্বল হলে রাষ্ট্র বাঁচানো কি আদৌ সম্ভব হবে? দেশের আর্থিক বা সামরিক বল নেই আগ্রাসী শক্তির মোকাবেলার। কিন্তু ইসলামী চেতনার বল থাকলে আনবিক বিশ্বশক্তিকেও পরাজিত করা যায়। জনসংখ্যায় বাংলাদেশের এক-পঞ্চমাংশ হয়েও দরিদ্র আফগানগণ সেটা প্রমাণ করেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। ষাটের দশকে আলজেরিয়ানগণ প্রমাণ করেছে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি লেবাননের হিযবুল্লাহ প্রমাণ করেছে ইসরা্রলের বিরুদ্ধে। ইসলামের পক্ষ নিলে মহান আাল্লাহও তখন পক্ষে দাঁড়ান। ফেরেশতারা তখন হাজির হন রণাঙ্গণে।এ নিয়ে মুসলমানের মনে কি সামান্যতম সন্দেহও থাকতে পারে?  আর থাকলে কি তাকে মুসলমান বলা যায়? ইসলামের সে দুর্জেয় শক্তি নিয়ে শয়তান অজ্ঞ নয়। তাই শয়তানী শক্তি ইসলামী চেতনা বিনাশে হাত দিয়েছে। আল্লাহর সাথে মুসলমানের সম্পর্ক ছিন্ন হয় তো এপথেই। দেশটিতে শত শত শয়তানের দূত আগমনের হেতু তো এটাই।  ২৬/১২/১০   

 

 

 

 

 

                       

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *