দেশ নিয়ে ভাবনা-তিন

১.

নবীজী (সাঃ)র হাদীসঃ করুণাময় মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে দয়া ও মাগফিরাত লাভ ছাডা স্রেফ নিজের নেক আমলের বলে কেউ জান্নাত পাবে না। তবে আল্লাহতায়ালার দয়া ও মাগফিরাত পাওয়ার জন্যও কিছু শর্ত আছে। ব্যক্তিকে যেমন ঈমানদার হতে হয়, তেমনি বাঁচতে হয় তাঁর হুকুমের বিরুদ্ধে সর্বপ্রকার বিদ্রোহ থেকে। আল্লাহতায়ালার যে কোন হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ অসম্ভব করে তাঁর পক্ষ থেকে দয়া ও মাগফিরাত লাভ। বিদ্রোহ থেকে বাঁচার সাথে সাথে মহান আল্লাহতায়ালার অনুগত বান্দা রূপে তাঁর ইচ্ছা পূরণে বিনিয়োগ করতে হয় তাঁরই দেয়া জান ও মাল। আল্লাহতায়ালার ইচ্ছা পূরণের অর্থঃ দেশের আদালতে তাঁর সার্বভৌমত্ব ও শরিয়তী আইনের প্রয়োগ। সে সাথে ব্যক্তি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতি অঙ্গণে সিরাতুল মুসতাকীমের তথা কোর’আনের বিধান মেনে চলা। পবিত্র কোর’আনের ঘোষণাঃ ইনিল হুকমু ইল্লা লিল্লাহ। অর্থঃ হুকুম তথা আইন দেয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহর। ঈমানদারের দায়িত্ব সে আইন মেনে চলা। মুসলিম জীবনে এগুলি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় –যা নির্ধারণ করে মুসলিম রূপে তার বাঁচা বা মরার বিষয়টি।    

আদালতে শরিয়তের আইন না মানার অর্থ মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বিদ্রোহ। সেটি সিরাতুল মুসতাকীম থেকে চরম বিচ্যুতি। বিচ্যুতি নিয়ে কেউ জান্নাতে পৌঁছতে পারে না। তাই দেশে যত মসজিদ-মাদ্রাসাই থাকুক না কেন, আদালতে শরিয়তের বিধান না থাকলে বুঝতে হবে সে দেশের মানুষ আল্লাহর পথে তথা সিরাতুল মুস্তাকীমে নাই। শরিয়তের পথ ছাড়া যে পথ -সেটি মূলতঃ শয়তানের পথ। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে অতি কঠোর হুশিয়ারি শুনানো হয়েছে সুরা মায়েদার ৪৪, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে, (কোরআনে) নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী যারা বিচার-কাজ পরিচালনা করে না তারা কাফের…, তারা জালেম…. এবং তারা ফাসেক। কাফের ব্রিটিশদের হাতে অধিকৃত হওয়ার আগে বাংলা ও ভারতের মুসলিমদের মাঝে শরিয়ত না মানার বিপদটি অজানা ছিল না। ফলে সিরাজুদ্দৌলা ও মোগল শাসনের শেষ দিন পর্যন্ত দেশের সকল আদালতে শরিয়তি আইনের বিচার ছিল। কাফের ব্রিটিশেরা সেটি বিলুপ্ত করেছিল। ব্রিটিশ শাসনের বিলুপ্তি ঘটলেও সে শরিয়তী বিধানের আর প্রয়োগ হয়নি; এখনো রয়েছে কাফেরদের প্রবর্তিত কুফরি আইন। এটি সবারই জানা কথা, বাংলাদেশের আদালতে শরিয়তের আইন নেই। বাংলাদেশে নিজেদেরকে যারা মুসলিম রূপে দাবী করে তাদের সংখ্যাটি প্রায় ১৬ কোটি। কিন্তু ব্রিটিশ প্রবর্তিত কুফরি আইন সরিয়ে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার সে আকুতি কই? কোথায় সে লড়াই? আদালতে কুফরি আইনের বিজয় নিয়ে কি মুসলিম রূপে বাঁচা যায়? যারা নিজেদের আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আশেক রূপে দাবী -এই কি তাদের আল্লাহপ্রেম ও রাসূলপ্রেমের নমুনা? কথা হলো, দেশের আদালত ও রাজনীতি কাফেরদের বিধান ও আইনের বিজয় বাড়িয়ে কি পরকালে মহান আল্লাহতায়ালার করুণা ও মাগফিরাত পাওয়া যাবে? তাই যারা পরকাল নিয়ে ভাবে, তাদের রাজনীতির বিষয়টি শুধু দেশে রাস্তাঘাট, চাকুরি-বাকুরি ও কল-কারখানা বৃদ্ধির বিষয়টি নয় বরং অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রূপে প্রাধান্য পায় মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে মাগফিরাত লাভের বিষয়টিও। কাফের ও মুসলিমের রাজনীতির মাঝে মূল ভিন্নতা বস্তুতঃ এক্ষেত্রটিতে।     

২.

ঈমান এবং মহান আল্লাহতায়ালার পথে জান-মালের বিনিয়োগ –মুমিন ব্যক্তির জীবনে এ দুটি বিষয় একত্রে চলে। ঈমান থাকলে আল্লাহতায়ালার পথে বিনিয়োগ স্বাভাবিক ভাবেই আসতে বাধ্য। যেমন উত্তাপ না থাকলে বুঝতে হয়, সেখানে কোন আগুণ নাই। তেমনি ব্যক্তির জীবনে আল্লাহতায়ালার পথে বিনিয়োগ না থাকলে বুঝতে হবে তার ঈমানের ভান্ডারটি শূণ্য। কারণ, ঈমান অনুযায়ী প্রতিটি মু’মিনকে প্রবল ভাবে বিশ্বাস করতে হয়, তাঁর জান-মাল তাঁর নিজের নয়। সেটি মহান আল্লাহতায়ালার কাছে বিক্রয়কৃত সম্পদ। ঈমানদার শুধু সে জান ও মালের আমানতদার মাত্র। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহতায়ালার নিজের ঘোষণাটি হলো: “নিশ্চয়ই আল্লাহ কিনে নিয়েছেন মুমিনদের জান ও মাল, এ মূল্যে যে তারা পাবে জান্নাত। ফলে তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে,তারা (ইসলামের শত্রুদের) হত্যা করে এবং নিজেরাও নিহত হয়….”(সুরা তাওবা, আয়াত ১১১)

 

উপরে উল্লেখিত বিক্রয়নামার শর্ত অনুযায়ী মুমিনের কাজ হলো, মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত পথে তাঁর কেনা জান ও মালকে ফেরত দেয়া। ফেরত দেয়ার সে পথটি হতে হবে তাঁরই নির্দেশিত পথে। সে পথটি হলো ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদের পথ। পবিত্র কোর’আনে সে বিষয়েও বার বার গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাই ঈমানদার হওয়ার দাবী আছে অথচ মহান আল্লাহর পথে জানমালের বিনিয়োগ নাই –এমন হওয়াটি মুনাফিকের লক্ষণ। মুনাফিকদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের সবচেয়ে কঠোরতর আযাব।

৩.          

ঈমানের দাবী করাটি সহজ। বাংলাদেশে যারা সূদ-ঘুষ খায়, গুম-খুন ও ভোট-ডাকাতির রাজনীতি করে এবং শরিয়তের প্রতিষ্ঠায় অঙ্গিকারহীনতাই যাদের রাজনীতির মূল চরিত্র -সেসব সেক্যুলারিস্টগণও জোর গলায় নিজেদের ঈমানদার হওয়া দাবী করে। কিন্তু তারা কি আদৌ ঈমানদার?  ঈমানদার কাকে বলে -সে সংজ্ঞাটি দিয়েছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। এবং সেটি পবিত্র কোর’আনের সুরা হুজরাতের ১৫ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে, “ঈমানদার একমাত্র তারাই যারা ঈমান আনলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর এবং অতঃপর মুক্ত হলো সর্বপ্রকার সংশয় থেকে এবং নিজেদের জান ও মাল নিয়ে জিহাদ করলো আল্লাহর রাস্তায়। (ঈমানের দাবীতে) এরাই হলো সত্যবাদী।” মহান আল্লাহতায়ালা এখানে জিহাদকে ঈমানের অবিচ্ছেদ্দ্য অঙ্গ রূপে ঘোষণা দিয়েছেন। অর্থাৎ যার জীবনে জিহাদ নাই তার মাঝে ঈমানও নাই।  

 

পবিত্র কোর’আনে ঘোষিত ঈমানের সে সংজ্ঞাটি নবীজী (সাঃ)র সাহাবাগণ বুঝেছিলেন। সে সংজ্ঞারই বাস্তব নজির রেখে গেছেন তাঁরা। তাই তাদের জীবনে শুধু নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত ছিল না, ছিল জিহাদও। মহান আল্লাহতায়ালার পথে জান ও মালের বিনিয়োগ বাড়াতে কিছু পঙ্গু ছাড়া এমন কোন সাহাবা ছিলেন না যিনি জিহাদে নামেননি। সে জিহাদে সাহাবাদের শতকরা ৭০ ভাগের বেশী শহীদ হয়েছেন।

৪.

যারা শহীদ হয়, রোজ হাশরের বিচার দিনের অপেক্ষায় তাদের থাকতে হয় না। তাঁরা সরাসরি বিনা হিসাবে প্রবেশ করে জান্নাতে। পবিত্র কোর’আনে মহান রাব্বুল আ’লামিন এটিকেই মানব জীবনের সবচেয়ে বড় বিজয় রূপে আখ্যায়ীত করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আজ ক’জন মুসলিম সে মহা বিজয়ের পিছনে দৌড়াচ্ছে? বরং বাস্তবতা হলো, বেতন পেলে কাফের শক্তির চাকর-বাকর হওয়ার জন্য দুই পায়ে খাড়া এমন ব্যক্তির সংখ্যা কোটি কোটি। নিজেদের মুসলিম রূপে পরিচয় দিলে ইসলামের দুষমনদের জন্য তারা জান দিতেও রাজি। বিগত দুইটি বিশ্বযুদ্ধে তারা লাখে লাখে যোগ দিয়েছে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ বাহিনীতে। এবং সেটি মুসলিম ভূমিতে মুসলিম হত্যায় ও মুসলিম ভূমি অধিকৃত করার কাজে। তাদের মাঝে ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম এবং জাতীয় বীর আতাউল গণি ওসমানি। এসবই ইতিহাস। ইসলামশূণ্য এ সেক্যুলার চেতনার অনুসারিরাই একাত্তরে কাফের অধিকৃত রাষ্ট্র ভারতে গিয়েছিল এবং ভারতীয় কাফেরদের অস্ত্র কাঁধে নিয়ে মুসলিম হত্যায় নেমেছিল। এবং আজও এরাই সমর্থন দিচ্ছে কাশ্মিরে ভারতীয় বাহিনীর গণহত্যা ও ধর্ষণকে।  বলছে সে হত্যা ও ধর্ষন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এরাই আজ অসম্ভব করে রেখেছে বাংলাদেশে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার ন্যায় ফরজ বিষয়কে। বাংলাদেশের মুসলিমদের অজ্ঞতা শুধু কোর’আন-হাদীস ও ইসলামের ইতিহাস নিয়ে নয়, বরং গভীর অজ্ঞতা হলো ইসলামের শত্রুদের চেনার ক্ষেত্রেও। এবং সে অজ্ঞতার কারণেই বা্ংলাদেশ অধিকৃত হয়েছে ইসলামের শত্রুদের হাতে।

৫.

লেবাননের জনসংখ্যা মাত্র ৫০ লাখ। কিন্তু সম্প্রতি লেবাননের রাস্তায় দিনের পর দিন লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নেমেছিল। তাতেই পতন ঘটেছে প্রধানমন্ত্রী সা’দ হারিরী সরকারের। একই ভাবে সরকারের পতন ঘটেছে জর্জিয়া, সূদান ও আলজিরিয়ায়। ৫ মাস যাবত রাস্তায় আন্দোলন চলছে হংকংয়ে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি এবং ঢাকার জনসংখ্যা দেড় কোটি। বিশ লাখ লোক রাস্তায় নামলে ঢাকার সবগুলি রাস্তা মিছিলে পূর্ণ হয়ে যেত। ঢাকার সকল রাস্তায় কি মিছিল বন্ধ করা কি সম্ভব হতো। এরূপ মিছিল কয়েক সপ্তাহ ধরে চললে সরকার কি গদিতে থাকতে পারতো? কিন্তু প্রশ্ন হলো, অসভ্য স্বৈরাচার হটিয়ে সভ্য ভাবে বাঁচার সে রুচি বাংলাদেশীদের মাঝে কতটুকু?

৬.

আল্লাহতায়ালার পবিত্র কথাগুলো নিয়েই পবিত্র কোর’আন। মানব জাতির জন্য এটিই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ দান। তার চেয়ে বড় বেয়াদব ও পথহারা আর কি কে হতে পারে, যে ব্যক্তি লেখাপড়া জানা সত্ত্বেও পবিত্র কোর’আন বুঝার কোন চেষ্টাই করলো না। প্রশ্ন হলো, এমন বেয়াদব এবং পথভ্রষ্ট ব্যক্তির দোয়া কি আল্লাহর দরবারে কখনো কবুল হয়? এরূপ বেয়াদবি এবং পথভ্রষ্টতা নিয়ে দোয়া কবুলের স্থান আরাফাতে গিয়ে কাঁদলেও কি দোয়া কবুল হয়? মহান আল্লাহতায়ালা তো তাদের দোয়া শুনেন যারা তাঁর নির্দেশে সাড়া দেয়। সে পরম  হুশিয়ারিটি এসেছে সুরা বাকারার ১৮৭ নম্বর আয়াতে।

৭.

আলু-পটলও মূল্য দিয়ে কিনতে হয়। জান্নাত কিনতে হয় নিজের যোগ্যতা, অর্থ ও রক্ত মহান আল্লাহর পথে জিহাদে বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে। তাই শুধু নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত এবং দোয়া-দরুদ নয়, সেরূপ নানা ইবাদতের সাথে জান্নাতের মূল্য পরিশোধে নবীজী (সাঃ)র প্রতিটি সাহাবাকে জিহাদের ময়দানে নামতে হয়েছে। যারা নামেনি তাদেরকে মুনাফিক বলা হয়েছে। অথচ সে মুনাফিকগণ নামাজ পড়েছে নবীজী (সাঃ)র পিছনে মসজিদে নববীর পবিত্র মেঝেতে।  

৮.

আল্লাহতায়ালার কাছে হিসাব দেয়ার আগে নিজের হিসাবটি নিজে নেয়া উচিত। নিজের হিসাবের খাতায় সবচেয়ে বেশী নেকী যোগ হয়, আল্লাহর রাস্তায় জান ও মালের বিনিয়োগের মাধ্যমে। ইসলামকে বিজয়ী করতে প্রতিটি সাহাবী তাই জিহাদে নেমেছেন এবং বেশীর ভাগ সাহাবা শহীদ হয়েছেন। প্রশ্ন হলো, শহীদ হওয়া দূরে থাক, আজ ক’জন মুসলিম ইসলামের পক্ষে কথা বলে? ইসলামের বিপক্ষ শক্তির সাথে আপোষ করা এবং তাদের জুলুমবাজীর সামনে নীরব থাকা কি নবীজী (সাঃ)র সূন্নত।  

৯.

প্রতিটি ব্যক্তির ভান্ডারে মহান আল্লাহতায়ালা-প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ নিয়ামতটি হলো তার দৈহিক শক্তি ও বুদ্ধিমত্তা। এ দু’টি নেয়ামতের সুষ্ঠ বিনিয়োগে পৃথিবী পৃষ্ঠে নির্মিত হতে পারে উচ্চতর সভ্যতা, এবং প্রতিষ্ঠা পেতে পারে বিশ্বময় শান্তি। প্রাথমিক কালের মুসলিমগণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিতে পেরেছিলেন তো এ পথেই। বিছানায় পড়ে মৃত্যুতে আল্লাহর দেয়া শ্রেষ্ঠ সে নিয়ামতের অপচয় ঘটে। সাহাবাগণের বুদ্ধিমত্তা হলো, তারা নিয়ামতের সে অপচয় থেকে বাঁচায় অতি সচেনত ও সচেষ্ট ছিলেন। তাই তারা মহান আল্লাহতায়ালা-প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ নিয়ামতগুলির যথাযত বিনিয়োগের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার খুঁজতেন। আজকের মুসলিমদের থেকে এক্ষেত্রটিতেই সবচেয়ে বড় পার্থক্য।

এ পার্থিব জীবনে মৃত্যু আছে, কিছু পরকালে মৃত্যু নাই। সাহাবাগণ সেটি বিশ্বাস করতেন এবং চাইতেন সে মৃত্যুহীন জীবনে নেয়ামত  ভরা জান্নাত।  তারা জানতেন জান্নাতের ন্যায় সে শ্রেষ্ঠ পুরস্কারটি শুধু দোয়া-দরুদ, নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাতে মেলে না। সেটি জানমালের কোরবানি চায়। তাই অধিকাংশ সাহাবা দোয়া-দরুদ, নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাতের পাশাপাশি জিহাদে নেমেছেন এবং জিহাদের ময়দানে ইসলামের শত্রুদের হত্যা করেছেন এবং নিজেরাও শহীদ হয়েছেন। এমনও নজির আছে, শহীদ হওয়ার জন্য শুধু নিজেই দোয়া করতেন না, এক সাহাবী আরেক সাহাবীকে সে জন্য দোয়া করতে অনুরোধ করতেন। সে চেতনা ও কোরবানীর কারণে মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে তারা চিত্রিত হয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রূপে। অথচ বাংলাদেশে মুসলিমগণ সে চেতনা ও কোরবানীর পথ থেকে এতটাই দূরে সরেছে যে তারা দুর্বৃত্তিতে ৫ বার বিশ্বরেকর্ড গড়েছে। এবং নিজ দেশে মেন নিয়েছে ইসলামের শত্রুপক্ষের অধিকৃতিকে। এরপরও কি বাঙালী মুসলিমগণ আশা করে যে, পরকালে জান্নাত দ্বারা পুরস্কৃত হবে?

১০.

শহীদের রক্ত জীবিতদের ঈমানশূণ্যতা দূর করে। তাই যে দেশে যত বেশী শহীদের সংখ্যা, সে দেশে ততই সৃষ্টি হয় পোক্ত ঈমানদার। আর ঈমানদার হওয়ার অর্থই হলো শুধু নামায-রোযা নিয়ে বাঁচা নয়, আমৃত্যু জিহাদ নিয়ে বাঁচা। তাই, দেশে ইসলামের বিপক্ষ শক্তির বিজয় থাকবে অথচ ঈমানদারদের জীবনে জিহাদ থাকবে না -সেটি কি ভাবা যায়? এবং জিহাদের প্রাঙ্গণে মুসলিমগণ কখনোই একাকী থাকে না, তাদের সাথে থাকে খোদ মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর ফিরেশতারাও। আফগানিস্তানে তাই রাশিয়া ও আমেরিকার ন্যায় বিশ্বশক্তিও পরাজিত হয়েছে। প্রশ্ন হলো, ভোট-ডাকাত হাসিনা এবং তার প্রভু ভারত কি রাশিয়া ও আমেরিকার চেয়ে শক্তিশালী? দুর্বৃত্ত-মুক্ত সমাজ নির্মাণে প্রয়োজন শুধু শতভাগ বিশুদ্ধ জিহাদের। দুর্বৃত্তির নির্মূল এবং সুনীতির প্রতিষ্ঠায় এটিই তো মহান আল্লাহর হাতিয়ার। এটিই কি নবীজী (সাঃ)র সূন্নত নয়? জনগণের জীবনে জিহাদ না থাকার কুফলটি অতি বিশাল। তখন জনগণের জীবনে নেমে আসে সূদ, ঘুষ, গুম, হত্যা, অশ্লিলতা, ধর্ষণ এবং সন্ত্রাসের আযাব। তারই প্রকৃষ্ট নমুনা তো আজকের বাংলাদেশ। ৩/১১/২০১৯

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *