ঘরের শত্রু, বিপন্ন মুসলিমত্ব এবং উম্মাহর নিরাপত্তা সংকট

ফিরোজ মাহবুব কামাল

মুসলিম বিশ্বজুড়ে বিপন্নতার মুখে যেমন মুসলিমত্ব, তেমনি বিপন্নতার মুখে পড়েছে মুসলিম উম্মাহর রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামরিক শক্তি। সংকটের মুখে পড়েছে নবীজী (সা:)’র আমলের ইসলাম। উম্মাহর এই সংকট কালে প্রতিটি মুসলিম দেশেই ঘরের শত্রু রূপে আবির্ভুত হয়েছে সেক্যুলারিস্টগণ। ইসলামের বিধানকে প্রতি মুহুর্ত ধারণ করা এবং সেটিকে বিজয়ী করার জিহাদ নিয়ে বাঁচার মধ্যেই মুসলিমত্ব। অথচ সেক্যুলারিস্টগণ সেটি হতে দিতে রাজী নয়। তারা রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, আইন-আদালত ও বুদ্ধিবৃত্তি থেকে ইসলামকে বাদ দিতে বলে। ইসলাম নিয়ে বেড়ে উঠাকে বলে সাম্প্রদায়িকতা ও পশ্চাদপদতা। ইসলামের পূর্ণ অনুসরণকে তারা মৌলবাদ, উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ -এমন কি সন্ত্রাসও বলে। অথচ মুসলিম জীবনে ইসলামের পূর্ণ অনুসরণটি না থাকাটিই হলো মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। এ বিদ্রোহ মানুষকে শয়তানে পরিণত করে এবং জাহান্নামে নেয়।

ইসলামে অতি পবিত্র ইবাদত হলো রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা, সংহতি ও ভূগোল বৃদ্ধিতে নিজের সকল সামর্থ্যের বিনিয়োগ। প্রকৃত ঈমানদার এ কাজে যেমন অর্থ, শ্রম ও মেধা দেয়, তেমনি প্রাণও দেয়। এ নিয়েই তো ইসলাম ও মুসলিমের গৌরবের ইতিহাস। অথচ সেক্যুলারিস্টগণ কাছে সেটি অসহ্য। তাদের কথা, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, যুদ্ধবিগ্রহ ও সংস্কৃতিতে মুসলিমদের বাঁচতে হবে ইসলামকে বাদ দিয়ে। তাদের কাছে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টতা মানেই জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ। বাংলাদেশের মত দেশে ভোটডাকাতি, ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার, কুফরী আইন, পতিতা পল্লী, মদের দোকান, জুয়ার ক্যাসিনো, অশ্লিল নাচগান, জনগণের রাজস্বের অর্থে মুর্তি নির্মাণ -এসবই আইনসিদ্ধ। কিন্তু শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলো নবীজী (সা:)’র প্রতিষ্ঠিত ইসলাম নিয়ে ময়দানে নামা। নবীজী (সা:)’র প্রতিষ্ঠিত সে ইসলামে ছিল ইসলামী রাষ্ট্র, কুর’আন শিক্ষা, শরিয়তী আইনের বিচার, অন্যায়ের নির্মূলে ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠায় বিরামহীন জিহাদ, শুরা ভিত্তিক শাসন এবং প্যান-ইসলামিক মুসলিম ভাতৃত্ব। সে ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্টতা নিয়েই ছিল সাহাবায়ে কেরামের জীবন। এবং সে ইসলামই মুসলিমদের বিজয় ও ইজ্জত দিয়েছিল। এনেছিল মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য। সে সাহায্যের বরকতে মুসলিমগণ আবির্ভুত হয়েছিল সর্ববৃহৎ বিশ্বশক্তি রূপে। কিন্তু নবীজী (সা:)’র সে ইসলাম বাংলাদেশে আজ বেঁচে নাই। সে ইসলামের প্রতিষ্ঠা নিয়ে আন্দোলন করাও আজ অপরাধ।

মু’মিনদের অর্থদান ও আত্মদানে মুসলিম ভূমিতে শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করলে চলে না, বিলুপ্ত করতে হয় দুর্বৃত্তির ও দুর্বৃত্তদের শাসন এবং প্রতিষ্ঠা দিতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তী আইনের। এবং দুর্বৃত্ত নির্মূলের এ কাজে লড়াই তথা জিহাদও এসে যায়। কারণ ক্ষমতাসীন সশস্ত্র দুর্বৃত্তগণ কখনোই বিনা লড়াইয়ে দখলদারী ছাড়ে না। দুর্বৃত্ত নির্মূলের এ জিহাদে সামান্যতম আপোষ চলে না। যে দেশে জিহাদ নাই -সে দেশে ইসলামের পূর্ণ পালনও নাই। সেরূপ পরিবেশও গড়ে উঠে না। রাষ্ট্র ও তার প্রতিষ্ঠানগুলি তখন অধিকৃত হয় চোর-ডাকাত, ভোটডাকাত এবং নানারূপ অপরাধী দুর্বৃত্তদের হাতে। ইসলাম পালন তখন নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত, তাসবিহ পাঠের ন্যায় ইবাদতে সীমিত থেকে যায়। বাঁচতে হয় আদালতে শরিয়ত-পালন ছাড়াই। অথচ শরিয়ত-পালন প্রতিটি ঈমানদারের উপর বাধ্যতামূলক, যারা শরিয়ত পালন করেনা তাদেরকে মহান অআল্লাহতায়ালা কাফের, জালেম ও ফাসেক বলেছেন। (সূত্র: সুরা মায়েদা, আয়াত ৪৪,৪৫,৪৭)।  বাংলাদেশে অবিকল সেটিই হয়েছে। অথচ মুসলিমদের গৌরব কালে মুসলিমদের জানমাল, শ্রম ও মেধার বেশীর ভাগ ব্যয় হয়েছে জিহাদে। ফলে নির্মিত হয়েছে বিশ্বশক্তির মর্যাদা সম্পন্ন বিশাল রাষ্ট্র এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা। কিন্তু সেক্যুলারিস্টদের কাছে ইসলামের এ পবিত্র মিশন নিয়ে বাঁচাই হলো সন্ত্রাস।

সেক্যুলারিস্টদের মূল যুদ্ধটি বস্তুত ইসলামের মূল এজেন্ডার বিরুদ্ধে। মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি গড়া এবং মুসলিম রাষ্ট্রের মানচিত্রকে ক্ষুদ্রতর করার মধ্যেই তাদের আনন্দ। গড়া নয়, মুসলিম দেশ ভাঙ্গাই তাদের এজেন্ডা। তাই সেক্যুলারিস্টগণ চায়নি উসমানিয়া খেলাফত বেঁচে থাকুক। তাই খেলাফত বিনাশে তারা যুদ্ধ শুরু করে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ ও ফরাসী কাফেরদের সহায়তা নিয়ে। এরাই ২২টুকরোয় বিভক্ত আরব মানচিত্রের জন্ম দিয়েছে। এবং প্রতিটি রাষ্ট্রেই মৌলিক মানবিক অধিকার ও গণতন্ত্রের বাসস্থান হয়েছে কবরস্থানে। নেকড়ে যেমন সর্বত্রই সমান হিংস্র, সেক্যুলারিস্টগণও সর্বত্রই ইসলামের বিরুদ্ধে নৃশংস ও যুদ্ধমুখী। পাকিস্তানের বাঙালি উভয় অবাঙালি সেক্যুলারিস্টগণ চায়নি মুসলিম বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান টিকে থাকুক। জন্ম থেকেই সেক্যুলারিস্টগণ এ রাষ্ট্রটির বিনাশে লেগে যায়।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্যান ইসলামিক চেতনার ভিত্তিতে। এ চেতনার প্রতি সেক্যুলারিস্টদের কোনরূপ ভালবাসা থাকার কথা নয়। কারণ, যেখানেই ইসলাম, সেখানেই তাদের ঘৃণাটি সহজাত। ১৯৪৭ সালে তারা ইসলামী চেতনাসমৃদ্ধ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা যেমন চায়নি, তেমনি চায়নি দেশটি বেঁচে থাকুক। জন্ম থেকেই পাকিস্তানের সবচেয়ে সেক্যুলার প্রতিষ্ঠানটি হলো দেশটির সেনা বাহিনী। দেশটির ক্যান্টনমেন্টগুলি হলো পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সুরক্ষিত দ্বীপ। বিলেতের কোন ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকিস্তানের ক্যান্টনমেন্টগুলির কোন সাংস্কৃতিক ভিন্নতা ছিল। মুসলিম জনগণের রাজস্বের অর্থে ক্যান্টনমেন্টগুলিতে মদের সরবরাহ নিশ্চিত হত। সেটি প্রথমবারের মত বন্ধ করে প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক। আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খানের ন্যায় যারাই এ সেনাবাহিনীর প্রধান রূপে কাজ করেছে তারা কখনোই ইসলাম ও কোন মুসলিম দেশের খেদমত করার জন্য সেনা বাহিনীতে যোগ দেয়নি। তারা যোগ দিয়েছিল ব্রিটিশ কাফেরদের স্বার্থের সুরক্ষা দিতে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের শেষ হয়, কিন্তু যারা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিল তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে থেকে যায় ব্রিটিশ এজেন্ডাকে সফল করতে।

হিন্দুদের ন্যায় ব্রিটিশগণও চায়নি পাকিস্তান সৃষ্টি হোক। গণ-আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান দাবী মেনে নিতে বাধ্য হলেও এই ব্রিটিশ কাফেরগণ কখনোই চায়নি সর্ববৃহৎ দেশটি বেঁচে থাকুক। যেখানেই মুসলিমদের স্বার্থ, সেটির বিনাশই তাদের রাজনীতি ও সমরনীতি। চায়নি ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের স্বার্থে প্রতিপালিত সেক্যুলার মুসলিম অফিসারগণও। কারণ এরা ছিল একই আদর্শের।  ব্রিটিশের সে এজেন্ডাই সফল করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে থেকে যাওয়া ব্রিটিশের প্রতিপালিত অফিসারগণ। প্রেসিডেন্ট  আইয়ুব খান ছিল তাদেরই একজন। আইয়ুব খান ছিল উগ্র সেক্যুলারিস্ট। ১৯৫৮ সালে তাঁর ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শুরু হয় পাকিস্তান ধ্বংসের প্রক্রিয়া। সামরিক ক্যু’র পূর্বে পাকিস্তানে ছিল বহুদলীয় পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৮৫৮ সাল এই ১১ বছরে পাকিস্তান তিনজন বাঙালি প্রধানমন্ত্রী ছিল। কিন্তু আইয়ুব ক্ষমতায় এসেই পার্লামেন্টারী প্রথাকে বিলুপ্ত করে। তার ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৯ -এই ১১ বছরে বাঙালিগণ পায়নি পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসার সুযোগ। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের মাঝে শুরু হয় বঞ্চনার ক্ষোভ। পাকিস্তানে ধ্বংসের কাজ এভাবেই ত্বরান্বিত করা হয়।

আইয়ুব খানের যুদ্ধটি ছিল ইসলামের বিরুদ্ধেও। ইসলামে শরিয়তে আইনের প্রতিটি বিধান দিয়েছেন মহান আল্লাহতায়ালার। এ আইনে পরিবর্তন আনার অধিকার কোন বান্দার নাই; সেটি হারাম। বান্দার দায়িত্ব স্রেফ সেটির প্রয়োগ। আইয়ুব খানই সর্বপ্রথম পাকিস্তানে ইসলামের পারিবারিক আইনে সংশোধনের ন্যায় হারামটি কাজ করেন। তার আমলে সেনাবাহিনীর মেসে মদ্যপান বৈধ ছিল। নারী দেহ সম্ভোগও অপরাধ গণ্য হতো না। তার আমলেই ড. ফজলুর রহমানকে দিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজের বদলে ৩ ওয়াক্ত নামাজের চেষ্টা হয়। গণবিক্ষোভের ফলে সে উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব ছিলেন অখণ্ড পাকিস্তানেরও ঘরের শত্রু। প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় তিনি ষড়যন্ত্র করেন পাকিস্তান ভাঙ্গার। সে বিষয়ে সাক্ষ্য পেশ করেছেন তারই আইনমন্ত্রী জাস্টিস মুনীর তার “Jinnah to Zia” বইতে। জাস্টিস মুনীরকে আইয়ুবকে বলেছিলেন, কীরূপে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের শাসন থেকে নাজাত মেলে তার একটি পথ বের করতে। আইয়ুব খান চাইতো, পূর্বপাকিস্তান হয় আলাদা হয়ে যাক অথব দুর্বল কনফেডারেশন কাঠামোয় শামিল হোক। জাস্টিস মুনীর আইয়ুবের প্রস্তাবটি জনৈক পূর্ব পাকিস্তানী রাজনৈতিক নেতা জনাব রমিজুদ্দীনকে বলেন। তখন উক্ত নেতা জাস্টিস মুনীরকে বলেন, “পাকিস্তানে তোমার সংখ্যাগরিষ্ঠ না, আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ?” যেহেতু আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠরা, আমরা কেন পাকিস্তান ভাঙ্গবো? ইচ্ছে হলে, তোমরা পশ্চিম পাকিস্তানীরা পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে যাও। অনেকের অভিমত, মুজিব ১৯৬৬ সালে যে ৬ দফা পেশ করেছিলেন -সেটিই তৈরী করে দিয়েছিল আইয়ুবের নির্দেশে তারই এক আমলা। অনেকেই বলেন ৬ দফা প্রণয়ন করেছিল আইয়ুব খানের চৌকস ও বিশ্বস্থ আমলা আলতাফ গওহর। বলা হয়, আলতাফ গওহরই তার বাঙালি সহকর্মী আরেক আমলা রুহুল কুদ্দুসকে দিয়ে মুজিবের হাতে ৬ দফা পৌঁছে দেন। বাঙালি-ভীতির কারণে আইয়ুব খান ভাবতেন, ৬ দফার ভিত্তিতে ফেডারেল সরকার দুর্বল হলে কেন্দ্রের উপর পূর্বপাকিস্তানীদের ক্ষমতা কমবে।

অপর দিকে আইয়ুবের খানের কাছে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা অর্থ ছিল স্রেফ পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা দেয়া। সমগ্র পাকিস্তান তার কাছে পাকিস্তান গণ্য হয়নি। স্থলবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর অধিকাংশ স্থাপনা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। ফলে ১৯৭১’য়ে ভারতের দেড় লাখ সৈন্যের হামলাকে মুকাবেলা করতে হয় মাত্র ৪৫ হাজার পাকিস্তানী  সৈন্যকে। ভারতের বিশাল বিমান বাহিনীর মুকাবেলা করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমলের কয়েকখানী স্যাবর জেট। নৌ জাহাজ বলতেও তেমন কিছু ছিল। এ থেকে বুঝা যায়, একাত্তরে পাকিস্তান সেনা বাহিনীর পরিকল্পনাটি ছিল আত্মসমর্পণের, যুদ্ধজয় বা প্রতিরক্ষার নয়। এটি ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। কথা হলো সেক্যুলারিস্টদের থেকে এর চেয়ে বেশী কিছু আশা করা যায়?

অথচ ঈমানদারের কাছে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাটি সর্বশ্রষ্ঠ ইবাদত তথা জিহাদ। এ জিহাদ শাহাদত তথা বিনা হিসাবে জান্নাতের পথ খুলে দেয়। কিন্তু সেক্যুলারিষ্টদের কাছে সেটি স্রেফ বেতনভোগী চাকুরি। সেনা বাহিনীতে তাদের যোগ দেয়ার পিছনে কাজ করে উচ্চ বেতন, রেশন ভাতা, অভিজাত এলাকায় বিনামূল্যে প্লট, এবং প্রশাসনে ও রাজনীতিতে প্রতিপত্তির সুযোগ। ফলে যুদ্ধে তাদের লক্ষ্যটি দেশ বাঁচানো হয় না, বরং গুরুত্ব পায় প্রাণ বাঁচানো। ফলে যুদ্ধজয়ের চেয়ে বেশী প্রস্তুত থাকের আত্মসমর্পণের জন্য। সেটি যেমন ১৯৭১’য়ে পাকিস্তানে দেখা গেছে, তেমনি  ১৯৬৭ সালে দেখা গেছে আরব বিশ্বে।  ইসরাইলের বিরুদ্ধে মিশর, জর্দান, সিরিয়ার আর্মি একটি সপ্তাহও টিকতে পারিনি। তিনটি দেশের বিশাল সেনাবাহিনী ক্ষুদ্র ইসরাইলের সেনাবাহিনীর  কাছে মাত্র ৬ দিনেই আত্মসমর্পণ করেছে। ১৯৬৭ সালের ঐ যুদ্ধে সিনাই উপত্যাকা, গোলান উপত্যাকা ও জর্দান নদীর পশ্চিম তীরসহ বিশাল আরব ভূমি ইসরাইল দখলে নিয়ে নেয়। সেক্যুলারিস্টদের দ্বারা মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার কাজ যে হয়না -এই হলো তারই প্রমাণ।

অথচ গাজায় হামাসের কয়েক হাজার মুজাহিদ মাসাধিক কাল যাবত ইসরাইলী হামলাকে প্রতিরোধ করেছে এবং অবিরাম বিমান হামলার মুখেও তারা পরাজয় স্বীকার করেনি। একই ভাবে লেবাননে ইসরাইলী হামলা রুখে দিয়েছে হিজবুল্লাহ বাহিনী। এর কারণ, ঈমানদার মাত্রই পরাজয়ের চেয়ে শাহাদতকে তারা বেশী পছন্দ করে। অতীতে এমন মুজাহিদগণই রোমান ও পারসিক এই দুটো বিশ্বশক্তিকে পরাজিত করেছে। তাদের সামনে লক্ষ্য দুটি: হয় বিজয়, নইলে শাহাদত। তাদের কাছে আত্মসমর্পণ বলে কিছু নাই। কিন্তু সেক্যুলারিস্টগণ নিজেদের স্বাধীনতা ও সম্মান হারিয়ে বাঁচতে চায়। কারণ বাঁচার মধ্যেই তাদের সফলতা। প্রাণদান তাদের কাছে বরং আহাম্মকী মনে হয়। এমন সেক্যুলার চেতনার সৈনিকেরা বড় জোর নিজ দেশের নিরস্ত্র জনগণের উপর দখলদারী প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং স্বৈরাচারি সরকারের পাহারাদার হতে পারে, কিন্তু  শত্রুর হামলার মুখে কি মুসলিম দেশের প্রতিরক্ষা দিতে পারে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *