আওয়ামী লীগের মানবহত্যা ও গণতন্ত্রহত্যার রাজনীতি

হত্যাপাগল স্বরাষ্টমন্ত্রী –

আওয়ামী লীগের রাজনীতির মূল এজেণ্ডাটি কি –তা নিয়ে এখনও কি কারো সন্দেহ আছে? সেটি দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা,অর্থনৈতীক উন্নয়ন বা জনকল্যাণ নয়। বরং সেটি যে কোন ভাবে ক্ষমতায় থাকা। এবং সে লক্ষ্যে রাজনৈতীক শত্রুদের নির্মূল। সেটির শুরু শেখ হাসিনা থেকে নয়,তার পিতা মুজিব থেকে। নিছক গদীতে থাকাটি নিশ্চিত করতে শেখ মুজিব গণতন্ত্রকেই কবরে পাঠিয়েছিলেন,এবং প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার। হত্যা করেছিলেন ৩০ হাজারের বেশী রাজনৈতীক নেতা-কর্মী। শেখ মুজিব দেশকে ভিক্ষার ঝুলি রূপে বিশ্বময় পরিচিত করেছিলেন। একমাত্র তার আমলেই মানুষ অভাবের তাড়নায় মাছধরা জাল পড়তে বাধ্য হয়েছিল। আজও  আওয়ামী লীগ মুজিবের সে দেশধ্বংসী নির্মূলের রাজনীতি থেকে বিন্দুমাত্র সরেনি। দেশে সন্ত্রাস বাড়ছে,বাড়ছে দ্রব্যমূল্য,বাড়ছে পানি-গ্যাস-বিদ্যুৎসংকট,বাড়ছে দূর্নীতি –কিন্তু তা নিয়ে সরকারের হুশ নেই। সরকারের নজর স্রেফ বিরোধীদের হত্যা,গুম ও নির্যাতন করায় এবং এভাবে গদীতে থাকায়। সে লক্ষ্যপুরণেই শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে আস্তাকুরে ফেলেছে।

দেশে পুলিশ বাহিনী রয়েছে,র‌্যাব আছে,সেনাবাহিনীও আছে। কিন্তু তাদের দ্বারা রাজনৈতীক শত্রু-নির্মূলের এজেণ্ডাটি ইচ্ছামত পালিত না হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের ময়দানে নামতে বলেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর প্রকাশ্য জনসভায় তাদের প্রতি জামায়াত-শিবির নির্মূলের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো,নির্মূলের অর্থ কি? নির্মুলের অর্থ কাউকে আলিঙ্গণ বা চুম্বন করা নয়। বরং সেটি নিরেট হত্যা। এটি বুঝতে কি বেশী বিদ্যাবু্দ্ধি লাগে? এতদিন দেশে মশামাছি নির্মূলের অভিযান হতো। সে নির্মূলের অর্থ হতো কীটনাশক ঔষধ ছিটিয়ে মশামাছির হত্যা বা বিনাশ। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীগণ আজ  যখন নির্মূলের ঘোষণা দেন তখন দেশ থেকে মশামাছি নির্মূলের কথা বুঝান না। বুঝান রাজনৈতীক শত্রু নির্মূলের। মুজিব আমলে সে শত্রু বলতে বুঝানো হতো জাসদ ও চীনপন্থি কম্যুনিস্টদের। আর এখন ইসলামপন্থিরা।

কোন সভ্যদেশে কোন মন্ত্রী বা রাজনৈতীক দলের কোন নেতা প্রতিপক্ষ নির্মূলের এমন প্রকাশ্য ঘোষণা দিবে সেটি কি ভাবা যায়? এখানে অপরাধ তো হত্যায় উৎসাহ দেয়ার। এটি তো রাজনৈতীক সন্ত্রাস। কোন সভ্য দেশে এ অপরাধে কারো রাজনীতির অধিকার দূরে থাক,তাকে তো নিশ্চিত জেলে যেতে হয়। অথচ মহিউদ্দীন খান আলমগীর এখনও মন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন নির্দেশে হ্ত্যাপাগল খুনীরা যখন রাস্তায় নেমে কাউকে খুন করে -তখন সে খুনের দায়ভার তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। যে দেশে সুস্থ্য আইন-আদালত আছে সে দেশে যে খুন করে তাকেই শুধু জেলে নেয়া হয় না,সে খুনের পিছনে যে গডফাদারটি উৎসাহ জোগায় তাকেও ডান্ডাবেরি পড়ানো হয়। সম্প্রতি নিহত বিশ্বজিৎ দাশের বড় ভাই মানিক দাশ সে মোটা বিষয়টি সহজেই বুঝতে পেরেছেন। তাই ঢাকায় এক সমাবেশে তিনি তাঁর ভাইয়ের খুনের অপরাধে স্বরাষ্টমন্ত্রীকে রিমান্ডে নেয়ার দাবী তুলেছেন।

রাজনৈতীক শত্রু নির্মূলের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আজ থেকে তিরিশ বছর আগে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করেছিল। হত্যা বা নির্মূলের যে রাজনীতিটি সাধারণতঃ বনেজঙ্গলে লুকানো আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসীদের কাজ,আওয়ামী লীগ সে রাজনীতিকেই বাংলাদেশের প্রকাশ্য রাজপথে নামিয়ে আনে। ঢাকার রাজপথে সে সন্ত্রাসী রাজনীতির ভয়ংকর রূপটি দেশবাসী এবং সে সাথে বিশ্ববাসী দেখলো বিশ্বজিত দাশের নৃশংস হত্যার মধ্য দিয়ে। বিশ্বজিৎ অতীতের সকল নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল। সে একজন।হিন্দু। খুনিরা যে ছাত্রলীগের সেটি জানতো বলেই সে নিজের হিন্দু পরিচয়টি বার বার পেশ করেছে। হিন্দুরা যে আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত ভোটব্যাংক সেটি বিশ্বজিৎ তাদের জানিয়ে দিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাতে চেয়েছিল। নইলে সে মরণের মুহুর্তে তার মগজে সে যে হিন্দু সে পরিচয় দেয়ার খেয়াল আসবে কেন? কিন্তু তাতে তাঁর প্রাণ বাঁচেনি। হত্যাপাগল পশুরা কখনো কারো ধর্ম দেখে না,ছাত্রলীগের খুনিদের কাছে বিশ্বজিতের হিন্দুপরিচয়ও তাই গুরুত্ব পায়নি। খুনি তো অন্যকে খুণের আগে তার নিজের বিবেককে আগে খুন করে। বিবেক বেঁচে থাকলে কেউ কি রাজপথের নিরীহ মানুষকে খুন করে? আর ছাত্রলীগ যে এমন খুনীদের দিয়ে পরিপূর্ণ সেটি কি প্রমাণের অপেক্ষা রাখে? বাংলাদেশের হিন্দুদের জমিজমা ও তাদের মন্দিরের ভূমি কোন মাওলানা-মৌলভীর হাতে জবরদখল হয়নি। হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে। সম্প্রতি রাজধানি ঢাকায় এক মন্দিরের বিশাল জমি আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে বেদখল হয়েছে,এবং সে বিষয়ে পত্রিকায় রিপোর্টও এসেছে। আওয়ামী লীগ যে শুধু হিন্দুদের নয়,কোন মানুষেরই বন্ধু হতে পারে না,সেটি বাংলাদেশে বহু মানুষ এখনও বুঝতে না পারলেও বিশ্বজিত প্রাণ দিয়ে বুঝে গেছে।

 

আওয়ামী লীগের খুনের রাজনীতি

প্রশ্ন হলো,ছাত্রলীগে এত খুনি ও এত সন্ত্রাসী কি করে সৃষ্টি হলো? মশা-মাছি হঠাৎ বেড়ে উঠে না,সে জন্য দূষিত পরিবেশ চাই। সন্ত্রাসের পরিচর্যাতেও তেমনি উপযোগী রাজনৈতীক সংস্কৃতি চাই। আওয়ামী লীগ সেটিই সৃষ্টি করেছে। চেঙ্গিস খাঁ ও হালাকু খাঁ দেশজয় ও লুন্ঠনের স্বার্থে তার গোত্রের হত্যাপাগল লোকদের নিয়ে ভয়ংকর এক সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিল। সে বাহিনীর লোকেরা বেড়ে উঠেছিল অতি রোগাগ্রস্ত চেতনা নিয়ে। ভয়ংকর নিষ্ঠুরতাই ছিল তাদের চরিত্রের প্রধান রূপ। লাখো লাখো নিরাপরাধ নারী-পুরুষ,শিশু-বৃদ্ধ মানুষকে সে বর্বর সৈনিকেরা আনন্দচিত্তে হত্যা করতে পারতো। হত্যার পর তাদের কর্তিত মাথা নিয়ে উৎসবও করতো। ঘরবাড়ি,মসজিদ-মাদ্রাসা ও লাইব্রেরীগুলোতে তারা আগুন দিত। বাগদাদ,সমরকন্দ,বোখারার ন্যায় মুসলিম সভ্যতার বিশাল বিশাল নগরগুলিকে তারা উৎসব ভরে ধ্বংস করেছে। এসব নগরীর লাখ লাখ নাগরিকদের তারা হত্যা করেছে। তবে চেতনার এ ভয়ংকর রোগে শুধু হালাকু-চেঙ্গিজ ও তার সেনাবাহিনীর লোকেরাই আক্রান্ত হয়নি। কলেরা-যক্ষা-এইড-য়ের সংক্রামক জীবাণূ সমাজ থেকে নির্মূল হয় না,নানা জনপদে তা বার বার ফিরে আসে। তেমনি সংক্রামক রুগ্ন চেতনাও মারা যায় না। হালাকু-চেঙ্গিজের চেতনাও তাই বহু দেশে বহু হালাকু-চেঙ্গিজ-হিটলারের জন্ম দিয়েছে। শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনারাও যে সে সংক্রামক চেতনায় ভয়ানক ভাবে আক্রান্ত সে প্রমাণ কি কম? তবে মুজিব ও হাসিনা তারা অনুসারিদের নিয়ে কোন ডাকাত দল গড়েননি,হালাকু চেঙ্গিজের ন্যায় কোন সেনাবাহিনীও গড়েননি। গড়েছেন রাজনৈতীক দল। সে দলটি হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। লক্ষ্য,প্রতিপক্ষ বিরোধী দলগুলোর নিরস্ত্র নেতা-কর্মীদের নির্মূল করা এবং দেশের উপর দখলদারি প্রতিষ্ঠা করা। মুজিবের সন্ত্রাস থেকে মাওলানা ভাসানীর ন্যাপ যেমন রক্ষা পায়নি,রক্ষা পায়নি মুসলিম লীগও। রক্ষা পায়নি চীনপন্থি কম্যুনিস্টরা। তেমনি আজ  রক্ষা পাচ্ছে না জামায়াতে ইসলামি ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

চেঙ্গিজ খাঁ ও হালাকু খাঁ’দের বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপনের পিছনে কোন উন্নত আদর্শ ও ন্যায়নীতি ছিল না,ছিল হিংস্র পাশবিকতা। মুজিব ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতীক বিজয়ের পিছনেও কোন উন্নত আদর্শ ও ন্যায়নীতি নাই। শেখ মুজিবের রাজনীতি সবচেয়ে বড় বিজয়টি এসেছিল ১৯৭০ সালে নির্বাচনে। অথচ সেটি এসেছিল নিরেট ধোকাবাজি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে। সে নির্বাচনে অন্য কোন দলকে মুজিব নির্বাচনি প্রচারে নামতেই দেয়নি। শুনিয়েছিলেন আট আনা সের চাল খাওয়ানার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। পাকিস্তান আমলের পূর্ব পাকিস্তানকে তিনি শ্মশান বলেছিলেন,সে শ্মশানের বুকে তিনি বেহেশত নামিয়ে আনার ওয়াদা দিয়েছিলেন। অথচ বাস্তবে উপহার দিয়েছিলেন ভয়ানক দুর্ভিক্ষ -যাতে বহুলক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল। ওয়াদা দিয়েছিলেন বহুদলীয় পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের। অথচ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার। দেশবাসীর সাথে ভন্ডামী আর কাকে বলে? আর তাঁর সন্ত্রাসী দুর্বৃত্তি? তিনি ১৯৭০ সালে ১৮ জানুয়ারিতে পল্টনে তাঁর দলীয় কর্মীরা জামায়াতে মিটিংয়ে হামলা করে তিনজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছিল এবং আহত করেছিল শত শত নিরীহ মানুষ। এভাবে পন্ড করে দিয়েছিল জামায়াতের জনসভা। সে নির্বাচনি জনসভায় মাওলানা মওদূদীর বক্তৃতার কথা ছিল। ঐ একই স্থানে ২৫ জানুয়ারিতে জনসভা ছিল জনাব ফজলুল কাদের চৌধুরির নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগের। সেটিও হতে দেয়নি। সে ময়দানে নূরূল আমীন সাহেবের নেতৃত্বাধীন পিডিপির জনসভাও হতে দেয়নি। এই হলো আওয়ামী লীগের সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতির নমুনা। দলটি ১৯৭০-য়ের নির্বাচনে একই রূপ সন্ত্রাস জারি রেখেছিল রাজধানীর বাইরেও। এভাবে কোন দলকেই তারা জনগণের কাছে যেতে দেয়নি।

যে কোন সভ্যদেশেই গণতন্ত্র হত্যা এক গুরুতর অপরাধ। প্রতিদেশে সে অপরাধে অপরাধীকে প্রাণদন্ড দেয়া হয়। বিলেতে গণতন্ত্র হত্যার অপরাধে দেশের রাজা প্রথম চার্লসকে সপ্তদশ শতাব্দীতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। গণতন্ত্রের হত্যাকারি হুসনী মোবারকে আজ  জেলে রাখা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার দলকে। লিবিয়ার গাদ্দাফীকেও হত্যা করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার দলকে। তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট বিন আলীকে দেশ থেকে পলায়ন করে বাঁচতে হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্র হত্যাকারি শেখ মুজিব ও তার দলের শাস্তি হয়নি। ১৯৭৫ প্রাণ হারিয়ে সে অপরাধের শাস্তি থেকে মুজিব বেঁচে গিয়েছিলেন। মুজিব সেদিন মারা গেলেও আওয়ামী লীগ তাতে বেঁচে গিয়েছিল। নইলে সেদিন সে বাকশালী দুঃশাসনের শাস্তিস্বরূপ আওয়ামী লীগকে শিকড়শুদ্ধ নির্মূল হতে হতো। কিন্তু সেটি না হওয়ায় বিপদ বেড়েছে বাংলাদেশের জনগণের। গণতন্ত্রহত্যাকারি সে দলটি এখনও পুরোন শিকড় নিয়ে বেঁচে আছে এবং আজ  আবার বাকশালী স্বৈরাচার ফিরিয়ে আনার সুযোগ পেয়েছে। ফল দাঁড়িয়েছে,বাংলাদেশে আজ শুধু গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাই বিপন্ন হয়নি,বিপন্ন হয়েছে জনগণের জানমালও। বিশ্বজিৎ খুন হয়েছে,ইলিয়াস আলী গুম হয়েছে এবং বহু জামায়াত-শিবিরকর্মী নিহত ও নির্যাতিত হচ্ছে তো সে বিপন্নতা নিয়েই।

 

আদালত এখন মেঠো আদালত

আওয়ামী আক্রমনের শিকার দেশের বিচার-আদালতও। কারণ স্বাধীন বিচার বাঁচলে দুর্বৃত্ত ও খুনিদের বাঁচাটি অসম্ভব হয়ে উঠে। তাই ডাকাত পাড়ায় ন্যায়-বিচারের সালিশ বসে না। বরং চলে ডাকাত-বিরোধীদের নির্মূলের আয়োজন। তেমন একটি লক্ষ্যকে সামনে নিয়েই আওয়ামী লীগ দেশের আদালতকে মেঠো আদালতে পরিণত করেছে। মেঠো আদালতের সে মডেলটি তারা খাড়া করেছিল নব্বইয়ের দশকে। নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না। কিন্তু ক্ষমতার বাইরে থাকলেও রাজনৈতীক শত্রুনিধনের এজেণ্ডা থেকে তারা সরে দাড়ায়নি। সে এজেণ্ডা নিয়েই তারা সেদিন মাঠে আদালত বসিয়েছিল। সেটি সহরোয়ার্দি উদ্যানের মাঠে। এরূপ মেঠো আদালতে আসামীর বিরুদ্ধে যেমন বহু উকিল থাকে,তেমনি উকিলের চেয়েও পক্ষপাতদুষ্ট বহু বিচারক থাকে। কিন্তু থাকে না আসামীর পক্ষে কোন উকিল। থাকে না আদালতে আসামীর কথা বলার সুযোগ। তেমন একটি মেঠো আদালত নিয়েই আওয়ামী লীগের অহংকার। সে আদালতের মডেল নিয়ে তড়িঘড়ি করে যুদ্ধাপরাধী বিচারের নামে তারা আদালতের বাইরে আরেক আদালত গড়েছে। নাম দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। এ আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে আদালতের সামনে থেকে পুলিশের হাতে সাক্ষীও হাইজ্যাক হয়ে গেছে। আজ  অবধি তার কোন সন্ধান মেলেনি। এই হলো বিচারের নমুনা!কোন কিছুকে আন্তর্জাতিক করতে হলে নিজ দেশের বাইরে অন্যদেশের লোকদের সাথেও তার সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে হয়। ‘দি হেগ’-য়ে যে আন্তর্জাতিক আদালত রয়েছে তাতে নানা দেশের বিচারক যেমন আছে,তেমনি উকিলও আছে। কিন্তু বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক আদালতে সে সবের বালাই নাই। একজন ব্রিটিশ আইনবিদ এ আদালতে আসামী পক্ষের উকিল হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে অনুমতি দেয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের নামে মস্করা আর কাকে বলে!

লক্ষণীয় হলো,নিজামূল হকের ন্যায় যেসব ব্যক্তিদের হাসিনা সরকার বিচারক রূপে বসিয়েছে তারা নব্বইয়ের দশকে সহরোয়ার্দি উদ্যানের মেঠো আদালেতের লোক। বিচারক পদে আসীন হলেও আসলে তারা আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডার। যে আওয়ামী ক্যাডারগণ রাজপথে বিশ্বজিৎদের মত নিরীহ মানুষদের হত্যা করলো তারাই আজ  বিচারকের বেশে ঠান্ডা মাথায় নিরপরাধ মানুষ হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। এ লক্ষ্য তাদের ভবিষ্যতের পরিকল্পনাটি আরো ভয়ানক। শুধু একটি বা দুটি গৃহে ডাকাতি করলে ডাকাতদের অস্তিত্ব বাঁচে না। চাই লাগাতর ডাকাতি। নিজেদের বাঁচার স্বার্থে ডাকাতিকে তারা তাই একটি পেশাগত ইন্সটিটিউশন রূপে বাঁচিয়ে রাখতে চায়। ইসলামপন্থিরা যে আওয়ামী লীগের চিরকালের শত্রু সেটি আওয়ামী লীগ বুঝে। ফলে শত্রুনিধনের সে প্রক্রিয়াকেও তারা যুগ যুগ চালু রাখতে চায়। তাই অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা দিলাওয়ার হোসেন সাঈদী বা মাওলানা নিজামীর মত লোকদের ফাঁসীতে ঝুলিয়েই তারা বিচারের কাজ শেষ করতে রাজি নয়। মানবাধিকার বিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে নিজেদের সকল রাজনৈতীক শত্রুদের নির্মূলের এ ধারাকে তারা যুগ যুগ অব্যাহত রাখতে চায়। তাদের যুক্তি,একাত্তরের রাজাকারদের অনেকের মৃত্যু হলেও নতুন রাজাকার জন্ম নিচ্ছে। এ নতুন রাজাকারদেরও তার বিচার চায়। তাদের খুনের কাজে আদালতের বিচারকদের তারা ব্যবহার করতে চায়। আওয়ামী লীগের নেতাগণ তাদের সে হিংস্র অভিপ্রায়ের কথা গোপনও রাখেনি। আরো ঘোষণা দিয়েছে,স্রেফ জামায়াত নেতাদের বিচার নিয়ে তারা খুশি নয়,জামায়াতের সমর্থণ নিয়ে যারা ক্ষমতায় গিয়েছে তাদেরকেও তারা কাঠগড়ায় তুলবে। অর্থাৎ আদালতে তুলবে বিএনপির নেতাদেরও। তেমন একটি লক্ষ্য পূরণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল নামের এ মেঠো আদালতকে তারা একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে চায়।

কারা একাত্তরে অস্ত্র হাতে ময়দানে ছিল সেটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়,কারো এখন আওয়ামী লীগ ও তাদের প্রভু ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলে এবং কারা শরিয়তের প্রতিষ্ঠা চায় সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলি চিত্রিত হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধ রূপে। শাস্তিযোগ্য অপরাধ রূপে চিহ্নিত হচ্ছে ঘরে জিহাদ ও শরিয়তি বিধান বিষয়ক বই রাখাটিও। এ অপরাধে অপরাধীদের তালিকায় তারা দিন দিন নতুন নাম যোগ করতে থাকবে। এবং যাকে ইচ্ছা তাকে তারা কাঠগড়ায় তুলবে। আদালত এভাবে ব্যবহৃত নির্যাতনের হাতিয়ার রূপে। হিটলারের গ্যাস চেম্বারে গিয়ে ভস্ম হওয়ার জন্য কি ইহুদীদের অপরাধী হওয়ার প্রয়োজন পড়তো? বিশ্বজিৎকে নিহত হওয়ার জন্যও কি অপরাধী হতে হয়েছে? তেমনি আওয়ামী ক্যাডারদের আদালতে শাস্তি পাওয়ার জন্যও কি অপরাধী হওয়ার প্রয়োজন পড়বে? এসব মেঠো আদালতে রায় লেখা হয় গ্রেফতারের বহু আগেই,গ্রেফতার ও বিচারের মহড়া দেয়া হয় শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা পূরণের লক্ষ্যে। সরকার এমন আদালত থেকে শুধু একটি রায়ের জন্য পাগল,বিচারের জন্য নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রধান বিচারপতি নিজামূল হক ও ব্রাসেল্স-এ অবস্থানরত জিয়াউদ্দীনের মাঝের দীর্ঘ স্কাইপী আলোচনায় তো সে সত্যটিই বেরিয়ে এসেছে।

“আমার দেশ” পত্রিকাটি এক অতি সাহসী ও স্মরণীয় কাজ করেছে। সত্য গোপন করা ইসলামে হারাম। আর সেটি প্রকাশ করা অতি পূণ্যময় কাজ। আর “আমার দেশ” যে সত্যটি প্রকাশ করছে সেটি কোন মামূলী বিষয় নয়। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার লাভের সাথে এটি জড়িত। “আমার দেশ” পত্রিকায় বিবরণটি ছাপা না হলে জনগণের সে গুরুত্বপূর্ণ সত্যটি অজানা থেকে যেত। নিজামূল হক নামের এই আওয়ামী ক্যাডারও তখন ইতিহাসে বিচারক রূপে স্বীকৃতি পেয়ে যেত এবং বহাল তবিয়তে থাকতো। প্রশ্ন হলো,বিচারকরূপী আওয়ামী লীগের এমন ক্যাডার কি শুধু নিজামূল হক একা? বাংলাদেশের আদালতগুলি তো তাদের দ্বারা এখন পরিপূর্ণ। এমন বিচারকদের কারণেই তো আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি বেআইনী ঘোষিত হয়ে গেলো। এবং আর গভীর রাজনৈতীক সংকটে গিয়ে পড়লো দেশ। সে রায়ের সাথে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুলের পকেটে চলে গেলে বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণতহবিল থেকে বহু লক্ষ টাকা।

 

শেখ হাসিনার সন্ত্রাস

মুজিব মারা গেছে। কিন্তু মুজিবের গণতন্ত্র হত্যার চেতনাটি মরেনি। তা দারুন ভাবে বেঁচে আছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও ক্যাডারদের মাঝে। বিরোধীদের নির্মূলের নীতিই ছিল মুজিবের রাজনীতি। সে নীতিটি যে আওয়ামী লীগে কতটা প্রকট,সেটি শুধু রাজপথে নিরীহ মানুষ হত্যাতেই প্রকাশ পাচ্ছে না। ফুটে উঠছে নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতেও। সারদা’র পুলিশ এ্যাকাডেমীতে প্রদত্ত এক বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বলেছেন,“পুলিশ যেন ধৈর্যের সাথে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিহত করে।” কিন্তু প্রশ্ন হলো,জামায়াত শিবিরকে কেন প্রতিহত করা হবে? তারা কি বাংলাদেশের নাগরিক নয়? রাজনীতির অধিকার কি তাদের মৌলিক মানবাধিকার নয়? সে অধিকারে হাত দেয়া তো সন্ত্রাস। অথচ সে সন্ত্রাসের রাজনীতিতে নেমেছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ কারো পিতার তালুক বা জমিদারি নয়। বাংলাদেশের মাটিতে শেখ হাসিনা ও তার দলের রাজনীতির যতটা অধিকার আছে, জামায়াত-শিবির কর্মীরও সে পরিমান অধিকার আছে। তা থেকে এক বিন্দু কম নয়। জামায়াত-শিবিরকে প্রতিহত করা ও নির্মূল করা যদি সুস্থ্য রাজনীতি হয়,তবে আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করা ও নির্মূল করাও তো ন্যায্য রাজনীতি। এতে কি দেশে সংঘাত বাড়বে না? এমন প্রতিহত করার রাজনীতি কি কারো মানবাধিকারের উপর হামলা নয়? আর এমন হামলা কি শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ নয়? তাছাড়া রাজনীতিতে কোন দলকে প্রতিহত করার দায়িত্ব কেন পুলিশ নিবে? বরং পুলিশের দায়িত্ব হলো,যারা অন্যদের রাজনীতি প্রতিহত করার নামে তাদের মানবিক অধিকারে হাত দেয় তাদেরকে গ্রেফতার করা ও কোর্টে চালান দেয়া।

যে কোন দেশেই বিভিন্ন দলের মাঝে রাজনৈতীক লড়াই থাকে। তবে সেটি হতে হবে রাজনৈতীক ভাবে। পুলিশ দিয়ে নয়। দলীয় গুন্ডাদের দিয়েও নয়। সরকার কি জানে না যে দেশ আজ ভয়ানক বিপর্যয়ের মুখে। চোরদের হাতে দেশের শেয়ার বাজার থেকে ২০-৩০ হাজার কোটি টাকা চুরি হয়ে গেছে। হলমার্ক গ্রুফ একাই চুরি করে নিয়েছে সোনালী ব্যাংকের বহু হাজার কোটি টাকা। দূর্নীতির কারণে পদ্মা ব্রীজের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। চোরদের দৌরাত্ম দেখে বিশ্বব্যাংক ঋণদান থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ পথেঘাটে সন্ত্রাসীদের হাতে নিঃস্ব হচ্ছে,বহু হাজার মানুষ পথেঘাটে মারা যাচ্ছে,শত শত মহিলা ধর্ষিতাও হচ্ছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী এনিয়ে পুলিশকে সক্রিয় হতে নসিহত করেননি। কারণ একটাই। তা হলো,এসব খুনি,সন্ত্রাসী,চোরডাকাত এবং ধর্ষকগণ প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতীক শত্রু নয়। তারা সরকারের ব্যর্থতার সমালোচকও নয়। আাওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ দাবী করে তারা রাস্তাতে নামে না,হরতালও করে না। ফলে তাদের দমন করাটি সরকারের প্রায়োরিটি নয়। কিন্তু যারা তাঁর অপশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে রাস্তায় নামে, তিনি তাদের নির্মূল চান। এবং পুলিশকে নির্দেশ দিচ্ছেন তাদেরকে প্রতিহত করতে।

 

বিশ্বজিৎ দাশের খুনই কি প্রথম খুন?

বিশ্বজিৎকে নির্মম হত্যার পর ডেইলী স্টার,সমকাল,কালের কন্ঠ,মানবজমীণ,প্রথম আলোর ন্যায় আওয়ামী ঘরানার পত্রিকাগুলিও এরূপ নিষ্ঠুর হত্যার নিন্দা করেছে। তারাও বিচার দাবী করেছে। আওয়ামী রাজনীতির সমর্থক কলামিস্টদের অনেকে নিন্দা করে কলামও লিখেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো,বাংলাদেশের রাজনীতিতে কি এটাই প্রথম খুন? এই প্রথম যেন তাদের বিবেক মৃত অবস্থা থেকে জেগে উঠলো। এটি কি এজন্য যে বিশ্বজিৎ দাশ একজন হিন্দু? মুজিব আমলে হাজার হাজার মানুষ বিশ্বজিৎয়ের ন্যায় নিহত হয়েছে। হাজার হাজার নিহত হচ্ছে হাসিনার আমলে। কিন্তু কোন একটি খুনেরই কি বিচার হয়েছে? মুজিব আমলে যেমন হয়নি, হাসিনার আমলেও হচ্ছে না। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর জামায়াতের সমাবেশে হামলা করে ৬ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল। হত্যার পর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাশের উপর নাচানাচি করেছিল। সে হত্যা কি বিশ্বজিৎ হত্যার চেয়ে কম নৃশংস ছিল? মিছিল করা মানবিক অধিকার। সে অধিকার খুনের মধ্য দিয়ে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল। তাই এ অপরাধ যেমন খুনের অপরাধ তেমনি মানাবাধিকার বিরোধী অপরাধ। কিন্তু আওয়ামী লীগের সে খুনিদের আজও  শাস্তি হয়নি। তা নিয়ে কোন মামলাও হয়নি। কিন্তু ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে সে নৃশংস হত্যা নিয়ে কি আজকের ন্যায় পত্রপত্রিকায় এত লেখালেখি হয়েছিল? ছাপা হয়েছিল কি কোন ছবি? হয়েছিল কি এত টিভি টক শো? না হওয়ার কারণ কি এটি,নিহতরা হিন্দু ছিল না? এরশাদের শাসনামলে রাজশাহীর দুইজন শিবির কর্মীকে যেভাবে খুন করা হয়েছিল সেটি কি কম বীভৎস ও নিষ্ঠুর? শিবির কর্মীদের মাথা ইটের উপর রেখে অন্য ইট দিয়ে জোরে জোরে গুতিয়ে গুতিয়ে মাথার খুলি ভাঙ্গা হয়েছিল। আদালতে সে নৃশংস  খুনের বিচারও হয়েছিল। খুনিদের শাস্তিও হয়েছিল। কিন্তু সে খুনিদের শাস্তি ভোগ করতে হয়নি। সে গুরুতর অপরাধের শাস্তি দুর্বৃত্ত এরশাদকে দিয়ে শেখ হাসিনা মাফ করিয়ে নিয়েছিল। কিভাবে মাফ করিয়েছিল সে বিবরন দিয়েছেন এরশাদের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান তার স্মৃতিচারণ মূলক বইতে। এরশাদ তখন তাঁর গদী বাঁচাতে মিত্র খুঁজছিল। মিত্র রূপে কাছে ভেড়াতে চাচ্ছিল শেখ হাসিনাকে। সে অছিলায় হাসিনাকে দাওয়াত করে প্রেসিডেন্টের অফিসে আনা হয়।আতাউর রহমান খান লিখেছেন,এরশাদের অফিসে ঢুকে শেখ হাসিনা গোঁ ধরলেন,রাজশাহীর শিবিরকর্মী হত্যার অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের প্রথমে শাস্তি মাফের ওয়াদা দিতে হবে,এবং সেটির পরই তিনি আলোচনায় বসবেন। এরশাদের কাছে তার গদীর স্বার্থটাই ছিল বড়। খুনিদের শাস্তি তার কাছে কোন বিবেচ্য বিষয়ই ছিল না। নিজেদের গদী বাঁচাতে এমন স্বৈরাচারিরা সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের সাজা মাফ করতে যেমন রাজী,তেমনি প্রস্তুত হাজার হাজার খুনিকে রাস্তায় নামাতেও। এক্ষেত্রে স্বৈরাচারি এরশাদ,স্বৈরাচারি হাসিনা ও স্বৈরাচারি মুজিবের মাঝে কি কোন পার্থক্য আছে? স্বৈরাচারি আইয়ুবও উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নিজের গদী বাঁচাতে শেখ মুজিবের উপর থেকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ন্যায় অতি সত্য মামলাটিও তুলে নিয়েছিলেন। এবং তাঁর ন্যায় এক দেশধ্বংসী ভয়ংকর অপরাধীকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন। পাকিস্তান বাঁচানোর চেয়ে আইয়ুব খানের কাছে গদী বাঁচানোই সেদিন বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

প্রতি পেশার লোকেরাই নিজ পেশায় সফলতা নিয়ে উৎসব করে। খুনের পর তাই উৎসব করে খুনিরা। পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে,বিশ্বজিৎয়ের হত্যার পরএ খুনিরা তাই উৎসব করেছে। বিশ্বজিৎয়ের রক্তে হাত রাঙিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতার জন্মদিনে খুনিরা সে রাতে নাচাচাচি করেছে। নব্বইয়ের দশকে জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতারা তেমনি এক উৎসব করেছিল। সেটি ছিল ধর্ষনে সেঞ্চুরির উৎসব। সে খবরও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। সমগ্র মানব ইতিহাসে এ ছিল এক বিরল পৈশাচিক উৎসব। জঘন্য অপরাধীরও এমন রুচী সচারচর থাকে না। পতিতাপল্লিতে এমন উৎসব হয় না। কিন্তু এমন অপরাধীদের ভিড় আওয়ামী লীগে। তৎকালীন হাসিনা সরকারও সে জঘন্য অপরাধীদেরকে শাস্তি দেয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি। তাকে খুঁজে তাঁর পুলিশ তাই গ্রেফতার করেনি।

অপরাধ কর্মের পর উৎসব করা –এটি ছাত্রলীগ বা যুবলীগ কর্মীদের ব্যক্তিগত বদ-অভ্যাস নয়,বরং এটিই আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি। সে সংস্কৃতির গুরু খোদ শেখ মুজিব। সিরাজ সিকদারের হত্যার পর তাই শেখ মুজিব সংসদে দাঁড়িয়ে উৎসব-মুখর আনন্দ নিয়ে বলেছিলেন,“কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?” আওয়ামী নেতাকর্মীদের মাঝে তেমনি এক উৎসব মুখরতা নিয়ে এসেছিল ১৯৭১য়ের ডিসেম্বরে ঢাকা স্টেডিয়ামে। সে উৎসবে হাতপা বাঁধা রাজকারদের বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছিল কাদের সিদ্দিক। বাংলাদেশের কোন লেখক,কোন সাংবাদিক বা কোন পত্রিকা সম্পাদকের চোখে সে নৃশংসতা সেদিন নৃশংসতা মনে হয়নি। অথচ কাদের সিদ্দিকীর হাতে রাজকার হত্যার সে উৎসবটি নৃশংস বর্বরতা রূপে ধরা পড়েছিল বিদেশী সাংবাদিকদের চোখে। টাইম ম্যাগাজিনসহ বিশ্বের বহু পত্রিকায় সে নির্মম হত্যাকান্ডের ছবি ছাপা হয়েছিল। সে বীভৎসতা সেদিন বিশ্বময় প্রচারও পেয়েছিল। আজ  যারা বিশ্বজিৎ হত্যার পর মানবতার বড় বড় বুলি আওড়াচ্ছেন তারাও সেদিন কাদের সিদ্দিকীর সে বর্বরতাকে নিয়ে উৎসব করেছিল।

ডাকাতের পল্লীতে অন্যায়কে অন্যায় এবং জুলুমকে জুলুম বলা যায় না। বরং সে সেখানে হয় নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা নিয়ে উৎসব। হিটলারের জামানায় গ্যাস চেম্বারে লক্ষ লক্ষ ইহুদীর মৃত্যুতেও জার্মানীতে তাই প্রতিবাদ হয়নি। প্রতিদেশে ফ্যাসিস্টরা একই ভাবে মানুষের বিবেককে হত্যা করে। বাঙালীর বিবেকে আওয়ামী লীগ যে কতটা পচন ধরিয়েছে আওয়ামী লীগ,যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের কর্ম ও আচরণ হলো তারই প্রমাণ। আজও  সে পচন নিয়ে বেঁচে আছে দলটির হাজার হাজার নেতা,কর্মী ও সমর্থক। বাংলাদেশ তো এসব দুর্বৃত্তদের কারণেই দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে ৫ বার প্রথম হয়েছে।

 

খুনিরা কি শাস্তি পাবে?

বিশ্বজিৎয়ের হত্যার পর অনেকেই আজ  বিচার চাচ্ছে। বিচার চাইলেই কি বিচার পাওয়া যায়? জামগাছ থেকে আম পাওয়া যায় না। ফিরাউন-আবু লাহাব-আবু জেহেলদের সুবিচার সম্ভব হয়ে তাদের বিনাশের কেন প্রয়োজন দেখা দিল? ডাকাতদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু বিচার শুরু হলে ডাকাত দল বাঁচে না। ডাকাত-সর্দারগণ তাই বিচারে আগ্রহী নয়। বরং কোন ডাকাত কোথাও বিপদে পড়লে ডাকাত-সরদারের দায়িত্ব হয় সে বিপদ থেকে তাকে উদ্ধার করা। চেঙ্গিজ খান কখনোই তার নৃশংস খুনি সৈনিকদের বিচার করেনি। হিটলারও করেনি। মুজিব-হাসিনাও করেনি। বরং উৎসাহ দিয়েছে বিরোধীদের নিধনে। অথচ তাদের আশে পাশে ভয়ানক অপরাধীদের  দিবারাত্র অবস্থান। পদ্মা-ব্রীজ নিয়ে দূর্নীতির সাথে সাবেক যোগযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেন জড়িত সে প্রমাণ নানা মহল থেকে হাজির করলেও হাসিনা তার বিচার হতে দিতে রাজী নয়। চাপের মুখে দূদক মামলা রুজু করলেও সেটি করেছে আবুল হোসেনকে বাদ দিয়ে। কারণ,আবুল হোসেন দলের ক্যাডার। হাসিনার রাজনীতির বড় এজেণ্ডা হলো সাজাপ্রাপ্ত দলীয় ক্যাডারদের যে কোন ভাবে মুক্ত করানো। ভারতকে সে দেশের ভূমি,পদ্মার পানি বা দেশের মধ্যদিয়ে করিডোর দিতে রাজী। কিন্তু নিজদলের অপরাধীদের বাঁচাতে তাঁর নীতিতে কোন নড়চড় নেই। বাংলাদেশের আদালতে সাজা পেয়েছে এমন খুনিদের মধ্য থেকে ২৫ জনকে বিগত ৪০ বছরে প্রেসেডেন্টের পক্ষ থেকে ক্ষমা করা হয়েছে। সে ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে ক্ষমা করা হয়েছে আওয়ামী লীগ শাসনামলে। কারণ, সাজপ্রাপ্তরা এসব খুনিরা হলো আওয়ামী লীগের ক্যাডার।

শেখ মুজিবের ন্যায় শেখ হাসিনাও জানে,আওয়ামী লীগের শক্তির উৎস দলের সুবোধ কর্মীরা নয়। বরং সেটি ফেনীর জয়নাল হাজারি,লক্ষিপুরের আবু তাহের,নারায়নগঞ্জের শামিম উসমান,ঢাকার ডা.ইকবালের মত হাজার হাজার সন্ত্রাসী খুনি। যে সন্ত্রাসী শক্তির বলে হালাকু-চেঙ্গিসের হাতে বিশাল ভূমি অধিকৃত হয়েছিল,সে সন্ত্রাসী শক্তির জোরেই বাংলাদেশে আজ  আওয়ামী লীগের হাতে অধিকৃত। নইলে দলটি বহু পূর্বে আবর্জনার স্তুপে গিয়ে পড়তো। ক্ষমতায় থাকা অবধি আওয়ামী লীগ তাই এ খুনের বিচার করবে না। মুজিবের শাসনামলে হাজার হাজার বিহারী নারীপুরুষকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। বহু হাজার বিহার রমনীকে ধর্ষনও করা হয়েছে। বিহারীদের কয়েক লক্ষ ঘরবাড়ি ও দোকান-পাট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা জবর দখল করে নিয়েছে। কোন সভ্য দেশে এমন অপরাধ হয় না। আজ  রামুতে বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে কৃত বাঙালীর অপরাধের বিরুদ্ধে কথা উঠছে,কিন্তু একাত্তরে বিহারীদের বিরুদ্ধে যে অকথ্য নির্যাতনটি হলো তার বিরুদ্ধে বাঙালীর প্রতিবাদ কৈ? গণদাবীর চাপে যদি বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার হ্য়ও তবুও কি খুনিদের শাস্তি হবে? আদালতের পক্ষ থেকে তো বহু আওয়ামী লীগ কর্মীরই শাস্তি হয়েছে। কিন্তু সে শাস্তি প্রয়োগের সামর্থ কি আদালতের আছে? সেটি তো শেখ হাসিনার হাতে। তাঁর তাঁবেদার প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহামান তো দিবারাত্র অপেক্ষায় বসে আছেন এমন খুনিদের মুক্ত করে দিতে।

 

চেষ্টা কলংক ঢাকার

বাংলাদেশ ডাকাতপাড়া নয়,বর্বর দস্যুকবলিত হালাকু-চেঙ্গিজের দেশও নয়। দেশবাসী সবাই আওয়ামী লীগের ক্যাডারও নয়। এ দেশের বহু কোটি মানুষ মানবিক পরিচয় নিয়ে বাঁচতে চায়। আওয়ামী লীগের ভয় বেড়েছে মানবতাসম্পন্ন এসব মানুষদের নিয়ে। বিশ্বজিৎ হত্যার পর আওয়ামী লীগের ভাবমুর্তি যে দেশে-বিদেশে ড্রেনে গিয়ে পড়েছে সেটি দলটির অনেকেই টের পেয়েছে। পত্র-পত্রিকায় খুনিদের হামলার রক্তাত্ব ছবি ছাপার বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক বিষয়। রাজনৈতীক খুনের এরূপ সচিত্র বিবরণ আর কখনো এভাবে সামনে আসেনি। এমন বীভংস বর্বরতার নিন্দা জানাতে বেশী মানবতা লাগে না। ফলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের কান্ড দেখে আম-জনগণও ধিক্কার দিচ্ছে। মিডিয়ার এ সাহসী কর্ম শুধু খুনিদেরই নয়,আওয়ামী লীগ সরকারের আসল চেহারাও জনগণের সামনে জাহির করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের চরিত্রের উপর এখন আর কোন পর্দা নাই।

বিপদ বুঝে আওয়ামী লীগ এখন শুরু করেছে চুনকালি মাখা ভাবমুর্তির উপর হুয়াইটওয়াশের চেষ্টা। শুরু করেছে নতুন প্রপাগাণ্ডা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ দাবি করেছেন,হামলাকারীরা ছাত্রলীগের কর্মী নন। অথচ তারা যে উভ্য়ই মিথ্যুক সেটির প্রমাণও এসেছে। খুনিরা যে ছাত্রলীগের কর্মী তা নিয়ে প্রথম আলো ১৫/১২/১২ তারিখে একটি বিশাল অনুসন্ধানী রিপোর্ট ছেপেছে। সেটির কিছু অংশ এরূপঃ “বিশ্বজিৎ দাশ হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্তরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। কয়েকজনের পরিবার ও এলাকাবাসী এবং ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে,বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এইচ এম কিবরিয়ার পুরো পরিবারই আওয়ামী লীগের সমর্থক। গতকাল গ্রামের বাড়িতে গেলে কিবরিয়ার বাবা প্রথম আলোকে বলেন,আগে কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করে কিবরিয়া। কিবরিয়ার বড় ভাই আসাদুজ্জামান শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। গ্রেপ্তারকৃত কাইয়ুম মিয়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মী। রাজন তালুকদারের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বিশ্বজিৎ বেশি আহত হন বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতারা। রাজন পুরো এলাকায়ই ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত।গতকাল গ্রামের লোকজন জানায়,রাজন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। এলাকায়ও দলের মিছিল-মিটিংয়ে সে অংশ নেয়।রাজনের বাবা প্রথম আলোকে বলেন,“রাজন ছাত্রলীগের রাজনীতি করে। সে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়কের (সাবেক) কাছাকাছি থাকে।” একই কথা বলল গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া সাইফুলের পরিবার। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র সাইফুলের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার চন্দনাবাড়ীর পূর্বপাড়ায়। সাইফুলের এলাকার সহপাঠীরা প্রথম আলোকে বলেন,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর সাইফুল ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে।রাশেদুজ্জামান ওরফে শাওনের গ্রামের বাড়ি খুলনার পাইকগাছার নাছিরপুর গ্রামে। বাবা লুৎফর রহমান বলেন,“ঢাকায় যাওয়ার পরে ছাত্রলীগ করা শুরু করল।’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবদুল্লাহ আল মামুনের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার খলিলপুর সরদারপাড়ায়। আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা বলেন, মামুনকে তাঁরা ঢাকার ছাত্রলীগের একজন বড় নেতা হিসেবেই জানেন। চাপাতি দিয়ে বিশ্বজিৎকে কুপিয়েছে রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল। তাঁর বাবা আনসার মিয়া বলেন,‘ঢাকায় রাজনীতিতে জড়িয়ে সে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ে।’ মীর মো.নূরে আলম ওরফে লিমন রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নের শুল্লিপাড়া গ্রামের মীর মো.নুরুল ইসলামের ছেলে। নুরুল ইসলাম বংশানুক্রমে আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে তিনি জানান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বজিৎ হত্যায় জড়িত যাঁদের নাম-ছবি গণমাধ্যমে এসেছে তাঁরা প্রত্যেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মী।”

 

হেলেপড়া দেয়ালে শক্ত ধাক্কা

আওয়ামী লীগের দেয়াল এখন হেলে পড়েছে। এ দেয়াল গুড়িয়ে দেয়ার এখনই সময়। প্রয়োজন শুধু আরেকটি শক্ত ধাক্কার। দেরী হলে তারা আবার দেয়াল শক্ত করার সুযোগ পাবে। আওয়ামী লীগ শুধু জামায়াত-শিবিরের শত্রু নয়। স্রেফ বিএনপিরও নয়। হিযবুত তাহরীরেরও নয়। বরং তাদের শত্রুতা সমগ্র দেশবাসীর সাথে। গ্রামে হিংস্র বাঘ ঢুকলে বা গ্রামবাসীর ঘরে আগুণ লাগলে কি বিবাদ চলে? সবাইকে জোট বেঁধে তখন সে বাঘ বধ করতে হয় বা আগুণ থামাতে হয়। গ্রাম বাঁচলে গ্রামের রাজনীতিও বাঁচবে। তেমনি বিদেশীদের কোলে পুষ্ট স্বৈরাচারিদের হাত থেকে বাংলাদেশ বাঁচলে বাংলাদেশের রাজনীতিও বাঁচবে। বিপদের এ মুহুর্তে যে কোন বিবাদই বিপর্যয় আনবে। এ মহুর্তে প্রয়োজন হলো দল-মত নির্বিশেষে সকল দেশবাসীর মাঝে একতা। বাংলাদেশে এখন আওয়ামী লীগের দস্যুদের হানা পড়েছে। এ দস্যুদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে না পারলে বহু বিশ্বজিৎকেই লাশ হতে হবে। বহু নিরীহ মানুষকে জেলের নির্যাতন পোহাতে হবে। বহু লোককেই গুম হতে হবে। বহু নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ী ও দোকানপাটেও আগুণ লাগবে। এবং সমগ্র দেশ ভরে উঠবে প্রচন্ড অশান্তিতে।

তাছাড়া প্রতিটি ঈমানদারের একটি বাড়তি দায়িত্বও আছে। সেটি নিছক রাজনীতির নয়, বরং জিহাদের। আওয়ামী লীগ শুধু জুলুমবাজই নয়,তারা যে ইসলামের বিপক্ষ শক্তি সে সত্য তো তারা গোপন করিনি। আল্লাহ হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহই তাদের রাজনীতির মূল কথা। আল্লাহর পবিত্র শরিয়তী বিধানকে তারা আবর্জনার স্তুপে রাখতে চায়। অথচ প্রতিটি ঈমানদারের উপর ঈমানী দায়বদ্ধতা হলো সেটিকে দেশের আইন-আদালতে বসানোর। মু’মিন ব্যক্তি শুধু রুটি-রুজীর ধান্ধায় বাঁচে না। তাকে বাঁচতে হয় আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ের সার্বক্ষণিক ভাবনা নিয়ে। ফলে এমন জালেম এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে এমন বিদ্রোহীর বিরুদ্ধে জিহাদ যে খালেছ জিহাদ তা নিয়ে কি কোন সন্দেহ থাকে? বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য আজ বরং মহাসৌভাগ্যের দিন। সেটি এজন্য যে,জিহাদের পবিত্র অঙ্গণে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমি। জিহাদের পবিত্র ভূমির তালাশে তাকে এখন আর ফিলিস্তিন,সিরিয়া,কাশ্মির,চেচনিয়া,আরাকান বা আফগানিস্তানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। সে ভূমি এখন তার পায়ের তলায়। হানাদার কুচক্রি শয়তান এখন তার হাতের নাগালে। হজে গিয়ে শয়তানের মুর্তিতে পাথর মারা থেকে এ সাক্ষাৎে শয়তানের মুখে আঘাত হানার সওয়াব কি কম? জিহাদের এ ময়দানে মোজাহিদগণ নামলে আল্লাহর ফিরেশতারাও যে নামবে সেটি তো সুনিশ্চিত। ফলে বিজয় যে এভাবে নিশ্চিত হবে তা নিয়েও কি সন্দেহ আছে? ১৬/১২/১২

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *