স্বাধীনতা হরণের ভারতীয় স্ট্রাটেজী এবং চ্যালেঞ্জের মুখে বাঙালী মুসলিম

লুন্ঠিত স্বাধীনতা

একাত্তরে ভারতের যুদ্ধজয়টি বিশাল বিজয় দিয়েছে ভারতীয়দের। গুম-খুন ও ভোটডাকাতির ন্যায় ভয়ানক অপরাধের স্বাধীনতা দিয়েছে ভারতের মদদপুষ্ট আওয়ামী বাকশালীদেরও। কিন্তু কতটুকু স্বাধীনতা দিয়েছে বাংলাদেশীদের? স্বাধীনতার অর্থ গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে বাঁচার স্বাধীনতা। সে স্বাধীনতার আঁওতায় আসে রাজনৈতিক দল গড়া, কথা বলা, লেখালেখি করা, মিছিল-মিটিং করা ও ইচ্ছামত ভোটদানের স্বাধীনতা। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এর কোনটাই দেয়নি। সে অধিকার না থাকলে তাকে কি স্বাধীনতা বলা যায়? সেটি তো নিরেট পরাধীনতা। সে স্বাধীনতা শেখ মুজিব যেমন দেয়নি, শেখ হাসিনাও দিচ্ছে না। বরং যা দিয়েছে এবং এখনও দিচ্ছে -তা হলো ফ্যাসিবাদি বর্বরতা। মুজিব ১৯৭১’য়েই ইসলামপন্থিদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়। এবং পরে সকল দলের স্বাধীনতাই কেড়ে নেয় একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে। মুজিবের প্রতিষ্ঠিত রক্ষি বাহিনী কেড়ে নেয় প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বেঁচে থাকার স্বাধীনতা। মুজিব ও হাসিনা উভয়েই নিজেদের গদি বাঁচাতে বেছে নিয়েছে ভোট ডাকাতির পথ। স্বাধীন ভাবে কথা বললে বা লিখলে গুম-খুন ও রিমান্ডে গিয়ে নৃশংস নির্যাতনের শিকার হতে হয়। কথা হলো, এরূপ অধিকারহীনতাকে স্বাধীনতা বললে পরাধীনতা কাকে বলে? যে স্বাধীনতা ১৯৪৭’য়ে মিলেছিল, সেটি কি ১৯৭১’য়ে মিলেছে? পরাধীনতার এ নৃশংস জনককে স্বাধীনতার জনক বললে যা প্রতিষ্ঠা পায় তা হলো বিকট মিথ্যা। অথচ ইতিহাস চর্চার নামে বাংলাদেশে সে বিকট মিথ্যাকে প্রকট করা হয়েছে।   

মুজিবের একদলীয় শাসনের অবসানের পর যখনই স্বাধীন ভাবে বাঁচার চেষ্টা হয়েছে, তখনই ভারত সেটিকে সন্দেহের চোখে দেখেছে এবং তা চিত্রিত হয়েছে ভারত-বিরোধীতা রূপে। ভারতের সাবেক প্রেসেডেন্ট প্রনব মুখার্জির ভাষায় সেরূপ স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচাটি হলো, ভারতের radar’য়ের ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। প্রনব মুখার্জি হুংকার দিয়েছেন, বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে সে সুযোগ দেয়া হবে না। প্রশ্ন হলো, তবে কি বাংলাদেশকে বাঁচতে হবে ভারতের radar’য়ের ছত্রছায়ায়? এবং বাঁচতে হবে কি ভারতের সমর্থনপুষ্ট ভোটডাকাতিকে মেনে নিয়ে? এটিই কি একাত্তরের অর্জন? জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার বিলুপ্ত হলে বিলুপ্ত হয় স্বাধীনতা। তখন যা প্রতিষ্ঠা পায় সেটি হলো পরাধীনতা। ভারত তো সেটিই চায়। ভারত নিজের সে ইচ্ছাটি বাস্তবায়ন করেছে শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা ও তাদের দল আওয়ামী লীগের গোলামী-সুলভ সহযোগিতা নিয়ে। হাসিনা নিজের সে ভারতসেবী গোলামীকে চিত্রিত করে ভারতের একাত্তরের ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দায়বদ্ধতা রূপে। যুক্তিটি এমন, ভারত যেহেতু জন্মের সাথে জড়িত, বাংলাদেশকে বাঁচতে হবে ভারতের প্রতি বিরামহীন গোলামী নিয়েই। বস্তুতঃ এটিই মুজিব-তাজুদ্দীনের চেতনা -যা থেকে জন্ম নিয়েছিল মুজিবেব ২৫ দফা ও তাজুদ্দীনের ৭ দফা গোলামী চুক্তি। প্রশ্ন হলো, চেতনায় এরূপ গোলামী নিয়ে কি স্বাধীনতা বাঁচানো যায়?

 

কারণঃ ইসলামভীতি

ভারতের এরূপ স্বাধীনতা বিরোধী নীতির মূল কারণ ইসলামভীতি। এখানে ভয়টি হলো, জনগণ স্বাধীনতা পেলে ইসলামের বিজয়ী হবে এবং মুসলিমগণ আবার বিশ্বশক্তি রূপে বেড়ে উঠবে। পরাধীনতা তো জনগণকে শক্তিহীন করার মোক্ষম হাতিয়ার। তাই ভারত ও তার সেবাদাসদের লক্ষ্য, জনগণের পরাধীনতাকেই দীর্ঘায়ু দেয়া। বিগত ২০১৩ সালের ৮ই নভেম্বর তারিখে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ প্রসঙ্গে একটি আলোচনা সভার খবর ছেপে ছিল। সে আলোচনাতে যে বিষয়টি প্রকট ভাবে ফুটে উঠেছিল তা হলো ভারতীয় রাজনৈতীক নেতা ও বুদ্ধিজীবীদের প্রচণ্ড ইসলামভীতি। সে সভায় ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শ্যাম শরণ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত দুই সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি ও পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশ এখন যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে মৌলবাদের মোকাবিলাই তাদের রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা ঠিকমতো করতে না পারলে কয়েক বছর ধরে উন্নয়নের যে ধারা অব্যাহত আছে, তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার এ অঞ্চলও অশান্ত হয়ে উঠবে।“দ্য সোসাইটি ফর পলিসি স্টাডিজ” আয়োজিত এ গোলটেবিল আলোচনায় বাংলাদেশ থেকেও কয়েকজন যোগ দেন। বাংলাদেশের ২০১৪ সালের নির্বাচন ঘিরে যে রাজনৈতিক বিতর্ক ও অচলাবস্থা, তাকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং ধর্মীয় মৌলবাদের ক্রমে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার বিষয়গুলো এ আলোচনায় প্রাধান্য পায়। দৈনিক প্রথম আলো লিখেছে,বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ও আবুল বারকাত মনে করেন,বাংলাদেশের গণতন্ত্রী, শান্তিপ্রিয় ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের কাছে বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থানই এ মুহূর্তের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বীণা সিক্রি মনে করেন, জামায়াত ও হেফাজত বাংলাদেশে অস্থিরতা আনতে চাইছে, তারা জঙ্গি ইসলামি শাসন কায়েম করতে চায়। সে জন্য তারা মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করে রাখতে চায়। তাদের অভিযোগ, বিএনপির শাসনামলেও জামায়াত এ কাজই করেছে। আলোচনায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের প্রসঙ্গও। পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী মনে করেন,আমেরিকা যেভাবে জামায়াতকে নরম মৌলবাদী বলে মনে করে, তা বিপজ্জনক।মৌলবাদ নরম বা কঠোর হয় কি না, সে প্রশ্ন ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠে মার্কিন মনোভাব। সে বিষয়ে পিনাকরঞ্জন মনে করেন, বাংলাদেশে জামায়াতের ধারক-বাহক বিএনপি যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মদদ পাচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যখনই বেড়েছে ইসলামি জনতার সমাবেশ এবং ধ্বনিত হয়েছে “নারায়ে তাকবীর,আল্লাহু আকবর” তখনই কাঁপন শুরু হয়েছে ভারতীয় শিবিরে। এটিকেই তারা বলছে মৌলবাদের উত্থান। এবং উল্লেখ্য হলো, মৌলবাদী মাত্রই তাদের কাছে সন্ত্রাসী। এখন এটি সুস্পষ্ট, ভারতীয়দের ঘুম হারাম করার জন্য আনবিক বোমার প্রয়োজন নাই, রাজপথে “আল্লাহু আকবর” ধ্বনিই যথেষ্ট। এ ধ্বনির মাঝেই তারা সন্ত্রাসের গন্ধ পায়। বোমার চেয়েও যে এ ধ্বনি শক্তিশালী -সেটিও বার বার প্রমাণিত হয়েছে। ফিরাউন ও তার বিশাল বাহিনীর মনে ভয় ধরাতে তাই বোমা লাগেনি; সেটি শক্তিটি ছিল মুসা (আঃ)র তাওহীদের দাওয়াত। পৌত্তলিক ভারতীয়গণও তাই আতংকিত “আল্লাহু আকবর”য়ের ভয়ে। আওয়ামী লীগের নৌকার তলা যে ধ্বসে গেছে এবং সেটি যে আর ভাসানো সম্ভব নয় -সেটি ভারতীয় নেতারাও বুঝে। ফলে বেড়েছে তাদের দুর্ভাবনাও। ১৯৭৫’য়ের ১৫ই আগষ্টে মুজিবের বাকশালী স্বৈরাচার নিপাতের পর এতবড় দুর্ভাবনায় ভারত এর আগে কখনোই পড়ে নাই। সে দুর্ভাবনা নিয়েই তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মিষ্টার মনমোহন সিং বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাথে। ভারতের ন্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্যটি হলো মুসলিম দেশগুলিতে ইসলামের জাগরণ ঠ্যাকানো; গণতন্ত্র বাঁচানা বা মানবাধীকার প্রতিষ্ঠা দেয়া নিয়ে তাদের কোন আগ্রহ নেই। নইলে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত মিশরের প্রথম প্রেসিডেন্ট ডক্টর মহম্মদ মুরসীর বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানকে কেন সমর্থন দিবে? কেনই আলজিরিয়ার নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের বিজয় নস্যাৎ করতে সামরিক বাহিনীর ক্যুদেতা’কে সমর্থন দিবে? 

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগণও টের পেয়েছে, নিরপেক্ষ নির্বাচনে তাদের বিজয় অসম্ভব। ক্ষমতায় থাকার জন্য একটিই পথ; সেটি ভোট-ডাকাতির পথ। শেখ হাসিনা এজন্যই বেছে নিয়েছে গুম, খুন, সন্ত্রাস ও ভোট ডাকাতির পথ। ভারতীয়দের ন্যায় মার্কিনীরাও বুঝে ফেলেছে, কোন নিরপেক্ষ নির্বাচনেই হাসিনাকে বিজয়ী করা আর সম্ভব নয়। খুনি হাসিনাকে এমুহুর্তে ক্ষমতায় রাখতে হলে তাদের নিজেদেরকে বা ভারতকে অস্ত্র ধরতে হবে। অথবা হাসিনার ভোট-ডাকাতিকে সমর্থন দিতে হবে। মার্কিনীদের সমস্যা, বাংলাদেশের মাটিতে ইসলামের বিজয় রোধে নিজেদের যুদ্ধ করার সামর্থ্য নাই। আফগানিস্তান ও ইরাকের দীর্ঘ যুদ্ধ তাদেরকে কাহিল করে ফেলেছে। এতটা কাহিল তারা অতীতের দু’টি বিশ্বযুদ্ধেও হয়নি। বাংলাদেশে সে কাজে যেমন হাসিনাকে চায়, তেমনি তার পাশে ভারতকেও চায়। কিন্তু ভারতের সমস্যাটিও কম নয়। দেশটির সেনাবাহিনী দুইটি বৃহৎ অভ্যন্তরীন যুদ্ধে দীর্ঘকালীন যাবত লিপ্ত। একটি কাশ্মিরে,অপরটি বাংলাদেশের উত্তরপূর্বে অবস্থিত ৭টি রাজ্য জুড়ে। এ দুটি এলাকা পরিণত হয়েছে ভারতের জন্য ভিয়েতনামে। বহু অর্থ ও বহু রক্ত ব্যয়েও ভারত সরকার সে যুদ্ধ শেষ করতে পারিনি। অথচ একাত্তরে পূর্বপাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যে সৈন্য-সংখ্যা ছিল তার চেয়ে সাত গুণ অধীক ভারতীয় সৈন্যের অবস্থান কাশ্মীরে। অথচ কাশ্মিরের জনসংখ্যা মাত্র ৮০ লাখ। ফলে ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে ভারত সৈন্য নামাবে কোন সাহসে? অথচ “বিডিনিউজ-২৪” এর সুদীব ভৌমিক টাইমস অব ইন্ডিয়া’য় প্রকাশিত এক নিবন্ধে ভারতীয়দের প্রতি তেমন একটি যুদ্ধেরই দাওয়াত দিয়েছেন। তবে ভারত সরকারের কৌশলটি হলো, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে গণতন্ত্রের নির্মূলে যুদ্ধে নামানো। সে কাজে রাজী করানোর জন্য তাদের সামনে মূলা ঝুলানো হয়েছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষি বাহিনীতে চাকুরির। ২০১৩ সালে শাপলা চত্ত্বরের গণহত্যায় সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোট-ডাকাতিতে সহযোগিতা দিয়ে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রমাণ করেছে তারা বাকশালী স্বৈরাচারকে সুরক্ষা দেয়ার কাজে হাজির।  

শত্রুপক্ষে সেক্যুলারিস্টগণ

উপমহাদেশের রাজনীতিতে ভূমিকম্প সৃষ্টির সামর্থ্য বাঙালী মুসলিমদের যে আছে সেটি বহু বাংলাদেশী না বুঝলেও ভারতীয়রা বুঝেছে। এজন্যই বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশাল অংকের ভারতীয় বিনিয়োগ। ভারতের বর্তমান কৌশলটি হলো, বাংলাদেশীদের কাঁধে অস্ত্র রেখে নিজের যুদ্ধটি লড়া। এক্ষেত্রে ভারত মিত্র রূপে ব্যবহার করছে দেশের সেক্যুলারিস্টদের। এরাই বাংলাদেশের ঘরের শত্রু। সেক্যুলারিস্টগণই হলো প্রতিটি মুসলিম দেশে ইসলামের সবচেয়ে বড়শত্রু হলো। মুসলিম দেশে ইসলামের বিরুদ্ধে বড় বড় অপরাধগুলো কাফেরদের দ্বারা হচ্ছে না। বরং হচ্ছে মুসলিম নামধারি এসব সেক্যুলারিস্টদের হাতে। এরাই মুসলিম বিশ্বের বিশাল মানচিত্রকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরোয় বিভক্তি করা নিয়ে বিজয় উৎসব করে। মুসলিমদের উপর যেখানেই আঘাত, সেখানেই তাদের উৎসব। তাই শাপলা চত্ত্বরে হাজার হাজার মানুষকে হতাহত করা হলেও বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টদের মনে সেদিন কোন দংশন হয়নি।বরং বিপুল আনন্দে তারা উৎসব করেছে। তেমনি বিবেকহীনতা মিশরের সেক্যুলারিস্টদেরও। কায়রোর রাজপথে সামরিক বাহিনী যখন মুসলিম ব্রাদারহুডের সহস্রাধিক কর্মীকে হত্যা করে তখন সে নৃশংস হত্যাকান্ডকে তারা সমর্থণ করেছে। একই চিত্র পাকিস্তানেও। জেনারেল মোশাররফের শাসনামলে ইসলামাবাদের লাল মসজিদের আঙিনায় শত শত ছাত্রীদের উপর সেনাবাহিনী গুলি চালায় ও তাদের হত্যা করে। আর সে নৃশংসতাকেও সমর্থণ দিয়েছে সেদেশের সেক্যুলারিস্টগণ। ইসলামের উত্থান রুখতে এমন কোন হীনকর্ম নাই যা এরা করে না।

ইউরোপ,আমেরিকা বা ভারতে বসবাসকালে এসব সেক্যুলারিস্টদের চেতনায় নিজ নিজ মাতৃভাষা, নিজ সংস্কৃতি, নিজ বর্ণ ও নিজ গোত্রভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ার কোন ভাবনা উদয় হয় না। বরং নিজ ভাষা ও নিজ স্বাতন্ত্রতা ভূলে আলো-পটলের ন্যায় সেখানকার সাংস্কৃতিক মেল্টিং পটে হারিয়ে যাওয়াতেই তাদের আনন্দ। অথচ কোন বৃহৎ মুসলিম দেশে বসবাস কালে তাদের কাছে সবচেয়ে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায় নিজ ভাষা, নিজ বর্ণ ও নিজ গোত্রভিত্তিক রাজনীতি বাঁচানোর এজেন্ডা। অন্যভাষী মুসলিমগণ তাদের কাছে তখন হত্যাযোগ্য শত্রু গণ্য হয়। পাকিস্তান আমলে বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের কাছে অসম্ভব গণ্য হয়েছিল অবাঙালী পাকিস্তানীদের সাথে একরাষ্ট্রে বসবাস করা। অথচ তাদের সে সমস্যাটি দেখা দেয় না ভারতে বসবাসকারি বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের সাথে বসবাসে। সেটি ইউরোপ-আমেরিকাতেও হয় না। কারণ তাদের দুষমনিটা ভারতের বিরুদ্ধে যেমন নয়, তেমনি পাশ্চাত্য সভ্যতার বিরুদ্ধেও নয়। তাদের শত্রুতা তো ইসলাম ও মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। ক্ষুদ্রতা নিয়ে বেড়ে উঠার উগ্র নেশাগ্রস্ততার কারণেই এসব সেক্যুলারিস্টদের হাতে উসমানিয়া খেলাফত, পাকিস্তান ও আরব ভূমির সুবিশাল ভৌগোলিক মানচিত্র টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয় সীমারেখার নামে গড়ে উঠেছে বিভক্তির দুর্ভেদ্য প্রাচীর। আর এতে দারুন ভাবে শক্তিহীন হয়েছে মুসলিম উম্মাহ।

 

গাদ্দারি ইসলামের মৌল বিশ্বাসের সাথে

মুসলিম-রাষ্ট্র-নাশক ভয়ানক জীবদের অবস্থান শুধু যে মুসলিম দেশের সেক্যুলার দলগুলিতে -তা নয়। তাদের উপস্থিতি তথাকথিত বহু ইসলামি দলেও। নইলে সেসব ইসলামী দলেই বা কেন মুসলিম রাষ্ট্রবিনাশের দিবসগুলিতে বর্ণাঢ্য মিছিল ও বিজয়-উৎসব হবে? মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি গড়া যেমন হারাম, তেমনি হারাম হলো বিভক্তির দিনগুলিতে উৎসব করা। তাতে শক্তিশালী হয় জাতীয়তাবাদ ও সেক্যুলারিজম। এমন উৎসবে প্রকাশ পায় বাতিল মতাদর্শের প্রতি তাদের আত্মসমর্পন। প্রশ্ন হলো, সে হুশটি কি এসব ইসলামী দলের নেতাকর্মীদের নেই? তারা কি জানা না, দেশ বাঁচানোর লক্ষ্যে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধটি হয় বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দানে? কিন্তু সে বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে অংশ নেয়ার সামর্থ্য কি এরূপ আত্মসমর্পিতদের থাকে? এমন বিভ্রান্তদের দিয়ে কি দেশের স্বাধীনতা বাঁচানো যায়? নবীজী (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবাগণ কি স্রেফ নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত, তাসবিহ-তাহলিলের শিক্ষা রেখে গেছেন? ভাষা, বর্ণ বা আঞ্চলিকতার নামে মুসলিমদের মাঝে আজকের ন্যায় বিভক্তির দেয়াল কি সাহাবায়ে কেরামের আমলে ছিল? ছিল কি উমাইয়া ও আব্বাসীয় আমলে? সূদ,জুয়া, কুফরি আদালত ও পতিতাপল্লির ন্যায় হারাম কাজের পাশাপাশি মুসলিম ভূমিতে এরূপ বিভক্তির সীমারেখাগুলো তো ঔপনিবেশিক কাফেরদের শাসনের সৃষ্টি। আজ সেগুলি বেঁচে থাকে কি করে? প্রকৃত ঈমানদারের অন্তরে তো এরূপ বিভক্তি নিয়ে মাতম হওয়া উচিত, উৎসব নয়। কারণ এরূপ বিভক্তির দেয়াল ইসলামে হারাম। প্রকৃত ঈমানদার তো অংশ নিবে এসব হারাম সীমান্ত ভেঙ্গে উম্মতে ওহেদা গড়ার জিহাদে।

মুসলিম রাজনীতির মূল কথা, ইসলামের প্রতিষ্ঠা বাড়ানো এবং সে সাথে মুসলমানের শক্তিবৃদ্ধি। তখন রাজনীতি স্রেফ রাজনীতি থাকে না, পবিত্র জিহাদে পরিণত হয়। যুগে যুগে মুসলিম মুজাহিদগণ তো সে কাজেই জিহাদ করেছেন এবং সে জিহাদে শহীদও হয়েছেন। কিছু ব্যক্তির মদ্যপানে বা ব্যাভিচারে মুসলিম উম্মাহর এতো বড় ক্ষতি হয় না যা হয়, মুসলিম ভুগোল খন্ডিত হলে। এমন বিভক্তি তো শত্রু শিবিরে উৎসব আনে। ১৬ ডিসেম্বর তো এ জন্যই ভারতীয়দের কাছে এতটা উৎসবযোগ্য। অতীতে মুসলিম রাষ্ট্রে ইজিদ বিন মোয়াবিয়া ও হাজ্জাজ বিন ইউসুফের ন্যায় বহু বর্বর ও জালেম শাসক এসেছে। কিন্তু সে জন্য কি সে যুগের মুসলিমগণ মুসলিম ভূগোলে হাত দিয়েছে? খাবারের প্লেটে পোকামাকড় বসার কারণে প্লেট ভেঙ্গে ফেলাটি শিশু সুলভ পাগলামী। সুস্থ্য বিবেকের প্রকাশ তো সে প্লেট পরিস্কার করায়। তেমনি কোন মুসলিম দেশ বর্বর শাসক দ্বারা অধিকৃত হলে ইসলামের বিধান হলো, সে শাসকের নির্মূলে জিহাদ করা। কিন্তু ভয়ানক অপরাধ হলো, সে শাসকের কারণে মুসলিম দেশকে বিভক্ত করা। অতীতে দেশের বৃহৎ মানচিত্র গড়তে যে বিশাল রক্ত ব্যয় হয়েছে –একজন ঈমানদার সে ইতিহাস ভূলে যায় কি করে? তাছাড়া পবিত্র কোরআনে “পরস্পরে বিভক্ত হয়ো না” বলে সে হারাম বিভক্তির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট নির্দেশও রয়েছে।এজন্যই একাত্তরে কোন একটি ইসলামী দল এবং কোন একজন আলেমও পাকিস্তান ভাঙ্গাকে সমর্থন করেনি। সমর্থন করেনি কোন এক মুসলিম দেশও। সেটি ছিল নিতান্তই ভারত ও তার সেক্যুলারিস্ট দালালদের প্রজেক্ট।

অথচ মুসলিম দেশের সেক্যুলারিস্টগণ সে হারাম কাজটি বেশী বেশী করেছে এবং ভূলিয়ে দিয়েছে সে কোরআনী ফরমান।সেটি যেমন মুসলিম দেশের নগরবন্দরে সূদী ব্যাংক ও ব্যভিচার পল্লি নির্মানের ক্ষেত্রে,তেমনি বৃহৎ মুসলিম ভূগোল ভেঙ্গে ফেলার ক্ষেত্রে। একাত্তরে তো সেটিই হয়েছে। আর যেসব ইসলাম-দুষমন ব্যক্তি সেসব হারাম কাজে নেতৃত্ব দিয়েছে তাদেরকে জাতির পিতা বলে মাথায়ও তুলেছে। এদের কারণেই মুসলিম উম্মাহ আজ ৫৫টির বেশী টুকরায় বিভক্ত। আর সেক্যুলার সেনাবাহিনীর কাজ হয়েছে সে হারাম সীমান্তগুলীকে পাহারা দেয়া।ফলে অসম্ভব হয়ে পড়েছে বিভক্তির প্রাচীর ভেঙ্গে মুসলিম বিশ্বের ভৌগলিক সংহতি প্রতিষ্ঠা এবং বিশ্বশক্তি রূপে মুসলমানদের উত্থান।ভারতের সেক্যুলারিস্ট হিন্দুগণ অন্ততঃ ভাষা, বর্ণ ও আঞ্চলিকতার নামে এমন বিভক্তির পথে এগুয়নি। মুসলমান নামধারি ব্যক্তি ইসলামে অঙ্গিকারহীন তথা মুনাফিক হলে সে যে পৌত্তলিক কাফেরদের চেয়েও নীচে নামতে পারে এ হলো তার প্রমাণ। মহান আল্লাহতায়ালা এজন্যই জাহান্নামে তাদের স্থান দিবেন কাফেরদেরও নীচে।–(হাদীস)। এরাই দেশে দেশে ইসলামের আন্তর্জাতিক শত্রুপক্ষের সবচেয়ে বড় মিত্র। ভারত এদের কাঁধে বন্দুক রেখেই বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ লড়তে চায়।

 

শত্রুর ঘাঁটি অভ্যন্তরে

কোন মুসলিম দেশে ইসলামের অভ্যুত্থান দেখা দিলে সেক্যুলারিস্টদের কাজ হয় রাজনীতিতে সেনাবাহিনীকে ডেকে আনা। কারণ চিন্তা-চেতনায় তারাই সেক্যুলারিষ্টদের সবচেয়ে বিশ্বস্থ্য মিত্র। বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টগণও সম্ভবত সে পথেই এগুবে। আলজেরিয়ার নির্বাচনে ইসলামপন্থিগণ যখন বিশাল ভাবে বিজয়ী হচ্ছিল তখনই সে বিজয় রুখতে নৃশংস সামরিক জান্তাদের ক্ষমতা দখলে ডেকে আনা হয়। আর সামরিক অভ্যুত্থান হলে তো রক্তপাতও অনিবার্য হয়ে উঠে। আলজিরিয়ায় লক্ষাধিক মানুষের জীবন নাশ হয়েছে সে অভ্যুত্থানসৃষ্ট গৃহযুদ্ধে। আর সামরিক বাহিনী তো এরূপ ক্ষমতা দখলের কাজে দু’পায়ে খাড়া। মুসলিম দেশগুলিতে তাদের অপরাধের তালিকাটি বিশাল। এরাই গণতন্ত্র ও ইসলামের শত্রু।

বস্তুতঃ মুসলিম দেশগুলিতে সেক্যুলারিস্টদের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সুরক্ষিত ঘাঁটিটি কোন রাজনৈতীক দল নয়। পতিতাপল্লি, মদ্যশালা বা ক্লাব-ক্যাসিনাও নয় বরং সেটি হলো সামরিক বাহনী। ক্যান্টনমেন্টগুলো হলো মুসলিম দেশের মাঝে অনৈসলামিক ধ্যানধারণা ও সংস্কৃতির সুরক্ষিত দ্বীপ। ইসলাম ও নিজ দেশের মুসলিম সংস্কৃতি নিজেই এখানে বিদেশী। ট্রেনিংয়ের নামে পাশ্চাত্য দেশ থেকে সামরিক অফিসারগণ যতটা পায় সামরিক প্রশিক্ষণ তার চেয়ে বহুগুণ বেশী পায় মগজ ধোলাই। ট্রেনিং শেষে ফিরে আসে তারা কাজ করে শত্রুশক্তির বিশ্বস্থ্য মিত্ররূপে। মুসলিম দেশগুলোতে এরাই হলো বিদেশী শত্রুদের বিশ্বস্থ্য সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতীক বন্ধু। উসমানিয়া খেলাফতের পতন তখন থেকেই শুরু হয় যখন প্রশিক্ষণের জন্য অফিসারদের পশ্চিমা দেশে পাঠানো শুরু হয়। এশিয়া-আফ্রিকার কোথাও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বিপদে পড়লে আজও তাদেরই ডাক পড়ে। এদের কারণেই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান থেকে ইংরেজগণ বিতাড়িত হলেও পাক-সেনাবাহিনীতে মদ্যপান ও ব্যাভিচার বেঁচেছিল আর বহু দশক। এরাই বার বার দখলে নিয়েছে পাকিস্তানকে এবং দেশটিকে ইসলামী রাষ্ট্র বানানোর প্রজেক্ট বানচাল করে দিয়েছে। কামাল পাশার নেতৃত্বে এরাই খেলাফতের ন্যায় ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে বিলুপ্ত করেছে। তুরস্কের নির্বাচিত ও জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী আদনান মেন্দারেসকে সেদেশের সেনাবাহিনীই ফাঁসীতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল। ইসলামী চেতনার প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দীন আরবাকানকে এরা শুধু তাঁর পদ থেকেই হটায়নি, তার জন্য রাজনীতিও নিষিদ্ধ করেছে। মিশরের ইতিহাসের সর্বপ্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড.মুরসীকে এরাই বন্দী করে রেখেছে। এবং রাজপথে হত্যা করছে তার সমর্থকদের।

ভারতের আগ্রাসী স্ট্রাটেজী

বাংলাদেশের বুকে ইসলামকে বিজয়ী করার জিহাদে জেগে উঠার সুযোগটি প্রতি মুহুর্তের। তা থেকে দূরে থাকার অর্থ মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছা ও মিশনের সাথে সুস্পষ্ট গাদ্দারি। তাছাড়া দেশের সেক্যুলারিস্টদের ইসলাম বিরোধী কদর্য অপরাধী চরিত্রের কোন কিছুই কি এখন গোপন বিষয়? সেটি তো প্রমাণিত। সাধারণত জনগণও এ অপরাধীদের গ্রাস থেকে মুক্তি পেতে চায়। তাদেরকে আবর্জনার স্তুপে ফেলার এখনই মোক্ষম সময়। কিন্তু ভারত তাদের বন্ধুদের এ অবস্থায় দেখতে রাজি নয়। কারণ, তাতে ভারতের নিজের স্বার্থহানি। তাই সে সুযোগ বিনষ্ট করতে শুধু আওয়ামী লীগের কাঁধে নয়, সেনাবাহিনীর কাঁধেও অস্ত্র রেখে ভারত তার নিজের যুদ্ধটি লড়তে চায়। ভারতের বিনিয়োগ তাই শুধু তাদের রাজনৈতীক ও সাংস্কৃতিক সেপাইদের পিছনে নয়, সেনাবাহিনীর অফিসারদের পিছনেও। সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল মঈনকে দিল্লিতে ডেকে নিয়ে ভারত সরকার কি শুধু ঘোড়া উপহার দিয়েছিল? আরো কি কি দিয়েছিল সেটি জেনারেল মঈন ও তার সহচরগণই ভাল জানে।শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেছিল তো সে বিনিয়োগের ফলেই।

তাছাড়া বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে ভারতের নতজানু সেবাদাস কি শুধু জেনারেল মঈন ছিল? সেটি হলে তো বুঝতে হবে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থানরত হাজার হাজার ভারতীয় গোয়েন্দাদের দিবারাত্রের কাজ শুধু ঘোড়ার ঘাস কাটা। ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর রুচি ও নৃশংসতা যে কতটা গভীর সেটি তো ধরা পড়ে শাপলা চত্বরে হাজার হাজার সৈন্যের সমাবেশ ও নিরস্ত্র মুসল্লিদের উপর লক্ষাধিক রাউন্ড গুলি বর্ষণ। তাছাড়া সে নৃশংসতা লাগাতর প্রমাণ করছে র‌্যাবের অফিসার ও সেপাহীরাও। তারাই তো বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে ইসলামি বই বাজেয়াপ্ত করছে। হানা দিচ্ছে হিজাবী ছাত্রীদের পাঠচক্রে। হানা দিচ্ছে বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনের অফিসে। তাছাড়া শেখ হাসিনা তার বিগত ৫ বছরের শাসনে শুধু পুলিশ, RAB ও সেনাবাহিনীকে সাঁজিয়েছে ইসলামপন্থিদের দমনের গ্রান্ড স্ট্রাটেজীকে সামনে রেখেই। এবং অবৈধ সরকার জনগণকে বাধ্য করছে সে হারাম কাজে রাজস্ব জোগাতে।

ভারতের লক্ষ্য বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নয়, দেশটির স্বাধীনতা নয়। দেশটির অর্থনৈতীক উন্নয়নও নয়। গণতন্ত্রের প্রতি সামান্যতম আগ্রহ থাকলে তবে কেন গণতন্ত্র হত্যাকারি বাকশালী মুজিবের প্রতি এত প্রশংসা? ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ভোট ডাকাতির পরও কেন শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থণ? বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি আগ্রহ থাকলে তবে কেন ৭ দফা ও ২৫ দফা দাসচুক্তি করবে? আর বাংলাদেশের অর্থনৈতীক উন্নয়ন? বাংলাদেশের অর্থনৈতীক উন্নয়নের বড় শত্রু হলো ভারত। সেটি প্রমাণিত হয় ১৯৭১’য়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরপরই। পাত্রের তলা ধ্বসে গেলে সে পাত্রে যত কিছুই ঢালা হোক না কেন তা বেরিয়ে যায়। দেশের ক্ষেত্রে সে তলাটি হলো দেশের সীমান্ত। সুরক্ষিত সীমান্তই দেশের সম্পদ নিজ দেশে ধরে রাখে। তাই শুধু যুদ্ধকালে নয়, প্রতিদেশে রীতি হলো প্রতি দিনের প্রতিটি মুহুর্ত সীমান্ত পাহারা দেয়া। একাজে বিরতি চলে না। কিন্তু ভারত সে অবিরাম পাহারাদারি বাংলাদেশ সীমান্তে হতে দেয়নি। মুজিবামলে সীমান্ত বাণিজ্যের নামে পাকিস্তান আমলের সে সুরক্ষিত সীমান্তই বিলুপ্ত করেছিল। আর হাসিনা বিলুপ্ত করেছে বিডিআর। মুজিবের কু-কুর্মের ফলে পাকিস্তান আমলের সোনারূপা,কাঁসাপিতল,কলকারখানার যন্ত্রপাতিই শুধু নয়,বিদেশীদের দেয়া রিলিফের মাল এবং কাঁচা পাটও ভারতের বাজারে গিয়ে উঠে। বাংলাদেশ হারায় পাকিস্তান আমলের অর্জিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাট ও পাটবস্ত্র উৎপাদনকারি দেশের মর্যাদা। সেটি ছিনতাই হয় ভারতের হাতে। বাংলাদেশের ললাটে জুটে বিশ্বের তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি হওয়ার অপমান। সে সময় শুরু হয় শত শত কোটি টাকার জাল নোট ছেপে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিনাশের ষড়যন্ত্র।ফলে আসে অর্থনৈতীক মড়ক ও দুর্ভিক্ষ। তাতে মৃত্যু হয় বহু লক্ষ বাংলাদেশীর। এ সবই হলো ভারত ও তার দাসশাসকদের অপরাধ।

ভারতের এবারের লক্ষ্য শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা খর্ব করা নয়। নিছক অর্থনৈতীক বিনাশও নয়। মূল লক্ষ্যটি হলো যে কোন মূল্যে ইসলামের জাগরণ রুখা। কারণ,তারা জানে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ভারতের জন্য কোন চ্যালেঞ্জ নয়।অর্থনৈতীক ময়দানেও বাংলাদেশ ভারতের প্রতিদ্বন্দী নয়। কিন্তু উপমহাদেশের রাজনীতিতে অপ্রতিরোধ্য বিপ্লব আনতে পারে ইসলামি বাংলাদেশ।সে সামর্থ বাংলাদেশের রয়েছে। কারণ সে জন্য অর্থবল লাগে না। আনবিক বোমাও লাগে না। লাগে ঈমানের বল। লাগে জিহাদ। আফগানিস্তানের আড়াই কোটি মানুষের জিহাদ বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র সোভিয়েত রাশিয়ার ভূগোলকে গুড়িয়ে দিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে দেশটির বিশ্বশক্তির মর্যাদা। স্বাধীনতা দিয়েছে ৬টি মুসলিম দেশকে। ধ্বস নামিয়েছে মার্কিন অর্থনীতিতেও। সে তুলনায় বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ কি কম? ভারত কি সোভিয়েত রাশিয়া বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী?

যে চ্যালেঞ্জের মুখে বাঙালী মুসলিম

মুসলিম হওয়ার অর্থ স্রেফ নামাযী বা রোযাদার হওয়া নয়, আল্লাহর দ্বীনের লড়াকু মুজাহিদ হওয়াও। নামায-রোযার পাশে তাঁকে আমৃত্যু জিহাদ নিয়েও বাঁচতে হয়। এটি তো নবীজী (সাঃ)র শ্রেষ্ঠ সূন্নত। সাহাবাদের জীবনে সে সূন্নত ছিল বলেই শতকরা ৭০ ভাগের বেশী সাহাবী শহীদ হয়েছেন। বাংলাদেশের মাটিতে ইসলাম ও মুসলিমদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ইখতিয়ার মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির মাত্র ১৭ জন মুজাহিদ দিয়ে। এখন তো দেশটিতে স্বঘোষিত মুসলিমদের সংখ্যা ১৬ কোটি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাদের মাঝে মুজাহিদদের সংখ্যা ক’জন? প্রশ্ন হলো, আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ে মুজাহিদ না হলে কি মুসলিম হওয়া যায়? ফলে যে যুদ্ধ সাহাবীদের জীবনে এসেছিল, সে যুদ্ধ অধিকৃত বাংলাদেশের বাঙালি মুসলিমদের জীবনে আসবে না সেটিই বা কীরূপে সম্ভব? তাছাড়া ইসলামকে পরাজিত রাখার লক্ষ্যে এ মুসলিম ভূমিতে শত্রুশক্তির লড়াই তো লাগাতর। শত্রুর লাগাতর হামলার মুখে নীরব ও জিহাদ বিমুখ নিষ্কৃয় থাকাটি কি ঈমানদারি?

বাংলাদেশের মাটিতে যারা মুসলিম রূপে বাঁচতে চায় ও ইসলামের বিজয় চায় -তাদের দায়ভারটি বিশাল। স্রেফ লাখ লাখ মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ার মধ্য দিয়ে সে দায়ভার পালিত হবে না। ঘরে হাতি ঢুকলে যেমন সব কিছু তছ নছ করে দেয়, তেমনি রাষ্ট্র শয়তানী শক্তির হাতে পড়লে লাখ লাখ মসজিদ-মাদ্রাসার কাজ অতি সহজেই ব্যর্থ করে দেয়। তখন মাদ্রাসার ছাত্রদের পৌত্তলিক রবীন্দ্রনাথের শিরকপূর্ণ গান গেতে বাধ্য হতে হয়। নিষিদ্ধ হয় পবিত্র কোরআনের তাফসির। নিয়ন্ত্রিত হয় জুম্মার খোতবা। কেউ শরিয়তের প্রতিষ্ঠা চাইলে তাকে সন্ত্রাসী বলে হত্যা করা হয়। এজন্যই রাষ্ট্র ও তার বিশাল সামরিক ও প্রশাসনিক অবকাঠামো শয়তানী শক্তির হাতে থাকতে দেয়াটি হারাম। সে অধিকৃতি থেকে মুক্তি দিতেই ইসলামী রাষ্ট্র গড়ার জিহাদ মুসলিমদের উপর ফরজ হয়ে যায়। সে ফরজ পালনে মহান নবীজী (সাঃ) নিজে ইসলামী রাষ্ট্র গড়েছেন এবং সে রাষ্ট্রের প্রধান হয়েছেন। সে রাষ্ট্রের শক্তি ও প্রতিরক্ষা বাড়াতে শতকরা ৭০ ভাগের বেশী সাহাবী শহীদ হয়েছেন। কুফরি রাষ্ট্রের সে মহাবিপদ থেকে মুক্তি দিতেই ইখতিয়ার মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী হাজার হাজার মাইল দূর থেকে বাংলায় ছুটে এসেছিলেন। বাংলার মানুষের এত বড় কল্যাণ কি আর কেউ করেছে? বাংলার মুসলিম ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তো তিনিই। কিন্তু সে মুসলিম রাষ্ট্র এখন আবার অধিকৃত ইসলামের শত্রু শক্তির হাতে। তারা অসম্ভব করে রেখেছে নবীজী (সাঃ)র প্রতিষ্ঠিত ইসলামে -যাতে ছিল ইসলামী রাষ্ট্র, শুরা, শরিয়ত, হুদুদ, প্যান-ইসলামিক মুসলিম ঐক্য এবং জিহাদ। এ পরাজিত অবস্থায় মুসলিমগণ কি স্রেফ দোয়া-দরুদ পাঠের মধ্যেই নিজেদের দায়িত্ব সারবে?

নামাযের বিকল্প যেমন স্রেফ নামায, তেমনি জিহাদের বিকল্প স্রেফ জিহাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের বিকল্প একমাত্র ইসলামী রাষ্ট্রই। মুসলিমদের তাই শুধু নামায-রোযার হাকিকত বুঝলে চলে না, বুঝতে হয় শত্রুর লক্ষ্য ও স্ট্রাটেজীকেও। বাঁচতে হয় সে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে। বাংলাদেশের বুকে সে প্রবল শত্রুটি হলো আধিপত্যবাদী ভারত ও তার দোসরগণ। তাই বাঙালি মুসলিমের লড়াই স্রেফ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতিষ্ঠা নিয়ে নয়। নিছক আওয়ামী বাকশালীদের নির্মূলও নয়। বরং লড়াই এখানে সরাসরি ভারত ও তার পদসেবী সৈনিকদের বিরুদ্ধে। আর ভারতের সে সৈনিকদের অবস্থান শুধু সীমান্তের ওপারে নয়,বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও।

 

জিহাদ কেন অনিবার্য?

মুসলিম দেশ ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে অধিকৃত হলে বা সে দেশের উপর হামলা হলে জিহাদ সেখানে ফরজে আইন তথা সবার উপর বাধ্যতামূলক হয়। দেশের প্রতিটি নাগরিকই তখন যোদ্ধা। সমগ্র দেশ তখন ক্যান্টনমেন্ট। সে যুদ্ধে যোগ না দেয়াটি তখন মুনাফেকি। মু’মিনের জীবনে ইসলাম শুধু নামায-রোযা,হজ-যাকাত আনে না, লাগাতর জিহাদও আনে। জিহাদ এখানে ইসলামের সনাতন স্ট্রাটেজী। কোরআনের ছত্রে ছত্রে রয়েছে সে জিহাদের তাগিদ।বলা হয়েছে, “তোমাদের প্রস্তুতি কম হোক বা বেশী হোক অভিযানে বেরিয়ে পড়, জিহাদ করো আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের সম্পদ ও প্রাণ দিয়ে।এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা জানতে।”-(সুরা তাওবা আয়াত ৪১)। এ আয়াতে বিশাল প্রস্তুতির অপেক্ষায় কালক্ষেপনের সুযোগ দেয়া হয়নি। বিশেষ করে তখন যখন মুসলিম ভূমি ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে অধিকৃত। মুসলমানদের প্রস্তুতির কমতি মহান আল্লাহতায়ালা তখন ফেরেশতাদের দিয়ে পূরণ করেন। আর এটিই তো সিরাতুল মুস্তাকীম যা মু’মিনকে জান্নাতে নিয়ে পৌঁছায়। যে পথে জিহাদ নেই তাকে কি তাই সিরাতুল মুস্তাকীম বলা যায়? জিহাদহীন সে পথে চলে কি জান্নাতপ্রাপ্তির কল্পনা করা যায়? নবীজী (সাঃ)র আমলে তো তেমন এক সিরাতুল মুস্তাকীমের পথেই লাগাতর জিহাদ শুরু হয়েছিল। সে সময় ইসলাম কবুলের অর্থ শুধু নামাযের জামায়াতে হাজির হওয়া ছিল না, জিহাদের ময়দানে হাজির হওয়াও। যার মধ্যে জিহাদ নাই এবং সে জিহাদে জানমালের কোরবানীর কোন নিয়েতও নেই,নবীজী (সাঃ)তাকে মুনাফিক বলেছেন।

তাই মু’মিনের জীবনে জিহাদের অংশগ্রহণ এক অনিবার্য দায়বদ্ধতা। কারণ সে তো আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্রয়কৃত দাস। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,“নিশ্চয়ই আল্লাহ মু’মিনদের থেকে তাঁর জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে।তাঁরা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে এবং (সে পথে তারা শত্রুদের) নিধন করে এবং নিজেরাও নিহত হয়।তাওরাত,ইঞ্জিল ও কোরআনে এ বিষয়ে তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আর কে আল্লাহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর? তোমরা আল্লাহর সাথে যে সওদা করেছো তার জন্য আনন্দ প্রকাশ করো,কারণ এটিই তো মহাসাফল্য।”-(সুরা তাওবা আয়াত ১১১)।তাই ঈমানদারির প্রকৃত পরিচয় এবং সে সাথে এ জীবনে সাফল্যের পথ শুধু কালেমায়ে শাহাদত পাঠ নয়।স্রেফ নামায-রোযা আদায়ও নয়। বরং সেটি হলো মহান আল্লাহর রাস্তায় নিজের জান ও মালের কোরবানীতে চুক্তিবদ্ধ হওয়া। এটিই মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ বাণিজ্য।এবং সেটি মহান আল্লাহর সাথে। মানব জীবনে প্রকৃত সফলতা আসে তো এ পথেই। মহান আল্লাহতায়ালার এ ঘোষণাটির উপর যার ঈমান আছে,তার জীবনে জিহাদ এবং সে জিহাদে জানমালের কোরবানীর জজবাটি তাই অনিবার্য কারণেই সৃষ্টি হয়। তাই জিহাদ যেমন মৌলবাদ নয়, তেমনি চরমপন্থি সন্ত্রাসও নয়। বরং মু’মিনের জীবনে এটিই হলো ইসলামের স্বাভাবিক প্রকাশ।

সে জিহাদের ঢেউই বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছিল আজ থেকে ৮ শত বছরেরও বেশী কাল আগে। এবং সে জিহাদের বরকতেই মুক্ত হয়েছিল আজকের চেয়েও বিশাল ও অখন্ড বাংলা। কিন্তু ১৭ জন মুজাহিদের হাতে যে বাংলা সেদিন স্বাধীন হয়েছিল তা এখন অধিকৃত ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে। যাদের হাতে শুধু শরিয়তি বিধানই নয়, সংবিধানে ঘোষিত আল্লাহতায়ালার উপর আস্থার বানীও বিলুপ্ত করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাফসির মাহফিলে, গুলি চালানো হয়েছে ঢাকার রাস্তায় অবস্থান নেয়া নিরস্ত্র মুসল্লিদের উপর। শহীদ মুসল্লিদের লাশ ফেলা হয়েছে ময়লার গাড়িতে! এদেশের শাসনতন্ত্রে সূদ নিষিদ্ধ নয়। নিষিদ্ধ নয় পতিতাবৃত্তির ন্যায় জ্বিনার বানিজ্যও। কিন্তু নিষিদ্ধ করা হয়েছে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার নিয়ে রাজনৈতীক সংগঠন করা।সে অপরাধে তখন নিষিদ্ধ করা হয় সে দলের নিবন্ধন। জেলে তোলা হয় সে দলের নেতাদের। এসবই আজ হচ্ছে ১৬ কোটি মুসলমানের সামনে। বাঙালী মুসলমানের জীবনে এর চেয়ে বড় পরাজয় ও এর চেয়ে বড় লজ্জার আর কি হতে পারে? বাংলাদেশের ন্যায় একটি অধিকৃত মুসলিম দেশে জিহাদ থাকবে না তা কি কোন মুসলিম ভাবতে পারে? সেরূপ ভাবলে কি কেউ মুসলমান থাকে? প্রথম সংস্করণ ১৭/১১/১৩, দ্বিতীয় সংস্করণ ২৮/০৩/২০১৯

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *