যে নাশকতা বিভক্তির ও অসভ্য রাজনীতির

প্রতিটি জাতির জীবনেই কোন না কোন সময় ভয়ানক বিভক্তি আসে। সে বিভক্তি অনেক সময় গভীর রক্তক্ষরণও ঘটায়। রাজনীতির সভ্য বা অসভ্য চরিত্রটি ধরা পড়ে সে গভীর বিভক্তিকে কতটা সভ্য বা অসভ্য ভাবে মীমাংসা করা হয় তা থেকে। সম্প্রতি ব্রিটিশ জনজীবনে তেমনি এক বিভক্তি এসেছিল ই্‌উরোপীয়ান ইউনিয়নে থাকা বা না-থাকা নিয়ে। গত তিন বছর ধরে চলা প্রচন্ড রাজনৈতিক বিতন্ডার পর অবশেষে ৩১শে জানুয়ারির মধ্য রাতে যুক্তরাজ্য তথা গ্রেট ব্রিটেন ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হলো। এ বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ জনগণ পুরাপুরি দ্বি-ভাগে বিভক্ত ছিল। এ প্রসঙ্গে কয়েক বছর আগে অনুষ্ঠিত রেফারেন্ডামে শতকরা ৫২ ভাগ ভোট পড়ে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পক্ষে। বিপক্ষে পড়েছিল শতকরা ৪৮ ভাগ। উভয়ের মাঝে পার্থক্যটি তাই বিশাল ছিল না। তবে চিত্রটি ভিন্নতর ছিল ইংল্যান্ডের বাইরে। যেমন স্কটল্যান্ডে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে ভোট পড়েছিল শতকরা ৬২ ভাগ। একই চিত্র ছিল উত্তর আয়্যারল্যান্ডে। সেখানেও অধিকাংশ ভোটার বিচ্ছিন্নতাকে সমর্থণ করেনি।

এরূপ জাতীয় বিষয়গুলি নিয়ে জনগণের মাঝে বিভক্তি দেখা দেয়াটি আদৌ অস্বাভাবিক নয়। কারণ, কিসে দেশ ও দেশবাসীর কল্যাণ –তা নিয়ে সবাই একই ভাবে ভাবে না। দেশের বড় বড় অর্থনীতিবিদগণ বলেছিলেন, বিচ্ছিন্নতায় ব্রিটিশ অর্থনীতির ক্ষতি হবে। শ্রমিক দলীয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং গর্ডন ব্রাউন এবং রক্ষনশীল দলীয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও জন মেজরসহ বড় বড় বহু নেতাই ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে থাকার মধ্যেই ব্রিটিশ জনগণের কল্যাণ ভাবতেন। বিচ্ছন্নতার বিরুদ্ধে তারা প্রচারে্ও নেমেছিলেন। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে উগ্র বর্ণবাদ ও জাতীয়তাবাদের যে ঢেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হানা দিয়েছে সেটির আছড় পড়েছে যুক্তরাজ্যেও। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে এককালে সূর্য্য অস্ত যেত না –সে গর্ব তাদেরকে অতিশয় অহংকারি করে তোলে। ই্‌উরোপের অন্য কোন দেশের সেরূপ ইতিহাস নেই। এরূপ অহংকার থেকে যা জন্ম নেয় তা হলো অন্যদের প্রতি ঘৃনা ও অবজ্ঞা। সে ঘৃণা ও অবজ্ঞার প্রভাব পড়ে দেশের রাজনীতিতেও। তখন জাতীয় জীবনে আসে বিচ্ছিন্নতা। এরূপ ঘৃণা নিয়েই গর্বিত ইরানীরা বিচ্ছিন্ন হয়েছিল মুসলিম উম্মাহর মূল দেহ থেকে। একই ভাবে গর্বিত আরবগণ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল উসমানিয়া খেলাফত থেকে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যেমন “America will be great again” স্লোগান তুলে মার্কিন জনগণের ভোট হাসিল করে, সেরূপ সফলতা লাভে বরিস জনসন এবং তার সাথীরাও লাগাতর বয়ান দিতে শুরু করে “UK will be great again”। ভোটে সে বয়ান কাজও দিয়েছে।  

বিচ্ছিন্নতা কখনোই একাকী আসেনা, জনগণের মাঝে তা জন্ম দেয় গভীর বিভক্তিও। বিচ্ছিন্নতার সে সূত্র ধরেই ব্রিটিশ জনগণ আজ গভীর ভাবে বিভক্ত। বিজয়ী দল প্রকাশ্যে উৎসব করছে, এবং পরাজিত দল নীরবে মাতম করছে। এরূপ বিভক্তি নিয়ে কোন দেশই সামনে এগুতে পারে না। এর ফলে দেশে সামাজিক সম্পৃতি ও শান্তিও প্রতিষ্ঠা্ পায় না। তাই যে কোন দেশে সভ্য রাজনীতির লক্ষ্য হয়, যতটা শীঘ্র সম্ভব দেশবাসীর মাঝে গড়ে উঠা বিভক্তিকে দ্রুত দূর করা। এবং ইসলামে এটি নামায-রোযার ন্যায় ফরজ। বিভক্তি দূর না করলে পবিত্র কোর’আনের সুরা আল ইমরানে ভয়ানক আযাবেরও প্রতিশ্রুতি শোনানো হয়েছে। মুসলিমগণ ইসলাম থেকে কতটা দূরে সরেছে তার প্রমাণ হলো, বিভক্তির উঁচু দেয়াল এবং সে দেয়াল বাঁচিয়ে রাখার কাজে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ।

যে কোন দেশে দায়িত্বশীল নেতাদের প্রধান কাজটি হলো, বিভক্ত জনগণের মাঝে একতা গড়া। এমন এক দায়িত্ববোধ নিয়েই ৩১শে জানুয়ারির মধ্যরাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছন্ন হওয়ার পর পরই জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য রেখেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি বলেছেন, তার কাজ বিভক্ত জাতিকে আবার একতাবদ্ধ করা। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের এ বক্তব্যের মধ্যেই রয়েছে বাংলাদেশী রাজনীতিবিদদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। বাংলাদেশেও গভীর বিভক্তি এসেছিল ১৯৭১ সালে। সেটি ছিল পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্নতা নিয়ে। তবে না নিয়ে কোন রেফারেন্ডাম হয়নি। পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি নির্ধারিত হয়েছিল বন্দুকের নল দিয়ে। এবং সে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জড়িয়ে পড়ে ভারতের ন্যায় আগ্রাসী একটি শত্রু রাষ্ট্র। এভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের অংশীদারিত্বও প্রতিষ্ঠা পায়। আওয়ামী লীগ,ন্যাপ, কম্যুনিষ্ট পার্টির ন্যায় ইসলামে অঙ্গিকারশূণ্য সেক্যুলার দলগুলো ছিল পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্নতার পক্ষে। ভারতের বিপুল রাজনৈতিক ও সামরিক বিনিয়োগ ছিল তাদের পক্ষে। তাদের পক্ষ নেয় আরেক শত্রু রাষ্ট্র সোভিয়েত রাশিয়া। অপর দিকে মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলাম, নিজামে ইসলাম, জমিয়তে ইসলামের ন্যায় মুসলিম চেতনা-সম্পন্ন দলগুলি ছিল বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে। বিচ্ছিন্নতার পক্ষ নেয়নি এমন কি বরেণ্য কোন আলেম, কোন পীর এবং মাদ্রাসার কোন শিক্ষক। তারা এ বিচ্ছিন্নতাকে হারাম গণ্য করেছে। এমন কি সেক্যুলার বিশ্বাবিদ্যালয়গুলোর শতাধিক শিক্ষকও পত্রিকায় বিবৃতি দেয় বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে। তাই বিভাজনটি স্রেফ রাজাকার ও সেক্যুলারিস্ট রাজনৈতিক দলগুলির মাঝে সীমিত ছিল না।

বাংলাদেশে একাত্তরের  পর রাজনীতির নামে যা কিছু হয়েছে তা ছিল অতি বিভেদপূর্ণ। দেশের জন্য তা অতি ক্ষতিকরও। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ব্রেক্সিট-পরবর্তী বিভক্ত জনগণকে জোড়া লাগানোর যে অঙ্গিকার জাহির করেছেন, তেমন সভ্য অঙ্গিকার একাত্তরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে দেখা যায়নি। জনগণের মাঝে বিভক্তি দূর না করে বরং সে বিভক্তিকে বাড়ানোর চেষ্টা হয়েছে অতি প্রবল ভাবে। প্রশ্ন হলো, ব্রিটিশ রাজনীতিতে কেন এ ঐক্যের সুর? কারণটি সুস্পষ্ট, ব্রিটিশ প্রধামন্ত্রী বরিস জনসন কোন ট্রাইবাল নেতা নন। তিনি একজন রাষ্ট্রনায়ক তথা স্টেট্সম্যান। স্টেট্সম্যানগণ শুধু বর্তমান নিয়ে ভাবে না, ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবে।  এজন্যই তাঁর বক্তব্যে সংহতির প্রতি এতো আগ্রহ। তাই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যারা বিচ্ছিন্নতার বিরোধী ছিল তাদেরকে কখনোই তিনি দেশের শত্রু রূপে আখ্যায়ীত করেননি। তাদের চরিত্রহননও করেননি। কারণ বিরোধীদের গালিগালাজ করে বা তাদের চরিত্রহনন করে বিভক্তিকে দূর করা যায় না। বরং তাতে সেটি বৃদ্ধি পায়। সভ্যতর রাজনীতির লক্ষণ হলো বিভক্তির বদলে সংহতির প্রেরণা। তেমন এক সভ্যতর রাজনীতি ১৯৪৭ সালে এ বঙ্গ ভূমিতে দেখা গেছে পাকিস্তান সৃষ্টির পর। সে সময়ও লাখ লাখ মানুষ পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধীতা করেছিল। কিন্তু সে কারণে কারো বিরুদ্ধে নির্মূলের ধ্বনি দেখা যায়নি। একাত্তরে যেমন লাখ লাখ বিহারীর ঘরবাড়ি কেড়ে নিয়ে বস্তিতে পাঠানো হয়েছে সেরূপ অসভ্যতা ১৯৪৭য়ে যারা পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধীতা করেছিল তাদের বিরুদ্ধে দেখা যায়নি।

যেখানে বিভক্তি, ঘৃনা ও চরিত্র হননের কদর্য রাজনীতি -সেটি তো উলঙ্গ অসভ্যতা। তখন  রাজনীতির অঙ্গণে ধ্বনিত হয় বিরোধীদের নির্মূলের ধ্বনি। বিলুপ্ত হয় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। নিষিদ্ধ হ্য় মিছিল মিটিংয়ের অধীকার।  বিরোধীদের তখন পিটিয়ে লাশ বানানো হয়, গুম করা হয় বা ফাঁসিতে চড়িয়ে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফ্যাসিবাদী সে অসভ্যতাটি অতি প্রকট। সেরূপ নিরেট অসভ্যতা নিয়েই বিরোধী নেতা সিরাজ সিকদারকে হত্যা করার পর শেখ মুজিব সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিল, “কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?” এরূপ হত্যাপাগল নেতাগণ দ্রুত জনসমর্থণ হারায়। তখন জনগণকে বাদ দিয়ে তাদের নির্ভর করতে হয় বিদেশী প্রভুর উপর। ফলে শেখ মুজিবকে তাই আবির্ভুত হতে হয়েছিল ভারতের ক্রীড়নক একজন ট্রাইবাল নেতা রূপে। এজন্যই তার রাজনীতিতে বিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ক সুলভ প্রজ্ঞা ও ঐক্যের সুরটি দেখা যায়নি।

ট্রাইবাল রাজনীতি গণতন্ত্র বাঁচে না। অন্যদের জন্য রাজনীতিতে কোন স্থান দেয়া হয় না। তখন যা বাঁচে বা বেড়ে উঠে -তা হলো ট্রাইবাল নেতার একক কর্তৃত্ব ও স্বৈরাচার। নিজের ট্রাইবাল রাজনীতিকে বাঁচাতে শেখ মুজিব তাই অন্যদের রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করেছিল। জারি করেছিল একদলীয় বাকশালী শাসন। নিষিদ্ধ করেছিল সকল বিরোধী দলীয় পত্র-পত্রিকা। জনগণের উপর দাবড়িয়ে দিয়েছিল তার পেটুয়া রক্ষিবাহিনী। তার মৃত্যু ঘটে ৩০ হাজারের বেশী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর। নিজের রক্ষাকর্তা রূপে জনগণকে বাদ দিয়ে বেছে নিয়েছিল ভারতকে। আর ভারত তো বিনা মূল্যে কাউকে সুরক্ষা দেয় না। মুজিবকে সে মূল্য পরিশোধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বন্ধক রেখে। একই পথ ধরেছে শেখ হাসিনা। সেও ব্যবহৃত হচ্ছে ভারতের লক্ষ্য পূরণে। মুজিব যেমন নিজের রাজনীতি বাঁচাতে গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল, হাসিনাও তেমনি গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে ভোট ছাড়াই ক্ষমতা এসেছে। এবং সেটি মধ্য রাতে ভোটডাকাতির মাধ্যমে। ফলে ভোটার লিষ্টে নাম থাকলে কি হবে, জনগণ হারিয়েছে নিজের পছন্দসই নেতার পক্ষে ভোটদানের অধিকার। 

ভারতের কাছে বন্ধু হওয়াটি কোন কালেই নিঃশর্ত ছিল না। বরং সে পূর্বশর্তগুলি অতি সুস্পষ্ট। এবং মূল শর্তটি হলো, বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারত বিরোধীদের নির্মূলে অতিশয় নির্দয় ও নিষ্ঠুর হওয়া। হাসিনা এরূপ অসভ্য নিষ্ঠুরতায় তার পিতাকে ছাড়িয়ে গেছে। তাই গুম, খুন, হত্যা ও ফাঁসির রাজনীতি মুজিবামলের চেয়ে আজ অধীক। ফলে ভারত শেখ মুজিবকে যে সুরক্ষা দেয়নি –যা তারা হাসিনাকে দিচ্ছে। বিএনপি বা অন্য কোন দলের পক্ষে সে শর্ত পূরণ সম্ভব নয়। ফলে তাদের পক্ষে সম্ভব নয় ভারতের কাছে বন্ধু হওয়া। আওয়ামী রাজনীতির এ অসভ্য নিষ্ঠুরতা থেকে এ জন্যই বাংলাদেশের সহজে নিস্তার নেই। এবং নিরাপত্তা নেই ভারত বিরোধী রাজনৈতীক নেতাকর্মীদেরও। আবরার ফা্হাদ লাশ হলো, ভিপি নূরুল হক ও তার সাথীরা বার বার মার খাচ্ছে তো সে ভারতীয় নীতি প্রতিষ্ঠা দেয়ার কারণেই।

 “বিভক্ত করো এবং শাসন ও শোষন কর” এটিই সর্বকালে দুষমন অতি প্রিয় পলিসি। দেশী ও বিদেশী দুষমনগণ তাই জনগণের একতার ঘৃণ্যতম দুষমন। ভারত চায় বাংলাদেশকে একটি বাঁদি রাষ্ট্রে পরিণত করতে। সে লক্ষ্যেই তাজুদ্দীনের সাথে ৭ দফা এবং মুজিবের সাথে ২৫ দফা চুক্তি স্বাক্ষর করে। ৭ দফা ও ২৫ দফা চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও ভারতের আগ্রাসী পলিসির আদৌ মৃত্যু হয়নি। সে অভিন্ন লক্ষ্য নিয়েই একাত্তর থেকেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারত রাজনীতি কলকাঠি নাড়াচ্ছে্। একাজে ব্যবহার করছে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগকে। আর এতে হাসিনার সুবিধা হচ্ছে, ক্ষমতায় থাকতে তাকে জনগণের ভোট লাগছে না। ফলে দেশ জুড়ে বাড়ছে নিরেট ফ্যাসিবাদ এবং অসম্ভব হচ্ছে একাত্তরে গড়ে উঠা বিভক্তিকে দূর করা্। এবং এতে প্রবলতর হচ্ছে সভ্য রাজনীতির বদলে বিরোধীদের নির্মূলের অসভ্য রাজনীতি। ২/২/২০২০  

 

        

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *