বিবিধ ভাবনা ৫৫

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 ১. সত্য আবিস্কারে এতো ব্যর্থতা কেন?

মানব জীবনের সবচেয় বড় সাফল্যটি হলো সত্য আবিস্কারে সফল হওয়ায় তথা মহান আল্লাহতায়ালাকে চিনতে সফল হওয়ায়। চিনতে হয় মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর দেয়া সত্য দ্বীনকেও। এখানেই প্রতিটি ব্যক্তির মেধার মূল পরীক্ষাটি হয়। জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে হলে এ পরীক্ষায় অবশ্যই পাশ করতে হয়। এবং নিজের পরীক্ষায় নিজে পাশ করতে হয়। কোন পীর সাহেবকে দিয়ে এ পাশ করিয়ে নেয়া যায়।  বস্তুত এখানেই মানুষের নৈতিক পরীক্ষা হয়।

 ঘর বাঁধা, সন্তানের জন্মদান, সংসার পালন ও পানাহারে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে এমন কি পশু-পাখিরাও ভূল করে না। তাই স্রেফ বাঁচায় কোন কৃতিত্ব নাই। এমন কি চরিত্রহীন, স্বার্থপর এবং অতিশয় দুর্বৃত্তরাও সফল ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, উকিল, বিজ্ঞানী ও ব্যবসায়ী হয়। কিন্তু এমন দুর্বৃত্তরা ঈমানদার হওয়ার পরীক্ষায় তারা ফেল করে। শুধু মহান আল্লাহতায়ালা, তাঁর রাসূল ও তার কিতাব কুর’আনকে বিশ্বাস করলেই নৈতিক পরীক্ষায় পাশ জুটে না। সে জন্য চোর-ডাকাত, ভোটডাকাত এবং সকল দুর্বৃত্ত ও অপরাধীদের চেনা, ঘৃনা করা ও তাদের নির্মূলে লড়াইয়ে নামার সামর্থ্যও থাকতে। বাংলাদেশীদের মাঝে সে সামর্থ্য যে অতি সামান্য -তা হাসিনার ন্যায় ভোটডাকাতের দীর্ঘকালীন শাসনই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দিচ্ছে।

মুর্তিপূজা, গরুপূজা, বর্ণপূজা, গোত্রপূজা, নেতাপূজা ও দলপূজার ন্যায় আদিম অজ্ঞতা নিয়ে বাঁচায় কোন কৃতিত্ব নাই। সত্যকে চিনতে হয় এবং মানতে হয়। এখানে আপোষ হলে জাহান্নামে যেতে হয়। বিস্ময়ের বিষয় হলো, মানুষ তার বাপদাদার রেখে যাওয়া বাড়ী-গাড়ির মডেল পাল্টাতে যতটা তৎপর, সেরূপ তৎপরতা নাই ধর্মের নামে পূর্ব পুরুষের রেখা যাওয়া সনাতন অজ্ঞতা ও আচার পাল্টাতে। ভারতের ১১০ কোটি হিন্দু তাই বেঁচে আছে পূর্ব পুরুষের অজ্ঞতাপ্রসূত ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার নিয়ে। এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকার কোটি কোটি মানুষ তাদের বাপদাদার ভ্রান্ত ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার পাল্টালেও হিন্দুরাও তাতে রাজি নয়। বিদ্যাশিক্ষা ও আধুনিক বিজ্ঞান তাদের উপর কোন প্রভাব ফেলনি। সনাতন অজ্ঞতা নিয়েই তাদের গর্ব। সমগ্র মানব জাতির ইতিহাসে এটি এক অবিশ্বাস্য বিস্ময়।

অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামে যাবে মানুষ খুন, চুরি-ডাকাতি বা ব্যাভিচারের কারণে নয়, বরং বিবেকের পরীক্ষায় ফেল করার কারণে। অর্থাৎ মহান স্রষ্টা তথা আল্লাহতায়ালাকে চিনতে ফেল করায়। বিশ্বজগতের সকল সৃষ্টির পিছনে যে একজন মহাজ্ঞানী স্রষ্টা আছে –সে বিশাল সত্যটি বুঝতে ব্যর্থ হওয়া কি কম ব্যর্থতা? এটি মধ্য আকাশে জ্বলন্ত সূর্য্যকে চিনতে ব্যর্থ হওয়ার চেয়ে কম নয়। এ ব্যর্থতা নিয়ে কি কেউ জান্নাত পেতে পারে? পবিত্র কুর’আন থেকে জ্ঞানলাভ এ জন্য ফরজ যে, কুর’আনের জ্ঞান বিবেক বা নৈতিক পরীক্ষায় পাশের সামর্থ্য বাড়ায়। ডাক্তারী বই না পড়লে যেমন ডাক্তার হওয়া যায় না, তেমনি কুর’আনের জ্ঞান ছাড়া মুসলিম হওয়া যায় না। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কাজ হয়েছে ছাত্রদের নৈতিক পরীক্ষায় ফেল করাকে সুনিশ্চিত করা। এজন্যেই স্কুল-কলেজের সিলেবাসে পবিত্র কুর’আনের কোন স্থান নাই। শেখ হাসিনা তার ডাকাত দলে ডাকাত পেয়েছে এ শিক্ষা ব্যবস্থার ফসল থেকে। 

২.কুর’আন না বুঝা যেখানে গুরুতর অপরাধ

যারা ইংরাজী বা অন্য বিদেশী ভাষায় লেখা বই বুঝার সামর্থ্য অর্জন করেছে অথচ কুর’আন বুঝার সামর্থ্য অর্জন করেনি -তারা মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে অবশ্যই অপরাধী গণ্য হবে। অপরাধ এখান গুরুতর। তাঁর দেয়া মেধা দিয়ে অন্যদের লেখা বই পড়ার সামর্থ্য অর্জন করা হলেও তাঁর পক্ষ থেকে দেয়া পবিত্র কিতাব কুর’আন বুঝার চেষ্টা করা হয়নি। অথচ এ কুর’আনই হলো মহান আল্লাহাতায়ালার সাথে ব্যক্তির একমাত্র যোগসূত্র। এই কুর’আনের মাধ্যমেই মহান আল্লাহতায়ালা মানুষের সাথে কথা বলেন। একমাত্র পবিত্র কুর’আনই জান্নাতে পৌঁছার সিরাতুল মুস্তাকীম দেখায়।

 কুর’আনের পথ ছাড়া সকল পথই জাহান্নামের পথ। কুর’আনের সাথে যোগসূত্র ছিন্ন হলে মানব সন্তানেরা শয়তানের কোলে গিয়ে পড়ে। প্রাথমিক যুগের মুসলিমগণ কুর’আন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার বিপদ শতভাগ বুঝতেন। তাই সে বিপদ থেকে বাঁচার জন্য মিশর, ইরাক, সিরিয়া, সুদান, লিবিয়া, আলজিরিয়া, মরক্কো, মৌরতানিয়া ও তিউনিসিয়ার ন্যায় বহু দেশের মানুষ নিজেদের মাতৃ ভাষা পাল্টিয়ে আরবী ভাষাকে গ্রহণ করেছিল। তাছাড়া কুর’আনের ভাষা খুবই সহজ। সে জানার জন্য উপরুক্ত দেশগুলোর নারীপুরুষ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়নি। সেগুলি সে সময় ছিল না। শেখার আগ্রহ থাকলে উপায় বের হয়। তাছাড়া মহান আল্লাহতায়ালা ঘোষণা হলো, “নিশ্চয়ই কুর’আনকে আমি আরবীতে নাযিল করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পারো।”–(সুরা ইউসুফ, আয়াত ২)। সুরা ক্বামারে ৪ বার বলেছেন, ওয়া লাক্বাদ ইয়াচ্ছারনাল কুর’আনা, হাল মিন মুদ্দাকির।” অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি কুর’আনকে সহজ করে নাযিল করেছি, আছে কি কেউ এর উপর যিকর তথা চিন্তাভাবনা করবে।” তাই না বুঝে কুর’আন পাঠে মহান আল্লাহতায়ালা খুশি হবেন -সেটি কীরূপে আশা করা যায়?

পবিত্র কুর’আনের সাথে বাংলাদেশ সরকারের গাদ্দারী কি কম? রবীন্দ্রনাথের “আমার সোনার বাংলা” গান পাঠ না করলে স্কুলে ক্লাস শুরু হয় না। তার কবিতা না বুঝলে পরীক্ষায় পাশ জুটে না। অথচ একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি দেয়া হয় পবিত্র কুর’আনের একটি আয়াত বুঝার সামর্থ্য সৃষ্টি না করেই। ইসলামের গৌরব যুগে যে শিক্ষাদান ঘরে বা মসজিদের মক্তবে হতো সেটি বাংলাদেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও হয় না। এমন শিক্ষাব্যবস্থায় ঘুষখোর, খুনি, ব্যাভিচারী, মদখোর, সন্ত্রাসী, ভোটডাকাত ও চোর-ডাকাত তৈরী হবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়। চলতি শতাব্দীর শুরুতে পর পর ৫ বার দুর্নীতিতে যারা বাংলাদেশকে বিশ্বমাঝে প্রথম স্থানে পৌঁছে দিয়েছিল -তারা কি কোন বন বা জঙ্গলে বেরে উঠেছিল? তারা তো বেড়ে উঠেছিল এ কুর’আনশূণ্য শিক্ষাব্যবস্থায়। এরাই তো রাজনীতি ও সংস্কৃতির অঙ্গণে মহান আল্লাহতায়ালাতে অবিশ্বাসী ও ইসলামের শত্রুতে পরিণত হয়। বিস্ময়ের আরো বিষয় হলো, এমন দুর্বৃত্ত উৎপাদনের কারখানাগুলিকে প্রতিপালন দিচ্ছে দেশের জনগণ। সে কাজটি তারা করে রাজস্ব দিয়ে! এমন চেতনাশূণ্য ও দায়িত্বশূণ্য জনগণের উপর কি মহান আল্লাহতায়ালা খুশি হতে পারেন?

৩. বিপন্ন জনগণ এবং সুরক্ষিত দুর্বৃত্ত সরকার

বাংলাদেশ আজ পুরাপুরি দুর্বৃত্তদের দখলে। দেশে আইনের শাসন নাই। আদালতে আল্লাহর আইনের কোন স্থান নেই। বিচার হচ্ছে কুফরি আইনে। লাগাতর আইন তৈরী হচ্ছে সরকারকে প্রতিরক্ষা দেয়া এবং বিরোধীদের দমনের লক্ষে। জনগণকে শায়েস্তা করার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে জনগণেরই দেয়া রাজস্বের অর্থ।   সবচেয়ে অরক্ষিত হলো দেশবাসীর জান, মাল ও ইজ্জত। দেশে গুম-খুন-ধর্ষণ ও ধর্ষণের প্লাবন চলছে। মেয়ের সামনে মা, মায়ের সামনে মেয়ে ধর্ষিতা হচ্ছে। কিন্তু সেদিকে পুলিশ ও আদালতের নজর নাই।

দেশের পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কাজ হয়েছে দুর্বৃত্ত শাসকদলকে জনগণের রোষ থেকে বাঁচানো। সে লক্ষ্যে পুলিশ শত শত বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করছে, আদালতের বিচারকগণ সরকারবিরোধীদের ফাঁসিতে চড়াচ্ছে। কিন্তু চোরডাকাত, ভোটডাকাত ও গুম-খুন-ধর্ষকের নায়েকদের বিরুদ্ধে কোন বিচার নাই। অপর দিকে এ জালেম ভোটডাকাতদের নির্মূলে জিহাদ নাই। মোল্লা-মৌলভীগণ ব্যস্ত নিজ নিজ ফিরকার মুরিদ বাড়াতে। ফলে দিন দিন নিরপত্তাহীন হচ্ছে জনগণ এবং দাপট বাড়ছে দুর্বৃত্ত সরকারের। গলিত আবর্জনার স্তুপে মশামাছির আবাদ যেমন বাড়ে, বাংলাদেশে তেমনই বাড়ছে অসভ্য দুর্বৃত্তগণ।

৪. অবমাননা হচ্ছে পবিত্র কুর’আনের

 মুসলিমদের পতনের মূল কারণ কুর’আন বুঝায় এবং সে সাথে তা মেনে চলায় ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতা ভয়ানক পাপ। অপরাধ এখানে মহান আল্লাহতায়ালার হুকুম না মানার। রাব্বুল আলামীন কুর’আন নাযিল করেছেন তা  থেকে শিক্ষা নেয়া ও অনুসরণের জন্য। অথচ মুসলিমগণ সে কাজটিই করছে না। এ অপরাধের জন্য ভয়ানক আযাব অপেক্ষা করছে আখেরাতে। সেটি জাহান্নামে আগুনে পৌঁছার। রোডম্যাপ মেনে পথ না চললে গন্তব্যস্থলে পৌছা যায় না, তেমনি কুর’আন মেনে পথ না চললে জান্নাতে পৌঁছা যায় না। এবং কুর’আন মানতে হলে অবশ্যই কুর’আন বুঝতে হয়। কোরআন শিক্ষা এজন্যই নামায-রোযার আগে ফরজ করা হয়েছে। অথচ সে ফরজ পালনে মুসলিমদের গাফলতিটি বিশাল।

কুর’আন না বুঝে স্রেফ তেলাওয়াত করার অর্থ, মহান আল্লাহতায়ালা কি বললেন সেটি জানার প্রতি চরম তাচ্ছিল্য। এটি মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং পবিত্র কুর’আনের প্রতি চরম অবমাননা। পবিত্র কুর’আনের প্রতি সন্মান দেখানো হয় তো তখন, যখন সে কুর’আনকে বুঝা হয় এবং পদে পদে মান্য করা হয়। মহান আল্লাহতায়ালা কুর’আন বুঝা এবং কুর’আন থেকে শিক্ষালাভ ফরজ করেছেন, না বুঝে তেলাওয়াত বা কুর’আনে চুমু খাওয়া নয়।

৫. ডাকাতদের সন্ত্রাস ও ভোটডাকাতদের সন্ত্রাস

ত্রাস সৃষ্টিই হলো সন্ত্রাস। সন্ত্রাসের আভিধানিক অর্থ হলো রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক স্বার্থে অস্ত্রের বা শক্তির ব্যবহার। সে সংজ্ঞা মতে মহল্লায় ডাকাতেরা যেমন সন্ত্রাসী, তেমনি সন্ত্রাসী হলো ভোটডাকাতি করে যারা ক্ষমতায় যায় তারা। উভয়ই স্বার্থ হাসিলে অস্ত্রের ব্যবহার করে এবং অস্ত্রের সাহায্যে মানুষকে সন্ত্রস্ত করে। মহল্লার ডাকাতদের সন্ত্রাস সীমিত। কিন্তু ভোটডাকাতদের সন্ত্রাস সমগ্র দেশ জুড়ে। মহল্লার ডাকাত কিছু গৃহের অর্থ ছিনতাই করে। কিন্তু ভোটডাকাত সন্ত্রাসীগণ ছিনতাই করে সমগ্র দেশ। দেশের রাজস্ব ভান্ডার, দেশী ব্যাংক, বিদেশী ব্যাংক ও অন্য রাষ্ট্রের দেয়া লোনের অর্থ –সব কিছুর মালিক হয় ক্ষমতাসীন ভোটডাকাতগণ। হাসিনার ন্যায় ভোটডাকাতগণ তাই বাংলাদেশের বড় সন্ত্রাসী। দেশের সকল ডাকাত মিলে যত ডাকাতি করে, হাসিনা ও তার সহচরগণ তার চেয়ে হাজার গুণ বেশী ডাকাতি করে। সন্ত্রাসীদের ক্ষমতায় বসিয়ে কি তাই সন্তাস বিলুপ্ত হয়? বরং সন্ত্রাস তখন সরকারি নীতিতে পরিণত হয়। তাই মহল্লার কিছু ডাকাত গ্রেফতার করে সন্ত্রাস দমন অসম্ভব। সেটি বাঘ-ভালুককে মুক্ত ছেড়ে মাছি মারার মত। বাংলাদেশে সেটিই হচ্ছে।

৬. ঈমানদারী ও বেঈমানী

মুসলিমগণ ভাষা ও ভিন্ন ভূগোলের নামে বিভক্ত হলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্র গড়ে। এবং বিভক্তির দিনগুলিকে স্বাধীনতার দিবস রূপে উৎসব করে। অথচ ইসলাম বিভক্তিকে ঘৃণা করতে শেখায় এবং ঐক্যের প্রতিষ্ঠাকে ইবাদত বলে। মুসলিমগণ কুর’আনের সে শিক্ষা থেকে দূরে সরেছে। বিভক্তি জাতিকে দুর্বল করে এবং পরাধীনতা আনে। মুসলিমদের আজকের দুর্বলতা ও পরাজয়ের মূল কারণ এই বিভক্তি। ভারত আজ শক্তিশালী। কারণ ভাষা ও ভিন্ন ভৌগলিক পরিচয় নিয়ে ভারত ভেঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশ গড়েনি। এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই -এটি মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া মুসলিমে পরিচয়। এ পরিচয়

নিয়ে বাঁচার মধ্যেই প্রকৃত ঈমানদারি। ভাই না হয়েও নানা ভাষার অমুসলিমগণ এক দেশে বসবাস করে এবং বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয় –যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। অথচ সে গুণ মুসলিমদের নাই। এরূপ বিভক্তি নিয়ে তো বেঈমানী। এ বেঈমানী নিয়ে কি পরকালে পুরস্কার জুটবে?

মহান আল্লাহতায়ালা চান মুসলিমগণ একতাবদ্ধ হোক ও বিজয়ী হোক। ঈমানদারের উপর নামায-রোযা যেমন ফরজ, তেমনি ফরজ হলো একতাবদ্ধ হওয়া। নামায ছাড়লে যেমন আযাব আসে, তেমিন আযাব আসে একতা ছেড়ে বিভক্তির পথ ধরলে। অপরদিকে শয়তান চায়, মুসলিমগণ বিভক্ত হোক, পরাজিত হোক ও অপমানিত হোক। মুসলিমগণ শয়তানের পথই বেছে নিয়েছে। আরবগণ তাই ২২ টুকরোয় বিভক্ত। মুসলিম বিশ্ব ৫৭ টুকরোয় বিভক্ত। ফলে তারা সর্বত্র পরাজিত ও অপমানিত। অমুসলিমগণ তাদের ভৌগলিক অখন্ডতা বহাল রাখতে যুদ্ধ করে। আর মুসলিমগণ যুদ্ধ করে ভৌগলিক মানচিত্র খন্ডিত করতে। এবং সেটি কাফের শক্তির সাথে  কোয়ালিশন গড়ে। সেটি যেমন আরব মুসলিমগণ করেছে ১৯১৭ সালে। বাঙালী মুসলিমগণ একই কাজ করেছে ১৯৭১ সালে। এগুলি তো বিশাল পাপ। আর প্রতিটি পাপই তো আযাব ডেকে আনে। মুসলিম বিশ্বে সে আযাবের সংখ্যা কি কম?  মুসলিমদের এ বিভক্তি ও পরাজয় নিয়ে শয়তানী শক্তিবর্গ বড্ড খুশি। তাই ১৯৭১ য়ের ১৬ই ডিসেম্বর উৎসব হয় দিল্লিতে। শত্রুগণ মুসলিম বিশ্বের এ বিভক্ত মানচিত্র বহাল রাখতে চায়। এটিকে তারা বিশ্বের স্থিতিশীলতা বলে। বস্তুত এ বিভক্তি মানচিত্র হলো তাদের নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়। যেমন, ইসরাইলের জন্য জরুরী হলো আরব বিশ্বের বিভক্তি মানচিত্র বাঁচিয়ে রাখা। তেমন একটি স্বার্থের কারণে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করায় কেউ উদ্যোগী হলে তাদেরকে তারা সন্ত্রাসী বলে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে।

বেঈমান মানুষের পরিচয়টি কোন গোপন বিষয় নয়। সেটি বুঝা যায়, মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুর’আনে কি বললেন সেটি বুঝায় ও তা মানায় প্রবল অনাগ্রহ থেকে। ঈমানদার মানুষের পরিচয়ও কোন গোপন বিষয় নয়। সেটি বুঝা যায়, কুর’আনে কি বলা হলো সেটি বুঝা ও মেনে চলায় আমৃত্যু প্রচেষ্টা ও পেরেশানী থেকে। এ পেরেশানীটিই হলো ঈমানের প্রকৃত পরিমাপক। এবং সে প্রচেষ্টা ও পেরেশানীটি শুধু নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, ও তাসবিহ-তাহলিলে সীমিত থাকলে চলে না। সেটি থাকতে হয় মুসলিম ঐক্য, ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণ, শরিয়ত পালন, শুরা ভিত্তিক শাসন ও জিহাদে। নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ তো সে প্রচেষ্টা ও পেরেশানী নিয়ে বেঁচেছিলেন। ফলে তারা মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য পেয়েছেন; এবং সে সাহায্যের বরকতে বিজয়ের পর বিজয় পেয়েছেন। পরিণত হয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিশ্বশক্তিতে। কিন্তু সে প্রচেষ্টা ও পেরেশানী কতটা বেঁচে আছে আজকের মুসলিমদের মাঝে? তাদের আগ্রহ যতটা মুসলিম রূপে বাঁচায়, তার চেয়ে বেশী আগ্রহ ভাষা, গোত্র ও ভৌগলিক পরিচয় নিয়ে বাঁচায়। প্রশ্ন হলো, রোজ হাশরের বিচার দিনে কে কতটা বাঙালী, আরব, তুর্কী বা অন্য কোন ভাষার পরিচয় নিয়ে বাঁচলো -সে প্রশ্ন কি কখনো তুলবেন? সেখানে তো প্রশ্ন উঠবে কে কতটা মুসলিম রূপে বাঁচলো তা নিয়ে। ০৮/০৬/২০২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *