বিবিধ ভাবনা ৫২

ফিরোজ মাহবুব কামাল

১. লড়াইটি অসভ্যদের বিরুদ্ধে সভ্যদের

বাংলাদেশে রাজনৈতিক লড়াইয়ে কে কোন পক্ষে -সেটি কোন গোপন বিষয় নয়। লড়াইটি অসভ্যদের বিরুদ্ধে সভ্যদের। অসভ্যদের দলে রয়েছে চোরডাকাত, ভোটডাকাত, গণতন্ত্রহত্যাকারী, স্বৈরাচারী এবং গুম-খুন-সন্ত্রাস ও ধর্ষণের নায়কগণ। অপর পক্ষে রয়েছে তারা যারা জনগণের ভোটের অধিকার, কথা বলা ও প্রতিবাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এবং দেশকে বাঁচাতে চায় সন্ত্রাস, দুর্বৃত্তি ও চুরি-ডাকাতি থেকে। এবং ফিরিয়ে আনতে চায় ইসলামী মূল্যবোধ। এমন লড়াইয়ে নিরপেক্ষ, নীরব ও নিষ্ক্রিয় থাকার অর্থ অসভ্য ও অপরাধীদের বিজয়ী করা। এটি দেশবাসীর বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ। কারণ এতে জনগণের বিপর্যয় বাড়ে। মানুষের বিবেকের পরীক্ষা হয় অসভ্যদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামাতে। তাই এখন বিবেকের পরীক্ষা দেয়ার পালা। 

২. সভ্য ও অসভ্যের পরিচয়

সভ্য রূপে গণ্য হতে বিবেকের পরীক্ষায় পাশ করতে হয়। পাশের জন্য লাগে নৈতিক সামর্থ্য। থাকতে হয় চোরডাকাত, ভোটডাকাত, ধর্ষক, সন্ত্রাসী ও গণতন্ত্র হত্যাকারী দুর্বৃত্তদের ঘৃনার নৈতিক বল। প্রশ্ন হলো, যারা গণতন্ত্র হত্যাকারী, মানবিক অধিকার হননকারী, খুনি, বাকশালী স্বৈরাচারী মুজিবকে জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু বলে তাদের কি সে নৈতিক সামর্থ্য আছে? এটি তো বিবেকহীনতা। বাংলাদেশের আজকের বিপর্যয়ের মূল কারণ এ বিবেকহীনরা।

৩. দর্শনের গুরুত্ব
জনগণের দর্শন তথা চিন্তাধারা পাল্টে গেলে বিচারধারা এবং মূল্যবোধও পাল্টে যায়। কে নন্দিত এবং কে নিন্দিত -সে বিচার আসে দর্শন থেকে। সেক্যুলার দর্শনে ব্যাভিচারও প্রেম, পতিতাবৃত্তিও বৈধ ব্যবসা  এবং শেখ মুজিব ও মুক্তিযাদ্ধারা শ্রেষ্ঠ সন্তান গণ্য হয়। এবং ভারত গণ্য হয় শ্রেষ্ঠ বন্ধু রূপে। তখন রাজাকার গণ্য হয় ভয়ানক অপরাধী রূপে। রাজাকারদের পিটিয়ে হত্যা করা বা ফাঁসিতে ঝুলানো তখন শ্রেষ্ঠ কর্ম গণ্য হয়। একাত্তর থেকে বাংলাদেশে এ দর্শনই বিজয়ী। তবে শীত যেমন চিরকাল থাকে না, তেমনি বসন্তও চিরকাল থাকে না। পরিবর্তন আসবেই। ভবিষ্যতে ইসলামী চেতনার বিজয় এলে এ বিচারধারা যে পাল্টে যাবে –তা নিয়ে কি সামান্যতম আছে? ভবিষ্যতে কীরূপ হবে তা নিয়ে অতীত থেকে শিক্ষা নেয়া যেতে পারে।

এক সময় বাঙালী মুসলিমের রাজনীতিতে মৌলভী হওয়ার গুরুত্ব ছিল। সন্মানও ছিল। এটি ছিল উচ্চ শিক্ষা ও আভিজাত্যের প্রতীক। এব কারণ, জনগণের মাঝে তখন ইসলামী ভাবধারা জাগ্রত ছিল। ফলে শেরে বাংলা মাদ্রাসা শিক্ষিত না হয়েও জনগণের মাঝে মৌলভী ফজলুল হক রূপে পরিচিত ছিলেন। প্রখ্যাত মুসলিম লীগ নেতা ফরিদপুরের তমিজ উদ্দীন খান লেখাপড়া করেছিলেন কলকাতার প্রসিডেন্সি কলেজে। পেশায় ছিলেন আইনবিদ, স্পীকার হয়েছিলেন পাকিস্তান গণপরিষদের (পার্লামেন্টের)। মাদ্রাসার সাথে তার কোন সম্পর্কই ছিল না, কিন্তু  পরিচিত ছিলেন মৌলভী তমিজউদ্দীন খান রূপে। এক সময় পূর্ব পাকিস্তানের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের সকল প্রধানই ছিলেন মাওলানা। মুসলিম লীগের প্রধান ছিলেন মাওলানা আকরাম খাঁ, আওয়ামী লীগের প্রধান ছিলেন মাওলানা আব্দুর রশিদ তার্কবাগিশ এবং ন্যাপের প্রধান ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী। এ আসনে কোন মিস্টারের স্থান ছিলনা। কারণ, সে সময় জনগণের মাঝে ইসলামী দর্শন ও ইসলামী মূল্যবোধ বেঁচে ছিল। ফলে সে মূল্যবোধে মৌলবী বা মাওলানা হ্‌ওয়াটি সন্মানের বিষয় ছিল। কিন্তু একাত্তরে সে মূল্যবোধ বিলুপ্ত হয়েছে। সেক্যুলার বাঙালী জাতীয়তাবাদের প্রবল জোয়ারে ভেসে যায় ইসলামী দর্শন। ফলে মাওলানা-মৌলভীদের রাজাকার বলে ঘৃণা করা শুরু হয়।  

যারা আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করে তারা সুবিধাবাদীদের ন্যায় স্রোতে ভাসে না। বরং তারা মানুষের দর্শন তথা চিন্তাধারা পাল্টায়। তারা চেষ্টা করে জনগণকে নিজেদের দর্শনে ভাসিয়ে নিতে। এটিই নবী-রাসূলদের সূন্নত। দর্শন পাল্টে গেলে বিজয়ী দর্শনের ধারকগণ নন্দিত হয়। আজ বাংলাদেশে সেক্যুলার জাতীয়তাবাদী ধারার বিজয়। ফলে মুজিব ও মুক্তিযোদ্ধারা নন্দিত হচ্ছে। এবং ঘৃণীত হচ্ছে রাজাকারগণ। এটিই স্বাভাবিক। ইরানে এক সময় জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারিস্টদের বিজয় এসেছিল। তাদের নেতা ছিল শরিফ মোসাদ্দেক। তিনি জনগণের ভোটে ইরানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি ইরানের শাহ মহম্মদ রেজা শাহকে বিতাড়িত করেন। দেশের তেল শিল্পকে জাতীয়করণ করেন। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও  ব্রিটেনের কাছে এ গণতন্ত্র ভাল লাগেনি, তারা সামরিক অভ্যুর্থুন ঘটিয়ে মোসাদ্দেককে হটিয়ে বিতাড়িত মহম্মদ রেজা শাহকে আবার ক্ষমতায় বসায়। ইরানী জাতীয়তাবাদীদের কাছে অতি নন্দিত ব্যক্তি হলো এই শরিফ মোসাদ্দেক। ১৯৭৯ সালে ইরান বিপ্লবের পর জাতীয়তাবাদীরা তেহরান শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির নাম রাখে মোসাদ্দেকের নামে। বিপ্লবের শুরুর সে মুহৃর্তে ইসলামপন্থীরা তখন ক্ষমতা থেকে দূরে। কিন্তু ইরানের ইসলামপন্থীগণ ক্ষমতা হাতে নেয়ার পর মুসাদ্দেকের নাম বেশীদিন চলতে দেয়নি। ইসলামপন্থীদের কাছে সেক্যুলারিস্ট ও জাতীয়তাবাদী হ্‌ওয়াটি হারাম ও ঘৃণার বিষয়। তাই মোসাদ্দেকে বদলে সে সড়কের নাম রাখে খেয়াবানে ওয়ালী আছর। ফার্সি ভাষায় বড় রাস্তাকে বলা হয় খেয়াবান। এবং ওয়ালী আছর বলা হয় ইমাম মেহেদীকে। সম্ভবত মোসাদ্দেকের নামে সমগ্র ইরানের কোথাও  কোন রাস্তা বা প্রতিষ্ঠানের নাম নাই। কোন মুসলিম দেশে মুর্তিপূজা যেমন নন্দিত হতে পারে না, তেমনি কোন জাতীয়তাবাদীও সন্মানিত হতে পারে না -এটিই হলো ইসলামপন্থীদের মোদ্দা কথা।

দেরীতে হলেও এটি নিশ্চিত যে, বাংলাদেশেও একদিন ইসলামপন্থীদের জোয়ার আসবে। আজকের হাসিনার আমলই হলো সেক্যুলারিস্ট জাতয়তাবাদীদের শীর্ষ আমল। এরপর জোয়ার আসবে তাদের নির্মূলের। তখন একাত্তরে যারা ভারতের পেটে আশ্রয় নিয়েছিল এবং তাদের ঘরে ভাতমাছে মোটা-তাজা হয়েছিল এবং মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়ে ভারতীয়দের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিলে যুদ্ধ করেছিল -সে পরিচয় দিতেও তারা লজ্জা বোধ করবে। তখন বিপুল ভাবে নন্দিত হবে রাজাকারগণ। এবং সেদিনটি বেশী দূরে নয়। এখন অতিক্রান্ত হচ্ছে মুজিব-বসন্তের শেষ দিনগুলি। কারণ ইসলামী চেতনাসমৃদ্ধ কোন মুসলিমের কাছেই ভারতে যাওয়া এবং ভারতীয় কাফেরদের অস্ত্র নিয়ে কোন মুসলিম দেশ ভাঙ্গা প্রশংসিত হতে পারে না। এ কাজ শত ভাগ হারাম। মক্কার শরীফ হোসেন আজ আরব বিশ্বে অতি নিন্দিত ব্যক্তি। কারণ শেখ মুজিবের মত সে্ও ব্রিটিশ কাফের বাহিনীকে ডেকে এনে আরবের ইসলামী ভূমিকে তাদের হাতে তুলে দেয়। এবং সৃষ্টি করে মুসলিম মিল্লাতের হৃৎপিন্ডে ইসরাইল।  

তাই যারা আদর্শের রাজনীতি করে তারা রাজনীতির স্রোতে ভাসে না, বরং জনগণের দর্শন পাল্টায়। এর মধ্যেই তাদের বিজয় ও সন্মান। সন্মান কখনোই স্রোতে ভাসাতে নয়। তবে পরিতাপের বিষয় হলো বাংলাদেশের কোন কোন ইসলামী নেতা, সংগঠন ও ছাত্র সংগঠন জনগণের দর্শন বদলানোর বদলে নিজেদের দর্শনই বদলিয়ে নিচ্ছে। তারা ভাসছে জাতীয়তাবাদের স্রোতে। ১৬ই ডিসেম্বর এলে তাদের স্রোতে ভাসার চিত্রটি দেখা যায়। ভারতীয় বাহিনীর বিজয়কে তারা নিজেদের বিজয় রূপে জাহির করে রাস্তায় বড় বড় মিছিল করে। এটি তাদের চরম পথভ্রষ্টতা। তারা সেটি করে নিজেদের কুর’আনী দর্শন ও ইতিহাস জ্ঞানের নিদারুন অভাবের কারণে। এবং অনেকে সেটি করে জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারিস্ট মহলে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর তাড়নায়।

৪. স্বাধীনতার সৈনিক কই?

ভারত যদি বাংলাদেশ দখল করে নেয় তবে সে ভারতীয় দখলদারীর বিরুদ্ধে ক’জন বাংলাদেশী যুদ্ধে নামবে? ভারতের দখলদারী কি আজও কম? তারা কি কম নিয়েছে? নদীর পানি, সমুদ্র বন্দর, করিডোর, বাজার ও গণতন্ত্র সবই তো নিল। কিন্তু ক’জন রাস্তায় নামলো? ১৭৫৭ সালে ইংরেজরা যখন স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিল, সেদিনই বা ক’জন যুদ্ধে নেমেছিল? স্বাধীনতা বাঁচাতে যুদ্ধ নামাটি সবার কাজ নয়। এ কাজে মানবিক গুণে অনেক পথ সামনে এগুতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশীগণ সে পথে্ই বা কতটুকু এগিয়েছে? সে গুণ বাড়ানোর কাজে বাড়াতে হয় চেতনার পুষ্টি। রণাঙ্গণে যুদ্ধে জিততে হলে চেতনার ভূমিকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে হয়। সে কাজটি দেশের সত্যসেবী বুদ্ধিজীবীদের। কিন্তু তারাই বা কই?    

বিদেশী শত্রুর হামলার মুখে স্বাধীনতা বাঁচানোর যুদ্ধ ইসলামে পবিত্র জিহাদ। জিহাদ হলো দেশী স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে লড়াইও। দেশী ও বিদেশী নেকড়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই, উভয়ই সমান প্রাণনাশী। তেমনি পার্থক্য নাই স্বাধীনতার দেশী ও বিদেশী শত্রুর মাঝে। তাই স্বাধীনতার শত্রু শুধু ভারত নয়, ভারতসেবী আওয়ামী স্বৈরাচারীগণও। তাই স্বাধীনতা নিয়ে যারা বাঁচতে চায় তাদের শুধু ভারতীয় হামলার বিরুদ্ধে লড়লে চলে না। স্বাধীনতার দেশী শত্রুদের বিরুদ্ধেও লড়তে হয়। ঈমানদারের ঈমানের পরীক্ষা হয় এ লড়াইয়ের ময়দানে। কিন্তু কোথায় সে লড়াকু সৈনিক?  

৫. সভ্য সমাজ ও অসভ্য সমাজ

পরিবেশ কতটা পরিচ্ছন্ন সেটি উঠানে মলমুত্র ফেললেই বুঝা যায়। পরিবেশে নোংরা হলে অসংখ্য মশা-মাছি সেখানে ত্বরিৎ জমা হয়। কারণ, মশা-মাছিরা সেখানেই বেড়ে উঠে। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে সেটি ঘটে না। কারণ মশা-মাছি বেড়ে উঠার স্থান পায়না।

তেমনি সমাজ কতটা অসভ্য, সেটি সঠিক ভাবে বুঝা যায় খুনি, স্বৈরাচারী ও সন্ত্রাসী দুর্বৃত্তগণ রাজনৈতিক দল গড়লে। দুর্বৃত্তগণ তখন দলে দলে সে রাজনৈতিক দলে যোগ দেয়। বাংলাদেশে সেটি দেখা গেছে মুজিব-হাসিনার ন্যায় গণহত্যাকারী ও গুম-খুন-সন্ত্রাসের নায়কদের রাজনীতিতে নামাতে। তাদের দলে লাখ লাখ বাঙালী যোগ দিয়েছে। বাঙালী চরিত্রে মূল রোগটি এভাবেই ধরা পড়ে। সমাজ ও রাষ্ট্র দুর্বৃত্তদের বেড়ে উঠার জায়গা করে দেয়। কোন সভ্য দেশের রাজনীতিতে এরূপ দুর্বৃত্তগণ কি কখনো ব্যবসা জমাতে পারতো? গুম-খুন-সন্ত্রাসের নায়কগণ রাজনীতিতে বাজার পাবে -সে সুযোগ কোন সভ্য দেশে রাখা হয় না। অপরাধীদের স্থান হয় কারাগারের বদ্ধ কোঠায়। অথচ বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্নতর। হিংস্র পশু যেমনে জঙ্গলে অবাধে চলে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তেমনি অবাধে ব্যবসা জমায় ভয়নাক অপরাধীরা। বাধা দেয়ার কেউ নাই। এভাবে কি কোন সভ্য সমাজ নির্মিত হয়?   

গৃহে আবর্জনার স্তুপ দেখে সহজেই বুঝা যায় – গৃহের বাসিন্দারা সভ্য নয়। দেশে গুম-খুন-সন্ত্রাসের নায়কদের দখলদারী প্রতিষ্ঠিত হলো অথচ সে দুর্বৃত্তদের সরাতে জিহাদে শুরু হলো না –তখন কি বুঝতে বাঁকি থাকে, জনগণের সভ্য হওয়ার পথে এখনো অনেক পথ বাকি আছে?

৬. অবহেলিত মহান আল্লাহতায়ালার অস্ত্র

চোরডাকাত, ভোটডাকাত এবং গুম-খুন-ধর্ষণ-সন্ত্রাসের নায়কদের ন্যায় অসভ্যদের নির্মূলের সফল হাতিয়ারটি দোয়া-দরুদ, নামায-রোযা, ওয়াজ-নসিহত ও বক্তৃতা-বিবৃতি নয়। সেটি হলো জিহাদ। অসভ্য শক্তির নির্মূলে জিহাদই হলো মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত হাতিয়ার। নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ সে অস্ত্রটি ব্যবহার করেছেন দুর্বৃত্ত শক্তির নির্মূলে। কিন্তু বাংলাদেশে নামাযী-রোযাদারের সংখ্যাটি বিশাল হলেও এ হাতিয়ার তুলে নেয়ার লোক নাই। ফলে প্রবলতর হচ্ছে অসভ্যদের রাজত্ব। এবং পরাজিত থেকে যাচ্ছে ইসলাম।

৭. উপেক্ষিত যেখানে সভ্য মানব নির্মাণ

দালান-কোঠা, কল-কারখানা ও রাস্তা-ব্রিজ নির্মাণের কারণে কোন দেশ সভ্য হয় না। দেশ সভ্য হয় সভ্য মানুষ নির্মাণের কাজ কতটা সফল হলো -তা থেকে। নবীগণ এ কাজের জন্য এসেছিলেন। মানুষকে সভ্যতর রূপে গড়ে তোলার কাজে সবচেয়ে জরুরি হলো তাদের চেতনায় সত্য ও সৃষ্টিশীল জ্ঞানের পুষ্টি। সে জ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎস হলো পবিত্র কুর’আন। জ্ঞানদান ও জ্ঞানলাভের কাজে পবিত্র কুর’আন যতদিন গুরুত্ব পেয়েছে মুসলিমগণ ততদিন বিশ্বের বুকে সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তির মর্যাদা পেয়েছে। সে কুর’আন থেকে যখনই তারা দূরে সরেছে তখনই তাদের পতন শুরু হয়েছে। অথচ পবিত্র কুর’আন থেকে শিক্ষা লাভের খাতটিই হলো বাংলাদেশে সবচেয়ে উপেক্ষিত খাত।

সৎ ও সাহসী মানুষ বিপুল সংখ্যায় বেড়ে না উঠলে সভ্য ও গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মিত হয় না। বাংলাদেশে সে কাজটি হয়নি। সৎ ও সভ্য মানুষ গড়ার কাজটি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের। অথচ সে কাজটি সেখানে হচ্ছে না। সেগুলি ব্যস্ত দুর্বৃত্ত উৎপাদনের কাজে। বাংলাদেশে যারা গুম-খুন-ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের জোয়ার সৃষ্টি করেছে তারা কোন জঙ্গলে বেড়ে উঠেনি, বেড়ে উঠেছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

অসভ্য সমাজের আরেক পরিচয় হলো সেখানে চোর-ডাকাত ধরার লোক পাওয়া যায় না। বরং তাদের সংখ্যাটি বিশাল যারা চোর-ডাকাতদের রাজনীতিতে যোগ দেয় এবং গণহত্যারী চরম স্বৈরাচারীকে জাতির পিতা বলে এবং ডাকাত সরদার্নীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে। এটি জনগণের নৈতিক দেউলিয়ার বিশাল আলামত। এ ভয়ানক নৈতিক রোগের চিকিৎসা না হলে কি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা দেয়া যায়? ৩১/০৫/২০২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *