বিবিধ ভাবনা (৪৭)

ফিরোজ মাহবুব কামাল

১. বাংলাদেশ একটি জেলখানা

কারো সভ্যতা, ভদ্রতা ও বিবেকের বিচার কখনোই দালান-কোঠা, গাড়ি ও পোষাক-পরিচ্ছদ দেখে হয়না। বড় বাড়ি, দামী গাড়ি ও জমকালো পোষাক চোর-ডাকাতদের ন্যায় দুর্বৃত্তদেরও থাকতে পারে। তেমনি একটি রাষ্ট্র কতটা উন্নত সে বিচার রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কলকারখানা ও জিডিপি’র বৃদ্ধি দেখে হয়না। বিচারে গুরুত্ব পায় সে দেশের মানুষ কতটা স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করে -সে বিষয়গুলি। দেশ যদি জেল খানায় পরিণত হয় -তবে রাস্তাঘাট, গাড়ি-বাড়ি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন দিয়ে লাভ কি? জেলখানার বিল্ডিংটি প্রাসাদসম হলে জেলবাসীদের কি লাভ? জেলখানার কয়েদীদের স্বাধীনতা ও মর্যাদা থাকে না। থাকে বিরামহীন গোলামী। জেলে আটক থাকাটাই বড় শাস্তি। এজন্যই জেলখানায় কেউ আটক থাকতে চায় না।

একটি রাষ্ট্রও তেমন এক জেলখানায় পরিণত হতে পারে। তেমন এক জেলখানার উদাহরণ হলো বাংলাদেশ। জেলের মতই দেশটি একটি আযাবের জায়গা। জেলখানায় মিটিং-মিছিল ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকে না। নির্যাতন হলেও তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অধিকার থাকে না। থাকে না সংগঠিত হওয়ার অধিকার। সে অধিকার নাই বাংলাদেশের জনগণেরও। এখান স্বাধীন ভাবে বাঁচতে গেলে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তবে পার্থক্য হলো, সাধারণ জেলখানায় অপরাধীদের রাখা হয়, কিন্তু বাংলাদেশ নামক বিশাল জেলখানায় বন্দী হয়ে আছে দেশটির নিরপরাধ জনগণ। 

২. কবরে গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের ব্যর্থ জনগণ

শাসনতান্ত্রিক ভাবে বাংলাদেশকে বলা হয় একটি গণতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু কোথায সে গণতন্ত্র? গণতন্ত্র দেশের মানুষকে আর কি গণতন্ত্র দিবে? গণতন্ত্র নিজেই এখন কবরবাসী। মিটিং-মিছিলের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষ নির্বাচন, স্বাধীন পত্রিকা ও নিরপেক্ষ বিচার ছাড়া কি গণতন্ত্রের কথা ভাবা যায়? ভোটচোর হাসিনা এর সবগুলোই ধ্বংস করেছে। সেগুলি ধ্বংস না করলে চোরগণ কি ক্ষমতায় থাকতে পারে?

পার্শ্ববর্তী পশ্চিম বাংলায় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়ে গেল। অথচ সেরূপ একটি নির্বাচন বাংলাদেশে হয়না। এটি কি কম লজ্জার? আত্মসন্মান আছে এমন কোন বাংলাদেশী কি এ অপমান সইতে পারে? ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগের রাতে এদেশে ভোটডাকাতি হয়েছে। যে কোন সভ্য দেশে চোর-ডাকাতদের শাস্তি হয়, কিন্তু বাংলাদেশে ভোটচোর হাসিনাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলা। চোরকে এরূপ সন্মানিত করার নীতি কি কোন সভ্য দেশে আছে? কোন সভ্য জনগণ কি চোর-ডাকাতের শাসন মেনে নেয়? বাংলাদেশী জনগণ এ ক্ষেত্রে ইতিহাস গড়েছে। সেটি হাসিনার ন্যায় ভোটচোরের শাসন মেনে নিয়ে।

ছাগল-ভেড়ার খামার দেখলে সেখানে নেকড়ে হানা দেয়। তেমনি জনগণ ভীরু-কাপুরুষ হলে সে দেশে ডাকাতেরা হানা দেয়। ছাগল-ভেড়া জন্মায় জবাই হওয়ার জন্য; তেমনি কাপুরুষগণ বেড়ে উঠে চোর-ডাকাতদের শিকার হওয়ার জন্য। এবং বাংলাদেশে এ চোর-ডাকাতগণ এখন শাসক হয়ে বসেছে। হাসিনার মত চোর কোন সভ্যদেশে কি রাস্তার ঝাড়ুদার হওয়ার চাকুরিও পেত? কেউ কি কোন চোরকে তার বাড়ীর দাসীও বানায়? চোরদের স্থান তো জেলে। যে চোর জনগণের ভোট চুরি করতে পারে, সে রাজস্বের ভান্ডারও চুরি করতে পারে।

চোরদের হাতে রাষ্ট্রের দায়ভার দূরে থাক, ঝাড়ুদার বানানোও নিরাপদ নয়। এরা দেশও বিক্রি করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে চোরদের পক্ষে সম্ভব হলো দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়াও! মুজিবে ন্যায় আত্মস্বীকৃত খুনি, বাকশালী স্বৈরাচারী এবং ভারতের ন্যায় শত্রুশক্তির চর দেশটির জনগণের কাছে বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা ও মহান নেতার সন্মানও পায়! কি আশ্চর্য? পাকিস্তানীদের বড়ই সৌভাগ্য যে তারা বেঁচে গেছে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্তদের ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে। কিন্তু হতভাগা বাঙালী বাঁচেনি।   

৩. অসভ্য শাসনের শিকার বাংলাদেশ

বাঘ-ভালুকের ন্যায় হিংস্র পশুগণ জনপদে বাস করে না। নিজেদের জান বাঁচাতে তারা গভীর জঙ্গল খোঁজে। তেমনি চোর-ডাকাতেরাও সভ্য সমাজে বাস করে না, তারাও নিজেদের নিরাপত্তার খাতিরে অসভ্য সমাজ খোঁজে। প্রয়োজনে সেরূপ একটি অসভ্য সমাজ তারা তৈরী করে নেয়। এবং তারই প্রমাণ হলো আজকের বাংলাদেশ। অসভ্য সমাজের নির্মাণের খাতিরে গণতন্ত্র, নিরপেক্ষ আদালত ও স্বাধীন মিডিয়ার ন্যায় সভ্য সমাজের প্রয়োজনীয় স্তম্ভগুলিকে তারা কবরে পাঠায়। জঙ্গলে যেমন বিচার-আচার থাকে না, তেমনি থাকে না অসভ্য সমাজেও। বাংলাদেশে তো সেটইই হয়েছে। তাই একটি দেশে সভ্য রীতি-নীতি কতটা মারা পড়েছে এবং অসভ্য শাসন কতটা প্রবলতর হয়েছে -সেটি বুঝা যায় শাসন ক্ষমতায় চোর-ডাকাতদের দেখে।

৪. সাচ্চা ঈমানের পরিচয়

সেই প্রকৃত ঈমানদার যে বাঁচে একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করার নিয়তে। তখন আমূল বিপ্লব আসে তাঁর চরিত্র, কর্ম ও আচরণে। তখন তাঁর প্রতিটি দিন কাটে নেক আমলে। সেটি যেমন কর্মে, তেমনি বুদ্ধিবৃত্তিতে। কারণ সে জানে, দুনিয়া ছেড়ে যখন তখন তাঁকে বিনা নোটিশে চলে যেতে হবে। সে জানে, অনন্ত-অসীম আখেরাতে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার কাজটি দুনিয়াতে থাকা অবস্থাতেই করতে হবে। ফলে সে তাঁর সমগ্র সামর্থ্যের বিনিয়োগ করে নেক আমালে। তখন আখেরাতের সঞ্চয় বাড়াতে শুরু হয় প্রচণ্ড তাড়াহুড়া। এদের জীবনে জিহাদও আসে। কারণ, মহান আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে বড় নেক আমল হলো জিহাদ। নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাত ব্যক্তির জীবনে পরিবর্তন আনে। কিন্তু জিহাদ দেশ জুড়ে বিজয় আনে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের। তখন বিপ্লব আসে কোটি কোটি মানুষের জীবনে। মহান আল্লাহতায়ালার নিজ বয়ানে ঈমানের দাবীতে এই জিহাদীরাই হলো প্রকৃত সাচ্চা –যা তিনি বলেছেন সুরা হুজরাতের ১৫ নম্বর আয়াতে।

৫. জিহাদ কেন অনিবার্য হয়?

যে জনপদে বাঘ-ভালুকের বাস, সেখানে বাঘ-ভালুক তাড়ানোর সদা প্রস্তুতি থাকতে হয়। নইলে পশুর পেটে যেতে হয়। তেমনি যে সমাজে দুর্বৃত্তদের দাপট তাদের নির্মূলেও লাগাতর যুদ্ধ থাকতে হয়। নইলে সমাজে শান্তি আসে না। তখন দেশ অধিকৃত হয় দুর্বৃত্তদের হাতে। দুর্বৃ্ত্ত নির্মূলের সে যুদ্ধটিই হলো মুসলিম জীবনের জিহাদ। নবীজী (সা:)’র হাদীস: মুসলিমের জীবনে দুই অবস্থা। হয় সে জিহাদে থাকবে অথবা জিহাদের প্রস্তুতি নিতে থাকবে। অপরদিকে শয়তানের এজেন্ডা হলো: মুসলিম জীবন থেকে জিহাদ বিলুপ্ত করা। এ জন্যই যে দেশের রাজনীতি ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে শয়তানী শক্তির বিজয়, সে দেশে জিহাদ থাকে না। বরং জিহাদ গণ্য হয় সন্ত্রাস রূপে।

অথচ জিহাদের প্রস্তুতি নিয়ে বাঁচাটি ইসলামে ফরজ। কারণ, সে নির্দেশটি এসেছে সুরা আনফালের ৬০ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে, “তাদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়ে প্রস্তুত হও; শক্ত করে ধরো ঘোড়ার লাগামকে, এবং তা দিয়ে সন্তস্ত্র করো তোমাদের শত্রু ও আল্লাহর শত্রুদের…”। অতএব জিহাদের সে প্রস্তুতি না থাকাটিই চুড়ান্ত বেঈমানী্। এজন্যই নবীজী (সা:)’র প্রসিদ্ধ হাদীস: যে কোনদিন জিহাদ করেনি এবং জিহাদের নিয়েতও করে না -সে মুনাফিক।

 

৬. বাংলাদেশের চোরের সন্মান

চোর কখনোই চুরি করা মালের মালিক হয়না। ভোট চুরি করে তেমনি কেউ দেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী হতে পারে না। যে কোন দেশের আইনে এরূপ চুরি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই প্রতিটি সভ্য দেশেই চোরকে শাস্তি দেয়া হয়। কিন্তু বিশ্বমাঝে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এদেশে চোরকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে সন্মানিত করা হয়। জনগণ ভূলে যায় যে, ভোটচোরকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলার অর্থ চোরকে সন্মানিত করা। ইসলামে এটি গুরুতর পাপ। কারণ ঈমানদার বাঁচতে হয়ে চোর-ডাকাতসহ সকল দুর্বৃত্তদের নির্মূলের প্রতিজ্ঞা নিয়ে। কারণ, নেহী আনিল মুনকার (দুর্বৃত্তির নির্মূল) এবং আ’মারু বিল মারুফ (ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা) হলো পবিত্র কুর’আনে বর্ণীত মুসলিম জীবনের মিশন।

 

৭. উম্মাহর অনৈক্য ও হারাম ভূগোল

মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুর’আনে কি বলেছেন সেটি গুরুত্ব পেলে সমাজে বিভেদ হয়না। বিভেদ তো তখন শুরু হয় যখন ঘটনার বিচারে নিজের স্বার্থ, নিজ নেতা ও দলের স্বার্থ, গোত্রের স্বার্থ ও শ্রেণীস্বার্থ গুরুত্ব পায়। অনৈক্যের বড় কারণ হলো, এসব নৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিষয়ে পবিত্র কুর’আনী রোড ম্যাপ থেকে দূরে সরা। ঘটনার বিশ্লেষণে ও সমস্যার সমাধান খুঁজতে যারা কোর’আনের পথকে বাদ দিয়ে নিজেদের বুদ্ধিকে কাজে লাগায় তারাই পথভ্রষ্ট হয়। তাদের ভ্রষ্টতার কারণেই এক সিরাতুল মুস্তাকীমের বদলে অসংখ্য পথ গড়ে উঠে। তারা শুধু জনগণকে পথভ্রষ্টই করে না, রাষ্ট্রকে সংঘাতপূর্ণও করে। তাই মানবসৃষ্ট মতবাদগুলি মানব জাতিকে কোন কল্যাণ দেয়নি। এ পথভ্রষ্ট বুদ্ধিজীবীদের কারণে বাংলাদেশেও অকল্যাণ কম হয়নি। এদের কারণেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংঘাত বেড়েছে এবং বিজয়ী হয়েছে শয়তানের পক্ষের শক্তি।

মুসলিমগণ আজ যে পতনদশায় পৌঁছেছে সেটি দশ-বিশ বছরে  ঘটেনি, পতনের শুরুটি  বহু আগে থেকেই। সেটি কুর’আনী রোডম্যাপ থেকে দূরে সরা ও বিভক্তির মধ্য দিয়ে। নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ যে রোডম্যাপ বেয়ে চলেছেন সে রোডম্যাপ চলা তারা বহুশত বছর আগেই ছেড়ে দিয়েছে। ফলে নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাদের আমলের ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়তী আদালত, শুরা ভিত্তিক শাসন, ঐক্য ও জিহাদ কোথাও বেঁচেনি। বিভক্তি হলো মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আলামত। অথচ আরবগণ ২২ রাষ্ট্রে বিভক্ত। মুসলিম উম্মাহ বিভক্ত ৫৭টি রাষ্ট্রে। এরূপ বিভক্ত মানচিত্র গড়া কি ইসলামে বৈধ। বিভক্তি গড়ার প্রতিটি প্রচেষ্টাই তো হারাম। মুসলিমদের গৌরব কালে কি এরূপ বিভক্ত ভূগোল ছিল? অথচ সে ভূগোল ভেঙ্গে ৫০টি বাংলাদেশ বানানো যেত। আজকের মুসলিমগণ তো বাঁচছে নিজ নিজ দেশের হারাম মানচিত্র নিয়ে। এ হারামের বিরুদ্ধে কথা বলাও অপরাধ। অথচ শুধু পানাহার হালাল হলে চলে না। রাজনীতি ও রাষ্ট্রের ভূগোলও হালাল হতে হয়। মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করার ন্যায় হারাম প্রজেক্ট নিয়ে যে মানচিত্র -তা হালাল হয় কি করে?

 

৮. জয়-পরাজয়, স্বাধীনতা-পরাধীনতা ও ঈমানদারীর বিষয়

মানুষের স্বভাব হলো বিজয় নিয়ে গর্ব করা। অনেক সময় বিজয় দিয়ে নির্ধারণ করা হয় কে সঠিক পথে এবং কে বেঠিক পথে –সে বিষয়টি। বিজয়ীদের কুকর্মগুলো তখন বিচার বসেনা। জাপানে দুটি পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ করেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাই অপরাধীর কাটগড়ায় উঠতে হয়নি। অথচ মানব জীবনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বিজয়ী বা পরাজিত হওয়া নয়, সেটি হলো ন্যায়ের পথে অটল থাকা। মুসলিমের ঈমানী দায়ভার হলো, উম্মাহর কিসে কল্যাণ এবং কিসে অকল্যাণ –সে বিষয়ে মনযোগী হওয়া। বুঝতে হয়, পরাজিত হওয়াতে কেউ জাহান্নামে যাবে না। অথচ বিজয়ী হয়েও অনেকে জাহান্নামে যাবে। এবং সেটি ন্যায়ের পথ থেকে পথভ্রষ্ট হওয়াতে। ইতিহাসে বহু সাম্রাজ্যবাদী জালেম বিজয়ী হয়েছে। এবং বহু নিরাপরাধ জনগণ পরাজিত হয়েছে এবং গণহত্যার শিকার হয়েছে। পরাজিত হয়েছেন এমন কি বহু নবী-রাসূলও।

বাঙালীগণ একই ভূল করে একাত্তরের মূল্যায়নে। একাত্তরে বাঙালী মুসলিমদের মাঝে দুটি পক্ষ ছিল। একটি ছিল অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষ। তারা ছিল প্যান-ইসলামীক চেতনায় উদ্বুদ্ধ। তারা তৎকালীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের মাঝে থাকায় কল্যাণ দেখতো। দেখতো আগ্রাসী ভারতের হামলার মুখে বাঙালী মুসলিমদের প্রতিরক্ষার বিষয়টিও। সেটি ক্ষুদ্র বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা ভাবতো পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক রূপে সুযোগ মিলবে বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার। এমন একটি চেতনার কারণেই ১৯৪৭ সালে বাংলার মুসলিম লীগের নেতাগণ পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তান ভূক্ত করে। তাছাড়া শরিয়তের দৃষ্টিতে কোন মুসলিম দেশকে ভাঙ্গা হারাম। এ জন্যই কোন বাঙালী আলেম পাকিস্তান ভাঙ্গাকে সমর্থন করেনি। ভারতের কোলে গিয়েও উঠেনি এবং মুক্তি বাহিনীতেও যোগ দেয়নি। পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে আসাকে তারা মনে করতো গলায় ভারতের গোলামীর শিকল বেঁধে নেয়া। তারা ভাবতো বাঙালী মুসলিমের মঙ্গলটি পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা দেয়ায়, পাকিস্তান ভাঙ্গায় নয়।

অপর পক্ষে ছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারিস্টগণ। তাদের এজেন্ডায় মুসলিম ও ইসলামের কল্যাণের কোন ভাবনা ছিল না। তাছাড়া জাতীয়তাবাদ ও সেক্যুলারিজম কোন হালাল রাজনৈতিক দর্শন নয়। এ পক্ষের নেতা ছিল শেখ মুজিবের ন্যায় একজন ইসলামে অঙ্গিকারশূণ্য, খুনি, ভারতসেবী ও ক্ষমতালোভী ফ্যাসিস্ট। শেখ মুজিবের দুশ্চরিত্রের কোন কিছুই পরবর্তীতে আর গোপন থাকেনি। মুজিবের সে চরিত্রের প্রকাশ ঘটছে শেখ হাসিনার মধ্যে। তার মত একজন অপরাধী কি দেশবাসীর অকল্যাণ ছাড়া কোন রূপ কল্যাণ দিতে পারে? দিতে যে পারে না -তা গণতন্ত্র হত্যা, ৩০ হাজার মানব হত্যা, বাকশালী স্বৈরাচার ও দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে। শেখ মুজিব ও তার সহচরদের সহায়তা দিয়েছে আগ্রাসী ভারতীয় কাফেরগণ ও সোভিয়েত রাশিয়া। একাত্তরে দুর্বল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ইসলাম বিরোধী এ আন্তর্জাতিক পক্ষটিই বিজয়ী হয়েছে। তবে মূল বিজয়টি ছিল ভারতের। সে বিজয়ের পর ভারত আন্তর্জাতিক অঙ্গণে আঞ্চলিক শক্তির মর্যাদা পায়। ভারতকে এ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে বাঙালী সেক্যুলারিস্টগণ। বাংলাদেশ যা পেয়েছে সেটি আদৌ স্বাধীনতা নয় বরং ভারতের অধিনত এক গোলাম রাষ্ট্রের পরিচিতি। বাংলাদেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ হয় এখন দিল্লি থেকে। হাসিনাকে তাই জনগণের সমর্থন না পেলেও চলে। দিল্লির সমর্থনই তার জন্য যথেষ্ট। ভারেতর প্রতি এ গোলামীই হলো একাত্তরের প্রকৃত অর্জন -যা নিয়ে বাঙালী মুসলিমদের বাঁচতে হবে আগামী বহুশত বছর। কিন্তু বাঙালী সেক্যুলারিস্টগণ এ তিক্ত সত্যকে গিলতে রাজী নয়। জনগণ ভোটের অধিকার না পেল কি হবে, এ গোলামীকেই তারা স্বাধীনতা মনে করে। ০৬/০৫/২০২১

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *