বিবিধ প্রসঙ্গ ১০

১. মহাবিপদ শিরক নিয়ে মৃত্যুর

মৃত্যুর ন্যায় একটি গুরুতর বিষয দূরে থাক, আল্লাহতায়ালার অনুমতি ছাডা গাছের একটি মরা পাতাও পড়ে না। পবিত্র কোর’আনে বার বার এ কথাও বলা হয়েছে, আল্লাহতায়ালার অনুমতি  ছাড়া কোন বিপদ কাউকেই স্পর্শ করতে না। যেমন বলা হয়েছে সুরা তাগাবুনের ১১ নম্বর আয়াতে এবং সুরা হাদীদের ২২ নম্বর আয়াতে। মহান আল্লাহতায়ালার এ ঘোষণার উপর বিশ্বাস করার মধ্যেই ঈমানদারী। সামান্য অবিশ্বাস কাফেরে পরিণত করে। তবে মহামারি, ভূমিকম্প, সুনামী, টর্নেডোর ন্যায় নানা রূপ বিপদ কাফের জনপদে আসে তাদের শাস্তি দিতে –যেমন এসেছে আদ ও সামুদ জাতি, ফেরাউনের অনুসারি, মাদায়েনের অধিবাসী ও লুত (আঃ)’য়ের কওমের উপর। নূহ (আঃ)’য়ের সময় আযাব এসেছে এক মহাপ্লাবন রূপে।

তবে ঈমানদারেরর ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। বিপদ-আপদ, রোগ-ভোগ, এবং জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি তাদের জীবনের আসে। এরূপ বিপদে ফেলে ঈমানের পরীক্ষা নেয়াটাই মহান আল্লাহতায়ালার রীতি। সে বর্ণনাটি এসেছে সুরা বাকারার ২১৪ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে, “তোমরা কি মনে করে নিয়েছো, পূর্ববর্তীদের উপর যেরূপ পরীক্ষা এসেছে সেরূপ কোন পরীক্ষা ছাড়াই তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তাদের উপর এসেছে এমন দুঃখ-কষ্ট ও ক্ষয়ক্ষতি যে তারা ভয়ে প্রকম্পিত হয়েছে। এমন কি রাসূল এবং তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তারাও বলে উঠেছে, “আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? আল্লাহর সাহায্য অবশ্যই নিকটে।” প্রমোশন আসে পরীক্ষায় পাশের পর। এরূপ পরীক্ষায় পাশ করে যারা নিহত হয় মহান আল্লাহতায়ালা তাদেরেক শাহাদতের মর্যাদা দেন এবং পুরস্কৃত করেন জান্নাত দিয়ে। এবং যারা সে পরীক্ষায় ফেল করে তারা পায় জাহান্নাম।

করোনা ভাইরাস দেখিয়ে দিল মানুষ কত অসহায় মহান আল্লাহতায়ালার অতিক্ষুদ্র এক সৃষ্টির কাছে -যা খালি চোখে দেখা যায় না। কিন্তু তবুও অহংকারী মানুষ ভাইরাসের স্রষ্টা সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহকে ভয় করতে রাজী নয়। তারা ভাইরাসের ভয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে গৃহবন্দী হতে রাজী, কিন্তু রাজী নয় আল্লাহকে ভয় করতে এবং তাঁর উপর ঈমান আনতে। এবং এরূপ ভীতুরাই চন্দ্র-সূর্য, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, গরুবাছুড়, সাপ এবং মুর্তিকে ভগবানের আসন বসিয়েছে। ভেবেছে এগুলির পুজার মধ্যেই মুক্তি। কোটি কোটি মানুষ এভাবে মুশরিকে পরিণত হয়েছে।  করোনার কারণে তেমনি বহু কোটি মানুষ মুশরিকে পরিণত হবে আল্লাহর বদলে ভাইরাসের ভয়ে। তাই এরূপ মহামারীতে হাজার হাজার মানুষের প্রাণনাশই শুধু হয়না, বরং ভয়ংকর মহামারীটি হয় ঈমান নাশের অঙ্গণে –যা অনন্ত অসীম কালের জন্য জাহান্নামে টানে।

 

২. লক্ষ হোক মানুষ রূপে বেড়ে উঠা

চোর-ডাকাতদের কাজ থানার পুলিশ ও আদালতের বিচারকদের হাতে রাখা। তখন থানার সামনে চুরি-ডাকাতি বা খুন-খারাবি হলেও পুলিশ বলে, তারা কিছুই দেখিনি বা শুনেনি। ডাকাতদের বিরুদ্ধে কেস কোর্টে উঠলেও তারা বেকসুর খালাস পায়। তবে কোন দেশেই চোর-ডাকাতদের শক্তি এতটা প্রবল নয় যে, তারা দেশের সমগ্র পুলিশ, প্রশাসন ও আদালতকে নিয়ন্ত্রণে নিবে। তবে বাংলাদেশে ভোটডাকাতদের অর্জনটি বিশাল। তারা পুরাপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে দেশের পুলিশ, আদালত ও মিডিয়াকে। শুধু তাই নয়, ভোটডাকাতদের সবচেয়ে বড় অর্জনটি হলো, সাধারণ চোর-ডাকাতদের ন্যায় তাদেরকে ভোটডাকাতির কাজটি নিজ হাতে করতে হয় না। সেটি করে দেয় দেশের পুলিশ, প্রশাসন এবং দেশের নির্বাচনী কমিশন। বাংলাদেশে তেমনটিই হয়েছে গত নির্বাচনে।  ফলে সে নির্বচনে হাজার হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোটডাকাতি হলেও সে অপরাধে কাউকে গ্রেফতার হতে হয়নি। কারো কোন শাস্তিও হয়নি।

এক্ষেত্রে জনগণের আচরণটি আরো বিস্ময়কর ও বিবেকহীন। সুবোধ ভদ্র লোক যতই দুর্বল, নিরক্ষর বা অর্থহীনই হোক না কেন – কোন চোর বা ডাকাতকে তারা কখনোই সম্মন করে না। মাননীয় বলে সম্বোধনও করেনা। বিশ্বের কোন দেশেই সেটি হয়না। আদিকাল থেকে প্রতিটি ভদ্রলোকের সেটিই রীতি। কিন্তু চুরি-ডাকাতিকে ঘৃণা করার সে নীতি মারা পড়েছে শুধু বাংলাদেশের পুলিশ বিভাগ, আদালত, প্রশাসন, মিডয়া জগত এবং রাজনীতির  অঙ্গণে নয়, জনগণের মাঝেও। মারা পড়েছে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবী মহলেও। ফলে ডাকাত সর্দারনীকে ঘৃনা না করে তাকে মাননীয় বলাও সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। সমগ্র বিশ্বমাঝে বাঙালীদের এ এক নয়া রেকর্ড। বিশ্ববাসী ভাবছে এমন কাজ একমাত্র বাংলাদেশীদের পক্ষে্‌ই সম্ভব। কারণ, এ শতাব্দীর শুরুতে বিশ্বের তাবত রাষ্ট্রকে পিছনে ফেলে পর পর ৫ বার দুর্বৃত্তিতে প্রথম হয়ে তারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল।

তবে ভোটডাকাতিতে প্রথম হওয়ার বিষয়টি দুর্বৃত্তিতে ৫ বার প্রথম হয়ে চেয়েও জঘন্য। কারণ ভোটডাকাতিটি কোন সাধারণ দুর্বৃত্ত নয়। কিছু ঘুষখোর অফিসার বা চোরডাকাত থাকলে সেটি করা যায় না। বরং সেজন্য চাই দেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবাহিনী, সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী, প্রশাসন, আদালত এবং মিডিয়ার সংঘবদ্ধ রাষ্ট্রীয় দুর্বৃত্তি। কোন গ্রামের সবাই চোর-ডাকাত হয় না। তেমনি বিশ্বের কোন দেশের সবগুলো প্রতিষ্ঠানই ডাকাতির সাথে জড়িত হয়না। এ ইতিহাস একমাত্র বাংলাদেশের। মানুষ রূপে বেড়ে উঠায় বাঙালীর ব্যর্থতা যে কতটা বিশাল -এ হলো তার নজির।

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালীর মানুষ রূপে বেড়ে উঠার ব্যর্থতাটি হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলেন। তাই বলেছিলেন, “হে বিধাতা! ৭ কোটি প্রাণীরে রেখেছো বাঙালী করে মানুষ করোনি।” তবে রবীন্দ্রনাথের ভ্রান্তি হলো, এ ব্যর্থতার জন্য তিনি বিধাতাকে দায়ী করেছেন। বাঙালীকে দায়ী করেননি। এখানেই রবীন্দ্রনাথের বিচারে ব্যর্থতা। ভাল মানুষ হওয়া বা দুর্বৃত্ত হওয়াটি আল্লাহতায়ালা মানুষকে তার নিজের এখতিয়ারে দিয়েছেন। নইলে রোজ হাশরের বিচার দিনে বিচার করবেন কি করে? বুঝতে হবে, বাংলাদেশের জনগণের সমস্যাটি রাস্তাঘাট, পশুপালন, মৎসপালন বা শিল্প নিয়ে নয়। বরং তাদের নিজেদের বেড়ে উঠা নিয়ে। তাই তাদের মনযোগী হ্ওয়া উচিত মানুষ রূপে বেড়ে উঠায়। কারণ  মহান আল্লাহতায়ালার কাছে রাস্তাঘাট, পশুপালন, মৎসপালন বা শিল্পে কতটা উন্নতি হলো সে হিসাব দিতে  হবে না। বরং হিসাব দিতে হবে মানুষ রূপে বেড়ে কাজটি কতটা হয়েছিল সেটির।

 

৩. জরুরী রাষ্ট্রের সংশোধন

 
চালক ভাল হলে বাসের সকল যাত্রী মাতাল হলেও গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছে। সেটি সত্য রাষ্ট্র্রের ক্ষেত্রেও। রাষ্ট্রের চালক চোর-ডাকাত বা ভোটডাকাত হলে দেশের সকল মসজিদগুলি নামাযী দিয়ে ভরে উঠলেও তাতে দেশে শান্তি আসে না। বরং দেশ তখন দুর্বৃত্তিতে ভরে উঠে।এজন্যই নবীজী (সাঃ) খোদ রাষ্ট্রনায়কের আসনে বসেছিলেন। এবং তাঁর ইন্তেকালের পর শ্রেষ্ঠ সাহাবীগণ বসেছেন। কিন্তু নবীজী (সাঃ) ও সাহাবাদের সে সূন্নত বাংলাদেশে বেঁচে নেই। বরং যে চোর-ডাকাত ও ভোটডাকাতদের স্থান হওয়া উচিত কারাগারে তারা দখলে নিয়েছে দেশের প্রশাসন, রাজনীতি, আদালত, পুলিশ ও প্রশাসনকে।  জনগণের অপরাধ হলো, তারা রাষ্ট্রের চালকের আসন থেকে দুর্বৃত্তদের  না হটিয়ে স্রেফ মসজিদ মাদ্রাসা গড়ায় মনযোগ দিয়েছে।

 

৪.কামেল ইনসানের ভ্রান্ত ধারণা

মহান আল্লাহতায়ালা চান মানুষ তার যোগ্যতা ও সামর্থ্যে পূর্ণতা পাক। ইসলামে এরূপ পূর্ণ মানুষকে বলা হয় কামেল ইনসান। কিন্তু তা নিয়ে ভ্রান্তিও কম নয়। কামেল তাকে বলা হয় যার মনযোগটি স্রেফ নামায়,রোজা,হজ,যাকাত ও তাসবিহ পাঠে। যে স্রেফ ঘর থেকে মসজিদে যায় এবং মসজিদ থেকে ঘরে আসে। রাজনীতি, সমাজকর্ম এবং দেশ ও বিশ্ব নিয়ে চিন্তা-ভাবনাকে দুনিয়াবী বিষয় মনে করা হয়। অথচ এমনটি নবীজী (সাঃ)’র সূন্নতের বিরোধী। মানব মাত্রই এ পৃথিবী পৃষ্টে মহান আল্লাহতায়ালার খলিফা। তাই তাকে ভাবতে  হয় শুধু নিজেকে নিয়ে নয়, বরং মহান আল্লাহর অন্য সৃষ্টিকে নিয়েও। স্রেফ নিজেকে নিয়ে ভাবাটি পরম স্বার্থপরতা ও ধর্মহীনতাও। তাকে ভাবতে হয় নিজের প্রতিবেশী, পরিবেশ, সমাজ ও নিজ দেশবাসীর পাশাপাশী বিশ্ববাসীকে নিয়েও। ভাবনার পাশাপাশী তাকে সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে লড়ায়েও নামতে হয়। প্রয়োজনে জান ও মালের কোরবানীও পেশ করতে হয়। তারই নমুনা যেমন মহান নবীজী (সাঃ), তেমনি তাঁর সাহাবাগণ।

৫.বেঈমানীর রূপ

শান্তি ও কল্যানের লক্ষ্যে মহান আল্লাহতায়ালা দিয়েছেন পরিপূর্ণ ইসলামী বিধান -যাতে রয়েছে ইসলামী রাষ্ট্র,শরিয়ত, হুদুদ এবং অন্যায় নির্মূলের জিহাদ। তাই বেঈমানী হলো, এ বিধান ছাড়াই শান্তি ও কল্যানের কথা ভাবা। তাই যারা শরিয়তি বিধান ছাড়াই শান্তি ও কল্যাণের কথা ভাবেন -তারা সে ভাবনার মধ্য দিয়ে অনাস্থার প্রকাশ ঘটায় মহান আল্লাহর বিধানের প্রতি। এটি হলো সুস্পষ্ট বেঈমানী।বাংলাদেশে এমন বেঈমানদের সংখ্যাটি বিশাল। এরা নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত পালন করে বটে, তবে রাষ্ট্রের আদালতে শরিয়তের প্রতিষ্ঠার ঘোরতর বিরোধী। তারা শরিয়তকে প্রয়োজনীয় মনে করে না।    

অথচ মহান আল্লাহতায়ালা চান ঈমানদারগণ তাঁর দেয়া ইসলামী বিধানের পূর্ণ প্রতিষ্ঠা দিক এবং দূরে থাকুক কাফেরদের বিধান, রীতিনীতি ও সংস্কৃতি থেকে। প্রশ্ন হলো, মুসলিমগণ মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে কি নিয়ে মুখ দেখাবে? কাফেরদের থেকে তাদের ভিন্নতাই বা কতটুকু? কাফেরদের ন্যায় তারাও কি আল্লাহতায়ালার শরিয়তি আইনের বদলে কুফরি আইনকে প্রতিষ্ঠা দেয়নি? অন্যায় নির্মূলের জিহাদ বাদ দিয়ে তারাই কি অন্যায়কে প্রতিষ্ঠা দেয়নি? আল্লাহর কাছে হিসাব দেয়ার আগে এ হিসাব কী তারা নিবে না?

 

৬. চোরডাকাত ও ভোটডাকাতদের কালো হাত ইতিহাসের উপর

ভোট-ডাকাতদের কালো হাত শুধু জনগণের ব্যালটের উপরই পড়েনি। হাত পড়েছে ইতিহাসের উপরও। এজেন্ডা এখানে সুস্পষ্ট। তাদের লক্ষ্য, চোর-ডাকাত, ভোটডাকাত, স্বৈরাচারি রূপে তাদের যে বিশাল কুখ্যাতি – ইতিহাসের পাতা থেকে সেটিকে বিলুপ্ত করা। লক্ষ এখানে যারা জ্ঞানী-গুনি ও দেশপ্রেমিক তাদের হটিয়ে চোর-ডাকাত, ভোটডাকাত ও স্বৈরাচারিদের জন্য ইতিহাসের পাতায় শূণ্য স্থান সৃষ্টি করা। মুজিব বর্ষের নামে হচ্ছে শত শত কোটির বিনিয়োগ। লক্ষ্য কী? মুজিবের মূল পরিচয়টি কি জনগণ জানে না? মুজিব ভোট-ডাকাত হাসিনা পিতা। পিতা বাকশালী স্বৈরাচারেরও। সে পিতা ভারতসেবী বাঁদী রাজনীতিরও। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম গণতন্ত্র হত্যা হয় তারই হাতে। রাজনীতির অঙ্গণে ইসলামের পক্ষ নেয়াকে মুজিবই সর্বপ্রথম নিষিদ্ধ করে। তাছাড়া বাংলাদেশের বুকে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পিতাও মুজিব।

হাসিনা চায় তার পিতার এসব কু-কর্মগুলিকে ঢাকতে। এজন্যই তার এ বিশাল বিনিয়োগ। এবং সেটি জনগণের রাজস্বের অর্থে। কোন সভ্যদেশেই মৃত মানুষের জন্য এতটাকা খরচ হয় না যা হচছে বাংলাদেশে মুজিবের নামে।অথচ দেশে করোনা ভাইরাস টেস্টের ব্যবস্থা নাই।অসভ্য ভোটডাকাতদের হাতে দেশ হাইজ্যাক হওয়ার এটাই বিপদ। হাজার হাজার টাকা খরচ করেও জনগণের স্মৃতি থেকে মুজিবের এ পরিচয় কি বিলুপ্ত করা যাবে? ১২/০৪/২০২০

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *