বিচিত্র প্রসঙ্গ-২

 ১.

দেশের স্বাধীনতার অর্থ দেশের আলোবাতাস বা মশামাছির স্বাধীনতা নয়; বরং সেটি জনগণের স্বাধীনতা। সে স্বাধীনতার অর্থ স্বাধীন ভাবে জনগণের মতপ্রকাশ, দলগড়া ও মিছিল-মিটিংয়ের স্বাধীনতা। তাই যারাই জনগণের সে স্বাধীনতা কেড়ে নেয় তাঁরাই স্বাধীনতার মূল শত্রু। সে স্বাধীনতা হরন করেছিল শেখ মুজিব। তার হাতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার এবং নিষিদ্ধ হয়েছিল সকল বিরোধী রাজনৈতীক দল। নিষিদ্ধ কর হয়েছিল সকল বিরোধী দলীয় পত্র-পত্রিকা। সে স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে শেখ হাসিনাও। তাই দিল্লির শাহিনবাগে বা কলকাতার পার্ক সার্কাসে মাসাধিক কাল ধর্ণা চললেও শেখ হাসিনা সেরূপ ধর্ণা রাজধানী ঢাকাতে এক দিনের জন্যও হতে দিতে রাজী নয়। তাই হিফাজতে ইসলামের শাপলা চত্ত্বরের শান্তিপূর্ণ ধর্ণা নির্মূলে সেনাবাহিনীকে দিয়ে কামান দাগা হয়েছিল। শত শত মুসল্লীকে রাতের আঁধারে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের অনেকের লাশ ময়লার গাড়িতে করে গায়েব করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা ব্যালটের উপর ডাকাতি করে কেড়ে নিয়েছে জনগণের ভোটদানের অধীকারও। ফলে স্বাধীনতার শত্রু তাই বাকশালী মুজিব ও হাসিনা। তবে বাংলাদেশী বাঙালীর বিবেকশূণ্যতাও কি কম? স্বাধীনতার শত্রুদের একজনকে এ বাঙালীরা বঙ্গবন্ধু বলে। আরেকজনকে মাননীয় জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বলে।

২.
ফ্যাসিবাদী সরকার থেকে কখনোই মৌলিক মানবিক অধিকার মেলে না। সে সরকারের বিচারকদের থেকে ন্যায়বিচারও মেলে না। স্বৈরাচারি ফ্যাসিবাদী সরকারের অধীনে বিচারকদের মূল কাজটি হয় পুলিশের ন্যায় স্বৈরাচারি সরকার নিরাপত্তা দেয়া, জনগণকে ন্যায় বিচার দেয়া নয়। জামায়াতে ইসলামীর নেতাগণ ফাঁসিতে ঝুলে এবং খালেদা জিয়া জেলের মধ্যে বছরের পর বছর পচে সেটিই প্রমাণ করছেন।

৩.
একটি দেশের পত্রিকার দিকে নজর দিলেই বুঝা যায় সে দেশের জনগণ কতটা স্বাধীন। দিল্লিতে মুসলিম নিধন ও তাদের ঘরাড়ীতে আগুণ দেয়ার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ঘৃনা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে পাকিস্তানের পত্রিকাগুলোতে। এমন কি ঝড় তুলেছে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাও। কিন্তু খামোশ শুধু বাংলাদেশের সরকারই নয়, বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকাও। এতে স্পষ্ট বুঝা যায় বাংলাদেশ কতটা পরাধীন।

৪.

খালেদা জিয়ার রাজনীতির নতুন করে পাঠ নেয়া উচিত। রাজনীতির সামান্যতম জ্ঞান থাকলে তিনি কখনোই স্বৈরাচারি হাসিনা সরকারের চাকর-বাকরদের কাছে বিচার বা জামিন চাইতে যেতেন না। সে জ্ঞান থাকলে তিনি বুঝতেন, স্বৈরাচারি সরকারের অধীনস্থ্ বিচা্রকদের কাজ হয় বিরোধী দলীয় নেতাদের গলায় ফাঁসের দড়ি পড়ানো বা পায়ে জেলের শিকল লাগানো। বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাসিনা যে কাজটি রাজপথে করছে তার চেয়েও জঘন্য কাজ করছে আদালতের বিচারকগণ।

৫.
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গুজরাতে দুই হাজারের বেশী মুসলিম হত্যার সাথে জড়িত। মোদি যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী তখন তিন মাস ধরে সেখানে মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, মুসলিম নারীদের ধর্ষণ ও তাদের ঘরবাড়িতে আগুণ দেয়ার কাজ চলে। এমন দুর্বৃত্ত খুনির সাথে কি কোন সভ্য মানুষ সম্পর্ক রাখে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নরেন্দ্র মোদির উপর যুক্তরাষ্ট্রের ঢুকার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। নিষেধাজ্ঞা লাগিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নও। সে খুনি মোদিকে শেখ হাসিনা তার পিতা শেখ মুজিবের শত বার্ষিকীতে দাওয়াত দিয়েছে। এক খুনি ও ডাকাত আরেক খুনি ও ডাকাতকে সাক্ষী বানাবে সেটি তো এক পুরনো কৌশল। অথচ মুসলিম হত্যার সাথে জড়িত কোন কাফেরের সাথে যে ব্যক্তি বন্ধুত্ব করে সে তো তাবত মুসলিমের দুষমন। একাজ তো ভারতীয় বিজিপি ও আর.এস.এসের সদস্যদের। তবে কি বাংলাদেশও তারা দখলে নিয়েছে? শেখ হাসিনা কি নিজ দেশে এদেরই নেত্রী? এজন্যই কি মোদিকে দাওয়াত?

৬.
ঈমানদার ও বেঈমানের মধ্যে মূল পার্থক্যটি পোষাক-পবিচ্ছদে নয়, সেটি বাঁচার নিয়েতে। ঈমানদার প্রতি মহুর্ত বাঁচে পরকালে কী করে জান্নাতে পৌঁছা যায় -সে ভাবনা নিয়ে। ফলে তাদের হাতে বাড়ে নেককর্ম। অপরদিক বেঈমান বাঁচে এ দুনিয়ার জীবনে  ক্ষমতা ও জৌলুস  বাড়াতে। তাদের হাতে বাড়ে ভোট-ডাকাতি, ব্যাংক-ডাকাতি এবং গুম-খুনের রাজনীতি। সে বেঈমানীটা প্রকট ভাবে ধরা পড়ে বাংলাদেশের সরকারি দলের নেতাকর্মীদের জীবনে।

৭.
শেখ হাসিনা পূর্ববর্তী কংগ্রেস দলীয় সরকার এবং বর্তমান বিজিপি দলীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে প্রতিপালিত। হাসিনার ভোট ডাকাতির অপরাধকে দেশে বিদেশে পুর্ণ সমর্থণ দিয়েছে নরেন্দ্র মোদি। হাসিনা তার পিতার ন্যায় ভারতের বিরুদ্ধে নিমক হারামী করতে রাজী নয়। ভারতে মুসলিম হত্যার বিরুদ্ধে এজন্যই শেখ হাসিনা নিরব। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াইটি তাই মামূলী বিষয় নয়। এটি মূলতঃ খুনি মোদির ও আর.এস.এসের গুণ্ডাদের বিরুদ্ধে লড়াই। বা্ংলাদেশের মুসলিমদের ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে সে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে।

৮.
শেখ হাসিনা এ অবধি ভারতের নির্যাতিত মুসলিমদের পক্ষে একটি কথাও বলেনি। গুজরাতে যখন মুসলিম গণহত্যা চলে তখনও বলেনি। বরং পিতার শতবার্ষিকে নরেন্দ্র মোদিকে অতিথি করে সে দুর্বৃত্তকে সন্মানিত করেছে। এটি কি কোন সভ্য মানুষের কাজ হতে পারে? হাসিনা যে ভারতের সন্ত্রাসী হিন্দুদের সন্ত্রাসের পক্ষে –এ নিরবতা তো তারই প্রমাণ।

৯.
মুসলিম উম্মাহর একটি অংশের উপর যখন বিপদ নেমে আসে তখন অন্য মুসলিমদের পরীক্ষা শুরু হয়। ভারত, কাশ্মির, ফিলিস্তিন, উইঘুর ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর যে মহা দুর্যোগ চলছে -তা দেখে একমাত্র বেঈমানই নিরব থাকতে পারে? মাওলানা আবুল কালাম আযাদ লিখেছিলেন, আফ্রিকার জঙ্গলে কোন মুসলিমের পায়ে যদি কাঁটা বিদ্ধ হয় এবং সে কাঁটার ব্যাথা যদি তুমি হৃদয়ে অনুভব না করো তবে আল্লাহর কসম তুমি মুসলিম নও।

১০.
গরু-ছাগলের কাছে কে চোর-ডাকাত সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং গুরুত্বপূর্ণ হলো মুখের সামনে প্রচুর ঘাস। তেমনি বেঈমান সামরিক-বেসামরিক সরকারি দাসদের কাছে জরুরী হলো মাস শেষে মোটা অংকের বেতন। বেতন বাড়িয়ে দিলে তারা ভোট-ডাকাত দুর্বৃত্ত সরকারকে বাঁচাতে প্রাণ দিবে। বাংলাদেশ তারই প্রমাণ। এ দাসশ্রেণীর কারণেই অতিশয় দুর্বৃত্ত ভোট-ডাকাতেরাও বিশাল প্রতাপ নিয়ে ক্ষমতায়।


১১.
উচ্চ আদালতের কিছু বিচারক রায় দিয়েছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুজিবের দেয়া ভাষন জনগণের শোনানো উচিত। প্রশ্ন হলো, জনগণ কেন? যারা ব্যাংক ডাকাতি  এবং ভোট ডাকাতি করে তারা বাদ যাবে কেন?

১২.
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি এবং প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দিল্লির মসজিদে আগুণ ও মুসলিম হত্যার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিশ্ববাসীর সামনে আবেদন রেখেছেন এ অপরাধের বিরুদ্ধ সোচ্চার হতে।  বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী নিরব।

গরুছাগল কাউকে ধর্ষিত বা জবাই হতে দেখেও প্রতিবাদ করে না। সে পশু নীতিই কি বাংলাদেশ সরকারের নীতি? বাংলাদেশের জনগণ কি এ পশু নীতির সরকারকে রাজস্ব দিয়ে প্রতিপালন করবে? 

১৩.
গুজরাতের এক খুনি নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী। আরেক খুনি অমিত শাহ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। দিল্লিতেও তারা শুরু হয়েছে গুজরাতের ন্যায় মুসলিম নির্মূলের গণহত্যা।এ বিপদে মুসলিমদের পিছনে দাঁড়ানোর কেউ নাই। স্মরণীয় হলো, সৌদি আরব ও আমিরাতের স্বৈরাচারি সরকার মোদিকে দেশের সর্বোচ্চ খেতাব দিয়ে সম্মানিত করেছে। বাংলাদেশ সম্মানিত করছে মুজিবে শত বার্ষিকিতে দাওয়াত দিয়ে। খুনি ও দুর্বৃত্তরা যদি এভাবে সম্মানিত হতে থাকে তব সত্য ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা পাবে কি করে? ২৭/০২/২০২০

 

One Responseso far.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *